শহীদ কারা, শহীদ কাকে বলে, শহীদদের প্রকারভেদ, শহীদদের পরিনতি।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঋণ (মানুষের হক) ছাড়া শহীদের সকল গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন।” (মুসলিম) [1]
এর অন্য এক বর্ণনায় আছে, “আল্লাহর পথে শাহাদত বরণ ঋণ (মানুষের হক) ব্যতীত সমস্ত পাপকে মোচন করে দেয়।”[0]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(পারলৌকিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ার দিক দিয়ে) শহীদ পাঁচ ধরনের; (১) প্লেগ-রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (২) পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (৩) পানিতে ডুবে মৃত, (৪) মাটি চাপা পড়ে মৃত এবং (৫) আল্লাহর পথে থাকা অবস্থায় মৃত।” (বুখারী-মুসলিম) [1]
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা তোমাদের মাঝে কোন কোন ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য কর?” সকলেই বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে যে নিহত হয়, সেই শহীদ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদ খুবই অল্প।” লোকেরা বলল, ‘তাহলে তাঁরা কে কে হে আল্লাহর রাসূল?’ তিনি বললেন, “যে আল্লাহর পথে নিহত হয় সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে মারা যায় সে শহীদ, যে প্লেগ রোগে মারা যায় সে শহীদ, যে পেটের রোগে প্রাণ হারায়, সে শহীদ এবং যে পানিতে ডুবে মারা যায় সেও শহীদ।” (মুসলিম) [2]
‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ।” (বুখারী-মুসলিম)[3]
জীবদ্দশায় জান্নাতি হবার শুভ সংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীদের অন্যতম সাহাবী আবুল আ’ওয়ার সাঈদ ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি তার মাল-ধন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ রক্ত (প্রাণ) রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ এবং যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সেও শহীদ। (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ) [4]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি কেউ আমার মাল (অবৈধভাবে) নিতে আসে তাহলে কি করতে হবে?’ তিনি বললেন, “তুমি তাকে তোমার মাল দেবে না।” পুনরায় সে নিবেদন করল, ‘যদি সে আমার সাথে লড়াই করে?’ তিনি বললেন, “তাহলে (তুমিও) তার সাথে লড়াই কর।” সে বলল, ‘বলুন, সে যদি আমাকে হত্যা করে দেয়?’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি শহীদ হয়ে যাবে।” সে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘বলুন, আমি যদি তাকে মেরে ফেলি (তাহলে কি হবে)?’ তিনি বললেন, “তাহলে সে জাহান্নামী হবে।” (মুসলিম) [5]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ‘‘কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকদের পূর্বে যে ব্যক্তির প্রথম বিচার হবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর নিকটে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সুতরাং সে তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘ঐ নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে ‘আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করেছি এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে বলে, অমুক একজন বীর পুরুষ। সুতরাং তা-ই বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাদেরকে] আদেশ করা হবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর নিকটে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে [পৃথিবীতে প্রদত্ত] তাঁর সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে, ‘আমি ইলম শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টি-লাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইলম শিখেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর [দুনিয়াতে] তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাদেরকে] নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার ধন-দৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর নিকটে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে, ‘যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করতে ছাড়িনি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাবর্গকে] হুকুম করা হবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ৷[6]
উমার ইবনু খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন খাইবারের যুদ্ধ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী এসে বললেন, ‘অমুক অমুক শহীদ হয়েছে।’ অতঃপর তাঁরা একটি লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং বললেন, ‘অমুক শহীদ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘কখনোই না। সে (গনীমতের) মাল থেকে একটি চাদর অথবা আংরাখা (বুক-খোলা লম্বা ও ঢিলা জামা) চুরি করেছিল, সে জন্য আমি তাকে জাহান্নামে দেখলাম।’’[1]
[0] মুসলিম ১৮৭৬, আহমাদ ৭০১১ হাদিসের মানঃ সহিহ
[1] সহীহুল বুখারী ৬১৫, ৬৫৩, ৭২১, ২৪৭২, ২৬৮৯, ২৮২৯, ৫৭৩৩, মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯, ১৯১৪, তিরমিযী ২২৫, ১০৬৩, ১৯৫৮, নাসায়ী ৪৫০, ৭৭১, আবূ দাউদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০, ৭৭৮২, ৭৯৬২, ৮১০৬, ৮২৯৩, ৯২০২, ৯৭৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৫১, ২৯৫ হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] সহীহুল বুখারী ৬৫৪, ২৪৭২, মুসলিম ১৯১৪, ১৯১৫, তিরমিযী ১০৬২, ১৯৫৮, আবূ দাউদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ২৮০৪, ৩৬৮২, আহমাদ ৭৭৮২, ৭৯৭৯, ৮১০৬, ৮৩১৫, ৯১১৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৫ হাদিসের মানঃ সহিহ
[3] সহীহুল বুখারী ২৪৮০, মুসলিম ১৪১, তিরমিযী ১৪১৯, ১৪২০, নাসায়ী ৪০৮৪-৪০৮৯, আবূ দাউদ ৪৭৭১, আহমাদ ৬৪৮৬, ৬৭৭৭, ৬৭৮৪, ৬৮৮৩, ৬৯১৭, ৭০১৫, ৭০৪৪ হাদিসের মানঃসহিহ
[4] আবূ দাউদ ৪৭৭২, তিরমিযী ১৪১৮, ১৪২১, নাসায়ী ৪০৯০, ৪০৯০, ৪০৯৪, ৪০৯৫,াজা ২৫৮০, আহমাদ ১৬৩১, ১৬৩৬, ১৬৫২ হাদিসের মানঃ হাসান
[5] মুসলিম ১৪০ হাদিসের মানঃ সহিহ
[6] মুসলিম ১৯০৫, তিরমিযী ২৩৮২, নাসায়ী ৩১৩৭, আহমাদ ৮০৮৭ হাদিসের মানঃ সহিহ
[7] মুসলিম ১১৪, তিরমিযী ১৫৭৪, আহমাদ ২০৩,৩৩০, দারেমী ২৪৮৯ হাদিসের মানঃ সহিহ

Post a Comment

0 Comments