وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى قَالُوْا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ
إِنَّ يَأْجُوْجَ وَمَأْجُوْجَ مُفْسِدُوْنَ فِي الأَرْضِ (الكهف : 94)
قَوْلُ اللهِ تَعَالَى وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنْ ذِي الْقَرْنَيْنِ قُلْ
سَأَتْلُوْ عَلَيْكُمْ مِّنْهُ ذِكْرًا إِنَّا مَكَّنَّا لَه” فِي الأَرْضِ
وَاٰتَيْنَاهُ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ سَبَبًا فَاتَّبَعَ سَبَبًا (الكهف :
83.84) إِلَى قَوْلِهِ ائْتُوْنِيْ زُبَرَ الْحَدِيْدِ (الكهف : 96)
وَاحِدُهَا زُبْرَةٌ وَهِيَ الْقِطَعُ حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ
الصَّدَفَيْنِ يُقَالُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ الْجَبَلَيْنِ وَ السُّدَّيْنِ
الْجَبَلَيْنِ خَرْجًا أَجْرًا قَالَ انْفُخُوْا حَتّٰى إِذَا جَعَلَهُ
نَارًا قَالَ اٰتُوْنِيْ أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا (الكهف : 96) أَصْبُبْ
عَلَيْهِ رَصَاصًا وَيُقَالُ الْحَدِيْدُ وَيُقَالُ الصُّفْرُ وَقَالَ
ابْنُ عَبَّاسٍ النُّحَاسُ فَمَا اسْطَاعُوْا أَنْ يَّظْهَرُوْهُ (الكهف :
97) يَعْلُوْهُ اسْتَطَاعَ اسْتَفْعَلَ مِنْ أَطَعْتُ لَهُ فَلِذَلِكَ
فُتِحَ أَسْطَاعَ يَسْطِيْعُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ اسْتَطَاعَ يَسْتَطِيْعُ
وَمَا اسْتَطَاعُوْا لَهُ نَقْبًا (الكهف : 97) قَالَ هٰذَا رَحْمَةٌ مِّنْ
رَّبِّيْ فَإِذَا جَآءَ وَعْدُ رَبِّيْ جَعَلَهُ دَكًّا (الكهف : 98)
أَلْزَقَهُ بِالأَرْضِ وَنَاقَةٌ دَكَّاءُ لَا سَنَامَ لَهَا
وَالدَّكْدَاكُ مِنْ الأَرْضِ مِثْلُهُ حَتَّى صَلُبَ وَتَلَبَّدَ وَكَانَ
وَعْدُ رَبِّيْ حَقًّا وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَّمُوْجُ فِيْ
بَعْضٍ (الكهف : 98-99) حَتّٰىٓ إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوْجُ وَمَأْجُوْجُ
وَهُمْ مِّنْ كُلِّ حَدَبٍ يَّنْسِلُوْنَ (الأنبياء : 96) قَالَ قَتَادَةُ
حَدَبٌ أَكَمَةٌ قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ رَأَيْتُ السَّدَّ مِثْلَ
الْبُرْدِ الْمُحَبَّرِ قَالَ رَأَيْتَهُ
মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ইয়া’জূজ মা’জূজ পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। (কাহফঃ ৯৪)
অধ্যায় : মহান আল্লাহর বাণীঃ (হে নাবী) তারা আপনাকে যুল-কারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে. . .।
আয়াতে سَبَبًا অর্থ চলাচলের পথ ও রাস্তা। তোমরা আমার নিকট
লোহার খন্ড নিয়ে আস- (কাহফ ৮৩-৯৬)। এখানে زُبَرَ শব্দটি বহুবচন। একবচনে
زُبْرَةٌ অর্থ খন্ড। অবশেষে মাঝের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার স্তূপ
দু’পর্বতের সমান হল- (কাহফ ৯৬)। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, এখন তাতে ফুঁক
দিতে থাক। এ আয়াতে الصَّدَفَيْنِ শব্দের অর্থ ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-এর বর্ণনা
অনুযায়ী দু’টি পর্বতকে বুঝানো হয়েছে। আর السُّدَّيْنِ এর অর্থ দু’টি
পাহাড়। خَرْجًا অর্থ পারিশ্রমিক। যুল-কারনাইন বলল, তোমরা হাপরে ফুঁক দিতে
থাক। যখন তা আগুনের মত গরম হল, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে আস,
আমি তা এর উপর ঢেলে দেই- (কাহফ ৯৬)। -قِطْرٌ অর্থ সীসা। আবার লৌহ গলিত
পদার্থকেও বলা হয় এবং তামাকেও বলা হয়। আর ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-এর অর্থ
তাম্রগলিত পদার্থ বলেছেন। (আল্লাহর বাণী) অতঃপর তারা (ইয়াজুজ ও মাজুজ) এ
প্রাচীর অতিক্রম করতে পারল না- (কাহফ ৯৭)। অর্থাৎ তারা এর উপরে উঠতে সক্ষম
হল না। اسْتَطَاعَ শব্দটি أَطَعْتُ لَهُ নিকট হতে باب استفعال আনা হয়েছে।
