আল্লাহ
বলেন, ﴿ وَقُل رَّبِّ زِدۡنِي
عِلۡمٗا ١١٤ ﴾ (طه: ١١٤)
অর্থাৎ
বল, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর। (ত্বা-হা
১১৪ আয়াত)
তিনি
অন্যত্র বলেন, ﴿ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ
لَا يَعۡلَمُونَۗ ٩ ﴾ (الزمر: ٩)
অর্থাৎ
বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান?
(যুমার ৯ আয়াত)
আল্লাহ
আরও বলেন,﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ ١١ ﴾ (المجادلة: ١١)
অর্থাৎ
যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। (মুজাদালা
১১ আয়াত)
তিনি
অন্য জায়গায় বলেন,﴿ إِنَّمَا يَخۡشَى
ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨ ﴾ (فاطر: ٢٨)
অর্থাৎ
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (ফাত্বের ২৮ আয়াত)
1/1384 وَعَن مُعَاوِيةَ رضي
الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم «مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْراً
يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১৩৮৪।
মুআবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই
দ্বীনী জ্ঞান দান করেন।” (বুখারী) [1]
2/1385 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ
مَالاً، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الحَقِّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ
الحِكْمَةَ، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১৩৮৫। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেবল দু’জন
ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তাকে তা
সৎপথে ব্যয় করার শক্তিও দিয়েছেন। আর সেই লোক যাকে আল্লাহ জ্ঞান-বুদ্ধি দান করেছেন, যার বদৌলতে সে বিচার-ফায়সালা করে থাকে ও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী ও মুসলিম) [2]
এখানে
ঈর্ষা বলতে, অপরের ধন ও জ্ঞান দেখে মনে মনে তা পাওয়ার
আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা। সেই সাথে এই কামনা থাকে না যে, অপরের
ধ্বংস হয়ে যাক।
3/1386 وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم: «مَثَلُ مَا بَعَثَنِي الله بِهِ مِنَ الهُدَى وَالعِلْمِ
كَمَثَلِ غَيْثٍ أَصَابَ أَرْضاً ؛ فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفَةٌ طَيِّبةٌ قَبِلَتِ
المَاءَ فَأَنْبَتَتِ الكَلأَ، وَالعُشْبَ الكَثِيرَ، وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ
أَمْسَكَتِ المَاءَ، فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ، فَشَرِبُوا مِنْهَا وَسَقَوْا
وَزَرَعُوا، وَأَصَابَ طَائِفَةً مِنْهَا أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ ؛ لاَ
تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ
اللهِ، وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ، فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ مَنْ
لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأساً، وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ
بِهِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১৩৮৬।
আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে
পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা জমিনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে
শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সবজি উৎপন্ন করে। এবং তার এক অংশ চাষের
অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হতে পান করে
এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক
অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না
ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন
করল এবং আমি যে হিদায়েত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার
দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও)
শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর
সেই হিদায়েতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।” (বুখারী ও মুসলিম) [3]
4/1387 وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه:أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ لِعَليٍّ رضي الله عنه: «فَوَاللهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً
خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১৩৮৭।
সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খায়বার যুদ্ধের সময়) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে সম্বোধন করে বললেন, “আল্লাহর শপথ!
তোমার দ্বারা একটি মানুষকেও যদি আল্লাহ সৎপথ দেখান, তবে তা
(আরবের মহামূল্যবান) লাল উঁটনী অপেক্ষা উত্তম হবে।” (বুখারী-মুসলিম) [4]
5/1388 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ:
«بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي
إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ
مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ».
