ফরয নামাযের সালাম শেষে প্রথমে ১ বার আল্লাহু আকবার, না ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ?



ফরয নামাযের সালাম শেষে প্রথমে ১ বার আল্লাহু আকবার, না ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ?
১-বিষয়টি অবতারণার কারণঃ
আমরা জানি, আমাদের সমাজে নামায শিক্ষার সময় সাধারণতঃ এই শিক্ষা নেওয়া হয় বা দেওয়া হয় যে, ফরয স্বালাতে সালাম ফিরানোর পর প্রথমে এক বার সশব্দে আল্লাহু আকবার বলতে হবে অতঃপর নিরবে তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ এবং আমাদের আহলুল হাদীস সমাজের বিভিন্ন মসজিদে মুস্বল্লীগণকে জোর শব্দে এই আমলটি করতেও দেখা যায়। এছাড়া সালাফী আলেমগণের প্রচলিত প্রসিদ্ধ বাংলা স্বালাত শিক্ষার বই-পুস্তকেও এই মাসআলা দেখা যায়। কিন্তু আশ্চর্য হলাম, যখন সউদী আরবের সমাজে মুস্বল্লীদের নামাযান্তে ১বার উচ্চ কন্ঠে আল্লাহু আকবার বলতে শুনলাম না; অথচ এখানে সালাম শেষে উচ্চ স্বরে কিছুক্ষণ যিকর ও দুআ পড়ার প্রচলন রয়েছে। আর না এখানকার বিজ্ঞ উলামাদের বই-পুস্তকে এবং ফতোয়ায় এই বিধানটি লক্ষ্য করলাম। আরো আশ্চর্য হলাম যখন প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকহের বই পুস্তকেও সালাম শেষে এক বার জোর শব্দে আল্লাহু আকবার বলতে হবে বলে কোনো বিধান অবলোকন করলাম না; বরং তারা সকলে প্রথমে ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার কথা উল্লেখ করেছেন, যা লেখার শেষ পয়েন্টে দেখা যেতে পারে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে বহু পূর্বে মনে কৌতুহল জেগেছিল। সাম্প্রতি সাধ্যানুযায়ী এ সম্বন্ধে দলীল-প্রমাণগুলির সাধারণ অধ্যয়ন করার চেষ্টা করলাম। অবশেষে যা অবগত হলাম, তা আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা ভাল মনে করছি। ওয়াল্লাহু হুআল্ মুআফ্ফিক্ ওয়াল্ মুস্তাআন। বক্ষ্যমাণ লেখাটির মূল বিষয় হল, সালাম ফিরানোর পর সর্ব প্রথম কি বলতে হবে এবং কত বার বলতে হবে?

২-যাঁরা সালাম শেষে ১ বার জোর শব্দে আল্লাহুআকবার বলতে হবে বলে মত দিয়েছেন, তাঁদের মন্তব্য ও দলীলঃ
উল্লেখ্য যে, মুতাকাদ্দেমীন (প্রাচীন) উলামাদের কেউ এমন বলেছেন বলে আমার জানা নেই। কিন্তু বর্তমান যুগের বাংলা ও ঊর্দুভাষী আহলেহাদীস উলামা ও লেখকগণের নামায শিক্ষার বইতে উপরোক্ত মত পাওয়া যায়। আমরা প্রথমে তাদের লেখা বই থেকে কিছু বিবরণ তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।

ক-‘আইনী তুহ্ফা সলাতে মুস্তফা’র সম্মানিত লেখক বলেনঃ  ‘আল্লাহর রসূল সল্লাল্লা-হু আলাইহি অসাল্লাম ফরয নামাযের সালাম ফিরেই আল্লাহ আকবার জোরে বলতেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি ঐ তাকবীর শুনে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এর নামায শেষ হওয়া বুঝতে পারতাম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮৮ পৃঃ)’। [আইনী তুহ্ফা সলাতে মুস্তফা, অধ্যাপক হাফিয শাইখ আইনুলবারী, ১ম খন্ড পৃঃ ১৫০]

