মূল: আল্লামা শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
অনুবাদকের কথা
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। দরূদ এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে পবিত্র ক্বুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথনির্দেশ মেনে চলতে হবে। মানুষের এই নশ্বর পৃথিবীতে আগমন করার সময় যেমন তার অভিভাবকের কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে, তেমনি তার মৃত্যুর সময়ও জীবিতদের কিছু করণীয় রয়েছে। আর এ সবকিছুই আমাদের পবিত্র দ্বীনে ইসলামে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। কল্যাণের এমন কোন দিক নেই, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাৎলে দিয়ে যান নি। অনুরূপভাবে এমন কোন অকল্যাণ নেই, যা থেকে তিনি আমাদেরকে সতর্ক করে যাননি। অতএব, কোন মুসলিম মৃত্যুমুখে পতিত হলে তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্মরণ করাতে হবে। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করলে সুন্নাতী তরীক্বায় তার কাফন-দাফনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একজন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর পরে তাকে দাফনের পর পর্যন্ত অসংখ্য কুসংস্কার এবং অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। এমন সময় মানুষের কি কি করণীয় এবং কি কি বর্জনীয়, সে সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা এই ছোট্ট পুস্তিকায় প্রশ্নোত্তর আকারে দেওয়া হয়েছে।
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। সেজন্য হাযার চেষ্টা সত্ত্বেও ভুল হওয়া স্বাভাবিক। আশা করি, বিজ্ঞ পাঠকগণ ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরামর্শ, নির্দেশনা ও সহযোগিতা দিয়ে অনুবাদককে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করবেন।
পরিশেষে, অনুবাদকের কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহপাক তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। পাঠকগণ বইটি পড়ে উপকৃত হলে আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু ক্ববূল করুন এবং ইহাকে আমাদের পরকালীন পাথেয় হিসাবে মঞ্জুর করুন। আমীন!
বিনীত
আব্দুল আলীম বিন কাওসার
abdulalim.kawsar@yahoo.com
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জানাযার বিধিবিধান
প্রশ্ন ১: মরণাপন্ন ব্যক্তির কাছে উপস্থিত ব্যক্তির করণীয় কি? আর মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসিন পড়া কি সুন্নাতসম্মত?
উত্তরঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। সমস্ত প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য, দরূদ এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবীর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি এবং সকল ছাহাবীর প্রতি। রোগী দেখতে যাওয়া মুসলিমদের পারস্পরিক অধিকার। আর যে রোগী দেখতে যাবে, তার জন্য উচিৎ হবে রোগীকে তওবা, যরূরী অছিয়ত এবং সর্বদা আল্লাহ্র যিক্র করার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া। কেননা রোগী এ সময় এ জাতীয় বিষয়ের খুব বেশী মুখাপেক্ষী থাকে। অনুরূপভাবে রোগী যদি মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তার কাছে উপস্থিত ব্যক্তি যদি নিশ্চিত হয় যে, তার মৃত্যু এসে গেছে, তাহলে তার উচিৎ তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া, যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন।[1]
সে শুনতে পায় এমন শব্দে তার নিকট আল্লাহ্র যিকর করবে। ফলে সে স্মরণ করবে এবং আল্লাহ্র যিকর করবে। বিদ্বানগণ বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ার জন্য আদেশ করা উচিৎ নয়। কেননা তার মনটা ছোট হয়ে যাওয়া এবং তার এই কঠিন অবস্থার কারণে সে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলতে অস্বীকার করে বসতে পারে। আর অস্বীকার করে বসলেই তার শেষ ভাল হবে না। সেজন্য তার শয্যাপাশে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ে তাকে এই কালিমা স্বরণ করাবে। [অর্থাৎ তাকে বলবেনা যে, হে অমুক! লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়]।
এমনকি বিদ্বানগণ বলেছেন, যদি তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে স্বরণ করে এবং ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ে, তাহলে তখন চুপ হয়ে যাবে এবং তার সাথে আর কোনো কথা বলবে না- যাতে দুনিয়াতে তার সর্বশেষ কথাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তারপর আবার অন্য কোন কথা বলে ফেলে, তাহলে আবার তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাবে- যাতে তার শেষ কালেমাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।
আর মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতকে অনেক বিদ্বান সুন্নাত বলেছেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়’।[2] তবে কেউ কেউ হাদীছটি যঈফ বলেছেন। সুতরাং যার দৃষ্টিতে হাদীছটি ছহীহ, তার নিকট সুরা ইয়াসীন পড়া সুন্নাত। পক্ষান্তরে যার দৃষ্টিতে হাদীছটি যঈফ, তার নিকট সূরাটি পড়া সুন্নাত নয়।[3]
প্রশ্ন ২: জানাযা পড়ার জন্য সমবেত করার উদ্দেশ্যে কারো মৃত্যু সংবাদ তার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবকে দিলে কি তা নিষিদ্ধ মৃত্যু সংবাদ ঘোষণার আওতায় পড়বে নাকি তা বৈধ?
