প্রশ্নোত্তরে তাওহীদ (২য় পর্ব)
{প্রশ্ন: ১০৬} জাদুর আভিধানিক এবং পারিভাষিক অর্থ কী?
উত্তর:
আভিধানিক অর্থ হলো: সূক্ষ্ম কারচুপি। পারিভাষিক অর্থ হলো: মন্ত্র পাঠ করে
ঝাড়া, গিরায় ফুঁক দেওয়া, তাবিজ করা এবং ঐ ধরনের অন্যান্য কাজ করা যা দ্বারা
অন্যের ক্বলবে, শরীরে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর ঐ প্রতিক্রিয়ায় কেউ
রোগাক্রান্ত হয়, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়, কারো মৃত্যু ঘটে কিংবা
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
{প্রশ্ন: ১০৭} জাদুর হুকুম কি? জাদুকরের শাস্তি এবং তার দলীল কী?
উত্তর: জাদু হারাম; কেননা তা ঈমান ও তাওহীদের পরিপন্থী কুফরী কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿
وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنۡ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحۡنُ
فِتۡنَةٞ فَلَا تَكۡفُرۡۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنۡهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ
بِهِۦ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَزَوۡجِهِۦ﴾ [البقرة: ١٠٢]
‘‘তারা
কাউকেই জাদু শিখাতোনা একথা না বলে যে, আমরা পরীক্ষার জন্য অতএব তোমরা
কুফরি করো না। অতঃপর তারা তাদের নিকট থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী
ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে’’। (সূরা আল-বাক্বারা; ১০২)
জাদুকরের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড, আর দলীল হলো:
(১) জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু সনদে বর্ণিত আছে;
«حَدُّ السَّاحِرِ ضَرْبَةٌ بِالسَّيْفِ»
‘‘জাদুকরের দণ্ড হচ্ছে তরবারী দ্বারা (শিরচ্ছেদ)’’। (তিরমিযী-১৪৫০ হাকেম; ৪/৩৬০ বায়হাক্বী: ৮/১২৮)
(২) ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার খিলাফতকালে রাষ্ট্রিয় কর্মকর্তাদের নিকট ফরমান জারি করেছেন যে,
«اقتلوا كل ساحر وساحرة»
‘‘তোমরা প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলা জাদুকরদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদেশ করেছেন’’। (বুখারী, আবুদাউদ, মুসন্নাফে আব্দুর রাযযাক)
(৩)
উম্মুল মু’মিনীন হাফসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁরই
ঘরে আশ্রিত একটি মেয়ে তাঁকে জাদু করে, ফলে সে মেয়েটিকে হত্যা করার আদেশ
দেওয়া হয় এবং তাকে হত্যা করা হয়। (মালেক তাঁর মুআত্তায় এবং বায়হাকী (৮/১৩৬)
বর্ণনা করেন, দেখুন: মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৬/২৮০)
অতএব,
জাদুকরকে হত্যার দলীল আল্লাহর রাসূলের তিনজন সাহাবী থেকে সহীহভাবে
প্রমাণিত হল; তারা হলেন:- ওমর, তাঁর মেয়ে হাফসা এবং জুনদুব রাদ্বিয়াল্লাহ
তা‘আলা আনহুম। (আল-বুখারী ফিত-তারিখ: ২/২২২, বায়হাকী: ৮/১৩৬)
{প্রশ্ন: ১০৮} মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الْعِيَافَةُ، وَالطِّيَرَةُ، وَالطَّرْقُ مِنَ الجِبْتِ»
(আহমাদ ৩/৪৭৭, আবু দাউদ: ৩৯০৮, নাসায়ী ফিল কুবরা: ৮/২৭৫, আল-বাগায়ী ফি শারহীস সুন্নাহ; ১২/১৭৭)
হাদীসে উল্লেখিত শব্দগুলির ভাবার্থ কি?
উত্তর: (الْعِيَافَةُ)
(আল-‘ইয়াফা) = পাখীর ডাক, পাখী উড়ানোর মাধ্যমে লক্ষণ গ্রহণ করা এবং পাখীর
নড়াচড়া। পাখীর নাম, পাখীর ডাক এবং চলাচল অনুযায়ী শুভ বা অশুভ লক্ষণ মনে
করা।
(الطَّرْقُ) (আত্তরক্ব) = যমীনের রেখা অথবা বালুর মধ্যে রেখাপাত। কিংবা জাদু মন্ত্রের প্রয়োজনে ঢিল ছুড়া অতঃপর তথাকথিত গায়েব আবিস্কার করা।
(الطِّيَرَةُ) (আত-ত্বিয়ারাহ) = শ্রুত অথবা দর্শিত অশুভ লক্ষণ।
(الجِبْتِ) (আল-জিবত) = জাদু-মন্ত্র, কিংবা শয়তানের সূর শব্দ ঝংকার।[33]
{প্রশ্ন: ১০৯} নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকজন সহধর্মিনী হতে বর্ণিত আছে: রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ، لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً»
‘‘যে
ব্যক্তি গণকের কাছে যাবে এবং তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করবে অতঃপর তাকে কিছু
জিজ্ঞেস করবে সে ব্যক্তির চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না’’।
(মুসলিম-২২৩০)
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে: নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"مَنْ أَتَى كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ "
‘‘যে
জ্যোতিষের কাছে যাবে এবং তাদের কথা বিশ্বাস করলো সে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে নাযিলকৃত বিষয়ে কুফরি করলো’’। (আবু দাউদ: ৩৯০৪)
হাকেম সহ আরো চারজন বিশুদ্ধতার শর্ত অনুযায়ী আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে;
«مَنْ أَتَى كَاهِنًا، أَوْ عَرَّافًا، فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»
এখানে মুহাম্মদ এর উপর নাযিলকৃত বিষয় কী?
উত্তর: মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং সহীহ আল-হাদীস।
{প্রশ্ন:১১০} উল্লেখিত হাদীস দুটির বিষয় বস্তুকে একীভূত করলে কি অর্থ দাড়ায়? হাদীস দুটির শিক্ষণীয় বিষয়গুলি কী কী?
উত্তর:
একটিতে বলা হয়েছে চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। আর এটা হবে গণকের কাছে
গমন করে, তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার কারণে। কেননা কতিপয় বিশুদ্ধ বর্ণনায়
(فَصَدَّقَهُ) ‘বিশ্বাস করা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি।
অপর এক বর্ণনায় কুফরী করার কথা বলা হয়েছে আর এর অর্থ কুফরী কাজ অর্থাৎ গমনকারী ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।
হাদীসের শিক্ষা:
(ক)
জাদুকর, গণক, জ্যোতিষ এবং এ ধরনের কাজের সাথে জড়িতরা কাফের। কেননা তারা
গায়েবী বিষয়ে জ্ঞানের দাবী করে অথচ গায়েবী বিষয় একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতা‘আলাই পরিজ্ঞাত। অন্য কেউই গায়েব জানে না।
(খ)
জাদুকর, জ্যোতিষী এবং এ ধরনের অন্যান্যদের কাছে গমণ করা, কোনো কিছু জানতে
চাওয়া, তাদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ
করা হয়েছে।
(গ) তাদের কাছে যাওয়া এবং বিশ্বাস করা কুফরী কাজ।
(ঘ) জাদুকর-জ্যোতিষীদেরকে বিশ্বাস করা আল-কুরআনের প্রতি ঈমানের পরিপন্থী।
{প্রশ্ন: ১১১} ‘আররাফ (عراف), রম্মাল (رمال), কাহেন (كاهن), মুনাজ্জেম (منجم), এ শব্দসমূহের মধ্যে অর্থগত পার্থক্য কী?
উত্তর: যারা গায়েব জানার দাবী করে এগুলো তাদেরই নাম কিন্তু তাদের পদ্ধতি ভিন্ন:
আররাফ
= যে ওৎপেতে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সামষ্টিক বিষয়ে ভবিষ্যৎ বাণী শুনায়। অথবা
কারো মনের কথা বলে দেয়, কিংবা সে দাবী করে যে; বিভিন্ন বিষয়ের সুচনাতেই সব
কিছু বলে দিতে পারে যেমন; চোরের সন্ধান এবং জিনিস-পত্র কোথায় আছে ইত্যাদি।
রম্মাল = যে ব্যক্তি ঢিল ছুড়ে কিংবা মাটিতে রেখা চিত্র এঁকে গায়েব বা অনুপস্থিত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার দাবী করে।
কাহেন = জাদুকর; যে গায়েবের খবর জানার দাবী করে।
মুনাজ্জেম = জ্যোতিষ (হস্তরেখাবিদ); যে ব্যক্তি গ্রহ নক্ষত্রের সাহায্যে দূনিয়ার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আগাম কথা বলে।
জ্যোতিষী তিন প্রকার:
(এক) কুফরী; এমন বিশ্বাস করা যে, গ্রহ-নক্ষত্রের আপন প্রভাবেই পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ সংঘটিত হয়।
(দুই)
হারাম এবং এক প্রকার শির্ক; যখন গ্রহ নক্ষত্র একটা অপরটার কাছাকাছি আসা
কিংবা নির্দিষ্ট কক্ষপথ পরিবর্তন করাকে বিভিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনার প্রমাণ
হিসেবে উপস্থাপন করে। পত্র-পত্রিকায় তথাকথিত মহাজাতকের নক্ষত্র বিশ্লেষণ
পূর্বক সাপ্তাহিক রাশিফল প্রকাশ করাও ঐসবের অন্তর্ভুক্ত। অথচ সব কিছুই
সংঘটিত হয় আল্লাহর ইচ্ছায়।
(তিন) আকাশপানে চেয়ে নক্ষত্র দেখে সময় ও ক্বিবলা নির্বাচন করা; আর এটা জায়েয আছে। মহামহিয়ান আল্লাহর বাণী:
﴿ وَعَلَٰمَٰتٖۚ وَبِٱلنَّجۡمِ هُمۡ يَهۡتَدُونَ ١٦ ﴾ [النحل: ١٦]
‘‘আর তাহারা নক্ষত্র এবং চিহ্নসমূহ দ্বারা পথনির্দেশ লাভ করে’’। (সূরা আন নাহল-১৬)
শায়খুল
ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: আর-রাফ (তথ্য চোর) হচ্ছে কাহেন বা
জাদু-মন্ত্রনাকারী ঠাকুর, জ্যোতিষ, গণক, রেখাবিদ ইত্যাদি। এরা সকলেই প্রায়
একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিষয়ে তাত্বিক ও বিশ্লেষণমূলক কথা বলে থাকে।[34]
{প্রশ্ন: ১১২} জ্বিন যদি শর্তারোপ করে যে; সে অন্য জ্বিনের সহযোগিতা গ্রহণ ব্যতীত মানুষের ভিতর থেক বের হবে না, তাহলে কী করতে হবে?
