ফতোওয়া হজ্জ: হজ্জ সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৯০টি প্রশ্নোত্তর


ফতোওয়া হজ্জ: হজ্জ সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৯০টি প্রশ্নোত্তর
মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
অনুবাদক: মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল-কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী 

প্রশ্নঃ (৪৪৯) বেনামাযীর হজ্জের বিধান কি? যদি এ ব্যক্তি তওবা করে, তবে সমস্ত ইবাদত কি কাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ নামায পরিত্যাগ করা কুফরী। নামায ছেড়ে দিলে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। একথার দলীল হচ্ছে কুরআন, সুন্নাহ্‌ ও ছাহাবায়ে কেরামের উক্তি। অতএব যে লোক নামায পড়ে না তার জন্য মক্কা শরীফে প্রবেশ করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا[
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে।” (সূরা তাওবাঃ ২৮)

যে ব্যক্তি নামায পড়ে না, তার হজ্জ বিশুদ্ধ হবেনা এবং কবূলও হবেনা। কেননা কাফেরের কোন ইবাদতই সঠিক নয়। আল্লাহ্‌ বলেন,
]وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ[
“আর তাদের দান খায়রাত গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এজন্যে যে, তারা আল্লাহ্‌র সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, তারা শৈথিল্যের সাথে ছাড়া ছালাত আদায় করে না। আর তারা দান করে না, কিন্তু অনিচ্ছার সাথে করে।” (সূরা তাওবাঃ ৫৪)

যে সমস্ত আমল তারা পূর্বে পরিত্যাগ করেছে তা কাযা আদায় করা আবশ্যক নয়। কেননা আল্লাহ বলেন,
]قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ[
“(হে নবী ব!) আপনি কাফেরদেরকে বলে দিন, তারা যদি অনাচার থেকে বিরত থাকে (এবং আল্লাহর দ্বীনে ফিরে আসে) তবে পূর্বে যা হয়েছে তা আল্লাহ্‌ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আনফালঃ ৩৮)

সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ অন্যায় করেছে সে যেন আল্লাহর কাছে খাঁটিভাবে তওবা করে। নেক কাজ চালিয়ে যায়। বেশী বেশী তওবা ইসে-গফার ও অধিকহারে ভাল কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। আল্লাহ্‌ বলেন,
]قُلْ يَاعِبَادِي الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ[
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো তোমরা আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গুণাহ্‌ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা যুমারঃ ৫৩)

যারা তওবা করতে চায় আল্লাহ্‌ তাদের জন্য এই আয়াতগুলো নাযিল করেছেন। সুতরাং বান্দা যে পাপই করে না কেন্ত যদি শির্কও হয় এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহই সরল সঠিক পথে হেদায়াতদানকারী।

প্রশ্নঃ (৪৫০) ব্যাপকভাবে দেখা যায় অনেক মুসলমান বিশেষ করে অনেক যুবক ফরয হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে শীথিলতা প্রদর্শন করে। এবছর নয় ঐ বছর এভাবে বিলম্ব করে। কখনো কর্ম ব্যস্ততার ওযর পেশ করে। এদেরকে আপনার নছীহত কি? কখনো দেখা যায় কোন কোন পিতা যুবক ছেলেদেরকে ফরয হজ্জ আদায় করতে বাধা দেয় এই যুক্তিতে যে, এখনো তাদের বয়স হয়নি, হজ্জের ক্লান্তি সহ্য করতে পারবে না। অথচ হজ্জের পূর্ণ শর্ত তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। পিতার এ কাজের বিধান কি? এধরণের পিতার আনুগত্য করার বিধান কি?
উত্তরঃ একথা সর্বজন বিদিত যে, হজ্জ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন এবং বিরাট একটি ভিত্তি। হজ্জের শর্ত পাওয়া গেলে হজ্জ আদায় না করলে মানুষের ইসলাম পূর্ণ হয় না। হজ্জ ফরয হওয়ার পর বিলম্ব করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ তাৎক্ষণিক আদায় করতে হবে। মানুষ জানে না ভবিষ্যতে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। হতে পারে অর্থ শেষ হয়ে যাবে বা অসুস্থ হয়ে যাবে বা মৃত্যু বরণও করতে পারে।

হজ্জ আদায় করার শর্ত পূর্ণ হলে এবং হজ্জের সফরে ধর্মীয় ও চারিত্রিক দিক থেকে নির্ভরযোগ্য সাথী থাকলে, সন্তানদেরকে হজ্জ আদায় করতে বাধা দেয়া পিতা-মাতার জন্য জায়েয নয়।

হজ্জ ওয়াজিব হলে, হজ্জ ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার নির্দেশ মান্য করা চলবে না। কেননা আল্লাহর নাফরমানী করে সৃষ্টিকুলের আনুগত্য করা যাবে না। তবে বাবা-মা যদি তাদেরকে নিষেধের ব্যাপারে কোন শরঈ কারণ উপস্থাপন করে, তখন তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক।

প্রশ্নঃ (৪৫১) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কি হজ্জ করা আবশ্যক?
উত্তরঃ মানুষের উপর যদি এমন ঋণ থাকে যা পরিশোধ করার জন্য তার সমস্ত সম্পদ দরকার, তবে তার উপর হজ্জ ফরয নয়। কেননা আল্লাহ্‌ তো শুধুমাত্র সামর্থবান মানুষের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। তিনি এরশাদ করেন, 
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنْ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا 
“মানুষের উপর আল্লাহ্‌র অধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত আসার সমর্থ রাখে তারা এর হজ্জ পালন করবে।” (সূরা আল ইমরানঃ ৯৭)

সুতরাং ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি তো সামর্থবান নয়। অতএব প্রথমে সে ঋণ পরিশোধ করবে তারপর সম্ভব হলে হজ্জ আদায় করবে।

কিন্তু ঋণ যদি কম হয় এবং ঋণ পরিশোধ করে হজ্জে গিয়ে প্রত্যাবর্তন করার সমান খরচ বিদ্যমান থাকে, তবে হজ্জ করবে। হজ্জ চাই ফরয হোক বা নফল। কিন্তু ফরয হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে বিলম্ব করা উচিত নয়। আর নফল হজ্জ তো ইচ্ছাধীন। মন চাইলে করবে মন চাইলে করবে না, কোন গুনাহ হবে না।

প্রশ্নঃ (৪৫২) মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করার জন্য জনৈক লোককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; কিন্তু পরে জানা গেল এ লোক আরো কয়েকজনের হজ্জ আদায় করার দায়িত্ব নিয়েছে। এ সময় করণীয় কি? এ লোকের বিধান কি?
উত্তরঃ প্রত্যেক মানুষের উচিত হচ্ছে, যে কোন কাজ করার পূর্বে বিচার বিশ্লেষণ ও বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া। ধর্মীয় দিক থেকে নির্ভরযোগ্য না হলে তাকে কোন কাজের দায়িত্ব দিবে না। লোকটি বিশ্বস্ত কিনা, যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা, তার নিকট সে ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান আছে কিনা প্রভৃতি যাচাই বাছাই করবে।

হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই আপনার পিতা বা মাতার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করার জন্য এমন লোক নির্বাচন করবেন, যিনি জ্ঞান ও ধর্মীয় দিক থেকে বিশস্ত ও নির্ভরযোগ্য। কেননা অনেক মানুষ হজ্জের বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ। যথাযোগ্য নিয়মে হজ্জ আদায় করে না। যদিও তারা নিজেদের ইবাদতের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত। কিন্তু তারা ধারণা করে এটুকুই তাদের উপর ওয়াজিব। অথচ তারা অনেক ভুল করে। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এধরণের মানুষের কাছে হজ্জের দায়িত্ব প্রদান করা উচিত নয়।

আবার অনেক লোক এমন আছে, যারা হয়তো হজ্জের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখে কিন্তু তারা আমানতদার নয়। ফলে হজ্জের কার্যাদি আদায় করার ক্ষেত্রে কথা ও কাজে কোন গুরুত্বারোপ করে না। শুধুমাত্র দায়সারা গোছের কাজ করে। এ ধরণের লোকের কাছে হজ্জ পালনের আমানত অর্পন করা উচিত নয়। সুতরাং হজ্জের দায়িত্ব প্রদান করার জন্য দ্বীন ও আমানতদারীতে নির্ভর করা যায় এরকম লোক অনুসন্ধান করা জরূরী।

প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তি যে কয়জনের হজ্জের দায়িত্ব নিয়েছে- হতে পারে সে অন্য লোকদের দ্বারা তাদের হজ্জগুলো আদায় করে দিবে। কিন্তু এরূপ করাও কি তার জন্য জায়েয হবে? অর্থাৎ- হজ্জ বা ওমরা আদায় করে দেয়ার জন্য কয়েক জনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর সরাসরি উহা নিজে আদায় না করে অন্য লোককে দায়িত্ব দেয়া কি জায়েয হবে?

উত্তরঃ এটাও জায়েয বা বৈধ নয়। এটা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ। কেননা এটা হজ্জ-ওমরা নিয়ে ব্যবসা করা। মানুষের হজ্জ-ওমরা আদায় করে দেয়ার নাম করে তাদের নিকট থেকে পয়সা নেয়; অতঃপর কম মূল্যে অন্য লোককে নিয়োগ করে। এতে সে অন্যায়ভাবে কিছু সম্পদ কামাই করল। কেননা হতে পারে হজ্জের দায়িত্ব প্রদানকারী এই তৃতীয় ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট নয়। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা উচিত। মানুষের অর্থ নিজের পকেটে ঢুকানোর আগে চিন্তা করা উচিত এটা কি ঠিক হল না বেঠিক?

প্রশ্নঃ (৪৫৩) অতিবৃদ্ধ জনৈক ব্যক্তি ওমরা করার জন্য ইহরাম বেঁধেছে। কিন্তু মক্কা পৌঁছার পর ওমরা আদায় করতে অপারগ হয়ে গেছে এখন সে কি করবে?
উত্তরঃ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে, অতঃপর ওমরা আদায় করবে। কিন্তু যদি ইহরাম বাঁধার সময় শর্ত করে থাকে, তবে ইহরাম খুলে ফেলবে, তাকে কোন জরিমানা দিতে হবে না। ওমরা পূর্ণ করতে হবে না বিদায়ী তওয়াফও করতে হবে না। ইহরামের সময় শর্ত করার নিয়ম হচ্ছেঃ এই দু’আ পাঠ করবেঃ [আল্লাহুম্মা ইন হাবাসানী হাবেস ফা মাহেল্লী হায়সু হাবাসতানী] “হে আল্লাহ্‌! কোন কারণে যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই (হজ্জ-ওমরার কাজ সমাধা করতে না পরি), তবে যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হব, সেটাই আমার হালাল হওয়ার স্থান।”

কিন্তু যদি উক্ত শর্ত না করে আর ওমরা আদায় কোন ক্রমেই সম্ভব না হয়, তবে সে ইহরাম খুলে ফেলে হালাল হয়ে যাবে এবং ফিদ্‌ইয়া হিসেবে একটি কুরবানী করে দিবে যদি সামর্থ থাকে। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ[
“তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ-ওমরা পূর্ণ কর। যদি বাধাগ্রস্ত হও তবে যা সহজপ্রাপ্য তাই কুরবানী কর। আর কুরবানীর পশু তার জায়গায় না পৌঁছা পর্যন্ত তোমরা মাথা মুন্ডন করবে না।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) 
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৬ষ্ঠ হিজরী সনে ওমরা পালন করতে গেলে হুদায়বিয়া নামক এলাকায় মক্কার কাফেরদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে সেখানেই কুরবানী যবেহ করেন এবং হালাল হয়ে যান।

প্রশ্নঃ (৪৫৪) বদলী হজ্জ করার পর যদি কিছু অর্থ থেকে গেলে কি করবে?
উত্তরঃ বদলী হজ্জ করার জন্য যদি অর্থ নিয়ে থাকে, আর হজ্জ সম্পাদন করার পর কিছু অর্থ তার কাছে রয়ে যায়, তবে উহা ফেরত দেয়া আবশ্যক নয়। তবে অর্থ দাতা প্রদান করার সময় যদি এরূপ বলে যে, ‘এই অর্থ থেকে যা লাগে তা দিয়ে হজ্জ করবেন।’ তবে হজ্জ শেষে কোন কিছু বাকী থাকলে তা ফেরত দেয়া আবশ্যক। সে ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তা ফেরত নাও নিতে পারে, ইচ্ছা করলে ফেরত নিতে পারে। কিন্তু অর্থ দেয়ার সময় যদি এরূপ বলে, ‘এই অর্থ দ্বারা আপনি হজ্জ করবেন।’ তাহলে যা বাকী থাকবে তা ফেরত দেয়া আবশ্যক নয়। অবশ্য এভাবে প্রদান করার সময় প্রদানকারী যদি না জানে যে হজ্জের খরচ কত লাগতে পারে তাই তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেয়, তখন তার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদনকারীর একথা বলা ওয়াজিব যে, আপনার অর্থ দ্বারা আমি হজ্জ সম্পাদন করেছি ঠিকই; কিন্তু তাতে এই পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। বাকীটা আমার কাছে রয়ে গেছে। এখন সে যদি তাকে উহা গ্রহণ করার অনুমতি দেয়, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। অন্যথা তা ফেরত দিতে হবে।

প্রশ্নঃ (৪৫৫) পুত্র যদি পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ বা ওমরা সম্পাদন করে, তবে নিজের জন্য দু’আ করতে পারবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সে হজ্জ বা ওমরা অবস্থায় নিজের জন্য তার পিতার জন্য এবং সমস্ত মুসলমানদের জন্য দু’আ করতে পারবে। কেননা কারো পক্ষ থেকে হজ্জ-ওমরা আদায় করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার পক্ষ থেকে নিয়ত করে বাহ্যিক ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত কর্ম সমূহ আদায় করা। কিন্তু দু’আর বিষয়টি হজ্জ বা ওমরার কোন ফরয বা ওয়াজিব বা শর্ত নয়। তাই যার জন্য হজ্জ বা ওমরা করছে তার জন্য, নিজের জন্য, সমস্ত মুসলমানদের জন্য দু’আ করতে পারবে।

প্রশ্নঃ (৪৫৬) হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করার বিধান কি?
উত্তরঃ বদলী হজ্জ বা ওমরা করার দু’টি অবস্থাঃ

প্রথম অবস্থাঃ তার পক্ষ থেকে ফরয হজ্জ বা ওমরা আদায় করবে।

দ্বিতীয় অবস্থাঃ তার পক্ষ থেকে নফল হজ্জ বা ওমরা আদায় করবে।

ফরয হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা জায়েয নয়। তবে কোন বাধার কারণে যদি মক্কা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না হয়- যেমন, কঠিন অসুখ যা ভাল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই অথবা অতিবৃদ্ধ হয়ে গেছে ইত্যাদি, তাহলে তার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করাবে। কিন্তু অসুস্থতা যদি এমন হয় যে তা থেকে আরোগ্য পাওয়ার আশা আছে, তবে অপেক্ষা করবে এবং সুস্থ হলে নিজেই নিজের হজ্জ-ওমরা সম্পাদন করবে। কেননা কোন বাধা না থাকলে হজ্জ বা ওমরার ব্যাপারে কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা জায়েয নয়। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
]وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنْ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا [
“মানুষের উপর আল্লাহ্‌র অধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত আসার সমর্থ রাখে তারা ইহার হজ্জ পালন করবে।” (সূরা আল ইমরানঃ ৯৭)

ইবাদতের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ উহা নিজে বাস্তবায়ন করবে; যাতে করে আল্লাহ্‌র জন্য তার দাসত্ব-গোলামী ও বিনয়ের পূর্ণতা লাভ করে। আর নিঃসন্দেহে অন্যকে দায়িত্ব দিলে ইবাদতের এই মহান উদ্দেশ্য সঠিকভাবে আদায় হবে না।

কিন্তু সে যদি নিজের ফরয হজ্জ ও ওমরা আদায় করে থাকে, অতঃপর আবার তার পক্ষ থেকে নফল হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করে, তবে জায়েয হবে কি না? এক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতবিরোধ করেছেন। কেউ বলেছেন, জায়েয। কেউ বলেছেন, নাজায়েয। আমার মতে যেটা সঠিক মনে হয়, তা হচ্ছে নাজায়েয। অর্থাৎ- নফল হজ্জ আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা জায়েয নয়। কেননা ইবাদতের মূলনীতি হচ্ছে, ব্যক্তি নিজে তা আদায় করবে। যেমন করে নিজের পক্ষ থেকে রোযা আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। অবশ্য ফরয রোযা কাযা রেখে যদি কেউ মৃত্যু বরণ করে, তবে তার পক্ষ থেকে পরিবারের যে কেউ তা আদায় করে দিবে। অনুরূপ হচ্ছে হজ্জ। এটি এমন একটি ইবাদত যা আদায় করার জন্য শারিরীক পরিশ্রম আবশ্যক। এটা শুধু আর্থিক ইবাদত নয়। আর ইবাদত যদি শারিরীক হয়, তবে উহা অন্যকে দিয়ে আদায় করলে বিশুদ্ধ হবে না। কিন্তু হাদীছের দলীলের ভিত্তিতে যেটুকু অনুমতি পাওয়া যায় তার কথা ভিন্ন। আর বদলী নফল হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। ইমাম আহমাদ থেকে এ ব্যাপারে দু’ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। তার একটি বর্ণনা আমাদের কথার সমর্থক। অর্থাৎ নফল হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে নিয়োগ করা যাবে না। চাই তার সামর্থ থাক বা না থাক।

আমাদের এই মতানুযায়ী সম্পদশালী লোককে নিজেই নিজের হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কেননা অনেক মানুষ এমন আছে, বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে অথচ কখনো তারা মক্কা সফর করে নি। এই যুক্তিতে যে, সে তো প্রতি বছর তার পক্ষ থেকে হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে না কাউকে প্রেরণ করে থাকে। অথচ তাদের জানা নেই যে, এ দ্বারা ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য আদায় হয় না।

প্রশ্নঃ (৪৫৭) মৃতের পক্ষ থেকে ওমরা আদায় করা কি জায়েয?
উত্তরঃ মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ বা ওমরা আদায় করা জায়েয। অনুরূপভাবে তওয়াফ এবং যাবতীয় নেক আমল তার পক্ষ থেকে আদায় করা জায়েয। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, যে কোন নৈকট্যপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে যদি তার ছওয়াব জীবিত বা মৃতের জন্য দান করে দেয়, তবে সে উপকৃত হবে। কিন্তু ছওয়াব দান করার চাইতে মৃতের জন্য দু’আ করা বেশী উত্তম। দলীল হচ্ছে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণীঃ তিনি বলেন,
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
“মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তিনটি আমল ছাড়া তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়।
১) সাদকায়ে জারিয়া
২) উপকারী ইসলামী বিদ্যা
৩) সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু’আ করবে।”

এই হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ বলেন নি সৎ সন্তান, যে তার জন্য ইবাদত করবে বা কুরআন পড়বে বা নামায পড়বে বা ওমরা করবে বা রোযা রাখবে ইত্যাদি। অথচ হাদীছটিতে প্রথমে দু’টি আমলের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। যদি মৃতের জন্য আমল করা উদ্দেশ্য হত, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যই বলতেন, “এবং সৎ সন্তান, যে তার জন্য আমল করবে।”

কিন্তু মানুষ যদি কোন নেক আমল করে তার ছওয়াব কারো জন্য দান করে দেয়, তবে তা জায়েয।

প্রশ্নঃ (৪৫৮) মাহরাম ছাড়া কোন নারী যদি হজ্জ সম্পাদন করে, তবে কি উহা বিশুদ্ধ হবে? বুদ্ধিমান বালক কি মাহরাম হতে পারে? মাহরাম হওয়ার জন্য কি কি শর্ত আবশ্যক?
উত্তরঃ তার হজ্জ বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু মাহরাম ছাড়া সফর করা হারাম এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নাফরমানী। কেননা তিনি এরশাদ করেন, “নারী কোন মাহরাম ছাড়া যেন সফর না করে।”

বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি এমন বালক মাহরাম হতে পারে না। কেননা তার নিজেরই তো অভিভাবক ও তত্বাবধান দরকার। অতএব এধরণের মানুষ কি করে অন্যের অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক হতে পারে?

