বিপুল শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী নবী ছিলেন মাত্র দু’জন। তাঁরা হ’লেন পিতা ও পুত্র দাঊদ ও সুলায়মান (আঃ)।
বর্তমান ফিলিস্তীন সহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) এলাকায় তাঁদের রাজত্ব
ছিল। পৃথিবীর অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তাঁরা ছিলেন সর্বদা আল্লাহর
প্রতি অনুগত ও সদা কৃতজ্ঞ। সেকারণ আল্লাহ তার শেষনবীকে সান্ত্বনা দিয়ে
বলেন, واصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا
الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৭)- ‘তারা যেসব কথা বলে তাতে তুমি ছবর কর
এবং আমার শক্তিশালী বান্দা দাঊদকে স্মরণ কর। সে ছিল আমার প্রতি সদা
প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৭)। দাঊদ হলেন আল্লাহর একমাত্র বান্দা, যাকে
খুশী হয়ে পিতা আদম স্বীয় বয়স থেকে ৪০ বছর কেটে তাকে দান করার জন্য আল্লাহর
নিকটে সুফারিশ করেছিলেন এবং সেমতে দাঊদের বয়স ৬০ হ’তে ১০০ বছরে বৃদ্ধি
পায়[1]
উল্লেখ্য যে, হযরত দাঊদ (আঃ) সম্পর্কে কুরআনের ৯টি সূরায় ২৩টি আয়াতে বর্ণিত
হয়েছে।[2] তিনি ছিলেন শেষনবী (ছাঃ)-এর আগমনের প্রায় দেড় হাযার বছরের
পূর্বেকার নবী[3] দাঊদ কেবল রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়েই শক্তিশালী হননি, বরং
তিনি জন্মগতভাবেই ছিলেন দৈহিকভাবে শক্তিশালী এবং একই সাথে ঈমানী শক্তিতে
বলিয়ান। নিম্নোক্ত ঘটনায় তা বর্ণিত হয়েছে।-
জালূত ও তালূতের কাহিনী এবং দাঊদের বীরত্ব :
সাগরডুবি থেকে নাজাত পেয়ে মূসা ও হারূণ (আঃ) যখন বনু ইস্রাঈলদের নিয়ে শামে
এলেন এবং শান্তিতে বসবাস করতে থাকলেন, তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের পিতৃভূমি
ফিলিস্তীনে ফিরে যাবার আদেশ দিলেন এবং ফিলিস্তীন দখলকারী শক্তিশালী
আমালেক্বাদের সঙ্গে জিহাদের নির্দেশ দিলেন। সাথে সাথে এ ওয়াদাও দিলেন যে,
জিহাদে নামলেই তোমাদের বিজয় দান করা হবে (মায়েদাহ ৫/২৩)। কিন্তু এই ভীতু ও
জিহাদ বিমুখ বিলাসী জাতি তাদের নবী মূসাকে পরিষ্কার বলে দিল, اذْهَبْ أَنتَ
وَرَبُّكَ فَقَاتِلا إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُوْنَ-(المائدة ২৫)- ‘তুমি ও
তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর গে। আমরা এখানে বসে রইলাম’ (মায়েদাহ ৫/২৪)। এতবড়
বেআদবীর পরে মূসা (আঃ) তাদের ব্যাপারে নিরাশ হ’লেন এবং কিছু দিনের মধ্যেই
দু’ভাই পরপর তিন বছরের ব্যবধানে মৃত্যু বরণ করলেন।
জিহাদের আদেশ অমান্য করার শাস্তি স্বরূপ মিসর ও শামের মধ্যবর্তী তীহ
প্রান্তরে চল্লিশ বছর যাবত উন্মুক্ত কারাগারে অতিবাহিত করার পর মূসার শিষ্য
ও ভাগিনা এবং পরবর্তীতে নবী ইউশা‘ বিন নূনের নেতৃত্বে জিহাদ সংঘটিত হয় এবং
আমালেক্বাদের হটিয়ে তারা ফিলিস্তীন দখল করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তারা
পুনরায় বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেয় এবং নানাবিধ অনাচারে লিপ্ত হয়। তখন আল্লাহ
তাদের উপরে পুনরায় আমালেক্বাদের চাপিয়ে দেন। বনু ইস্রাঈলরা আবার নিগৃহীত
হ’তে থাকে। এভাবে বহু দিন কেটে যায়। এক সময় শ্যামুয়েল (شمويل) নবীর যুগ
আসে। লোকেরা বলে আপনি আমাদের জন্য একজন সেনাপতি দানের জন্য আল্লাহর নিকট
দো‘আ করুন, যাতে আমরা আমাদের পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে পাই এবং বর্তমান দুর্দশা
থেকে মুক্তি পাই। এই ঘটনা আল্লাহ তার শেষনবীকে শুনিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাষায়-
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلإِ مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ مِن بَعْدِ مُوسَى إِذْ
قَالُوْا لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكاً نُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ
اللهِ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلاَّ
تُقَاتِلُوْا قَالُوْا وَمَا لَنَا أَلاَّ نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللهِ
وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَأَبْنَآئِنَا فَلَمَّا كُتِبَ
عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلاَّ قَلِيلاً مِّنْهُمْ وَاللهُ
عَلِيمٌ بِالظَّالِمِيْنَ- (البقرة ২৪৬)-
‘তুমি কি মূসার পরে বনু ইস্রাঈলদের একদল নেতাকে দেখনি, যখন তারা তাদের
নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন শাসক প্রেরণ করুন, যাতে আমরা (তার
নেতৃত্বে) আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতি কি এমন
ধারণা করা যায় যে, লড়াইয়ের নির্দেশ দিলে তোমরা লড়াই করবে? তারা বলল, আমাদের
কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না? অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি
নিজেদের ঘর-বাড়ি ও সন্তান-সন্ততি হ’তে! অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হ’ল তখন
সামান্য কয়েকজন ছাড়া বাকীরা সবাই ফিরে গেল। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যালেমদের ভাল
করেই জানেন’ (বাক্বারাহ ২/২৪৬)। ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ:-
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ
مَلِكاً قَالُوْا أَنَّى يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ
أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ قَالَ
إِنَّ اللهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ
وَالْجِسْمِ وَاللهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَن يَّشَآءُ وَاللهُ وَاسِعٌ
عَلِيمٌ- وَقَالَ لَهُمْ نِبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَن
يَّأْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ
مِّمَّا تَرَكَ آلُ مُوْسَى وَآلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلآئِكَةُ
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لَّكُمْ إِنْ كُنْتُم مُّؤْمِنِيْنَ-(البقرة
২৪৭-২৪৮)-
‘তাদের নবী তাদের বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য শাসক নিযুক্ত
করেছেন। তারা বলল, সেটা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের উপরে। অথচ
আমরাই শাসন ক্ষমতা পাওয়ার অধিক হকদার। তাছাড়া সে ধন-সম্পদের দিক দিয়েও
সচ্ছল নয়। জওয়াবে নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপরে তাকে মনোনীত
করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে তাকে প্রাচুর্য দান করেছেন।
বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন। তিনি হ’লেন প্রাচুর্য দানকারী ও
সর্বজ্ঞ’। ‘নবী তাদেরকে বললেন, তালূতের নেতৃত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের
কাছে (তোমাদের কাংখিত) সিন্দুকটি আসবে তোমাদের প্রভুর পক্ষ হ’তে তোমাদের
হৃদয়ের প্রশান্তি রূপে। আর তাতে থাকবে মূসা, হারূণ ও তাদের পরিবার বর্গের
ব্যবহৃত কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বহন করে আনবে ফেরেশতাগণ। এতেই
তোমাদের (শাসকের) জন্য নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’
(বাক্বারাহ ২/২৪৭-২৪৮)।
বিষয়টি এই যে, বনু ইস্রাঈলগণের নিকটে একটা সিন্দুক ছিল। যার মধ্যে তাদের
নবী মূসা, হারূণ ও তাঁদের পরিবারের ব্যবহৃত কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী ছিল।
তারা এটাকে খুবই বরকতময় মনে করত এবং যুদ্ধকালে একে সম্মুখে রাখত। একবার
আমালেক্বাদের সাথে যুদ্ধের সময় বনু ইস্রাঈলগণ পরাজিত হ’লে আমালেক্বাদের
বাদশাহ জালূত উক্ত সিন্দুকটি নিয়ে যায়। এক্ষণে যখন বনু ইস্রাঈলগণ পুনরায়
জিহাদের সংকল্প করল, তখন আল্লাহ তাদেরকে উক্ত সিন্দুক ফিরিয়ে দিতে মনস্থ
করলেন। অতঃপর এই সিন্দুকটির মাধ্যমে তাদের মধ্যেকার নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়ার
নিরসন করেন। সিন্দুকটি তালূতের বাড়ীতে আগমনের ঘটনা এই যে, জালূতের নির্দেশে
কাফেররা যেখানেই সিন্দুকটি রাখে, সেখানেই দেখা দেয় মহামারী ও অন্যান্য
বিপদাপদ। এমনিভাবে তাদের পাঁচটি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। অবশেষে অতিষ্ট হয়ে তারা
একে তার প্রকৃত মালিকদের কাছে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিল এবং গরুর গাড়ীতে
উঠিয়ে হাঁকিয়ে দিল। তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর নির্দেশমতে গরুর গাড়ীটিকে
তাড়িয়ে এনে তালূতের ঘরের সম্মুখে রেখে দিল। বনু ইস্রাঈলগণ এই দৃশ্য দেখে
সবাই একবাক্যে তালূতের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করল। অতঃপর তালূত
আমালেক্বাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার প্রস্ত্ততি শুরু করলেন।
সকল প্রস্ত্ততি সম্পন্ন হ’লে তিনি কথিত মতে ৮০,০০০ হাযার সেনাদল নিয়ে
রওয়ানা হন। ইবনু কাছীর এই সংখ্যায় সন্দেহ পোষণ করে বলেন, ক্ষুদ্রায়তন
ফিলিস্তীন ভূমিতে এই বিশাল সেনাদলের সংকুলান হওয়াটা অসম্ভব ব্যাপার।[4]
অল্প বয়ষ্ক তরুণ দাঊদ ছিলেন উক্ত সেনা দলের সদস্য। পথিমধ্যে সেনাপতি তালূত
তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। সম্মুখেই ছিল এক নদী। মৌসুম ছিল প্রচন্ড গরমের।
পিপাসায় ছিল সবাই কাতর। এ বিষয়টি কুরআন বর্ণনা করেছে নিম্নরূপ:
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوْتُ بِالْجُنُوْدِ قَالَ إِنَّ اللهَ مُبْتَلِيْكُمْ
بِنَهَرٍ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَنْ لَّمْ يَطْعَمْهُ
فَإِنَّهُ مِنِّيْ إِلاَّ مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ فَشَرِبُوْا
مِنْهُ إِلاَّ قَلِيلاً مِّنْهُمْ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِيْنَ
آمَنُوْا مَعَهُ قَالُوْا لاَ طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوْتَ
وَجُنُوْدِهِ قَالَ الَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ أَنَّهُم مُّلاَقُو اللهِ: كَم
مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةً بِإِذْنِ اللهِ
وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ-(البقرة ২৪৯)-
‘অতঃপর তালূত যখন সৈন্যদল নিয়ে বের হ’ল, তখন সে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ
তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। যে ব্যক্তি সেই নদী হ’তে পান
করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি স্বাদ গ্রহণ করবে না,
সেই-ই আমার দলভুক্ত হবে। তবে হাতের এক অাঁজলা মাত্র। অতঃপর সবাই সে পানি
থেকে পান করল, সামান্য কয়েকজন ব্যতীত। পরে তালূত যখন নদী পার হ’ল এবং তার
সঙ্গে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি (তখন অধিক পানি পানকারী
সংখ্যাগরিষ্ট) লোকেরা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালূত ও তার সেনাবাহিনীর সাথে
যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। (পক্ষান্তরে) যাদের বিশ্বাস ছিল যে, আল্লাহর
সম্মুখে তাদের একদিন উপস্থিত হ’তেই হবে, তারা বলল, কত ছোট ছোট দল বিজয়ী
হয়েছে বড় বড় দলের বিরুদ্ধে আল্লাহর হুকুমে। নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের সাথে
আল্লাহ থাকেন’ (বাক্বারাহ ২/২৪৯)।
বস্ত্ততঃ নদী পার হওয়া এই স্বল্প সংখ্যক ঈমানদারগণের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩
জন, যা শেষনবীর সাথে কাফেরদের বদর যুদ্ধকালে যুদ্ধরত ছাহাবীগণের সংখ্যার
সাথে মিলে যায়। পানি পানকারী হাযারো সৈনিক নদী পারে আলস্যে ঘুমিয়ে পড়ল। অথচ
পানি পান করা থেকে বিরত থাকা স্বল্প সংখ্যক ঈমানদার সাথী নিয়েই তালূত
চললেন সেকালের সেরা সেনাপতি ও শৌর্য-বীর্যের প্রতীক আমালেক্বাদের বাদশাহ
জালূতের বিরুদ্ধে। বস্ত্তবাদীগণের হিসাব মতে এটা ছিল নিতান্তই আত্মহননের
শামিল। এই দলেই ছিলেন দাঊদ। আল্লাহ বলেন,
وَلَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَجُنُوْدِهِ قَالُوْا رَبَّنَا أَفْرِغْ
عَلَيْنَا صَبْراً وَّثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ
الْكَافِرِيْنَ-(البقرة ২৫০)-
‘আর যখন তারা জালূত ও তার সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হ’ল, তখন তারা বলল, হে
আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ধৈর্য দান কর ও আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ এবং আমাদেরকে
তুমি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য কর’ (বাক্বারাহ ২/২৫০)।
জালূত বিরাট সাজ-সজ্জা করে হাতীতে সওয়ার হয়ে সামনে এসে আস্ফালন করতে লাগল
এবং সে যুগের যুদ্ধরীতি অনুযায়ী প্রতিপক্ষের সেরা যোদ্ধাকে আহবান করতে
থাকল। অল্পবয়ষ্ক বালক দাঊদ নিজেকে সেনাপতি তালূতের সামনে পেশ করলেন। তালূত
তাকে পাঠাতে রাযী হ’লেন না। কিন্তু দাঊদ নাছোড় বান্দা। অবশেষে তালূত তাকে
নিজের তরবারি দিয়ে উৎসাহিত করলেন এবং আল্লাহর নামে জালূতের মোকাবিলায়