খ-‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ এর শ্রদ্ধেয় লেখক বলেনঃ ‘অতঃপর একবার সরবে ‘আল্লাহু আকবার’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯৫৯; বুখারী ফতহ সহ হা/৮৪১-৮৪২) এবং তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ ও একবার ‘আল্লা-হুম্মা আন্ তাস সালা-মু অ-মিন্কাস সালা-মু, তাবা-রাকতা য়া-যাল জালা-লে অল ইকরা-ম’ বলে (মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬১) ডাইনে অথবা বামে কিংবা সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪৪-৪৬)।’ [ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব, পৃঃ ১৩২]

গ-‘নামাযের মাসায়েল’ এর মুহতারাম লেখক বলেনঃ ‘মাসআলা-২৬০- ফরজ নামাজ থেকে সালাম ফিরানোর পর উচ্চস্বরে একবার ‘আল্লাহু আকবর’ এবং নিম্নস্বরে তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ অতঃপর ‘আল্লাহুম্মা আন্ তাসসালাম ওয়া মিনকাস্ সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল্ ইকরাম’ বলা সুন্নাত। হযরত আব্দুল্লা ইবনে আব্বাস (রজিঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফরজ নামাজ শেষ হওয়ার আন্দাজ করতাম তাকবীরের আওয়াজ দ্বারা। বুখারী, মুসলিম। [নামাযের মাসায়েল (বাংলা অনুদিত), মুহাম্মদ ইকবাল ক্বীলানী, পৃঃ ৭০]

দেখা যাচ্ছে, উপরোক্ত লেখকগণ সালাম শেষে প্রথমে এক বার আল্লাহু আকবার বলার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন এবং তা জোর শব্দে বলতে বলেছেন। তার পর ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ। প্রথমে এক বার আল্লাহু আকবার বলার প্রমাণ স্বরূপ তারা সকলে যেই দলীলটি পেশ করেছেন বা হাওয়ালা দিয়েছেন, সেটি হল ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর এই হাদীস।
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: “كنتُ أعرفُ انقضاءَ صلاةِ النبي صلى الله عليه وسلم بالتكبير” رواه البخاري في كتاب الأذان رقم 842
“ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের শেষ হওয়া জানতে পারতাম তাকবীরের মাধ্যমে।” [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং (৮৪২) মুসলিম, মাসাজিদ অধ্যায়, নং (১৩১৬) ]

অন্য সূত্রে বর্ণনাটি বহু বচনে এই ভাবে উল্লেখ হয়েছে, “আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায শেষ হওয়া জানতে পারতাম না কিন্তু তাকবীরের মাধ্যমে”। [ফাতহুলবারী ২/৪২১]

৩-ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস “আমি তাকবীরের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের শেষ হওয়া জানতে পারতাম।” এর পর্যালোচনাঃ

পর্যালোচনা নং (১) 
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর এই বর্ণনা একটি শারঈ মূল বিধানের বিপরীতঃ

এ কথা দলীল ও উম্মতের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত যে, নামায শেষ হয় বা সম্পন্ন হয় সালামের মাধ্যমে কিন্তু ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর এই বর্ণনানুযায়ী তিনি নামায শেষ হওয়া জানতে পারতেন তাকবীরের মাধ্যমে, যা একাধিক দলীল, ইজমায়ে উম্মত ও স্বালাতে সালাম ফিরানোর মূল নিয়মের বিপরীত। এই কারণে সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহ) বলেনঃ “এটা ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন বলে মতভেদ রয়েছে। আয়ায বলেনঃ বাহ্যত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তিনি (ইবনে আব্বাস) জামাআতে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ তিনি ছোট ছিলেন, যে কারণে হয়তো তিনি বরাবর জামাআতে উপস্থিত হতেন না। আর জামাআতে হাজির হওয়া তার উপর জরূরীও ছিল না। তাই তিনি নামাযের শেষ হওয়াটা উপরোক্ত তাকবীরের মাধ্যমে বুঝতে পারতেন।

