ছালাতের ছহীহ ফযীলত সমূহ :
ছালাতের ফযীলত সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহর কয়েকটি বাণী নিম্নে পেশ করা হল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ
الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ ‘আর আপনি ছালাত আদায়
করুন। নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর
স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ’ (আনকাবূত ৪৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَأَقِمِ
الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ
الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ‘আপনি দিনের দুই প্রান্তে এবং
রাত্রির কিছু অংশে ছালাত আদায় করুন। নিংসন্দেহে সৎকর্ম সমূহ মন্দ
কর্মসমূহকে দূর করে দেয়’ (হূদ ১১৪)।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يَقُوْلُ
الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى
رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলতেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত,
এক জুম‘আ হতে পরবর্তী জুম‘আ, এক রামাযান হতে পরবর্তী রামাযান এর মধ্যকার
যাবতীয় পাপের কাফফারা স্বরূপ। যদি সে কাবীরা গোনাহ সমূহ থেকে বিরত থাকে’
।[1]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَرَأَيْتُمْ لَوْ
أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ
مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ قَالُوْا لاَ يَبْقَى مِنْ
دَرَنِهِ شَىْءٌ قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو
اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো বাড়ীর সামনের
প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকবে
কি? তারা বললেন, না বাকী থাকবে না। তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা
ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন’।[2]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ
يَعْجِبُ رَبُّكُمْ مِنْ رَاعِي غَنَمٍ فِي رَأْسِ شَظِيَّةٍ بِجَبَلٍ
يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّيْ فَيَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ
انْظُرُوْا إِلَى عَبْدِيْ هَذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيْمُ الصَّلَاةَ يَخَافُ
مِنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ.
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের
প্রভু অত্যন্ত খুশি হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি যে পর্বতশিখরে দাঁড়িয়ে
ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে। তখন মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেন,
তোমরা লক্ষ্য করো- সে আযান দেয় এবং ছালাত কায়েম করে এবং আমাকে ভয় করে। আমি
আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করালাম।[3]
عَنْ عَمْرِو بْنِ عَبَسَةَ...قَالَ فَقُلْتُ يَا نَبِىَّ اللهِ
فَالْوُضُوْءُ حَدِّثْنِىْ عَنْهُ قَالَ مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ
وَضُوْءَهُ فَيَتَمَضْمَضُ وَيَسْتَنْشِقُ فَيَنْتَثِرُ إِلاَّ خَرَّتْ
خَطَايَا وَجْهِهِ وَفِيهِ وَخَيَاشِيْمِهِ ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ
كَمَا أَمَرَهُ اللهُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أَطْرَافِ
لِحْيَتِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ
إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ
يَمْسَحُ رَأْسَهُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رَأْسِهِ مِنْ أَطْرَافِ
شَعْرِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رِجْلَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ فَإِنْ
هُوَ قَامَ فَصَلَّى فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَمَجَّدَهُ
بِالَّذِىْ هُوَ لَهُ أَهْلٌ وَفَرَّغَ قَلْبَهُ لِلَّهِ إِلاَّ انْصَرَفَ
مِنْ خَطِيْئَتِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ.