উত্তর:
সম্মানীত শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায জ্বিনের সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণকে
মাকরূহ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। আর জ্বিন যে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে তিনি তা
সঠিক মনে করেন।[35]
আর শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: তাদের সাহায্য নেওয়া মুবাহ (সাধারণ ব্যাপারে এতে সওয়াব গুনাহ কিছু নেই)।
মুবাহ
প্রসঙ্গে আমার কথা হলো: বর্তমানকালে জ্বিন ও জাদুর ধোকাবাজী, অনিষ্টতা
দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব যারা জ্বিন ও জাদুর ধোকা তামাশায় লিপ্ত
তাদের সাথে সহযোগিতা করা যাবে না। কেননা জ্বিন ও জাদুমন্ত্র ঈমান আক্বীদার
জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, বিপদজনক এবং বিভ্রান্তির উপাদান। তাছাড়াও এর দ্বারা
বিশ্বাসী মুমিনদের ক্ষতি সাধন করে কষ্ট দেওয়া হয়। এমন কি ঈমানী দুর্বলতাও
দেখা দিতে পারে যেহেতু জ্বিন এবং জাদু-মন্ত্রের সঠিক ধারণা বা অবস্থা
স্পষ্ট নয়। আর তাই বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। মহান আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
{প্রশ্ন: ১১৩} তাত্বাইউর কী এবং সেটার হুকুম কী?
উত্তর:
তাত্বাইউর (تطير) হলো; পাখি বা অন্যকিছু দেখে বা শ্রবণ করে শুভ-অশুভ
নির্ধারণ ও বিশ্বাস করা। শুভ-অশুভ মানা এবং বিশ্বাস করা হারাম; কেননা তা
শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
{প্রশ্ন: ১১৪} আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ، وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ» وزاد مسلم: «ولا نوء ولا غول» رواه البخاري ومسلم.
হাদীসে বর্ণিত নিচে দাগ দেওয়া শব্দসমূহের ভাবার্থ কি?
উত্তর:
উক্ত হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলিয়াতের
কুসংস্কারসমূহ বর্জনের কথা বলেছেন। জাহেলরা আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত বিভিন্ন
কারণে শুভ-অশুভ লক্ষণ বিশ্বাস ও নির্ধারণ করে নিত। যেমন; আদওয়া: রুগ্ন
ব্যক্তির রোগ ব্যাধি সংক্রমিত হয়ে সুস্থ্য ব্যাক্তিকে আক্রান্ত করে। জাহেলী
যুগের লোকেরা বিশ্বাস করতো যে; রোগ-ব্যধি আপনা-আপনি বিভিন্ন জনকে আক্রান্ত
করতো আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীতই।
ত্বিয়ারাতা: উড়ন্ত কোনকিছুর দ্বারা অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা।
হা-ম্মা:
রাতের পাখী পেঁচা। জাহেল সম্প্রদায় বিশ্বাস করতো যে, এ পাখী যার ঘরের উপরে
আসবে তার মৃত্যু অথবা ঐ ঘরের যে কোনো সদস্যের মৃত্যু সংবাদ বুঝতে হবে। আর
হাদীসে এজাতীয় বিশ্বাসকে ভুল আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সফর:
এটা হিজরী ২য় মাস, জাহেলী লোকেরা এ মাসকে অশুভ মনে করতো। আর কেউ কেউ বলেন,
এটা হলো পেটের ভিতরের কৃমি যা ক্ষুধার সময় নড়াচড়া করে হয়তবা জীবনই বিপন্ন
করে দেয়। অজ্ঞ বা জাহেল লোকেরা বিশ্বাস করে যে, ঐসব কৃমি জাতীয় কিট
খোস-পাচড়া থেকেও বিপদজনক। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগুলোকেও
বাতিল অলিক বলেছেন।
নাওউ: যে স্থানে তারকা পতিত হয়। কেউ কেউ বলেন যে, এটা একটা তারকা এর কারণেই বৃষ্টি বর্ষিত হয় বলে জাহেল লোকদের ধারণা।
গৌল:
ভূত-প্রেত; এক ধরনের শয়তান। ইসলাম পূর্ব অন্ধকার যুগের লোকেরা বিশ্বাস
করতো যে, এ শয়তান তাদেরকে পথে-ঘাটে বাধা দিয়ে ও বিভ্রান্ত করে পথ ভুলিয়ে
বিপদাক্রান্ত করে থাকে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো
অস্বীকার করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করে এবং তাঁর উপর
তাওয়াক্কুল (নির্ভর) করে তাকে কেউই বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয় না।[36]
{প্রশ্ন: ১১৫) আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসূল বলেন:
«لَا عَدْوَى، وَلَا طِيَرَةَ، وَيُعْجِبُنِي الْفَأْلُ» قَالَ قِيلَ: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ: «الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ»
অনুরূপ ‘‘উরওয়াহ ইবনে আমের আল-কুরাশী রাদিয়াল্লাহ বলেন যে,
ذُكِرَتِ
الطِّيَرَةُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ:
«أَحْسَنُهَا الْفَأْلُ وَلَا تَرُدُّ مُسْلِمًا، فَإِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ
مَا يَكْرَهُ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ لَا يَأْتِي بِالْحَسَنَاتِ إِلَّا
أَنْتَ، وَلَا يَدْفَعُ السَّيِّئَاتِ إِلَّا أَنْتَ، وَلَا حَوْلَ وَلَا
قُوَّةَ إِلَّا بِكَ»
রাসূল
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট ত্বিয়ারাহ (অশুভ মানা) সম্পর্কে
বলা হলো। তিনি বললেন, উত্তম হলো ফাল বা সুন্দর মন জুড়ান শুনে সুলক্ষণ
নেওয়া, আর যেন কোনো মুসলিমকে ফিরিয়ে না দেয়। বরং তোমাদের কেউ যদি কারো অশুভ
কিছু দেখে তাহলে সে যেন দো‘আ করে এ বলে যে, ‘‘আল্লাহম্মা লা ইয়াতী বিল
হাসানাতি ইল্লা আনতা। ওয়ালা ইয়াদফাউস সাইয়েআতা ইল্লা আনতা, অলা হাওলা অলা
কুআতা ইল্লা বিকা। (আবু দাউদ:৩৯১৯, বায়হাকী: ৮/১৩৯)
ত্বিয়ারাহ কত প্রকার এবং কী কী? ফাল কি, ফাল ও ত্বিয়ারাহর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ত্বিয়ারাহ দু’ প্রকার,
(১)
ফাল; অর্থাৎ সুন্দর বাক্য উচ্চারণ বা মন জুড়ান কথা যা মানুষ শ্রবণ করে
মানসিক প্রশান্তি লাভ করে এবং আনন্দ অনুভব করে যার ফলে মনের হতাশা-ভয় দূর
হয়ে যায়। অতঃপর আশার আলোতে উদ্যম ফিরে আসে, সুলক্ষণ গ্রহণ করে মহান আল্লাহর
প্রতি আস্থা দৃঢ় হয়। এটা প্রশংসনীয় কাজ; কেননা এর ফলে আল্লাহর প্রতি
সুন্দর ও ভাল ধারণার উদ্ভব হয়, এটা জায়েয।
যেমন
ধরুন: যখন কেউ অসুস্থ ব্যক্তিকে বলে যে, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন,
কেননা এটা সাধারণ অসুস্থতা। অসুস্থ ব্যক্তিও সুস্থতার আশায় মনে প্রশান্তি
অনুভব করে। আর কারো কিছু হারিয়ে যাবার খবর শুনে তাকে যদি বলা হয় যে, আপনি
তা ফিরে পাবেন তাহলে সেও হারানো দ্রব্য-সামগ্রী ফিরে পাবার আশায় আনন্দিত
হবে।
(দুই) ত্বিয়ারা মুহাররমা: অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকে অশুভ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে ভিত্তি নির্ধারণ করা হারাম।
মানুষ
কোনো কিছু করা বা না করার ব্যাপারে যে সব অশুভ লক্ষণের উপর নির্ভর করে
থাকে তা নিন্দনীয় কুসংস্কার। কেননা তা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল নয় বরং
আল্লাহর ব্যাপারে নেতিবাচক মন্দ ধারণার উদ্ভব ঘটায়।
‘ফাল’
এবং ‘ত্বিয়ারা’র মধ্যে পার্থক্য হলো যে; ফাল ভাল এবং মন্দের জন্যে ব্যবহৃত
হয় আর ত্বিয়ারাহ শুধু মন্দ বা অশুভ ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত হয়।
{প্রশ্ন: ১১৬} রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«اللَّهُمَّ
لَا يَأْتِي بِالْحَسَنَاتِ إِلَّا أَنْتَ، وَلَا يَدْفَعُ السَّيِّئَاتِ
إِلَّا أَنْتَ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ»
হাদীসে উল্লেখিত দো‘আর অর্থ ও শিক্ষণীয় কি?
উত্তর:
‘‘হে আল্লাহ তুমি ছাড়া আর কেউ কল্যাণ এনে দিতে পারে না এবং তুমি ব্যতীত আর
কেউ অনিষ্টতা প্রতিরোধ করতে পারে না। আর তুমি ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে অসীম
শক্তি-সামর্থ্য অন্য কারোই নেই’’। (আবু দাউদ: ৩৯১৯, বায়হাক্বী: ৮/১৩৯)
কল্যাণের অর্থ হলো; নেয়ামত ও অনুগ্রহ। আর অনিষ্টতার অর্থ হলো; বিপদ-মুসিবত।
আপনা
আপনি কিংবা কোনো সংকেত অনুযায়ী কল্যাণ হয় না এবং বিপদ আপদ দূরীভূত হয় না
বরং একমাত্র লা শরীক আল্লাহই কল্যাণকারী ও তিনিই বিপদ-আপদ দূর করে দেন। আর
একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোনো অবস্থার পরিবর্তন হয় না এবং লা শরীক
আল্লাহই সর্ববিষয়ে মহা পরাক্রমশালী শক্তিধর[37]।
এ দো‘আর শিক্ষনীয় বিষয় হলো:
(ক) মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ইচ্ছা শক্তি ব্যতীত কারোই কিছু করার সামর্থ্য ও সাধ্য নেই।
(খ) ভালো কিছু হওয়া কিংবা আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সব কিছুই আল্লাহর উপর নির্ভরশীল এবং এর সাথে অন্য কারো সম্পর্ক নেই।
{প্রশ্ন:
১১৭} আল্লাহ কেন তারকারাজী সৃষ্টি করেছেন এবং এর দলীল কী? এগুলো যে
উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে তা ব্যতীত অন্য কিছু বিশ্বাস করার হুকুম কি?