প্রেরণ করলেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি এ ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন যে, যে ব্যক্তি
জালূতকে বধ করে ফিলিস্তীন পুনরুদ্ধার করতে পারবে, তাকে রাজ্য পরিচালনায়
শরীক করা হবে। অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত জালূতকে মারা খুবই কঠিন ছিল। কেননা
তার সারা দেহ ছিল লৌহ বর্মে আচ্ছাদিত। তাই তরবারি বা বল্লম দিয়ে তাকে মারা
অসম্ভব ছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় দাঊদ ছিলেন পাথর ছোঁড়ায় উস্তাদ। সমবয়সীদের সাথে
তিনি মাঠে গিয়ে নিশানা বরাবর পাথর মারায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। দাঊদ পকেট
থেকে পাথর খন্ড বের করে হাতীর পিঠে বসা জালূতের চক্ষু বরাবর নিশানা করে
এমন জোরে মারলেন যে, তাতেই জালূতের চোখশুদ্ধ মাথা ফেটে মগয বেরিয়ে চলে গেল।
এভাবে জালূত মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার সৈন্যরা পালিয়ে গেল। যুদ্ধে তালূত
বিজয় লাভ করলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
فَهَزَمُوْهُمْ بِإِذْنِ اللهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوْتَ وَآتَاهُ اللهُ
الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَآءُ وَلَوْلاَ دَفْعُ
اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الأَرْضُ وَلَـكِنَّ اللهَ
ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِيْنَ-(البقرة ২৫১)-
‘অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে পরাজিত করল এবং দাঊদ জালূতকে হত্যা
করল। আর আল্লাহ দাঊদকে দান করলেন রাজ্য ও দূরদর্শিতা এবং তাকে শিক্ষা দান
করলেন, যা তিনি চাইলেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যদি এভাবে একজনকে অপরজনের দ্বারা
প্রতিহত না করতেন, তাহ’লে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর
প্রতি একান্তই দয়াশীল’ (বাক্বারাহ ২/২৫১)।
শিক্ষণীয় বিষয় :
(১) নেতৃত্বের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন হ’ল জ্ঞান ও দৈহিক স্বাস্থ্য, যা তালূতের মধ্যে ছিল।
(২) নেতৃত্বের জন্য বংশ ও অর্থ-সম্পদের চাইতে বড় প্রয়োজন দৃঢ় ঈমান ও আল্লাহর উপরে নির্ভরশীলতা।
(৩) নেতার জন্য অবশ্য কর্তব্য হ’ল কর্মীদের পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা। যেমন তালূত করেছিলেন।
(৪) চিরকাল সংখ্যালঘু ঈমানদারগণ সংখ্যাগুরু অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে থাকে। যা তালূত ও জালূতের ঘটনায় প্রমাণিত হয়।
(৫) আল্লাহর উপরে নির্ভরশীল, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও কুশলী সেনাপতি এবং
স্বল্পসংখ্যক নিবেদিত প্রাণ লোকই যথেষ্ট হয় বিজয় লাভের জন্য। তালূত ও দাঊদ
যার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ।
(৬) অস্ত্রবল ও জনবলের চাইতে ঈমানী বল যেকোন বিজয়ের মূল শক্তি।
(৭) উপরোক্ত ঘটনায় আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, তালূত কর্তৃক পরীক্ষা
গ্রহণের ফলে তাঁর আমলেই বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে দু’টি দলের সৃষ্টি হয়। একদল
তালূতের অনুগত মুমিন। যারা নিজেদেরকে ‘বনূ ইস্রাঈল’ বলেই পরিচিত করে। অর্থ
‘আল্লাহর দাস’-এর বংশ। অপর দল ছিল মুনাফিক- যাদেরকে ‘ইয়াহুদী’ বলা হ’ত।
প্রকৃত বনু ইস্রাঈলগণ ‘ইয়াহুদী’ নামকে ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
আজও পৃথিবীতে তারা ঘৃণিত হয়েই আছে। অতদিন কিয়ামত হবেনা যতদিন না মুসলমানরা
একে একে এদেরকে হত্যা করবেন। গাছ ও পাথর পর্যন্ত এদের পালিয়ে থাকা অবস্থান
মুসলমানদের জানিয়ে দেবে।[5]
দাঊদ (আঃ)-এর কাহিনী :
তালূত ‘আমালেক্বা দখলদারদের হটিয়ে শামের শাসনকর্তার পদ লাভ করেন। অতঃপর
দাঊদ কতদিন পরে নবী হন এবং তালূতের পরে কখন তিনি শাসনক্ষমতায় আসেন, এ বিষয়ে
স্পষ্ট কিছু জানা যায় না। তবে অন্যান্য নবীদের ন্যায় তিনি চল্লিশ বছর বয়সে
নবুঅত লাভ করেন বলে আমরা ধরে নিতে পারে। তিনি শতায়ু ব্যক্তি ছিলেন এবং
তাঁর পুত্র সন্তানের সংখ্যা ছিল ১৯ জন। তন্মধ্যে সুলায়মান (আঃ) নবুঅত ও
শাসন ক্ষমতা উভয় দিক দিয়ে (নমল ২৭/১৬) পিতার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। আল্লাহ
পিতা ও পুত্রকে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে সৃষ্টি করেছিলেন। আমরা কুরআন
থেকে যা প্রাপ্ত হয়েছি সেটুকুই পেশ করব সত্যসন্ধানী পাঠকের জন্য। মনে রাখা
আবশ্যক যে, কুরআন কোন গল্পগ্রন্থ নয়। মানুষের হেদায়াতের জন্য যতটুকু
প্রয়োজন, ততটুকুই মাত্র সেখানে পাওয়া যায়। বাকী তথ্যাবলীর উৎস হ’ল ইস্রাঈলী
বর্ণনা সমূহ, যার কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই। বরং সেখানে অন্যান্য
নবীগণের ন্যায় দাঊদ ও সুলায়মানের চরিত্রকে মসীলিপ্ত করা হয়েছে। আর সেইসব
নোংরা কাহিনীকে ভিত্তি করে আরবী, উর্দূ, ফার্সী এমনকি বাংলা ভাষায়ও লিখিত
হয়েছে ‘নবীদের কাহিনী’ নামে বহু বাজে বই-পুস্তিকা। নবীগণের নিষ্পাপত্বে
বিশ্বাসী ঈমানদার পাঠকগণ ঐসব বইপত্র থেকে দূরে থাকবেন, এটাই আমরা
একান্তভাবে কামনা করব। বরং আমাদের পরামর্শ থাকবে, ঐসব উদ্ভট ও নোংরা
গল্পগুজবে ভরা তথাকথিত ধর্মীয় (?) বই-পত্র আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিন।
তাতে নিজের ও পরিবারের এবং অন্যদের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বেঁচে
যাবে।
দাঊদ (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহ :
আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। সেমতে দাঊদ (আঃ)-কে প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নে বিবৃত হ’ল।-
১. আল্লাহ দাঊদ (আঃ)-কে আধ্যাত্মিক ও দৈহিক শক্তিতে বলিয়ান করে সৃষ্টি করেছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৭)-
‘স্মরণ কর, আমার বান্দা দাঊদকে। সে ছিল শক্তিশালী এবং আমার প্রতি সদা
প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৭)। আয়াতের প্রথমাংশে তাঁর দৈহিক ও দুনিয়াবী
শাসন শক্তির কথা বলা হয়েছে এবং শেষাংশে তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির কথা বলা
হয়েছে। এজন্য যে, বিরাট ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি
সর্বদা আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সকল কাজে তাঁর দিকেই ফিরে যেতেন।