উত্তরঃ এটি বৈধ মৃত্যু সংবাদ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর মৃত্যুর দিনে তাঁর মৃত্যুর খবর দিয়েছিলেন।[4] তাছাড়া যে মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত, ছাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ না দিয়ে দাফন করে ফেললে তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি আমাকে খবরটি দিতে’।[5]
সুতরাং জানাযায় বেশী মানুষ শরীক হওয়ার উদ্দেশ্যে কারো মৃত্যু সংবাদ দিলে কোন সমস্যা নেই। কেননা এ মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তবে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পরে মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা শরী‘আত সম্মত নয়; বরং তা নিষিদ্ধ মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ৩: মৃতকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি কি? এতদ্বিষয়ে এবং মৃতকে গোসল দেওয়ার ব্যাপারে দ্বীনি ছাত্রবৃন্দের জন্য আপনার নছীহত কি?
উত্তরঃ মৃতকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতিঃ মৃত ব্যক্তিকে এমন এক ঘেরা জায়গায় নিতে হবে, যেখানে কেউ তাকে দেখতে পাবে না। যারা তাকে গোসল করানোর কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে এবং যারা তাদেরকে সহযোগিতা করবে, তারা ছাড়া আর কেউ তার কাছে যাবে না। অতঃপর যে গোসল করাচ্ছে সে সহ অন্য কেউ যাতে তার লজ্জাস্থান দেখতে না পায়, সেজন্য তার লজ্জাস্থানে একটি নেকড়া দিয়ে দেহের কাপড়-চোপড় খুলে ফেলতে হবে। তারপর তাকে পরিষ্কার-পরিছন্ন করতে হবে। অতঃপর ছালাতের অযূর ন্যায় তাকে অযূ করাবে। তবে বিদ্বানগণ বলেন, তার নাক-মুখে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং একটা নেকড়া ভিজিয়ে তা দিয়ে মৃতের দাঁত সমূহ এবং নাকের ভেতরে ঘষে পরিষ্কার করে দিবে। এরপর মৃতের মাথা ধুয়ে দিবে। অতঃপর তার সমস্ত শরীর ধুয়ে দিবে। তবে শরীর ধোয়ার সময় মৃত ব্যক্তির ডান অঙ্গ থেকে শুরু করবে। পানিতে বরই পাতা দেওয়া উচিৎ। কেননা তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সাহায্য করে। বরই পাতার ফেনা দিয়ে মৃতের মাথা, দাড়ি ধুয়ে দিবে। অনুরূপভাবে শেষ বার ধোয়ার সময় পানিতে একটু কর্পূর মিশানো উচিৎ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়েকে গোসলদানকারী মহিলাগণকে বলেছিলেন, ‘শেষবার ধোয়ার সময় পানিতে একটু কর্পূর মিশাবে’।[6] অতঃপর মৃতের গায়ের পানি মুছে তাকে কাফনের কাপড় পরাবে।
মৃতকে গোসল দেওয়া ফরযে কেফায়াহ। কেউ তা সম্পন্ন করলে অন্যদের উপর থেকে ফরযিয়াত উঠে যাবে। আমার মতে, যারা মৃত ব্যক্তিকে শর‘ঈ পদ্ধতিতে গোসল দিতে জানে, তারাই মৃতদের গোসলের দায়িত্ব নিবে। দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সরাসরি গোসল করানোর কাজে অংশ নেওয়া যরূরী নয়। কেননা হতে পারে যে, শিক্ষার্থীরা এর চেয়ে আরো বেশী যরূরী কাজে ব্যস্ত রয়েছে। সেজন্য এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ গোসল দিলেই যথেষ্ট হবে। তবে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মৃতকে কাফন-দাফন করার পদ্ধতি ভালভাবে জেনে রাখা উচিৎ।
প্রশ্ন ৪: জানাযার ছালাতের পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ জানাযার ছালাতের পদ্ধতি: মৃতকে মুছল্লীদের সামনে রাখতে হবে। মৃত পুরুষ হলে ইমাম মাথা বরাবর দাঁড়াবেন আর মহিলা হলে দাঁড়াবেন মাঝ বরাবর। অতঃপর প্রথম তাকবীর দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়বেন, দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দরূদ শরীফ পড়বেন এবং তৃতীয় তাকবীর দিয়ে মৃতের জন্য দো‘আ করবেন।
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ, اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُ»
এই সাধারণ দো‘আটি পড়বেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত মৃতের জন্য বিশেষ দো‘আ পড়বেন। তা সম্ভব না হলে অন্য যে কোন দো‘আর মাধ্যমে তার জন্য দো‘আ করবেন। মোদ্দাকথাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য খাছ কিছু দো‘আ করবেন। কেননা সে দো‘আর খুব বেশী মুখাপেক্ষী। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সামান্য একটু অপেক্ষা করে সালাম ফিরাবেন। কোন কোন বিদ্বান বলেন, চতুর্থ তাকবীরের পরে
﴿رَبَّنَا آتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾ [سورة البقرة: 136]
দো‘আটি পড়বেন। আর পঞ্চম তাকবীর দিলে কোন সমস্যা নেই; বরং সেটিও সুন্নাত সম্মত।[7] সেজন্য মাঝে মাঝে পঞ্চম তাকবীর দেওয়া উচিৎ, যাতে এই সুন্নাতটি বিলুপ্ত না হয়ে যায়। তবে যদি তিনি পঞ্চম তাকবীর দেওয়ার নিয়্যত করেন, তাহলে দো‘আ চতুর্থ ও পঞ্চম তাকবীরে ভাগ করে পড়বেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন ৫: মুর্দাকে প্রস্তত করা, তাকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, তার জানাযার ছালাত পড়া অথবা তাকে দাফন করার ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজন আসা পর্যন্ত বিলম্ব করার হুকুম কি?
