আস্তাগফিরুল্লাহ বা এসতেগফারের ফযিলতসমূহ। IBTV |
আজ আমি ইনশা আল্লাহ
পবিত্র কোরান ও হাদীসের আলোকে এসতেগফারের অসংখ্যা উপকারিতা থেকে ২৫টি উপকারিতা ও ফযিলত
আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব যে সব সমস্যায় আমরা প্রতিদিন সম্মুখিন হই দেখুন এ একটি
শব্দে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে সব সমস্যার সমাধান রেখে দিয়েছে আসুন দেখি আল্লাহ তায়ালা
আমাদের জন্য এসতেগফারের মধ্যে কি কি কারিশমা রেখে দিয়েছেন যা আমাদের জানা নাই।
তওবা এবং এস্তেগফার প্রায় একই, তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এস্তেগফার হলো জবান বা মুখ দ্বারা ক্ষমা চাওয়া আর তওবা হলো অন্তর দিয়ে ক্ষমা চাওয়া। এস্তেগফারের জন্য গোনাহ হওয়া বা গোনাহ থাকা জরুরি নয়। নবী-রাসুলরা প্রত্যহ অসংখ্যবার আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করতেন, অথচ তাদের কোনো গোনাহ ছিল না। তারা নিষ্পাপ তথা মাসুম ছিলেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে
বর্ণিত, নবী করিম (সা.) দোয়ায় বলতেন, ‘হে আল্লাহ আমার ছোট-বড়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়,
গোপনে-প্রকাশ্যে, শুরুতে ও শেষে কৃত সব গোনাহ ক্ষমা করে দাও।’ (মুসলিম)। বান্দা
তওবা ও এস্তেগফারের সমন্বয় করে দোয়া করবে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা
তোমাদের রবের কাছে তওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা
করি ও ক্ষমা চাই।’ (নাসাঈ)।
আমাদের নবী (সা.) অধিক
পরিমাণে এস্তেগফার করতেন, যদিও আল্লাহ তাঁর পূর্বাপর সবকিছু ক্ষমা করে দিয়েছেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর আগে বেশি বেশি
বলতেন, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
(বোখারি ও মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলের চেয়ে বেশি
আর কাউকে আমি ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি’ বলতে দেখিনি। (নাসাঈ)। সাওবান
(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সালামের পর তিনবার
‘আস্তাগফিরুল্লাহা’ বলতেন। (মুসলিম)।
আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত হকুম নাযিল করেন
وَاسْتَغْفِرُواْ
رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٌ وَدُودٌ
আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে মার্জনা চাও এবং তাঁরই পানে ফিরে এসো নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগার খুবই মেহেরবান অতিস্নেহময়। [ সুরা হুদ ১১:৯০ ]
পবিত্র কুরানে পাকে এসতেগফারের উপকারিতা আল্লাহ তায়ালা খুব
চমৎকার ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। একদিন এক লোক হযরত হাসান বসরী(রহ) কাছে এসে আরজ করল
হযরত আমি বড়ই গুহানগার এমন আমল বলে দিন যেন আমার গুনাহ সমুহ মাফ হয়, হযরত হাসান (রহ)
বললেন বেশী বেশী এসতেগফার পড়, এরপর আর একজন এসে আরজ করল অনেক দিন যাবত বৃষ্টি হচ্ছেনা
এমন আমল বলে দিন যাতে তা আমরা করলে আল্লাহ রহমতের বৃষ্টি বষন করবেন, হযরত বললেন বেশী
বেশী এসতেগফার পড়, এরপর আর একজন লোক আসল বলল হযরত আমি কজের দ্বারা জর্জরিত অনেক দিন
যাবৎ চেষ্ট করছি কজ পরিশোধ করতে কিন্তু পারছি না আপনি আমাকে এমন আমল এর কথা শিখান যাতে
আমি কজ থেকে মুক্ত হতে পারি। হযরত বললেন এসতেগফার পড়। এক বান্দা আসল হযুর আমার জন্য
দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাকে ছেলে সন্তান দান করেন, হযরত তাকে শিখিয়ে দিলেন বেশী বেশী
