কান মাসাহ করার সময় নতুন পানি নেওয়া :
ওযূতে কান মাসাহ করার ক্ষেত্রে মাথা ও কান একই সঙ্গে একই পানিতে মাসাহ
করবে। ثُمَّ قَبَضَ قَبْضَةً مِنَ الْمَاءِ ثُمَّ نَفَضَ يَدَهُ ثُمَّ
مَسَحَ بِهَا رَأْسَهُ وَأُذُنَيْهِ ‘অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এক অঞ্জলি পানি
নিতেন এবং হাত ঝাড়তেন। তারপর এর দ্বারা তাঁর মাথা ও কান মাসাহ করতেন’।[1] এ
জন্য পৃথকভাবে নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দুই কান
মাথার অন্তর্ভুক্ত’।[2] তাছাড়া বায়হাক্বীতেও একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ
করার ছহীহ হাদীছ এসেছে।[3] নতুনভাবে পানি নেয়ার হাদীছটি ছহীহ নয়।
যেমন-
যেমন-
(أ) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ يَأْخُذُ
لِأُذُنَيْهِ مَاءً غَيْرَ الْمَاءِ الَّذِىْ أَخَذَهُ لِرَأْسِهِ.
(ক) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছেন
যে, পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করেছেন। অতঃপর তা ব্যতীত কান মাসাহ করার জন্য
পৃথক পানি নিয়েছেন।[4]
তাহক্বীক্ব : উক্ত শব্দে বর্ণিত হাদীছ যঈফ। উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার পরে
হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী ও বায়হাক্বীর যে মন্তব্য ইবনু
হাজার আসক্বালানী তুলে ধরেছেন তা মূলতঃ এই হাদীছের ক্ষেত্রে নয়; বরং হাত
ধৌত করার পর নতুন করে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করা সংক্রান্ত হাদীছটির
ব্যাপারে, যা ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।[5]
তাই আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, لَمْ أَقِفْ عَلَى حَدِيْثٍ
مَرْفُوْعٍ صَحِيْحٍ خَالٍ عَنِ الْكَلاَمِ يَدُلُّ عَلَى مَسْحِ
الْأُذُنَيْنِ لِمَاءٍ جَدِيْدٍ ‘সমালোচনা থেকে মুক্ত এমন কোন মারফূ হাদীছ এ
ব্যাপারে আছে বলে আমি অবগত নই, যার দ্বারা নতুন পানি নিয়ে কান মাসাহ করা
যাবে’।[6]
(ب) عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ يَأْخُذُ الْمَاءَ بِإِصْبَعَيْهِ لِأُذُنَيْهِ.
(খ) নাফে‘ বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ওযূ করতেন, তখন কান মাসাহ করার জন্য দুই আঙ্গুলে পানি নিতেন।[7]
তাহক্বীক্ব : এ বর্ণনাটিও যঈফ। বায়হাক্বীর মুহাক্কিক মুহাম্মাদ আব্দুল
কবাদির ‘আতা বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, দুই কান মাথার
অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ঐ হাদীছগুলো যঈফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।[8]
উল্লেখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ব্যক্তিগত আমলকে ইবনুল ক্বাইয়িম ছহীহ বলতে
চেয়েছেন। কিন্তু উক্ত ত্রুটি থাকার কারণে তা যঈফ। যেমন তিনি বলেন,لَمْ
يَثْبُتْ عَنْهُ أَنَّهُ أَخَذَ لَهُمَا مَاءً جَدِيْدًا وَإِنَّمَا صَحَّ
ذَلِكَ عَنْ عُمَرَ ‘রাসূল (ছাঃ) দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি
নিয়েছেন এমন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি। তবে ইবনু ওমর থেকে সেটা ছহীহ হিসাবে
বর্ণিত হয়েছে’।[9]
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, لاَ حَاجَةَ لأَِخْذِ مَاءٍ جَدِيْدٍ مُنْفَرِدٍ
لِمَسْحِ الْأُذُنَيْنِ غَيْرَ مَاءِ الرَّأْسِ بَلْ يَجْزِِيْ مَسْحُهُمَا
بِبَلَلِ مَاءِ الرَّأْسِ. ‘দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার
প্রয়োজন নেই। বরং মাথা মাসহের জন্য নেয়া পানির সিক্ততা দিয়েই দুই কান মাসাহ
করা জায়েয’।[10] অতএব কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই;
বরং মাথা ও কান একই সঙ্গে মাসাহ করতে হবে।
জ্ঞাতব্য : অনেকে কান মাসাহকে ফরয বলেন না। অথচ কানসহ মাথা মাসাহ করা ফরয।
কারণ দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দুই কান মাথার
অন্তর্ভুক্ত’।[11] তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করতেন।
যেমন- ثُمَّ غَرَفَ غَرْفَةً فَمَسَحَ رَأْسَهُ وَأُذُنَيْهِ ‘অতঃপর তিনি
এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং মাথা ও দুই কান মাসাহ করতেন’।[12]
[1]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৩৭, ১/১৮ পৃঃ। [2]. তিরমিযী হা/৩৭, ১/১৬ পৃঃ; ইবনু
মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬; ইরওয়াউল
গালীল হা/৮৪। [3]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস-সুনানুল
কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ। [4]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার
হা/১৯১, ১/২২৯ পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/৩৯, পৃঃ ২৩। [5]. ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২,
১/১২৩ পৃঃ। [6]. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/১২২ পৃঃ, হা/২৮-এর আলোচনা; বিস্তারিত
আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৪৬ ও ৯৯৫; মাজমূউ ফাতাওয়া আলবানী, পৃঃ ৩৬।
[7]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩১৪; মুওয়াত্ত্বা হা/৯২। [8]. وأما ما
روي عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال الأذنان من الرأس فروى ذلك
بأسانيد ضعاف -ঐ, বায়হাক্বী হা/৩১৭-এর ভাষ্য দ্রঃ। [9]. ইমাম শাওকানী,
নায়লুল আওত্বার ১/২০০ পৃঃ; বুলূগুল মারাম, পৃঃ ২৩-এর উক্ত হাদীছের ভাষ্য
দ্রঃ। [10]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬-এর ভাষ্য দ্রঃ। [11]. তিরমিযী হা/৩৭,
১/১৬ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৩৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪। [12]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৩৭; বায়হাক্বী,
আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ।
0 Comments