উত্তরঃ মৃতের দাফন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা সুন্নাত পরিপন্থী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ বিরোধী। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন করো। কেননা সে যদি পূণ্যবান হয়, তাহলে তার জন্য উত্তম পরিণতি রয়েছে, তাকে তোমরা কল্যাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছ। আর যদি সে এর ব্যতিক্রম হয়, তাহলে তার জন্য খারাপ রয়েছে, যাকে তোমরা তোমাদের কাঁধ থেকে (তাড়াতড়ি) নামিয়ে দিচ্ছ’।[8]
সামান্য পরিমাণ বিলম্ব করা যেতে পারে। যেমনঃ কারো জন্য ১/২ ঘন্টা অপেক্ষা করা। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ সময় বিলম্ব করা মৃতের উপর অবিচার করার শামিল। কেননা নেকাত্মাকে যখন তার পরিবার গোরস্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে বের হয়, তখন সে বলে, আমাকে দ্রুত নিয়ে যাও, আমাকে দ্রত নিয়ে যাও।[9] বুঝা গেল, সে দ্রুততা কামনা করে। কেননা তাকে কল্যাণ ও অশেষ ছওয়াবের ওয়াদা করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬: সবক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা কি শরী‘আত সম্মত?
উত্তরঃ বিদ্বানগণের অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হচ্ছে, যার জানাযা পড়া হয়নি, কেবল তার ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কারো গায়েবানা জানাযা শরী‘আত সম্মত নয়। যেমনঃ কেউ যদি কাফের রাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করে এবং তার জানাযা পড়া না হয়, তাহলে তার গায়েবানা জানাযা পড়া আবশ্যক। কিন্তু যদি তার জানাযার ছালাত সম্পন্ন হয়, তাহলে সঠিক কথা হল, তার গায়েবানা জানাযা শরী‘আতসম্মত নয়। কেননা বাদশাহ নাজাশী ছাড়া অন্য কারো গায়েবানা জানাযার কথা হাদীছে আসেনি।[10] আর নাজাশীর জানাযার ছালাত তাঁর দেশে সম্পন্ন হয়েছিল না। সে কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেছিলেন। অনেক বড় বড় ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাযা পড়েছেন মর্মে কিছুই বর্ণিত হয় নি।
কোন কোন বিদ্বান বলেন, যার মাল দ্বারা বা ইল্ম দ্বারা দ্বীনের উপকার সাধিত হয়, এমন ব্যক্তির গায়েবানা জানাযা পড়া যেতে পারে। পক্ষান্তরে যার অবস্থা এমনটি হবে না, তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, সবার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। কিন্তু এটি অতীব দুর্বল অভিমত।
প্রশ্ন ৭: জানাযার ছালাত পড়ানোর ক্ষেত্রে কে বেশী উত্তম? ইমাম নাকি মৃতের অভিভাবক?
উত্তর : যদি কারো জানাযার ছালাত মসজিদে পড়া হয়, তাহলে মসজিদের ইমাম বেশী উত্তম। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেউ কারো কর্তৃত্বের স্থলে ইমামতি করবে না’।[11] কিন্তু মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও যদি তার জানাযা হয়, তাহলে মৃতের অছিয়ত প্রাপ্ত ব্যক্তিই জানাযা পড়ানোর ক্ষেত্রে উত্তম। তবে যদি তার অছিয়ত প্রাপ্ত কেউ না থাকে, তাহলে তার নিকটতম ব্যক্তি উত্তম হিসাবে বিবেচিত হবে।
প্রশ্ন ৮: একই জানাযায় কয়েকজন মুর্দার উপস্থিতিতে আমরা কি তাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিকে ইমামের নিকটবর্তী করব নাকি তারা সবাই সমান?
উত্তরঃ প্রথমে পুরুষদেরকে, তারপর মহিলাদেরকে রাখতে হবে। অনুরূপভাবে বালককে মহিলার আগে রাখতে হবে। যদি একই জানাযায় একজন পুরুষ, একজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালক, একজন প্রাপ্ত বয়ষ্কা মহিলা এবং একজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্কা বালিকা থাকে, তাহলে তাদেরকে সাজাতে হবে এভাবেঃ ইমামের কাছাকাছি পুরুষটিকে, তারপর অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালকটিকে, তারপর মহিলাটিকে এবং তারপর অপ্রাপ্ত বয়ষ্কা বালিকাটিকে রাখতে হবে।
কিন্তু যদি তারা সবাই একই লিঙের হয়, যেমনঃ যদি সবাই পুরুষ হয়, তাহলে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তিকে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে রাখতে হবে। কেননা উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের কয়েকজনকে যখন একই ক্ববরে দাফন করা হচ্ছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুরআন জানা ছাহাবীকে আগে ক্ববরে রাখার নির্দেশ করেছিলেন।[12] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, আলেম ব্যক্তিকে ইমামের কাছাকাছি রাখতে হবে।
প্রশ্ন ৯: একই জানাযায় পুরুষ, মহিলা এবং বাচ্চা থাকলে ইমাম কোথায় দাঁড়াবেন?