উত্তর: আল্লাহ ৩টি বৈশিষ্ট্য দিয়ে তারকারাজী সৃষ্টি করেছেন;
(১) আকাশের শোভাবর্ধনের জন্য; মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَلَقَدۡ زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنۡيَا بِمَصَٰبِيحَ ﴾ [الملك: ٥]
‘‘আমরা দুনিয়ার আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দিয়ে’’। (সূরা আল-মুলক: ৫)
(২) শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপ করার জন্যে; মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَجَعَلۡنَٰهَا رُجُومٗا لِّلشَّيَٰطِينِۖ ﴾ [الملك: ٥]
‘‘আর আমরা তা শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপ করার জন্য প্রস্তুত রেখেছি’’। (সূরা আল মূলক: ৫)
(৩)
আর যেন এর সাহায্যে মানুষ দিক নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ দিক নির্ণয়
উপকরণও এগুলো সৃষ্টির উদ্দেশ্য বটে। যেমন; মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَعَلَٰمَٰتٖۚ وَبِٱلنَّجۡمِ هُمۡ يَهۡتَدُونَ ١٦ ﴾ [النحل: ١٦]
‘‘আর তা (দিক নির্ণয়কারী) চিহ্ন বা উপকরণ এবং তারা নক্ষত্রের সাহায্যে পথ নির্দেশ লাভ করে থাকে” (সূরা আন-নাহল: ১৬)
অতএব
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য ব্যতীত তারকারাজীর অন্য কোনো ক্ষমতা বা গুণাবলী আছে মনে
করা সত্যের অপলাপ এবং ভুল। আর যে ব্যক্তি নক্ষত্ররাজীর ব্যাপারে ভ্রান্ত
পথ অবলম্বন করলো সে সর্বপ্রকার কল্যাণ থেকে নিজকে বঞ্চিত করলো; যেহেতু সে
অজানা ব্যাপার কল্পনা প্রসূত মনগড়া সমাধানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।
{প্রশ্ন: ১১৮} ইসতিসকা (استسقاء) কী এবং তার ভাবার্থ কী? আর আনওয়া (أنواء) কী? এ নামকরণের কারণ কী?
উত্তর: ইসতিসকা হচ্ছে পানির জন্যে প্রার্থনা। পানির প্রবাহ এবং বৃষ্টি বর্ষিত হওয়ার স্থান। আনওয়া বহুবচন এক বচনে ‘নাও’ (نوء)
যা নক্ষত্র পতিত হওয়ার স্থান, কারো কারো মতে তা নক্ষত্র এবং তারকা। জাহেলী
যুগে আরবরা মনে করত যে, এক তারকা উদিত হওয়া এবং অন্যটি অস্ত যাওয়ার কারণে
বৃষ্টি হয়। তারা বৃষ্টির সাথে তারকার একটি সম্পর্ক আছে মনে করত, আর তা
হচ্ছে চন্দ্রেয় উদয় অস্ত যাওয়ার স্থান। ‘নাওয়’ বলা হয় এ জন্যে যে, তা
পশ্চিমে পতিত হয় আবার পূর্ব হতে তা উদিত হয় এবং আবির্ভাব ঘটে বা প্রস্ফুটিত
হয়।
{প্রশ্ন: ১১৯} আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ وَتَجۡعَلُونَ رِزۡقَكُمۡ أَنَّكُمۡ تُكَذِّبُونَ ٨٢ ﴾ [الواقعة: ٨٢]
‘‘আর সেটাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেই বুঝি তোমরা তোমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে চাও’’। (সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৮২)
এ আয়াতের ব্যাখ্যা কি?
উত্তর:
মহান আল্লাহ বলেন যে, হে মুশরিক সম্প্রদায়, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর
রহমতের ধারা প্রবাহিত করেছেন, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর ফসল উদ্ভিদ
অংকুর হতে বেড়িয়ে আসছে এবং দুগ্ধপোষ্যদের জন্য দুধের ব্যবস্থা হচ্ছে। আর
বান্দাদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্যতার উদ্ভব হচ্ছে এবং মাঠ-ঘাট প্রান্তর
সজীব-সতেজ হয়ে উঠছে। অথচ তোমরা হে মুশরিক সম্প্রদায়, আল্লাহর ঐ সব নিয়ামত
অনুগ্রহকে গ্রহ-নক্ষত্রের কৃপা হিসেবে চিহ্নিত করে নির্জলা মিথ্যাবাদিতায়
লিপ্ত রয়েছো।
{প্রশ্ন: ১২০} মহব্বাত বা ভালোবাসা কত প্রকার, কী কী এবং ইহার তাৎপর্য কী?
উত্তর: মহব্বাত বা ভালোবাসা চার প্রকার:
(১) আল্লাহকে ভালোবাসা; আর তাই ঈমান ও একত্ববাদের মূল ভিত্তি ও দাবী।
(২)
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা; আর তা হলো আল্লাহর নবী, রাসূল এবং দীনদার ঈমানদার
নেক বান্দাগণকে ভালোবাসা। ইচ্ছা ছাড়াও যে সব কাজ, সময় স্থান কিংবা অন্য যা
কিছু আল্লাহ ভালোবাসেন তাকেও ভালোবাসা। আর এগুলো সবই আল্লাহকে ভালোবাসার
অন্তর্ভুক্ত এবং সম্পূরক।
(৩)
আল্লাহর সাথে অন্যের প্রতিও ভালোবাসা স্থাপন করা, যেমন মুশরিক সম্প্রদায়
তাদের কল্পিত দেব-দেবীদের, বৃক্ষরাজী, মূর্তি-ভাস্কর্য, মানুষ, ফেরেশতা,
রাজা-বাদশা এবং অন্যান্যদেরকে মহব্বত করে থাকে। অথচ এগুলো সবই হচ্ছে
শির্কের মূলভিত্তি।
(৪) প্রকৃতিগত সাধারণ মহব্বত বা ভালোবাসা। এধরনের ভালোবাসা তিন প্রকার; যথা:
(ক) শ্রদ্ধা-ভক্তির ভালোবাসা, যথা; মাতা-পিতাকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে ভালোবাসা।
(খ) স্নেহ, আদর ও দরদের ভালোবাসা, যথা; সন্তানদেরকে ভালোবাসা।
(গ) বিভিন্ন প্রকৃতির ভালোবাসা ও হিতাকাংখী হওয়া। যেমন; জন- মানুষের প্রতি মহব্বত রাখা এবং জনকল্যাণ করা।
তাছাড়াও
খাদ্য-দ্রব্য, পিপাসা নিবারক পানীয়, পোষাক পরিচ্ছদ বিয়ে শাদী ইত্যাদি
পছন্দ বা গ্রহণ করা দোষনীয় হবে না: যদি তা আল্লাহর আনুগত্যের পরিপন্থী না
হয়। বরং তা আল্লাহর ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে।
আর যদি ঐ সব বিষয়-বস্তু আল্লাহর নাফরমানীর কারণ হয় তাহলে তা প্রত্যাশা
কিংবা পছন্দ করা হারাম। তবে হারাম হবার কারণ না ঘটলে তা মুবাহ বা বৈধ।
{প্রশ্ন: ১২১} আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করার উপায় কী এবং বান্দা কীভাবে আল্লাহকে ভালোবাসার প্রমাণ দিবে?
উত্তর: দশটি উপায়ে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন এবং আল্লাহকে ভালোবাসার প্রমাণ দেওয়া যায়;
(এক)
জেনে-বুঝে, তাৎপর্য অনুধাবন করে কুরআন অধ্যায়ন করা এবং কুরআনের আহ্বানে
সাড়া দিয়ে সে অনুযায়ী আমল করা ও হুকুম-আহকাম বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে।
(দুই)
নির্ধারিত ফরযসমূহ পালন ছাড়াও নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন
করা। বেশী বেশী ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ হতে নিরাপদ দূরে থাকা।
(তিন) মুখে, অন্তরে এবং কাজে-কর্মে সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির (স্মরণ) অব্যহত রাখা।
(চার) মনের প্রবল ইচ্ছা বাসনাকে আল্লাহর ভালোবাসার অধীন করে দেওয়া।
(পাঁচ) মন-অন্তকরণ, আল্লাহর নাম, গুণ এবং গুণাবলীর প্রত্যক্ষ প্রভাব-প্রতিপত্তির মর্ম গভীরভাবে উপলব্ধি করা।
(ছয়) আল্লাহর প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য মহা অনুগ্রহ, দয়া নিয়ামতের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে সর্বদা স্মরণ রাখা প্রত্যেকের একান্ত কর্তব্য।
(সাত) হৃদয়-মন উজাড় করে বিনয়াবনত চিত্তে একাগ্রতার সাথে মহামহিয়ান আল্লাহর দরবারে ধর্ণা দেওয়া।
(আট)
আল্লাহর সান্নিধ্যে নিজকে সম্পূর্ণ সোপর্দ করে রাতের শেষভাগে বা লগ্নে
আল্লাহ যখন প্রথম আকাশে অবতরণ করেন তখন এবং দো‘আ কবুলের অন্যান্য সময়ে
অবিরাম, অক্লান্তভাবে দো‘আয় মগ্ন থাকা।
(নয়)
সত্যপন্থি দীনদার-ঈমানদার আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা,
তাদের কাছে গমন করা, পরামর্শ নেওয়া। তাদের কথা-বার্তা, আলাপ আলাচনা মনোযোগ
দিয়ে শ্রবণ এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। জীবনকে সুস্থ-সুন্দররূপে গড়ে
তোলা। আর পূর্বাপর পরিবেশ পরিস্থিতির সমন্নয় করতে হবে সত্যপন্থী
ন্যায়-নিষ্ঠদের উপস্থাপিত আদর্শ এবং তার মূলসূত্র থেকে।
(দশ)
মহামহিয়ান আল্লাহ এবং বান্দার আত্মার মাঝের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করতে হবে।
যেমন: মিথ্যা বলা, হারাম খাওয়া, জুলুম অত্যাচার করা ইত্যাদি[38]।
{প্রশ্ন: ১২২} খাওফ (خوف) কী? তা কত প্রকার এবং তার হুকুম কী?