আমর ইবনু আবাসা (রা) হতে বর্ণিত, ... আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (ছাঃ)! ওযূ
সম্পর্কে বলুন। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন পানি সংগ্রহ করে কুলি করে এবং
নাকে পানি দেয় অতঃপর নাক ঝাড়ে, নিশ্চয়ই তখন তার মুখমন্ডল, মুখের ভিতরের ও
নাকের ভিতরের গোনাহ সমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন চেহারা ধৌত করে যেরূপ
আল্লাহ নির্দেশ দান করেছেন, তখন তার মুখমন্ডলের পানির সাথে পাপগুলো দাড়ির
কিনারা দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর যখন সে দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করে তখন তার
দুই হাতের পাপ সমূহ আঙ্গুলের ধার দিয়ে পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে
মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথার পাপসমূহ চুলের পাশ দিয়ে ঝরে পড়ে। অবশেষে যখন
সে দুই পা ধৌত করে দুই গিরা পর্যন্ত তখন তার গোনাহ সমূহ তার আঙ্গুল সমূহের
কিনারা দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর সে যখন ছালাতের জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহর
প্রশংসা ও গুণগান করে এবং তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করে তিনি যেমন মর্যাদার
অধিকারী। সেই সাথে নিজের অন্তরকে আল্লাহর জন্য নিবিষ্ট করে, তখন সে তার পাপ
হতে অনুরূপ মুক্ত হয়ে যায় যেন তার মা তাকে সেদিন জন্ম দিয়েছে।[4]
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ اللهُ تَعَالَى
إِنِّيْ فَرَضْتُ عَلَى أُمَّتِكَ خَمْسَ صَلَوَاتٍ وَعَهِدْتُ عِنْدِىْ
عَهْدًا أَنَّهُ مَنْ جَاءَ يُحَافِظُ عَلَيْهِنَّ لِوَقْتِهِنَّ
أَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهِنَّ فَلَا عَهْدَ
لَهُ عِنْدِىْ.
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
নিশ্চয় আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছি এবং আমার কাছে
একটি অঙ্গীকার রেখেছি যে, যে ব্যক্তি ওয়াক্তমত সেই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায়
করে ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে
ব্যক্তি সেগুলোর সংরক্ষণ করবে না তার জন্য আমার নিকট কোন অঙ্গীকার নেই’।[5]
عَنْ أَبِى سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الصَّلاَةُ
فِى جَمَاعَةٍ تَعْدِلُ خَمْسًا وَعِشْرِيْنَ صَلاَةً فَإِذَا صَلاَّهَا
فِىْ فَلاَةٍ فَأَتَمَّ رُكُوْعَهَا وَسُجُوْدَهَا بَلَغَتْ خَمْسِيْنَ
صَلاَةً.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায়
করা পঁচিশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার ন্যায়। যখন উক্ত ছালাত কোন নির্জন
ভূখন্ডে আদায় করে অতঃপর রুকূ ও সিজদা পূর্ণভাবে করে, তখন সেই ছালাত পঞ্চাশ
ছালাতের সমপরিমাণ হয়।[6]
ছালাত সংক্রান্ত আরো অনেক ফযীলত ছহীহ হাদীছ সমূহে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর
প্রতি দৃষ্টি রেখেই আমাদেরকে আমল করতে হবে। যঈফ ও জাল হাদীছ এবং কাল্পনিক
মিথ্যা কাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ আমাদেরকে বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায়
করার তাওফীক দান করুন- আমীন!!
[1]. ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৪, ১/১২২ পৃঃ, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫;
মিশকাত হা/৫৬৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫১৮, ২/১৫৮ পৃঃ, ‘ছালাতের ফযীলত’
অনুচ্ছেদ। [2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৫২৮, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা
হা/৫০৩, ২/৭ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়; মুসলিম হা/১৫৫৪, ১/২৩৫
পৃঃ, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫২; মিশকাত হা/৫৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৫১৯, ২/১৫৮ পৃঃ। [3]. আবুদাঊদ হা/১২০৩, ১/১৭০ পৃঃ; নাসাঈ হা/৬৬৬; মিশকাত
হা/৬৬৫, পৃঃ ৬৫, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬১৪,
২/২০২ পৃঃ। [4]. ছহীহ মুসলিম হা/১৯৬৭, ১/২৭৬, (ইফাবা হা/১৮০০), ‘মুসাফিরের
ছালাত’ অধ্যায়, ‘আমর ইবনু আবাসার ইসলাম গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ-৫২; মিশকাত
হা/১০৪২, পৃঃ ৯৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৭৫, ৩/৩৮ পৃঃ। [5]. ছহীহ আবুদাঊদ
হা/৪৩০, সনদ হাসান, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত হেফাযত করা’ অনুচ্ছেদ। [6].
আবুদাঊদ হা/৫৬০, ১/৮৩ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
0 Comments