যে নামাজে বার বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবিহটি পড়া হয়, ওই নামাজকে সালাতুত তাসবিহ বা তাসবিহ-এর নামাজ। যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন যাদের প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহর হুকুম এবং নবীজীর সুন্নত মোতাবেক ছিল। তারা সত্যিই আল্লাহর দরবারে নিজেদের অপরাধী, গুনাহগার, জালেম মনে করতেন। গ্রহণ করতেন তারা গুনাহ মাফের কার্যকরী পন্থা। তাই তো হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ প্রতি শুক্রবার এই নামাজ আদায় করতেন। হজরত আবু জাওযা রহঃ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রতিদিন জোহরের আজানের পর জামাত শুরু হওয়ার আগে সালাতুত তাসবিহ পড়তেন।
,
সালাতুত তাছবীহ অত্যম্ত ফযীলতপূর্ণ নামায। এই নামাযে তিনশতবার তাছবীহ পাঠ করা হয় তাই সালাতুত তাছবীহ বলা হয়। হাদীসে আছে এই নামায পড়লে আল্লাহপাক আপনার আগের পাছের, পুরাতন এবং নতুন,ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত, ছোট বড়, গোপনে করা, প্রকাশ্যে করা যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিবেন। এই নামায সম্ভব হলে দৈনিক একবার, তা না হলে সপ্তাহে একবার, তা না হলে মাসে একবার, যদি তাও না হয় বছরে একবার পড়া উচিত।
,
যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে জীবনে একবার হলেও নামাযটা পড়ে নিবেন। বিখ্যাত ওলামায়ে কেরামদের মতে,বিপদ-আপদ এবং চিন্তার অবসানের জন্য সালাতুত তাছবীহের চেয়ে কার্যকরী জিনিস আর নেই।
এ নামাজের ফজিলত বর্ণনা করেছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা তিনি তাঁর চাচা হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে
বর্ণনা করে শুনান।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
একদিন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হজরত আব্বাস
ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে বললেন, ‘হে আব্বাস, হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব
না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার
সাথে দশটি সৎকাজ করব না? (অর্থাৎ দশটি উত্তম তাসবিহ শিক্ষা দেব না)
যখন আপনি তার (তাসবিহ) আমল করবেন তখন আল্লাহ তাআলা আপনার আগের, পরের,
পুরাতন, নতুন, সব প্রকার গোনাহ, ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত গোনাহ, সগিরা গোনাহ,
কবিরা গোনাহ, গুপ্ত ও প্রকাশ্য গোনাহ গোনাহ মাফ করে দেবেন।
এভাবে এভাবে মহানবী সাঃ তার আপন চাচাকে নামাজ পড়া শিখিয়ে দেন। এবং যদি প্রতিদিন একবার এ নামাজ পড়তে সক্ষম হন; তবে তা পড়তে বলেন।। আর যদি
সক্ষম না হন, তবে প্রত্যেক জুমআর দিনে একবার অথবা তাও যদি না পারেন তবে
প্রত্যেক মাসে একবার পড়তে বলেন। তাও যদি না পারেন তবে
প্রত্যেক বছর একবার পড়তে বলেন। আর যদি তাও না পারেন তবে জীবনে অন্তত
একবার হলেও পড়ার তাগিদ দেন। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
তাই আমাদের সবারই উচিত এই নামাজটি জীবনে একবার হলেও পড়া।
সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়মঃ
সালাতুত তাসবিহ চার রাকায়াত নামাজ। প্রত্যেক রাকায়াতে ৭৫ বার করে মোট চার রাকায়াতে ৩০০ বার নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে হয়। ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ অর্থঃ ‘আমি আল্লাহ তাআ’লার গুণগান কীর্তন করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআ’লার নিমিত্ত, আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো মাবুদ নাই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।’ ছালাতুত তাসবিহতে উপরোক্ত দোয়া পাঠ করার ব্যাপারে হাদিস ও ফিকাহের কিতাবগুলোর মধ্যে কিছু নিয়ম আছে।
>> প্রথমে সালাতুত তাছবীহ নামায ৪ রাকআত নফল নামাযের নিয়্যত করতে হবে।
>> প্রথম রাকাআতে যখন কেরাত পাঠ (সুরা মিলানো) সম্পন্ন করবেন; তখন
আপনি দাঁড়ানো অবস্থায় বলবেন- سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا
اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
(সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) ১৫ বার।
(সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) ১৫ বার।
>> অতঃপর রুকু করবেন এবং রুকু অবস্থায় (এ তাসবিহ) ১০ বার পাঠ করবেন।
>> তারপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন (সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় এ সাতবিহ) ১০ বার পাঠ করবেন।
>> অতঃপর সিজদায় মাথা নত করবেন এবং সিজদা অবস্থায় (এ তাসবিহ) ১০ বার পাঠ করবেন।
>> তারপর সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং (বসা অবস্থায় এ তাসবিহ) ১০ বার পাঠ করবেন।
>> অতঃপর পুনরায় সিজদা করবেন এবং সিজদায় গিয়ে ১০ বার এবং
>> পুনরায় সিজদা থেকে মাথা ওঠিয়ে ১০ বার এ তাসবিহ পাঠ করবেন।
**মাঝ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার আগেই ১০ বার পড়তে হবে । এবং শেষ বৈঠকে ১০ বার পড়ার পর আত্তাহিয়্যাতু ,দরূদ শরীফ,দোআ মাছুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে। এই নামায যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়া যায়। মাকরূহ সময় ব্যতীত দিনে-রাতে যে কোন সময় এই নামায পড়া যায়।
**এ তাসবিহ প্রত্যেক রাকাআতে ৭৫ বার করে ৪ রাকাআত নামাজের প্রতি রাকাআতেই এভাবে আদায় করবেন।
উল্লেখিত হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে
একবার হলেও তাসবিহ নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। আর পবিত্র
রমজান মাসই সাতাতুত তাসবিহ বা তাসবিহ-এর নামাজ আদায়ের উত্তম সুযোগ ও সময়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজান মাসসহ সারা বছরই তাসবিহ নামাজসহ যে কোনো নামাজ এবং ইবাদত বন্দেগি যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
◈ ━━━━━━ ⸙ ━━━━━━ ◈
প্রতিদিন কমপক্ষে নিম্নের আমলগুলো করুন।
>>নিম্নের লিংক ক্লিক করে ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন<<
১/ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।
২/ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করুন। না পারলে কয়েকটি সূরা হলেও পড়ুন।
৩/ যত বেশি সম্ভব أَسْتَغْفِرُالله ( আস্তাগফিরুল্লা-হ) পড়ুন। দিনে কমপক্ষে ১০০ বার পড়ুন।
৪/ লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ - জিকিরটি বেশি বেশি করুন।
৫/ বেশি বেশি দুরুদ শরীফ (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পাঠ করুন।
৬/ প্রতিদিন কিছু না কিছু দান-সদকাহ করার চেষ্টা করুন। সদকায়ে জারিয়া চালু করুন।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
ইসলামিক বাংলা টিভি (Islamic Bangla Tv) - এর সঙ্গেই থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আল্লাহ্ সুবনাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন, ছুম্মা আমিন।
#ibtv
#ibtv99
#ibtv99
0 Comments