উত্তর: খাওফ এর অর্থ: ভয়-ভীতি, অজানা শাস্তির আশংকা করা, সন্ত্রস্ত থাকা।
আর তা চার প্রকার:
(১) আল্লাহর ভয়, ইলাহ, মাবুদ হিসেবে এবং তার নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে। আর এটাই হলো ঈমানের ওয়াজিবসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ ওয়াজিব।
(২)
গোপন বা অদৃশ্য ভয়: আর তাহলো, আল্লাহ ব্যতীত মূর্তি প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য
তাগুত, মৃত কিংবা অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর দ্বারা ক্ষতি বা অনিষ্ট
হওয়ার ভয়, আশংকা করা। এধরনের ভয়-শংকা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত এবং তাওহীদের
পরিপন্থী।
(৩)
মানুষের যা অবশ্য কর্তব্য বা ওয়াজিব তা কতিপয় লোকদের ভয়ে না করা। আর এটাও
হারাম এবং এক প্রকারের শির্ক যার ফলে ঐ ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ তাওহীদবাদী হতে
পারে না।
(৪)
প্রকৃতিগত স্বাভাবিক ভয়-ভীতি; যেমন: দুশমন অথবা হিংস্র জীব-জানোয়ার
ইত্যাদিকে ভয় করা, আক্রান্ত হয়ে ক্ষতি বা বিপদের আশংকা করা। এধরনের ভয় বৈধ।
অতএব যে এ প্রকারের ভয় করবে তাকে তিরস্কার করা যাবে না।[39]
{প্রশ্ন: ১২৩} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ
ٱلۡأٓخِرِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَلَمۡ يَخۡشَ
إِلَّا ٱللَّهَۖ فَعَسَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ
ٱلۡمُهۡتَدِينَ ١٨ ﴾ [التوبة: ١٨]
‘‘তারাই
আল্লাহর মসজিদসমূহের প্রতিষ্ঠা/তত্ত্বাবধান করবে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও
শেষ দিবসের প্রতি এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কাউকেই ভয় করে না। অতএব আশা করা যায় যে, তারাই
হিদায়তপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’’। (আত-তাওবাহ:১৮)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা কী? ভয় এবং মসজিদসমূহের প্রতিষ্ঠা ও তত্ত্বাবধানের উদ্দেশ্য কি?
উত্তর:
উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদাত বন্দেগীর জন্য মসজিদ ঘর প্রতিষ্ঠা
তত্ত্বাবধান ও সেটার রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সংশ্লিষ্টদের যে সব মৌলিক বৈশিষ্ট্য
থাকতে হবে তারই উল্লেখ করেছেন। আর তাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে;
একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, তিনিই সর্বময় মালিক, তিনিই হুকুমদাতা,
বিধানদাতা এবং তিনি ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য কিছুই নেই।
আরো
বিশ্বাস করতে হবে যে, মৃত্যুর পরে পূনরুত্থান ঘটবেই। অতঃপর ভালো কিংবা
মন্দ কাজের হিসাব নিয়ে যথোপযুক্ত প্রতিফল দেওয়া হবে। তাদের অন্তরসমূহ এবং
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাহ্যিক কাজে-কর্মে ঈমানদার-মুসলিম হতে হবে। তারা সালাত
কায়েম করবে এবং সেটাকে শর্ত, রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নাত অনুযায়ী আদায় করতে
হবে। আর এ ব্যাপারে অবহেলা, গাফলতী করার কোনো অবকাশ নেই। যাদের উপর যাকাত
ফরয তারা অবশ্যই যাকাতের হকদারদের কাছে যাকাত পৌছে দিবে। তারা একক
আল্লাহকেই ভয় করবে এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকেই ভয় করবে না। সর্বপ্রকার
ওয়াজিব পালন করবে এবং সর্বপ্রকার হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করবে।
আর ‘ভয়’ শব্দের ভাবার্থ ও দাবী হচ্ছে: আল্লাহর তাজীম (মর্যাদার) ইবাদাত ও আনুগত্যে ক্রটি-বিচ্যুতি হওয়ার ভয় করা।
মসজিদ
প্রতিষ্ঠা ও তত্ত্বাবধানের উদ্দেশ্যে হচ্ছে: মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট সব
ধরনের কাজ-কর্ম, যেমন; নির্মাণ-পুননির্মাণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং
সালাত-যিকির ইত্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক ইবাদাত অব্যাহত রাখা।[40]
{প্রশ্ন: ১২৪} তাওয়াক্কুল কাকে বলে? তাওয়াক্কুল কত প্রকার, তার হুকুম কী? তার সাথে ঈমানের সম্পর্ক কী?
উত্তর: তাওয়াক্কুল হচ্ছে; কোনো কিছুর উপর নির্ভর করা বা কাউকে কোনো বিষয় সম্পন্ন করার ক্ষমতা রয়েছে মনে কের দায়িত্ব অর্পন করা।
তাওয়াক্কুল চার প্রকার:
(ক)
বিপদ-আপদে সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা। কেননা শুধুমাত্র
আল্লাহই বিপদ দূর করে কল্যাণ এনে দিতে পারেন। আর এটা করা ওয়াজিব এবং ঈমানের
শর্ত।
(খ)
সৃষ্ট জীবের উপর এমন বিষয়ে তাওয়াক্কুল করা যা সংঘটিত করার ক্ষমতা আল্লাহ
ছাড়া আর কারো নেই। যেমন; মৃত ও অনুপস্থিত এবং এ ধরনের অন্যান্য তাগুতদের
উপর ভরসা করা। অতঃপর প্রয়োজনের কথা তাদেরকে বলা, সাহায্য প্রার্থনা,
রিযিকের জন্য ফরিয়াদ করা অথবা হেফাযতের আবেদন নিবেদন করা। এধরনের কার্যকলাপ
তাওহীদ (একত্ববাদ) পরিপন্থী বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
(গ)
জীবিত উপস্থিতদের উপর তাওয়াক্কুল করা; যেমন, আমীর-উমারা, রাষ্ট্রনায়ক
ইত্যাদি যাদেরকে আল্লাহ ধন-সম্পদের অধিকারী করেছেন সৃষ্টিজীবের দুঃখ কষ্ট
দূরীকরণের উপায়-উপকরণ ইত্যাদি দান করেছেন। এদের কারো উপর তাওয়াক্কুল ছোট
শির্কের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(ঘ)
কোনো ব্যক্তিকে উকিল বা প্রতিনিধি নির্ধারণ করা। আর তা এমন বিষয়ে হতে হবে
যা ঐ প্রতিনিধির নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে সমপন্ন করতে সক্ষম; যেমন:
ক্রয়-বিক্রয়, ভাড়া দেওয়া-নেওয়া ইত্যাদি। এ প্রকারের তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতা
জায়েয। তবে উকিল বা প্রতিনিধিকে দায়িত্ব অর্পণের সময় ‘‘আমি কোনো ব্যক্তি
বিশেষের উপর তাওয়াক্কুল করলাম’’ বলা যাবে না। বরং বলতে হবে আমি অমুককে আমার
পক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি করলাম। কেননা যিনি যাকেই দায়িত্ব দিয়ে
প্রতিনিধি করবেন তাকে অবশ্যই সার্বিক ব্যাপারে মহান পবিত্র আল্লাহর উপরই
তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করতে হবে[41]।
{প্রশ্ন:১২৫} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ
قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ
إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ﴾ [الانفال: ٢]
‘‘যারা
প্রকৃত ইমানদার তারা এমন যে, যখন আল্লাহকে স্বরণ করা হয় তখন প্রকম্পিত হয়
তাদের হৃদয়। আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াত পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান
বৃদ্ধি করে এবং তারা স্বীয় রবের উপরেই ভরসা করে’’ (সূরা আল-আনফাল: ২)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা কী? আলোচ্য বিষয়ে আয়াত হতে কী সাক্ষ্য পাওয়া যায়, আয়াতের শিক্ষা কী?
উত্তর:
আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে মুমিনদের কতিপয় প্রশংসনীয় গুণ বৈশিষ্ট্যের বিবরণ
দিয়েছেন। এ গুণাবলীর মাধ্যমে তারা ঈমানের পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে এবং
ঈমানের হাকীকত অনুভব করবে।
মুমিনদের গুণ-বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক)
যখন তাদের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের হৃদয় অন্তর প্রকম্পিত হয়।
অর্থাৎ মনে ভয় জাগ্রত হয় অতঃপর আল্লাহর ফরযসমূহ পালন এবং নিষিদ্ধ
কার্যকলাপ পরিত্যাগ করার প্রেরণা পাওয়া যায়।
(খ)
তারা একক আল্লাহকে অবলম্বন, তাঁর উপর নির্ভর ও ভরসা করে তাদের সব কিছুই
তাঁর নিকট সোপর্দ করে থাকে। আর আলোচ্য অধ্যায়ে এ সব গুণাবলীর সাক্ষ্যই
দেওয়া হয়েছে।
(গ) তাদের নিকট যখন আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তাদের মনোবল সুদৃঢ় হয়।
(ঘ) তারা যথাযথভাবে সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর তা যথাসময়ে ফরয, শর্ত ও রুকন অনুযায়ী পূর্ণভাবে আদায় করে।
(ঙ) তাদেরকে আল্লাহ যে ধন-সম্পদ রিযিক হিসেবে দিয়েছেন তা থেকে তারা আল্লাহর হুকুম মোতাবেক ফরয কিংবা মুস্তাহাব পালনে ব্যয় করে।
উক্ত পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের দ্বারা মুমিনগণ যা লাভ করবে তা হলো:
উত্তম অনাবিল প্রতিদান, উচ্চমর্যাদা, গুনাহ মাফ এবং সুখময় জান্নাতের মধ্যে অঢেল ও অফুরন্ত রিযিক।
আয়াতের শিক্ষা: সৎকাজে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং অসৎ কাজে ঈমান হ্রাস পায়[42]।
{প্রশ্ন: ১২৬} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَن يَقۡنَطُ مِن رَّحۡمَةِ رَبِّهِۦٓ إِلَّا ٱلضَّآلُّونَ ٥٦ ﴾ [الحجر: ٥٦]
‘‘আর রবের রহমত থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয়’’। (সূরা আল হিজর: ৫৬)
এ আয়াতে উল্লেখিত: পথভ্রষ্ট করা?