বুখারী ও মুসলিমের এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকটে
সর্বাধিক পসন্দনীয় ছালাত হ’ল দাঊদ (আঃ)-এর ছালাত এবং সর্বাধিক পসন্দনীয়
ছিয়াম ছিল দাঊদ (আঃ)-এর ছিয়াম। তিনি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ঘুমাতেন। অতঃপর এক
তৃতীয়াংশ ছালাতে কাটাতেন এবং শেষ ষষ্টাংশে নিদ্রা যেতেন। তিনি একদিন অন্তর
একদিন ছিয়াম রাখতেন। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি কখনো পশ্চাদপসরণ করতেন না’।[6]
২. পাহাড় ও পক্ষীকুল তাঁর অনুগত ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّا سَخَّرْنَا
الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ- وَالطَّيْرَ
مَحْشُوْرَةً، كُلٌّ لَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৮-১৯)-
‘আমরা পর্বতমালাকে তার অনুগত করে দিয়েছিলাম। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে
পবিত্রতা বর্ণনা করত’। ‘আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হ’ত। সবাই ছিল
তার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৮-১৯)। একই মর্মে বক্তব্য এসেছে
সূরা সাবা ১০ আয়াতে। অন্যদিকে আল্লাহ দাঊদ-পুত্র সুলায়মানের অধীনস্ত করে
দিয়েছিলেন বায়ুকে ও জিনকে। পাহাড় ও পক্ষীকুল হযরত দাঊদ (আঃ)-এর কিভাবে
আনুগত্য করত- সে বিষয়ে কোন বক্তব্য কুরআনে আসেনি। তাফসীরবিদগণ নানাবিধ
সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। আমরা সেগুলিকে এড়িয়ে গেলাম। কেননা ইবনু আববাস
(রাঃ) বলেছেন, أَبْهِمُوا مَا أَبْهَمَهُ اللهُ ‘আল্লাহ যে বিষয়কে অস্পষ্ট
রেখেছেন, তোমরাও তাকে অস্পষ্ট থাকতে দাও’।[7]
৩, ৪ ও ৫. তাঁকে দেওয়া হয়েছিল সুদৃঢ় সাম্রাজ্য, গভীর প্রজ্ঞা ও অনন্য বাগ্মিতা। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ-(ص
২০)- ‘আমরা তার সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও
ফায়ছালাকারী বাগ্মিতা’ (ছোয়াদ ৩৮/২০)। উল্লেখ্য, আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) ও
ইমাম শাবী বলেন যে, ‘তিনিই সর্বপ্রথম বক্তৃতায় হাম্দ ও ছালাতের পর أما بعد
(‘অতঃপর’) শব্দ যুক্ত করেন’।[8] পূর্বেই আমরা বলেছি যে, তাঁর এই সাম্রাজ্য
ছিল শাম ও ইরাক ব্যাপী। যা আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ফিলিস্তীন ও
ইরাককে শামিল করে। আল্লাহ বলেন,
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ
بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ
سَبِيْلِ اللهِ إِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ
عَذَابٌ شَدِيْدٌ بِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ-(ص ২৬)-
‘হে দাঊদ! আমরা তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে
ন্যায়সঙ্গত ফায়ছালা কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর না। তাহ’লে তা তোমাকে
আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুত হয়,
তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়’
(ছোয়াদ ৩৮/২৬)।
৬. লোহাকে আল্লাহ তাঁর জন্য নরম করে দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ آتَيْنَا دَاوُودَ مِنَّا فَضْلاً يَا جِبَالُ أَوِّبِيْ مَعَهُ
وَالطَّيْرَ وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ- أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ
وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ وَاعْمَلُوْا صَالِحاً إِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ
بَصِيْرٌ- (سبا ১০-১১)-
‘...এবং আমরা তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম’ ‘এবং তাকে বলেছিলাম
প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর ও কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর এবং তোমরা সৎকর্ম
সম্পাদন কর। তোমরা যা কিছু কর, তা আমরা দেখে থাকি’ (সাবা ৩৪/১০-১১)।
উল্লেখ্য যে, হযরত দাঊদ (আঃ) একজন দক্ষ কর্মকার ছিলেন। বিশেষ করে শত্রুর
মোকাবিলার জন্য উন্নত মানের বর্ম নির্মাণে তিনি ছিলেন একজন কুশলী কারিগর।
যা বিক্রি করে তিনি সংসার যাত্রা নির্বাহ করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে
নিজের ভরণপোষণের জন্য কিছুই নিতেন না। যদিও সেটা নেওয়া কোন দোষের ছিল না।
এখানে লোহাকে বাস্তবে মোমের মত নরম করার প্রকাশ্য অর্থ নিলে সেটা হবে তাঁর
জন্য মু‘জেযা স্বরূপ, যা মোটেই অসম্ভব নয়। অবশ্য নরম করে দেওয়ার অর্থ
লোহাকে সহজে ইচ্ছামত রূপ দেওয়ার ও উন্নতমানের নির্মাণ কৌশল শিক্ষাদানও হ’তে
পারে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوْسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْ بَأْسِكُمْ فَهَلْ أَنْتُمْ شَاكِرُوْنَ-(الأنبياء ৮০)-
‘আর আমরা তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা
যুদ্ধের সময় তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে? (আম্বিয়া
২১/৮০)।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ভারতবর্ষের বাদশাহ আওরঙ্গযেব (১৬৫৮-১৭০৭ খৃ:) নিজ
হাতে টুপী সেলাই করে তা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কিছুই নিতেন না। বস্ত্ততঃ নবী-রাসূলগণই ছিলেন সকল
উন্নত চরিত্রের পথিকৃৎ।
৭. আল্লাহ পাক দাঊদকে নবুঅত দান করেন এবং তাকে এলাহী কিতাব ‘যবূর’ দান করে
কিতাবধারী রাসূলের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। যেমন তিনি বলেন, -وَآتَيْنَا
دَاوُودَ زَبُوْراً ‘আমরা দাঊদকে ‘যবূর’ প্রদান করেছিলাম’ (নিসা ৪/১৬৩)।
হযরত দাঊদকে যে আল্লাহ অতুলনীয় সাম্রাজ্য দান করছিলেন, সেটা যেন যবূরের
ভবিষ্যদ্বাণীরই বাস্তব রূপ। কেননা যবূরে আল্লাহ তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে
পৃথিবীর অধিকারী হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُوْنَ-(الأنبياء ১০৫)-
‘আমরা বিভিন্ন উপদেশের পর যবূরে একথা লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে’ (আম্বিয়া ২১/১০৫)।
৮. তাঁকে অপূর্ব সুমধুর কণ্ঠস্বর দান করা হয়েছিল। যখন তিনি যবূর তেলাওয়াত
করতেন, তখন কেবল মানুষ নয়, পাহাড় ও পক্ষীকুল পর্যন্ত তা একমনে শুনত। এ দিকে
ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ آتَيْنَا دَاوُودَ مِنَّا فَضْلاً يَا جِبَالُ أَوِّبِيْ مَعَهُ وَالطَّيْرَ وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ- (سبا ১০)-
