যে ব্যক্তি কোন গায়রে মোহরেম নারীকে চুম্বন করেছে সে কি ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হবে?
প্রশ্ন:
এক নারী আমাকে চুম্বন করেছে। তাতে সাড়া দিয়ে আমিও তাকে চুম্বন করেছি এবং
আমরা একে অপরকে স্পর্শ ও চুম্বন করতে থাকলাম। অনতিবিলম্বে সে আমাকে চূড়ান্ত
যৌন কর্মের আবেদন জানাল। কিন্তু আমি আল্লাহর কাছে ব্যভিচারের শাস্তির ভয়ে
তা হতে বিরত থেকেছি। আমি যা করেছি সে কর্মের কারণে আমি কি যিনাকারী
(ব্যভিচারী) গণ্য হব? আমি শুধু আঙ্গুল প্রবেশ করিয়েছিলাম।
উত্তর:
এক:
এই
নারীকে চুম্বন ও স্পর্শ করার মাধ্যমে আপনি নিকৃষ্টতম গুনাহর কাজে লিপ্ত
হয়েছেন। আপনার অনুতপ্ত হয়ে এ গুনাহ থেকে তওবা করা এবং এর থেকে ফিরে আসার
অটল সিদ্ধান্ত নেয়া অনিবার্য। এছাড়া এই ধরনের ফিতনাতে লিপ্ত হওয়ার যাবতীয়
উপায় উপকরণ হতে দূরে থাকাও আপনার কর্তব্য। যেমন, বেগানা নারীর সাথে
মেলামেশা, নির্জনবাস, হারাম দৃষ্টি ইত্যাদি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আপনাকে
ব্যভিচারের কবিরা গুনাহ হতে বাঁচিয়েছেন; যে গুনাহকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা
দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করেছেন। যদি এই গুনাহকারী বিবাহিত হয়
তাহলে তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে। আর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে
১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে
জানিয়েছেন, যিনাকারীদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হয় এবং তিনি আমাদেরকে আরো
জানিয়েছেন সে শাস্তি কতই না মর্মন্তুদ। দেখুন প্রশ্নোত্তর নং (8829)।
আল্লাহর
সীমারেখাগুলো লঙ্ঘনে এ মহিলার কত বড় স্পর্ধা!! নিজেই হারামের প্রতি আহ্বান
জানায়, অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় এবং কোন ভয়ভীতি ছাড়া পাপকাজে মেতে উঠে। অপরদিকে
আপনার উপর আল্লাহ তাআলার কত বড় অনুগ্রহ এই চরম মুহূর্তে এসে আপনি নিজেকে
সংবরণ করতে পেরেছেন এবং ঈমানের শেষ জ্যোতিটুকু আপনার অন্তরে জ্বলে উঠেছে
এবং আপনি এই মহা অন্যায় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছেন।
দুই:
যে
ব্যভিচারের শাস্তির কথা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি সে ব্যভিচার হচ্ছে
একটি যৌনাঙ্গ অপর একটি যৌনাঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে সংঘটিত
ব্যভিচার। এই কর্মের পূর্বে যা কিছু ঘটে থাকে যেমন, স্পর্শকরণ, চুম্বনকরণ,
যৌনাঙ্গে অঙ্গুলি প্রবেশ করানো ইত্যাদি অতি গর্হিত ও মারাত্মক গুনাহ।
কিন্তু এগুলোর জন্য ব্যভিচারের শাস্তি দেয়া হবে না; বরং শিক্ষামূলক শাস্তি
দেয়া হবে। তবে ইসলামি শরিয়তে এ ধরনের গুনাহগুলোকে ব্যভিচার হিসেবে আখ্যায়িত
করা হয়েছে। যেমনটি এসেছে সহিহ বুখারি (৬২৪৩) ও সহিহ মুসলিম (২৬৫৭) এর
হাদিসে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“নিশ্চয় আল্লাহ বনি আদমের উপর যতটুকু যিনা লিখে রেখেছেন সে তা করবেই; এর থেকে কোন নিস্তার নেই। চোখের যিনা হচ্ছে- দেখা; জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, অন্তর কামনা করে ও উত্তেজিত হয় এবং যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা বাস্তবায়ন করে না।” সহিহ মুসলিমে আরো এসেছে- “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“নিশ্চয় আল্লাহ বনি আদমের উপর যতটুকু যিনা লিখে রেখেছেন সে তা করবেই; এর থেকে কোন নিস্তার নেই। চোখের যিনা হচ্ছে- দেখা; জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, অন্তর কামনা করে ও উত্তেজিত হয় এবং যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা বাস্তবায়ন করে না।” সহিহ মুসলিমে আরো এসেছে- “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”
ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন:
“দৃষ্টি ও কথাকে যিনা বলা হয়েছে যেহেতু এগুলো প্রকৃত যিনার আহ্বায়ক। এজন্য
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন
করে অথবা করে না।” ফাতহুল বারি হতে সংকলিত।
সুতরাং
আপনি অনতিবিলম্বে তওবা করুন। এই মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। এই মহিলা
আপনাকে ঈমান হারা করতে পারে, আপনার পুতঃপবিত্র চরিত্রে কালিমা লেপন করতে
পারে এবং আপনাকে ফাসেক ও পাপাচারীদের কাতারে নিয়ে শামিল করতে পারে। আমরা
আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। শয়তানের সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে
আপনি সাবধান হোন। বেগানা নারীর দিকে চোখ তুলে তাকানোর মাধ্যমে গুনাহর
সূচনা হয় এবং ব্যভিচারের মাধ্যমে শেষ হয়।
আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে পবিত্র রাখুন।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
0 Comments