উত্তর:
সকলকে স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহকে যিনি ভয় করবেন তিনি যেন আল্লাহর রহমত
থেকে নিরাশ না হয়ে যান। বরং ভয় করতে হবে ঠিকই কিন্তু হতাশ হওয়া অনুচিত।
আল্লাহর অবাধ্য বা গুনাহর কাজকে ভয় করে চলা উচিৎ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক
সৎকাজ করা ও তাঁর রহমতের আশা পোষণ করা আল্লাহর বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। আর
তারাই পথভ্রষ্ট, যারা সত্যনিষ্ঠ নির্ভুল পথের অনুসারী নয় অথবা তারা কাফের
সম্প্রদায়।
{প্রশ্ন: ১২৭} সবরের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ কি? তা কয় প্রকার, ঈমানের আলোকে এর হুকুম ও মর্যাদা কী?
উত্তর: সবর আরবী শব্দ; যার অর্থ আকড়ে ধরে রাখা, বিরত রাখা।
পারিভাষিক
অর্থ হলো: ভয়-ভীতি বা বিপদ-আপদ কালে সংযত থাকা বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
রাগ হয়ে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে রূঢ় কিংবা অসংলগ্ন কথাবার্তা হতে
জিহ্বাকে সংযত রাখা। বিপদ-আপদ কালে হাত পা এবং অন্যান্য অংগপ্রত্যঙ্গসমূহের
ভারসাম্য রক্ষা করা। অর্থাৎ যে কোনো পরিস্থিতিতে কপালে-গালে আঘাত করা
কিংবা জামা-কাপড়, চুল ইত্যাদি ছিড়ে উম্মাদের মত আচরণ না করা।
আর ধৈর্য ঈমানের অংগ এবং ঈমান হলো দেহের সাথে মাথার সম্পর্কের অনুরূপ। ধৈর্য তিন প্রকার:
(১) ধৈর্যের সাথে মহান আল্লাহর আদেশ প্রতিপালন করা। আর এটিই হলো আল্লাহর প্রকৃত আনুগত্য।
(২) ধৈর্যের সাথে আল্লাহর নিষেধ মেনে চলা, অর্থাৎ মহান আল্লাহর নাফরমানী ও পাপাচারে লিপ্ত না হওয়া।
(৩) বিপদ-আপদে সিদ্ধান্ত ও ফয়সালাকে ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করা। অর্থাৎ ভাগ্যের ফয়সালাকে ধৈর্যের সাথে মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।
ধৈর্য ধারনের বিধান হলো: তা ফরয বা অবশ্য কর্তব্য[43]।
{প্রশ্ন: ১২৮} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَمَن يُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ يَهۡدِ قَلۡبَهُۥۚ ﴾ [التغابن: ١١] আয়াতের ব্যাখ্যা এবং শিক্ষনীয় বিষয় কি?
উত্তর: ‘‘যে আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় ঈমান রাখে আল্লাহ তার হৃদয়ে প্রশান্তি দান করেন’’। (সূরা আত-তাগাবুন: ১১)
অর্থাৎ
আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এমন ব্যক্তি কোনো প্রকার বিপদ-আপদে আক্রান্ত হলেও
সে ধৈর্য ধারণ করে থাকে, কেননা তার জানা আছে যে সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছা
অনুযায়ী হয়ে থাকে। যে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নেয় তার হৃদয়
মনকে আল্লাহ হিদায়াতের দিকে ধাবিত হওয়ার তৌফিক দান করেন। আর ধৈর্যের
বিনিময়ে আল্লাহ দুনিয়ার ক্ষতি ও বিপদ আপদ দূর করে দেন। ধৈর্যশীল ব্যক্তি
সত্যিকারের হিদায়াত লাভ করে এবং অন্তর আত্মায় স্বস্তি অনুভব করে। তার আরো
জানা আছে যে, শুধু ত্রুটির কারণেই বিপদ-আপদ হয় না কিংবা বিপদ ঘটবার জন্য
ভুল করা হয় না।
আয়াতের
ফায়দা বা শিক্ষা হচ্ছে: ধৈর্যাবলম্বন করলে হেদায়াত লাভের পথ সুগম হয়।
হৃদয়ে স্বস্তি প্রশান্তি লাভ করা যায়। আর এটিই হচ্ছে ধৈর্যশীলদের সওয়াব যা
পূর্ণের অন্তর্ভুক্ত[44]।
মহামহিয়ান আল্লাহ বলেন:
﴿
وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ
قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦ ﴾ [البقرة:
١٥٥، ١٥٦]
‘‘(১৫৫)
আর ঐ সব ধৈর্যশীলদেরকে সু-সংবাদ দিন; (১৫৬) যারা বিপদ মুসিবতে আক্রান্ত
হলে বলে থাকে যে আমরা সকলেই আল্লাহর মালিকানাধীন (অনুগত) এবং আমরা
নিশ্চিতভাবে তারই নিকট প্রর্ত্যাবর্তনকারী’’। (সূরা আল বাক্বারাহ)
{প্রশ্ন: ১২৯} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ ﴾ [التوبة: ٣١]
‘‘তাদের
মধ্য থেকে আলেম ওলামা (পীর-পুরোহিত) সংসার বিরাগীদেরকে রবরূপে
(হালাল-হারাম বিধায়ক) গ্রহণ বা নির্ধারণ করে নিয়েছে’’। (সূরা আত-তাওবা: ৩১)
এ আয়াতের ভাবার্থ কী? আয়াতে উল্লিখিত ‘আহবার’, ‘রুহবান’ বলে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে?
উত্তর:
মহামহিয়ান আল্লাহ জানাচ্ছেন যে, মুশরিক সম্প্রদায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের
আলেম-ওলামা, পণ্ডিত, পীর-পুরোহিত সংসারত্যাগী বৈরাগীদেরকে মাবুদ বা
উপাস্যরূপে গ্রহণ করে নিয়েছে। কেননা তারা আল্লাহর নাফরমানীমূলক গুনাহের
কাজে তাদের আনুগত্য-অনুসরণ করে থাকে। অথচ তারা হালালকে হারাম এবং হারামকে
হালাল বলে থাকে।
‘আহবার’ অর্থ উলামা বা বিদ্যান এবং ‘রুহবান’ হচ্ছে দুনিয়াবিমুখ ‘আবেদ সম্প্রদায় যারা শুধু ইবাদাত বন্দেগীতে মগ্ন থাকে[45]।
{প্রশ্ন: ১৩০} মহান আল্লাহ বলেন: ﴿ أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠ ﴾ [المائدة: ٥٠] ‘‘তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? দৃঢ়বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফয়সালাকারী কে?’’ (সূরা আল-মায়েদাহ: ৫০)
এ আয়াতের ভাবার্থ এবং শিক্ষণীয় বিষয় কী?
উত্তর:
মহান আল্লাহ উক্ত আয়াতে বিদ্রূপাত্মক প্রশ্ন করে অন্যান্য বিধান ও
মতবাদকে অস্বীকার করেছেন। কেননা আল্লাহর হুকুম-বিধানই চুড়ান্ত সত্য বিধান
এবং পূর্ণাঙ্গ কল্যাণময়। আর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে, সর্বপ্রকার
ক্ষতিকর পাপাচারের উপর। ঐ সব বিষয়বস্তুও বর্জন করতে হবে যা আল্লাহর শরীয়তে
স্বীকৃত হয় নি। বরং তা কতিপয় ব্যক্তির মনগড়া বক্তব্য বিশ্লেষণ বিদ‘আত এবং
স্বরচিত পরিভাষা ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্ধকার যুগেও জাহেল লোকেরা অজ্ঞতা,
মুর্খতার বেড়াজালে বিভ্রান্তিকর বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিল।
আয়াতের
শিক্ষা: আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক
প্রতিষ্ঠিত হুকুম বিধান অবজ্ঞা বা অপছন্দ করে জাহেলিয়াতের হুকুম-বিধান
গ্রহণ ও অনুসরণকারীদেরকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে।
{প্রশ্ন: ১৩১} আল্লাহ বলেন: ﴿ وَهُمۡ يَكۡفُرُونَ بِٱلرَّحۡمَٰنِۚ ﴾ [الرعد: ٣٠]
‘‘তারা রহমানের সাথে কুফরী (অস্বীকার) করে’’। (সূরা আর-রাদ:৩০) এ
আয়াতাংশ নাযিলের উপলক্ষ্য কি? যারা আল্লাহর কিছু নাম ও গুণকে অস্বীকার করে
তাদের হুকুম কী?
উত্তর: এ আয়াতাংশ নাযিল হয়েছে ঐ সব মুশরিক সম্প্রদায়কে উপলক্ষ্য করে যারা আল্লাহর ‘নামকে উদ্ধত্যের সাথে অবজ্ঞা, অস্বীকার করেছে।
অথচ
‘‘আর-রহমান’’ মহান আল্লাহর পবিত্র একটি নাম এবং ‘রহমত’ মহান আল্লাহর
সাদৃশ্যহীন গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। আর মহান আল্লাহর সাদৃশ্যহীন পবিত্র নাম ও
গুণাবলীর প্রতি ঈমান আনা ফরয। মহান আল্লাহর সর্বোচ্চ মর্যাদার সাথে
সংগতিপূর্ণ সাদৃশ্যহীন তাঁর নাম ও গুণ বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি দিতে হবে। আর
যে তা অস্বীকার বা অমান্য করবে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে[46]।
{প্রশ্ন: ১৩২} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلِلَّهِ
ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ
يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
١٨٠﴾ [الاعراف: ١٨٠]
‘‘আর
আল্লাহর যে সব নাম আছে তা সর্ব সুন্দর উত্তম, অতএব সে নাম ধরেই তাকে ডাক।
আর তোমরা তাদেরকে বর্জন কর যারা আল্লাহর নামসমূহের বিকৃতি করে থাকে। তারা
তাদের কৃতকর্মের যথপোযুক্ত প্রতিদান শীঘ্রই পাবে’’। (সূরা আল-আরাফ: ১৮০), এ
আয়াতের ব্যাখ্যা কী?