মাহরাম ব্যক্তির জন্য শর্ত হচ্ছে, সে মুসলিম হবে, পুরুষ হবে, প্রাপ্ত বয়স্ক হবে এবং বিবেক সম্পন্ন হবে। এগুলো শর্তের কোন একটি না থাকলে সে মাহরাম হতে পারবে না।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, আফসোসের সাথে লক্ষ্য করা যায়, অনেক নারী মাহরাম ছাড়া একাকী উড়োজাহাজে সফর করে থাকে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মাহরাম পুরুষ তাদেরকে এয়ারপোর্টে বিমানে তুলে দেয় এবং পরবর্তী এয়ারপোর্টে আরেক মাহরাম তাদেরকে রিসিভ করে থাকে। আর সে তো উড়োজাহাজের মধ্যে নিরাপদেই থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যুক্তিটি অসাড়ঃ কেননা তার মাহরাম তো এরোপ্লেনে তাকে উঠিয়ে দিতে পারে না। খুব বেশী তাকে ওয়েটিং হল বা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত ছেড়ে আসতে পারে। কখনো প্লেন ছাড়তে দেরী হতে পারে। কখনো কারণ বশতঃ গন্তব্য এয়ারপোর্টে প্লেন অবতরণ করা সম্ভব হয় না। তখন এ নারীর কি অবস্থা হবে? কখনো হয়তো গন্তব্য এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করল ঠিকই কিন্তু মাহরাম ব্যক্তিটি তাকে রিসিভ করতে পারল না। হয়তো সে অসুস্থ হয়ে গেল, কোন সড়ক দুর্ঘটনা হল ইত্যাদি যে কোন কারণ ঘটতে পারে।

উল্লেখিত কারণগুলো কোনটিই হল না। ঠিকঠাক মত প্লেন উড়ল, গন্তব্য এয়ারপোর্টে মাহরাম তাকে রিসিভ করল। কিন্তু এমনও তো হতে পারে- প্লেনের মধ্যে তার সিটের পাশে এমন লোক বসেছে, যে আল্লাহকে ভয় করে না, ফলে সে নারীকে বিরক্ত করতে পারে বা নারীই তার প্রতি আসক্ত হতে পারে। তাহলেই তো নিষিদ্ধ ফেতনার বীয বপন হয়ে গেল- যেমনটি কারো অজানা নয়।

অতএব নারীর উপর ওয়াজিব হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা এবং কোন মাহরাম ছাড়া কখনো সফরে বের না হওয়া। অভিভাবক পুরুষদের উপরও ওয়াজিব হজ্জে তাদের নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা, নারীদের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় না দেয়া, নিজেদের আত্মসম্ভ্রম রক্ষা করা। প্রত্যেকে তার পরিবার সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে। কেননা এদেরকে আল্লাহ্‌ তাদের কাছে আমানত রেখেছেন। আল্লাহ্‌ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ[
“হে ঈমানদরগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা কখনো আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না। তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।” (সূরা তাহরীমঃ ৬)

প্রশ্নঃ (৪৫৯) জনৈক নারীর কথা হচ্ছে, আমি রামাযানে ওমরা করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। কিন্তু আমার সাথে থাকছে আমার সহদোর বোন, তার স্বামী ও আমার মা। এই ওমরায় যাওয়া কি আমার জন্য জায়েয হবে?
উত্তরঃ এদের সাথে ওমরায় যাওয়া আপনার জন্য জায়েয হবেনা। কেননা বোনের স্বামী আপনার মাহরাম নয়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি শুনেছি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবায় বলেনঃ
لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِي حَاجَّةً قَالَ اذْهَبْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ
“কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে নির্জন না হয়। মাহরাম ছাড়া কোন নারী যেন সফর না করে।” তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল আমার স্ত্রী হজ্জ আদায় করার জন্য বের হয়ে গেছে। আর আমি উমুক উমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়েছি? নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ পালন কর।” নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে কোন ব্যাখ্যা চাইলেন না তোমার স্ত্রীর সাথে কি অন্য কোন নারী আছে না নেই? সে কি যুবতী না বৃদ্ধা? রাস্তায় সে কি নিরাপদ না নিরাপদ নয়?

প্রশ্নকারী এই নারী মাহরাম না থাকার কারণে যদি ওমরায় না যায়, তবে তার কোন গুনাহ্‌ হবে না। যদিও ইতোপূর্বে সে কখনো ওমরা না করে থাকে। কেননা হজ্জ-ওমরা ফরয হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নারীর মাহরাম থাকা।

প্রশ্নঃ (৪৬০) হজ্জের মাস কি কি?
উত্তরঃ হজ্জের সময় শুরু হয় শাওয়াল মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে  এবং শেষ হয় যিলহজ্জের দশ তারিখে তথা ঈদের দিনে বা জিলহজ্জের শেষ তারিখে। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ “হজ্জের মাস সমূহ সুনির্দিষ্ট জানা।” এখানে বহুবচন أشهر  শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তা হাকীকী অর্থে ব্যবহার হবে। অর্থাৎ এই তিনটি মাসে হজ্জের কাজ চলবে। এ কথার অর্থ এটা নয় যে, এ তিন মাসের যে কোন দিনে হজ্জের কাজ করতে হবে। [অর্থাৎ- শাওয়ালের প্রথমেই কেউ যদি হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং তওয়াফ সাঈ করে, তবে তা হজ্জের জন্যই হল। কিন্তু আরাফাত এবং তৎপরবর্তী কাজের জন্য তো সময় নির্ধারণ করাই আছে।] আর যিলহজ্জের শেষ নাগাদ হজ্জের সময় প্রলম্বিত একথার অর্থ হচ্ছে, হজ্জের তওয়াফ এবং সাঈ যিলহজ্জের শেষ পর্যন্ত বিলম্বিত করা জায়েয আছে। এর পর আর বিলম্বিত করা জায়েয নয়। কিন্তু যদি কোন ওযর থাকে সে কথা ভিন্ন। যেমন হজ্জের তওয়াফ করার পূর্বে কোন নারীর নেফাস শুরু হয়ে গেল। নেফাস অবস্থা শেষ হতে হতে যিলহজ্জ মাস পার হয়ে গেল। তার এই ওযর গ্রহণযোগ্য নেফাস শেষ হলেই সে তওয়াফ ও সাঈ সম্পাদন করবে।

ওমরার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট নেই। বছরের যে কোন সময় উহা সম্পাদন করা যায়। কিন্তু রামাযানে ওমরা করলে হজ্জের সমান ছাওয়াব লাভ করা যায়। হজ্জের মাস সমূহেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাবতীয় ওমরা আদায় করেন। হুদায়বিয়ার ওমরা যিল-কা’দ মাসে। কাযা ওমরা আদায় করেছেন যিল-কা’দ মাসে, জে’রানার ওমরাও ছিল যিল-কা’দ মাসে। আর বিদায় হজ্জের সাথের ওমরাও ছিল যিল-কা’দ মাসে। এতে বুঝা যায় হজ্জের মাস সমূহে ওমরা করার আলাদা বৈশিষ্ট ও ফযীলত রয়েছে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমরা আদায় করার জন্য এ মাসগুলোকেই নির্বাচন করেছেন।

প্রশ্নঃ (৪৬১) হজ্জের মাস সমূহ আসার পূর্বে হজ্জের ইহরাম বাঁধার বিধান কি?
উত্তরঃ হজ্জের মাস সমূহ আসার পূর্বে হজ্জের ইহরাম বাঁধার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন।

কেউ বলেন, এটা বিশুদ্ধ হবে এবং হজ্জের ইহরাম হিসেবে গণ্য হবে। তবে হজ্জের মাস আগমণ করার পূর্বে হজ্জের ইহরাম বাঁধা মাকরূহ।

দ্বিতীয় মতঃ তার এই ইহরাম হজ্জের ইহরাম হিসেবে গণ্য হবে না। তবে তা ওমরা হয়ে যাবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 
دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ 
“ওমরা হজ্জের মধ্যে শামিল হয়ে গেছে।” 
তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমরাকে ছোট হজ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন আমর বিন হাযমের বিখ্যাত মুরসাল হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে। যা লোকেরা সাধারণভাবে গ্রহণ করেছে।

প্রশ্নঃ (৫৬২) হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ কি কি?
উত্তরঃ হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ ১) যুল হুলায়ফা ২) জুহ্‌ফা ৩) ইয়ালামলাম ৪) কারণে মানাযেল ৫) যাতু ঈরক্ব।

১) যুল হুলায়ফাঃ যাকে বর্তমানে আবা’রে আলী বলা হয়। ইহা মদীনার নিকটবর্তী। মক্কা থেকে এর অবস্থান ১০ মারহালা দূরে (বর্তমান হিসেবে প্রায় ৪০০ কিঃ মিঃ)। মক্কা থেকে এটি সবচেয়ে দূরে অবসি'ত। এটি মদীনাবাসী এবং সেপথ দিয়ে গমণকারী অন্যান্যদের মীক্বাত।

২) জুহ্‌ফাঃ শাম তথা সিরিয়াবাসীদের মক্কা গমণের পথে পুরাতন একটি গ্রামের নাম জুহ্‌ফা। সেখান থেকে মক্কার দূরত্ব ৩ মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১৮৬ কিঃ মিঃ)। এটা এখন আর গ্রাম নেই। বর্তমানে লোকেরা এর বদলে পার্শবর্তী স্থান রাবেগ থেকে ইহরাম বাঁধে।

৩) ইয়ালামলামঃ ইয়ামানের লোকদের মক্কা আগমণের পথে একটি পাহাড় বা একটি স্থানের নাম ইয়ালামলাম। বর্তমানে এস্থানকে সা’দিয়া বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ৯২ কিঃ মিঃ।)

৪) কারণে মানাযেলঃ নজদ তথা পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের মক্কা গমণের পথে তায়েফের কাছে একটি পাহাড়ের নাম। বর্তমানে একে সায়লুল কাবীর বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা (বর্তমানে প্রায় ৭৮ কিঃ মিঃ।)

৫) যাতু ইরক্বঃ ইরাকের অধিবাসীদের মক্কা আগমণের পথে একটি স্থানের নাম। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১০০ কিঃ মিঃ।)

প্রথম চারটি মীক্বাত রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারিত। শেষেরটিও আয়েশা (রাঃ)এর বর্ণনা অনুযায়ী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারণকৃত মীক্বাত। যেমনটি নাসাঈ ও আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যাতু ইরক্বের ব্যাপারে ছহীহ্‌ সূত্রে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি উহা কূফা ও বস্‌রার অধিবাসীদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তারা এসে অভিযোগ করল, হে আমীরুল মু‘মেনীন! নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নজদবাসীদের জন্য কারণে মানাযেলকে (তায়েফ) মীক্বাত নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদেরকে অনেকটা পথ ঘুরে সেখানে যেতে হয় এবং আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, তোমাদের পথে ঐ মীক্বাতের বরাবর কোন স্থান তোমরা অনুসন্ধান কর। তখন যাতু ইরক্ব মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

মোটকথা, যদি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্‌ সূত্রে প্রমাণিত হয় তবে তো কোন প্রশ্ন নেই। যদি প্রমাণিত না হয়, তবে উহা ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর সুন্নাত থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি চার খলীফার মধ্যে অন্যতম। যারা ছিলেন সুপথপ্রাপ্ত এবং তাঁদের অনুসরণ করার নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওমরের সমর্থনে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কয়েকটি বিধান নাযিল করেছেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীছটি যদি ছহীহ্‌ হয়, তবে এটাও তাঁর প্রতি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সমর্থন। তাছাড়া ওমরের নির্দেশ যুক্তি সংগত। কেননা কোন মানুষ যদি মীক্বাত থেকে ভিতরে যেতে চায় তবে সেখান থেকেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু এ স্থানের বরাবর কোন পথ দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে মীক্বাত অতিক্রমকারী হিসেবে উক্ত স্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবে।

ওমর (রাঃ)এর এই হাদীছে বর্তমান যুগে আমাদের জন্য বিরাট ধরণের উপকার বিদ্যমান। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ যদি বর্তমান যুগে এরোপ্লেনযোগে হজ্জ বা ওমরা করতে আসতে চায়, তবে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, যে মীকাতের উপর দিয়ে যাবে তার বরাবর হলেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। বিলম্ব করা বৈধ হবে না এবং জেদ্দায় গিয়ে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না- যেমনটি অনেক লোক করে থাকে। কেননা স্থল পথে হোক, বা আকাশ পথে হোক বা সমুদ্র পথে হোক কোন পার্থক্য নেই- মীকাতের বরাবর হলেই ইহরাম বাঁধতে হবে। এজন্য হজ্জ যাত্রী যে দেশেরই হোক সমুদ্র পথে মক্কা আসতে চাইলে ইয়ালামলাম বা রাবেগের বরাবর হলে তাদেরকে ইহরাম বাঁধতে হবে।

প্রশ্নঃ (৪৬৩) বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করার বিধান কি?
উত্তরঃ বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রমকারী দু’প্রকারের লোক হতে পারেঃ

১)      হজ্জ বা ওমরা আদায় করার ইচ্ছা করেছে। তাহলে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে হজ্জ বা উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে আসা। যদি এরূপ না করে তাহলে একটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করার কারণে বিদ্বানদের মতে ফিদ্‌ইয়া বা জরিমানা দিতে হবে। আর তা হচ্ছে একটি ছাগল যবেহ করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া।

২)      হজ্জ বা ওমরার উদ্দেশ্য ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা। এ অবস্থায় তার কোন অসুবিধা নেই। চাই মক্কায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করুক বা স্বল্প সময়। কেননা এ অবস্থায় যদি ইহরাম আবশ্যক করা হয় তবে প্রতিবার আগমণে হজ্জ বা ওমরা তার উপর আবশ্যক হয়ে যায়। অথচ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, জীবনে একবারের বেশী হজ্জ বা ওমরা আবশ্যক নয়। এর বেশী হলে সবই হবে নফল। বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রমের ব্যাপারে বিদ্বানদের বিভিন্ন মতামতের মধ্যে এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

প্রশ্নঃ (৪৬৪) ‘লাব্বাইক্‌’ বলাটাই কি ইহরামে প্রবেশ করার নিয়ত?
উত্তরঃ হজ্জ বা ওমরার কাজে প্রবেশ করার জন্য অন্তরে নিয়ত (ইচ্ছা বা সংকল্প) করে পাঠ করবেঃ ‘লাব্বাইকা ওমরাতান’ আর হজ্জের জন্য বলবে, ‘লাব্বাইকা হজ্জান্‌’। কিন্তু এরূপ বলা জায়েয নয়ঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল উমরাতা’ অথবা ‘উরীদুল হাজ্জা’। বা নাওয়াইতু আন আ‘তামিরা উমরাতান্‌। বা নাওয়াইতু আন আহুজ্জা হাজ্জান্‌। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এগুলো প্রমাণিত নেই।

প্রশ্নঃ (৪৬৫) আকাশপথে আগমণকারী কিভাবে ইহরাম বাঁধবে?
উত্তরঃ হজ্জ বা ওমরার উদ্দেশ্যে আকাশ পথে আগমণকারী যে স্থানের উপর দিয়ে যাবে সে এলাকার মীকাতের বরাবর হলে ইহরাম বাঁধবে। তাই গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রথমে বাড়িতেই প্রস্ততি নিবে। তারপর মীক্বাত পৌঁছার পূর্বে ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। মীকাতের বরাবর পৌঁছলেই অন্তরে নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে ফেলবে। দেরী করবে না। কেননা এরোপ্লেন দ্রুত চলে। মিনিটেই অনেক পথ এগিয়ে যায়। অনেক মানুষ এক্ষেত্রে ভুল করে। পূর্ব প্রস্ততি থাকে না। “আমরা মীকাতের বরাবর পৌঁছেছি” প্লেনের ক্রুর এ ঘোষণা শোনার পর তাড়াহুড়া শুরু করে। পরনের কাপড় খুলে ইহরামের কাপড় পরিধান করে। এটি মারাত্মক ভুল।

অবশ্য প্লেনের দায়িত্বশীল অফিসারের উচিত হচ্ছে, মীকাতের বরাবর পৌঁছার কমপক্ষে ১৫ মিনিট পূর্বে ঘোষণা দেয়া। যাতে করে লোকেরা সতর্ক হয় এবং ভালভাবে প্রস্ততি নিতে পারে। তবে হাজী সাহেবগণ যদি প্লেনে উঠার পূর্বে ইহরামের কাপড় পরিধান করে নেন, তাহলে এটা তাদের জন্য অতি উত্তম হয়। মীকাতের বরাবর হলে সংকেত বা ঘোষণা পাওয়ার সাথে সাথেই তারা ইহরামের দু’আ পড়ে ইহরাম বেঁধে ফেলবেন।

প্রশ্নঃ (৪৬৬) ওমরার উদ্দেশ্যে বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করার বিধান কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে মীকাত অতিক্রম করতে চায় সে যেন ইহরাম ছাড়া অতিক্রম না করে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মদীনাবসীগণ ইহরাম বাঁধবে যুল হুলায়ফা থেকে..।” অর্থাৎ তাদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা। বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম না করা। যদি করেই ফেলে তবে ওয়াজিব হচ্ছে মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা গমণ করা। এতে তাকে কোন জরিমানা দিতে হবে না। কিন্তু যদি ফিরে না আসে এবং মীকাত অতিক্রম করার পর ইহরাম বাঁধে তবে বিদ্বানদের মতে তাকে ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে। আর তা হচ্ছে একটি ছাগল কুরবানী করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া।

উড়োজাহাজে কিভাবে নামায আদায় করবে এবং ইহরাম বাঁধবে?

উত্তরঃ 
প্রথমতঃ উড়োজাহাজে নামায পড়ার পদ্ধতিঃ

১)      নফল নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে, বিমানের সিটে বসে বসেই নামায আদায় করবে। ইশারার মাধ্যমে রুকূ-সিজদা করবে। সিজদার জন্য রুকূর চাইতে একটু বেশী মাথা ঝুকাবে।

২)      সময় হলেই উড়োজহাজের উপর নামায আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু নামাযের নির্দিষ্ট সময় বা দু’নামায একত্রিত করার সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি বিমান অবতরণ করার সম্ভাবনা থাকে, আর যমীনে থাকাবস্থায় যেভাবে নামায আদায় করতে হয় সেভাবে যদি বিমানের উপর সম্ভব না হয়, (যেমন্ত কিবলামুখী হওয়া, রুকূ’, সিজদা, কওমা ও বসা প্রভৃতি করা যদি সম্ভব না হয়) তবে সেখানে ফরয নামায আদায় করবে না। বরং অবতরণ করার পর যমীনে নামায আদায় করবে।

যেমনঃ জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে সূর্যাসে-র পূর্বে বিমান উড্ডয়ন করল। এখন আকাশে থাকাবস্থায় মাগরিব নামায আদায় করবে না। পরবর্তী এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করার পর নামায পড়বে। কিন্তু যদি দেখে যে, মাগরিব নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, তবে এশা নামাযের সাথে মাগরিবকে একত্রিত করার নিয়ত করে নিবে। অতঃপর অবতরণ করে মাগরিব নামাযকে দেরী করে এশার সময় একত্রিত আদায় করবে। কিন্তু যদি বিমান চলতেই থাকে- অবতরণের সম্ভাবনা না থাকে এবং এশা নামাযেরও সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তবে বিমানের উপরেই সময় অতিক্রম হওয়ার আগেই মাগরিব ও এশা নামায একত্রিত আদায় করে নিবে।

৩)      বিমানের উপর ফরয নামায পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ক্বিবলামুখী দন্ডায়মান হয়ে তাকবীর দিবে। ছানা, সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা বা আয়াত পাঠ করে রুকূ করবে। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদা করবে। নিয়ম মাফিক সিজদা করতে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসাবস্থায় ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। নামায শেষ করা পর্যন্ত এরূপই করবে। আর পূর্ণ সময় ক্বিবলামুখী হয়েই থাকবে। কিন্তু ক্বিবলা চিনতে না পারলে বা নির্ভরযোগ্য কেউ তাকে কিবলার সন্ধান দিতে না পারলে নিজ অনুমান ও গবেষণা অনুযায়ী নামায আদায় করলে কোন অসুবিধা হবে না।

৪)      উড়োজাহাজে মুসাফির নামায কসর করবে। চার রাকাত বিশিষ্ট নামায দু’রাকাত করে আদায় করবে।

দ্বিতীয়তঃ উড়োজাহাজে হজ্জ বা ওমরার ইহরাম বাঁধার পদ্ধতিঃ

১)      এয়ারপোর্টে আসার আগেই গোসল, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করবে। এবং এয়ারপোর্টে এসে ইহরামের কাপড় পরিধান করবে।

২)      প্লেন মীকাতের নিকটবর্তী হলে যদি ইহরামের কাপড় পরিধান না করে থাকে তবে পরিধান করবে।

৩)      মীকাতের বরাবর হলেই অন্তরে নিয়ত করে হজ্জ বা ওমরার জন্য তালবিয়া পড়ে ইহরামে প্রবেশ করবে।

৪)      মীকাতের বরাবর হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বেই যদি সতর্কতা বশতঃ বা খেয়াল থাকবে না এই ভয়ে ইহরাম বেঁধে নেয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই।

প্রশ্নঃ (৪৬৭) কোন ব্যক্তি যদি নিজ দেশ থেকে জেদ্দা সফর করে অতঃপর ওমরা আদায় করার ইচ্ছা করে। সে কি জেদ্দা থেকেই ইহরাম বাঁধবে?
উত্তরঃ এ মাসআলাটির দু’টি অবস্থাঃ

প্রথমঃ লোকটি ওমরার নিয়ত না করে অন্য কোন উদ্দেশ্যে বা কাজে জেদ্দা সফর করেছে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর ওমরা করার ইচ্ছা হয়েছে, তবে সে জেদ্দা থেকেই ইহরাম বাঁধবে। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ)এর হাদীছে মীক্বাতের আলোচনায় বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি এই মীক্বাত সমূহের মধ্যে অবস্থান করে, সে যেখানে আছে সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধবে। এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।”

দ্বিতীয়ঃ দৃঢ়ভাবে ওমরার নিয়ত করেই জেদ্দা সফর করেছে। তাহলে যে মীক্বাতের নিকট দিয়ে গমণ করবে তাকে অবশ্যই সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে। জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না। কেননা জেদ্দার অবস্থান মীক্বাতের সীমানার মধ্যে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি মীক্বাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, 
هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ  
“এগুলো স্থান সেখানকার অধিবাসীদের জন্য এবং যারা এর বাইরে থাকে সেখান দিয়ে যেতে চায় তাদের জন্য ইহরাম বাঁধার মীক্বাত- যারা হজ্জ ও ওমরা করার ইচ্ছা পোষণ করে।”

যদি জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধে এবং মক্কা প্রবেশ করে, তবে বিদ্বানদের মতে তাকে ফিদ্‌ইয়া স্বরূপ মক্কায় একটি কুরবানী করতে হবে এবং তার গোস্ত মক্কার ফক্বীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে দিবে। তাহলেই তার ওমরা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।

জেদ্দা যাওয়ার আগে যদি ওমরার নিয়ত করে থাকে এবং বিনা ইহরামে জেদ্দা প্রবেশ করে, তবে নিকটবর্তী কোন মীকাতে ফেরত গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবে। এতে কোন ফিদ্‌ইয়া লাগবে না।

প্রশ্নঃ (৪৬৮) ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর গোসল করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইহরামে প্রবেশ করার পর গোসল করতে কোন বাধা নেই। কেননা ইহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত রয়েছে। চাই একবার গোসল করুক বা দু’বার। কিন্তু ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে জানাবাতের (নাপাকীর) গোসল করা ওয়াজিব। আর ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করা সুন্নাত।

প্রশ্নঃ (৪৬৯) মৃত দাদার পক্ষ থেকে হজ্জ করার বিধান কি? অবশ্য তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায়কারী নিজের হজ্জ সম্পাদন করেছে।
উত্তরঃ যে মৃত দাদা নিজের হজ্জ করেনি তার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করা জায়েয। কেননা সুন্নাতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে।