‘আমরা দাঊদের প্রতি আমাদের পক্ষ হ’তে অনুগ্রহ প্রদান করেছিলাম এই মর্মে
আদেশ দান করে যে, হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সাথে বারবার তাসবীহ সমূহ
আবৃত্তি কর এবং (একই নির্দেশ দিয়েছিলাম আমরা) পক্ষীকুলকেও ...’ (সাবা
৩৪/১০)। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করে দিয়েছে যে, পাহাড় ও মাটির এক ধরনের জীবন
রয়েছে, যা তাদের জন্য উপযোগী।[9] এ বিষয়টি আল্লাহ অন্যত্র বলেন এভাবে,
وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُودَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ وَكُنَّا فَاعِلِيْنَ-(الأنبياء ৭৯)-
‘আমরা পাহাড়কে ও পক্ষীকুলকে দাঊদের অনুগত করে দিয়েছিলাম, তারা তাসবীহ পাঠ করত এবং আমরা এটা করে থাকি’ (আম্বিয়া ২১/৭৯)।
অতএব দাঊদের কণ্ঠস্বর শোনা, তাঁর অনুগত হওয়া ও আল্লাহর বাণী যবূরের
আয়াতসমূহের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা পাহাড় ও
পক্ষীকুলের জন্য মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্য
বনের পশু, পাহাড়, বৃক্ষ তাঁর সামনে মাথা নুইয়েছে ও ছায়া করেছে, এমনকি
স্বস্থান থেকে উঠে এসে বৃক্ষ তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়েছে, এগুলি সব চাক্ষুষ
ঘটনা।[10] একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর তিন সাথী আবুবকর, ওমর ও ওছমান
একটি পাহাড়ে উঠলেন। তখন পাহাড়টি কাঁপতে শুরু করল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
পাহাড়টিকে ধমক দিয়ে বললেন, স্থির হও! তোমার উপরে আছেন একজন নবী, একজন
ছিদ্দীক্ব ও দু’জন শহীদ’।[11] এর দ্বারা উদ্ভিদ ও পর্বতের জীবন ও অনুভূতি
প্রমাণিত হয়। অতএব আল্লাহর অপর নবী দাঊদ (আঃ)-এর জন্য পাহাড়, পক্ষী, লৌহ
ইত্যাদি অনুগত হবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। যদিও বস্ত্তবাদীরা চিরকাল
সন্দেহের অন্ধকারে থেকেছে, আজও থাকবে। আল্লাহর রহমত না হ’লে ওরা অন্ধকারের
ক্রিমিকীট হয়েই মরবে।
দাঊদ (আঃ)-এর জীবনের স্মরণীয় ঘটনাবলী :
(১) ছাগপাল ও শস্যক্ষেতের মালিকের বিচার: ইমাম বাগাভী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আববাস, ক্বাতাদাহ ও যুহরী থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা দু’জন লোক হযরত
দাঊদের নিকটে একটি বিষয়ে মীমাংসার জন্য আসে। তাদের একজন ছিল ছাগপালের মালিক
এবং অন্যজন ছিল শস্য ক্ষেতের মালিক। শস্যক্ষেতের মালিক ছাগপালের মালিকের
নিকট দাবী পেশ করল যে, তার ছাগপাল রাত্রিকালে আমার শস্যক্ষেতে চড়াও হয়ে
সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট করে দিয়েছে। আমি এর প্রতিকার চাই। সম্ভবতঃ শস্যের
মূল্য ও ছাগলের মূল্যের হিসাব সমান বিবেচনা করে হযরত দাঊদ (আঃ) শস্যক্ষেতের
মালিককে তার বিনষ্ট ফসলের বিনিময় মূল্য হিসাবে পুরা ছাগপাল শস্যক্ষেতের
মালিককে দিয়ে দিতে বললেন। বাদী ও বিবাদী উভয়ে বাদশাহ দাঊদ-এর আদালত থেকে
বেরিয়ে আসার সময় দরজার মুখে পুত্র সুলায়মানের সাথে দেখা হয়। তিনি মোকদ্দমার
রায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা সব খুলে বলল। তিনি পিতা দাঊদের কাছে গিয়ে
বললেন, আমি রায় দিলে তা ভিন্নরূপ হ’ত এবং উভয়ের জন্য কল্যাণকর হ’ত’। অতঃপর
পিতার নির্দেশে তিনি বললেন, ছাগপাল শস্যক্ষেতের মালিককে সাময়িকভাবে দিয়ে
দেওয়া হউক। সে এগুলোর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা উপকার লাভ করুক। পক্ষান্তরে
শস্যক্ষেতটি ছাগপালের মালিককে অর্পণ করা হউক। সে তাতে শস্য উৎপাদন করুক।
অতঃপর শস্যক্ষেত্র যখন ছাগপালে বিনষ্ট করার পূর্বের অবস্থায় পৌঁছে যাবে,
তখন তা ক্ষেতের মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং ছাগপাল তার মালিককে ফেরৎ
দেওয়া হবে’। হযরত দাঊদ (আঃ) রায়টি অধিক উত্তম গণ্য করে সেটাকেই কার্যকর
করার নির্দেশ দেন। এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,
وَدَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الْحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ
فِيهِ غَنَمُ الْقَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِينَ- فَفَهَّمْنَاهَا
سُلَيْمَانَ وَكُلاًّ آتَيْنَا حُكْماً وَّعِلْماً- (الأنبياء ৭৮-৭৯)-
‘আর স্মরণ কর দাঊদ ও সুলায়মানকে, যখন তারা একটি শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার
করেছিল, যাতে রাত্রিকালে কারু মেষপাল ঢুকে পড়েছিল। আর তাদের বিচারকার্য
আমাদের সম্মুখেই হচ্ছিল’। ‘অতঃপর আমরা সুলায়মানকে মোকদ্দমাটির ফায়ছালা
বুঝিয়ে দিলাম এবং আমরা উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম’ (আম্বিয়া
২১/৭৮-৭৯)।
বস্ত্ততঃ উভয়ের রায় সঠিক ও সুধারণা প্রসূত ছিল। কিন্তু অধিক উত্তম বিবেচনায়
হযরত দাঊদ স্বীয় পুত্রের দেওয়া পরামর্শকেই কার্যকর করার নির্দেশ দেন। আর
সেকারণেই আল্লাহ উভয়কে সমগুণে ভূষিত করে বলেছেন যে, ‘আমরা উভয়কে জ্ঞান ও
প্রজ্ঞা দান করেছি’। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিচারক উত্তম মনে করলে তার
পূর্বের রায় বাতিল করে নতুন রায় প্রদান করতে পারেন।
(২) ইবাদত খানায় প্রবেশকারী বাদী-বিবাদীর বিচার: হযরত দাঊদ (আঃ) যেকোন
ঘটনায় যদি বুঝতেন যে, এটি আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা, তাহ’লে তিনি সাথে সাথে
আল্লাহর দিকে রুজু হ’তেন ও ক্ষমা প্রার্থনায় রত হ’তেন। এরই একটি উদাহরণ
বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতগুলিতে। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَهَلْ أَتَاكَ نَبَأُ الْخَصْمِ إِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ- إِذْ
دَخَلُوْا عَلَى دَاوُودَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ قَالُوْا لاَ تَخَفْ خَصْمَانِ
بَغَى بَعْضُنَا عَلَى بَعْضٍ فَاحْكُم بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلاَ
تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَى سَوَاءِ الصِّرَاطِ- إِنَّ هَذَا أَخِيْ لَهُ
تِسْعٌ وَتِسْعُوْنَ نَعْجَةً وَلِيَ نَعْجَةٌ وَاحِدَةٌ فَقَالَ
أَكْفِلْنِيْهَا وَعَزَّنِيْ فِي الْخِطَابِ- قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ
بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَى نِعَاجِهِ وَإِنَّ كَثِيْراً مِّنَ
الْخُلَطَاءِ لَيَبْغِيْ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ إِلاَّ الَّذِيْنَ
آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيْلٌ مَّا هُمْ وَظَنَّ دَاوُودُ
أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعاً وَّأَنَابَ-
فَغَفَرْنَا لَهُ ذَلِكَ وَإِنَّ لَهُ عِنْدَنَا لَزُلْفَى وَحُسْنَ مَآبٍ
(ص ২১-২৫)-
‘আপনার কাছে কি সেই বাদী-বিবাদীর খবর পৌঁছেছে, যখন তারা পাঁচিল টপকিয়ে
দাঊদের ইবাদতখানায় ঢুকে পড়েছিল’? (ছোয়াদ ২১) ‘যখন তারা দাঊদের কাছে
অনুপ্রবেশ করল এবং দাঊদ তাদের থেকে ভীত হয়ে পড়ল, তখন তারা বলল, আপনি ভয়
পাবেন না, আমরা দু’জন বিবদমান পক্ষ। আমরা একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছি।
অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করুন, অবিচার করবেন না। আমাদেরকে সরল পথ
প্রদর্শন করুন’ (২২)। ‘(বিষয়টি এই যে,) সে আমার ভাই। সে ৯৯টি দুম্বার মালিক
আর আমি মাত্র একটি মাদী দুম্বার মালিক। এরপরও সে বলে যে, এটি আমাকে দিয়ে
দাও। সে আমার উপরে কঠোর ভাষা প্রয়োগ করে’ (২৩)। ‘দাঊদ বলল, সে তোমার
দুম্বাটিকে নিজের দুম্বাগুলির সাথে যুক্ত করার দাবী করে তোমার প্রতি অবিচার
করেছে। শরীকদের অনেকে একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করে থাকে, কেবল তারা
ব্যতীত, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। অবশ্য এরূপ লোকের সংখ্যা কম। (অত্র
ঘটনায়) দাঊদ ধারণা করল যে, আমরা তাকে পরীক্ষা করছি। অতঃপর সে তার
পালনকর্তার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়ল ও আমার দিকে
প্রণত হ’ল’ (২৪)। অতঃপর আমরা তাকে ক্ষমা করে দিলাম। নিশ্চয়ই তার জন্য
আমাদের নিকটে রয়েছে নৈকট্য ও সুন্দর প্রত্যাবর্তন স্থল’ (ছোয়াদ ৩৮/২১-২৫)।
উপরোক্ত পাঁচটি আয়াতে বা অন্য কোথাও এরূপ কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি যে, সে
পরীক্ষা কি ছিল, দাঊদ (আঃ) কি ভুল করেছিলেন, যে কারণে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা
করেছিলেন এবং যা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ফলে সেই প্রাচীন যুগের
কোন ঘটনার ব্যাখ্যা নবী ব্যতীত অন্য কারু পক্ষে এ যুগে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই
ধারণা ও কল্পনার মাধ্যমে যেটাই বলা হবে, তাতে ভ্রান্তির আশংকা থেকেই যাবে।
কিন্তু পথভ্রষ্ট ইহুদী পন্ডিতেরা তাদের স্বগোত্রীয় এই মর্যাদাবান নবীর
উক্ত ঘটনাকে এমন নোংরাভাবে পেশ করেছে, যা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। বলা
হয়েছে, দাঊদ (আঃ)-এর নাকি ৯৯ জন স্ত্রী ছিল। এ সত্ত্বেও তিনি তাঁর এক
সৈন্যের স্ত্রীকে জোরপূর্বক অপহরণ করেন। অতঃপর উক্ত সৈনিককে হত্যা করে তার
স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আল্লাহ দু’জন ফেরেশতাকে বাদী ও
বিবাদীর বেশে পাঠিয়ে তাকে শিক্ষা দেন (নাঊযুবিল্লাহ)।
(৩) শনিবার ওয়ালাদের পরিণতি: বনু ইস্রাঈলদের জন্য শনিবার ছিল সাপ্তাহিক
ছুটির দিন এবং ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট ও পবিত্র দিন। এ দিন তাদের জন্য
মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ ছিল। তারা সমুদ্রোপকুলের বাসিন্দা ছিল এবং মৎস্য শিকার
ছিল তাদের পেশা। ফলে দাঊদ (আঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা ঐদিন মৎস্য
শিকার করতে থাকে। এতে তাদের উপরে আল্লাহর পক্ষ হ’তে ‘মস্খ’ বা আকৃতি
পরিবর্তনের শাস্তি নেমে আসে এবং তিনদিনের মধ্যেই তারা সবাই মৃত্যু মুখে
পতিত হয়। ঘটনাটি পবিত্র কুরআনে নিম্নরূপে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ মদীনার
ইহুদীদের উদ্দেশ্যে বলেন,
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِيْنَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِي السَّبْتِ
فَقُلْنَا لَهُمْ كُوْنُوْا قِرَدَةً خَاسِئِيْنَ- فَجَعَلْنَاهَا نَكَالاً
لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ-
(البقرة ৬৫-৬৬)-
‘আর তোমরা তো তাদেরকে ভালভাবে জানো, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লংঘন
করেছিল। আমরা তাদের বলেছিলাম, তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও’। ‘অতঃপর আমরা এ
ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে এবং
আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ হিসাবে রেখে দিলাম’ (বাক্বারাহ ২/৬৫-৬৬)।
তাফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে যে, ইহুদীরা প্রথমে গোপনে ও বিভিন্ন কৌশলে এবং
পরে ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ দিনে মৎস্য শিকার করতে থাকে। এতে তারা দু’দলে
বিভক্ত হয়ে যায়। সৎ ও বিজ্ঞ লোকেরা একাজে বাধা দেন। অপরদল বাধা অমান্য করে
মাছ ধরতে থাকে। ফলে প্রথম দলের লোকেরা শেষোক্তদের থেকে পৃথক হয়ে যান। তাদের
সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এমনকি তাদের বাসস্থানও পৃথক করে নেন। একদিন তারা
অবাধ্যদের এলাকায় চরম নীরবতা লক্ষ্য করেন। অতঃপর তারা সেখানে পৌঁছে দেখলেন
যে, সবাই বানর ও শূকরে পরিণত হয়ে গেছে। ক্বাতাদাহ বলেন যে, বৃদ্ধরা শূকরে
এবং যুবকেরা বানরে পরিণত হয়েছিল। রূপান্তরিত বানরেরা নিজ নিজ
আত্মীয়-স্বজনকে চিনতে পেরেছিল এবং তাদের কাছে গিয়ে অঝোর নয়নে অশ্রু বিসর্জন
করেছিল।
উক্ত বিষয়ে সূরা আ‘রাফের ১৬৪-৬৫ আয়াতের বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, সেখানে
তৃতীয় আরেকটি দল ছিল, যারা উপদেশ দানকারীদের উপদেশ দানে বিরত রাখার চেষ্টা
করত। বাহ্যতঃ এরা ছিল শান্তিবাদী এবং অলস ও সুবিধাবাদী। এরাও ফাসেকদের সাথে
শূকর-বানরে পরিণত হয় ও ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَإِذَ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْماً اَللهُ
مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَاباً شَدِيداً، قَالُوْا مَعْذِرَةً
إِلَى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ- فَلَمَّا نَسُوْا مَا
ذُكِّرُوْا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ
وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوْا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوْا
يَفْسُقُونَ- (الأعراف ১৬৪-১৬৫)-
‘আর যখন তাদের মধ্যকার একদল বলল, কেন আপনারা ঐ লোকদের উপদেশ দিচ্ছেন,
যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতে চান কিংবা তাদের আযাব দিতে চান কঠিন আযাব?