উত্তর:
মহামহিয়ান আল্লাহ জানাচ্ছেন যে, তাঁর অনেক নাম আছে এবং তা সর্বোত্তম ও
সুন্দর, অর্থাৎ তাঁর নামের চেয়ে উত্তম বা সমকক্ষ আর কিছুই নেই। আর সে সব
নাম পূর্ণাংগ গুণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। আল্লাহ আমাদেরকে ঐ নাম ধরেই তাকে ডাকতে
বা দো‘আ প্রার্থনা করতে বলেছেন। তার প্রশংসাও করতে হবে ঐসব নাম ও গুণের
স্বীকৃতি দিয়ে। আর বর্জন করতে হবে তাদেরকে যারা আল্লাহর নামের বিকৃতি ঘটায়,
তাঁর নামসমূহকে সাদৃশ্য মুক্ত মর্যাদাবান উত্তম বলে স্বীকার করে না। তারা
আল্লাহর দুষমন মুর্খ ও জাহেল। আর আমরা যেন তাঁর নামের সঠিক তাৎপর্য ও
হাকীকত নিয়ে কোনোরূপ বিভ্রান্তির সৃষ্টি না করি। আমাদেরকে সঠিক অর্থের
ব্যাপারে দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে। আবার সতর্ক থাকতে যেন কুরআন-সুন্নাহর
প্রমাণহীন মনগড়া কোনো কিছুকে ঐ নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত করে না ফেলি।
অতঃপর
আল্লাহ মুলহিদ বা আল্লাহর নাম বিকৃতকারী তার অর্থের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট
লোকদের পথ অনুসরণকারীদেরকে আখিরাত দিবসে তাদের কৃতকর্মের যথোপযুক্ত
প্রতিদান আযাব দানের ঘোষণা দিয়েছেন।
{প্রশ্ন: ১৩৩} ইলহাদ কি? আল্লাহর নামসমূহের ক্ষেত্রে ইলহাদ অর্থ কী? ইলহাদ কত প্রকার ও কী কী, উদাহরণ দিন?
উত্তর:
ইলহাদ হলো, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে বিচ্যুতি ঘটা, সত্য এড়িয়ে যাওয়া, বিমুখ
হওয়া ও পথভ্রষ্ট হওয়া, বক্রতা অবলম্বন। আর সে কবরের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে
থাকে ‘‘আল-লাহদ’’ যেখানে কবরস্থ লোককে কিবলার দিকে সরিয়ে রাখা হয়।
আল্লাহর
নামের ক্ষেত্রে ইলহাদের অর্থ হলো: আল্লাহর নামের ব্যাপারে বক্রতা অবলম্বন
করা; যেমন সুস্পষ্ট, সত্য-সঠিক এবং প্রমাণিত অর্থ ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে
বিকৃতি ঘটিয়ে, অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে সত্য বিমুখ হওয়া।
ইলহাদের প্রকারভেদ:
(১)
আল্লাহর নামের পবিত্র শব্দ হতে মুর্তির নামকরণ, যেরূপ করতো অন্ধকার যুগের
মুশরিকরা। যেমন তারা মূর্তির নাম দিয়েছিল আল্লাত; এ শব্দ উদ্ভাবন করেছিল
আল-ইলাহ শব্দ থেকে, তারা আরো আবিস্কার করেছিল আল-উযযা, এ শব্দ উদ্ভাবন
করেছিল আল-আযীয থেকে এবং মানাত নাম রেখেছিল আল-মান্নান শব্দ থেকে উদ্ভাবন
করে।
(২)
মহান আল্লাহকে এমন কোনো নামে অভহিত করা যা তার মর্যাদা ও ইযযাতের সাথে
সংগতিপূর্ণ নয় বরং তাতে মহত্ব ও মর্যাদা সংকুচিত হয়। যেমন; খ্রীষ্টান
(নাসারা) সম্প্রদায় আল্লাহকে পিতা নামে অভিহিত করে থাকে।
(৩)
আল্লাহর মর্যাদা ও গুণকে খাটো করার অপচেষ্টা,যেমন; ইয়াহূদী সম্প্রদায়
আল্লাহকে ফকীর বা অন্যের মুখাপেক্ষী ভিক্ষুক বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তারা
আল্লাহকে আরো যে সব অপবাদ দিয়েছে তার মধ্যে আছে যে, তিনি বিশ্রাম গ্রহণকারী
এবং আল্লাহর হাত সংকুচিত অর্থাৎ তিনি কৃপণ।
(৪)
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের হাকীকত তথা বাস্তব অর্থ অস্বীকার করা এবং
সংগতিপূর্ণ সঠিক অর্থকে পরিহার ও পরিবর্তন করা। যেমন; জাহমিয়া সম্প্রদায়
আল্লাহর নামসমূহকে গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং অর্থহীন বলে থাকে। তারা বলে আল্লাহ
‘সামী‘ কিন্তু শ্রবণ নেই। তিনি ‘বাছীর’ কিন্তু চোখ নেই ইত্যাদি। মহামহিয়ান
আল্লাহ ঐ সব লোকদের বিভ্রান্তিকর কথা-বার্তা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র।
(৫)
মহান আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ গুণ-বৈশিষ্টকে তাঁরই সৃষ্টির গুণের সাথে
সংগতিপূর্ণ মনে করা বা সাদৃশ্য স্থাপন করা। যেমন; এরূপ বলা যে, আল্লাহর
চেহারা আমাদের চেহারার মত, আল্লাহর হাত আমাদের হাতের মত ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ ঐ সব সত্যভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের অপবাদ, বিকৃতি, থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, তিনি সর্বোচ্চ মহামহিয়ান।
{প্রশ্ন: ১৩৪} আল্লাহর নাম ও গুণসমূহের ব্যাপারে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নীতির ব্যাখ্যা কী?
উত্তর:
আল্লাহ তাঁর নাম ও গুণসমূহকে ঠিক ঐভাবে বিশ্বাস করা যেভাবে আল্লাহ নিজে
এবং তার রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন। আর তাতে
আল্লাহর মহাত্ম-মর্যাদার সাথে অবশ্যই সংগতি থাকতে হবে। তাঁর নাম ও
গুণসমূহের কোনো কিছুই অস্বীকার করা যাবে না। তাঁর নাম এবং গুণের কোনো
প্রকার সাদৃশ্যও সাব্যস্ত করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ﴾ [الشورا: ١١]
‘‘তাঁর মতো কোনো কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা আশ-শূরা: ১১)
{প্রশ্ন: ১৩৫} আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের কিছু উদাহরণ দিন?
উত্তর:
আর-রহমান (দযাময়), আর রহীম (দয়ালু), আস সামী (সর্বশ্রোতা) আল-বাসীর
(সর্বদ্রষ্টা), আল-আযীয (পরাক্রমশালী), আল-হাকীম (প্রজ্ঞাময়) আল-হালীম
(সহনশীল), আল-আলীম (সর্বজ্ঞ), আল-আলীউল কাবীর (সর্বোচ্চ, মহান) আল-হাইউল
কাইউম (চিরঞ্জীব, সংরক্ষক ও বিধায়ক)[47]।
{প্রশ্ন: ১৩৬} আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূল সল্লাল্লাহ আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الجَنَّةَ»
‘‘আল্লাহর
নিরানববই নামটি নাম রয়েছে যে ব্যক্তি সেগুলোর যথাযথভাবে আয়ত্ব করতে সক্ষম
হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। (বুখারী, ২৭৩৬ ও মুসলিম, ২৬৭৭)
হাদীসে উল্লেখিত ‘আহসাহা’ এ শব্দের তাৎপর্য কী? আল্লাহর নামসমূহ কি উল্লেখিত সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? প্রমাণ দিন?
উত্তর: আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম ‘ইহসা’ করার তিনটি তাৎপর্য আছে:
(১) পবিত্র শব্দসমূহ উচ্চারণসহ আয়ত্ব করা।
(২) সেগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন করা।
(৩)
সে শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকা এবং দো‘আ করা। আল্লাহর কাছে দো‘আ
প্রার্থনা এবং তাঁর মহত্ব-প্রশংসা করার মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে ধর্ণা দেওয়া
ও ফরিয়াদ করা।
আল্লাহর নাম উক্ত সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তার প্রমাণ হলো প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«أَسْأَلُكَ
بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي
كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ
بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ»
‘‘হে
আল্লাহ, তোমার কাছে ফরিয়াদ করছি তোমার স্বঘোষিত ঐ সব নাম নিয়ে যে নামসমূহ
তুমি নিজের জন্য পছন্দ করে রেখেছো, কিংবা তোমার কিতাবে উল্লেখ করেছো অথবা
তোমার বান্দাদের মধ্যে কাউকে শিখিয়েছ কিংবা তুমি নিজের কাছে গোপন করে
রেখেছ’’। (আহমাদ, আবু হাতেম, ইবনে হিববান তার সহীহ গ্রন্থে)
অর্থাৎ: আল্লাহর নামসমূহ তিন প্রকারের;
(১) আল্লাহর স্বঘোষিত কিছু নাম বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেছেন তাকে জানিয়েছেন।
(২) কিছু নাম তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং তা বান্দাদেরকে অবহিত করেছেন।
(৩) মহান আল্লাহ আরো কিছু নাম নিজের কাছে গোপন করে রেখেছেন এবং তা সৃষ্টির কেউই তা জানে না।
{প্রশ্ন: ১৩৭} আল্লাহর সুন্দর নামের ব্যাপারে ঈমানের দাবী কয়টি ও কী কী?
উত্তর:
আল্লাহর সুন্দর নামের প্রতি ঈমানের দাবী তিনটি; (এক) নামসমূহের প্রতি
বিশ্বাস রাখা। (দুই) নামের সঠিক তাৎপর্য মেনে নেয়া। (তিন) নামের ব্যাপারে
নির্ভরযোগ্য মনীষীদের প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ গ্রহণ করা।
সুতরাং
আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহর জ্ঞান সর্বব্যাপী
তিনিই সর্বজ্ঞ, তিনি পরম দয়ালু, তার রহমত সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, তিনি
সর্বশক্তিমান; যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। আর মহামহিয়ান সর্বোচ্চ মর্যাদাবান
আল্লাহর অন্যান্য সুন্দর নামসমূহ এবং উচ্চতর গুণ-বৈশিষ্ট্যের প্রতিও দৃঢ়
বিশ্বাস রাখতে হবে।
{প্রশ্ন: ১৩৮} সর্বশ্রেষ্ঠ মহত্বপূর্ণ আল্লাহ বলেন:
﴿ يَعۡرِفُونَ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكۡثَرُهُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٨٣ ﴾ [النحل: ٨٣]
উক্ত আয়াতের ভাবার্থ কি?
