আল্লাহ্ কি সর্বস্থানে বিরাজমান?
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকা “মাসিক মদীনা”র
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রদত্ত একটি উত্তরের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত
হয়েছে। উত্তরটি আল্লাহ্ ও তাঁর গুণাবলী সংক্রান্ত এবং উহা কুরআন-হাদীস ও
সালফে সালেহীনের আকীদাহ্ বিরোধী। সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য মুসলমান সমাজে তুলে
ধরা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। তাই বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনায় আমরা প্রবৃত্ত
হলাম।
উত্তরটিতে বলা হয়েছে: “আল্লাহ্ পাক নিরাকার। তিনি সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজমান। …. পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে এবং হাদীস শরীফেও আল্লাহ্ তা’আলার পরিচয় এভাবেই দেয়া হয়েছে ……।” (মাসিক মদীনা আগস্ট সংখ্যা ৯৯’ইং ৪৪নং প্রশ্নের উত্তর।)
উক্ত
কথাটির প্রমাণে উত্তর দাতা মাওলানা সাহেব যদি কুরআন-হাদীস থেকে কিছু দলীল
প্রমাণ উপস্থাপিত করতেন তবে পাঠক সমাজ উপকৃত হতেন। প্রকৃত পক্ষে এ কথার কোন
দলীল নেই তার কাছে । কুরআন-হাদীসের কোন স্থানেই এ কথা পাওয়া যাবে না
যে, আল্লাহ্ পাক নিরাকার, তাঁর কোন আকার আকৃতি নেই, বা তিনি পৃথিবীর সকল
স্থানে সকল বস্তুর মধ্যে বিরাজ করছেন। কেননা এ কথার অর্থ দাঁড়ায়,
ভাল-মন্দ সকল বস্তু এবং স্থানেই মহান আল্লাহর অস্তিত্ব বিদ্যমান ।
মানুষ-জিন, গরু€-ছাগল, কুকুর-শুকর, মসজিদ-মন্দির, উপাসনালয়-বেশ্যালয়
ইত্যাদি শব্দগুলো ‘সবকিছুর’ই অন্তর্ভুক্ত। মলতঃ উক্ত কথাটি তিনি ইবনে
আরাবী, মনসূর হাল্লাজ প্রমূখ বেদ্বীন সুফীদের নিকট থেকে নিয়েছেন। ঐ সকল
সূফীদের কথা হল:
(وما الكلب والخنزير إلا إلهنا : وما ربنا في الكنيسة إلا راهب)
অর্থাৎ-কুকুর-শুকর
এগুলো মলতঃ আমাদের উপাস্য, আর গির্জায় অবস্থানকারী পাদ্রী আমাদের
প্রতিপালক ছাড়া আর কিছুই নয়। আর ইবনে আরাবীর কথা হল:
(العبد رب والرب عبد : يا ليت شعري من المكلف؟)
বান্দা
হল রব আর রবই হল বান্দা, হায় আমি যদি জানতাম কে আদেশ প্রাপ্ত? তাই তো
আজকাল কোন কোন সুফি দরবেশ বলে থাকে ‘যত কল্লা তত আল্লাহ্’। কারণ সব কল্লার
মধ্যেই আল্লাহ্র অস্তিত্ব বিদ্যমান!! (নাঊযুবিল্লাহ্ )
একজন
আলেম তো দূরের কথা সুস্থ বিবেক সম্পপন্ন সামান্য জ্ঞানের অধিকারী একজন
সাধারণ মুসলিম ব্যক্তি কখনই উল্লেখিত আকীদাহ্ রাখতে পারে না। কারণ
নিঃসন্দেহে এধরণের বিশ্বাস রাসলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম), সাহাবায়ে কেরাম ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনের আকীদাহ্ বিরোধী তথা