উত্তরঃ মানুষ বড় হোক অথবা ছোট হোক ইমাম পুরুষের মাথা বরাবর এবং মহিলার মাঝামাঝি স্থানে দাঁড়াবেন। অতএব, মৃত ছোট বালক হলেও ইমাম তার মাথার কাছে দাঁড়াবেন। অনুরূপভাবে ছোট বালিকা হলেও তার মাঝ বরাবর দাঁড়াবেন।
প্রশ্ন ১০: মুর্দা অনেকগুলি হলে জানাযার সময় তাদের পুরুষ কিংবা মহিলা হওয়া সম্পর্কে মুছল্লীদেরকে অবহিত করার হুকুম কি?
উত্তরঃ এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা মৃত পুরুষ হলে মুছল্লীরা দো‘আয় পুং লিঙ্গের শব্দ ব্যবহার করবে, আর মহিলা হলে স্ত্রী লিঙ্গের শব্দ ব্যবহার করবে। তবে মুছল্লীরা নির্দিষ্ট দো‘আ না পড়লেও কোন সমস্যা নেই। উল্লেখ্য যে, যারা মৃতের লিঙ্গ সম্পর্কে অবহিত হবে না, তারা সাধারণভাবে মুর্দার জানাযা পড়ার নিয়্যত করবে এবং ঐ জানাযাই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন ১১: বিশেষ করে জুম‘আর দিনে অনেক মুর্দার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, এমনকি তাদের জন্য ইমামের সামনের জায়গাও সংকুলান হয় না।[13] এক্ষেত্রে কি কয়েক দফায় তাদের জানাযা পড়তে হবে?
উত্তরঃ ইমামের সামনে একজনকে আরেকজনের পরে রেখে সবার জানাযা একসাথে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে ইমাম এবং মুছল্লী একটু পেছনে সরে দাঁড়াবেন, এমনকি তারা কাতার একটু ঘন করে দাঁড়ালেও কোন সমস্যা নেই। কেননা তাদের রুকূ-সেজদার কোন প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন ১২: জানাযার ছালাতে বেশী মুছল্লী উপস্থিতির বিষয়ে কি কোন বর্ণনা এসেছে? বেশী মুছল্লী শরীক হওয়ার হিকমত কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরশাদ করেন, কোন মুসলিম মারা গেলে যদি তার জানাযায় এমন চল্লিশ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করে না; তাহলে তার ব্যপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ ক্ববূল করেন।[14]
প্রশ্ন ১৩: জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহার পরে অন্য আয়াত বা সূরা মিলানোর হুকুম কি?
উত্তরঃ জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহার পরে ক্বুরআনের অন্য কোন আয়াত বা সূরা পড়লে কোনো সমস্যা নেই। তবে যেন ক্বিরাআত লম্বা না করে। আর শুধু সূরা ফাতিহা পড়লেও তা যথেষ্ট হবে। কেননা জানাযার ছালাত লম্বা না করে খাটো করে পড়তে হয়। সেজন্যই তো এই ছালাতে ছানা পড়তে হয় না; বরং আঊযুবিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হয়।
প্রশ্ন ১৪: ছোট বাচ্চার জানাযার ছালাতে কোন্ দো‘আ পড়তে হয়?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, জানাযার সাধারণ দো‘আ পড়ার পর ছোট বাচ্চার জন্য নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে,
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ فَرَطاً لِوَالِدَيْهِ وَذُخْراً وَشَفِيْعًا مُجَاباً. اَللَّهُمَّ ثَقِّلْ بِهِ مَوَازِيْنَهُمَا وَأَعْظِمْ بِهِ أُجُوْرَهُمَا وَأَلْحِقْهُ بِصَالِحِ سَلَفِ الْمُؤْمِنِيْنَ, وَاجْعَلْهُ فِيْ كَفَالَةِ إِبْرَاهِيْمَ, وَقِهِ بِرَحْمَتِكَ عَذَابَ الْجَحِيْمِ.
উক্ত দো‘আও পড়তে পারে অথবা অন্য দো‘আও পড়তে পারে। এক্ষেত্রে হুকুম প্রশস্ত এবং এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন ১৫: জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ সূরা ফাতিহা পাঠ ছালাতের একটি রুকন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার ছালাত হয় না।[15]
এক্ষেত্রে জানাযার ছালাত এবং অন্য ছালাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা জানাযাও এক প্রকার ছালাত। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ ঘোষণা, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়বে না, তার ছালাত হবে না’ জানাযার ছালাতকেও অন্তর্ভুক্ত করবে।
প্রশ্ন ১৬: কারো জানাযার এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে গেলে সে কি তার ক্বাযা আদায় করবে? সে ইমামের সাথে ছালাত শুরু করবেইবা কিভাবে?
উত্তরঃ ইমামকে ছালাতের যে অবস্থাতে পাবে, ঠিক সেই অবস্থা থেকেই ইমামের সাথে ছালাত শুরু করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা (ইমামের সাথে) ছালাতের যতটুকু পাও, ততটুকু আদায় কর। আর যতটুকু তোমাদের ছুটে যায়, ততটুকু পূরণ কর’।[16] যদি মুর্দা সেখানে থাকে, তাহলে ইমাম সালাম ফিরালে সে ছালাতের বাক্বী অংশ পূরণ করে নিবে। কিন্তু যদি মুর্দাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে আমাদের ফক্বীহগণের মতানুসারে, সে তাকবীর পূরণও করতে পারে অথবা ইমামের সাথে সালামও ফিরাতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন ১৭: কোন্ কোন্ সময়ে জানাযার ছালাত আদায় করা নিষেধ? আর কেনইবা ফজরের পূর্বে এবং আছরের পূর্বে মানুষ জানাযা ছালাত পড়ে না- বিশেষ করে কা‘বা ও মসজিদে নববীতে- অথচ তারা ঐসময় সমবেত থাকে?