এসতেগফার কর। এরপর আরেক বান্দা আসল বলল হযুর আমার বাগানে ফল যাতে বেশী হয় সে জন্য দোয়া
করুন হযরত বলরেন তুমি বেশী বেশী এসতেগফার কর তাহলে তোমার বাগানে ফল বেশী বেশী হবে।
আর একজন আসল হযরত আমার বাড়ীতে যেন পানির যথাযথ ব্যবস্থা হয় সেজন্য দোয়া করুন হযরত জবাব
দিলেন এসতেগফার কর। এখন সে মজলিশে যারা ছিল তারা বড়ই হয়রান, যে হযরত সকল সমস্যার জন্য
একটাই আমল এর কথা বলছেন এসতেগফার, তখন একজন প্রশ্ন করল হযরত আপনি সকলকে সব ধরনের সমস্যার
জন্য একই আমল বলে দিচ্ছেন এর কারন কি? তখন হযরত হাসান (রাঃ) কোরানের আয়াত পাঠ করলেণ
সুরা নুহ এর ১০
নং আয়াত থেকে ১২ নং আয়াত
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا
رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا
অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। [ সুরা নূহ ৭১:১০ ]
يُرْسِلِ السَّمَاء
عَلَيْكُم مِّدْرَارًا
তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, [ সুরা নূহ ৭১:১১ ]
وَيُمْدِدْكُمْ
بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا
তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। [ সুরা নূহ ৭১:১২ ]
সুরা নুহের এ ৩ টি
আয়াতের দ্বারা এসতেগফারের ৬টি উপকারিতা আল্লাহতায়ালা বয়ান করে দিয়েছেন। এ
এসতেগফারের একটি আমলও যদি আমরা ধারাবাহিক ভাবে করতে পারি তাহলে আমাদের সকল সমস্যার
এর দ্বারাই সমাধান হয়ে যাবে, কেহ বলে ব্যবসায় লোকসান এটা বাগানের মত সুতরাং
এসতেগফার দ্বারা যেমন বাগানে ফসল বেশী হয় তেমনি ব্যবসায়ীরা এসতেগফার দ্বারা তাদের
ব্যবসায় বরকত আনতে পারেন। কেহ বলে সন্তান হয় না তারা এসতেগফার এর আমল করতে পারেন।
কেহ বলে খড়া সৃষ্টি হয়েছে তারাও এসতেগফার করতে পারেন, কেহ বলে কজ শেষ হয় না তারাও
এ মহান আমলটি করতে পারেন ইনশা আল্লাহ আল্লাহ তায়ালা সমাধান করে দিবেন। এটা আল্লাহর
কালাম এতে কোন ধরনের সন্দেহ নাই।
আল্লামা বগভি (রহ.)
লিখেছেন, হজরত নুহ (আ.) এর জাতি যখন বহুদিন ধরে তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে থাকে,
আল্লাহ তায়ালার নাফরমানি থেকে বিরত থাকতে অস্বীকৃত জানায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের
প্রতি বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। ৪০ বছর ধরে তাদের সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ বন্ধ
রইল, তাদের অর্থ-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গেল, এমনকি চতুষ্পদ জন্তুগুলোও শেষ হয়ে গেল। তখন
তাদের হজরত নুহ (আ.) উপদেশ দিয়েছিলেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে
ক্ষমাপ্রার্থী হও। একবার হজরত ওমর (রা.) বৃষ্টিপাতের জন্য ইসতিসকার নামাজের
উদ্দেশে বের হলেন। ময়দানে এসে তিনি শুধু তওবা-এস্তেগফার করলেন, ইসতিসকার নামাজ
আদায় করলেন না। লোকেরা প্রশ্ন করল, আপনি ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন না, শুধু
এস্তেগফার করলেন কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা এস্তেগফার করার আদেশ দিয়েছেন এবং
এর বরকতে বারিবর্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমি তাই করেছি, যা আল্লাহ তায়ালা
নির্দেশ দিয়েছেন (তাফসিরে কবির)।
সুতরাং কোরান ও হাদীস
থেকে আমরা এসতেগফারের অসংখ্যা ফযিলত ও উপকারিতা লক্ষ্য করি তার মধ্যে কয়েকটি
গুরুত্বপূর্ণ ফযিলত হলঃ
১) এসতেগফার করা নবীদের
সুন্নত।
২) এসতেগফার আল্লাহর
কাছে প্রিয় একটি আমল।
৩) এসতেগফার দ্বারা
আল্লাহর নৈকট্য হাসিল...