কুফুরী বিশ্বাস। সুতরাং মাওলানা সাহেব উক্ত জবাব স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানেই দিয়ে
থাকুন অথবা মূর্খতা বশত: দিয়ে থাকুন, তিনি যে অতি জঘন্য ও মারাত্মক
অপরাধের কথা বলেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
• এক্ষণে
আমরা “আল্লাহ্ কোথায়?” এ বিষয়ে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস এবং সালফে সালেহীন
তথা শ্রেষ্ঠ যুগের মহা পণ্ডিতদের বক্তব্য ও আকীদাহ্ দলীলসহ আলোচনা করার
চেষ্টা করব:
সমগ্র
জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্ তা’আলা সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত
সুমহান আরশের উপর সমুন্নত, তিনি সর্বস্থানে বিরাজিত নন। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও
সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে
নয়। তিনি আরশে আ’যীমে থেকেই সব কিছু সুচারু€রূপে পরিচালিত করেন।
১) মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন:
(ان ربكم الله الذي خلق السموات والأرض في ستة أيام ثم استوى على العرش)
অর্থ:‘
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্, যিনি আকাশ সমূহ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে
সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।’ (সূরা আরাফ-৫৪)
২) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন:
الرحمن على العرش استوى
অর্থ: ‘রহমান (আল্লাহ্) আরশে সমুন্নত।’ (সূরা ত্বহা-৫)
এ কথায় কোনই সন্দেহ নেই যে আরশ আসমান রয়েছে জমিনে নয়।
এ কথায় কোনই সন্দেহ নেই যে আরশ আসমান রয়েছে জমিনে নয়।
৩) তাই মহান আল্লাহ্ অন্যস্থানে বলেন:
أأمنتم من في السماء أن يخسف بكم الأرض
অর্থ: ‘তেমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আকাশে অবস্থিত রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না।’ (মূলক-১৬)
এ
ছাড়া বহু আয়াতে আল্লাহ্ পাক নিজের পরিচয়ে বলেছেন যে, তিনি আকাশের উপর
মহান আরশেই রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অধিক প্রমাণের জন্য নিম্ন লিখিত আয়াত গুলো
দেখা যেতে পারে। ( ইউনুস-৩, রা’দ-২, ফুরক্বান- ৫৯, সাজদাহ্-৪, হাদীদ-৪)
৪) হাদীছে রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
ألا تأمنوني وأنا أمين من في السماء يأتيني خبر السماء صباحاً ومساءً -متفق عليه
অর্থ:
‘তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না, অথচ যিনি আসমানে আছেন আমি তাঁর
আমানতদার। আমার কাছে আসমানের খবর সকাল-সন্ধ্যায় আসে।” (বুখারী ও মুসলিম)
আসমানে যিনি আছেন নিশ্চয় তিনি মহান আল্লাহ্। কোন সন্দেহ আছে কি ?
আসমানে যিনি আছেন নিশ্চয় তিনি মহান আল্লাহ্। কোন সন্দেহ আছে কি ?
