চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সালাত, |
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ছালাত (صلاة الكسوف والخسوف)
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ কালে যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ছালাতুল কুসূফ ও
খুসূফ বলা হয়। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আল্লাহর অপার কুদরতের অন্যতম নিদর্শন।
এই গ্রহণ শুরু হ’লে আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভীতি সহকারে এর ক্ষতি
থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে জামা‘আত সহ দু’রাক‘আত ছালাত দীর্ঘ ক্বিরাআত ও
ক্বিয়াম সহকারে আদায় করতে হয় এবং শেষে খুৎবা দিতে হয়।[1] এই ছালাতের বিশেষ
পদ্ধতি রয়েছে। যাতে দু’রাক‘আত ছালাতে (২+২) ৪টি রুকূ হয় এবং এটিই সর্বাধিক
বিশুদ্ধ।[2]
পদ্ধতি : আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময়ে
একবার সূর্য গ্রহণ হ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করেন ও লোকেরাও
তাঁর সাথে ছালাত আদায় করে। প্রথমে তিনি ছালাতে দাঁড়ালেন এবং সূরা
বাক্বারাহর মত দীর্ঘ ক্বিরাআত করলেন। অতঃপর (১) দীর্ঘ রুকূ করলেন। তারপর
মাথা তুলে ক্বিরাআত করতে লাগলেন। তবে প্রথম ক্বিরাআতের চেয়ে কিছুটা কম
ক্বিরাআত করে (২) রুকূতে গেলেন। এবারের রুকূ প্রথম রুকূর চেয়ে কিছুটা কম
হ’ল। তারপর তিনি রুকূ থেকে মাথা তুলে সিজদা করলেন। অতঃপর সিজদা শেষে তিনি
উঠে দাঁড়ালেন এবং লম্বা ক্বিরাআত করলেন। তবে প্রথমের তুলনায় কিছুটা ছোট।
এরপর তিনি (৩) রুকূ করলেন, যা আগের রুকূর চেয়ে কম ছিল। রুকূ থেকে মাথা তুলে
পুনরায় ক্বিরাআত করলেন। যা প্রথমের তুলনায় ছোট ছিল। অতঃপর তিনি (৪) রুকূ
করলেন ও মাথা তুলে সিজদায় গেলেন। পরিশেষে সালাম ফিরালেন।
ইতিমধ্যে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গেল। অতঃপর ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে তিনি খুৎবা
দিলেন এবং হামদ ও ছানা শেষে বললেন যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন
সমূহের মধ্যে দু’টি বিশেষ নিদর্শন। কারু মৃত্যু বা জন্মের কারণে এই গ্রহণ
হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দিবে, ছালাত
আদায় করবে ও ছাদাক্বা করবে। ... আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা যদি তোমরা
জানতে, তাহ’লে তোমরা অল্প হাসতে ও অধিক ক্রন্দন করতে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে
যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। অতএব যখন তোমরা
সূর্য গ্রহণ দেখবে, তখন ভীত হয়ে আল্লাহর যিকর, দো‘আ ও ইস্তেগফারে রত হবে।
[3]
বিজ্ঞানের যুক্তি : সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই
সরলরেখায় চলে আসে। ফলে সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণী শক্তি বেশী মাত্রায়
পৃথিবীর উপরে পতিত হয়। এর প্রচন্ড টানে অন্য কোন গ্রহ থেকে পাথর বা কোন
মহাজাগতিক বস্ত্ত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে পৃথিবী ধ্বংসের একটা কারণও হ’তে
পারে। ১৯০৮ সালের ৩০ শে জুন ১২ মেগাটন টিএনটি ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫০ ফুট
দৈর্ঘ্যের একটি বিশালাকার জ্বলন্ত পাথর (মিটিওরাইট) রাশিয়ার সাইবেরিয়ার
জঙ্গলে পতিত হয়ে ৪০ মাইল ব্যাস সম্পন্ন ধ্বংসগোলক সৃষ্টি করেছিল। আগুনের
লেলিহান শিখায় লক্ষ লক্ষ গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।[4]
‘কুসূফ’ ও ‘খুসূফ’-এর ছালাত আদায়ের মাধ্যমে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ক্ষতিকর
প্রভাব হ’তে আল্লাহর নিকটে পানাহ চাওয়া হয়। এই ছালাতের অন্যতম উদ্দেশ্য
হ’ল, আল্লাহর এই সব সৃষ্টিকে পূজা না করা এবং ভয় না করা। আল্লাহ বলেন, لاَ
تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلاَ لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا ِللهِ الَّذِيْ
خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ ‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো
না, চন্দ্রকেও না। বরং সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন। যদি
তোমরা সত্যিকার অর্থে তাঁরই ইবাদত করে থাক’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত
৪১/৩৭)।
0 Comments