প্রশ্নঃ (৪৭০) ইহরামের জন্য বিশেষ কোন নামায আছে কি?
উত্তরঃ ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট কোন নামায নেই। কিন্তু কোন লোক যদি এমন সময় মীক্বাতে পৌঁছে যখন ফরয নামাযের সময় উপস্থিত হয়েছে, তখন তার জন্য উত্তম হচ্ছে ফরয নামায সম্পাদন করার পর ইহরাম বাঁধা।

ফরয নামাযের সময় নয় কিন্তু চাশতের নামাযের (ছালাতে যুহা) সময়ে মিক্বাতে পৌঁছলো, তাহলে প্রথমে পরিপূর্ণরূপে গোসল করবে, সুগন্ধি মাখবে, ইহরামের কাপড় পরিধান করে চাশতের নিয়তে নামায আদায় করবে তারপর ইহরামের নিয়ত করবে। চাশত নামাযের সময় না হলে তাহিয়্যাতুল ওযুর নিয়ত করে দু’রাকাত নামায পড়ে ইহরামে প্রবেশ করা উত্তম। কিন্তু ইহরামের নিয়তে নামায আদায় করার কোন দলীল নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই।

প্রশ্নঃ (৪৭১) কোন ব্যক্তি যদি হজ্জের মাসে ওমরা আদায় করে মদীনা সফর করে, অতঃপর যুলহুলায়ফা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধে, তবে সে কি তামাত্তুকারীরূপে গণ্য হবে?
উত্তরঃ যখন কিনা এ ব্যক্তি হজ্জের মাসে ওমরা সম্পাদন করে এবছরেই হজ্জ আদায় করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেছে, তখন সে তামাত্তুকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ওমরা ও হজ্জের মধ্যবর্তী কোন সফর তামাত্তুকে বাতিল করবে না। তবে যদি ওমরা আদায় করার পর নিজ দেশে ফেরত যায় এবং সেখান থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে সফর করে, তবে তার তামাত্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেননা প্রত্যেকটি কাজ সে আলাদা আলাদা সফরে সম্পাদন করেছে। অতএব ওমরা সম্পাদন করার পর যে লোক মদীনা সফর করে যুলহুলায়ফা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধবে, সে তামাত্তু হজ্জকারী হিসেবে কুরবানী দিবে। কেননা আল্লাহ্‌ বলেনঃ
] فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [
“যে ব্যক্তি হজ্জের সাথে ওমরা করার নিয়ত করবে, সে সাধ্যানুযায়ী কুরবানী দিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬)

প্রশ্নঃ (৪৭২) কোন ব্যক্তি যদি শাওয়াল মাসে ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরা পূর্ণ করে। কিন্তু সে সময় সে হজ্জের নিয়ত করেনি। কিন্তু হজ্জের সময় তার হজ্জ করার সুযোগ হল। সে কি তামাত্তুকারী গণ্য হবে?
উত্তরঃ না, সে তামাত্তুকারী গণ্য হবে না। অতএব তাকে কুরবানীও দিতে হবে না।

প্রশ্নঃ (৪৭৩) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত তালবিয়াটি কি? ওমরা এবং হজ্জের ক্ষেত্রে কখন তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করতে হবে?
উত্তরঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত তালবিয়াটি হচ্ছে নিম্নরূপঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ
“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক্‌, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক্‌, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক্‌, লা শারীকা লাক।” ইমাম আহমাদ একটু বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেন, “লাব্বাইকা ইলাহাল হক্ব।” এর সনদ হাসান।

ওমরার ক্ষেত্রে তওয়াফ শুরুর পূর্বে তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করবে। আর হজ্জের ক্ষেত্রে দশ তারিখে ঈদের দিন জামরা আকাবায় পাথর মারার পূর্বে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবে। তিরমিযীতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমরাতে হাজরে আস্‌ওয়াদ স্পর্শ করার সময় তালবিয়া বলা বন্ধ করতেন।” ইমাম তিরমিযী হাদীছটিকে ছহীহ্‌ বলেন। কিন্তু এর সনদে মুহাম্মাদ বিন আব্দুর্‌ রহমান বিন আবু লায়লা নামক জনৈক বর্ণনাকারী আছে। অধিকাংশ হাদীছ বিশারদ তাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আরো বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফা থেকে মুযদালিফা আসার পথে তাঁর আরোহীর পিছনে উসামা (রাঃ)কে বসিয়েছিলেন। মুযদালিফা থেকে মিনা যাওয়ার পথে ফায্‌ল বিন আব্বাস (রাঃ)কে পিছনে বসিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়ে (উসামা ও ফায্‌ল) বলেছেন, তিনি ব জামরা আকাবায় কঙ্কর মারার পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থেকেছেন।

ইমাম মালেকের মতে হারাম শরীফে পৌঁছার সাথে সাথে তালবিয়া বলা বন্ধ করবে। কেউ কেউ বলেছেন, বায়তুল্লাহ্‌র কাছে পৌঁছলে বা কাবা ঘর দেখলেই তালবিয়া বলা বন্ধ করবে।

লাব্বাইক বলার অর্থ হচ্ছেঃ আপনার আনুগত্যের কাজ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনার আহবানে সাড়া দিচ্ছি।

প্রশ্নঃ (৪৭৪) ইহরাম বেঁধে কি মাথা আঁচড়ানো জায়েয আছে?
উত্তরঃ ইহরাম অবস্থায় মাথা আঁচড়ানো উচিত নয়। কেননা ইহরামকারীর উচিত হচ্ছে এলোকেশ ও ধুলোমলিন থাকা। তবে গোসল করতে কোন অসুবিধা নেই। তাছাড়া মাথা আঁচড়ালে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ইহরামকারী মাথা বা শরীর প্রভৃতি চুলকালে যদি কোন চুল পড়ে যায়, তাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সে ইচ্ছাকৃত চুল উঠায়নি। জেনে রাখা উচিত যে, ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ যদি কেউ ভুলক্রমে করে ফেলে, তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا[
“তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। কিন্তু সে ব্যাপারে তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম করুণাময়।” (সূরা আহযাবঃ ৫) 
আল্লাহ্‌ আরো বলেন,
]رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا[
“হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমাদের ভুল হয় বা ত্রুটি হয় তজ্জন্যে আমাদেরকে ধৃত করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬)

ইহরামের অন্যতম নিষিদ্ধ কাজ শিকার করা সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنْ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِنْكُمْ[
“হে মু’মিনগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় বন্য শিকারকে হত্যা করো না; আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক তাকে হত্যা করবে, তার উপর তখন জরিমানা ওয়াজিব হবে, যা মূল্যের দিক দিয়ে সেই জানোয়ারের সমতুল্য হয়, যাকে সে হত্যা করেছে। তার অনুমানিক মূল্যের মীমাংসা তোমাদের মধ্যে হতে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোক করে দেবে।” (সূরা মায়িদাঃ ৯৫) 
এই আয়াতে ‘ইচ্ছাপূর্বক’ শব্দ উল্লেখ করাতে বুঝা যায়- যদি অনিচ্ছাকৃত হত্যা করে ফেলে, তবে তাকে কোন জরিমানা দিতে হবে না। এ বিধানই ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা ইসলাম ধর্ম ক্ষমা ও সহজতার বৈশিষ্টে অনন্য।

অতএব কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ যদি কেউ অজ্ঞতা বশতঃ বা ভুলবশতঃ করে ফেলে, তবে তার বিরুদ্ধে কোন বিধান প্রজোয্য হবে না, কোন ফিদ্‌ইয়া আবশ্যক হবে না- এমনকি স্ত্রী সহবাস করে ফেললেও হজ্জ বিনষ্ট হবে না। উল্লেখিত শরীয়তের দলীলের দাবী অনুযায়ী এটাই বিশুদ্ধ কথা।

প্রশ্নঃ (৪৭৫) অজ্ঞতা বশতঃ মাথা থেকে সামান্য চুল কেটে হালাল হয়ে গেলে তার উপর আবশ্যক কি?
উত্তরঃ অজ্ঞতা বশতঃ যে হাজী সাহেব মাথা থেকে সামান্য চুল কেটে হালাল হয়ে গেছে, তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। কেননা সে অজ্ঞ। তবে জানার পর তাকে পূর্ণ মাথা থেকে চুল কাটতে হবে।

এ উপলক্ষে আমি মুসলিম ভাইদেরকে নসীহত করতে চাই, কোন ইবাদত করতে চাইলে, তার সীমারেখা ও নিয়ম-নীতি না জেনে তাতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। যাতে করে অজ্ঞতা বশতঃ এমন কিছু না করে ফেলে যাতে ইবাদতটিই নষ্ট হয়ে যায়। কেননা আল্লাহ তা’আলা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে লক্ষ্য করে বলেন,
]قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنْ اتَّبَعَنِي وسبحان الله وما أنا من المشركين[
“আপনি বলে দিন, এটাই আমার পথ আল্লাহর দিকে বুঝে-শুনে দা’ওয়াত দেই- আমি এবং আমার অনুসারীগণ। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরা ইউসুফঃ ১০৮) 
আল্লাহ আরো বলেন,
]قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ[
“আপনি বলুন, যারা জানে এবং জানে না তারা কি এক বরাবর? বুদ্ধিমানরাই তো উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।” (সূরা যুমারঃ ৯)

অতএব একজন লোক বুঝে-সুঝে আল্লাহর সীমারেখা জেনে-শুনে তাঁর ইবাদত করবে এটা খুবই উত্তম। অজ্ঞতার সাথে বা মানুষের অন্ধানুসরণ করে আল্লাহর ইবাদত করা উচিত নয়। কেননা না জেনে ইবাদত করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা যেমন বেশী তেমনি যাদের অনুসরণ করবে তাদের মধ্যে জ্ঞান থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে।

প্রশ্নঃ (৪৭৬) প্রশাসনকে ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে বিনা ইহরামে মীক্বাত অতিক্রম করে মক্কায় পৌঁছে ইহরাম বাঁধলে হজ্জ বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ তার হজ্জ তো বিশুদ্ধ হয়ে যাবে কিন্তু মুসলিম শাসককে ফাঁকি দেয়ার জন্য সে হারাম কাজ করেছে। এটা হারাম হয়েছে দু’কারণেঃ

প্রথমতঃ আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ইহরামে মীক্বাত অতিক্রম করেছে।

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্‌ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুসলিম শাসকের আনুগত্য করার। অবশ্য আল্লাহ্‌র নাফরমানীর কাজে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। অতএব তার উপর আবশ্যক হচ্ছে আল্লাহর কাছে তওবা করা। আর ফিদ্‌ইয়া প্রদান করা অর্থাৎ- একটি কুরবানী করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে। কেননা সে মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধেনি। বিদ্বানদের মতে হজ্জ বা ওমরার কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করলে তার জন্য ফিদ্‌ইয়া প্রদান করা আবশ্যক।

প্রশ্নঃ (৪৭৭) তামাত্তুকারী যদি নিজ দেশে ফেরত গিয়ে আবার হজ্জের জন্য সফর করে, তবে কি ইফরাদকারী হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তামাত্তুকারী ওমরা আদায় করার পর নিজ দেশে ফেরত গিয়ে আবার সেই বছর হজ্জের জন্য মক্কা সফর করলে সে ইফরাদকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা নিজ পরিবারের কাছে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে হজ্জ ও ওমরার মাঝে বিচ্ছিন্নতা করেছে। আবার সফর শুরু করার অর্থ হচ্ছে সে হজ্জের জন্য নতুনভাবে সফর করছে। তখন তার এই হজ্জ ইফরাদ হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায় তামাত্তুকারীর মত কুরবানী করা তার জন্য ওয়াজিব হবে না। কিন্তু নিজ দেশে ফিরে যাওয়াটা যদি তার কুরবানী রহিত করার বাহানা হয়, তবে কুরবানী রহিত হবে না। কেননা কোন ওয়াজিব রহিত করার বাহানা করলে উহা রহিত হবে না।

প্রশ্নঃ (৪৭৮) ইহরাম অবস্থায় ছাতা ব্যবহার করার বিধান কি? অনুরূপভাবে সিলাইকৃত বেল্ট ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তরঃ সূর্যের তাপ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাতা ব্যবহার করাতে কোন অসুবিধা নেই। কোন ক্ষতি নেই। একাজ হাদীছে পুরুষের মাথা ঢাকার নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এটা মাথা ঢাকা নয়; বরং তা রৌদ্র প্রভৃতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছায়া গ্রহণ করা। ছহীহ্‌ মুসলিমে প্রমাণিত হয়েছে, বিদায় হজ্জে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে উসামা বিন যায়েদ ও বেলাল (রাঃ) ছিলেন। তাদের একজন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উটনির লাগাম ধরে ছিলেন। অপরজন একটি কাপড় উপরে উঠিয়ে তাঁকে ছাঁয়া করছিলেন, এভাবে চলতে চলতে তিনি জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। এ হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যায় যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় হালাল হওয়ার পূর্বে কাপড় দিয়ে ছাঁয়া গ্রহণ করেছেন।

   লুঙ্গি বাঁধার জন্য যে কোন ধরণের বেল্ট ব্যবহার করাতে কোন অসুবিধা নেই। আর ‘সেলাইকৃত বেল্ট’ প্রশ্নকারীর এই কথাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভুল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। তাদের ধারণা, যে কোন প্রকারের সিলাই থাকলেই তা আর পরিধান করা যাবে না। কিন্তু কথাটি ভুল। ‘সিলাইকৃত কাপড় পরিধান করা যাবে না’ একথা দ্বারা বিদ্বানগণ বুঝিয়েছেন এমন সব কাপড় পরিধান করা যা শরীরের মাপে বানানো হয়েছে। সাধারণভাবে পোষাক হিসেবে যা পরিধান করা হয়। যেমন, জামা, পায়জামা, গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া প্রভৃতি। একারণে কোন মানুষ যদি এমন চাদর বা লুঙ্গি পরিধান করে যা জোড়া-তালি দেয়া, তবে কোন অসুবিধা নেই- এমনকি যদি তার উভয় প্রান্ত সেলাই করা থাকে তাতেও কোন ক্ষতি হবে না।

প্রশ্নঃ (৪৭৯) শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কিভাবে ইহরাম করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি ইহরামের কাপড় পরিধান করতে সক্ষম না হয়, তবে যে ধরণের কাপড় পরতে সক্ষম হবে তাই পরিধান করবে। তখন বিদ্বানদের মতেঃ

ক)  তাকে ফিদ্‌ইয়া হিসেবে একটি কুরবানী করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
খ)  অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করতে হবে। প্রত্যেককে অর্ধ ছা’ তথা সোয়া কেজি পরিমাণ খাদ্য দিবে।
গ)   অথবা তিনদিন রোযা পালন করবে।

রোগের কারণে মাথা মুন্ডন করতে বাধ্য হলে যে বিধান প্রজোয্য হয়, তার উপর কিয়াস করে বিদ্বানগণ উক্ত সমাধান দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ বলেন,
 ]فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ [
“কোন লোক যদি পীড়িত হয় বা তার মাথা যন্ত্রনাগ্রস্ত হয়, তবে সে রোযা কিংবা সাদকা অথবা কুরবানী দ্বারা তার বিনিময় (ফিদ্‌ইয়া) আদায় করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) 
আর রোযা ও সাদকার বিষয়টি পূর্বে যা উল্লেখ করা হয়েছে সেভাবেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যাখ্যা করেছেন।

প্রশ্নঃ (৪৮০) ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম এ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে কেউ যদি স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তার হজ্জের বিধান কি?
উত্তরঃ একথা সুবিদিত যে, স্ত্রী সহবাস ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের মধ্যে অন্যতম; বরং তা ইহরামের সর্বাধিক কঠিন ও বড় নিষেধাজ্ঞা। আল্লাহ্‌ বলেন,
]الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلا رَفَثَ وَلا فُسُوقَ وَلا جِدَالَ فِي الْحَجِّ[
“হজ্জের মাস সমূহ নির্দিষ্ট সুবিদিত। এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জ করার ইচ্ছা করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া জায়েয নয়। জায়েয নয় কোন অশোভন কাজ করা, না কোন ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৭)

الرفث এর অর্থ হচ্ছে, সহবাস ও তার পূর্বের কাজ সমূহ। অতএব ইহরামের সর্বাধিক কঠিন নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। হজ্জের ইহরামে থেকে কোন লোক যদি স্ত্রী সহবাস করে, তবে হয় তা প্রথম হালালের পূর্বে হবে অথবা প্রথম হালালের পর হবে। যদি প্রথম হালালের পূর্বে সহবাস হয়, তবে তার উপর নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো আবশ্যক হবেঃ

প্রথমতঃ তার ঐ হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। চাই উহা ফরয হজ্জ হোক বা নফল হজ্জ হোক।
দ্বিতীয়তঃ সে গুনাহগার হবে।
তৃতীয়তঃ হজ্জের অবশিষ্ট কাজ তাকে পূর্ণ করতে হবে। অর্থাৎ- হজ্জ নষ্ট হওয়া সত্বেও হজ্জের অবশিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করতে হবে।
চতুর্থতঃ পরবর্তী বছর অবশ্যই তাকে উক্ত হজ্জের কাযা আদায় করতে হবে। চাই তা ফরয হজ্জ হোক বা নফল হজ্জ হোক। হজ্জ ফরয হলে তো কাযা আদায় করার বিষয়টি সুস্পষ্ট। কেননা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সে হজ্জের ফরযিয়াতের যিম্মা মুক্ত হতে পারে নি।

কিন্তু নফল হজ্জ হলেও তাকে কাযা আদায় করতে হবে। কেননা হজ্জ আরম্ভ করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরাকে পূর্ণ কর।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৬) তাছাড়া হজ্জের কাজ শুরু করলে তা ফরয হয়ে যায়। যেমনটি পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন। “হজ্জের মাস সমূহ নির্দিষ্ট সুবিদিত। এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জ ফরয করবে...।” এই জন্য আমরা বলব, হজ্জ নফল হোক বা ফরয হোক, যে কোন কারণে তা বিনষ্ট করে ফেললে তা কাযা আদায় করতে হবে।
পঞ্চমতঃ কাফ্‌ফারা স্বরূপ তাকে জরিমানা আদায় করতে হবে। আর তা হচ্ছে একটি উট যবেহ করে হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দেয়া। উটের পরিবর্তে যদি সাতটি ছাগল যবেহ করে তাও জায়েয আছে।

এই বিধান হচ্ছে প্রথম হালালের পূর্বে হলে। (অর্থাৎ- ১০ তারিখে বড় জামরায় কংকর মেরে মাথা মুন্ডন করার পূর্বে) কিন্তু প্রথম হালালের পর সহবাস করলে তার উপর নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আবশ্যক হবেঃ

প্রথমতঃ সে গুনাহগার হবে।
দ্বিতীয়তঃ ইহরাম বিনষ্ট হয়ে যাবে।
তৃতীয়তঃ কাফ্‌ফারা হিসেবে নিম্ন লিখিত তিনটি বিষয়ের কোন একটি করবেঃ

ক) একটি ছাগল যবেহ করে হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিবে। অথবা
খ) ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য দিবে। প্রত্যেককে অর্ধ ছা’ পরিমাণ খাদ্য দিবে। অথবা
গ) তিন দিন রোযা রাখবে।

এ তিনটির যে কোন একটি জরিমানা স্বরূপ আদায় করবে।

চতুর্থতঃ নতুন করে ইহরামে প্রবেশ করবে। মক্কার হারাম সীমানার বাইরে নিকটতম কোন স্থানে গমণ করে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে আসবে এরপর তওয়াফে এফাযা বা হজ্জের তওয়াফ সম্পন্ন করবে। এভাবেই ফিকাহবিদগণ বলেছেন। যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ প্রথম হালাল হওয়ার অর্থ কি?

জবাবঃ হাজী সাহেব যখন ঈদের দিন (যিল্‌ হজ্জের দশ তারিখে) বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করে তখন সে প্রথম হালাল হয়ে যায়। তখন স্ত্রী সহবাস ব্যতীত ইহরামের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যায়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ইহরাম বাঁধার পূর্বে, এবং হালাল হওয়ার পর বায়তুল্লাহর তওয়াফের পূর্বে আমি তাঁকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।’ এই হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, হালাল হওয়ার পরেই আছে বায়তুল্লাহর তওয়াফ। যেমনটি পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, ঈদের দিন বড় জামরায় কঙ্কর মারার পর মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করার মাধ্যমে প্রথম হালাল হবে। এই হালালের পূর্বে সহবাস হলে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয় আবশ্যক হবে। আর এই হালালের পর সহবাস হলে, উল্লেখিত চারটি বিষয় আবশ্যক হবে।

কোন লোক যদি মূর্খতা বশতঃ এই কাজ করে অর্থাৎ- ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা হারাম একথা তার জানা নেই, তবে তার কোন ক্ষতি হবে না। কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। চাই প্রথম হালালের পূর্বে হোক বা পরে হোক। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, 
رَبَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا 
“হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি অথবা ভুলে যাই তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) 
আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
“ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্‌ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আহযাবঃ ৫)

যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা হারাম এ লোক যদি একথা জানে কিন্তু এটা জানে না যে, সহবাস করলে এত কিছু আবশ্যক হবে বা এই জরিমানা দিতে হবে, জানলে হয়তো সে একাজে লিপ্ত হতো না। তবে এর বিধান কি? তার এই অজ্ঞতার ওযর কি গ্রহণযোগ্য হবে?