৫) হযরত মুয়াবিয়া বিন হাকাম আস্ সুলামী (রা:) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক দাসীকে প্রশ্ন করেছিলেন : ‘আল্লাহ্ কোথায়?’ উত্তরে সে বলেছিল : আল্লাহ্ আসমানে। তিনি বললেন , আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহ্র রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মনিবকে বললেন: তাকে আজাদ করে দাও। কেননা সে ঈমানদার। (ছহীহ মুসলিম)
দাসীটি যদি উত্তরদাতা মাওলানা সাহেবের মতবাদ অনুযায়ী জবাব দিত তবে নির্ঘাৎ সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অমুসলিম সাব্যস্তগ হত। কেননা তার ঈমান পরীক্ষা করার জন্যই তাকে তিনি অনুরূপ প্রশ্ন করেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক দাসীকে প্রশ্ন করেছিলেন : ‘আল্লাহ্ কোথায়?’ উত্তরে সে বলেছিল : আল্লাহ্ আসমানে। তিনি বললেন , আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহ্র রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মনিবকে বললেন: তাকে আজাদ করে দাও। কেননা সে ঈমানদার। (ছহীহ মুসলিম)
দাসীটি যদি উত্তরদাতা মাওলানা সাহেবের মতবাদ অনুযায়ী জবাব দিত তবে নির্ঘাৎ সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অমুসলিম সাব্যস্তগ হত। কেননা তার ঈমান পরীক্ষা করার জন্যই তাকে তিনি অনুরূপ প্রশ্ন করেছিলেন।
৬) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন:
(ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء )
অর্থাৎ-‘ যারা জমিনে আছে তোমরা তাদের প্রতি দয়াশীল হও যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়াশীল হবেন।’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ)
৭) সুপ্রসিদ্ধ মে’রাজের ঘটনা বুখারী -মুসলিম সহ বহু হাদীস গ্রন্থে রয়েছে।
হে বিবেকবান মুসলিম ভাই! আল্লাহ্ যদি সর্বত্র সবকিছুতেই বিরাজিত থাকেন, তবে মে’রাজের কি দরকার ছিল? মে’রাজের রাত্রে বোরাকে চড়ে সপ্তাকাশের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র দরবারে গমনই তো প্রমাণ করে যে মহান আল্লাহ্ সাত আসমানের উপর অবস্থিত আরশেই রয়েছেন। নতুবা মে’রাজ অর্থহীন হয়ে যায় না কি?
• এ ক্ষেত্রে সালফে সালেহীনের আকীদা বা কিছু উক্তি:
৮) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন:
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ আরশে আছেন একথা বিশ্বাস করে, কিন্তু সন্দেহ করে যে
আর্মস আসমানে আছে না জমিনে তবে সে কাফের বলে গণ্য হবে। (দ্র: আল্ ফিকহুল
আবসাত)
৯) ইমাম আওযায়ী বলেন:
আমরা তাবেয়ীগণের উপস্থিতে বলতাম, নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ তাঁর আরশের উপর
রয়েছেন। তাঁর গুণাগুণ সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে আমরা সবই তা বিশ্বাস করি।
(ইমাম যাহাবী প্রণীত মুখতাছার উলু দ্রষ্টব্য)
১০) ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন:
( الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو منه شيء )
‘আল্লাহ্ রয়েছেন আসমানে এবং তাঁর ইলম সর্বাস্থানে পরিব্যপ্ত , তার জ্ঞান থেকে কোন স্থান খালি নেই।
১১) ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন:
আমি যে তরিকার উপর প্রতিষ্ঠিত ও যাদেরকে ঐ তরিকার উপর পেয়েছি যেমন সুফিয়ান
সাওরী, মালিক প্রমখগণ তা হল- এ কথার স্বীকৃত দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন
হক মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র
রাসূল আর আল্লাহ্ তিনি আসমানে আরশের উপর রয়েছেন। তিনি তার বান্দার
নিকটবর্তী হন যে ভাবে ইচ্ছা করেন এবং যে ভাবে চান ঠিক সেভাবেই দুনিয়ার
আকাশে অবতরণ করেন …।
