সালাম দেয়ার পদ্ধতি, কিভাবে সালাম দিতে হয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدْخُلُواْ بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهْلِهَا ﴾ [النور: ٢٧]

অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নূর ২৭ আয়াত)

 তিনি আরো বলেন,

﴿وَإِذَا بَلَغَ ٱلۡأَطۡفَٰلُ مِنكُمُ ٱلۡحُلُمَ فَلۡيَسۡتَ‍ٔۡذِنُواْ كَمَا ٱسۡتَ‍ٔۡذَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۚ﴾ [النور: ٥٩]

অর্থাৎ “তোমাদের শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মত (সর্বদা) অনুমতি প্রার্থনা করে।” (সূরা নূর ৫৯ আয়াত)

আবূ মূসা আশ্আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অনুমতি তিনবার নেওয়া চায়। যদি তোমাকে অনুমতি দেয় (তাহলে ভিতরে প্রবেশ করবে) নচেৎ ফিরে যাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [0]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘এই জিব্রীল আলাইহিস সালাম তোমাকে সালাম পেশ করছেন।’’ তিনি বলেন, আমিও উত্তরে বললাম, ‘অআলাইহিস সালামু অরাহ্তুল্লাহি অবারাকাতুহ।’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]

এই গ্রন্থদ্বয়ের কোন কোন বর্ণনায় ‘অবারাকাতুহ’ শব্দ এসেছে, আবার কোন কোন বর্ণনায় তা আসেনি। তবুও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর অতিরিক্ত বর্ণনা গ্রহণীয়।

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন, তখন তা তিনবার বলতেন; যাতে তাঁর কথা বুঝতে পারা যায়। আর যখন কোন গোষ্ঠীর কাছে আসতেন তখনও তিনি তিনবার করে সালাম পেশ করতেন। (বুখারী) [2]

এ বিধান সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে ক্ষেত্রে জনতার সংখ্যা খুব বেশী হবে।

মিক্বদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি স্বীয় দীর্ঘ হাদীসে বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য তাঁর অংশের দুধ রেখে দিতাম। তিনি রাতের বেলায় আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যে, তাতে কোন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দিতেন না এবং জাগ্রত ব্যক্তিদেরকে শুনাতেন। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর অভ্যাসমত) এসে সালাম দিলেন, যেমন তিনি সালাম দিতেন। (মুসলিম) [3]

আসমা বিনতে য়্যাযীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের একদল মহিলার নিকট দিয়ে পার হওয়ার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন। (আবূ দাঊদ) [4]

(প্রকাশ থাকে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতের ইশারায় মহিলাদেরকে সালাম দেওয়ার তিরমিযীর হাদীসটি সহীহ নয়।)

আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী মানুষ সেই, যে প্রথমে সালাম করে।’’ (আবূ দাঊদ সহীহ সনদ যোগে, তিরমিযীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন হাদীসটি হাসান। এটি পরবর্তীতে ৮৬৩ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে।) [5]

আবূ জুরাই হুজাইমী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হয়ে বললাম, ‘আলাইকাস সালাম’ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, ‘‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। কেননা, ‘আলাইকাস সালাম’ হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদেরকে জানানো অভিবাদন বাক্য।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিযী হাসান সহীহ, ইতোপূর্বে সম্পূর্ণ হাদীসটি ৮০০ নম্বরে গত হয়েছে।) [6]

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আরোহী পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দেবে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [7]

বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘ছোট বড়কে সালাম দেবে।’’

আবূ উমামাহ সুদাই ইবনে আজলান বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর নিকটবর্তী সেই, যে লোকদেরকে প্রথমে সালাম করে।’’ (আবূ দাঊদ উত্তম সূত্রে) [8]

তিরমিযীও আবূ উমামাহ কর্তৃক বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! দু’জনের সাক্ষাৎকালে তাদের মধ্যে কে প্রথমে সালাম দেবে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে।’’ (তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান)

  আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি তাদের দু’জনের মাঝে গাছ বা দেওয়াল অথবা পাথর আড়াল হয়, তারপর আবার সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন আবার সালাম দেয়।’’ (আবূ দাঊদ) [9]

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য করো।’’ (মুসলিম) [10]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিতাবধারীরা (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা) যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা জবাবে বল, ‘ওয়া আলাইকুম।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [11]