জবাবঃ তার এই ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা ওযর হচ্ছে, বিষয়টি সম্পর্কে সম্পর্ণরূপে অজ্ঞ থাকা। বিষয়টি যে হারাম সে ব্যাপারে তার কোনই জ্ঞান না থাকা। কিন্তু বিষয়টি হালাল না হারাম এই বিধান জানার পর, করলে কি লাভ বা না করলে কি ক্ষতি তা জানা আবশ্যক নয়। এই নাজানা ওযর হিসেবে গণ্য হবে না।

যেমন, জনৈক বিবাহিত ব্যক্তি যদি জ্ঞান রাখে যে, ব্যভিচার হারাম। সে বিবেকবান ও প্রাপ্তবয়স্ক। সে যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে অবশ্যই তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে। সে যদি বলে যে, ব্যভিচার করলে যে রজমের শাস্তি আছে আমি তা জানতাম না। জানলে এ অন্যায় আমি করতাম না, তার এই কথা গ্রহণ করা হবে না। তাকে রজম করতেই হবে।

এই কারণে জনৈক ব্যক্তি রামাযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট এসে তার করণীয় কি জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে কাফ্‌ফারা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন। অথচ সহবাস করার সময় সে কাফ্‌ফারা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল। এথেকে বুঝা যায়, কোন মানুষ যদি অন্যায়ে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ সীমা লঙ্ঘন করে, তখন উক্ত অপরাধের শাস্তি তাকে পেতে হবে। যদিও এর শাস্তি সম্পর্কে সে অজ্ঞ থাকে।

প্রশ্নঃ (৪৮১) ইহরাম অবস্থায় নারী কিভাবে পর্দা করবে? পর্দা মুখ স্পর্শ করতে পারবে না এরকম কোন শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ ইহরাম অবস্থায় নারী যদি মাহরাম নয় এমন কোন পুরুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে বা তার নিকট কোন পুরুষ অতিক্রম করে, তবে অবশ্যই স্বীয় মুখমন্ডল ঢেকে নিবে। যেমনটি মহিলা ছাহাবীগণ (রাঃ) করতেন। একারণে তাকে কোন ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে না। কেননা পরপুরুষের সামনে মুখমন্ডল ঢাকা আল্লাহর নির্দেশ। আর নির্দেশ কখনো নিষেধ হতে পারে না।

পর্দা মুখমন্ডল স্পর্শ করতে পারবে না এরকম কোন শর্ত নেই। এতে কোন অসুবিধা নেই। পরপুরুষের সামনে এলেই তাকে অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে। কিন্তু যদি খিমা বা তাঁবুতে অবস্থান করে এবং সেখানে কোন পরপুরুষ না থাকে, তবে মুখমন্ডল খোলা রাখবে। কেননা ইহরাম অবস্থায় নারীর জন্য শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে মুখ খোলা রাখা।

প্রশ্নঃ (৪৮২) নারী বিদায়ী তওয়াফ করার পূর্বে ঋতুবতী হয়ে পড়লে করণীয় কি?
উত্তরঃ যদি সে তওয়াফে এফাযাসহ হজ্জের যাবতীয় কাজ পূর্ণ করে থাকে এবং শুধুমাত্র বিদায়ী তওয়াফ বাকী থাকে, তারপর ঋতুবতী হয় তবে বিদায়ী তওয়াফ রহিত হয়ে যাবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
]أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ إِلَّا أَنَّهُ خُفِّفَ عَنِ الْحَائِضِ[
‘লোকদের আদেশ দেয়া হয়েছে, কাবা ঘরের তওয়াফ যেন তাদের সর্বশেষ কাজ হয়। তবে বিষয়টি ঋতুবতীদের জন্য হালকা করে দেয়া হয়েছে।’ যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলা হল যে, উম্মুল মু‘মেনীন ছাফিয়া বিনতে হুওয়াই (রাঃ) ঋতুবতী হয়ে গেছেন। অবশ্য তিনি তওয়াফে ইফাযা বা হজ্জের তওয়াফ করে নিয়েছেন। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তাহলে তোমরা বের হয়ে যাও।” তিনি তার জন্য বিদায়ী তওয়াফকে রহিত করে দিলেন।

কিন্তু তওয়াফে ইফাযা বা হজ্জের তওয়াফ ঋতুবতীর জন্য রহিত হবে না। ঋতুবতী হয় মক্কায় থেকে অপেক্ষা করবে এবং পবিত্র হলে তওয়াফে এফাযা করবে। অথবা সে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে কিন্তু ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে এবং পবিত্র হলে মক্কায় ফিরে এসে শুধুমাত্র হজ্জের তওয়াফ করবে। যদি নিজ দেশে চলে গিয়ে আবার ফিরে আসে, তবে সুন্দর হয়- প্রথমে ওমরা করে নিবে (তওয়াফ করবে, সাঈ করবে এবং চুল খাট করবে) তারপর হজ্জের তওয়াফ করবে।

উল্লেখিত পন্থার কোনটিই যদি সম্ভব না হয়, তবে লজ্জাস্থানে প্যাড বা এজাতীয় কোন কিছু দিয়ে বেঁধে দিবে যাতে করে স্রাবের রক্ত মসজিদে না পড়ে, তারপর হজ্জের তওয়াফ করে নিবে। কেননা বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এটা একান্ত জরূরী অবস্থা।

প্রশ্নঃ (৪৮৩) জনৈক নারী স্বামীর সাথে ঋতু অবস্থাতেই ইহরাম বাঁধে। কিন্তু পবিত্র হওয়ার পর কোন মাহরাম ছাড়াই সে ওমরার কাজ সমাধা করে। কাজ শেষ হলে আবার রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়। এর বিধান কি?
উত্তরঃ প্রশ্নের ধরণে বুঝা যায় এ নারী মাহরামের সাথে মক্কায় আগমণ করেছে। কিন্তু ঋতু অবস্থাতেই সে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধে। ঋতু অবস্থায় তার এই ইহরাম বিশুদ্ধ। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে যুলহুলায়ফার মীকাতে আগমণ করলে আসমা বিনতে ঊমাইস (রাঃ) প্রশ্ন করেন যে, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি ঋতুবতী হয়ে গেছি। তিনি বললেন, 
اغْتَسِلِي وَاسْتَثْفِرِي بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِي 
“গোসল করে তোমার লজ্জাস্থানে কাপড় বা নেকড়া বেঁধে দাও এবং ইহরাম বাঁধ।”

মক্কায় আসার পর পবিত্র হয়ে মাহরাম ছাড়া যদি ওমরার কাজ সম্পাদন করে থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সে শহরের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ওমরা সম্পাদন করার পর সে যে আবার রক্ত দেখেছে তাতে তার পবিত্রতার ব্যাপারে একটি প্রশ্ন দাঁড় করায়। আমরা বলব, যদি সে নিশ্চিতভাবে পবিত্রতা দেখে থাকে তবে তার ওমরা বিশুদ্ধ। কিন্তু এই পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে সন্দেহের মধ্যে থাকলে নতুন করে ওমরা করে নিবে। অবশ্য এর জন্য নতুন করে ইহরাম বাঁধার জন্য মীকাত যেতে হবে না। শুধুমাত্র তওয়াফ, সাঈ ও চুল খাট করার কাজগুলো নতুন করে সম্পাদন করবে।

প্রশ্নঃ (৪৮৪) জনৈক নারী তওয়াফে এফাযা করেনি। ইতোমধ্যে সে ঋতুবতী হয়ে গেছে। তার ঠিকানা সঊদী আরবের বাইরে। হজ্জ কাফেলাও চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, তাই দেরী করা সম্ভব হবে না। এবং পরবর্তীতে মক্কা ফিরে আসাটাও তার জন্য দুরহ ব্যাপার। এখন সে কি করবে?
উত্তরঃ বিষয়টি যদি এরূপই হয় যেমন প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হজ্জের তওয়াফ না করেই নারী ঋতুবতী হয়ে গেছে। পবিত্র হয়ে তওয়াফ করার জন্য মক্কায় থেকে যাওয়াটাও তার জন্য দুঃসাধ্য অথবা চলে গেলে আবার মক্কা ফেরত আসাটাও অসম্ভব, তবে এ অবস্থায় নিম্ন লিখিত দু’টি সমাধানের যে কোন একটি সে গ্রহণ করতে পারেঃ

১)      ঋতু বন্ধ করার জন্য ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন ব্যবহার করবে- যদি তাতে ক্ষতির আশংকা না থাকে- তারপর তওয়াফ করবে।

২)      লজ্জাস্থানে প্যাড বা কাপড় বেঁধে দিবে যাতে করে মসজিদে রক্ত না পড়ে। তারপর তওয়াফ করবে। এটাই বিশুদ্ধ মত যা শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) পসন্দ করেছেন।

                  এর বিপরীত সমাধান হচ্ছে, নিম্ন লিখিত দু’টির যে কোন একটিঃ

১)      ইহরামের অবশিষ্ট যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা থেকে বিরত থেকে ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে। অর্থাৎ- স্বামী সহবাসে লিপ্ত হবে না। অবিবাহিতা হলে কোন বিবাহের আকদ করবে না। তারপর পবিত্র হলে তওয়াফ করবে।

২)      অথবা নিজেকে হজ্জের কর্ম সমূহ সম্পন্ন করতে বাধাপ্রাপ্ত মনে করবে, এবং হালাল হওয়া যাবে এবং ফিদ্‌ইয়া স্বরূপ একটি কুরবানী করবে। কিন্তু এ অবস্থায় তার এই হজ্জটি হজ্জ হিসেবে গণ্য হবে না।

সন্দেহ নেই যে, উল্লেখিত এই দু’টি বিষয়ের উভয়টিই কঠিন। কারণ ইহরাম অবস্থায় থেকে যাওয়াটা যেমন কঠিন ব্যাপার, তেমনি হজ্জ বাতিল করে দেয়াটা আরো কঠিন। এ কারণে জরূরী অবস্থা হিসেবে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) এর মতটিই এখানে সঠিক। আর আল্লাহ্‌ বলেন,
]وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ [
“আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য দ্বীনের মাঝে কোন অসুবিধা রাখেননি।” (সূরা হজ্জঃ ৭৮) 
তিনি আরো বলেন,
] يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ [
“আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমাদের জন্য কঠিন কিছু তিনি চান না।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)

কিন্তু এ নারীর জন্যে যদি সম্ভব হয় চলে গিয়ে পবিত্র হলে আবার ফেরত এসে হজ্জের তওয়াফ করা, তবে কোন অসুবিধা নেই। তবে এই সময়ের মধ্যে স্বামী সহবাস জায়েয হবে না। কেননা তওয়াফ না করলে হাজী সাহেব দ্বিতীয় হালাল বা পূর্ণ হালাল হয় না।

প্রশ্নঃ (৪৮৫) ঋতু এসে যাওয়ার কারণে জনৈক নারী ওমরা না করেই মক্কা থেকে ফেরত চলে গেছে। তার বিধান কি?
উত্তরঃ ওমরার ইহরাম বাঁধার পর যদি নারীর ঋতু এসে যায়, তবে ইহরাম বাতিল হবে না। ওমরার ইহরাম বাঁধার পর ঋতুর কারণে তওয়াফ-সাঈ না করেই মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে, সে ইহরাম অবস্থাতেই রয়েছে। তার উপর আবশ্যক হচ্ছে মক্কা প্রত্যাবর্তন করে তওয়াফ, সাঈ ও চুল ছোট করে হালাল হওয়া। তার উপর আবশ্যক হচ্ছে ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। চুল বা নখ কাটবে না, স্বামী থাকলে তার সাথে সহবাস করবে না।

তবে ইহরাম বাঁধার সময় যদি ঋতুর আশংকায় শর্ত আরোপ করে নেয় যে, যেখানেই বাধাগ্রস্ত হবে সেখানেই সে হালাল হয়ে যাবে। তবে ঋতু আসার পর ইহরাম খুলে ফেললে তাকে কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে না।

প্রশ্নঃ (৪৮৬) ইহরাম অবস্থায় নারী কি স্বীয় কাপড় বদল করতে পারবে? নারীর জন্য কি ইহরামের বিশেষ কোন পোষাক আছে?
উত্তরঃ নারী যে কাপড়ে ইহরাম করেছে তা পরিবর্তন করে অন্য কাপড় পরিধান করতে পারে। পরিবর্তন করার দরকার থাক বা না থাক কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু যে কাপড় পরবে তাতে যেন বেপর্দা হওয়ার আশংকা না থাকে বা পরপুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্যের প্রকাশ না ঘটে।

নারীর জন্য ইহরামের বিশেষ কোন পোষাক নেই। তার ইচ্ছামত যে কোন পোষাক পরিধান করতে পারে। তবে নেকাব পরবে না এবং হাতমোজা পরিধান করবে না। নেকাব হচ্ছে এমন পর্দা মুখমন্ডলে ব্যবহার করা যাতে চোখের জন্য ছিদ্র করা থাকে।

আর পুরুষের ইহরামের জন্য বিশেষ পোষাক আছে। তা হচ্ছে একটি চাদর অন্যটি লুংঙ্গি। তাই সে জামা, পায়জামা, জাঙ্গিয়া, গেঞ্জি, পাগড়ী, টুপি, মোজা প্রভৃতি পরবে না।

প্রশ্নঃ (৪৮৭) ইহরামকারী নারীর হাত মোজা এবং পা মোজা পরার বিধান কি?
উত্তরঃ হাতমোজা ব্যবহার করা জায়েয নেই। পায়ের মোজা ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই।

হাত মোজার ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন,   
وَلَا تَلْبَسِ الْقُفَّازَيْنِ  
“নারী হাত মোজা পরিধান করবে না।”

ঋতুবতী নারী বিলম্ব করে পবিত্র হওয়ার পর ওমরা আদায় করবে।

প্রশ্নঃ (৪৮৮) জনৈক নারী ঋতু অবস্থায় মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধেছে। মক্কায় আগমণ করে বিলম্ব করে পবিত্র হওয়ার পর ওমরা আদায় করেছে। তার এই ওমরার বিধান কি?
উত্তরঃ তার ওমরা বিশুদ্ধ। যদিও একদিন বা দু’দিন বা ততোধিক দিন বিলম্ব করে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু শর্ত হচ্ছে ঋতু থেকে পূর্ণ পবিত্র হওয়ার পরই ওমরা আদায় করবে। কেননা ঋতুবতী নারীর জন্য আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা জায়েয নয়। এজন্য আয়েশা (রাঃ) ওমরার ইহরাম বেঁধে মক্কায় আগমণ করলে ঋতুবতী হয়ে পড়েন, তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ
افْعَلِي كَمَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لَا تَطُوفِي بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي
“হাজীগণ যা করে তুমিও তাই করে যাও, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্‌র ঘর তওয়াফ করো না।”

যখন সাফিয়া (রাঃ) ঋতুবতী হয়ে গেলন, তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে নাকি? তিনি ভেবেছিলেন ছুফিয়া তওয়াফে এফাযা করেন নি। তারা বলল, তিনি তো তওয়াফে এফাযা করে নিয়েছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমরা বের হয়ে পড়’।

অতএব ঋতুবতী নারীর জন্য আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা বৈধ নয়। মক্কায় এসে ঋতুবতী হয়ে পড়লে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ওয়াজিব। কিন্তু আল্লাহর ঘর তওয়াফ শেষ করে সাঈ করার পূর্বে যদি ঋতু এসে যায়, তবে ওমরা পূর্ণ করবে। এতে কোন অসুবিধা নেই। আর সাঈ শেষ করার পর ঋতু আসলে তখন বিদায়ী তওয়াফের আবশ্যকতা নেই। কেননা ঋতুবতীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ রহিত।

প্রশ্নঃ (৪৮৯) মীকাত থেকে ঋতুবতী অবস্থায় জনৈক নারী ইহরাম বাঁধে। মক্কায় এসে পবিত্র হওয়ার পর পরিধেয় ইহরাম বস্ত্র সে খুলে ফেলে। এর বিধান কি?
উত্তরঃ ঋতুবতী অবস্থায় নারী যদি মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধে, তারপর মক্কায় এসে পবিত্র হওয়ার পর পরিধেয় ইহরাম বস্ত্র খুলে ফেলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ কাপড় পরিবর্তন করে ইচ্ছামত যে কোন বৈধ পোষাক পরিধান করা জায়েয। অনুরূপভাবে পুরুষও পরিধেয় ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করে অনুরূপ ইহরামের কাপড় পরিধান করতে পারে। কোন অসুবিধা নেই।

প্রশ্নঃ (৪৯০) হজ্জের সময় নিকাব দিয়ে নারীর মুখ ঢাকার বিধান কি? আমি একটি হাদীছ পড়েছি যার অর্থ হচ্ছেঃ “ইহরামকারী নারী নেকাব পরবে না এবং হাত মোজা পরিধান করবে না।” আয়েশা (রাঃ)এর অন্য একটি কথা পড়েছি। তিনি বলেন, “আমাদের সামনে কোন পুরুষ এলে আমরা মুখের উপর কাপড় ঝুলিয়ে দিতাম। যখন আমরা ওদের সামনে চলে যেতাম, তখন মুখমন্ডল খুলে রাখতাম” সে সময় তারা হজ্জে ছিলেন। দু’টি হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য কি?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, হাদীছের মর্ম অনুযায়ী নারী ইহরাম অবস্থায় নেকাব পরবে না। পুরুষ তার সম্মুখে আসুক বা না আসুক কোন অবস্থাতেই তার জন্য নেকাব ব্যবহার করা জায়েয নয়। সে হজ্জে থাক বা ওমরায় । নেকাব নারী সমাজে পরিচিত। আর তা হচ্ছে একটি পর্দা দিয়ে মুখন্ডল ঢেকে নেয়া যাতে দু‘চোখের জন্য আলাদা আলাদা দু’টি ছিদ্র থাকে। কিন্তু আয়েশা (রাঃ) এর হাদীছ নেকাব নিষিদ্ধের হাদীছের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ নয়। কেননা আয়েশার হাদীছে একথা বলা হয়নি যে তারা নেকাব পরতেন। বরং নেকাব না পরে মুখ ঢেকে ফেলতেন। আর পরপুরুষ সামনে এলে নারীদের মুখ ঢেকে ফেলা ওয়াজিব। কেননা মাহরাম নয় এমন পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডল ঢেকে রাখা ওয়াজিব।

অতএব ইহরামের ক্ষেত্রে সবসময় নেকাব পরিধান করা হারাম। আর পরপুরুষ সামনে না এলে মুখমন্ডল খোলা রাখা ওয়াজিব। কিন্তু সামনে এলে ঢেকে ফেলা ওয়াজিব। তবে নেকাব ছাড়া অন্য কাপড় ঝুলিয়ে দিতে হবে।

প্রশ্নঃ (৪৯১) ভুল ক্রমে অথবা অজ্ঞতা বশতঃ ইহরামের নিষিদ্ধ কোন কাজ করে ফেললে, তার বিধান কি?
উত্তরঃ ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর অন্তরে দৃঢ় ইচ্ছা করে ইহরাম না বেঁধে থাকে আর নিষিদ্ধ কোন কাজ করে তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা নিয়ত করে ইহরামে প্রবেশ করাটাই ধর্তব্য। ইহরামের কাপড় পরিধান করা মানেই ইহরাম বাঁধা নয়।

কিন্তু সঠিকভাবে নিয়ত করে ইহরামে প্রবেশ করার পর যদি ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলে, তবে কোন কিছু দিতে হবে না। তবে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বা শিখিয়ে দেয়ার সাথে সাথে অজ্ঞ ব্যক্তি উক্ত নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত হবে।

উদাহরণঃ ইহরাম করার পর ভুলক্রমে জামা পরে নিয়েছে, তার কোন গুনাহ নেই। তবে মনে পড়ার সাথে সাথে তাকে উক্ত জামা খুলে ফেলতে হবে। অনুরূপভাবে ভুলক্রমে সে পায়জামা খুলে নি। নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করার পর মনে পড়েছে যে, পায়জামা তো খুলা হয় নি। তখন সাথে সাথে সে তা খুলে ফেলবে।

কোন লোক সেলাই ছাড়া শুধু গিরা দিয়ে তৈরীকৃত একটি গেঞ্জি পরিধান করে যদি মনে করে যে, ইহরামকারীর জন্য শুধু সেলাইকৃত কাপড় পরা নিষেধ। তাই আমি ইহা পরিধান করেছি, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। কেননা সে অজ্ঞ। কিন্তু যখন তাকে জানানো হবে যে, শরীরের মাপে তৈরীকৃত যাবতীয় পোষাক পরিধান করা নিষিদ্ধ তখন তা খুলে ফেলা তার জন্য আবশ্যক হবে।

এক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ যাবতীয় কাজ যদি কোন মানুষ ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ বা বাধ্যগত অবস্থায় করে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا “হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহ্‌ বলেন, আমি তাই করলাম। আল্লাহ্‌ আরো বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
“ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্‌ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আহযাবঃ ৫) 
ইহরাম অবস্থায় বিশেষভাবে নিষিদ্ধকৃত পশু শিকার করা সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেন, وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে উহা (শিকার) হত্যা করে।” (সূরা মায়েদাঃ ৯৫)

ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। সকল ক্ষেত্রে বিধান একই। যেমন, পোষাক পরিধান করা, সুগন্ধি লাগানো প্রভৃতি অথবা শিকার হত্যা করা, চুল কেটে ফেলা প্রভৃতি। আলেমদের মধ্যে কেউ পার্থক্য করে থাকেন। কিন্তু বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে কোন পার্থক্য নেই। কেননা এই নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ভুল বা অজ্ঞতা বা বাধ্যগত কারণে মানুষ মা’যুর বা তার অপরাধ ক্ষমাযোগ্য।

হজ্জে ভুল হলে তার ফিদ্‌ইয়া কোথায় আদায় করতে হবে?

