ইফতার করার সঠিক সময় | তাড়াতাড়ি ইফতার করার সহিহ হাদিস। |
তাড়াতাড়ি ইফতার করার ফযিলতঃ
রাসুলুল্লাহ ছাঃ বলেছেন, দীন চিরদিন বিজয়ী থাকতে যতদিন লোকেরা ইফতার
তারাতারি করবে ৷ কেননা ইহুদি নাসারারা দেরিতে ইফতার করে ৷ (আবু দাউদ, ইবনু
মাযাহ, মিশকাত, হা/1995)
অন্য বর্ননায় আছে, রাসূল ছাঃ বলেছেন, আল্লাহ বলেন আমার বান্দাদের নিকট ঐ
বান্দা অধিক প্রিয় যে তারাতারি ইফতার করে ৷ (তিরমিজি, মিশকাত হা/1998)
উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন রাত্রি এ (পূর্ব) দিক থেকে
আগমন করবে এবং দিন এ (পশ্চিম) দিক থেকে প্রস্থান করবে এবং সূর্য ডুবে যাবে,
তখন অবশ্যই রোজাদার ইফতার করবে।” (বুখারী ও মুসলিম) [1]
সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যতদিন পর্যন্ত মুসলমানেরা শীঘ্র ইফতার করবে ততদিন
তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।” (বুখারী ও মুসলিম) [2]
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাতদিন লোকেরা যথাসময়ে ইফতার করবে ততদিন তারা
কল্যাণের সাথে থাকবে। তাই তোমরা যথাসময়ে ইফতার করো। কারণ ইহুদীরা বিলম্বে
ইফতার করে।[3]
আবূ আত্বিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও মাসরূক
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট উপস্থিত হলাম। মাসরুক তাঁকে বললেন,
‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরদের মধ্যে দু’জন সহচর
কল্যাণের ব্যাপারে আদৌ ত্রুটি করেন না। তাঁদের একজন মাগরিব ও ইফতার সত্বর
সম্পাদন করেন এবং অপরজন মাগরিব ও ইফতার দেরীতে সম্পাদন করেন।’ এ কথা শুনে
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে মাগরিব ও ইফতার সত্বর করেন?’
তিনি বললেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু।’ তিনি বললেন,
‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন।’ (মুসলিম)
[4]
আবূ ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, (একবার) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সাহচর্যে পথ চলছিলাম, তখন তিনি রোজাদার ছিলেন। অতঃপর যখন সূর্য অস্ত গেল,
তখন তিনি সফররত সঙ্গীদের একজনকে বললেন, “হে অমুক! বাহন থেকে নেমে আমাদের
জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি আর একটু সন্ধ্যা
করতেন (তাহলে ভাল হত।)’ তিনি বললেন, “তুমি বাহন থেকে নামো এবং আমাদের জন্য
ছাতু ঘুলে দাও।” সে বলল, ‘এখনো দিন হয়ে আছে।’ তিনি আবার বললেন, “তুমি নামো
এবং আমাদের জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং সে নেমে তাঁদের
জন্য ছাতু ঘুলে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন
এবং বললেন, “যখন তোমরা প্রত্যক্ষ করবে যে, রাত্রি এ (পূর্ব) দিক থেকে এসে
পড়েছে, তখন অবশ্যই রোজাদার ইফতার করবে।” আর সেই সাথে তিনি পূর্বদিকে ইঙ্গিত
করলেন। (বুখারী ও মুসলিম) [5]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ার আগে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার
করতেন। যদি টাটকা পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর যোগে
ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না হত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।’
(আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান) [6]
ইমাম নাওয়াবী শিরোনামায় দুর কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার হাদিসটি উল্লেখ করেননি। হাদিসটি নিম্নরূপ:-
عَنِ ابنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا
أَفْطَرَ قَال: «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ
الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ». رواه أبو داود
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন,
“যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ।”
অর্থাৎ পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইন শাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল। (আবূ দাউদ)
[1] সহীহুল বুখারী ১৯৫৪, মুসলিম ১১০০, তিরমিযী ৬৯৮, আবূ দাউদ ২৩৫১, আহমাদ ১৯৩, ২২২, ৩৪০, ৩৮৫, দারেমী ১৭০০ হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] সহীহুল বুখারী ১৯৫৭, ১০৯৮, তিরমিযী ৬৯৯, ইবনু মাজাহ ১৬৯৭, আহমাদ ২২২৯৮,
২২৩২১, ২২৩৩৯, ২২৩৫২, ২২৩৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ৬৩৮, দারেমী ১৬৯৯ হাদিসের
মানঃ সহিহ
[3]আবূ দাউদ ২৩৫৩, আহমাদ ২৭২১৮, মিশকাত ১৯৯৫, সহীহ আবী দাউদ ২০৩৮। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ
[4] মুসলিম ১০৯৯, তিরমিযী ৭০২, নাসায়ী ২১৫৮, ২১৫৯-২১৬১, আবূ দাউদ ২৩৫৪, আহমাদ ২৩৬৯২, ২৪৮৭১ হাদিসের মানঃ সহিহ
[5] সহীহুল বুখারী ১৯৪১, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৫৮, ৫২৯৮, মুসলিম ১১০১, আবূ দাউদ ২৩৫২, আহমাদ ১৮৯০৫, ১৮৯২১ হাদিসের মানঃ সহিহ
[6] আবূ দাউদ ২৩৫৬, তিরমিযী ৬৯৪, আহমাদ ১২২৬৫ হাদিসের মানঃ হাসান
0 Comments