চুরি করা হারাম, চুরি করার পরিনতি জাহান্নাম।


আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ মুমীনদেরকে সেই কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, যার নির্দেশ পয়গম্বরদেরকে দিয়েছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর।’ (সূরা মু’মিনূন ৫১ আয়াত) তিনি আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি তোমরা শুধু তাঁরই উপাসনা করে থাক।’’ (সূরা বাকারাহ ১৭২ আয়াত)
অতঃপর তিনি সেই লোকের কথা উল্লেখ করে বললেন, যে এলোমেলো চুলে, ধূলামলিন পায়ে সুদীর্ঘ সফরে থেকে আকাশ পানে দু’ হাত তুলে ‘ইয়া রবব্! ‘ইয়া রবব্!’ বলে দো‘আ করে। অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম এবং হারাম বস্তু দিয়েই তার শরীর পুষ্ট হয়েছে। তবে তার দো‘আ কিভাবে কবুল করা হবে?’’ (মুসলিম) [1]
[1] মুসলিম ১০১৫, তিরমিযী ২৯৮৯, ৮১৪৮, ২৭১৭ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আব্দুল্লূহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামানের জন্য একটি লোক নিযুক্ত ছিল। তাকে কিরকিরাহ বলা হত। সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে জাহান্নামী।’’ অতঃপর (এ কথা শুনে) সাহাবীগণ তাকে দেখতে গেলেন (ব্যাপার কী?) সুতরাং তাঁরা একটি আংরাখা (বুক-খোলা লম্বা ও ঢিলা জামা) পেলেন, সেটি সে (গনীমতের মাল থেকে) চুরি করে নিয়েছিল।[1]
[1] সহীহুল বুখারী ৩০৭৪, ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, আহমাদ ৬৪৫৭ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আদী ইবনু আমীরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করি, অতঃপর সে আমাদের কাছে সূঁচ অথবা তার চেয়ে বেশী (কিম্বা কম কিছু) লুকিয়ে নেয়, তো এটা খিয়ানত ও চুরি করা হয়। কিয়ামতের দিন সে তা সঙ্গে নিয়ে হাজির হবে।’’ এ কথা শুনে আনসারদের মধ্যে একজন কৃষ্ণকায় মানুষ উঠে দাঁড়ালেন, যেন আমি তাকে (এখন) দেখছি। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি (যে কাজের দায়িত্ব আমার উপর অর্পণ করেছিলেন) তা আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার কি হয়েছে?’’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে এ রকম কথা বলতে শুনলাম।’ তিনি  বললেন, ‘‘আমি এখনো বলছি যে, যাকে আমরা কোন কাজে নিযুক্ত করি, সে যেন অল্প-বেশী (সমস্ত মাল) আমার কাছে নিয়ে আসে। অতঃপর তা হতে তাকে যতটা দেওয়া হবে, তাইই সে গ্রহণ করবে এবং যা হতে তাকে বিরত রাখা হবে, সে তা থেকে বিরত থাকবে।’’[1]
[1] মুসলিম ১৮৩৩, আবূ দাউদ ৩৫৮১, আহমাদ ১৭২৬৪ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উমার ইবনু খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন খাইবারের যুদ্ধ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী এসে বললেন, ‘অমুক অমুক শহীদ হয়েছে।’ অতঃপর তাঁরা একটি লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং বললেন, ‘অমুক শহীদ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘কখনোই না। সে (গনীমতের) মাল থেকে একটি চাদর অথবা আংরাখা (বুক-খোলা লম্বা ও ঢিলা জামা) চুরি করেছিল, সে জন্য আমি তাকে জাহান্নামে দেখলাম।’’[1]
[1] মুসলিম ১১৪, তিরমিযী ১৫৭৪, আহমাদ ২০৩,৩৩০, দারেমী ২৪৮৯ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোনো আসবাব-পত্র নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে। (কিন্তু এর সাথে সাথে সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো (অবৈধরূপে) মাল ভক্ষণ করেছে। কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে, এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকীরাশি অন্যান্যদের দাবী পূরণ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’[1]
[1] মুসলিম ২৫৮১, তিরমিযী ২৪১৮, আহমাদ ৭৯৬৯, ৮২০৯, ৮৬২৫ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকেই বর্ণিত, যে মাখযূমী মহিলাটি চুরি করেছিল তার ব্যাপারটি কুরায়েশদেরকে চিন্তান্বিত করে তুলেছিল। সুতরাং তারা বলল, ‘এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় উসামাহ ইবন যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আর কে সাহস করতে পারবে?’ ফলে উসামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ডবিধির ব্যাপারে তুমি সুপারিশ করছ?’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি প্রদান করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা চুরি করত, তাহলে আমি তারও হাত কেটে দিতাম।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]
[1] সহীহুল বুখারী ৩৪৭৫, ২৬৪৮, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, মুসলিম ১৬৮৮, তিরমিযী ১৪৩০, নাসায়ী ৪৮৯৫, ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, ৪৮১৯, ৪৯০০, ৪৯০১, ৪৯০২, ৪৯০৩, আবূ দাউদ ৪৩৭৩, ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, আহমাদ ২২৯৬৮, ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَٱجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ ٢ ﴾ [النور : ٢] 
অর্থাৎ ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, এদের প্রত্যেককে একশো করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করার সময় তাদের প্রতি কোন দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে; যদি [সত্যিকারে] তোমরা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান এনে থাক। (সূরা নূর ২ আয়াত)  
১/১৭৭৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত যে, চুরির অপরাধে অপরাধিনী মাখযূম গোত্রের একজন মহিলার ব্যাপার কুরাইশ বংশের লোকদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। সাহাবীগণ বললেন, ‘ওর ব্যাপারে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কে কথা বলতে পারবে?’ তাঁরা বললেন, ‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় পাত্র উসামা ইবনে যায়েদ ছাড়া কেউ এ সাহস পাবে না।’ সুতরাং উসামা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বলে উঠলেন, ‘‘তুমি আল্লাহর এক দণ্ডবিধান [প্রয়োগ না করার] ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’’ পরক্ষণেই তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিলেন এবং বললেন, ‘‘[হে লোক সকল!] নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের লোকেরা এ জন্য ধ্বংস হয়েছিল যে, যখন তাদের কোন সম্মানিত ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তখন তার উপর শরীয়তের শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত, তাহলে অবশ্যই আমি তার হাতও কেটে দিতাম।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, [উসামার সুপারিশে] আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা রঙিন [লাল] হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি আল্লাহর এক দণ্ডবিধান [কায়েম না করার] ব্যাপারে সুপারিশ করছ?!’’ উসামা বললেন, ‘আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, হে আল্লাহর রসূল!’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলে ঐ মহিলার হাত কেটে দেওয়া হল।’
[1] সহীহুল বুখারী ২৬৪৮, ৩৪৭৫, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, মুসলিম ১৬৮৮, তিরমিযী ১৪৩০, নাসায়ী ৪৮৯৫, ৪৮৯৭-৪৯০৩, আবূ দাউদ ৪৩৭৩, ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, আহমাদ ২২৯৬৮, ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

Post a Comment

0 Comments