প্রশ্নঃ (৪৯২) জনৈক ব্যক্তি হজ্জ আদায় করার ক্ষেত্রে ভুলে লিপ্ত হয়েছে। ভুলের কাফ্‌ফারা দেয়ার জন্য তার কাছে তেমন কিছু ছিল না। সে দেশে ফেরত চলে গেছে। উক্ত কাফ্‌ফারা কি নিজ দেশে আদায় করা জায়েয হবে? নাকি মক্কাতেই পাঠাতে হবে? যদি মক্কাতেই পাঠাতে হয়, তবে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া কি জায়েয হবে?
উত্তরঃ হজ্জ পালনকারী কি ভুল করেছেন তা নির্দিষ্টভাবে অবশ্যই জানতে হবে। যদি কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে থাকে, তবে ফিদ্‌ইয়া হিসেবে মক্কাতে একটি কুরবানী করতে হবে। মক্কা ছাড়া অন্য কোথাও প্রদান করলে জায়েয হবে না। কেননা তা হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত।

কিন্তু যদি ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কোন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে, তবে নিম্নলিখিত তিনটি পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন করতে পারেঃ
ক) একটি ছাগল যবেহ করে মক্কার হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিবে। অথবা

খ) ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য দিবে। প্রত্যেককে অর্ধ ছা’ (প্রায় সোয়া কেজী) পরিমাণ খাদ্য দিবে। আর তা মক্কায় হতে হবে অথবা যে স্থানে ঐ নিষিদ্ধ কাজ করা হয়েছে সেখানে। অথবা

গ) তিন দিন রোযা রাখবে। এই তিনটি রোযা মক্কা বা যে কোন স্থানে রাখতে পারে তবে নিষিদ্ধ কাজটি যদি হজ্জের প্রথম হালালের আগে স্ত্রী সহবাস হয়, তবে ওয়াজিব হচ্ছেঃ নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার স্থানে অথবা মক্কায় একটি উট যবেহ করবে এবং ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দিবে।

অথবা নিষিদ্ধ কাজটি যদি কোন প্রাণী শিকার করা হয়, তবে ওয়াজিব হচ্ছেঃ তার অনুরূপ প্রাণী যবেহ করা অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা বা তিনটি ছিয়াম পালন করা। ছিয়াম পালন যে কোন স্থানে করা যায়। কিন্তু খাদ্য দান বা কুরবানী যবেহ করা অবশ্যই মক্কার হারাম এলাকার মধ্যে হতে হবে। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, “কুরবানী কা’বা ঘর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবে।” (সূরা মায়েদাঃ ৯৫)

অন্য মানুষকে দায়িত্ব দিয়ে উক্ত কাফ্‌ফারা আদায় করা জায়েয আছে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অবশিষ্ট কুরবানীগুলো যবেহ করার জন্য আলী (রাঃ) কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

প্রশ্নঃ (৪৯৩) তওয়াফের পূর্বে সাঈ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ তওয়াফে এফাযার পূর্বে সাঈ করা জায়েয। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন একস্থানে দন্ডায়মান হলেন, লোকেরা তাকে প্রশ্ন করতে লাগল। কেউ প্রশ্ন করল, سَعَيْتُ قَبْلَ أَنْ أَطُوفَ  ‘তওয়াফ করার পূর্বে আমি সাঈ করে নিয়েছি।’ তিনি বললেন, لاحَرَجَ  “কোন অসুবিধা নেই।” তামাত্তুকারী যদি তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে এবং ইফরাদকারী বা ক্বেরাণকারী তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ না করে থাকলে হজ্জের তওয়াফের পূর্বে যদি সাঈ করে, তবে কোন অসুবিধা নেই।

প্রশ্নঃ (৪৯৪) রামাযানে বারবার ওমরা করার বিধান কি? এরকম কোন সময় কি নির্দিষ্ট আছে যে, এতদিন পরপর ওমরা করতে হবে?
উত্তরঃ রামাযানে বারবার ওমরা করা বিদআত। কেননা এক মাসের মধ্যে বারবার ওমরা করা সালাফে সালেহীন তথা ছাহাবায়ে কেরামের নীতির বিপরীত। এমনকি শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) তাঁর ফতোয়ায় উল্লেখ করেছেন, সালাফে সালেহীনের ঐকমত্যে বারবার বেশী পরিমাণে ওমরা করা মাকরূহ। বিশেষ করে যদি ইহা রামাযানে হয়। বিষয়টি যদি পছন্দনীয় হত, তবে তাঁরা তো এব্যাপারে অধিক অগ্রগামী হতেন এবং বারবার ওমরা করতেন। দেখুন না নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করতেন। নেক কাজকে সর্বাধিক ভালবাসতেন। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় উনিশ দিন সেখানে অবস্থান করেছেন নামায আদায় করেছেন। কিন্তু কোন ওমরা আদায় করেননি।

আয়েশা (রাঃ) যখন ওমরা করার ব্যাপারে পিড়াপিড়ী করছিলেন, তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ভ্রাতা আবদুর রহমানকে বললেন, একে তানঈম নিয়ে গিয়ে ইহরাম করিয়ে নিয়ে আস। যাতে করে তিনি ওমরা আদায় করতে পারেন। কিন্তু আবদুর রহমানকে একথা বললেন না, তুমিও তাঁর সাথে ওমরা করে নিও। যদি বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হতো তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সে নির্দেশনা দিতেন। ছাহাবায়ে কেরামের নিকট বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হলে আবদুর রহমান তা করতেন। কেননা তিনি তো হারাম এলাকার বাইরে গিয়েছিলেন।

দু’ওমরার মাঝে কত ব্যবধান হওয়া উচিত এসম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেন, দেখবে যে পর্যন্ত মাথা পোড়া কাঠের মত কালো না হয়। অর্থাৎ- মাথা ভর্তি চুল না হয়।

প্রশ্নঃ (৪৯৫) তওয়াফ চলাবস্থায় যদি নামাযের ইকামত হয়ে যায়, তবে কি করবে? তওয়াফ কি পুনরায় শুরু করবে? পুনরায় শুরু না করলে কোথা থেকে তওয়াফ পূর্ণ করবে?
উত্তরঃ মানুষ যদি ওমরা বা হজ্জ বা বিদায়ী তওয়াফ বা নফল তওয়াফে লিপ্ত থাকে, আর ফরয নামাযের ইকামত হয়ে যায়, তবে তওয়াফ ছেড়ে দিয়ে নামাযের কাতারে শামিল হয়ে যাবে। নামায শেষ হলে যেখান থেকে তওয়াফ ছেড়েছিল সেখান থেকে তওয়াফ পূর্ণ করবে। নতুনভাবে তওয়াফ শুরু করার দরকার নেই এবং ঐ চক্করও নতুনভাবে শুরু করবে না। কেননা সে তো শরীয়ত সম্মত বিশুদ্ধ ভিত্তির উপরই বাকী কাজ আদায় করছে। সুতরাং শরীয়তের দলীল ছাড়া তার আগের কাজকে বাতিল বলা যাবে না।

প্রশ্নঃ (৪৯৬) ওমরায় তওয়াফের পূর্বে সাঈ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ওমরাকারী তওয়াফের পূর্বে যদি সাঈ করার পর তওয়াফ করে থাকে তবে তাকে পুনরায় সাঈ করতে হবে। কেননা দু’টি কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। প্রথমে তওয়াফ তারপর সাঈ। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরকম সিরিয়ালেই উহা আদায় করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জ-ওমরার নিয়ম শিখে নাও।” আমরা নবীজীর শিখানো পদ্ধতি গ্রহণ করতে চাইলে প্রথমে আমাদেরকে তওয়াফ শুরু করতে হবে। তারপর সাঈ। কিন্তু যদি বলে যে, আমি প্রথমবার সাঈ করাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমরা তাকে বলব, তুমি কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সাঈ কর। কিন্তু ভুলের উপর অটল থাকা চলবে না।

তাবেঈদের মধ্যে কেউ এবং কতিপয় বিদ্বান মত পোষণ করেন যে, ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ কেউ যদি ওমরাতে তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে ফেলে, তবে তাকে কোন কিছু দিতে হবে না। যেমনটি হজ্জের বেলায় হয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ (৪৯৭) ইয্‌তেবা’ কাকে বলে? এ কাজ কোন সময় সুন্নাত?
উত্তরঃ ইয্‌তেবা’ হচ্ছে গায়ের চাদরকে ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে তার উভয় দিক বাম কাঁধের উপর রাখা এবং ডান কাঁধ খোলা রাখা।

তওয়াফে কুদূম তথা মক্কায় আগমণের পর প্রথম তওয়াফের সময় এ কাজ সুন্নাত। অন্য সময় ইয্‌তেবা’ করা জায়েয নয়।

প্রশ্নঃ (৪৯৮) নফল সাঈ করা কি জায়েয আছে?
উত্তরঃ নফল সাঈ করা জায়েয নয়। কেননা সাঈ শুধুমাত্র হজ্জ-ওমরার সময় শরীয়ত সম্মত। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوْ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ[
“নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত। অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহের হজ্জ বা ওমরা করবে তার জন্য এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ করা দূষণীয় নয়। আর কোন ব্যক্তি সেচ্ছায় সৎকর্ম করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী সর্বজ্ঞাত।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)

প্রশ্নঃ (৪৯৯) অজ্ঞতা বশতঃ তওয়াফে এফাযা ছেড়ে দিলে করণীয় কি?
উত্তরঃ তওয়াফে এফাযা (হজ্জের তওয়াফ) হজ্জের অন্যতম রুকন। ইহা আদায় না করলে হজ্জ সম্পন্ন হবে না। কোন মানুষ ইহা ছেড়ে দিলে তার হজ্জ পূর্ণ হল না। ইহা অবশ্যই আদায় করতে হবে- যদিও এজন্য তাকে নিজ দেশে ফিরে আসতে হয়। এই অবস্থায় যেহেতু সে হজ্জের তওয়াফ করে নি, তাই তার জন্য স্ত্রী সহবাস বৈধ নয়। কেননা সে এখনো পূর্ণ হালাল হয়নি। তওয়াফে এফাযার সাথে যদি সাঈও ছেড়ে থাকে, তবে তামাত্তুকারীকে তওয়াফে এফাযা এবং সাঈ করতে হবে এবং কেরাণ ও ইফরাদকারী তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ না করে থাকলে, তাদেরকেও তওয়াফে এফাযার সাথে সাঈ করতে হবে, তবেই তারা পূর্ণ হালাল হবে এবং হজ্জ বিশুদ্ধ হবে।

প্রশ্নঃ (৫০০) অনেক তওয়াফকারীকে দেখা যায় ভীড়ের মধ্যে ঠেলে ঠেলে তাদের নারীদেরকে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার জন্য পাঠায়। তাদের জন্য কোনটি উত্তম হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা? নাকি পুরুষদের ভীড় থেকে দূরে অবস্থান করা।
উত্তরঃ প্রশ্নকারী যখন এই আশ্চর্য বিষয় দেখেছে, আমি এর চাইতে অধিক আশ্চর্য জনক বিষয় দেখেছি। আমি দেখেছি কিছু লোক ফরয নামাযানে- এক দিকে সালাম ফেরানো হলে দ্বিতীয় সালাম ফেরানোর পূর্বে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার জন্য দৌড় দেয়। এতে তো তার ফরয নামাযই বাতিল হয়ে গেল। যে নামায কিনা ইসলামের অন্যতম প্রধান রুকন। অথচ সে এমন একটি কাজ করতে ছুটেছে যা ওয়াজিব নয়। এমনকি তওয়াফ অবস্থায় না থাকলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা শরীয়ত সম্মতও নয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরাট ধরণের দুঃখ জনক অজ্ঞতা। তওয়াফ ছাড়া হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা সুন্নাত নয়। এব্যাপারে আমার কোন দলীল জানা নেই। আমি এই স্থান থেকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আমার জ্ঞানের বাইরে যদি কারো কাছে এমন কোন দলীল জানা থাকে যে, তওয়াফ না করলেও হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা শরীয়ত সম্মত, তবে সে যেন আমাদের কাছে তা পৌঁছিয়ে দেয়। আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।

অতএব হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা তওয়াফের সুন্নাতের অন্তর্গত। তাছাড়া এটা তখনই সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে যখন উহা চুম্বন করতে গিয়ে তওয়াফকারী কষ্ট পাবে না বা অন্য কাউকে কষ্ট দেয়া হবে না। যদি তওয়াফকারীর কষ্ট হয় বা অন্য কাউকে কষ্ট দেয়া হয়, তবে দ্বিতীয় পদক্ষেপ অবলম্বন করবে এবং তা হাত দ্বারা স্পর্শ করে হাতকে চুম্বন করবে। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে শিখিয়েছেন। যদি একাজও কষ্ট করা ও কষ্ট দেয়া ছাড়া আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে আমরা তৃতীয় স্তরে উপনীত হয়ে দূর থেকে হাজরে আসওয়াদকে এক হাত দ্বারা ইশারা করব। কিন্তু সে হাতকে চুম্বন করব না। এটাই হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার সুন্নাতী পদ্ধতি।

হাজরে আসওয়াদকে চুম্বনের বিষয়টি আরো জটিল ও কঠিন হবে- যেমনটি প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন্ত নারীদেরকে পাথর চুম্বন করার জন্য ঠেলে দেয়া, হতে পারে সে নারী গর্ভবতী বা বৃদ্ধা বা দুর্বল যুবতী অথবা শিশুকে উপরে উঠিয়ে চুম্বনের জন্য এগিয়ে দেয়া, তবে এসব কাজ গর্হিত ও নাজায়েয। কেননা এতে দুবর্ল লোকদেরকে ভয়ঙ্কর এক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, যেখানে আছে সংকীর্ণতা ও পুরুষদের ভীড়ের প্রচন্ডতা। তাই বিষয়টি মাকরূহ অথবা হারামের অন্তর্গত। আল্লাহ্‌র রহমতে অন্য ব্যবস্থা থাকতে কোন মানুষের পক্ষে এদিকে অগ্রসর হওয়া উচিত নয়। আপনি যদি কঠিনভাবে ইসলামের বিধান পালন করতে চান, তবে পরাজিত হবেন।

প্রশ্নঃ (৫০২) ওমরা বা হজ্জকারী যদি দু’আ না জানে, তবে তওয়াফ, সাঈ প্রভৃতির সময় কি কোন বই হাতে নিয়ে দেখে দেখে দু’আ পাঠ করা জায়েয হবে?
উত্তরঃ হজ্জ বা ওমরাকারী যে সমস্ত দু’আ জানে এগুলোই তার জন্যে যথেষ্ট। কেননা সাধারণতঃ সে যা জানে তা সে বুঝে। আর বুঝে-শুনেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। কিন্তু যদি কোন বই হাতে নিয়ে দু’আ পড়ে বা কাউকে ভাড়া নিয়ে তার শিখিয়ে দেয়া দু’আ পড়ে- যার কিছুই সে বুঝে না, তবে তাতে কোনই উপকার হবে না। তাছাড়া বাজারের এই বইগুলোতে তওয়াফ-সাঈর জন্য যে দু’আ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তা বিদআত এবং বিভ্রান্তি। কোন মুসলমানের জন্য এগুলো পাঠ করা জায়েয নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতকে প্রত্যেক চক্করের জন্য আলাদা ও বিশেষ কোন দু’আ শিক্ষা দেননি। ছাহাবায়ে কেরাম থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ
“আল্লাহর ঘরের তওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ ও জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ প্রভৃতির লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠা করা।”

তাই সকল মু‘মিনের উপর ওয়াজিব হচ্ছে এধরণের বই-পুস্তক থেকে সতর্ক থাকা। আর নিজের দরকারের কথা আল্লাহর কাছে এমন ভাষায় পেশ করা যার অর্থ সে নিজে অনুধাবন করে। সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর যিকির করা। অর্থ বুঝে না এমন শব্দ ব্যবহার করার চাইতে এটাই তার জন্য উত্তম। অনেকে এমনও আছে যে অর্থ বুঝা তো দূরের কথা বইয়ের শব্দ বা বাক্যগুলোই ভালভাবে পড়তে পারে না।

প্রশ্নঃ (৫০৩) তওয়াফ-সাঈতে কি বিশেষ কোন দু’আ আছে?
উত্তরঃ হজ্জ-ওমরার জন্য নির্দিষ্ট কোন দু’আ নেই। মানুষ জানা যে কোন দু’আ পাঠ করতে পারবে। কিন্তু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত দু’আ সমূহ পাঠ করা উত্তম। বিশেষ করে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে এই দু’আ পাঠ করা সুন্নাতঃ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুন্‌ইয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ্‌, ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।” অনুরূপভাবে সাফা-মারওয়ায় ও আরাফার দিবসের প্রমাণিত দু’আ পাঠ করতে পারে। সুন্নাত থেকে প্রমাণিত যে সমস্ত দু’আ জানা আছে তাই পাঠ করা উচিত। কিন্তু জানা না থাকলে তার মাথায় যে দু’আই আসে তাই পাঠ করা যাবে। কেননা এই দু’আ পাঠ করা ওয়াজিবের    অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং উহা মুস্তাহাব।

এ উপলক্ষে আমি বলতে চাইঃ হজ্জ-ওমরার জন্য ছোট ছোট পুসি-কা হাজীদের হাতে দেখা যায়। তাতে তওয়াফ-সাঈর প্রত্যেক চক্করের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দু’আ নির্দিষ্ট করা থাকে। এটা বিদআত। এতে নিশ্চিতভাবে অনেক ধরণের বিপদ আছে। যেমন,

১)  যারা এটা পাঠ করে ধারণা করে যে, বইয়ের দু’আগুলো নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত।
২)   তারা এই দু’আর প্রত্যেকটি শব্দ পাঠ করা ইবাদত মনে করে।
৩)   কোন মর্ম বা অর্থ না বুঝেই তা পাঠ করে।
৪)   প্রত্যেক চক্করের জন্য আলাদা আলাদা দু’আ নির্দিষ্ট করে।
৫)  ভীড়ের কারণে চক্কর পূর্ণ হওয়ার আগেই দু’আ পড়া শেষ হয়ে গেলে চুপ করে থাকে।
৬)   আর দু’আ শেষ হওয়ার আগে চক্কর শেষ হয়ে গেলে দু’আ পড়া ছেড়ে দেয়। এই বিদআতী আমলের কারণে এতগুলো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

অনুরূপভাবে মাক্বামে ইবরাহীমের কাছে পাঠ করার জন্য ঐ বইয়ে যে দু’আ পাওয়া যায়, তাও বিদআত। কেননা উহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নয়। বরং তিনি সেখানে গিয়ে পাঠ করেছেন, 
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى 
“তোমরা মাক্বামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।” (সূরা বাক্বারাঃ ১২৫) 
এবং তিনি এর পিছনে দু’রাকাত নামায আদায় করেছেন। অতএব যারা এখানে এসে অতিরিক্ত দু’আ পাঠ করে এবং অন্যান্য মুছল্লী ও তওয়াফকারীদের মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তাদের এই কাজ দু’টি কারণে গর্হিত ও বিদ্‌আতঃ ক) এ সমস্ত দু’আ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত না হওয়ার কারণে তা বিদআত। খ) যারা মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে ছালাত আদায় করে তাদের নামাযে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

প্রশ্নঃ (৫০৪) ওমরা শেষ করার পর ইহরামের কাপড়ে নাপাকী দেখতে পেলে কি করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ ওমরার তওয়াফ ও সাঈ শেষ করার পর যদি ইহরামের কাপড়ে নাপাকী দেখতে পায়, তবে তার তওয়াফ বিশুদ্ধ, সাঈ বিশুদ্ধ তথা ওমরা বিশুদ্ধ। কেননা কারো কাপড়ে যদি তার অজানাতে কোন নাপাকী লেগে থাকে অথবা জানে কিন্তু তা পরিস্কার করতে ভুলে যায় এবং সেই কাপড়ে নামায আদায় করে, তবে তার নামায বিশুদ্ধ। অনুরূপভাবে ঐ কাপড়ে যদি তওয়াফ করে তবে তওয়াফও বিশুদ্ধ। একথার দলীল আল্লাহ্‌র বাণীঃ 
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا 
“হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) 
এটি একটি সাধারণ দলীল। ইহা ইসলামের বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। এখানে একটি বিশেষ দলীল আছে, একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জুতা পরিহিত অবস্থায় ছালাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ তিনি জুতা খুলে ফেললেন। লোকেরাও জুতা খুলে ফেললেন। নামায শেষ করে তিনি তাদেরকে বললেন, “তোমাদের কি হয়েছে? কেন তোমরা জুতা খুলে ফেললে? তারা বললেন, আপনি জুতা খুলে ফেলেছেন, আপনার দেখাদেখি আমরাও জুতা খুলে ফেললাম। তিনি বললেন, “জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে সংবাদ দিলেন যে, আমার জুতায় নাপাকী আছে। তাই আমি ইহা খুলে ফেলেছি।” কিন্তু নবী (সাঃ) নতুন করে আর নামায আদায় করলেন না। অথচ তাঁর নামাযের প্রথম দিকের কিছু অংশ নাপাকী নিয়েই হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা জানতেন না। অতএব ভুলক্রমে অথবা না জানার কারণে কেউ যদি কাপড়ে নাপাকী নিয়ে নামায আদায় করে বা তওয়াফ করে তবে তা বিশুদ্ধ হবে।

একটি মাসআলাঃ কোন মানুষ যদি ছাগলের মাংস মনে করে উটের মাংস খায় এবং এ ভিত্তিতে ওযু না করেই ছালাত আদায় করে। যখন বিষয়টি সে জানবে তখন তাকে কি নামায পুনরায় পড়তে হবে? হ্যাঁ, ওযু করে তাকে নামায পুনরায় পড়তে হবে।

কেউ যদি প্রশ্ন করে, এটা কেমন কথা অজ্ঞতা বশতঃ নাপাকী নিয়ে নামায আদায় করলে তা দোহরাতে হবে না; কিন্তু অজ্ঞতা বশতঃ উটের মাংস খেয়ে ওযু না করে নামায আদায় করলে তা দোহরাতে হবে?