ঈমানদারগণ বলল, তোমাদের পালনকর্তার নিকট ওযর পেশ করার জন্য এবং এজন্য যাতে
ওরা সতর্ক হয়’। ‘অতঃপর তারা যখন উপদেশ ভুলে গেল, যা তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল,
তখন আমরা সেসব লোকদের মুক্তি দিলাম, যারা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করত এবং
পাকড়াও করলাম যালেমদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের পাপাচারের কারণে’
(আ‘রাফ ৭/১৬৪-৬৫)।
এতে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধকারীদের
পক্ষাবলম্বন না করে নিরপেক্ষতা অবলম্বনকারী ব্যক্তিগণ যালেম ও ফাসেকদের
সাথেই আল্লাহর গযবে ধ্বংস হবে। অতএব হকপন্থীদের জন্য জীবনের সর্বক্ষেত্রে
আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার ব্যতীত অন্য কোন পথ খোলা নেই।
ছহীহ মুসলিমে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে,
একদা কয়েকজন ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল! এ যুগের
বানর-শূকরগুলো কি সেই আকৃতি পরিবর্তিত ইহুদী সম্প্রদায়? তিনি বললেন,
আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন, কিংবা তাদের উপরে আকৃতি
পরিবর্তনের আযাব নাযিল করেন, তখন তাদের বংশধারা থাকে না। আর বানর-শূকর
পৃথিবীতে পূর্বেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।[12] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তারা
খায় না, পান করে না এবং তিন দিনের বেশী বাঁচে না।[13]
তালূতের পরে বনু ইস্রাঈলগণের অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় পর্যায়ে চলে যায়। যালেম
বাদশাহদের দ্বারা তারা শাম দেশ হ’তে বিতাড়িত হয়। বিশেষ করে পারস্যরাজ
বুখতানছর যখন তাদেরকে শাম থেকে বহিষ্কার করলেন, তখন তাদের একদল হেজাযে গিয়ে
বসবাসের সিদ্ধান্ত নিল। এই উদ্দেশ্যে যে, আমরা দাঊদ ও সুলায়মানের নির্মিত
বায়তুল মুক্বাদ্দাস হারিয়েছি। ফলে এক্ষণে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ
ইবরাহীম-ইসমাঈলের নির্মিত কা‘বা গৃহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। যাতে আমরা বা
আমাদের বংশধররা শেষনবীর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হয়। সেমতে তারা আরবে হিজরত করে
এবং ইয়াছরিবে বসবাস শুরু করে।
সংশয় নিরসন
(১) দাঊদ (আঃ)-এর উপরে প্রদত্ত তোহমত :
ছোয়াদ ২৪ : وَظَنَّ دَاوُوْدُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ ‘দাঊদ ধারণা করল যে,
আমরা তাকে পরীক্ষা করছি’। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে বলা
হয়েছে, أوقعناه في قةنة أى بلية بمحبةه ةلك المرأة ‘অর্থাৎ উক্ত মহিলার
প্রতি আসক্তির মাধ্যমে আমরা তাকে পরীক্ষায় ফেলেছি’। ভিত্তিহীন এই তাফসীরের
মাধ্যমে নবীগণের উচ্চ মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। বিশেষ করে দাঊদ
(আঃ)-এর মত একজন মহান রাসূলের উপরে পরনারীর প্রতি আসক্ত হওয়ার অমার্জনীয়
তোহমত আরোপ করা হয়েছে। অথচ এটি পরিষ্কারভাবে ইহুদী-নাছারাদের বানোয়াট গল্প
ব্যতীত কিছুই নয়। যারা তাদের নবীদের বিরুদ্ধে চুরি, যেনা ও অনুরূপ অসংখ্য
নোংরা তোহমত লাগিয়েছে ও হাযার হাযার নবীকে হত্যা করেছে (বাক্বারাহ ৯১)।
তাদের রচিত তথাকথিত তওরাত-ইঞ্জীল সমূহ (বাক্বারাহ ৭৯) এ ধরনের কুৎসায় ভরপুর
হয়ে আছে।
(২) একই সূরায় ২২ আয়াতের ব্যাখ্যায় মাননীয় তাফসীরকার বর্ননা করেছেন যে,
দাঊদ (আঃ)-এর ৯৯ জন স্ত্রী ছিল। অথচ তিনি অন্যজনের একমাত্র স্ত্রীকে তলব
করেন এবং তাকে বিবাহ করেন ও তার সাথে সহবাস করেন’ (নাঊযুবিল্লাহ)। একাজটি
যে অন্যায় ছিল, সেটা বুঝানোর জন্য দু’জন ফেরেশতা মানুষের বেশ ধরে
বাদী-বিবাদী সেজে অতর্কিতভাবে তাঁর এবাদতখানায় প্রবেশ করে। অতঃপর বিবাদী
তাকে বলে যে, সে আমার ভাই। সে ৯৯টি দুম্বার মালিক আর আমি মাত্র একটি
দুম্বার মালিক। এরপরেও সে বলে এটি আমাকে দিয়ে দাও এবং কথাবার্তায় আমার উপরে
কঠোরতা আরোপ করে’ (ছোয়াদ ২৩)। দাঊদ (আঃ) এটিকে অন্যায় হিসাবে বর্ণনা
বর্ণনা করলেন। অতঃপর তিনি বুঝতে পারলেন যে, এর মাধ্যমে তাঁকে পরীক্ষা করা
হয়েছে। ফলে তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন ও সিজদায় লুটিয়ে
পড়লেন, যা ২৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
এ ঘটনাটিকে সাদা চোখে দেখলে একেবারেই স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে হয় হবে, যা
সাধারণতঃ যেকোন বিচারকের নিকটে বা রাজদরবারে হয়ে থাকে। অথচ কাল্পনিকভাবে
দু’জনকে ফেরেশতা সাজিয়ে ও দুম্বাকে স্ত্রী কল্পনা করে তাফসীরের নামে রসালো
গল্প পরিবেশন করা হয়েছে।
প্রশ্ন হ’তে পারে, তাহ’লে দাঊদ (আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণ কি?