৪) এসতেগফার দ্বারা
গুনাহসমুহ মাফ হয়।
৫) এসতেগফার দ্বারা
ব্যবসায় লাভ হয়।
৬) এসতেগফার দ্বারা
মযাদা বৃদ্ধি পায়।
৭) এসতেগফার দ্বারা
আল্লাহর রহমত নাযিল হয়।
সহিহ নিয়তে এসতেগফার
পাঠ করলে আল্লাহ করুনা ও দয়া করবেন দলিল কুরান আযিমুশশান সুরা নিসার ১১০ নং আয়াত
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ
يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। [ সুরা নিসা ৪:১১০ ]
৮) এসতেগফার দ্বারা
সন্তান সন্ততি যাদের হয়না তাদের সন্তান হয়।
৯) এসতেগফার খড়া ও
অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১০) এসতেগফার দ্বারা
বাগানে ফসল ভাল হয়।
১১) এসতেগফার দ্বারা
কলবের ময়লা পরিস্কার হয়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, মোমিন ব্যক্তি যখন কোনো গোনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। তারপর সে যদি ফিরে আসে, গোনাহের ইচ্ছাকে মন থেকে বের করে দেয় এবং এস্তেগফার করে, তাহলে তার অন্তর পরিচ্ছন্ন করে দেয়া হয়। যদি আবার গোনাহ করে তাহলে এটি বাড়তে থাকে। অবশেষে গোনাহগুলোর কারণে তার অন্তর কালিমায় আচ্ছাদিত হয়ে যায়। বস্তুত এটিই আলোচনা করে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে,
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى
قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ
১২) এসতেগফার দ্বারা
সকল সংকিনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৩) এসতেগফার দ্বারা
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৪) এসতেগফার দ্বারা
আল্লাহ তায়ালা অকল্পনীয় স্থান থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করে দেন।
জরত আবদুল্লাহ ইবনে
আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি
এস্তেগফার করাকে সর্বদা গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে সব সংকীর্ণতার মধ্যে উদ্ধারের পথ
বের করে দেন, সব দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে মুক্তির পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে
রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন যা সে চিন্তাও করেনি।’ (আবু দাউদ ও আহমদ)।
১৫) এসতেগফার দ্বারা
সকল গুনাহসমুহ মাফ হয়ে যায়।
হজরত বিলাল ইবনে ইয়াসার
ইবনে জায়েদ (রা.) (যিনি ছিলেন প্রিয় নবী (সা.) এর আজাদকৃত গোলাম) থেকে বর্ণিত,
তিনি তার বাবা ও দাদা সূত্রে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি
পড়ে ‘আসতাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইউল কাইউম ওয়া আতুবু ইলাইহি’
তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, এমনকি ধর্মযুদ্ধ থেকে পলায়নের গোনাহও ক্ষমা করে
দেয়া হয়।” (তিরমিজি, মিশকাত)।
১৬) এসতেগফারের দ্বারা
আল্লাহর আযাব ও আসে না দলিল কোরানের সুরা আনফালের ৩৩ নং আয়াত
وَمَا كَانَ اللّهُ
لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ
يَسْتَغْفِرُونَ
অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। [ সুরা আনফাল ৮:৩৩ ]
১৭) গুনাহ নামক
মারাত্মক রোগের ঔষদ হল এসতেগফার।
হজরত আনাস ইবনে মালেক
(রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের জানাব না,
তোমাদের রোগ কী এবং তার ওষুধ কী? তোমাদের রোগ হলো গোনাহ, আর ওষুধ হলো এস্তেগফার বা
ক্ষমা প্রার্থনা করা। (বায়হাকি, আত-তারগিব)।
১৮) এসতেগফার শয়তানের
বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষে একটি চ্যালেঞ্জ।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি
(রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘ইবলিস বলেছিল, তোমার প্রতাপের
শপথ, তোমার বান্দাদের দেহে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে, ততক্ষণ আমি তাদের বিপথগামী করতে
থাকব। জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেছিলেন, আমার প্রতাপ ও মহিমার শপথ, তারা যতক্ষণ ক্ষমা