উত্তরঃ তিনটি সময়ে আমাদেরকে ছালাত আদায় করতে এবং মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করা হয়েছেঃ সূর্যোদয়ের সময় থেকে সূর্য্য সামান্য পরিমাণ উপরে উঠা পর্যন্ত, ভরা দুপুর বেলায় অর্থাৎ সূর্য ঢলে যাওয়ার ১০ মিনিট মত আগে এবং সূর্যাস্তের সময়। উক্ত তিন সময় হল নিষিদ্ধ সময়। উক্ববা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিন সময়ে ছালাত আদায় করতে এবং মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করেছেন।[17] অতঃপর তিনি উক্ত তিনটি সময় উল্লেখ করেন।
তবে ফজর ও আছরের পরে যেহেতু জানাযার ছালাত আদায় করতে কোনো নিষেধ নেই, সেহেতু ফজর ও আছরের পূর্বে আগেভাগে জানাযা ছালাত আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন ১৮: জানাযার ছালাতের জন্য মৃতদেহকে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার আগে এবং দাফনের সময় মাটিতে রাখার আগে তার উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর হুকুম কি? আর দাফনের সময় দাঁড়ানোর হুকুমইবা কি? উল্লেখ্য যে, মৃতদেহকে মসজিদে প্রবেশ করানোর সময় মানুষ যখন তার জানাযার জন্য দাঁড়ায়, তখন তারা ছালাতের পরের যিকর-আযকার ছেড়ে দেয়!
উত্তরঃ মানুষের পাশ দিয়ে যখন মৃতদেহ অতিক্রম করে, তখন তার জন্য দাঁড়ানো সুন্নাত। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ রয়েছে।[18]
আর ইমামের সালাম ফিরানোর পরপরই জানাযা ছালাত শুরু করার বিষয়ে আমরা বলব, যদি ছুটে যাওয়া ছালাত পূরণকারীর সংখ্যা সেখানে অনেক হয়, তাহলে বাক্বীরা তাদের জন্য অপেক্ষা করবে; যাতে তারা জানাযার ছালাতের ফযীলত থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায় এবং যাতে জানাযায় মুছল্লীর সংখ্যা বেশী হয়। কিন্তু যদি সেখানে সবাই পূর্ণ জামা‘আত পায় অথবা রাক‘আত ছুটে যাওয়া মুছল্লীর সংখ্যা কম হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি পড়ে নেওয়া ভাল; যাতে মানুষ না চলে যায়।
প্রশ্ন ১৯: মৃতের পরিবার-পরিজন অথবা তাকে বহনকারী ব্যক্তিরা জানাযার ছালাতের সময় সামনে গিয়ে যদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়, তাহলে শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে কি? এক্ষেত্রে সুন্নাত কি?
উত্তরঃ মৃতের আত্মীয়-স্বজন অথবা তাকে বহনকারী ব্যক্তিরা তাকে নিয়ে সামনে গেলেও তারা ইমামের ডান-বাম কোন পাশেই ছালাত দাঁড়াবে না; বরং সাধারণ মানুষের সাথেই কাতারে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে। কিন্তু যদি তাদের জায়গা না হয়, তাহলে তারা ইমাম ও প্রথম কাতারের মাঝে দাঁড়াবে। কেননা দুই বা ততোধিক মুছল্লী হলে ইমামের পাশে দাঁড়ানো শরী‘আতসম্মত নয়।
তবে যদি তারা দেখে যে, ইমাম ও প্রথম কাতারের মধ্যেও তাদের জায়গা হচ্ছে না, তাহলে তারা ইমামের ডান ও বাম পাশে দাঁড়াবে। মৃতদেহ বহনকারী একজন হলে সে ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। যেমনঃ মৃত ছোট বালক হলে সাধারণতঃ একজন বহন করে। আর বহনকারী একাধিক হলে ডান ও বাম উভয় পাশে দাঁড়াবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন ২০: অকাল প্রসূত ভ্রূণের (গর্ভচ্যুত অসম্পূর্ণ সন্তান) জানাযা পড়তে হবে কি না?
উত্তরঃ অসম্পূর্ণ সন্তানকে রূহ প্রদানের আগেই সে গর্ভচ্যুত হলে তার জানাযা পড়তে হবে না। উল্লেখ্য যে, গর্ভধারণের চার মাসে রূহ বা আত্মা প্রদান করা হয়। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের যে কাউকে তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র অবস্থায় রাখা হয়। তারপরের চল্লিশ দিনে সে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। তৎপরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। অতঃপর তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়, তিনি তাতে আত্মার সঞ্চার করেন এবং তাকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়ঃ তার রিযিক্ব, তার আয়ূ, তার আমল এবং সে সৌভাগ্যবান হবে নাকি দুর্ভাগা’।[19]
কিন্তু গর্ভচ্যুত অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের পেটে আসা যদি চার মাস পূর্ণ হয়, তাহলে তাকে গোসল করাতে হবে, কাফন পরাতে হবে। অনুরূপভাবে তার জানাযা ছালাত পড়াতে হবে এবং মুসলিমদের সাথে ক্ববরস্থানে তাকে দাফন করতে হবে। আর চার মাস পূর্ণ না হলে গোসল, কাফন, জানাযা কোনটাই করতে হবে না এবং তাকে যেকোন জায়গায় দাফন করলে চলবে।
প্রশ্ন ২১: জানাযার সময় মৃতের মাথা ইমামের ডান দিকে রাখা কি শরী‘আত সম্মত?