১২) ইমাম আহমাদ (রাহ) কে জিজ্ঞেস করা হল:
আল্লাহ্ সপ্তাকাশে আরশের উপর রয়েছেন। সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক আছেন এবং তার
কুদরত ও ইলম সকল স্থানে পরিব্যাপ্ত। উত্তরে তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি স্বীয়
আরশে রয়েছেন এবং কোন বস্তু তার ইলমের বাইরে নয়।
১৩) ইমাম ইবনে খুযাইমা বলেন:
(من
لم يقر بأن الله على عرشه استوى فوق سبع سماواته بائن من حلقه فهو كافر
يستتاب فإن تاب وإلا ضربت عنقه وألقي على مزبلة لئلا يتأذى بريحه أهل
القبلة وأهل الذمة )
”যে
ব্যক্তি স্বীকার করে না যে আল্লাহ্ তা’আলা সপ্তাকাশে স্বীয় আরশে সমুন্নত,
সৃষ্টি জগত হতে সম্পূর্ণ আলাদা-সে কাফের। তাকে তওবা করার নির্দেশ দিতে
হবে। তওবা না করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। অতঃপর তার লাশ ডাস্টবিনে
নিক্ষেপ করতে হবে যাতে করে কিবলা ওয়ালা মুসলমানগণ এবং কর প্রদানকারী
অমুসলিমগণ তার দূর্গন্ধে কষ্ট না পায়। (ইমাম যাহাবী প্রণীত মুখতাছার উলু
দ্রষ্টব্য)
১৪) বড় পীর হিসেবে খ্যাত হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) স্বীয় ‘গুনিয়াতুত্ তালেবীন’ নামক গ্রন্থে বলেন: ‘আল্লাহ্
পাক আরশে সমুন্নত রয়েছেন। রাজত্ব নিজ আয়ত্তে রেখেছেন। সমস্ত বস্তুকে
বেষ্টন করে রেখেছেন। ….. আর এ ভাবে তাঁর পরিচয় দেয়া জায়েজ নয় যে, তিনি
প্রত্যেক স্থানে বিরজমান; বরং বলতে হবে তিনি আসমানে আরশের উপর রয়েছেন
যেমনটি তিনি (নিজেই) বলেছেন:
একথা স্বাভাবিক ভাবেই বলতে হবে কোন প্রকার অপব্যখ্যা করে নয়। তিনি যে আসমানে আছেন একথা নবী-রাসলদের প্রতি নাযিলকৃত প্রত্যেক কিতাবেই লিখিত আছে। তবে আরশে তিনি কিভাবে রয়েছেন তার পদ্ধতি কারো জানা নেই।’
الرحمن على العرش استوى
“রহমান (আল্লাহ্) আরশে সমুন্নত”। (ত্বা-হা/৫) একথা স্বাভাবিক ভাবেই বলতে হবে কোন প্রকার অপব্যখ্যা করে নয়। তিনি যে আসমানে আছেন একথা নবী-রাসলদের প্রতি নাযিলকৃত প্রত্যেক কিতাবেই লিখিত আছে। তবে আরশে তিনি কিভাবে রয়েছেন তার পদ্ধতি কারো জানা নেই।’
১৫)
মানুষের সৃষ্টিগত ফিৎরাতও একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ্ তায়ালা আসমানেই
রয়েছেন সব স্থানে নয়। এর প্রমাণে আপনি আপনার স্নেহের কচি শিশুকে প্রশ্ন
করুন- আল্লাহ্ কোথায়? দেখবেন তার পবিত্র মুখ থেকে জবাব বেরুবে, ‘উপরে’। বা
সে তার কচি আঙ্গুল উঠিয়ে উপর দিকেই ইশারা করবে, অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ্)
আকাশে রয়েছেন, সব জায়গাতে নয়। আরও বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে যেগুলো দ্বারা
সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় আল্লাহ তায়ালা সব জায়গায় বিরাজমান নন। বরং তার
ক্ষমতা, রাজত্ব, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, জ্ঞান, দৃষ্টি ইত্যাদি সর্বত্র ও সব
কিছুতে বিরাজমান। কিন্তু তিনি স্বত্বাগতভাবে অবস্থান করেন, সাত আসমানের উপর
আরশে আযীমে।
সম্মানিত পাঠক! এই হল কুরআন-হাদীস এবং সালফে সালেহীনের আকিদাহ্ ও বিশ্বাস যা সংক্ষেপে উদ্ধৃত করা হল। যার সার সংক্ষেপ হল- মহান আল্লাহ্ আরশে রয়েছেন তিনি সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজিত নয়। আর এটাই হল বিশুদ্ধ আকীদা। অথচ এধরণের আকীদার অধিকারীদেরকে মাওলানা মুহিউদ্দীন উত্তর দিতে গিয়ে ‘অকাট মূর্খ অথবা বিকৃত মস্তিষ্ক বা গোমরাহ ফেরকার গোপন এজেন্ট’ রূপে গরালাগালী করেছেন।
সুতরাং সম্মানিত পাঠক,
উপরোক্ত আলোচনা পড়ে আপনিই বিচার করুন কে অকাট মূর্খ আর বিকৃত মস্তিষ্ক এবং
গোমরাহ ফেরকার গোপন এজেন্ট -কুরআন-হাদীস ও সালফে সালেহীন? না …….. ?