উত্তর:
আল্লাহ তাদেরকে ভৎর্সনা করছেন যারা তাঁর নিয়ামতকে অন্যের সাথে যুক্ত করে
থাকে এবং শির্কে লিপ্ত হয়। যেমন কেউ বা বলে থাকে যে, ঝড়- বাতাস ভালো ছিল
এবং মাঝি-মাল্লা বা নাবিক ছিল দক্ষতাসম্পন্ন সে জন্য বিপদ হয় নি। এ ধরনের
আরো যে সব কথা-বার্তা অনেক মানুষের মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে তা সবই শরীয়ত
পরিপন্থী[48]।
{প্রশ্ন: ১৩৯} হুযাইফা রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لَا تَقُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ، وَشَاءَ فُلَانٌ، وَلَكِنْ قُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فُلَانٌ»
‘‘তোমরা
বলবে না যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং অমুকে যা চেয়েছে তাই হয়েছে। বরং
বলবে যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন অতঃপর অমুকে যা কামনা করেছে (করতে চেয়েছে)
তাই হয়েছে’’। (আবু দাউদ, নং ৪৯৮০, আহমদ ৫/৩৮৪)
এ
বিষয়ে ইব্রাহীম আন-নাখায়ী বলেন যে, আমি আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি এবং আপনারও
আশ্রয় চাচ্ছি’ বলা মাকরুহ। তবে জায়েয হবে এভাবে বললে ‘আল্লাহ অতঃপর আপনার
আশ্রয় চাই। তিনি বলেন, সবাই যেন বলে, ‘যদি আল্লাহ অতঃপর অমুকের সাহায্য না
পেলে মুক্তি পেতাম না’’। কিন্তু এ কথার মধ্যে আল্লাহর সাথে ‘এবং’ সংযুক্ত
করে অন্য কিছুই উল্লেখ করা যাবে না। (আব্দুর রাযযাক এবং ইবনে আবী দুনিয়া)।
ঊপরোক্ত বিষয় বস্তুর ব্যাখ্যা কী এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর আশ্রয়-নিরাপত্তা প্রার্থনা করার হুকুম কী?
উত্তর: আরবী ভাষায় ‘‘واو’’
অক্ষর দ্বারা পূর্বা-পর বিষয়কে একত্রিত করা হয়ে থাকে, কিংবা একটি আগে
অপরটা পরে তাও বুঝায় না, বরং ওয়াও (এবং) দ্বারা পূর্বা-পর দুটোকেই একসাথে
বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর সৃষ্টিকে স্রষ্টার সমপর্যায় বলা,
বিশ্বাস করা শির্ক বা অংশীবাদীতা। কিন্তু (ثم)
সুম্মা বা ‘অতঃপর’ শব্দ দ্বারা পূর্বা-পর বিষয়কে সমপর্যায়ের বুঝায় না বরং
পূর্বাপর বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বা স্তর বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
অতএব আরবী (ثم)
সুম্মা বা ‘অতঃপর’ শব্দ ব্যাবহার করা দোষনীয় নয়; কেননা তাদ্বারা পার্থক্য
বা স্তর বুঝানো হয়ে থাকে এবং পরের বিষয়কে পূর্বের বিষয়ের অনুগত প্রমাণ করে।
যে
সব বিষয়ের সমাধান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয় সে সব বিষয়ে
অন্যের কাছে আশ্রয়-নিরাপত্তার আবেদন নিবেদন জানানো বড় শির্কের অর্ন্তভুক্ত।
তবে আল্লাহর সৃষ্ট জীবনের পক্ষে যে সব বিষয়ে সমাধান করা অসম্ভব নয় সে
বিষয়ে তাদের সাহায্য চাওয়া জায়েয। কিন্তু আহ্বান-আবদার সর্তকতা অবলম্বন
করতে হবে যেন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে শির্ক না হয়ে যায়। আর হ্যাঁ যে ব্যক্তি
জীবিত ও উপস্থিত সে কোনো কিছু করতে সক্ষম, পক্ষান্তরে যারা মৃত তাদেরকে
ডেকে আবেদন-নিবেদন জানালে কোনোই লাভ হবে না। কেননা মৃতরা সাড়া দিতে অক্ষম
এবং কারোই কোনো কল্যাণ কিংবা অকল্যাণ করার সাধ্য তাদের নেই।
অতএব তাদের সান্নিধ্যে কোনো কিছু পেশ করা কিংবা উপস্থাপন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয[49]।
{প্রশ্ন: ১৪০} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَقَالُواْ مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا نَمُوتُ وَنَحۡيَا وَمَا يُهۡلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهۡرُۚ ﴾ [الجاثية: ٢٤]
‘‘তারা
বলে যে, দুনিয়ার (পার্থিব) জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন; আমরা মৃত্যু বরণ
করি এবং বেঁচে থাকি, আর মহাকালই (প্রকৃতি) আমাদেরকে ধ্বংস করে’’। (সূরা
জাসিয়া: ২৪) এ আয়াতের ব্যাখ্যা কী?
উত্তর:
আলোচ্য আয়াতে সুমহান আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়ের সংশয় এবং তাদের সাথে
সংযুক্ত আরব মুশরিক সম্প্রদায় যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে থাকে এদের
ধ্যান-ধারনার বিবরণ প্রকাশ করেছেন। তারা বলে যে, দুনিয়ার জীবনই আমাদের
একমাত্র জীবন যেখানে আমরা অবস্থান করছি এটা ছাড়া আর কোনো জীবন নেই। আমাদের
মধ্যে কারো মৃত্যু হয় এবং কেউবা বেঁচে থাকে, অর্থাৎ কতিপয় লোকের মৃত্যু হয়
এবং অন্যরা বেঁচে থাকে। পুনরুত্থান বা কিয়ামত বলতে কোনো কিছু নেই।
তারা
আরো বলে যে, মহাকালের (প্রকৃতি) ধারাবাহিকতায় রাত-দিনের ব্যবধানে,
যথোপযুক্ত বয়স অতিবাহিত হওয়ার পর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আমরা বিলুপ্ত হয়ে যাই।
তারা সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের অস্তিত্ব এবং তাঁর আদেশ, কর্তৃত্বে বিশ্বাস
করে না[50]।
{প্রশ্ন:
১৪১} সহীহ হাদীসে আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত আছে; নবী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন:
«يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ، بِيَدِي الأَمْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ»
وفي رواية: «لَا تَسُبُّوا الدَّهْرَ، فَإِنَّ اللهَ هُوَ الدَّهْرُ»
‘‘আদম
সন্তান মহাকালকে গালি দিয়ে (মন্দ বলে) আমাকে কষ্ট দেয়। কেননা আমিই মহাকাল;
আমার হাতেই সবকিছু আমিই রাত এবং দিনের আবর্তন ঘটিয়ে থাকি’’। অন্য বর্ণনায়
আছে ‘‘মহাকালকে গালি দিবেনা কেননা তিনি আল্লাহই প্রকৃত মহাকাল।’’
(মুত্তাফিকুন আলাইহি বুখারী হাদীস নং ১৬৯৪, মুখতাসার যুবাইদী পৃষ্ঠা নং
৫৯৩, মুসলিম: ২২৪৬)
এহাদীসের ভাবার্থ কী? মহাকালকে গালি দেয়ার হুকুম কী? ব্যাখ্যা সহ বুঝিয়ে দিন?
উত্তর:
অন্ধকার যুগে আরবরা যখন কঠিন বিপদ-আপদ এবং জটিল সমস্যার সম্মুখীন হত তখনই
তারা মহাকালকে গালি দিত বা মন্দ বলতো। তারা বলতো: ‘হতাশাজনক অকর্মন্য
মহাকাল আমাদেরকে বিপদে ফেলেছে’। অর্থাৎ তারা বিপদ-আপদের জন্য মহাকালকে
দোষারোপ করতো। অথচ বিপদ-আপদ সব আল্লাহই দিয়ে থাকেন। অতএব গাল-মন্দ আল্লাহর
উপরই পতিত হয়; কেননা ভাল-মন্দ সব আল্লাহই পরিচালনা করে থাকেন। যেমন; মহান
আল্লাহ বলেন; (أقلب الليل والنهار)
‘‘আমিই রাত এবং দিনের পরিবর্তন করি’’ আর এ পরিবর্তন মহান আল্লাহর কতৃত্বে
সংঘটিত হয়ে থাকে তা হয়ত মানুষ পছন্দ করে কিংবা অপছন্দ করে।
‘‘মহাকাল
প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ’’ এ কথার অর্থ হচ্ছে যে, চলমান বিশ্ব জগতে মহাকালের
গতিপথে ভাল কিংবা মন্দ সব কিছুই মহান আল্লাহর ইচ্ছা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা
অনুযায়ী সংঘটিত হয়ে থাকে। তিনি সুমহান পরিচালক, সর্বজ্ঞ, তিনি সর্বোচ্চ
কৌশলের অধিকারী আর ভাল-মন্দ সংগঠিত করার ব্যাপারে তাঁর কোনোই শরীক নেই।
অতএব
মহাকালকে গাল-মন্দ করা বা দোষারোপ করা হারাম কেননা তার ফলে আল্লাহকে গালি
দেওয়া হয় এবং তাঁকে কষ্ট দেওয়া হয়। তিনি বলেছেন: ‘‘আদম সন্তান মহাকালকে
গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয় কেননা আমিই মহাকাল’’।
সুতরাং
মহাকালকে গালি প্রদানকারীর হুকুমের দুটি পর্যায়; হয়ত সে আল্লাহকে গালি
দিচ্ছে অথবা আল্লাহর সাথে মহাকালকে শরীক করছে। যদি কেউ মনে করে মহাকাল এবং
আল্লাহ যৌথভাবে বিপদ-আপদ সংঘটিত করে তাহলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। আর যে
স্বীকার করে যে, আল্লাহই এককভাবে তা সংঘটিত করেছেন তারপরও ঐ সংঘটিত কাজকে
গালি দিল, প্রকৃতপক্ষে সে মহান আল্লাহকেই গালি দিল[51]।
{প্রশ্ন: ১৪২ } মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ
قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥
لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ ٦٦ ﴾ [التوبة: ٦٥،
٦٦]
এ আয়াতের অর্থ, ব্যাখ্যা এবং শিক্ষণীয় বিষয়গুলি কী?