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ সভায় পৌঁছবে তখন সালাম দেবে। আর যখন সভা ছেড়ে চলে যাবে, তখনও সালাম দেবে। কেননা, প্রথম সালাম শেষ সালাম অপেক্ষা বেশী উত্তম নয়।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান হাদীস) [12]

[0] সহীহুল বুখারী ৬২৪৫, ২০৬২, ৭৩৫৩, মুসলিম ২১৫৪, আবূ দাউদ ৫১৮১, আহমাদ ১৯০১৬, ১৯০৬২, ১৯০৮৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৯৮ হাদিসের মানঃ সহিহ
[1] সহীহুল বুখারী ৩১১৭, ৩৭৬৮,৬২০১, ৬২৪৯, ৬২৫৩, মুসলিম ২৪৪৭, তিরমিযী ২৬৯৩, ৩৮৮১, ৩৮৮২, নাসায়ী ৩৯৫২, ৩৯৫৩, ৩৯৫৪, আবূ দাউদ ৫২৩২, ইবনু মাজাহ ৩৬৯৬, আহমাদ ৩২৭৬০, ২৩৯৪১, ২৪০৫৩, ২৫৩৫২। হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] সহীহুল বুখারী ৯৪, ৯৫, তিরমিযী ২৭২৩, ৩৬৪০, আহমাদ ১২৮০৯, ১২৮৯৫। হাদিসের মানঃ সহিহ
[3] মুসলিম ২০৫৫, তিরমিযী ২৭১৯, আহমাদ ২৩৩০০, ২৩৩১০। হাদিসের মানঃ সহিহ
[4] তিরমিযী ২৬৯৭, আবূ দাউদ ৫২০৪, ইবনু মাজাহ ৩৭০১, আহমাদ ২৭০১৪, দারেমী ২৬৩৭। হাদিসের মানঃ সহিহ
[5] আবূ দাউদ ৫১৯৭, তিরমিযী ২৬৯৪, আহমাদ ২১৬৮৮, ২১৭৭৬, ২১৮১৪ হাদিসের মানঃ হাসান
[6] তিরমিযী ২৭২১, ২৭২২, আবূ দাউদ ৫০২৯ হাদিসের মানঃ হাসান
[7] সহীহুল বুখারী ৬২৩১, ৬২৩২, ৬২৩৪, ৩১, ৩২, ৩৪, মুসলিম ২১৬০, তিরমিযী ২৭০৩, আবূ দাউদ ৫১৯৮, আহমাদ ২৭৩৭৯, ৮১১৩, ১০২৪৬ হাদিসের মানঃ সহিহ
[8] তিরমিযী ২৬৯৪, আবূ দাউদ ৫১৯৭, আহমাদ ২১৬৮৮, ২১৭৪৯, ২১৭৭৬, ২১৮১৪ হাদিসের মানঃ হাসান
[9] আবূ দাউদ ৫২০০ হাদিসের মানঃ সহিহ
[10] মুসলিম ২১৬৭, তিরমিযী ২৭০০, আবূ দাউদ ১৪৯, আহমাদ ৭৫১৩,৭৫৬২,৮৩৫৬,৯৪৩৩,৯৬০৩,১০৪৪১৮ হাদিসের মানঃ সহিহ
[11] সহীহুল বুখারী ৬২৫৮, ৬৯২৬, মুসলিম ২১৬৩, তিরমিযী ৩৩০১, আবূ দাউদ ৫২০৭, ইবনু মাজাহ ৩৬৯৭, আহমাদ ১১৫৩৭,১১৭০৫,১১৭৩১,১২০১৯, ১২৫৮, ১২৫৮৩, ১২৬৭৪, ১৩৩৪৫ হাদিসের মানঃ সহিহ
[12] আবূ দাউদ ৫২০৮, তিরমিযী ২৭০৬, আহমাদ ৭৭৯৩, ৭১০২, ৯৩৭২ হাদিসের মানঃ হাসান
সালাম দেয়ার গুরুত্ব ও ফযিলত,রাসূল (ছাঃ) এর উপর দরুদ পাঠের ফযিলত,

সালাম দেয়ার পদ্ধতি,islam k janun


সূরা আল হাশর:7 - রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মুহাম্মদ:33 - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।

Post a Comment

0 Comments