একটি সংশয় নিরসন:
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ্ বান্দার ‘সাথে’ রয়েছেন বলা হয়েছে। এর অর্থ
এ নয় যে তিনি তাদের সাথে মিলিত ও সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। কেননা এরূপ অর্থ
পূর্বসূরী বিদ্বানগণ কেহই করেন নি। পক্ষান্তরে এটা ভাষাগতভাবেও আবশ্যক নয়।
আল্লাহ্ তা’আলা ‘সাথে’ থাকার ব্যাখ্যা নিজেই দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন:
অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সাথে আছেন, স্ব অস্তিত্বে নয়। হযরত মুসা ও হারূন (আঃ)কে আল্লাহ্ ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন:
অত্র আয়তে আল্লাহ্ পাক সাথে থাকার অর্থ নিজেই করেছেন দেখা ও শোনার মাধ্যমে। অর্থাৎ আমি তোমাদের সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী। যেমন- সাধারণভাবে আমরা বলে থাকি ‘আপনি উমুক কাজটি করুন আমরা আপনার সাথে আছি’। অর্থাৎ আমরা আপনাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করব। যেমন- টেলিফোনে কথা বলার সময় একজন অপরজনকে বলে থাকে: কে আপনি আমার সাথে? জবাবে বলে আমি উমুক আপনার সাথে। অথচ এখানে দুজন অঙ্গা-অঙ্গী হয়ে থাকে না। দু’জন দু’দেশ থেকে কথা বলে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে সাথে থাকার অর্থ মিশে থাকা নয় বরং মহান আল্লাহ্ সেই আরশে আ’যীমে থেকেই তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা, দেখা-শোনা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি অসীম ক্ষমতাবান এবং যা চান তাই করতে পারেন।
وهو معكم أين ما كنتم والله بما تعملون بصير
“তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্মের সম্যক দ্রষ্টা।” (হাদীদ /৪) অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সাথে আছেন, স্ব অস্তিত্বে নয়। হযরত মুসা ও হারূন (আঃ)কে আল্লাহ্ ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন:
إنني معكما أسمع وأرى
“আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি শুনছি ও দেখছি।” (সূরা ত্বা-হা/ ৪৬) অত্র আয়তে আল্লাহ্ পাক সাথে থাকার অর্থ নিজেই করেছেন দেখা ও শোনার মাধ্যমে। অর্থাৎ আমি তোমাদের সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী। যেমন- সাধারণভাবে আমরা বলে থাকি ‘আপনি উমুক কাজটি করুন আমরা আপনার সাথে আছি’। অর্থাৎ আমরা আপনাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করব। যেমন- টেলিফোনে কথা বলার সময় একজন অপরজনকে বলে থাকে: কে আপনি আমার সাথে? জবাবে বলে আমি উমুক আপনার সাথে। অথচ এখানে দুজন অঙ্গা-অঙ্গী হয়ে থাকে না। দু’জন দু’দেশ থেকে কথা বলে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে সাথে থাকার অর্থ মিশে থাকা নয় বরং মহান আল্লাহ্ সেই আরশে আ’যীমে থেকেই তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা, দেখা-শোনা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি অসীম ক্ষমতাবান এবং যা চান তাই করতে পারেন।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হক জানা ও তা মানার তাওফীক দিন। আমীন।
শাইখ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
0 Comments