জবাব এই যে, দাঊদ (আঃ) আল্লাহর ইবাদতের জন্য একটা সময় নির্দিষ্ট করেছিলেন। ঐ
সময়টুকু তিনি কেবল ইবাদতেই রত থাকতেন। কিন্তু হঠাৎ পাঁচিল টপকিয়ে দু’জন
অপরিচিত লোক ইবাদতখানায় প্রবেশ করায় তিনি ভড়কে যান। কিন্তু পরে তাদের
বিষয়টি বুঝতে পারেন ও ফায়ছালা করে দেন। তাদের থেকে ভীত হওয়ার বিষয়টি যদিও
কোন দোষের ব্যাপার ছিল না, তবুও এটাকে তিনি আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুলের
খেলাফ মনে করে লজ্জিত হন এবং বুঝতে পারেন যে, এই ঘটনার দ্বারা আল্লাহ তাঁর
তাওয়াক্কুলের পরীক্ষা নিলেন। দ্বিতীয়তঃ অধিক ইবাদতের কারণে প্রজাস্বার্থের
ক্ষতি হচ্ছে মনে করে তিনি লজ্জিত হন এবং এজন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা
প্রার্থনা করেন ও সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।
দাঊদ (আঃ)-এর জীবনীতে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :
১. নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবান ও আমানতদার হওয়া। আরও প্রয়োজন
প্রজ্ঞা, ন্যায়নিষ্ঠা ও উন্নতমানের বাগ্মিতা। যার সব কয়টি গুণ হযরত দাঊদ
(আঃ)-এর মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণে ছিল।
২. এলাহী বিধান দ্বীন ও দুনিয়া দু’টিকেই নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। বরং
দ্বীনদার শাসকের হাতেই দুনিয়া শান্তিময় ও নিরাপদ থাকে। হযরত দাঊদ-এর
শাসনকাল তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ।
৩. দ্বীনদার শাসককে আল্লাহ বারবার পরীক্ষা করেন। যাতে তার দ্বীনদারী
অক্ষুণ্ণ থাকে। দাঊদ (আঃ) সে পরীক্ষা দিয়েছেন এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বস্ত্ততঃ তিনি ছিলেন আল্লাহর দিকে সদা প্রত্যাবর্তনশীল।
৪. যে শাসক যত বেশী আল্লাহর শুকরগুযারী করেন, আল্লাহ তার প্রতি তত বেশী সদয়
হন এবং ঐ রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি নাযিল করেন। বস্ত্ততঃ দাঊদ (আঃ)
সর্বাধিক ইবাদতগুযার ছিলেন এবং একদিন অন্তর একদিন ছিয়াম পালন করতেন।
৫. যে শাসক আল্লাহর প্রতি অনুগত হন, আল্লাহ দুনিয়ার সকল সৃষ্টিকে তার প্রতি
অনুগত করে দেন। যেমন দাঊদ (আঃ)-এর জন্য পাহাড়-পর্বত, পক্ষীকুল এবং লোহাকে
অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল।
[1]. তিরমিযী, হাসান ছহীহ, মিশকাত হা/১১৮, ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ-৩।
[2]. যথাক্রমে (১) বাক্বারাহ ২/২৫১; (২) নিসা ৪/১৬৩; (৩) মায়েদাহ ৫/৭৮; (৪) আন‘আম ৬/৮৪; (৫) ইসরা ১৭/৫৫; (৬) আম্বিয়া ২১/৭৮-৮০; (৭) নমল ২৭/১৫-১৬; (৮) সাবা ৩৪/১০-১১,১৩; (৯) ছোয়াদ ৩৮/১৭-২৬= ১০; মোট ২৩টি আয়াত।
[3]. তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন পৃঃ ৯৯০।
[4]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/৮; আমরা মনে করি স্থান সংকুলান বড় কথা নয়। যুদ্ধটাই বড় কথা। কেননা আমরা দেখেছি যে, পরবর্তীতৈ এর পাশেই আজনাদাইন ও ইয়ারমূক যুদ্ধে ২,৪০,০০০ রোমক সৈন্যের মুকাবিলায় মুসলমানরা ৪০,০০০ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করেছে ও বিজয়ী হয়েছে (ঐ, ৭/৭)।
[5]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪১৪ ‘ফিতান’ অধ্যায়, ১ অনুচ্ছেদ।
[6]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২২৫ ‘রাত্রিতে নফল ছালাতে উৎসাহ দান’ অনুচ্ছেদ-৩৩।
[7]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হা/৪৩৮৮।
[8]. কুরতুবী বলেন, ‘যদি উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়, তবে সেটি ছিল দাঊদ (আঃ)-এর নিজের ভাষায়, আরবী ভাষায় নয়’ (ঐ, তাফসীর ছোয়াদ ২০)।
[9]. দ্রঃ হামীম সাজদাহ ৪১/১১; মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, স্রষ্টা ও সৃষ্টিতত্ত্ব (ই,ফা,বা, ২০০৩) পৃঃ ৩৫৭, ৩৮৬-৮৯।
[10]. তিরমিযী, শারহুস সুন্নাহ, দারেমী, মিশকাত হা/৫৯১৮, ২২,২৪-২৬ ‘মো‘জেযা’ অনুচ্ছেদ-৯।
[11]. তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৬০৬৬ ‘ওছমানের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ; হাদীছ হাসান, ইরওয়া হা/১৫৯৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৬/৩৯-৪০ পৃ:। এর দ্বারা আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, আমৃত্যু ওছমান (রাঃ) ছিলেন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তার বিরোধীরা ছিল স্রেফ মিথ্যারোপকারী। এযুগেও তারা মিথ্যা রটনাকারী। অতএব সত্যসন্ধানীরা এদের অপপ্রচার থেকে সাবধান থাকবেন। -লেখক ।
[12]. মুসলিম, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায় হা/৬৭৭০।
[13]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ৬৫, পৃ: ১/৪৭৯
[2]. যথাক্রমে (১) বাক্বারাহ ২/২৫১; (২) নিসা ৪/১৬৩; (৩) মায়েদাহ ৫/৭৮; (৪) আন‘আম ৬/৮৪; (৫) ইসরা ১৭/৫৫; (৬) আম্বিয়া ২১/৭৮-৮০; (৭) নমল ২৭/১৫-১৬; (৮) সাবা ৩৪/১০-১১,১৩; (৯) ছোয়াদ ৩৮/১৭-২৬= ১০; মোট ২৩টি আয়াত।
[3]. তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন পৃঃ ৯৯০।
[4]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/৮; আমরা মনে করি স্থান সংকুলান বড় কথা নয়। যুদ্ধটাই বড় কথা। কেননা আমরা দেখেছি যে, পরবর্তীতৈ এর পাশেই আজনাদাইন ও ইয়ারমূক যুদ্ধে ২,৪০,০০০ রোমক সৈন্যের মুকাবিলায় মুসলমানরা ৪০,০০০ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করেছে ও বিজয়ী হয়েছে (ঐ, ৭/৭)।
[5]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪১৪ ‘ফিতান’ অধ্যায়, ১ অনুচ্ছেদ।
[6]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২২৫ ‘রাত্রিতে নফল ছালাতে উৎসাহ দান’ অনুচ্ছেদ-৩৩।
[7]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হা/৪৩৮৮।
[8]. কুরতুবী বলেন, ‘যদি উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়, তবে সেটি ছিল দাঊদ (আঃ)-এর নিজের ভাষায়, আরবী ভাষায় নয়’ (ঐ, তাফসীর ছোয়াদ ২০)।
[9]. দ্রঃ হামীম সাজদাহ ৪১/১১; মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, স্রষ্টা ও সৃষ্টিতত্ত্ব (ই,ফা,বা, ২০০৩) পৃঃ ৩৫৭, ৩৮৬-৮৯।
[10]. তিরমিযী, শারহুস সুন্নাহ, দারেমী, মিশকাত হা/৫৯১৮, ২২,২৪-২৬ ‘মো‘জেযা’ অনুচ্ছেদ-৯।
[11]. তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৬০৬৬ ‘ওছমানের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ; হাদীছ হাসান, ইরওয়া হা/১৫৯৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৬/৩৯-৪০ পৃ:। এর দ্বারা আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, আমৃত্যু ওছমান (রাঃ) ছিলেন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তার বিরোধীরা ছিল স্রেফ মিথ্যারোপকারী। এযুগেও তারা মিথ্যা রটনাকারী। অতএব সত্যসন্ধানীরা এদের অপপ্রচার থেকে সাবধান থাকবেন। -লেখক ।
[12]. মুসলিম, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায় হা/৬৭৭০।
[13]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ৬৫, পৃ: ১/৪৭৯
হযরত দাঊদ (আঃ) এর জীবনি, |
0 Comments