(আয়ায) ব্যতীত অন্য বিদ্বান বলেনঃ “হতে পারে তিনি নামাযের লাইনগুলির শেষ দিকে উপস্থিত ছিলেন, তাই তিনি সালামের মাধ্যমে নামায শেষ হওয়াটা বুঝতে পারেন নি; বরং তাকবীরের মাধ্যমে বুঝতে পারেন”। [ফাতহুল বারী,২/৪২১]

তাঁদের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ না করার কারণ হচ্ছে, একাধিক হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবীরের মাধ্যমে নামায শুরু করতেন এবং সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করতেন। [দেখুন, তিরমিযী নং (২৩৮) ইবনু মাজাহ নং (২৭৬) বায়হাক্বী নং (৩৭৮৫) সহীহ সুনান আবু দাঊদ নং (৬১৯) সহীহ সুনান ইবনু মাজাহ নং (২২২)

যাই হোক হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করা সম্ভব নয়, কারণ নামায শেষ হয় সালামের মাধ্যমে আর তিনি বলছেনঃ “আমি বুঝতে পারতাম তাকবীরের মাধ্যমে।” তাই ইসলামী বিদ্বানগণ তার কথার অন্য ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর এমন হলে, সালামের পর প্রথমে এক বার তাকবীর দেওয়া সাব্যস্ত হয় না।

পর্যালোচনা নং (২) 
হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ দ্বারাও ১বার আল্লাহু আকবার বলা বুঝায় না।

হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ ও এ কথার পক্ষে নয় যে, সালামের পর সর্বপ্রথম ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে এবং তা একবার বলতে হবে। আমি আরও একবার হাদীসের হুবহু অর্থ তুলে ধরলাম। “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের শেষ হওয়া জানতে পারতাম তাকবীরের মাধ্যমে।” [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং (৮৪২) মুসলিম, মাসাজিদ অধ্যায়, নং (১৩১৬)

হাদীসটির বাহ্যিক অর্থে কি এটা রয়েছে যে, সালামের পর প্রথমে একবার সশব্দে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে? তাই সালামের পর এক বার সশব্দে ‘আল্লাহু আকবার’ বলার বিধান যারা এই হাদীসের আলোকে দিয়েছেন, তারা কোন্ শব্দ থেকে তা গ্রহণ করেছেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ। হ্যাঁ, তবে এটা অনুমান করা যায় যে, নামায শেষে তাকবীর রয়েছে। কিন্তু সেটা সালামের পর প্রথম শব্দ এবং তা একবার-এটা কখনও বুঝা যায় না।

পর্যালোচনা নং (৩) 
উলামাগণ হাদীসটি থেকে যা ইস্তিদলাল করেছেন বা বুঝেছেন।

সিংহভাগ মুহাদ্দিস ও উলামা হাদীসটি দ্বারা যা দলীল দিয়েছেন বা যা ইস্তিদলাল করেছেন তা হল, সালামের পর উচ্চস্বরে যিকর করা বৈধ; সালামের পর প্রথমে একবার তাকবীর দিতে হবে তা নয়। ইমাম বুখারী (রাহেঃ) আলোচ্য ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর হাদীসের ঠিক পূর্বে স্বয়ং ইবনে আব্বাসের বর্ণনায় আর এক হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকরের বর্ণনা এসেছে। যা দ্বারাও অনুমান করা যায় যে, হাদীসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে সশব্দে যিকর করার প্রামাণিকতা। তিনি (রাযিঃ) বলেনঃ “ যিকরের মাধ্যমে আওয়াজ উঁচু করা-যখন লোকেরা ফরয নামায শেষ করতেন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ছিল।” ইবনে আব্বাস বলেনঃ আমি তাদের নামায শেষ হওয়া জানতে পারতাম, যখন তা শুনতে পেতাম”। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৮৪১]

 ইমাম নবভী বলেনঃ “এটা কতিপয় সালাফের মতের পক্ষে দলীল, যারা বলেছেনঃ ফরয নামায শেষে উচ্চস্বরে তাকবীর ও যিকর করা মুস্তাহাব। মুতাআখ্খেরীন (পরবর্তী যুগের আলেমগণ) এর মধ্যে ইবনু হাযম মুস্তাহাব বলেছেন। ইবনু বাত্তাল সহ অন্যরা নকল করেছেন যে, অনুসৃত আসহাবে মাযহাব এবং অন্যরা ঐক্যমতানুযায়ী উচ্চস্বরে তাকবীর ও যিকর মুস্তাহাব মনে করেন না”। [শারহু মুসলিম,৩/৮৬]

শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায (রহ) ইবনে আব্বাস (রাযি) এর এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ “ এই সহীহ হাদীসটি এবং এই অর্থের ইবনুয যুবাইর এবং মুগীরাহ বিন শু’বা সহ অন্যান্য হাদীস প্রমাণ করে যে, ফরয নামায শেষে এমন ভাবে উচ্চস্বরে যিকর করা বৈধ, যেন মসজিদের দরজার নিকট এবং মসজিদের আসেপাশে অবস্থানরত লোকেরা নামায শেষ হওয়া জানতে পারে”। [মাজমূউ ফাতাওয়া, ইবনু বায,১১/২০৬]

পর্যালোচনা নং (৪) 
আলোচ্য হাদীসে তাকবীর অর্থ আল্লাহু আকবার নয়; বরং এর অর্থ যিকর।“আমি তাকবীরের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায শেষ হওয়া জানতে পারতাম।” অর্থাৎ যিকরের মাধ্যমে।

উপরোক্ত অনুচ্ছেদে ইমাম বুখারী ও মুসলিম স্বয়ং ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে একটি অন্য আসার বর্ণনা করেছেন, যা সেই তাকবীর শোনার ব্যখ্যা দেয়। ইবনে আব্বাস (রাযি) বলেনঃ “আমি এ থেকে তাদের শেষ করা জানতে পারতাম, যখন তা শুনতাম”। [বুখারী, নং ৮৪১, মুসলিম নং ১২২]

উপরোক্ত বাক্যের ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার বলেনঃ “ অর্থ হচ্ছে, আমি যিকর শোনার মাধ্যমে তাদের (নামায) শেষ হওয়া জানতে পারতাম”। [ফাতহুল বারী,২/৪২১]

কিরমানী বলেনঃ (তাকবীরের মাধ্যমে) অর্থাৎ আল্লাহর যিকরের মাধ্যমে। এ বক্তব্য আয়নী উমদাতুল ক্বারীতে উল্লেখ করেছেন। [৬/১২৬]

তাই ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর উপরোল্লেখিত হাদীসে তাঁর উক্তি “আমি তাকবীরের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায শেষ হওয়া জানতে পারতাম” অর্থ তাদের যিকর শুনে বুঝতে পারতাম যে, তাদের নামায সমাপ্ত হয়েছে। তবে তিনি এখানে যিকরকে যিকর না বলে তাকবীর বলেছেন। এমন বলাটা অসঙ্গত নয়; কারণ আরবী বালাগাত তথা অলংকার শাস্ত্রে এর নজীর রয়েছে। এমন করাকে বলা হয়, জুয বলে কুল মুরাদ নেওয়া। অর্থাৎ কোনো কিছুর অংশ উল্লেখ করে তার সম্পূর্ণটাই উদ্দেশ্য করা। আর এর পিছনে কারণ হচ্ছে, যেহেতু সেই সব যিকরেরর মধ্যে তাকবীরও রয়েছে তাই হয়তো তিনি তাকবীর বলে যিকরকেই বুঝাতে চেয়েছেন। যেমনটি ইবনে হাজার (রহ) ব্যাখ্যায় উল্লেখ হয়েছে।

হয়তো অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, এমন অর্থ নেওয়া হাদীসের অপব্যাখ্যা নয় কি? আমি বলবো না, এটা অপব্যাখ্যা নয়। কারণ অপব্যাখ্যা তখন হত, যখন হাদীসটির শব্দকে নিজ অর্থে নেওয়া সম্ভব হত। এখানে হাদীসটিকে আসল অর্থে নেয়া অসম্ভব। কারণ; নামায শেষ হয় ঐক্যমতানুসারে সালামের মাধ্যমে কিন্তু তিনি (রাযিঃ) বলছেনঃ আমি জানতে পারতাম তাকবীরের মাধ্যমে। তাই উপরোক্ত ব্যাখ্যা আসলে কোনো অপব্যাখ্যা নয়; বরং দলীলের আলোকে সঠিক ব্যাখ্যা। এমন হলে এটা প্রমাণিত হয় না যে, সালামের পর প্রথমে একবার তকবীর দিতে হবে। কারণ এই তকবীরের অর্থ আল্লাহু আকবার বলা নয় বরং সাধারণ যিকর।

