গীবত করার ভয়াবহতা, পরনিন্দা করার ভয়াবহতা, গীবত করার পরিনতি জাহান্নাম।

গীবত পরনিন্দা করার ভয়াবহতাঃ
মেয়েদেরকে বলছি,  শুনুন আপনারা সাবধান হউন,  আপনারা সকলে সঠিক পথে চললে,  এই জেনারেশন যেমন ঠিক হবে ৷ পরবর্তী জেনারেশন ও সঠিক পথে চলবে, ইনশাল্লাহ ৷ অন্যের দোষ খুজিয়েন না ৷
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًاۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمۡ أَن يَأۡكُلَ لَحۡمَ أَخِيهِ مَيۡتٗا فَكَرِهۡتُمُوهُۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٞ رَّحِيمٞ ١٢ ﴾ (الحجرات: ١٢) 
অর্থাৎ তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত ১২ আয়াত)
তিনি বলেছেন,
﴿ وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦ ﴾ (الاسراء: ٣٦) 
অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাইল ৩৬ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,   ﴿ مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨ ﴾ (ق: ١٨) 
অর্থাৎ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ ১৮ আয়াত)
জেনে রাখুন যে, যে কথায় উপকার আছে বলে স্পষ্ট হয়, সে কথা ছাড়া অন্য সব (অসঙ্গত) কথা হতে নিজ জিহ্বাকে সংযত রাখা প্রত্যেক ভারপ্রাপ্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত। যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা দুটোই সমান, সেখানে চুপ থাকাটাই সুন্নত। কেননা, বৈধ কথাবার্তাও অনেক সময় হারাম অথবা মাকরূহ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। অধিকাংশ এরূপই ঘটে থাকে। আর (বিপদ ও পাপ থেকে) নিরাপত্তার সমতুল্য কোন বস্তু নেই।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।” বলা হল, ‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।” (মুসলিম) [1]
[1] মুসলিম ২৫৮৯, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাউদ ৪৮৭৪, আহমাদ ৭১০৬, ৮৭৫৯, ২৭৪৭৩, ৯৫৮৬, দারেমী ২৭১৪ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম) [1]
এ হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, উপকারী কথা ছাড়া কোন কথা বলা উচিত নয়। অর্থাৎ সেই কথা যার উপকারিতা স্পষ্ট। পক্ষান্তরে যে কথার উপকারিতা সম্বন্ধে সন্দেহ হয়, সে কথা বলা উচিত নয়।
[1] সহীহুল বুখারী ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮, আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫, দারেমী ২২২২ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, “যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।” (মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ১১, মুসলিম ৪২, তিরমিযী ২৫০৪, ২৬২৮, নাসায়ী ৪৯৯৯ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তা-ঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” (বুখারী) [1]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৪৭৪, ৬৮০৭, তিরমিযী ২৪০৮, আহমাদ ২২৩১৬ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘ’টে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী, মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৪৭৭, ৬৪৭৮, মুসলিম ২৯৮৮, তিরমিযী ২৩১৪, আহমাদ ৭১৭৪, ৭৮৯৮, ৮২০৬, ৮৪৪৪, ৮৭০৩, ৮৯৬৭, ১০৫১৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯৪ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বান্দা আল্লাহ তা‘আলার সন্তোষজনক এমন কথা অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেলে, যার ফলে আল্লাহ তার মর্যাদা উন্নীত করে দেন। আবার কখনো বান্দা অন্যমনস্ক হয়ে আল্লাহর অসন্তোষজনক এমন কথা বলে ফেলে, যার ফলে সে জাহান্নামে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী) [1]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৪৭৭, ৬৪৭৮, মুসলিম ২৯৮৮, তিরমিযী ২৩১৪, আহমাদ ৭১৭৪, ৭৮৯৮, ৮২০৬, ৮৪৪৪, ৮৭০৩, ৮৯৬৭, ১০৫১৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯৪ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।” (আবূ দাউদ)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৫৮১, ৭৫১৭, আবূ দাউদ ৪৭৪৮, ৪৮৭৮ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা  বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্তি হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ) [1]
مَزَجَته এর ভাবার্থ হল, তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ও নিকৃষ্টতার কারণে সমুদ্রের পানিতে মিশে তার স্বাদ অথবা গন্ধ পরিবর্তন করে দেয়। এই উপমাটি গীবত নিষিদ্ধ হওয়া ও তা থেকে সতর্কীকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিণত বাক্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ (النجم : ٣،  ٤) 
অর্থাৎ (আমার নবী) মনগড়া কথা বলে না, (সে যা কিছু বলে) তা প্রত্যাদেশ-কৃত ওহী ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সূরা নাজ্ম ৩-৪ আয়াত)
[1] আবূ দাউদ ৪৮৭৫, তিরমিযী ২৫০২, আহমাদ ২৫০৩২ হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan
মহান আল্লাহ বলেছেন, ﴿ وَإِذَا سَمِعُواْ ٱللَّغۡوَ أَعۡرَضُواْ عَنۡهُ ٥٥ ﴾ [القصص: ٥٥]  
 “ওরা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন ওরা তা পরিহার করে চলে।” (সূরা কাসাস ৫৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন, ﴿ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ ﴾ [المؤمنون : ٣]   
অর্থাৎ যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে। (সূরা মু’মিনূন ৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ﴿إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦ ﴾ [الاسراء: ٣٦]
  অর্থাৎ নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল ৩৬ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ وَإِذَا رَأَيۡتَ ٱلَّذِينَ يَخُوضُونَ فِيٓ ءَايَٰتِنَا فَأَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ حَتَّىٰ يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيۡرِهِۦۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ ٱلشَّيۡطَٰنُ فَلَا تَقۡعُدۡ بَعۡدَ ٱلذِّكۡرَىٰ مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ٦٨ ﴾ [الانعام: ٦٨] 
অর্থাৎ তুমি যখন দেখ, তারা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে ব্যঙ্গ আলোচনায় মগ্ন হয়, তখন তুমি দূরে সরে পড়; যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে, তাহলে স্মরণ হওয়ার পরে তুমি অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (সূরা আন‘আম ৬৮ আয়াত)
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের আগুন থেকে তার চেহারাকে রক্ষা করবেন।’’ (তিরমিযী- হাসান) [1]
[1] তিরমিযী ১৯৩১, আহমাদ ২৬৯৮৮, ২৬৯৯৫ হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
গীবত পরনিন্দা, গীবত করার ভয়াবহতা,

Post a Comment

0 Comments