এর জবাবঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি (ঃযবড়ৎু) হচ্ছে, [নির্দেশ মূলক বিষয় অজ্ঞতা ও ভুলের কারণে রহিত হয় না। কিন্তু নিষিদ্ধ বিষয় অজ্ঞতা ও ভুলের কারণে রহিত হয়ে যায়।] এই মূলনীতির দলীল হচ্ছেঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ তিনি বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি নামায আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে বা ভুলে যায়, তবে স্মরণ হলেই সে যেন উহা আদায় করে নেয়।” কোন এক সময় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুলক্রমে দু’রাকাত নামায পড়ে সালাম ফিরিয়ে দিলেন, বিষয়টি তাঁকে স্মরণ করানো হলো, তিনি তখন শুধুমাত্র ছুটে যাওয়া দু’রাকাতই আদায় করলেন। এথেকে বুঝা যায় নির্দেশিত বিষয় ভুলে যাওয়ার কারণে রহিত হয় না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন নামায ভুলে গেলে স্মরণ হলেই আদায় করে নিতে হবে। তা ছেড়ে দেয়া যাবে না।

অনুরূপভাবে অজ্ঞতার কারণে নির্দেশ মূলক রহিত হয় না তার দলীল হচ্ছে, জনৈক ব্যক্তি এসে খুব তাড়াহুড়া করে নামায আদায় করলো, তারপর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট এসে সালাম দিলো, তিনি তাকে বললেনঃ ফিরে যাও আবার নামায আদায় করো, কেননা তুমি নামাযই আদায় করো নি। এভাবে তিন বার তাকে ফেরালেন। প্রতিবারই সে নামায আদায় করে তাঁর কাছে আসলে তিনি তাকে বললেন, “ফিরে গিয়ে নামায আদায় কর। কেননা তুমি নামাযই আদায় করো নি।” শেষ পর্যন্ত নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নামায শিখিয়ে দিলেন, ফলে সে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে নামায আদায় করল। এই লোকটি নামাযের গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ‘ধীরস্থিরতা’ অজ্ঞতার কারণে পরিত্যাগ করেছিল। সে বলেছিল, ‘শপথ সেই সত্বার যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চাইতে সুন্দর ভাবে নামায আদায় করতে জানি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন।’ অজ্ঞতার কারণে যদি ওয়াজিব রহিত হয়ে যেত, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ওযর গ্রহণ করতেন এবং বারংবার তাকে নামায পড়তে বলতেন না।

প্রশ্নঃ (৫০৫) মাক্বামে ইবরাহীমে যে পদচিহ্ন দেখা যায়, তা কি প্রকৃতই ইবরাহীম (আঃ) এর পায়ের চিহ্ন?
উত্তরঃ সন্দেহ নেই মাক্বামে ইবরাহীম সুপ্রমাণিত। কাঁচে ঘেরা স্থানটিই মাক্বামে ইবরাহীম। কিন্তু এর মধ্যে যে গর্ত দেখা যায় তাতে পায়ের কোন চিহ্ন প্রকাশিত নয়। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, বহুকাল পর্যন্ত পাথরের উপর দু’পায়ের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। কিন্তু বর্তমানের এই গর্তটি শুধুমাত্র পরিচয়ের জন্য করা হয়েছে। একথা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে, এই গর্তই ইবরাহীম (আঃ) এর পদদ্বয়ের চিহ্ন।

এ উপলক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। অনেক ওমরাকারী ও হজ্জ পালনকারী মাক্বামে ইবরাহীমের পাশে এসে এমন কিছু দু’আ পাঠ করে যা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নয়। কখনো এরা উঁচু কন্ঠে দু’আ পাঠ করে এবং মুছল্লী বা তওয়াফকারীদের মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। মাক্বামে ইবরাহীমের জন্য নির্দিষ্ট কোন দু’আ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই। মানুষ যা পাঠ করে তা মৌলবীদের তৈরীকৃত। সুন্নাত হচ্ছে তওয়াফ শেষ করে (মাক্বামে ইবরাহীমের) পিছনে এসে হালকা করে দু’রাকাত নামায আদায় করা। (বেশী ভীড় থাকলে সেখানে নামায না পড়ে আরো পিছনে বা যে কোন স্থানে নামায পড়া যাবে।) তারপর নামায হয়ে গেলেই সেখানে বসে থাকবে না; যারা নামায পড়তে চায় তাদের জন্য জায়গা খালি করে দিবে।

প্রশ্নঃ (৫০৬) কা’বা শরীফের গিলাফ ধরে দু’আ বা কান্নাকাটি করা জায়েয কি?
উত্তরঃ কা’বা শরীফের গিলাফ ধরে বরকত কামনা করা বা দু’আ বা কান্নাকাটি করা বিদআত। কেননা এ কাজ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই। মুআবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রাঃ) তওয়াফ করার সময় যখন কা’বা ঘরের প্রতিটি কোণ স্পর্শ করছিলেন, তখন আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ) এর প্রতিবাদ করেছেন। মুআবিয়া বললেন, কা’বা ঘরের কোন অংশই ছাড়ার নয়।’ তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) জবাবে বললেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমি দেখেছি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধু মাত্র দু’টি কর্ণার স্পর্শ করেছেন। অর্থাৎ- হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী। অতএব আমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে কা’বা ঘরকে ছোঁয়া বা স্পর্শ করার ব্যাপারে শুধুমাত্র সুন্নাত থেকে প্রমাণিত দলীলেরই অনুসরণ করব। কেননা এতেই আমরা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উত্তম আদর্শকে আঁকড়ে থাকতে পারব।

অবশ্য মুলতাযিম অর্থাৎ কা’বা ঘরের দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান স্পর্শ করে দু’আ করা, ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রশ্নঃ (৫০৭) ওমরায় মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করার বিধান কি? এ দু’টির মধ্যে কোনটি উত্তম?
উত্তরঃ ওমরায় মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা ওয়াজিব। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে মক্কায় আগমণ করে তওয়াফ ও সাঈ করার পর যারা কুরবানী সাথে নিয়ে আসেনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, তারা যেন মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যায়। নবী  (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর এই আদেশ ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে। অতএব চুল ছোট করা আবশ্যক। তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৬ষ্ঠ হিজরীতে ওমরা করার জন্য গমণ করলে হুদায়বিয়া নামক স্থানে কাফেরদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন, তখন তিনি ছাহাবীদেরকে সেখানেই মাথা মুন্ডন করার নির্দেশ প্রদান করেন। তারা নির্দেশ পালনে দ্বিধায় ভোগলে তিনি তাদের উপর রাগন্বিত হন। আর মাথার চুল ছোট করার চাইতে মাথা মুন্ডন করা উত্তম। তবে তামাত্তুকারী যদি শেষ সময়ে মক্কায় পৌঁছে, তবে ওমরা করার পর চুল ছোট করাই ভাল, যাতে করে হজ্জের সময় মুন্ডন করার জন্য মাথায় চুল পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ (৫০৮) জনৈক হাজী তামাত্তু হজ্জ করতে এসে, ওমরার তওয়াফ ও সাঈ শেষ করে ইহরাম খুলে সাধারণ পোশাক পরিধান করে নিয়েছে। মাথা মুন্ডন করেনি বা চুল ছোট করেনি। হজ্জের যাবতীয় কাজ শেষ করার পর এ সম্পর্কে সে জানতে চেয়েছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ এ ব্যক্তি ওমরার একটি ওয়াজিব কাজ পরিত্যাগ করেছে। তা হচ্ছে, চুল খাটো করা বা মাথা মুন্ডন করা। বিদ্বানদের মতে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে ফিদ্‌ইয়া হিসেবে একটি কুরবানী করা। তা মক্কাতেই আদায় করতে হবে এবং সেখানকার ফকীরদের নিকট তার গোস্ত বিতরণ করতে হবে। তবেই তার তামাত্তু হজ্জ সম্পাদন হবে এবং ওমরা বিশুদ্ধ হবে।

প্রশ্নঃ (৫০৯) যে ব্যক্তি তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বেঁধে ওমরা শেষ করে চুল কাটেনি বা মুন্ডনও করেনি। পরে হজ্জের সমস্ত কাজ শেষ করেছে তাকে কি করতে হবে?
উত্তরঃ এ ব্যক্তি ওমরায় চুল ছোট করা পরিত্যাগ করেছে। যা ওমরার একটি রুকন। বিদ্বানদের মতে ওয়াজিব পরিত্যাগ করলে দম তথা কুরবানী ওয়াজিব হবে। তা মক্কায় যবেহ করে সেখানকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করতে হবে। আর এর মাধ্যমে হজ্জ ও ওমরা পূর্ণতা লাভ করবে। মক্কার বাইরে অবস্থান করলে যে কোন লোককে উক্ত ফিদ্‌ইয়া মক্কায় আদায় করার জন্য দায়িত্ব দিতে পারে। (আল্লাহ্‌ তাওফীক দাতা)

প্রশ্নঃ (৫১০) তামাত্তুকারী কুরবানী দিতে পারেনি। হজ্জে সে তিনটি রোযা রেখেছে। কিন্তু হজ্জ থেকে ফিরে এসে সাতটি রোযা রাখেনি। এভাবে তিন বছর কেটে গেছে। তার করণীয় কি?
উত্তরঃ তার উপর আবশ্যক হচ্ছে দশ দিনের মধ্যে থেকে অবশিষ্ট সাত দিনের ছিয়াম এখনই পালন করে নেয়া।

প্রশ্নঃ (৫১১) ওমরা করে জনৈক লোক নিজ দেশে গিয়ে মাথা মুন্ডন করেছে। তার ওমরার বিধান কি?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, মাথা মুন্ডন করার জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই। মক্কা বা মক্কা ছাড়া অন্য কোন স্থানে মুন্ডন করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মাথা মুন্ডন করার উপর ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়া নির্ভর করছে। তাছাড়া মুন্ডন করার পর বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে। ওমরার কাজগুলোর ধারাবাহিকতা এরকমঃ ইহরাম, তওয়াফ, সাঈ, মাথা মুন্ডন বা ছোট করা এবং ওমরার কাজ শেষ করার পর মক্কায় অবস্থান করলে বিদায়ী তওয়াফ করা। কিন্তু ওমরার কাজ শেষ করে মক্কায় অবস্থান না করলে বিদায়ী তওয়াফের দরকার নেই। অতএব মক্কায় অবস্থান করতে চাইলে ওমরার কাজ শেষ করে মক্কাতেই তাকে মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করতে হবে। কারণ তাকে এরপর বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে। কিন্তু তওয়াফ-সাঈ শেষ করার সাথে সাথেই যদি মক্কা থেকে বের হয়ে থাকে, তবে নিজ দেশে বা শহরে গিয়ে মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করতে পারে। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত তাকে ইহরাম অবস্থাতেই থাকতে হবে।

প্রশ্নঃ (৫১২) তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বেঁধে ওমরা করে কোন কারণ বশতঃ হজ্জের ইচ্ছা পরিত্যাগ করেছে। তাকে কি কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃ তাকে কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। কেননা তামাত্তুকারী ওমরার ইহরাম বাঁধার পর ওমরা পূর্ণ করে যদি হজ্জের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে তাতে কোন অসুবিধা নেই।  কেননা দু’টি কাজ আলাদা আলাদা ইহরামে সম্পাদন করতে হয়। হ্যাঁ, সে যদি মানত করে থাকে যে এ বছরই হজ্জ করবে তবে মানত পূর্ণ করা অবশ্য কর্তব্য।

প্রশ্নঃ (৫১৩) তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বাঁধার পর ওমরা শেষ করে অজ্ঞতা বশতঃ হালাল হয়নি। এভাবে হজ্জের কাজ শেষ করে কুরবানী করেছে। তার করণীয় কি? তার হজ্জ কি বিশুদ্ধ?
উত্তরঃ জানা আবশ্যক যে, কোন মানুষ তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বাঁধলে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, তওয়াফ, সাঈ শেষ করে মাথার চুল খাটো করে হালাল হয়ে যাওয়া। কিন্তু ওমরার তওয়াফ শুরু করার পূর্বে যদি হজ্জের নিয়ত করে ফেলে এবং ইহরাম খোলার ইচ্ছা না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই। এ অবস্থায় তার হজ্জ কেরাণ হজ্জে পরিণত হবে। তার কুরবানীও হবে কেরাণ হজ্জের কুরবানী।

কিন্তু যদি ওমরার নিয়তেই থাকে এমনকি তওয়াফ-সাঈ শেষ করে ফেলে, তবে অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তার হজ্জের ইহরাম বিশুদ্ধ নয়। কেননা ওমরার তওয়াফ শুরু করার পর ওমরাকে হজ্জে প্রবেশ করানো বিশুদ্ধ নয়।

বিদ্বানদের মধ্যে অন্যদের মত হচ্ছে, এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সে ছিল অজ্ঞ। আমি মনে করি তাকে কোন কিছু দিতে হবে না। তার হজ্জ বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ্‌।

প্রশ্নঃ (৫১৪) আরাফাত থেকে ফেরার পথে একদল লোক মুযদালিফার রাস্তা হারিয়ে ফেলে। রাত একটার দিকে তারা মাগরিব ও এশা ছালাত আদায় করে। মুযদালিফা পৌঁছার সময় ফজরের আযান হয়ে যায়। সেখানে তারা ফজর নামায আদায় করে। এখন তাদেরকে কি কোন জরিমানা দিতে হবে?
উত্তরঃ এদেরকে কোন ফিদ্‌ইয়া বা জরিমানা দিতে হবেনা। কেননা তারা ফজরের আযানের সময় মুযদালিফায় প্রবেশ করেছে এবং সেখানে অন্ধকার থাকতেই ফজর ছালাত আদায় করেছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত আছে। তিনি বলেন,
مَنْ شَهِدَ صَلَاتَنَا هَذِهِ وَوَقَفَ مَعَنَا حَتَّى نَدْفَعَ وَقَدْ وَقَفَ بِعَرَفَةَ قَبْلَ ذَلِكَ لَيْلا أَوْ نَهَارًا فَقَدْ أَتَمَّ حَجَّهُ وَقَضَى تَفَثَهُ
“যে ব্যক্তি আমাদের সাথে এই ছালাতে উপস্থিত হয়েছে এবং প্রস্থান করা পর্যন্ত আমাদের সাথে অবস্থান করেছে। আর এর পূর্বে আরাফাতে রাতে বা দিনে অবস্থান করেছে, সে তার হজ্জ পূর্ণ করে নিয়েছে এবং ইবাদত আদায় করে নিয়েছে।”

কিন্তু এরা মধ্যরাত্রির পর মাগরিব-এশা নামায আদায় করে ভুল করেছে। কেননা এশা নামাযের শেষ সময় মধ্যরাত্রি। যেমনটি ছহীহ মুসলিমে আবদুল্লাহ্‌ বিন আমর বিন আ’ছ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে প্রমাণিত আছে।

প্রশ্নঃ (৫১৫) জনৈক নারী মুযদালিফা থেকে শেষ রাত্রে যাত্রা করেছে। এবং সামর্থ থাকা সত্বেও নিজের ছেলেকে তার পক্ষ থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের দায়িত্ব প্রদান করেছে। এর বিধান কি?
উত্তরঃ হজ্জের কার্যাদির মধ্যে অন্যতম কাজ হচ্ছে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাজের নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন,
إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ
“আল্লাহর ঘরের তওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ ও জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ প্রভৃতির লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠা করা।” 
এটি একটি ইবাদত। মানুষ এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করবে। তাঁর যিকিরকে প্রতিষ্ঠিত করবে। যেহেতু এটার ভিত্তি শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতের উপর, তাই উচিত হচ্ছে, কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহর জন্য ভীত হবে ও বিনয়াবনত হবে। তবে প্রথম সময়েই তাড়াহুড়া করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে যাবে না; বরং দেরী করে শেষ সময়ে নিক্ষেপ করবে। অবস্থাভেদে সিদ্ধান্ত নিবে। শেষ সময়ে যদি প্রশান্তি, ধীরস্থিরতা, বিনয় ও অন্তরের উপস্থিতির সাথে নিক্ষেপ করা যায়, তবে দেরী করাই উত্তম। কেননা এটা এমন বৈশিষ্ট যা ইবাদতের বিশুদ্ধতার সাথে সংশ্লিষ্ট। আর যে বৈশিষ্ট ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট তা ইবাদতের সময় ও স্থানের উপর অগ্রগণ্য। এ কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَا صَلاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلا هُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ
“খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দু’টি নাপাক বস্তর (পেশাব-পায়খানার) চাপ থাকলে নামায নেই।” 
অর্থাৎ- প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য এবং মনের চাহিদা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য মানুষ নামাযকে প্রথম সময় থেকে বিলম্ব করে আদায় করবে। অতএব কঙ্কর মারার জন্য প্রথম সময়ে যদি ভীড়ের কারণে বেশী কষ্ট হয়, কঙ্কর মারার চাইতে নিজের জান বাঁচানোর দায় বেশী হয়, আর বিলম্বে কঙ্কর মারলে যদি প্রশান্তির সাথে অন্তর উপস্থিত রাখা যায়, বিনয় ও নম্রতার সাথে এই ইবাদত করা যায়, তবে বিলম্বে কঙ্কর মারাই উত্তম। এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদেরকে শেষ রাতেই মুযদালিফা ছেড়ে চলে যেতে অনুমতি দিয়েছিলেন। যাতে করে তারা ভীড়ের মধ্যে পড়ে কষ্ট না পায়।

অতএব একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, নারী হোক বা পুরুষ হোক সামর্থবান হলে কাউকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দেয়া জায়েয নয়। নিজেই কঙ্কর মারার ইবাদতটি পালন করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরা পূর্ণ কর।” এতে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই। তবে কোন পুরুষ বা নারী অসুস্থ হয় বা নারী গর্ভবতী হয় এবং ভীড়ের মধ্যে গেলে গর্ভের ক্ষতি হওয়ার আশংকা করে, তবে তারা যে কাউকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দিতে পারে।

প্রশ্নে উল্লেখিত যে নারী সামর্থ থাকা সত্বেও নিজের ছেলেকে দিয়ে কঙ্কর মারিয়েছে- আমি মনে করি ওয়াজিব পরিত্যাগ করার কারণে সতর্কতা বশতঃ সে একটি কুরবানী করবে এবং তা মক্কার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিবে।

প্রশ্নঃ (৫১৬) জনৈক হাজী পূর্ব দিক থেকে জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মেরেছে। কিন্তু তা হাওয বা গর্তের মধ্যে পড়েনি। ঘটনাটি ছিল ১৩ তারিখে। তাকে কি তিনটি জামরাতেই পুনরায় কঙ্কর মারতে হবে?
উত্তরঃ সবগুলো স্থানে তাকে পুনরায় কঙ্কর মারতে হবে না; বরং যে ক্ষেত্রে ভুল করেছে সেটাই শুধু পুনরায় মারবে। অতএব শুধুমাত্র জামরা আক্বাবায় পুনরায় কঙ্কর মারবে। সঠিক পদ্ধতিতে মারবে। পূর্ব দিক থেকে মারলে যদি হাওযে কঙ্কর না পড়ে তবে মারা জায়েয হবে না। কেননা কঙ্কর মারার স্থানই হচ্ছে হাওয। এই কারণে যদি ব্রীজের উপরে গিয়ে পূর্ব দিক থেকে কঙ্কর মারে এবং তা হাওযে পড়ে তবে তা জায়েয হবে।

প্রশ্নঃ (৫১৭) সাতটি কঙ্করের মধ্যে থেকে যদি একটি বা দু’টি কঙ্কর জামরায় না পড়ে এবং এ ভাবে এক বা দু’দিন অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে কি তাকে সবগুলো জামরায় পুনরায় কঙ্কর মারতে হবে?
উত্তরঃ যদি কারো কোন জামরায় একটি বা দু’টি পাথর নিক্ষেপ বাকী থাকে, তবে ফিক্বাহবিদগণ বলেন, যদি এটা শেষ জামরায় হয়ে থাকে, তবে শুধু বাকীটা মেরে দিলেই হয়ে যাবে, পূর্বেরগুলো আর মারতে হবেনা। কিন্তু যদি প্রথম বা মধ্যবর্তী জামরার কোন একটিতে এক বা একাধিক পাথর মারা বাকী থাকে, তবে সেটা পূর্ণ করবে এবং তারপরের জামরাগুলোতে পাথর মারবে। কেননা পাথর মারার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব।

আমার মতে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ সর্বক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাকী পাথরটাই মারবে। তারপরের জামরাতে আর পাথর মারতে হবে না। কেননা ভুল বা অজ্ঞতার কারণে ধারাবাহিকতা রহিত হয়ে যাবে। এই লোক যখন মধ্যবর্তী জামরাতে পাথর মেরেছে, তার তো এই ধারণা নেই যে, এর পূর্বে কোন পাথর মারা তার বাকী আছে। সুতরাং বিষয়টি সে ভুলে গেছে অথবা তাতে সে অজ্ঞ। তাই তাকে আমরা বলব, যে ক’টা পাথর মারা বাকী রয়েছে তা মেরে দিন। এরপর আর কোনা পাথর মারতে হবে না।

এ জবাব শেষ করার আগে আমি সতর্ক করতে চাই যে, জামরা হচ্ছে পাথর একত্রিত হওয়ার স্থান বা পাথরের হাওয। যে লম্বা স্তম্ভ দেখা যায় সেটাই জামরা নয়। এটা শুধু চিহ্নের জন্য রাখা হয়েছে। অতএব যদি হাওযে বা গর্তের মধ্যে কঙ্কর নিক্ষেপ করে এবং ঐ স্তম্ভে না লাগে তাতে কোন অসুবিধা নেই তার নিক্ষেপ বিশুদ্ধ।

প্রশ্নঃ (৫১৮) কেউ কেউ বলেন, যে কঙ্কর একবার নিক্ষিপ্ত হয়েছে তা নাকি আবার নিক্ষেপ করা যাবে না। এ কথাটি কি ঠিক? এর কোন দলীল আছে কি?
উত্তরঃ একথা সঠিক নয়। কেননা যারা নিক্ষিপ্ত কঙ্কর পুনরায় নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেন তাদের যুক্তি হচ্ছেঃ

১)      নিক্ষিপ্ত কঙ্কর (মায়ে মুস্তা’মাল) তথা ব্যবহৃত পানির মত। ফরয পবিত্রতায় যদি কোন পানি ব্যবহার করা হয়, তবে ব্যবহৃত পানিটা পবিত্র থাকে কিন্তু সে পানি অন্যকে পবিত্র করতে পারে না।

২)      বিষয়টি ক্রীতদাসের মত। কাফ্‌ফারা প্রভৃতিতে যদি তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়, তবে তো তাকে আবার মুক্ত করা যাবে না।