পর্যালোচনা নং (৫) 
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর এই বর্ণনা অস্পষ্ট, অন্যান্য স্পষ্ট বর্ণনায় সালামের পর তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার কথা এসেছে:

আমাদের এটা স্বীকার করতে দ্বিধা হতে পারে না যে, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর বর্ণনায় যেই তকবীরের কথা এসেছে তা অস্পষ্ট তথা মুহতামিল শব্দ। অর্থাৎ সেটা কোন্ তাকবীর তা স্পষ্ট নয়। সুবহানাল্লাহ, আল্ হামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবারের তাকবীর, না সালামের পর একটি স্বতন্ত্র তাকবীর না নামাযের এক অংশ শেষ করে দ্বিতীয় অংশে যাওয়ার তাকবীর? তবে সালামের পর তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার বর্ণনাটি স্পষ্ট। ফিকহী মুলনীতিতে সাব্যস্ত যে, “দুটি দলীলের মধ্যে যদি একটি অপরটির বিপরীত হয় আর একটি অস্পষ্ট হয় কিংবা তাতে একাধিক অর্থের সম্ভাবনা থাকে আর অন্যটি স্পষ্ট হয় এবং তাতে একাধিক অর্থের সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে স্পষ্ট দলীল (স্বরীহ নস্স) অগ্রাধিকার পায়।” এই মূলনীতির আধারে আমরা সহজে বুঝতে সক্ষম যে, সালামের পর আল্লাহু আকবার বলার বর্ণনাটি অস্পষ্ট তথা একাধিক অর্থে সম্ভাব্য কিন্তু সালামের পর তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার দলীলটি স্পষ্ট। তাই আস্তাগফিরুল্লাহ বলাই নির্ধারিত হবে। সহজ ভাবে বলা যেতে পারে, সালাম ফিরানোর পর আল্লাহু আকবার বলা অপেক্ষা আস্তাগফিরুল্লাহ বলার বর্ণনাটি বেশী স্বরীহ বা স্পষ্ট। তাছাড়া ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর আলোচ্য বর্ণনাটি ছাড়া অন্য বর্ণনায় আস্তাগফিরুল্লাহ বলার বিবরণ এসেছে। তাই আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া প্রাধান্য পাবে। নিম্নে বর্ণনাটি প্রদত্ত হলঃ
عن ثوبان قال: كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا انْصرفَ مِنْ صلاتِه استغْفَرَ ثلاثاً و قال: ” اللهمَّ أنْتَ السلامُ و منْكَ السلامُ، و تباركتَ ذا الجَلالِ والإكْرامِ”.
সাওবান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর নামায থেকে ফিরতেন, তখন তিন বার ইস্তিগফার করতেন এবং বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, ওয়া তাবারাকতা যাল্ জালালি ওযাল্ ইকরাম”। [মুসলিম, অধ্যায়ঃ মাসাজিদ ও নামাযের স্থান, নং (৫৯১) আবু দাঊদ, স্বালাত অধ্যায়, নং (১৫১৩), তিরমিযী, স্বালাত অধ্যায়, নং (৩০০), ইবনে মাজাহ, নং (৯২৮)]

