১ম প্রশ্ন:
অনেকে বলে, আমরা অলী-আউলিয়া ও বুজুর্গ লোকদের নিকট বিপদাপদ থেকে উদ্ধার
কামনা করি। তবে তাদের নিকট আমরা যা চাই তা হল কিয়ামতের দিন যেন তারা
আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য শাফায়াত করে। কারণ তারা সৎ লোক। আল্লাহর নিকট
তাদের বিশাল মর্যাদা রয়েছে। তাই এই মর্যাদার কারণে আমরা চাই তারা আমাদের
সুপারিশ করে পরকালে কঠিন বিপদ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করবেন। এটা কি
ঠিক?
——————————————————————-
উত্তর:
আরবের মুশরিকরা তো তাদের শিরকের স্বপক্ষে হুবহু এ কথাই বলত। তার পরে ও
মহান আল্লাহ তাদেরকে-কাফের মুশরিক বলে অবিহিত করেছেন। যেমন, আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ
“আর
তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন জিনিসের উপাসনা করে যা তাদের লাভ-ক্ষতি কিছুই
করতে পারে না আর বলে, তারা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করবে।” (সূরা
ইউনুস: ১৮)
সৎ ব্যক্তিগণ কিয়ামতের দিন পাপী বান্দা সুপারিশ করবে। কিন্তু সুপারিশের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:
قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا
সুতরাং
যেহেতু শাফায়াতের মালিক আল্লাহ সেহেতু তা চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর
নিকট। মৃতদের নিকট চাওয়া যাবে না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কোন, নবী-অলী
ফেরেশতা বা অন্য কারো নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করার সুযোগ দেন নি। যেহেতু
তার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা তাই সুপারিশ কেবল তার কাছেই চাইতে হবে।
যেন তিনি সুপারিশ কারীকে সুপারিশ করার অনুমতি দেন।
কিন্তু
দুনিয়ার ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে অনুমতি ছাড়াই সুপারিশ কারীরা
সুপারিশ করতে আসে এবং অনেক সময় অনিচ্ছা স্বত্বেও সুপারিশ গ্রহণ করতে বাধ্য
হতে হয়। কারণ সুপারিশ কারীরা হয়ত উচ্চ পর্যায়ের লোক বা সরকারী
কর্মকর্তা বা মন্ত্রী। মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের মুখাপেক্ষী হয়।
কিন্তু
আল্লাহর দরবারে কেউ সুপারিশ নিয়ে হাজির হতে পারবে না যতক্ষণ না তিনি
সুপারিশ কারীকে অনুমতি দিবেন বা যার ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে তার ব্যাপারে
সম্মতি প্রকাশ করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَكَمْ
مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا
مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى
“আর
আসমান সমূহে এমন অনেক ফেরেশতা রয়েছে যাদের শাফাআত কোন কাজে লাগবে না
যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা এবং যার ব্যাপারে সম্মত তার ব্যাপারে
সুপারিশের অনুমতি দিবেন। (সূরা নাজম: ২৬)
২য় প্রশ্ন:
তারা বলে আল্লাহর নিকট অলী-আউলিয়াদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তাই আমরা
তাদের এ মর্যাদার ওসীলায় আল্লাহর নিকট শাফায়াত প্রত্যাশা করি। এতে সমস্যা
কোথায়?
————————————————————–
উত্তর:
প্রতিটি ইমানদার আল্লাহর অলী বা বন্ধু। কিন্তু কোন ব্যক্তি বিশেষকে
নির্দিষ্ট করে আল্লাহর অলী বলতে গেলে তার পক্ষে অবশ্যই কুরআন ও হাদীসের
দলীল প্রয়োজন। কুরআন ও হাদীসের আলোকে কোন ব্যক্তি আল্লাহর অলী প্রমাণিত
হলে তার ব্যাপারে আমাদের বাড়াবড়ি করা বৈধ হবে না। কারণ বাড়াবাড়ি করতে
গেলে তাতে র্শিক সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন তাঁকে সরাসরি আহবান করতে। তাঁকে পাওয়ার জন্য কোন মাধ্যম
ধরার প্রয়োজন নাই।
আরবের
মুশরিকদের পক্ষ থেকে এ যুক্তি পেশ করা হয়েছিল যে, তারা মূর্তিগুলোকে
আল্লাহ ও তাদের মাঝে কেবল মাধ্যম মনে করে এবং যেহেতু তারা আল্লাহর দরবারে
মর্যাদা সম্পন্ন এবং নৈকট্য প্রাপ্ত তাই তাদের মাধ্যমে তারাও আল্লাহর
নৈকট্য লাভ করতে চায়। কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাদের এজাতীয় বিশ্বাস
ও কার্যক্রমের প্রতিবাদ করেছেন।
মূল: ড. শাইখ সালেহ বিন ফাউযান আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ)
অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
0 Comments