উত্তরঃ এ বিষয়ে কোন হাদীছ আছে বলে আমার জানা নেই। সেজন্য ইমামের উচিৎ, মাঝেমধ্যে মৃতের মাথা তাঁর বাম দিকে রাখা; যাতে মানুষের নিকট স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মৃতের মাথা ডান দিকে রাখা ওয়াজিব নয়। কেননা এক শ্রেণীর মানুষ মনে করে, মৃত ব্যক্তির মাথা অবশ্যই ডান দিকে রাখতে হবে; অথচ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন ২২: যদি কেউ ভিড়ের কারণে বা সুন্নাতে রাতেবাহ আদায় করার কারণে অথবা (ছুটে যাওয়া) ফরজ ছালাত পূর্ণ করার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে জানাযার সাথে না যায় কিন্তু দাফনের পূর্বে তার জানাযায় শরীক হয়, তাহলে কি সে মৃতের সাথে ক্ববরস্থানে গমনকারী হিসাবে বিবেচিত হবে? তার কি ক্ববরস্থানে গমনকারীর নেকী হবে?
উত্তরঃ কেউ সুন্নাতে রাতেবাহ আদায়ের কারণে জানাযা না পড়লে সে জানাযা পড়ার নেকী থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা জানাযার কাজ শেষ করেও সে ঐ সুন্নাত পড়তে পারত। পক্ষান্তরে যদি কেউ ওযর থাকার কারণে জানাযায় শরীক হতে না পারে, অথচ সে আগ্রহ করে মৃতকে দাফন করতে এসেছে কিন্তু বাধাগ্রস্ত হয়েছে অথবা মানুষ আগেভাগে জানাযা পড়ে মুর্দাকে ক্ববরস্থানে নিয়ে গেছে, এমতাবস্থায় তার নেকী লেখা হবে। কেননা সে নিয়্যত করেছিল এবং তারপক্ষে যতটুকু সম্ভব সে চেষ্টা করেছে। আর যে ব্যক্তি নিয়্যত করে এবং নিয়্যত অনুযায়ী আপ্রাণ চেষ্টা করে, তার জন্য পূর্ণ নেকী লেখা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ﴾ [سورة النساء: 100]
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশে নিজ গৃহ থেকে বের হয়, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার ছওয়াব আল্লাহ্র কাছে অবধারিত হয়ে যায়’ (নিসা ১০০)।
কিন্তু ক্ববরস্থানে যদি তার পক্ষে জানাযার ছালাত পড়ে নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে পড়ে নিবে।
প্রশ্ন ২৩: মসজিদে ইমামের সাথে কারো জানাযার ছালাত ছুটে গেলে ক্ববরস্থানে দাফনের পূর্বে অথবা দাফনের পরে ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযা পড়া কি জায়েয?
উত্তরঃ হ্যাঁ, জায়েয। যদি দাফনের পূর্বে তাদের পক্ষে জানাযা পড়া সম্ভব হয়, তাহলে পড়বে। কিন্তু দাফনের পরে তারা আসলে ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযা পড়ে নিবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযা পড়েছেন মর্মে প্রমাণিত হয়েছে।[20]
প্রশ্ন ২৪: ইমামের সাথে ফরয ছালাত পায় নি এমন কেউ জানাযা ছালাতের জন্য মৃতকে সামনে নেওয়া অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলে সে কি ইমামের সাথে জানাযার ছালাত পড়বে নাকি আগে ফরয ছালাত পড়বে?
উত্তরঃ সে ইমামের সাথে আগে জানাযা পড়ে নিবে। কেননা ফরয ছালাত পরে আদায় করে নেওয়া যাবে। কিন্তু জানাযা ছালাত শেষে মৃতকে নিয়ে চলে গেলে সে আর জানাযা পড়ার সুযোগ পাবে না।
প্রশ্ন ২৫: মৃত ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগকারী হলে, অথবা সে ছালাত পরিত্যাগকারী বলে সন্দেহ হলে অথবা তার অবস্থা না জানা থাকলে তার জানাযা পড়ার হুকুম কি? জানাযার উদ্দেশ্যে তাকে ইমামের সামনে নিয়ে যাওয়া কি তার অভিভাবকের জন্য জায়েয হবে?
