যিকির মাহফিলের গুরুত্ব ও ফযিলত।

যিকির মাহফিলের ফযিলত  এবং উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করা উত্তম আর বিনা ওজরে তা ছেড়ে চলে যাওয়া নিষেধ।
আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ ٢٨ ﴾ (الكهف: ٢٨) 
অর্থাৎ তুমি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখ, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে থাকে এবং তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরায়ো না। (সূরা কাহাফ ২৮ আয়াত)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান করে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত  চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জাহান্নাম দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’ ফেরেশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।” (বুখারী-মুসলিম)[1]

وَفِي رِوَايَةِ لِمُسلِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ للهِ مَلاَئِكَةً سَيَّارَةً فُضُلاً يَتَتَبُّعُونَ مَجَالِسَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوا مَجْلِساً فِيهِ ذِكْرٌ، قَعَدُوا مَعَهُمْ، وَحَفَّ بَعْضُهُمْ بَعْضاً بِأَجْنِحَتِهِمْ حَتَّى يَمْلَؤُوا مَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَإِذَا تَفَرَّقُوا عَرَجُوا وَصَعدُوا إِلَى السَّمَاءِ، فَيَسْأَلُهُمْ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ - - وَهُوَ أَعْلَمُ -: مِنْ أَيْنَ جِئْتُمْ ؟ فَيَقُولُونَ: جِئْنَا مِنْ عِنْدِ عِبَادٍ لَكَ فِي الأَرْضِ: يُسَبِّحُونَكَ، وَيُكبِّرُونَكَ، وَيُهَلِّلُونَكَ، وَيَحْمَدُونَكَ، وَيَسْألُونَكَ . قَالَ: وَمَاذَا يَسْألُونِي ؟ قَالُوا: يَسْألُونَكَ جَنَّتَكَ . قَالَ: وَهَلْ رَأَوْا جَنَّتِي ؟ قَالُوا: لاَ، أَيْ رَبِّ . قَالَ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا جَنَّتِي؟! قَالُوا: وَيَستَجِيرُونَكَ . قَالَ: وَمِمَّ يَسْتَجِيرُونِي ؟ قَالُوا: مِنْ نَارِكَ يَا رَبِّ. قَالَ: وَهَلْ رَأوْا نَارِي ؟ قَالُوا: لاَ، قَالَ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا نَارِي ؟! قَالُوا: وَيَسْتَغفِرُونَكَ ؟ فيَقُولُ: قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ، وَأَعْطَيْتُهُمْ مَا سَأَلُوا، وَأَجَرْتُهُمْ مِمَّا اسْتَجَارُوا . قَالَ: فيَقُولُونَ: رَبِّ فِيهِمْ فُلاَنٌ عَبْدٌ خَطَّاءٌ إنَّمَا مَرَّ، فَجَلَسَ مَعَهُمْ . فيَقُولُ: وَلهُ غَفَرْتُ، هُمُ القَومُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ» .
 মুসলিমের আবূ হুরাইরা কর্তৃক এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আল্লাহর অতিরিক্তি কিছু ভ্রাম্যমান ফেরেশতা আছেন, যারা জিকিরের মজলিস খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন এমন মজলিস পেয়ে যান, যাতে আল্লাহর যিকির হয়, তখন তাঁরা সেখানে বসে যান। তাঁরা পরস্পরকে ডানা দিয়ে ঢেকে নেন। পরিশেষে তাঁদের ও নিচের আসমানের মধ্যবর্তী জায়গা পরিপূর্ণ করে দেন। অতঃপর লোকেরা মজলিস ত্যাগ করলে তাঁরা আসমানে উঠেন। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল অধিক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এলে?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা পৃথিবী থেকে আপনার এমন কতকগুলি বান্দার নিকট থেকে এলাম, যারা আপনার তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পড়ে এবং আপনার নিকট প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আপনার জান্নাত প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে?’ তাঁরা বলেন, ‘না, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জান্নাত দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘আপনার জাহান্নাম থেকে, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে?’ তাঁরা বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘আর তারা আপনার নিকট ক্ষমা চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা প্রার্থনা করে তা দান করলাম এবং যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তা থেকে আশ্রয় দিলাম।’ তাঁরা বলেন, ‘হে প্রতিপালক! ওদের মধ্যে অমুক পাপী বান্দা এমনি পার হতে গিয়ে তাদের সাথে বসে গিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম! কারণ তারা সেই সম্প্রদায়, তাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত হয় না।’
[1] সহীহুল বুখারী ৬৪০৮, মুসলিম ২৬৮৯, তিরমিযী ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

Post a Comment

0 Comments