ছেলেদের সোনার আংটি ব্যবহার করা হারাম, যে ব্যবহার করে সে আগুনের টুকরা হাতে রাখে।



ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ একটি লোকের হাতে সোনার আংটি দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি তা খুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন , '' তোমাদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় আগুনের টুকরা নিয়ে তা স্বহস্তে রাখতে চায় ! '' অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলে সেই লোকটিকে বলা হল , 'তুমি তোমার আংটিটা তুলে নাও এবং (তা বিক্রি করে অথবা উপঢৌকন দিয়ে) তার দ্বারা উপকৃত হও। ' সে বলল, 'না। কসম আল্লাহর! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ফেলে দিয়েছেন, তা আমি কখনই তুলে নেব না। '[1]
[1] মুসলিম ২090, আহমাদ ২0114 হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)
আবূ 'উমারাহ বারা' ইবনু আযেব রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন তিনি রোগীকে দেখতে যেতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দিতে, শপথকারীর শপথ রক্ষা করতে, নিপীড়িতদের সাহায্য করতে, সালামের প্রসার ঘটাতে এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি আমাদেরকে সোনার আংটি পরতে, রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, রেশমের জিনপোশ, কাস্সী, ইস্তাবরাক ও দীবাজ (সর্বপ্রকার রেশমী পোশাক) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম) [1]
[1] সহীহুল বুখারী 1২39, ২445, 5157, 5635, 5650,5838, 5849, 5863, 6২২২, 6২35, 6654, মুসলিম ২066, তিরমিযী 1760, ২809, নাসায়ী 1939, 3778, 5309, ইবনু মাজাহ ২115, আহমাদ 18034, 18061, 18170 হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)
বুখারি 1২39।
বারাআ ইবনু 'আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি বিষয়ে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে আমাদের নিষেধ করেছেন তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন-
1। জানাযার অনুগমন করতে,
২। রুগ্ন ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিতে,
3। দা'ওয়াত দাতার দা'ওয়াত গ্রহণ করতে,
4। মাযলূমকে সাহায্য করতে,
5। কসম হতে দায়মুক্ত করতে,
6। সালামের জবাব দিতে এবং
7। হাঁচিদাতাকে (ইয়ারহামুকাল্লাহু বলে) সন্তুষ্ট করতে।
আর তিনি নিষেধ করেছেন-
1। রৌপ্যের পাত্র [1],
২। স্বর্ণের আংটি,
3। রেশম,
4। দীবাজ,
5। কাস্সী (কেস্ রেশম),
6। ইস্তিব্রাক (তসর জাতীয় রেশম) ব্যবহার করতে। [2]
(২445, 5175, 5635, 5650, 5838, 5849, 5863, 6২২২, 6২35, 6654) (আধুনিক প্রকাশনীঃ 1160, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ 1167)
[1] স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্র সকল মুসলমানের জন্য হারাম। তবে কোন পাত্র ভেঙ্গে গেলে তা সোনা-রূপার তার দিয়ে জোড়া ও ঝালাই দেয়া জায়িয। [2] স্বর্ণের অলংকার ও রেশমের পোশাক পুরুষদের জন্য হারাম, নারীদের জন্যে বৈধ। তবে শরীরে চুলকানী বা ঘা ইত্যাদির কারণে পুরুষদের জন্যেও রেশমের পোশাক ব্যবহার বৈধ। হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
) إنما مثل ٱلحيوة ٱلدنيا كمآء أنزلنه من ٱلسمآء فٱختلط به نبات ٱلأرض مما يأكل ٱلناس وٱلأنعم حتى إذآ أخذت ٱلأرض زخرفها وٱزينت وظن أهلهآ أنهم قدرون عليهآ أتىهآ أمرنا ليلا أو نهارا فجعلنها حصيدا كأن لم تغن بٱلأمس كذلك نفصل ٱلأيت لقوم يتفكرون 24 ([يونس: 24 ] 
অর্থাৎ "বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়ে, যা হতে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পূর্ণ অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরূপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা করে থাকি। "(সূরা ইউনুস ২4 আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
) وٱضرب لهم مثل ٱلحيوة ٱلدنيا كمآء أنزلنه من ٱلسمآء فٱختلط به نبات ٱلأرض فأصبح هشيما تذروه ٱلريح وكان ٱلله على كل شيء مقتدرا 45 ٱلمال وٱلبنون زينة ٱلحيوة ٱلدنيا وٱلبقيت ٱلصلحت خير عند ربك ثوابا وخير أملا 46 ([الكهف: 45, 46] 