ইমাম নবভী বলেনঃ “যখন তিনি তাঁর নামায থেকে ফিরতেন…।” কথাটির অর্থ যখন তিনি সালাম ফিরাতেন। [শারহু মুসলিম,৩/৯২]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরানোর পরেই যে এই ইস্তিগফার করতেন, তা বিভিন্ন মুহাদ্দেসীনদের অনুচ্ছেদ দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়। উক্ত বর্ণনাটির জন্য ইমাম আবু দাউদের অনুচ্ছেদ শিরোনাম হচ্ছে, সালাম ফিরানোর পর মানুষ কি বলবে? ইমাম তিরমিযীর অনুচ্ছেদ শিরোনাম হচ্ছে, নামাযে সালামের পর যা বলবে। ইমাম ইবনু মাজার অনুচ্ছেদটি হচ্ছে, সালামের পর যা বলতে হয়। অতঃপর তাঁরা সকলে উপরোক্ত সাওবান (রাযিঃ) এর বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, যা দ্বারা মুহাদ্দিসগণের ইস্তিদলাল বুঝা যায় যে, সালামের পর প্রথমে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে হবে; একবার আল্লাহু আকবার নয়।

পর্যালোচনা নং (৬) 
যদি হাদীসের বাহ্যিক শব্দ তাকবীর এর অর্থ আল্লাহু আকবার গ্রহণ করা হয়, তাহলে সেই তাকবীর কি একটি স্বতন্ত্র ভিন্ন তকবীর না সালাম শেষে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার এর তকবীর?

উপরে বর্ণিত প্রমাণ ও সালফে সালেহীনদের ব্যাখ্যার আলোকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, সালামের পর একবার আল্লাহু আকবার নয়; বরং তিন বার আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে হবে। কিন্তু কেউ যদি ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর বর্ণনার বাহ্যিক শব্দের ভিত্তিতে তার উপর আমল করতে চায়, তাহলে সে সালাম ফিরানোর পর তাকবীরের মাধ্যমে যিকর শুরু করতে পারে কিন্তু তা হবে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবারের তাকবীর, যা ৩৩ বার কিংবা অন্য বর্ণনানুযায়ী ১০ বার। একটি মাত্র তকবীর নয়। সালাম শেষে একটি স্বতন্ত্র তকবীরের কথা ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর হাদীসের শব্দ দ্বারা বুঝা যায় আর না আবার সেই হাদীসের ব্যাখ্যায় কোনো প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকারীও তা বলেন নি। এমনকি সালফে সালেহীনের কেউই একটি ভিন্ন তাকবীরের কথা বলেন নি। হ্যাঁ, তবে উক্ত হাদীস “তাকবীরের মাধ্যমে নামায শেষ হওয়া জানতে পারতাম” এর ব্যাখ্যায় এমন কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা দ্বারা অনুমান করা যেতে পারে যে, সালাফদের কেউ কেউ তাকবীরের মাধ্যমে যিকর শুরু করতেন। আর তা হত, সুবহানাল্লাহ, আল্ হামদুলিল্লাহর তাকবীর; কোনো স্বতন্ত্র তাকবীর নয়।

“বিত্ তাকবীর” (তাকবীরের মাধ্যমে) এ কথার ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার রাহ. উল্লেখ করেছেনঃ “মনে হয়, তারা নামায শেষে সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ এর পূর্বে আল্লাহুআকবার দ্বারা শুরু করতেন”। [ফাতহুলবারী,২/৪২১]

সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদকে জিজ্ঞাসা করা হয়, উক্ত তাকবীর বলতে কি বুঝায়? [ফতোয়া নম্বর ১৮১৪৭ এর চতুর্থ প্রশ্ন] তাঁরা উত্তরে বলেনঃ

সেই হাদীসে উল্লেখিত তাকবীরের অর্থ হচ্ছে, নামাযের পশ্চাদে ৩৩ বার (সুবহানাল্লাহ, আল্ হামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার) বলা। এটা এ সম্বন্ধীয় হাদীস সমূহের মধ্যে সমন্বয় স্বরূপ। [ফাতাওয়াল লাজনা আদ দায়িমাহ,৫/৪২০, মাকতাবা শামেলার নাম্বার অনুযায়ী]

শাইখ ইবনু উসায়মীন রহ. আলোচ্য হাদীসে “বিত্ তাকবীর” (তাকবীরের মাধ্যমে) বলতে কি বুঝায়? এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ অর্থাৎ সেই তাকবীরের মাধ্যমে যা যিকরের সাথে হয়; কারণ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার যিকরের অন্তর্ভুক্ত। [ফাতাওয়া নুরুন আলাদ্ দারব,৮/২, মাকতাবা শামেলার নাম্বার অনুযায়ী]