৩)      এতে বুঝা যায় সমস্ত হাজীর জন্য একটি মাত্র পাথর মারাই জায়েয হবে। আপনি পাথরটি মারবেন, তারপর আবার সেটা নিবেন এবং মারবেন, তারপর আবার নিবেন এবং মারবেন এভাবে সাতবার পূর্ণ করবেন। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে সেই পাথরটি সাতবার নিয়ে সাতবার মারবে।

এ তিনটি যুক্তি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় খুবই দুর্বলঃ

১) ব্যবহৃত পানির যে উদাহরণ দেয়া হয়েছে তা ঠিক নয়। কেননা কোন ওয়াজিব পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি ব্যবহার করা হলে পানি নিজে পবিত্র থাকবে কিন্তু অন্যকে পবিত্র করতে পারবে না এটি দলীল বিহীন একটি কথা। পানির যে প্রকৃত গুণ রয়েছে অর্থাৎ পবিত্রতা তা দলীল ছাড়া রহিত করা যাবে না। অতএব ওয়াজিব পবিত্রতা অর্জনের জন্য ব্যবহৃত পানি নিজে পবিত্র অন্যকেও পবিত্র করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রথম যুক্তির খন্ডন হয়ে গেল। এবং কঙ্কর মারাকে তার সাথে তুলনা করা ভুল প্রমাণিত হল।

২) নিক্ষিপ্ত কঙ্করকে মুক্ত ক্রীতদাসের সাথে তুলনা করাও ঠিক নয়। কেননা উভয়ের মাঝে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। ক্রীতদাসকে মুক্ত করা হলে সে তো স্বাধীন হয়ে গেল। তাকে আবার মুক্ত করার সুযোগ থাকলো না। কিন্তু কঙ্কর মারা হয়ে গেলেও সেটা কঙ্করই রয়ে যায়। যে কারণে তা নিক্ষেপ করা হয়েছিল সে কারণ তাতে অবশিষ্ট রয়েছে। এই কারণে ক্রীতদাস আবার যদি কখনো শরঈ দলীলের ভিত্তিতে দাসে পরিণত হয়, তবে পুনরায় তাকে মুক্ত করা যাবে।

৩) তৃতীয় যুক্তির জবাবে আমরা বলবঃ সমস্ত হাজীকে একটি মাত্র পাথর নিক্ষেপ আবশ্যক করা- যদি সম্ভব হয় তো হোক। কিন্তু তা অসম্ভব। অসংখ্য পাথর থাকতে কোন বুদ্ধিমান ঐ চিন্তা করতে পারে না।

সুতরাং কঙ্কর মারতে গিয়ে যদি আপনার হাত থেকে দু’একটি কঙ্কর পড়ে যায় তবে সম্মুখ থেকে সহজলভ্য কঙ্কর কুড়িয়ে নিয়ে তা মেরে দিন্ত চাই তা একবার মারা হয়েছে বা হয়নি তা দেখার বিষয় নয় এবং তাতে কোন অসুবিধা নেই।

প্রশ্নঃ (৫১৯) তওয়াফে এফাযার পূর্বে হজ্জের সাঈ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ হাজী সাহেব যদি ইফরাদ বা কেরাণকারী হয়, তবে তার জন্য তওয়াফে এফাযার পূর্বে হজ্জের সাঈ করা জায়েয আছে। তওয়াফে কুদুমের পর পরই উহা আদায় করে নিবে। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর ছাহাবীদের মধ্যে যারা কুরবানী সাথে নিয়ে এসেছিলেন তারা করেছিলেন।

কিন্তু তামাত্তুকারী হলে তাকে দু’বার সাঈ করতে হবে। প্রথমবার মক্কায় আগমণ করে ওমরার জন্য। প্রথমে তওয়াফ করবে, তারপর সাঈ করে চুল খাট করে হালাল হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয়বার সাঈ করবে (আরাফাত দিবসের পর) হজ্জের জন্য। উত্তম হচ্ছে তওয়াফে এফাযা আদায় করার পর এই সাঈ করা। কেননা সাঈ তওয়াফের পরের কাজ। অবশ্য যদি তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে ফেলে তবে বিশুদ্ধ মতে কোন অসুবিধা হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছেঃ আমি তো তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে ফেলেছি। জবাবে তিনি বলেছেন, “কোন অসুবিধা নেই।”

হাজী সাহেব ঈদের দিন তথা দশই জিলহজ্জ পাঁচটি কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদন করবেঃ

১) জামরা আক্বাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা
২) তারপর কুরবানী
৩) তারপর মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছোট করা।
৪) অতঃপর কা’বা ঘরের তওয়াফ করা
৫) সবশেষে ছাফা-মারওয়া সাঈ করা।

অবশ্য ইফরাদকারী ও ক্বেরাণকারী যদি তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ করে নিয়ে থাকে, তবে পুনরায় তাকে সাঈ করতে হবে না। উত্তম হচ্ছে উল্লেখিত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করা। কিন্তু যদি আগ-পিছ হয়ে যায় বা করে ফেলে- বিশেষ করে প্রয়োজন দেখা দিলে তবে কোন অসুবিধা নেই। এটা বান্দাদের প্রতি আল্লাহ্‌র করুণার একটি বড় প্রমাণ।

প্রশ্নঃ (৫২০) কখন জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মারলে আদায় হবে? এবং কখন মারলে কাযা মারা হবে?
উত্তরঃ ঈদের দিন সর্বসাধারণের জন্য কঙ্কর মারার সময় হচ্ছে, সূর্য উঠার পর থেকে শুরু হবে। আর দুর্বলদের জন্য এ সময় শুরু হবে শেষ রাত থেকে। কঙ্কর মারার শেষ সময় হচ্ছে পরবর্তী দিন ১১ তারিখ ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু যদি উক্ত সময়ের মধ্যে মারা সম্ভব না হয়, তবে আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতে (১১, ১২ ও ১৩ তারিখ) যে সময় কঙ্কর মারা শুরু হবে সে সময়ই বিগত দিনের জামরা আক্বাবার কাযা পাথর নিক্ষেপ করবে। অর্থাৎ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর থেকে পাথর মারা শুরু হবে। আর শেষ হবে পরবর্তী দিন ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। কিন্তু আইয়্যামে তাশরীকের শেষ দিন (১৩ তারিখ) হলে রাত্রে কঙ্কর মারা যাবে না। কেননা সেদিন সূর্য অস্ত হলেই আইয়ামে তাশরীক শেষ হয়ে গেল এবং ১৪ তারিখ শুরু হয়ে গেল। সর্বাবস্থায় দিনের বেলায় কঙ্কর নিক্ষেপ করাই উত্তম। কিন্তু এই সময়ে হাজীদের ভীড়ের প্রচন্ডতার কারণে, হাজীদের একে অপরের প্রতি বেপরওয়া হওয়ার কারণে যদি জানের ক্ষতির আশংকা করে বা কঠিন কষ্টকর হয়ে উঠে, তবে রাত্রে মারলে কোন অসুবিধা হবে না। অবশ্য কোন আশংকা না থাকলেও রাতে মারলে কোন অসুবিধা নেই। তবে এই মাসআলায় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং একান্ত অসুবিধা না থাকলে রাতে কঙ্কর না মারা উচিত।

প্রশ্নঃ (৫২১) বিশেষ করে ঈদের দিনের তওয়াফের পূর্বে সাঈ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ সঠিক কথা হচ্ছে ঈদের দিন বা অন্য দিনে কোন পার্থক্য নেই। সর্বাবস্থায় তওয়াফের পূর্বে সাঈ করা জায়েয আছে। এমনকি ঈদের দিনের পরও যদি হয়। কেননা হাদীছের সাধারণ অর্থ একথাই প্রমাণ করে। জনৈক ব্যক্তি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করলেন, তওয়াফের পূর্বে আমি সাঈ করেছি। তিনি বললেনঃ “কোন অসুবিধা নেই।”

প্রশ্নঃ (৫২২) সাঈ আবশ্যক ছিল কিন্তু তওয়াফ করার পর সরাসরি সাঈ না করে বাইরে বেরিয়ে গেছে। পরে তাকে বিষয়টি জানানো হলো, সে কি এখন শুধু সাঈ করবে? নাকি পুনরায় তওয়াফ করার পর সরাসরি সাঈ করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি তওয়াফ করে এই বিশ্বাসে যে তাকে সাঈ করতে হবে না। কিন্তু পরে তাকে জানানো হল যে, তাকে অবশ্যই সাঈ করতে হবে। তখন সে শুধুমাত্র সাঈ করলেই হয়ে যাবে। পুনরায় তাওয়াফ করার দরকার নেই। কেননা তাওয়াফের পর পরই সাঈ করতে এরকম কোন শর্ত নেই।

এমনকি কোন মানুষ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সাঈ করতে বিলম্ব করে- তবুও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু উত্তম হচ্ছে তওয়াফ শেষ করার পর পরই বিলম্ব না করে সাঈ করে নেয়া।

প্রশ্নঃ (৫২৩) ওমরায় যে ব্যক্তি মাথার এদিক ওদিক থেকে অল্প করে চুল কাটে, তার সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি এ লোকের চুল খাটো করা সম্পন্ন হয়নি। তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে ইহরামের কাপড় পুনরায় পরিধান করে বিশুদ্ধভাবে মাথার সম্পূর্ণ অংশ থেকে চুল খাটো করা তারপর হালাল হওয়া।

এ উপলক্ষে আমি সতর্ক করতে চাই, কোন কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইলে সে সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ওয়াজিব। আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের সীমারেখা জানা আবশ্যক। যাতে করে জেনে-শুনে আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে পারে। ইবাদতটি যেন অজ্ঞতার সাথে না হয়। এজন্য আল্লাহ্‌ তা’আলা স্বীয় নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলেছেনঃ
) قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنْ اتَّبَعَنِي [
“আপনি বলুন! এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহ্‌র দিকে আহবান করি জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।” (সূরা ইউসুফঃ ১০৮) 
কোন মানুষ যদি মক্কা থেকে মদীনা সফর করতে চায়, তবে রাস্তা সম্পর্কে অবশ্যই নির্দেশনা নিতে হবে। মানুষকে জিজ্ঞেস করতে হবে। যাতে করে পথভ্রষ্ঠ হয়ে গন্তব্য হারিয়ে না যায়। বাহিরের পথের অবস্থা যদি এমন হয়, তবে আভ্যন্তরিণ পথ যা আল্লাহ্‌ পর্যন্ত পৌঁছাবে সে সম্পর্কে কি জ্ঞানার্জন করতে হবেনা? সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে না?

মাথার চুল খাটো করার অর্থ হচ্ছে মাথার সমস্ত অংশ থেকে চুলের কিছু কিছু অংশ কেটে ফেলা। চুল খাটো করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে মেশিন ব্যবহার করা। কারণ এতে সমস্ত মাথা থেকেই চুল কাটা হয়। অবশ্য কেঁচি দ্বারা চুল কাটাতেও কোন অসুবিধা নেই। তবে শর্ত হচ্ছে মাথার চতুর্দিক থেকে চুল কাটতে হবে। যেমন করে মাথা মুন্ডন করলে সমস্ত মাথা মুন্ডন করতে হয়। যেমন ওযুর সময় সমস্ত মাথাকে মাসেহ্‌ করতে হয়।

প্রশ্নঃ (৫২৪) কঙ্কর মারার সময় কি?
উত্তরঃ জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মারার সময় হচ্ছে ঈদের দিন। সামর্থবান লোকদের জন্য এ সময় শুরু হবে ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে। আর মানুষের ভীড় সহ্য করতে পারবে না এরকম দুর্বল, নারী, শিশু, প্রভৃতির জন্য সময় হচ্ছে ঈদের দিন শেষ রাত থেকে। আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) ঈদের রাতে চাঁদ অস্ত যাওয়ার অপেক্ষা করতেন। চাঁদ অস্ত গেলেই মুযদালিফা ছেড়ে মিনা রওয়ানা হতেন এবং জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মারতেন। আর এর শেষ সময় হচ্ছে ঈদের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কিন্তু যদি ভীড় প্রচন্ড থাকার কারণে বা জামরা থেকে দূরে অবস্থানের কারণে রাতে কঙ্কর মারে তবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু পরবর্তী দিন ১১ তারিখের ফজর পর্যন্ত যেন বিলম্ব না করে।

আইয়্যামে তাশরীক তথা ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে পাথর নিক্ষেপের সময় শুরু হবে মধ্য দিনে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর থেকে তথা যোহরের সময় থেকে এবং তা চলতে থাকবে রাত পর্যন্ত। আর কষ্ট ও ভীড়ের কারণে বিলম্ব করে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইহা নিক্ষেপ করা যাবে। এ তিন দিন যোহরের সময়ের পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ জায়েয হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পূর্বে নিক্ষেপ করেননি। আর লোকদের বলেছেনঃ “তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জ-ওমরার বিধি-বিধান শিখে নাও।” সকালের দিকে ঠান্ডা এবং সহজ থাকা সত্বেও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলম্ব করে কঠিন গরমে দুপুরের সময় কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন্ত এ থেকেই প্রমাণ হয় যে, এই সময়ের পূর্বে নিক্ষেপ করা জায়েয হবে না।

এ কথার পক্ষে আরো প্রমাণ হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলার সাথে সাথে যোহরের নামায আদায় না করে প্রথমে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। যদি সূর্য ঢলার পূর্বে নিক্ষেপ করা জায়েয হতো, তবে প্রথমে কঙ্কর মেরে প্রথম ওয়াক্তে যোহরের নামায আদায় করতেন। কেননা প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করা উত্তম। মোটকথা, আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতে সূর্য ঢলার পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়।

প্রশ্নঃ (৫২৫) জনৈক হাজী আরাফাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মীনায় রাত কাটায়নি, কঙ্কর নিক্ষেপ করেনি এবং তাওয়াফে এফাযাও করেনি। তাকে এখন কি করতে হবে?
উত্তরঃ আরাফাতের ময়দানে যে লোকটি অসুস্থ হয়েছে, তার অসুখ যদি এমন পর্যায়ের হয় যে, হজ্জের অবশিষ্ট কাজ পূর্ণ করা তার জন্য অসম্ভব, আর ইহরামের পূর্বে সে শর্ত করেছে (‘যদি আমি বাধাগ্রস্ত হই তবে যেখানে বাধাগ্রস্ত সেখানেই হালাল হয়ে যাব’ এরূপ কথা বলেছে।) তবে সে ইহরাম খুলে হালাল হয়ে যাবে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু এটা ফরয হজ্জ হলে পরবর্তী বছর পুনরায় তা আদায় করতে হবে। আর ইহরাম বাঁধার সময় যদি শর্ত না করে থাকে এবং হজ্জের কাজ পূর্ণ করতে সক্ষম না হয়, তবে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সে ইহরাম খুলে হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু তাকে কুরবানী যবেহ করতে হবে। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
] وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [
“তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ-ওমরা পূর্ণ কর। যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজ সাধ্য কুরবানী করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) এখানে বাধাগ্রস্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, শত্রু দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া বা অন্য যে কোন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। আর বাধাগ্রস্ত হওয়া মানে, কোন কারণ বশতঃ হজ্জ-ওমরার কাজ পূর্ণ করতে সক্ষম না হওয়া।

এই ভিত্তিতে সে হালাল হয়ে যাবে এবং কুরবানী যবেহ করবে। এছাড়া তার উপর অন্য কিছু আবশ্যক হবে না। কিন্তু যদি ফরয হজ্জ আদায় না করে থাকে তবে পরবর্তী বছর উহা আদায় করবে।

আর এই অসুস্থ ব্যক্তি যদি হজ্জের কাজ চালিয়ে যায়। আরাফাত থেকে ফিরে এসে মুযদালিফায় রাত কাটায় কিন্তু মিনায় রাত কাটাতে সক্ষম না হয় এবং কঙ্কর নিক্ষেপ করতে না পারে, তবে প্রত্যেকটি ওয়াজিবের জন্য একটি করে কুরবানী করবে। দু’টি কুরবানী করতে হবে। একটি কুরবানী মিনায় রাত না কাটানোর জন্য অন্যটি জামরা সমূহে কঙ্কর নিক্ষেপ না করার জন্য।

কিন্তু সুস্থ হলে তওয়াফে এফাযা আদায় করবে। কেননা বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তওয়াফে এফাযা জিল হজ্জের শেষ পর্যন্ত করা যাবে। কিন্তু বাধা যদি আরো বড় হয় তবে, বাধা দূর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তারপর তওয়াফ করবে।

প্রশ্নঃ (৫২৬) মুযদালিফার সীমা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বাইরে অবস্থান করলে করণীয় কি?
উত্তরঃ বিদ্বানদের মতে তাকে ফিদ্‌ইয়া স্বরূপ একটি দম দিতে হবে অর্থাৎ- একটি কুরবানী যবেহ করতে হবে এবং উহা মক্কার ফক্বীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। কেননা সে হজ্জের একটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করেছে।

এ উপলক্ষে আমি সম্মানিত হাজী ভাইদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, হজ্জে এসে আরাফাত ও মুযদালিফার সীমনা সম্পর্কে আপনারা সতর্ক থাকবেন। দেখা যায়, অনেক হাজী আরাফাতের সীমানার বাইরে অবস্থান করেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। তারপর আরাফাতের সীমানার মধ্যে প্রবেশ না করে সেখান থেকেই ফিরে আসেন। এদের হজ্জ বিশুদ্ধ হবে না। তারা হজ্জ না করেই ফিরে এলেন। এজন্য এ বিষয়ে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরূরী। আল্‌ হামদু লিল্লাহ্‌ এ সীমানা জানার জন্য আরাফাত ময়দানের চতুর্পাশ্বে বিশাল বিশাল বোর্ডের ব্যবস্থা আছে। তার প্রতি খেয়াল করলেই কোন সমস্যা থাকবে না।

প্রশ্নঃ (৫২৭) এফরাদ হজ্জকারী যদি তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ করে নেয়, তবে তওয়াফে এফাযার পর তাকে কি আবার সাঈ করতে হবে?
উত্তরঃ তাওয়াফে এফাযার পর তাকে আর সাঈ করতে হবে না। কেননা তার ওমরা নেই। সুতরাং তওয়াফে কুদূমের সাথে সে যদি সাঈ করে থাকে, তবে এটাই হজ্জের সাঈ হিসেবে গণ্য হবে। পরে আর সাঈ করতে হবে না।

প্রশ্নঃ (৫২৮) ক্বিরাণকারীর জন্য একটি তওয়াফ ও একটি সাঈ যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি ক্বিরাণ হজ্জ করতে চায়, তবে তার তওয়াফে এফাযা বা হজ্জের তওয়াফ ও হজ্জের সাঈ ওমরা ও হজ্জ উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে। তখন তওয়াফে কুদূম তার জন্য সুন্নাত। সে ইচ্ছা করলে হজ্জের সাঈ তওয়াফে কুদূমের পরপরই আদায় করে নিতে পারে। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। ইচ্ছা করলে সাঈ বাকী রেখে তওয়াফে এফাযার পর করতে পারে। কিন্তু পূর্বেই করে নেয়া উত্তম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছিলেন। অতঃপর ঈদের দিন শুধুমাত্র তওয়াফে এফাযা করবে। সাঈ করবে না। ক্বিরাণকারীর হজ্জ ও ওমরার জন্য একটি মাত্র তওয়াফ ও সাঈ যথেষ্ট হওয়ার দলীল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী। তিনি আয়েশা (রাঃ)কে বলেন, 
طَوَافُكِ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ يَكْفِيكِ لِحَجَّتِكِ وَعُمْرَتِكِ 
“আল্লাহ্‌র ঘরের তওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ তোমার হজ্জ ও ওমরার জন্য যথেষ্ট হবে।” 
আয়েশা (রাঃ) ছিলেন ক্বিরাণ হজ্জকারীনী। অতএব নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করে দিলেন যে, ক্বেরাণকারীর তওয়াফ ও সাঈ হজ্জ ও ওমরা উভয়টির জন্য যথেষ্ট।

প্রশ্নঃ (৫২৯) জনৈক ব্যক্তি রাত বরোটা পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করে মক্কা চলে গেছে, ফজরের পূর্বে আর মিনায় ফেরত আসেনি। তার বিধান কি?
উত্তরঃ রাত বারোটা যদি মধ্য রাত্রি হয়, তবে তারপর মিনা থেকে বের হলে কোন অসুবিধা নেই। যদিও উত্তম হচ্ছে রাত ও দিনের পূর্ণ অংশ মিনাতেই অবস্থান করা। আর রাত বারোটা যদি মধ্য রাত্রি না হয় তবে বের হওয়া জায়েয হবে না। কেননা মিনায় অবস্থান করার শর্ত হচ্ছে রাতের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হওয়া। যেমনটি ফিক্বাহবিদগণ (রহঃ) উল্লেখ করেছেন।

প্রশ্নঃ (৫৩০) ১২ তারিখে সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করার পর কাজ থাকার কারণে কেউ যদি সূর্যাস্তের পর আবার মিনায় ফিরে আসে। এখন কি মিনায় রাত থাকা তার উপর আবশ্যক হয়ে যাবে?
উত্তরঃ না, মিনায় রাত থাকা তার উপর আবশ্যক হবে না। সে তাড়াহুড়াকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা সে হজ্জের যাবতীয় কার্যাদী সম্পন্ন করে ফেলেছে। কাজের জন্য মিনায় ফিরে আসা তাড়াহুড়ার পরিপন্থী নয়। কেননা তার মিনায় ফিরে আসার নিয়ত নির্দিষ্ট কাজের জন্য হজ্জের জন্য নয়।