একে أَسْطَاعَ I يَسْطِيْعُ যবরসহ পড়া হয়ে থাকে। আর কেউ কেউ একে
اسْتَطَاعَ يَسْتَطِيْعُ রূপে পড়েন। (আল্লাহর বাণী) তারা তা ছিদ্রও করতে
পারল না। তিনি বললেন, এটা আমার রবের অনুগ্রহ। যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতি
পূর্ণ হবে তখন তিনি এটিকে পূর্ণ বিচূর্ণ করে দিবেন- (কাহফ ৯৭-৯৮)। دَكَّاءُ
অর্থ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিবেন। وَنَاقَةٌ دَكَّاءُ বলে যে উটের কুঁজ
নেই। الدَّكْدَاكُ مِنْ الأَرْضِ যমীনের সেই সমতল উপরিভাগকে বলা হয় যা
শুকিয়ে যায় এবং উঁচু নিচু না থাকে। (আল্লাহর বাণী) আর আমার রবের
প্রতিশ্রুতি সত্য, সে দিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দিব, এ অবস্থায় যে, একদল অপর
দলের উপর তরঙ্গের মত পতিত হবে- (কাহফ ৯৯)। (আল্লাহর বাণী) এমন কি যখন
ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্ত করা হবে এবং তারা প্রতি উচ্চ ভূমি হতে ছুটে আসবে-
(আম্বিয়া ৯৬)। ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, -حَدَبٌ অতি টিলা। এক সহাবী নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমি প্রাচীরটিকে কারুকার্য খচিত
চাদরের মত দেখেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তা
ঠিকই দেখেছ।
যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং
বলতে লাগলেন, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের
কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ
পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলিল অগ্রভাগকে তার
সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের
পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব?
তিনি বললেন, হাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে। [1]
মুহাম্মাদ ইবন বাশশার প্রমুখ (রহঃ) ......... আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত। (যুল কারনায়ন নির্মিত) প্রাচীর সম্পর্কে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এটিকে এরা (ইয়াজুজ মাজূজেরা)
প্রতি দিনেই খোঁড়ে। শেষে যখন বিদীর্ণ করে ফেলার উপক্রম হয় তখন তাদের উপর
দায়িত্বশীল ব্যক্তিটি বলেঃ তোমরা ফিরে চল। আগামীকাল এসে আমরা এটা বিদীর্ণ
করব।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এর মধ্যে
এই প্রাচীরটিকে আল্লাহ্ তা’আলা আগে যা ছিল তার চেয়েও উত্তমরূপে
পুনর্নির্মিত করে দেন। অবশেষে যখন নির্ধারিত দিন এসে পৌঁছবে এবং আল্লাহ্
তা’আলা এদের মানুষের বিরুদ্ধে পাঠানোর ইচ্ছা করবেন সে সময় তাদের দায়িত্বে
নিযুক্ত নেতাটি বলবে, তোমরা ফিরে চল তোমরা আগামীকাল ইনশাআল্লাহ্ এটি
বিদীর্ণ করবে। সেই ইনশাআল্লাহর সঙ্গে তারা কথা বলবে। পরে তারা যখন ফিরে
আসবে তখন গতদিন যেভাবে ছেড়ে রেখে গিয়েছিল সেই অবস্থায়ই তারা এটি পাবে। তখন
তারা এটি বিদীর্ণ করে ফেলবে এবং মানুষের বিরুদ্ধে বেরিয়ে পড়বে। তারা সব
পানি পাণ করে ফেলবে। আর লোকজন তাদের থেকে পালিয়ে যাবে। এরপর তারা তাদের
তীরগুলো আসমানের দিকে ছুঁড়বে। এগুলো রক্ত রঞ্জিত হয়ে ফিরে আসবে। তারা
নিজেরা বর্বরতা ও অহংকারে মদমত্ত হয়ে বলবে, পৃথিবীতে যা আছে তাদের পরাজিত
করলাম এবং আকাশবাসীদের উপরও জয়লাভ করলাম। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের পিঠে
একদল কীট প্রেরণ করবেন। এতে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। কসম সেই সত্তার যাঁর
হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, এদের গোশত ভক্ষণ করে পৃথিবীর জীবজন্তুগুলো মোটা
সতেজ ও চর্বিময় হয়ে উঠবে। -
অন্য বর্ননা হতে,
তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম এমন এক জনগোষ্ঠীর নিকট আসবেন,
যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালের চক্রান্ত ও ফিতনা থেকে মুক্ত রেখেছেন।
তিনি তাদের চেহারায় হাত বোলাবেন [বিপদমুক্ত করবেন] এবং জান্নাতে তাদের
মর্যাদাসমূহ সম্পর্কে তাদেরকে জানাবেন। এসব কাজে তিনি ব্যস্ত থাকবেন এমন
সময় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট অহি পাঠাবেন যে, ‘‘আমি আমার কিছু বান্দার
আবির্ভাব ঘটিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে কারো লড়ার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার
প্রিয় বান্দাদের নিয়ে ‘ত্বূর’ পর্বতে আশ্রয় নাও।’’ আল্লাহ তা‘আলা
য়্যা’জুজ-মা’জুজ জাতিকে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চস্থান থেকে দ্রুত বেগে
ছুটে যাবে। তাদের প্রথম দলটি ত্বাবারী হ্রদ পার হবার সময় তার সম্পূর্ণ পানি
এমনভাবে পান করে ফেলবে যে, তাদের সর্বশেষ দলটি সেখান দিয়ে পার হবার সময়
বলবে, এখানে এক সময় পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীরা
অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে একটি গরুর মাথা,
বর্তমানে তোমাদের একশ’টি স্বর্ণমুদ্রা অপেক্ষা অধিক উত্তম হবে। সুতরাং
আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে দো‘আ করবেন।
ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের [য়্যা’জূজ-মা’জূজ জাতির] ঘাড়সমূহে এক প্রকার কীট
সৃষ্টি করে দেবেন। যার শিকারে পরিণত হয়ে তারা এক সঙ্গে সবাই মারা যাবে।
তারপর আল্লাহ তা'আলার নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীগণ নিচে নেমে
আসবেন। তারপর [এমন অবস্থা ঘটবে যে,] সেই অঞ্চল তাদের মৃতদেহ ও দুর্গন্ধে
ভরে থাকবে; এক বিঘত জায়গাও তা থেকে খালি থাকবে না। সুতরাং ঈসা আলাইহিস
সালাম ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর কাছে দো‘আ করবেন। ফলে তিনি বুখতী উটের ঘাড়ের
ন্যায় বৃহদকায় এক প্রকার পাখি পাঠাবেন। তারা উক্ত লাশগুলিকে তুলে নিয়ে গিয়ে
আল্লাহ যেখানে চাইবেন সেখানে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপ করবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা
এমন প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যে, কোন ঘর ও শিবির বাদ পড়বে না। সুতরাং
সমস্ত জমিন ধুয়ে মসৃণ পাথরের ন্যায় অথবা স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে
যাবে। তারপর জমিনকে আদেশ করা হবে যে, ‘তুমি আপন ফল-মূল যথারীতি উৎপন্ন কর ও
নিজ বরকত পুনরায় ফিরিয়ে আন।’ সুতরাং [বরকতের এত ছড়াছড়ি হবে যে,] একদল লোক
একটি মাত্র ডালিম ফল ভক্ষণ করে পরিতৃপ্ত হবে এবং তার খোসার নীচে ছায়া
অবলম্বন করবে। পশুর দুধে এত প্রাচুর্য প্রদান করা হবে যে, একটি মাত্র
দুগ্ধবতী উটনী একটি সম্প্রদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি
গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। আর একটি দুগ্ধবতী ছাগী কয়েকটি পরিবারের জন্য
যথেষ্ট হবে।
তারা ঐ অবস্থায় থাকবে, এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এক প্রকার
পবিত্র বাতাস পাঠাবেন, যা তাদের বগলের নীচে দিয়ে প্রবাহিত হবে। ফলে
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জীবন হরণ করবে। তারপর স্রেফ দুর্বৃত্ত ও অসৎ
মানুষজন বেঁচে থাকবে, যারা এই ধরার বুকে গাধার ন্যায় প্রকাশ্যে লোকচক্ষুর
সামনে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। সুতরাং এদের উপরেই সংঘটিত হবে মহাপ্রলয়
[কিয়ামত]।’’ (মুসলিম)[1]
[2] ইবনু মাজাহ্ ৪০৮০, তিরমিজী
[1] (বুখার ৩২৪৬, ৩৫৯৮, ৭০৫৯, ৭১৩৫) (মুসলিম ৫২ হাঃ ২৮৮০, আহমাদ ২৭৪৮৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩১০৬)
[3] মুসলিম ২৯৩৭, তিরমিযী ২২৪০, ৪০০১, আবূ দাউদ ৪৩২১, ইবনু মাজাহ ৪০৭৫, আহমাদ ১৭১৭৭ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
0 Comments