তাহাজ্জুদ নামায পড়ার নিয়ম, সময়, রাকআত সংখ্যা ও তাহাজ্জুদ নামাযের ফজিলত। ibtv99

   
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার নিয়ম, সময়, রাকআত সংখ্যা ও তাহাজ্জুদ নামাযের ফজিলত। ibtv99
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার নিয়ম, সময়, রাকআত সংখ্যা ও তাহাজ্জুদ নামাযের ফজিলত। ibtv99

তাহাজ্জুদ নামাযঃ
তাহাজ্জুদের নামায অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ ইবাদত। তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত/নফল। বেশি ভাগ হুজুররাই বলেছেন এই টি নফল। নবী করীম (সাঃ) সর্বদা এ নামায নিয়মিত পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. কে তা নিয়মিত আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। পবিত্র কুরআনে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। যেহেতু উম্মতকে নবীর অনুসরণ করার হুকুম করা হয়েছে সে জন্যে তাহাজ্জুদের এ তাকীদ পরোক্ষভাবে গোটা উম্মতের জন্য করা হয়েছে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- "এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে থাক। এ নামায তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন [বণী ইসরাইল :৭৯]

যে ঘরে স্বামী স্ত্রী এক সাথে তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করে, সেই ঘরে কোন দিন অভাব হবে না।
যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামায আদায় করে কুরআনে তাদেরকে মুহসেন ও মুত্তাকি নামে অভিহিত করে তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং আখেরাতে চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই মুত্তাকি লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভূ তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। কারণ, নিসন্দেহে তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো। (কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাইতো)”। [সূরা যারিয়াত:১৫-১৮]
প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামায মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করার এবং সত্য পথে অবিচল থাকার জন্যে অপরিহার্য ও কার্যকর পন্থা। আল্লাহপাক বলেন- “বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্যে খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির একেবারে যথার্থ”। [সূরা মুয্যাম্মিল-৬]
এসব বান্দাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁর প্রিয় বান্দা বলেছেন এবং নেকি ও ঈমানদারির সাক্ষ্য দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। [সূরা ফুরকান:৬৩-৬৪]


 *****তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ*****
ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী। (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ)

রাসুল (সাঃ) বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়া তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে । অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব । কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। (মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)

রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন । অনুরুপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে। (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)

রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় নামায দাউদ (আঃ) এর নামায । তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতেন তৃতীয় ভাগে নামাযে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
 

*****তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্তঃ*****
তাহাজ্জুদের অর্থ হল ঘুম থেকে উঠা। কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকীদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের মসনূন সময় এই যে, এশার নামাযের পর লোকেরা ঘুমাবে। তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে। নবী (সাঃ) কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে নামায পড়তেন।
 

*****☞ তাহাজ্জুদ নামাযের সময়ঃ*****
অর্ধ রাতের পরে। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদের মুল সময় মুলত রাত ৩টা থেকে শুরু হয়ে ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত থাকে। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশা সালাতের পর দু রাকআত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েয আছে। তবে পরিপূর্ণ তাহাজ্জুতের মর্যাদা পেতে হলে, এশার নামাযের পর ঘুমিয়ে রাত ২টা বা ৩টার দিকে উঠে নামায আদায় করতে হবে।
 

*****তাহাজ্জুদ নামাযের রাকআত সংখ্যাঃ******
সর্ব নিম্ন দু রাকআত। আর সর্বোচ্চ ৮ রাকআত পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদের ৮ রাকাত নামায আদায় করার পরে, বিতর ৩রাকাত নামায পড়া। রাসুল (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামায বেশিরভাগ সময় ৮রাকাত পরতেন এবং এঁর পর বিতরের নামায পরে মোট ১১রাকাত পূর্ণ করতেন।
১। তাহাজ্জুদ নামায বিতরসহ ১৩, ১১, ৯ কিংবা ৭ রাকাত পড়া যায় (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
২। প্রথমে দু’রাকাত ছোট ছোট সুরা মিলিয়ে হালকাভাবে পড়ে আরম্ভ করবে (মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
৩। অতঃপর দু’রাকাত করে, তাহাজ্জুদের নামায সাত রাকাত পড়তে চাইলে দু’সালামে চার রাকাত পড়ে তিন রাকাত বিতর পড়বে । (বুখারী, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
 
বিঃদ্রঃ- যদি এশার নামায পরে বিতরের নামায পড়ে থাকেন, তবে তাহাজ্জুত নামায পড়ার পড়ে বিতর নামায পড়ার দরকার নেই। তখন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৮রাকাত তাহাজ্জুত নামায পরলেই হবে।
 

*****☞ তাহাজ্জুদ নামাযের আগে করণীয়ঃ*****
হুযাইফা (রাযিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন তখন মিসওয়াক করতেন এবং আমাদেরকেও মিসওয়াক করার হুকুম দেয়া হত, আমরা যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতাম, অতঃপর নবী (সাঃ) অযু করতেন (মুসলিম) । তারপর নীচের দু’আ ও তাসবীহগুলি দশবার করে পড়তেন । তারপর নামায শুরু করতেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১০৮ পৃঃ)
(১) দশবার “আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)
(২) দশবার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই)
(৩) দশবার সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী (আমি আল্লাহ প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ঘোষনা করছি)
(৪) দশবার সুব্হানাল মালিকিল কদ্দুস (আমি মহা পবিত্র মালিকের গুণগান করছি)
(৫) দশবার আসতাগফিরুলাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি)
(৬) দশবার লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই)
(৭) দশবার আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন দীক্বিদ্দুনিয়া ওয়া দীক্বি ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ (হে আল্লাহ! আমি এই জগতের এবং পরকালের সঙ্কট থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
 

*****তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়মঃ*****
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন সুরা দিয়েই এই নামায আদায় করা যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত মুখুস্ত থাকে তবে, সেগুলো দিয়ে পড়াই উত্তম। কারন রাসুল (সাঃ) সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত নামাদ আদায় করা উচিৎ।

যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলে যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায় করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই নামায আদায় করতে হবে।
আল্লাহ, আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদের পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করার তৌফিক দাণ করুন। আমিন....



◈ ━━━━━━ ⸙ ━━━━━━ ◈
 

 প্রতিদিন কমপক্ষে নিম্নের আমলগুলো করুন।

>>নিম্নের লিংক ক্লিক করে ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন<<

১/ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।

২/ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করুন। না পারলে কয়েকটি সূরা হলেও পড়ুন। 

৩/ যত বেশি সম্ভব  أَسْتَغْفِرُالله ( আস্তাগফিরুল্লা-হ) পড়ুন। দিনে কমপক্ষে ১০০ বার পড়ুন।

৪/ লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ - জিকিরটি বেশি বেশি করুন।

৫/ বেশি বেশি দুরুদ শরীফ (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পাঠ করুন।

৬/ প্রতিদিন কিছু না কিছু দান-সদকাহ করার চেষ্টা করুন। সদকায়ে জারিয়া চালু করুন।

 

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]


ইসলামিক বাংলা টিভি (Islamic Bangla Tv) - এর সঙ্গেই থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আল্লাহ্‌ সুবনাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন, ছুম্মা আমিন।
#ibtv
#ibtv99

Post a Comment

1 Comments