উত্তরঃ যার সম্পর্কে নিশ্চিত জানা যাবে যে, সে বেনামাযী হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তার জানাযা পড়া জায়েয হবে না। কেননা সে কাফির, মুরতাদ। ক্ববরস্থান বাদে অন্য কোথাও গর্ত করে তাকে সেই গর্তে ফেলে দেওয়া উচিৎ, তার জানাযাই পড়া উচিৎ নয়। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনো খাতির-সম্মান নেই। কেননা পরকালে ফির‘আঊন, হামান, ক্বারূন ও উবাই ইবনে খালাফের সাথে তার হাশর হবে।
তবে তার অবস্থা সম্পর্কে জানা না থাকলে অথবা সন্দেহ থাকলে তার জানাযা পড়তে হবে। কেননা অমুসলিম প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সে একজন মুসলিম হিসাবেই গণ্য হবে। অবশ্য ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকলে সে জানাযার সময় একটু ব্যতিক্রম দো‘আ পড়লে কোনো সমস্যা নেই। দো‘আতে সে বলবে, اَللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُؤْمِنًا فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ ‘হে আল্লাহ! সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে তুমি ক্ষমা কর এবং তার প্রতি রহম কর’। কেননা যারা তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ তুলে, তাদের ক্ষেত্রে এরূপ ব্যতিক্রম দো‘আ এসেছে। সেজন্য স্বামী যখন তার স্ত্রীকে অভিশাপ করবে, তখন পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾ [سورة النور: 7] ‘যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহ্র লা‘নত’ (নূর ৭)। অনুরূপভাবে স্ত্রীও পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِن كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾ [سورة النور: 9] ‘যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে তার নিজের উপর আল্লাহ্র গযব নেমে আসবে’ (নূর ৯)।
প্রশ্ন ২৬: জানাযায় মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করার সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া কি জায়েয? যেমনঃ হে আল্লাহ! সে যদি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ এর সাক্ষ্য প্রদানকারী হয়… ইত্যাদি? শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে কি?
উত্তরঃ যদি কারো এই মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খুব বেশী সন্দেহ থাকে, তাহলে اَللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُؤْمِنًا فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ ‘হে আল্লাহ! সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে তুমি ক্ষমা কর এবং তার প্রতি রহমত বর্ষণ কর’ বললে কোন সমস্যা নেই। তবে সন্দেহ জোরালো না হলে শর্ত করবে না। কেননা মুসলিমদের আসল অবস্থা হল, তারা ইসলামের উপরেই আছে। দো‘আয় অনুরূপ শর্তারোপের ভিত্তি শরী‘আতে রয়েছে। লি‘আনের ক্ষেত্রে স্বামী যখন তার স্ত্রীকে অভিশাপ করবে, তখন পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾ [سورة النور: 7]
‘যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহ্র লা‘নত’ (নূর ৭)। অনুরূপভাবে স্ত্রীও পঞ্চমবার বলবে,
﴿أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِن كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾ [سورة النور: 9] ‘যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে তার নিজের উপর আল্লাহ্র গযব নেমে আসবে’ (নূর ৯)।
সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক অনুরূপ শর্তারোপের ঘটনা ঘটেছে। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী সম্পর্কে বলেন, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তি যদি লোক দেখানো এবং সুনাম অর্জনের জন্য অভিযোগ করতে দাঁড়ায়, তাহলে তুমি তার চোখ অন্ধ করে দাও, তার বয়স বৃদ্ধি করে দাও এবং তাকে তুমি ফেতনা-ফাসাদের সম্মুখীন কর’।[21] আর তা দুবা‘আহ বিনতে যুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর উদ্দেশ্যে বলা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি
«إِنَّ لَكِ عَلَى رَبِّكِ مَا اسْتَثْنَيْتِ»
প্রশ্ন ২৭: মৃত ব্যক্তিকে কাঁধে করে বহন করা উত্তম নাকি গাড়ীতে? হেঁটে হোক অথবা আরোহী অবস্থায় হোক জানাযার সামনে চলা উত্তম নাকি পেছনে?
উত্তরঃ কাঁধে করে মৃত ব্যক্তিকে বহন করা উত্তম। কেননা এতে একদিকে যেমন মৃতকে বহনের সাথে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক থাকে, তেমনি উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রেও তা বেশী কার্যকর। তাছাড়া মৃত ব্যক্তিকে যখন মানুষদের পাশ দিয়ে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা তাকে মৃত হিসাবে চিনতে পারবে এবং তার জন্য দো‘আ করবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মৃতকে এভাবে কাঁধে বহন করলে গর্ব-অহংকার থেকে অধিকতর দূরে থাকা সম্ভব হবে। তবে কোন যরূরী কারণে গাড়ীতে বহন করতে হলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। যেমনঃ বৃষ্টি হলে, প্রচণ্ড গরম পড়লে বা প্রচণ্ড শীত পড়লে অথবা মৃতকে দাফনকার্যে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম হলে গাড়ীতে বহন করলে কোনো সমস্যা নেই।
আর মৃত ব্যক্তির সাথে চলার ব্যাপারে বিদ্বানগণ বলেন, মৃতের ডান, বাম, পেছন ও সামনে চলার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। হেঁটে গমনকারীরা মৃতের সামনে এবং আরোহীরা পেছনে থাকবে। আবার কেউ কেউ বলেন, ডানে, বামে, সামনে বা পেছনে যেখান দিয়েই চলা সহজতর হবে, সেখান দিয়েই চলবে।
প্রশ্ন ২৮: মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘তারবী’ (تربيع)-এর অর্থ কি? শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে কি?