رواه البخاري
৫/১৩৮৮। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমার পক্ষ থেকে জনগণকে
(আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইসরাইল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে
কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত-ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদিস)
আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।” (বুখারী) [5]
**
(প্রকাশ থাকে যে, বনী-ইসরাইল হতে কেবল ইসলাম সমর্থিত হাদিস
বর্ণনা করতে পারা যায়। ব্যাপকভাবে তাদের সব রকম হাদিস গ্রহণ করা সমীচীন নয়। আর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা আরোপ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ফলে হাদিস অতি সতর্কভাবে
বর্ণনা করা আবশ্যক এবং জাল ও দুর্বল হাদিস থেকে বিরত থাকা নৈতিক কর্তব্য। সহীহ-দ্ব‘ঈফ হাদিসের গ্রন্থ ও কম্পিউটার পোগ্রাম বর্তমানে প্রায় সর্বত্র
সুলভ। সুতরাং হাদিস সম্বন্ধেও যাচাই-বাছাই করা মুসলিমদের একটি দ্বীনী কর্তব্য।)
6/1389 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقاً يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْماً،
سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقاً إِلَى الجَنَّةِ» . رواه مسلم
৬/১৩৮৯।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে
ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।” (মুসলিম)
[6]
7/1390 وَعَنه أَيضاً رضي الله
عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ:
«مَنْ دَعَا إِلَى هُدىً كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ
أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئاً» . رواه مسلم
৭/১৩৯০।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে
ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান জানাবে, সে তার অনুসারীদের
সমতুল্য নেকীর অধিকারী হবে; তাতে তাদের নেকীর কিছুই হ্রাস
পাবে না।” (মুসলিম) [7]
8/1391 وَعَنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: «إِذَا مَاتَ ابْنُ آدَمَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ
ثَلاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ
يَدْعُو لَهُ»
. رواه مسلم
৮/১৩৯১।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন
তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব রকম আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; সদকা
জারিয়াহ (বহমান দান খয়রাত, মসজিদ নির্মাণ করা,
কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) অথবা ইলম (জ্ঞান সম্পদ) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া
যায় অথবা সুসন্তান যে তার জন্য নেক দো‘আ করতে থাকে।” (মুসলিম) [8]
9/1392 وَعَنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم يَقُولُ: «الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا، إِلاَّ ذِكْرَ
اللهِ تَعَالَى، وَمَا وَالاَهُ، وَعَالِماً، أَوْ مُتَعَلِّماً» . رواه الترمذي،
وقال: حديث حسن
৯/১৩৯২।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, “ইহজগৎ অভিশপ্ত, এর মধ্যে
যা কিছু আছে সব অভিশপ্ত। তবে মহান আল্লাহর যিকির ও তার সংশ্লিষ্ট ক্রিয়া (তাঁর
আনুগত্য) এবং আলেম অথবা তালিবে ইলমের কথা স্বতন্ত্র।” (তিরমিযী হাসান) [9]
10/1393 وَعَنْ أنسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم : «مَن خَرَجَ فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ، فَهُوَ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ حَتّىٰ يَرْجِعَ»
رواهُ الترْمِذيُّ وقال: حديثٌ حَسنٌ .
১০/১৩৯৩। আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা
পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয়। (ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান
বলেছেন)[10]
11/1394. وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الخُدْرِي رضي الله عنه، عَنْ
رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَنْ يَّشْبَعَ مُؤمِنٌ مِّنْ خَيْرٍ حَتّىٰ يَكُوْنَ
مُنْتَهَاهُ الْجَنَّةَ» . رواهُ الترمذيُّ، وقَالَ: حديثٌ حسنٌ .
১১/১৩৯৪। আবূ
সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মু‘মিনকে কল্যাণ
(দ্বীনের জ্ঞান) কখনো তৃপ্তি দিতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত
তার শেষ গন্তব্য জান্নাতে পৌঁছে। দ্ব‘ঈফ (তিরমিযী হাদিসটিকে
হাসানা বলেছেন)[11]
12/1395 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ» ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ
اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّماوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي
جُحْرِهَا وَحَتَّى الحُوْتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِي النَّاسِ الخَيْرَ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
১২/১৩৯৫।
আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আলেমের
ফযীলত আবেদের উপর ঠিক সেই রূপ, যেরূপ আমার ফযীলত তোমাদের
উপর।” তারপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, আসমান-জমিনের সকল
বাসিন্দা এমনকি গর্তের মধ্যে পিঁপড়ে এবং (পানির মধ্যে) মাছ পর্যন্ত মানবমন্ডলীর
শিক্ষাগুরুদের জন্য মঙ্গল কামনা ও নেক দো‘আ করে থাকে।” (তিরমিযী হাসান)[12]
13/1396. وَعَن أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه،
قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَنْ سَلَكَ طَرِيقاً يَبْتَغِي فِيهِ عِلْماً سَهَّلَ
اللهُ لَهُ طَرِيقاً إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ المَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ
أَجْنِحَتَهَا لِطَالِبِ العِلْمِ رِضاً بِمَا يَصْنَعُ، وَإِنَّ العَالِمَ
لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى
الحِيتَانُ فِي المَاءِ، وَفَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِ القَمَرِ
عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ، وَإِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ، وَإِنَّ
الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَاراً وَلاَ دِرْهَماً وَإِنَّمَا وَرَّثُوا
العِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بحَظٍّ وَافِرٍ». رواه أَبُو
داود والترمذي
১৩/১৩৯৬। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে, যাতে
সে জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে
দেন। আর ফেরেশতাবর্গ তালেবে ইলমের জন্য তার কাজে প্রসন্ন হয়ে নিজেদের ডানাগুলি
বিছিয়ে দেন। অবশ্যই আলেম ব্যক্তির জন্য আকাশ-পৃথিবীর সকল বাসিন্দা এমনকি পানির মাছ
পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। আবেদের উপর আলেমের ফযীলত ঠিক তেমনি, যেমন সমগ্র নক্ষত্রপুঞ্জের উপর পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত। উলামা
সম্প্রদায় পরগম্বরদের
উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, পয়গম্বরগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী
বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইলমের (দ্বীনী জ্ঞানভাণ্ডারের)
উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা অর্জন করল, সে
পূর্ণ অংশ লাভ করল।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
[13]
14/1397 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ:
سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا شَيْئاً،
فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ، فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى مِنْ سَامِعٍ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১৪/১৩৯৭। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
শুনেছি যে, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির শ্রীবৃদ্ধি করুন, যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে (আমার কোন) হাদিস শুনে যথাযথরূপে
হুবহু অপরকে পৌঁছে দেয়। কেননা, যাকে হাদিস বর্ণনা করা হয়
এমনও হতে পারে যে, সে শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও
স্মৃতিধর।” (তিরমিযী, হাসান
সহীহ) [14]
15/1398 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ سُئِلَ عَن عِلْمٍ فَكَتَمَهُ، أُلْجِمَ يَوْمَ
القِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ» .
رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
১৫/১৩৯৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়,
আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন
তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (আবূ
দাউদ, তিরমিযী, হাসান) [15]
16/1399 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَعَلَّمَ عِلْماً مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ -
عَزَّ وَجَلَّ - لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضاً مِنَ
الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ يَعْنِي: رِيحَهَا . رواه أَبُو داود بإسناد
صحيح
১৬/১৩৯৯।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল,
যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা
সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের
দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ
দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)[16]
17/1400 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ
العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ:
«إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعاً
يَنْتَزعهُ مِنَ النَّاسِ، وَلكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ،
حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِماً، اتَّخَذَ النَّاسُ رُؤُوساً جُهَّالاً،
فَسُئِلُوا فَأَفْتوا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا . متفقٌ عَلَيْهِ
১৭/১৪০০।
‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে
নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার
মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন
আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে
নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর
তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং
অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)[17]
[1] সহীহুল বুখারী ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০, মুসলিম ১০৩৭, ইবনু মাজাহ ২২১,
আহমাদ ১৬৩৯২, ১৬৪০৭, ১৬৪১৮, ১৬৪৩২, ১৬৪৪৬, ১৬৪৪৫১, ১৬৪৬০, ১৬৪৭৬, মুওয়াত্তা
মালিক ১৬৬৭, দারেমী ২২৪, ২২৬
[6] মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০,
তিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫৪, আবূ দাউদ ১৪৫৫, ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯,
৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪
[9] তিরমিযী ২৩২২, ইবনু মাজাহ ৪১১২
[10] প্রথমে
হাদীসটিকে দ্ব‘ঈফ (দুর্বল) বললেও পরবর্তীতে শাইখ আলবানী
হাসান লিগাইরিহি আখ্যা দেন। দেখুন “সহীহ্ তারগীব অত্তারহীব”(৮৮) ও “মুখতাসারু কিতাবিল ই‘লাম
বেআখিরি আহকামিল আলবানী আলইমাম” (২২০)। অতএব এ হাদীসটি
দুর্বল নয় বরং হাসান লিগাইরিহি।
[11] আমি
(আলবানী) বলছিঃ বরং হাদীসটি দুর্বল। যেমনটি আমি “আলমিশকাত” গ্রন্থে (২২২) এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। উল্লেখ্য আবুল হায়াসাম
হতে বর্ণনাকারী দাররাজের বর্ণনা সহীহ্ নয় বরং দুর্বল। শু‘য়াইব
আলআরনাঊতও হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। দেখুন আবূ আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ্
নায়াঅনী কর্তৃক লিখিত গ্রন্থঃ “মাজমূ‘আতুল
আহাদীসুয য‘ঈফাহ্ ফী কিতাবি রিয়াযিস সালেহীন”
(২৬)।
[12] তিরমিযী ২৬৮৫, দারেমী ২৮৯
[13] আবূ দাউদ ৩৬৪১, দারেমী ৩৪২
[17] সহীহুল
বুখারী ১০০, ৭৩০৭, মুসলিম ২৬৭৩, তিরমিযী ২৬৫২, ইবনু মাজাহ ৫২,
আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী ২৩৯
_________________________________________________________________________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
0 Comments