চাইতে থাকবে, আমি তাদের ততক্ষণ ক্ষমা করতে থাকব।’ (আহমদ, হাকেম)।
এছাড়াও এস্তেগফার পাঠের
মাধ্যমে।
(১৯) হৃদয় মুকুরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়।
(২০) নেক কাজ করতে মনে চায়।
(২১) গোনাহের
প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়।
(২২) হৃদয়-মন দারুণ প্রফুল্ল থাকে।
(২৩) ইবাদতে একাগ্রতা
তৈরি হয়।
(২৪) বিপদাপদ থেকে আল্লাহ তায়ালা হেফাজত করেন।
(২৫) এসতেগফার করার পর
আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়াও কবুল করেন। (সুবহানাল্লাহ)
আস্তাগফিরুল্লা-হ প্রতিদিন পাঠ করুন তবে পড়ার সময় মনে মনে নিজের গুনাহের জন্য লজ্জিত হউন, এটা যেন না
হয় জবানে এসতেগফার করছেন আর মনে মনে গুনাহের খেয়াল চলছে।
রাবেয়া বসরী (রাঃ) বলেন, আমরা
এমন ধরনের এসতেগফার করি যে সেটার উপর এসতেগফার করার প্রয়োজন হয়। অথ্যাৎ মুখে
এসতেগফার বা ক্ষমা প্রাথনা করছি গুনাহ থেকে কিন্তু মনে মনে গুনাহের খেয়াল করছি আর
এ ধরনের এসতেগফারের জন্যও ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হয়।
এস্তেগফার করলে তা
প্রকৃতার্থে এবং খালেস অন্তরে করা উচিত। কেননা গোনাহে অটল থেকে তওবা করা অর্থ
আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করা (নাউজুবিল্লাহ)।
এসতেগফার কিভাবে পড়বেন?
>>> হাদীসে ইস্তিগফারের কয়েক ধরনের শব্দ পাওয়া যায়:
১/ أستغفر الله
(আস্তাগফিরুল্লাহ) শুধু আস্তাগফিরুল্লাহ বলা।
** মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে -
كان إذا انصرف من صلاته قال أستغفر الله ثلاثا
রাসূল সা. নামাজ শেষে ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতেন।
মুসনাদে আহমদ- ২২৪০৮, তিরমিজি ৩০০
২/ أسْتَغْفِرُ اللهَ العَظِيمَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ، الحَيُّ القَيُّومُ، وَأتُوبُ إلَيهِ
** আবু দাঊদ শরিফে বর্ণিত হয়েছে:
من قال أستغفر الله العظيم الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه غفر له وإن كان فارا من الزحف.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছেন, যে ব্যক্তি এই দু‘আ পাঠ করবেঃ আসতাগফিরুল্লাহাল আযীম, আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়ূম ওয়া আতূবু ইলায়হি’’ সে জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হবে।
আবু দাউদ ১৫১৭
৩/ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
** তিরমিজি ও আবু দাউদে আছে
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ إِنْ كُنَّا لَنَعُدُّ لِرَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فِي الْمَجْلِسِ الْوَاحِدِ مِائَةَ مَرَّةٍ " رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
ইবনু ‘উমার রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দু‘আ পাঠ করেছেন এবং আমরা তা গণনা করেছিঃ ‘‘রব্বিগফিরলী ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহীম।’’
প্রভূ হে! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার তাওবাহ কবুল করে নাও, তুমিই তাওবাহ কবুলকারী ও দয়ালু।
আবু দাউদ -১৫১৬ তিরমিজি -৩৪৩৪
৪/ أستغفر الله و أتوب إليه
*** সুনানে নাসায়ী কুবরা তে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ خَالِدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحُسَيْنِ قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: " مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ أَنْ يَقُولَ: أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ، مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "
আবু হোরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূল সা. এর চাইতে কাউকে অধিক এই এস্তেগফার বলতে শুনি নি "আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি"!