উত্তরঃ মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় মৃত বহনের খাটলির চার দণ্ডকে চার বার ধরার নাম ‘তারবী’। এক্ষেত্রে প্রথমে মৃত ব্যক্তির ডান পাশের সামনের দণ্ড আগে ধরা হয়। অতঃপর ঐ একই পাশের পেছনের দণ্ড ধরা হয়। এরপর মৃত ব্যক্তির বাম পাশের সামনের দণ্ড, অতঃপর পেছনের দণ্ড ধরা হয়।
এমর্মে কতিপয় আছার বর্ণিত হয়েছে এবং আলেমগণ ইহাকে উত্তম গণ্য করেছেন। তবে ভিড়ের সময় নিজেকে এবং অন্যকে কষ্ট না দেওয়ার স্বার্থে এমনটি না করে সহজে যেভাবে বহন করা যায়, তা-ই করা উচিৎ।
প্রশ্ন ২৯: মৃত ব্যক্তির সাথে ক্ববরস্থানে গমনকারীরা কখন বসবে?
উত্তরঃ মৃতব্যক্তিকে যখন ক্ববরে রাখবে অথবা ক্ববর খোঁড়া সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় যখন লাশ মাটিতে রাখবে, তখন তারা বসবে।
প্রশ্ন ৩০: মসজিদে মৃতের জানাযা সংঘটিত হওয়ার পর আরও কয়েকজন তার জানাযা পড়তে আসছে হেতু অন্তত দশ মিনিটের জন্য হলেও কি মৃতের দাফনকর্ম বিলম্বিত করা জায়েয?
উত্তরঃ দ্রুত মৃতের দাফন কাজ সম্পন্ন করা সুন্নাত এবং উত্তম। কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যারা দেরীতে আসবে, তারা মৃত ব্যক্তির দাফনের পরে হলেও তার জানাযা পড়ে নিতে পারবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তার ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযার ছালাত আদায় করেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়েছে।[23]
প্রশ্ন ৩১: মৃতের দেহের কোন্ দিক আগে ক্ববরে নামাতে হবে?
উত্তরঃ যেদিক আগে নামাতে সহজ হয়, সেদিক আগে নামাবে। তবে কতিপয় বিদ্বান বলেন, মৃতকে তার পদযুগলের দিক থেকে নামানো সুন্নাত। আবার কেউ কেউ বলেন, সামনের দিক থেকে নামানো সুন্নাত। যাহোক, এতদ্বিষয়ে বিধান প্রশস্ত রয়েছে।
প্রশ্ন ৩২: মৃত মহিলাকে ক্ববরে নামানোর সময় ক্ববরকে ঢেকে রাখার বিধান কি? আর কত সময় ঢেকে রাখতে হবে?
উত্তরঃ কোনো কোনো বিদ্বান উল্লেখ করেছেন যে, মহিলাকে ক্ববরে নামানোর সময় তার ক্ববরকে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে তার শরীরের দর্শনীয় স্থান প্রকাশ না পায়। তবে তা ওয়াজিব নয়। মহিলার ক্ববরের উপরে ইট সাজানো পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে।
প্রশ্ন ৩৩: মৃতকে দাফনের সময় অনেকেই উচ্চস্বরে কথা বলে; এতে কি কোন সমস্যা আছে?
উত্তরঃ প্রয়োজন দেখা দিলে এতে কোন সমস্যা নেই। অর্থাৎ যদি কেউ চিল্লিয়ে বলে, ইট দাও, পানি দাও, তাহলে কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ৩৪: মৃতকে ক্ববর দেওয়ার সময় যারা উপদেশ দেয়, তাদের ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? নিয়মিত এটি করলে কি কোন সমস্যা?
উত্তরঃ আমার মতে এটি সু্ন্নাত নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) থেকে এরূপ বর্ণিত হয় নি। সর্বোচ্চ যতটুকু জানা যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক আনছার ছাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর জানাযায় বের হলেন। অতঃপর তিনি সেখানে গিয়ে বসলেন এবং লোকজনও তাঁকে ঘিরে বসলেন, তারা দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিতিগণকে মৃত্যুর সময় এবং দাফনের পরে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে বলছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি একদা দাফনের সময় ক্ববরের নিকট ছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের জান্নাত বা জাহান্নামের ঠিকানা লিখে রাখা হয়েছে…’।[24] কিন্তু সেদিন তিনি খত্বীব হিসাবে দাঁড়ান নি– যেমনটি কিছু কিছু মানুষ করে থাকে। বরং তিনি তাদের সাথে বসে বসে কথা বলছিলেন। আর এমনটি তিনি নিয়মিত করেন নি।
অতএব, যদি ক্ববর স্থানে কেউ বসে এবং তার চারপাশে মানুষেরা বসে অপেক্ষা করে আর সে অনুরূপ কথা বলে, তাহলে কোন সমস্যা নেই এবং এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তবে যদি দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়, তাহলে তা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
প্রশ্ন ৩৫: ক্ববরস্থানে প্রবেশের সময় ডান পা আগে এবং বের হওয়ার সময় বাম পা আগে রাখার হুকুম কি?
উত্তরঃ এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর কোনো হাদীছ নেই। সুতরাং মানুষ স্বাভাবিকভাবে যে পা আগে পড়ে, সেই পা দিয়ে প্রবেশ করবে। স্বাভাবিক চলার গতিতে ডান পা আগে পড়লে ডান পা দিয়ে ঢুকবে, আর বাম পা আগে পড়লে বাম পা দিয়ে ঢুকবে। হাদীছ থেকে কোনো দলীল স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত এই আমল চলবে।
0 Comments