প্রশ্নঃ (৫৩১) সঊদী আরবের বাইরে অবস্থান করে এমন জনৈক হাজী হজ্জের কাজ সম্পাদন করেছে। জিলহজ্জের ১৩ তারিখে আছর তথা বিকাল চারটার সময় তার সফরের সময় নির্দিষ্ট। কিন্তু ১২ তারিখ কঙ্কর মারার পর সে মিনা থেকে বের হয়নি। ১৩ তারিখের রাত সেখানেই অবস্থান করেছে। এখন ১৩ তারিখ সকালে কঙ্কর মেরে মিনা থেকে বের হওয়া তার জন্য জায়েয হবে কি? উল্লেখ্য যে, যোহরের পর কঙ্কর মেরে বের হলে নির্ঘাত তার সফর বাতিল হয়ে যাবে, ফলে সে বিরাট অসুবিধায় পড়বে। এর উত্তর যদি না জায়েয হয়, তবে যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারার ব্যাপারে কি কোন মত পাওয়া যায় না?
উত্তরঃ কোন অবস্থাতেই যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয নয়। জরূরী অবস্থা হিসেবে কঙ্কর নিক্ষেপ করা রহিত হবে না। তবে তার সমাধান হচ্ছে এ অবস্থায় কঙ্কর না মেরেই সে চলে যাবে এবং তার ফিদিয়া প্রদান করবে। আর তা হচ্ছে মক্কা বা মিনায় একটি কুরবানী করবে অথবা কাউকে এর দায়িত্ব প্রদান করবে। এবং উক্ত কুরবানী সেখানকার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দিবে। এরপর বিদায়ী তওয়াফ করে মক্কা ত্যাগ করবে।

হ্যাঁ, যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারার বৈধতার ব্যাপারে মত পাওয়া যায়, কিন্তু তা বিশুদ্ধ নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, ঈদের পর আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোতে কোন অবস্থাতেই যোহরের সময়ের পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার নিকট থেকে ইবাদতের (হজ্জ-ওমরার) নিয়ম শিখে নাও।” আর তিনি এই দিনগুলোতে যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারেন নি।

কেউ যদি বলে যে, যোহরের পর নবীজির কঙ্কর নিক্ষেপ তার সাধারণ একটি কর্ম। আর সাধারণ কর্ম দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় না।

জবাবে আমরা বলব, একথা সত্য যে এটি তাঁর সাধারণ কর্ম। তিনি যোহরের পর কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। এরকম বাচনিক নির্দেশ প্রদান করেন নি যে, ‘কঙ্কর নিক্ষেপ যোহরের পরেই হতে হবে’। তাছাড়া এ সময়ের পূর্বে নিক্ষেপের ব্যাপারে কোন নিষেধও করেন নি। আর তাঁর কর্ম ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে না। নির্দেশ সূচক শব্দ ছাড়া কোন কাজ বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব হয় না বা নিষেধ সূচক শব্দ ছাড়া পরিত্যাগ করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয় না। কিন্তু আমি বলব, নবীজির উক্ত কর্ম যে ওয়াজিব তার পক্ষে কারণ আছে। আর তা হচ্ছে, কঙ্কর মারার ব্যাপারে যোহরের সময় পর্যন্ত নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অপেক্ষা করাটাই প্রমাণ করে যে এটা ওয়াজিব। কেননা যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারা যদি জায়েয হত, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটাই করতেন। কারণ উম্মতের জন্য এটাই সহজ। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে যখন দু’টি বিষয়ের মাঝে স্বাধীনতা দেয়া হত, তখন তিনি উভয়টির মধ্যে থেকে সহজটি গ্রহণ করতেন্ত যদি তাতে কোন পাপ না থাকত। সুতরাং এখানে যখন তিনি সহজ অবস্থাটি গ্রহণ করেন নি অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন নি, তখন বুঝা যায় এতে পাপ আছে। অতএব যোহরের সময় হওয়ার পরই কঙ্কর মারা ওয়াজিব।

এ কাজটি ওয়াজিব হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার সাথে সাথে যোহরের নামায আদায় করার পূর্বেই কঙ্কর মেরেছেন। যেন তিনি অধির আগ্রহে সূর্য ঢলার অপেক্ষা করছিলেন। যাতে করে দ্রুত কঙ্কর মারতে পারেন। আর একারণেই যোহর নামায দেরী করে আদায় করেছেন। অথচ প্রথম সময়ে অর্থাৎ সময় হওয়ার সাথে সাথেই নামায আদায় করা উত্তম। এথেকেই বুঝা যায় যোহরের সময় হওয়ার পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয হবে না।

প্রশ্নঃ (৫৩২) জনৈক ব্যক্তি ১২ তারিখে কঙ্কর না মেরেই মিনা ছেড়েছে এ ধারণায় যে, এটাই অনুমদিত তাড়াহুড়া। এবং বিদায়ী তওয়াফও করেনি। তার হজ্জের কি হবে?
উত্তরঃ তার হজ্জ বিশুদ্ধ। কেননা সে হজ্জের কোন রুকন পরিত্যাগ করেনি। কিন্তু সে তিনটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করেছে- যদি ১২ তারিখের রাত মিনায় না কাটিয়ে থাকে।

প্রথম ওয়াজিবঃ ১২ তারিখের রাত মিনায় কাটানো।
দ্বিতীয় ওয়াজিবঃ ১২ তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
তৃতীয় ওয়াজিবঃ বিদায়ী তওয়াফ।

তার উপর আবশ্যক হচ্ছে প্রতিটি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিবের বিনিময়ে একটি করে দম দেয়া। অর্থাৎ মোট তিনটি কুরবানী করে তা মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া। কেননা বিদ্বানদের মতে কেউ যদি হজ্জের কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে, তবে তার বিনিময়ে কুরবানী করে তা মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।

এ উপলক্ষে আমি হাজী সাহেবানদের সতর্ক করতে চাই, প্রশ্নকারী যে রকম ভুল করেছে অধিকাংশ হাজী এরকমই বুঝে থাকে এবং অনুরূপ ভুল করে থাকে। আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যে ব্যক্তি দু’দিন থেকে তাড়াহুড়া করে চলে যেতে চায়, তার কোন গুনাহ্‌ নেই।” তারা মনে করে এখানে দু’দিন বলতে ঈদের দিন ও ১১তম দিনকে বুঝানো হয়েছে। তাই তারা ১১ তারিখে কঙ্কর মেরেই মিনা ত্যাগ করে। কিন্তু বিষয়টি এরূপ নয়। এটা একটা মারাত্মক ভুল। কেননা আল্লাহ বলেন,
] وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ [
“তোমরা নির্দিষ্ট কতিপয় দিনে আল্লাহর যিকির কর। অতঃপর যে ব্যক্তি দু’দিন থাকার পর তাড়াহুড়া করে চলে যেতে চায়, তার কোন গুনাহ্‌ নেই।” (সূরা বাক্বারাঃ ২০৩) 
এ আয়াতে নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন বলতে আইয়্যামে তাশরীকের দিন সমূহ (তথা জিলহজ্জের ১১, ১২ ও ১৩)কে বুঝানো হয়েছে। আর আইয়ামে তাশরীকের প্রথম দিন হচ্ছে ১১ তারিখ। অতএব উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি আইয়ামে তাশরীকের মধ্যে থেকে প্রথম দু’দিনে তাড়াহুড়া করে চলে আসবে তার কোন গুনাহ্‌ নেই। আর উক্ত দু’দিনের দ্বিতীয় দিন হচ্ছে ১২তম দিন।

সুতরাং প্রত্যেকের উচিত এ মাসআলাটি ভালভাবে অনুধাবন করা এবং ভুল সংশোধন করে নেয়া।

প্রশ্নঃ (৫৩৩) মিনায় স্থান না পাওয়ার কারণে কোন লোক যদি সেখানে শুধুমাত্র রাতের বেলায় আগমণ করে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত অবস্থান করে। তারপর মক্কা চলে যায় এবং রাত ও দিনের অবশিষ্ট অংশ তথায় অবস্থান করে তবে কি হবে?
উত্তরঃ তার এই কাজ যথেষ্ট হবে। কিন্তু এর বিপরীত করাই উত্তম। উচিত হচ্ছে, হাজী সাহেব রাত ও দিনের পূরা সময় মিনাতেই অতিবাহিত করবে। ভালভাবে অনুসন্ধান করার পরও যদি কোন মতেই মিনার অভ্যন্তরে স্থান করতে না পারে, তবে সর্বশেষ (খীমা বা) তাঁবুর সংলগ্ন স্থানে তাঁবু করে সেখানে অবস্থান করবে যদিও তা মিনার বাইরে পড়ে। বর্তমান যুগের কোন কোন বিদ্বান মত প্রকাশ করেছেন যে, কোন মানুষ যদি মিনায় অবস্থান করার স্থান না পায়, তবে মিনায় রাত কাটানো রহিত হয়ে যাবে। তখন তার জন্য জায়েয হয়ে যাবে মক্কা বা অন্য কোন স্থানে রাত কাটানো। তাদের কিয়াস হচ্ছে, কোন মানুষের ওযুর কোন অঙ্গ যদি কাটা থাকে তখন সেটা ধৌত করা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু তাদের এই মত যুক্তি সংগত নয়। কেননা ওযুর অঙ্গের বিষয়টি ঐ ব্যক্তির পবিত্রতার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু মিনায় রাত কাটানোর বিষয়টির উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমস্ত লোকের একস্থানে সমবেত থাকা। সকলে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে প্রকাশ ঘটানো। সুতরাং ওয়াজিব হচ্ছে, মিনার শেষ তাঁবুর পাশে তাঁবু বানিয়ে থাকা, যাতে করে সে হাজীদের সাথেই রাত কাটাতে পারে। এর উদাহরণ হচ্ছে, নামাযের জামাতে যদি মসজিদ পূর্ণ হয়ে যায়, আর লোকেরা মসজিদের আশে-পাশে বাইরে নামাযে দাঁড়ায়, তবে আবশ্যক হচ্ছে কাতার মিলিত হওয়া। যাতে করে তারা একই জামাতভুক্ত একথা প্রমাণ হয়। রাত কাটানোর বিষয়টি এর সাথে সামঞ্জস্যশীল, শরীরের কর্তিত অঙ্গের সাথে এর তুলনা করা উচিত নয়।

প্রশ্নঃ (৫৩৪) জনৈক ব্যক্তি সকালে বিদায়ী তওয়াফ করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং আছরের পর সফর করার ইচ্ছা করে। তাকে কি কিছু করতে হবে?
উত্তরঃ হজ্জ ও ওমরা উভয় ক্ষেত্রে তাকে পুনরায় বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে। কেননা নবী (সাঃ) বলেনঃ
لا يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ
“সর্বশেষ কাজ বায়তুল্লাহ্‌র তওয়াফ না করে কেউ যেন বের না হয়।” 
একথাটি নবীজি বিদায় হজ্জে বলেছেন। সুতরাং বিদায়ী তওয়াফের বিধান সেই সময় থেকে শুরু হয়েছে। একথা বলা ঠিক হবে না যে, নবী তো বিদায় হজ্জের পূর্বে ওমরা করেছেন কিন্তু বিদায়ী তওয়াফ তো করেননি। কেননা বিদায়ী তওয়াফের আবশ্যকতার নির্দেশ তো বিদায় হজ্জে পাওয়া গেছে। আর তিনি এরশাদ করেছেন:
وَاصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِي حَجَّتِكَ
“হজ্জের মধ্যে যেভাবে কাজ করে থাক ওমারাতেও সেভাবে করো।” 
এ নির্দেশটি ব্যাপক অর্থবোধক। কিন্তু তার মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে আরাফা, মুযদালিফা ও মিনাতে অবস্থান ও কঙ্কর নিক্ষেপ। কেননা সর্বসম্মতিক্রমে একাজগুলো হজ্জের সাথে সম্পর্কিত। এগুলো ছাড়া বাকী কাজ উক্ত হাদীছের আওতাধীন থাকবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমরাকে ছোট হজ্জ রূপে আখ্যা দিয়েছেন। যেমনটি আমর বিন হাযম কর্তৃক প্রসিদ্ধ দীর্ঘ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটি মুরসাল। কিন্তু উলামাগণ সাধারণভাবে হাদীছটি গ্রহণ করেছেন।

তাছাড়া আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরা পূর্ণ কর।” বিদায়ী তওয়াফ যদি হজ্জের পূর্ণতার অংশ হয়, তবে উহা ওমরারও পূর্ণতার অংশ হবে।

ওমরাকারী মসজিদে হারামের তাহিয়্যাত হিসেবে তওয়াফের মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশ করেছে। সুতরাং কোন তাহিয়্যাত ছাড়া চলে যাওয়াও উচিত হবে না। তাই সে বিদায়ী তওয়াফ করবে।

অতএব এই ভিত্তিতে হজ্জের ন্যায় ওমরাতেও বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজিব। তিরমিযীতে একটি হাদীছ পাওয়া যায়ঃ বলা হয়েছে, “কোন লোক যদি হজ্জ বা ওমরা করে, সে আল্লাহর ঘরের বিদায়ী তওয়াফ না করে যেন বের না হয়।” কিন্তু এই হাদীছটি যঈফ। কেননা এর সনদে হাজ্জাজ বিন আরত্বাত নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে দুর্বল। এ হাদীছটি দুর্বল না হলে এই মাসআলার সুস্পষ্ট দলীল হিসেবে বিবেচিত হত এবং সকল মতভেদ বিদূরীত হত। কিন্তু দুর্বল হওয়ার কারণে তা দ্বারা দলীল গ্রহণ করার কোন ভিত্তি নেই। তবে আমরা পূর্বে যে সমস্ত মূলনীতি, দলীল ও যুক্তি উপস্থাপন করেছি তার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে, ওমরায় বিদায়ী তওয়াফ ওয়াজিব।

তাছাড়া এই তওয়াফ সতর্কতা ও যিম্মা মুক্তি স্বরূপও হয়ে যায়। কেননা ওমরাতে আপনি বিদায়ী তওয়াফ করলে তো কেউ আপনাকে বলবে না যে আপনি ভুল করছেন। কিন্তু তা না করলে তো যারা তা ওয়াজিব মনে করে তারা বলবে, আপনি ভুল করলেন। এই কারণে তওয়াফ করাটাই সঠিক হবে। আর তওয়াফ না করলে আশংকা রয়ে যাবে এবং বিদ্বানদের কারো মতে তা ভুল হবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)

প্রশ্নঃ (৫৩৫) ওমরাকারীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ওমরাকারী মক্কা আগমণ করার সময় যদি নিয়ত করে যে, তওয়াফ, সাঈ ও মাথা মুন্ডন তথা ওমরার কার্যাদী সম্পন্ন করার সাথে সাথে ফেরত চলে যাবে, তবে তাকে বিদায়ী তওয়াফ করতে হবেনা। কেননা তওয়াফে কুদূমই তার জন্য ওমরার তওয়াফ ও বিদায়ী তওয়াফ হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু ওমরা সম্পন্ন করার পর যদি মক্কায় অবস্থান করে তবে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে, বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজিব। একথার দীলল নিম্নরূপঃ

প্রথমতঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপক নির্দেশঃ
]لا يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ[
“সর্বশেষ কাজ বায়তুল্লাহ্‌র তওয়াফ না করে কেউ যেন বের না হয়।” 
এখানে أَحَدٌ বা ‘কেউ’ শব্দটি অস্পষ্ট। যে কেউ বরে হলেই তার জন্য উক্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। অর্থাৎ- তওয়াফ না করে বের হবে না। সে হজ্জকারী হোক বা ওমরাকারী।

দ্বিতীয়তঃ ওমরা হজ্জের মতই। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমরাকে হজ্জ রূপে আখ্যা দিয়েছেন। আমর বিন হাযম কর্তৃক প্রসিদ্ধ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “ওমরা হচ্ছে ছোট হজ্জ।” হাদীছটি মুরসাল। কিন্তু উলামাগণ সাধারণভাবে হাদীছটি গ্রহণ করেছেন।

তৃতীয়তঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত ওমরা হজ্জের মধ্যে শামিল হয়ে গেছে। অর্থাৎ- হজ্জ করলে ওমরাও আদায় হয়ে গেল।

চতুর্থতঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ালা বিন উমাইয়াকে বলেন,
] وَاصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِي حَجَّتِكَ[
“হজ্জের মধ্যে যেভাবে কাজ করে থাক ওমারাতেও সেভাবে করো।” 
যদি তুমি হজ্জে বিদায়ী তওয়াফ করে থাক, তবে ওমরাতেও তা কর। তবে বিদ্বানদের ঐকমত্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উক্ত নির্দেশের বাইরে থাকবেঃ আরাফা, মুযদালিফা ও মিনাতে অবস্থান ও কঙ্কর নিক্ষেপ। এগুলো ওমরাতে শরীয়ত সম্মত নয়। তাছাড়া সতর্কতার জন্য এবং যিম্মা মুক্ত হওয়ার জন্য বিদায়ী তওয়াফ করে নেয়াই উচিত।

প্রশ্নঃ (৫৩৬) জনৈক ব্যক্তি মীক্বাত থেকে হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে। কিন্তু মক্কা পৌঁছে সে প্রশাসন (ডিউটি পুলিশ) কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়। কেননা সে হজ্জের অনুমতি পত্র নেয়নি। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ এ অবস্থায় মক্কা প্রবেশ করতে না পারলে সে ‘মুহছার’ বা বাধাগ্রস্ত বলে বিবেচিত হবে। তখন বাধাপ্রাপ্ত স্থানে কুরবানী যবেহ করে সে ইহরাম খুলে ফেলবে। যদি ইহা তার প্রথম ফরয হজ্জ হয়ে থাকে তবে পরবর্তী বছর তা আদায় করবে। আর ফরয না হয়ে থাকলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী পরবর্তী বছর তা আদায় করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার বছরে বাধাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী বছর তা কাযা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেননি। অতএব আল্লাহর কিতাবে ও রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাতে বাধাপ্রাপ্ত হজ্জ বা ওমরা কাযা আদায় করার বাধ্যবাধকতা নেই। আল্লাহ্‌ বলেন,
] فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ  [
“যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজসাধ্য কুরবানী করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) 
এখানে কুরবানী করা ছাড়া অন্য কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আর পরবর্তী বছর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উমরা আদায়কে কাযা উমরা এজন্যই বলা হয়েছে যে, তিনি কুরায়শদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন যে পরবর্তী বছর ওমরা আদায় করবেন। এই কারণে নয় যে, ছুটে যাওয়া কাজের পূর্ণতার জন্য কাযা আদায় করেছিলেন। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞান রাখেন)

প্রশ্নঃ (৫৩৭) হজ্জের ইচ্ছা করার পর যদি তাকে নিষেধ করে দেয়া হয়, তবে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ যদি সে ইহরাম না করে থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। কোন কিছু তার উপর আবশ্যক হবে না। কেননা কোন লোক ইহরামে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত ইচ্ছা করলে সম্মুখে অগ্রসর হতে পারে, ইচ্ছা করলে নিজ ঠিকানায় ফেরত আসতে পারে। কিন্তু হজ্জ ফরয হলে, যতদ্রুত সম্ভব আদায় করে নেয়া ভাল।

আর ইহরামে প্রবেশ করার পর বাধাগ্রস্ত হলে যদি ইহরাম বাধার সময় শর্ত করে থাকে এই বলে, “আল্লাহুম্মা ইন্‌ হাবাসানী হাবেস্‌, ফা মাহেল্লী হায়ছু হাবাস্‌তানী”, তবে বাধাপ্রাপ্ত স্থানে ইহরাম খুলে ফেলবে। কোন কিছু তার উপর আবশ্যক হবে না। কিন্তু যদি শর্ত করার জন্য এরূপ দু’আ পাঠ না করে থাকে, তবে উক্ত বাধা অচিরেই বিদূরিত হওয়ার আশা থাকলে অপেক্ষা করবে এবং হজ্জ পূর্ণ করবে। আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে যদি বাধা মুক্ত হয়, তবে আরাফাতে অবস্থান করে হজ্জ পূর্ণ করবে। কিন্তু আরাফাতে অবস্থানের পর বাধা মুক্ত হলে, হজ্জ ছুটে গেল। তখন ওমরা আদায় করে ইহরাম খুলে ফেলবে। ফরয হজ্জ হয়ে থাকলে পরবর্তী বছর তা কাযা আদায় করবে। কিন্তু অচিরেই বাধা মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে এবং শর্ত না করে থাকলে ইহরাম খুলে ফেলবে এবং কুরবানী করে দিবে। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
] وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [
“তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ-ওমরা পূর্ণ করবে। যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজসাধ্য কুরবানী করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬)

প্রশ্নঃ (৫৩৮) হজ্জ করতে এসে পাপের কাজে লিপ্ত হলে কি হজ্জের ছওয়াব কমে যাবে?
উত্তরঃ সাধারণভাবে সবধরণের পাপকাজ হজ্জের ছওয়াব হ্রাস করে দেয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ[
“যে ব্যক্তি ঐ মাসগুলোর মধ্যে হজ্জের সংকল্প করবে, সে স্ত্রী সহবাস, গর্হিত কাজ ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতে পারবে না।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৭)

বরং বিদ্বানদের মধ্যে কেউ বলেছেন, হজ্জ অবস্থায় পাপ কাজ করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্বানদের নিকট প্রসিদ্ধ মূলনীতি হচ্ছে: “হারাম কাজটি যদি ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়, তবে তার কারণে ইবাদত বাতিল হবে না।” সাধারণ পাপ সমূহ হজ্জের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কেননা তা হজ্জের সময় যেমন হারাম অন্য সময়ও হারাম। এটাই বিশুদ্ধ মত। এ সমস্ত পাপকাজ হজ্জকে বাতিল করে দিবে না। কিন্তু তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।

প্রশ্নঃ (৫৩৯) মিথ্যা পাসপোর্ট বানিয়ে হজ্জ করলে হজ্জ হবে কি?
উত্তরঃ তার হজ্জ হয়ে যাবে। হজ্জ বিশুদ্ধ হবে। কেননা পাসপোর্ট নকল করা হজ্জের কর্ম সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটা হজ্জের বাইরের কাজ। কিন্তু একাজের কারণে সে গুনাহগার হবে। তাকে তওবা করা উচিত। কেননা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা প্রশাসনকে ধোঁকা দেয়া একটি মারাত্মক অপরাধ ও বড় গুনাহর কাজ।

জেনে রাখা উচিত, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার ব্যবস্থা করে দিবেন, তাকে ধারণাতীত রিযিক দান করবেন, তার সকল কাজ সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, সত্য কথা বলবে এবং সৎ পথ অবলম্বন করবে, আল্লাহ্‌ তার কর্ম সংশোধন করে দিবেন এবং তার গুনাহ্‌ ক্ষমা করে দিবেন।


সমাপ্ত

Post a Comment

0 Comments