যেহেতু নামাযের পশ্চাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীরের আদেশ দিয়েছেন, তাই নামায শেষ হলেই তা করা বৈধ। অন্য দিকে কিছু এমন বর্ণনাও পাওয়া যায়, যাতে তাসবীহ এর পূর্বে তাকবীরের উল্লেখ এসেছে। তাই তাকবীর দ্বারা যিকর শুরু করা বৈধ কিন্তু উত্তম নয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তুসাব্বিহূনা ওয়া তাহমাদূনা ওয়া তুকাব্বিরূনা খালফা কুল্লি স্বালাতিন সালাসাঁও ও সালাসীনা”। অর্থঃ “তোমরা প্রত্যেক নামায শেষে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলবে”। [বুখারী, নং ৮৪৩]

ইবনে হাজার (রহ) বলেনঃ “বেশীরভাগ হাদীসে আলহামদুলিল্লাহ এর পূর্বে সুবহানাল্লাহ এসেছে এবং আল্লাহু আকবার পরে এসেছে। তবে ইবনু আজলান এর বর্ণনায় বিশেষ করে আল হামদুলিল্লাহের পূর্বে আল্লাহু আকবার এসেছে এবং তাতে আবু সালিহ এর উক্তি রয়েছে, তুমি বলবেঃ “আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ এবং আল হামদুলিল্লাহ”। অনুরূপ উম্মুল হাকাম থেকে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে (২৯৮৭)। এবং তাতে আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, “তোমরা তাকবীর, হামদ এবং তাসবীহ পাঠ করবে”। ইবনে উমরের হাদীসেও অনুরূপ এসেছে।

তিনি আরোও বলেনঃ এই মতভেদ প্রমাণ করে যে, উক্ত যিকরে ধারাবাহিকতা জরুরী নয়। আর এই মতের সমর্থনে রয়েছে বাকিয়াতুস্ স্বালিহাতের হাদীস “যার দ্বারাই শুরু কর না কেন তাতে কোনো ক্ষতি নেই”। [ফাতহুল বারী,২/৪২৪/কাশফুল্ লিসাম, সাফারীনী,৩/১০০]

উক্ত ব্যাখ্যা দ্বারাও বুঝা যায়, সুবহানাল্লাহ এবং আল্ হামদুলিল্লাহ এর পূর্বে আল্লাহু আকবার দ্বারা যিকর শুরু করা বৈধ। তবে উত্তম হচ্ছে প্রথমে তাসবীহ, তার পর তাহমীদ, অতঃপর তাকবীর”। [ফাতহুলবারী,২/৪২৪]

অতএব বুঝা গেল, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর হাদীসে উল্লেখিত তাকবীর কোনো স্বতন্ত্র তাকবীর নয়; বরং তা তাসবীহ ও তাহমীদের তাকবীর। তাই কেউ ফরয স্বালাতান্তে তাকবীরের মাধ্যমে যিকর করতে চাইলে তো করতে পারে কিন্তু তা একটি আলাদা একবার তাকবীর হবে না; বরং তা হবে ৩৩ বার কিংবা ১০ বার, যা যিকরের অন্তর্ভুক্ত।

• বিগত ও বর্তমান যুগের ১০ জন বিশিষ্ট ইসলামী লেখক, গবেষক ও উলামার উক্তি, যারা নামাযান্তে ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পক্ষে মন্তব্য ও ফতোয়া দিয়েছেনঃ

১-ইমাম নওয়াভী রহ. (মৃতঃ ৬৭৬ হিঃ) বলেনঃ “কাযী আবুত ত্বাইয়েব বলেছেনঃ এই সকল যিকরের মধ্যে ইস্তেগফার দিয়ে শুরু করা মুস্তাহাব। অতঃপর তিনি সাওবান (রাযিঃ) এর হাদীস উল্লেখ করেন।” [কিতাবুল্ মাজমু,৩/৪৬৮]