অর্থাৎ "তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগ্ত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। ধনৈশবর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী, ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট। "(সূরা কাহফ 45-46 আয়াত)
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,
) ٱعلموا أنما ٱلحيوة ٱلدنيا لعب ولهو وزينة وتفاخر بينكم وتكاثر في ٱلأمول وٱلأولد كمثل غيث أعجب ٱلكفار نباته ثم يهيج فترىه مصفرا ثم يكون حطما وفي ٱلأخرة عذاب شديد ومغفرة من ٱلله ورضون وما ٱلحيوة ٱلدنيآ إلا متع ٱلغرور 20 ([الحديد: 20] 
অর্থাৎ "তোমরা জেনে রেখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। উপমা বৃষ্টি এর; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরা-টুকরা (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। "(সূরা হাদীদ ২0 আয়াত)
অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন,
) زين للناس حب ٱلشهوت من ٱلنسآء وٱلبنين وٱلقنطير ٱلمقنطرة من ٱلذهب وٱلفضة وٱلخيل ٱلمسومة وٱلأنعم وٱلحرث ذلك متع ٱلحيوة ٱلدنيا وٱلله عنده حسن ٱلماب 14 ([ال عمران: 14] 
অর্থাৎ "নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। "(আলে ইমরান 14)
তিনি আরো বলেন,
) يأيها ٱلناس إن وعد ٱلله حق فلا تغرنكم ٱلحيوة ٱلدنيا ولا يغرنكم بٱلله ٱلغرور 5 ([فاطر: 5] 
অর্থাৎ "মানুষ হে! প্রতিশ্রুতি সত্য আল্লাহর; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোন প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সস্পর্কে তোমাদেরকে প্রবঞ্চিত না করে। "(সূরা ফাত্বির 5 আয়াত)
আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেন,
) ألهىكم ٱلتكاثر 1 حتى زرتم ٱلمقابر 2 كلا سوف تعلمون 3 ثم كلا سوف تعلمون 4 كلا لو تعلمون علم ٱليقين 5 ([التكاثر: 1, 5] 
অর্থাৎ "প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও। কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। আবার বলি, কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সত্যই, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা জানতে (ঐ প্রতিযোগিতার পরিণাম)। "(সূরা তাকাসুর 1-5 আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
)وما هذه ٱلحيوة ٱلدنيآ إلا لهو ولعب وإن ٱلدار ٱلأخرة لهي ٱلحيوان لو كانوا يعلمون 64( [العنكبوت: 64] 
অর্থাৎ "এ পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। পারলোকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন আর; যদি ওরা জানত। "(সূরা আনকাবূত 64 আয়াত)
এ মর্মে প্রচুর আয়াত রয়েছে এবং হাদীসও অগণিত। তার মধ্যে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করছিঃ-
'আমর ইবনে' আউফ আনসারী রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আবূ উবাইদাহ ইবনে জার্রাহকে জিযিয়া (ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। অতঃপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল নিয়ে এলেন। আনসারগণ তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরে যেতে লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, '' আমার মনে হয়, তোমরা আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু (মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ। '' তারা বলল, 'জী হ্যাঁ।' তিনি বললেন, '' সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না। বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্ততা আসবে। আর তাতে তোমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যেমন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অতঃপর তা তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। '' (বুখারী ও মুসলিম) [1]
[1] সহীহুল বুখারী 3158, 4015, 64২5, মুসলিম ২961, তিরমিযী ২46২, ইবনু মাজাহ 3997, আহমাদ 16783, 18436 হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)

Post a Comment

0 Comments