নাসায়ী কুবরা- ১০২১৫, মুনতাখাবে মুসনাদ আবদ বিন হুমায়দ - ১৪৬৫
৫/ সুনানে দারেমী তে আছে, রাসূল সা. দৈনিক একশতবার এই এস্তেগফার করতেন। ৩/১৭৯১, হা-২৭৬৫
*** ইবনে মাজাহ শরিফে বর্ণিত হয়েছে:
إنَّ رسولَ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ أُتِيَ بلصٍّ فاعترفَ اعترافًا ولم يوجَد معَهُ المتاعُ. فقالَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ ما إخالُكَ سرقتَ قالَ بلى. ثمَّ قالَ ما إخالُكَ سرقتَ قالَ بلى. فأمرَ بِهِ فقُطِعَ فقالَ النَّبيُّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ قل أستغفِرُ اللَّهَ وأتوبُ إليهِ قالَ أستغفرُ اللَّهَ وأتوبُ إليهِ. قالَ اللَّهمَّ تُب عليهِ مرَّتينِ
ইবনে মাজা ২৫৯৭, মুসনাদে আহমদ -২২৫০৮, আবু দাউদ-৪৩৮০
৬/ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
***- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি বেশি এই দুয়া পড়তেন। এমনকি রাসূল সা. এন্তেকালের আগেও এই দুয়াটা অনেকবার করেছেন। (সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, আসতাগফিরুল্লাহি ওয়া আতুবু ইলাইহ)
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ قَبْلَ مَوْتِهِ أَنْ يَقُولَ: «سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ، أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، وَأَتُوبُ إِلَيْهِ»
সহীহ মুসলিম- ৪৮৪, সহীহ ইবনে হিব্বান- ৬৪১১
৭/ اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
****- সায়্যিদুল এস্তেগফার-
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
◈ ━━━━━━ ⸙ ━━━━━━ ◈
প্রতিদিন কমপক্ষে নিম্নের আমলগুলো করুন।
>>নিম্নের লিংক ক্লিক করে ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন<<
১/ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।
২/ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করুন। না পারলে কয়েকটি সূরা হলেও পড়ুন।
৩/ যত বেশি সম্ভব أَسْتَغْفِرُالله ( আস্তাগফিরুল্লা-হ) পড়ুন। দিনে কমপক্ষে ১০০ বার পড়ুন।
৪/ লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ - জিকিরটি বেশি বেশি করুন।
৫/ বেশি বেশি দুরুদ শরীফ (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পাঠ করুন।
৬/ প্রতিদিন কিছু না কিছু দান-সদকাহ করার চেষ্টা করুন। সদকায়ে জারিয়া চালু করুন।
শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইনশাল্লাহ! দ্বীনি কথা প্রচার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামিক বাংলা টিভি (Islamic Bangla Tv) - এর সঙ্গেই থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আল্লাহ্ সুবনাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন, ছুম্মা আমিন।
#ibtv
#ibtv99
#ibtv99
1 Comments
কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম
ReplyDelete