২-ইবনু তায়মিয়াহ রহ. ( মৃতঃ ৭২৮ হিঃ ) বলেনঃ “সহীতে উল্লেখ হয়েছে, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুখ ফিরে বসার পূর্বে তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তেন এবং বলতেন আল্লাহুম্মা আনতাস্ সালামু ওয়া মিনকাস্ সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।” [মাজমুউ ফাতাওয়া,২২/৪৯২-৪৯৩]

৩-ইবনুল ক্বায়্যিম রহ. (মৃতঃ ৭৫১ হিঃ) বলেনঃ “তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতেন। অতঃপর বলতেনঃ আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সালামু .. ..।” [যাদুল মাআদ,১/২৯৫]

৪-ইবনুন নাজ্জার রহ. (মৃতঃ ৯৭২হিঃ) বলেনঃ “অতঃপর সুন্নত হল, তিন বার ইস্তিগফার করা এবং বলা আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু ….।” [মুনতাহাল ইরাদাত,১/২২]

৫-রামলী রহ. (মৃতঃ ১০০৪ হিঃ) বলেনঃ “তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায শেষ করতেন, তিনবার ইস্তিগফার করতেন।” [নিহাইয়াতুল মুহতাজ,১/৫২৯]

৬-বহূতী রহ. (মৃতঃ ১০৫১হিঃ) বলেনঃ “অতঃপর তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলবে। (তারপর) আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ….।” [কাশ্শাফুল কান্না,১/৪৩৪]

৭-শাইখ ইবনু বায রহ. বলেনঃ ‘অতঃপর আমি আমার ভাইসকলকে এই উপদেশ দিতে আনন্দ বোধ করছি যে, সুন্নত হলঃ মুসলিম ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয স্বালাতান্তে ইমাম হোক কিংবা মুক্তাদী হোক কিংবা একাকী নামায আদায়কারী হোক- সে যেন বলেঃ আস্তাগফিরুল্লাহ তিন বার। আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু ওয়া মিনকাস্ সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম। অতঃপর ইমাম হলে যেন লোকদের দিকে মুখ করে ফিরে বসে।’ [মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনু বায,১১/১৮৮]

৮-শাইখ বকর আবু যাইদ (রহঃ) তাঁর তাসহীহুদ্ দুআ নামক গবেষণাধর্মী গ্রন্থে স্বালাত শেষে বৈধ যিকর সমূহ শিরোনামে যিকরগুলির ধারাবাহিকতা উল্লেখ করার সময় প্রথম নম্বরে বলেনঃ “ইস্তিগফার করা, আর এর প্রমাণিত নিয়ম হচ্ছে “আস্তাগফিরুল্লাহ” তিন বার।” [তাসহীহুদ দুয়া,১/৪৩০]

৯-শাইখ স্বালেহ বিন ফাউযান (হাফেযাহুল্লাহ) বলেনঃ “যখন সালাম শেষ হবে বলবেঃ আস্তাগফিরুল্লাহ তিন বার। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আন্তাস সালাম ওয়া মিনকাস সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল্ জালালি ওয়াল ইকরাম। অতঃপর প্রমাণিত যিকর করবে।” [আল মুলাখ্খাস আল ফিকহী,১/৭০]

-সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদ তাদের ফতোয়ায় বলেনঃ “ফরয স্বালাতের সালাম শেষে মুস্বল্লী তিন বার ইস্তিগফার করবে এবং বলবে আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম। তারপর বলবেঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্ দাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল‌ মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুও আতা ইল্লা বিল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু..শেষ পর্যন্ত। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া লিমা আ’ত্বাইতা ওয়ালা মু’ত্বিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ। অতঃপর সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহুআকবার ৩৩ বার। অতঃপর ১০০ পূরণে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু …”।[ফাতাওয়াল লাজনা আদ দাইমাহ,৭১০২-১০৩]

আশা করি, সম্মানিত পাঠকদের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ওয়া স্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা তাসলীমান মাযীদা।

লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব মাদানী, 
লিসান্স, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
Email: a.raquib1977@yahoo.com

Post a Comment

0 Comments