উত্তর:
‘‘(৬৫) আর যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে তারা বলে যে; আমরাতো কথার
কথা বলছিলাম এবং ক্রিয়া-কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর
হুকুম-আহকাম এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? (৬৬) অপরাধ এড়ানোর জন্য
বাহানার চেষ্টা করো না; তোমরা ঈমান আনার পর কাফের হয়ে গেছ’’। (সূরা
আত-তাওবাহ)
অর্থাৎ
মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন যে, আল্লাহ
সম্পর্কে, তাঁর বিধান সম্পর্কে, অতঃপর রাসূল সম্পর্কে এবং সাহাবাদের
সম্পর্কে, ঐ সব মুনাফিক সম্প্রদায়ের অসংলগ্ন কথাবার্তা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও
তিরস্কার প্রসঙ্গে আপনি যদি প্রশ্ন করেন: তখন তারা আপনাকে বলে থাকে যে; ‘হে
মুহাম্মাদ, আমরা দোষনীয় কিছু করি নি বরং আমরা নিজেরা হাসি তামাসা ও কথার
কথা বলে পথে-ঘাটে সময় অতিবাহিত করেছি মাত্র কিন্তু ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা
আমাদের উদ্দেশ্য নয়’।
তবে
তারা যত প্রকারই ওযর পেশ করুক না কেন তাতে আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রান
পাবে না। বরং তাদের কার্যকলাপ গর্হিত, অমর্যাদাকর এবং বিদ্রূপ-উপহাসের
অন্তর্ভুক্ত; অতএব তারা ঈমান আনার পরে কাফের হয়ে গেছে।
আয়াতের শিক্ষা: সত্য দীন আল-ইসলাম এবং ইসলামের অনুসারীদের সাথে কোনো প্রকার খেল-তামাসা, বিদ্রূপ করা কুফরী।
{প্রশ্ন: ১৪৩} আনুগত্যে শির্ক এবং ইবাদাতে শির্ক এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর:
আনুগত্যে শির্ক হচ্ছে; অংশিদারিত্বের (শির্কের) মৌখিক বা বাহ্যিক ঘোষণা
মাত্র কিন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করা উদ্দেশ্য নয়। আর একথার
প্রমাণ হলো আল্লাহর বাণী:
﴿ جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَآءَ ﴾ [الاعراف: ١٩٠]
‘‘তারা দুজনে তাঁর (আল্লাহর) অংশিদার বানাল’’। (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৯০)
কাতাদাহ এ প্রসংগে বলেন: আল্লাহর মৌখিক ও বাহ্যিক আনুগত্যে অংশীদার করল কিন্তু আল্লাহর ইবাদাতে অংশীদার নয়[52]।
কাতাদাহ এ প্রসংগে বলেন: আল্লাহর মৌখিক ও বাহ্যিক আনুগত্যে অংশীদার করল কিন্তু আল্লাহর ইবাদাতে অংশীদার নয়[52]।
{প্রশ্ন:
১৪৪} ইবনে হাযম রহ. বলেন: ‘যে সব নামকরণে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর
ইবাদাতের ইংগিত থাকবে সে ধরনের নাম রাখা সর্বসম্মতভাবে হারাম। যেমন; আবদে
ওমর (ওমরের বান্দা বা দাস) আব্দুল কাবা (কাবার দাস) ইত্যাদি’। ইবনে হাযমের
এ কথার ব্যাখ্যা কী?
উত্তর:
আবু মুহাম্মাদ ইবনে হাযম ছিলেন স্পেনের আলেম। তিনি বলেন; আলেম সমাজ
সর্বসম্মতভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত-উপাসনাকে হারাম বলেছেন।
কেননা একদিকে তা আল্লাহর প্রভুত্বে এবং ইবাদাত বন্দেগীতে শির্ক; অন্যদিকে
সব সৃষ্টির মালিকানা আল্লাহর এবং সবই আল্লাহর দাস। আর সব কিছুর প্রতিপালক
উপাস্য মাবুদ তিনি ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য আর কেউ নেই। তিনি মহাপবিত্র এবং
প্রশংসাময়।
{প্রশ্ন: ১৪৫} জাবের রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا يُسْأَلُ بِوَجْهِ اللَّهِ، إِلَّا الْجَنَّةُ»
‘‘আল্লাহর সত্ত্বার বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু চাইবে না’’। (আবু দাউদ) এ হাদীসের ব্যাখ্যা ও শিক্ষনীয় বিষয় কী?
উত্তর:
এ হাদীসে দো‘আ প্রার্থনাকারীদের জানানো হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর নাম
এবং গুণসমূহের উচ্চ মর্যাদা রক্ষা করে। আল্লাহর চেহারার দোহাই দিয়ে দুনিয়ার
কোনো কিছু প্রার্থনা না করে বরং চাইতে হবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়-বস্তু আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জান্নাতের প্রার্থনা।
জান্নাতে রয়েছে চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি, আল্লাহর সন্তুষ্টি, সুমহান সত্ত্বার
দর্শনলাভ এবং তার সুমিষ্ট আহ্বানের অপূর্ব স্বাদ আস্বাদন।
অতএব
এ ধরনের উচ্চাভিলাষী প্রাপ্যের জন্য আল্লাহর সত্ত্বার দোহাই দিয়ে
প্রার্থনা করা উচিৎ। তবে দুনিয়াবী এবং দ্বীনি বিষয়ে আল্লাহর কাছেই
প্রার্থনা করতে হবে কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা বা চেহারার দোহাই দিয়ে চাওয়া
যাবে না। হাদীসে আছে:
‘‘যে
আল্লাহর চেহারার দোহাই দিয়ে সাধারণ কিছু প্রার্থনা করবে সে অভিশপ্ত হবে।
আর সেও অভিশপ্ত যার কাছে আল্লাহর সত্তার দোহাই দিয়ে কিছু চাওয়ার পর
প্রার্থিতকে নিষেধ করা হয়েছে। যতক্ষণ না খারাপ বা অন্যায় কিছু চাইবে।’’
(ত্ববারানী, ২২/৩৭৭)
হাদীসের শিক্ষা:
(১) আল্লাহর চেহারার দোহাই দিয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জান্নাত ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করা উচিৎ হবে না।
(২) মহান আল্লাহর সাদৃশ্যহীন যথাযথ মার্যাদার সাথে সংগতিপূর্ণ চেহারা আছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
{প্রশ্ন: ১৪৬} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩ ﴾ [القمر: ٤٩]
‘‘নিশ্চয়ই আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি যথাযথ পরিমাণ অনুসারে’’। (সূরা আল-ক্বামার: ৪৯)
তাক্বদীরের উপর কীভাবে ঈমান আনতে হবে? তক্বদীরের পর্যায় কয়টি?
উত্তর:
তাক্বদীর হচ্ছে; সুদৃঢ় বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা হয় আর যা
করতে চান না তা হয় না। এমন কোনো কিছুরই অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না যা আল্লাহর
ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত। অতএব আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত শুধু ভুলের কারণে কেউ
আক্রান্ত হয় না কিংবা বিপদে ফেলার জন্যে কাউকে ভুলে পথে পরিচালিত করা হয়
না। ত্বাকদীরের প্রতি ঈমানের চারটি ধারা:
(এক) সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভ করার আগেই আল্লাহ সব কিছু (পূর্বা-পর) জানেন।
(দুই) আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার আগেই আল্লাহ সবকিছু (ভাল-মন্দ ইত্যাদি) লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
(তিন) সৃষ্টির সব কিছুই আল্লাহর নিরংকুশ কতৃত্বের ইচ্ছাধীন।
(চার) আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী ভাল-মন্দ সবকিছুই যথাযথভাবে সৃষ্টি হয়ে থাকে[53]।
{প্রশ্ন: ১৪৭} ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَيْرُ
النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ
يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ
يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ»
‘‘আমার
প্রজন্মের লোকেরা উত্তম, অতঃপর তাদের পরবর্তী লোকেরা, তারপর তাদের পরবর্তী
লোকেরা, অতঃপর যে সম্প্রদায় আসবে তারা সাক্ষী দেওয়ার আগেই শপথ করবে এবং
শপথের আগেই সাক্ষী দিবে’’ (বুখারী: হাদীস নং ২৬৫১, মুসলিম; হাদীস নং ২৫৩৫) এ
হাদীসের মূল বিষয়বস্তু কী?
উত্তর:
এ হাদীসে হিজরী প্রথম তিন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হয়েছে পরবর্তী
কালের চেয়ে। আর এটা সুস্পষ্ট যে, শুধুমাত্র প্রথম তিন শতাব্দীই উত্তম তার
পরের সময়কাল উত্তম নয়। এর মধ্যে আরো নির্দেশনা আছে যে, দ্রুত সাক্ষী না
দেওয়া এবং কসম না করা। যাদের মনোবাসনা দুনিয়া কেন্দ্রিক তারা আখেরাতক ভুলে
যায়। তাদের কাছে সত্যের সাক্ষ্য-স্বীকৃতি এবং কসম-শপথ যথাযথ গুরুত্ব পায়
না। কেননা তাদের ঈমানে কমতি আছে, তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় অনুপস্থিত এবং
এসব ব্যাপারে অবহেলা করে থাকে।
{প্রশ্ন: ১৪৮} মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَأَوۡفُواْ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ إِذَا عَٰهَدتُّمۡ وَلَا تَنقُضُواْ ٱلۡأَيۡمَٰنَ بَعۡدَ تَوۡكِيدِهَا ﴾ [النحل: ٩١]
‘‘তোমরা
আল্লাহর অংগীকার (যথাযথ ভাবে) রক্ষা করবে; যখন তোমরা পরস্পরে অংগীকার কর
এবং তোমরা (আল্লাহর নাম নিয়ে) শপথ দৃঢ় করলে তা আর ভংগ করবে না’’। (সূরা
আন-নাহল: ৯১) এ আয়াতের ব্যাখ্যা কী?
উত্তর:
মহান আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন; সন্ধি, চুক্তি অংগীকার যথাযথভাবে পালন এবং
আল্লাহর নাম নিয়ে দৃঢ়তা দেখিয়ে শপথের গুরুত্ব বাড়ানোর পর তা রক্ষা করা। তবে
জাহেলী অবৈধ শপথ যেহেতু দীনের পরিপন্থী সেহেতু তা ধর্তব্য নয়।
{প্রশ্ন: ১৪৯} মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী বিধান কী? প্রমাণ কী?
উত্তর:
মানুষকে মৃত্যুর পরে কবরে দাফন করতে হয়। যদি সে মুমিন হয় তাহলে কবরে
সুখ-শান্তি পায়, আর যদি কাফের হয় তাহলে কবরে আযাব বা শাস্তি পায়। নবী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّمَا القَبْرُ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الجَنَّةِ أَوْ حُفْرَةٌ مِنْ حُفَرِ النَّارِ»
‘‘নিশ্চয়
কবর হচেছ জান্নাতের (সাথে সংযুক্ত) বাগান বিশেষ অথবা জাহান্নামের সাথে
সংশ্লিষ্ট গর্ত বিশেষ’’। (তিরমিযি দুর্বল সনদে ৩৪ নং বাবে বর্ণনা করেন,
হাদীস নং ৪৯০০)
সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে; নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বলেন:
«وإنهما ليعذبان»
‘‘এ কবরে শায়িত দুজনের আযাব হচ্ছে’’।
অতঃপর
তারা কিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত হবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ মৃতদেরকে পুনরায়
জীবিত করবেন এবং কৃতকর্মের যথাযথ পুরস্কার প্রদান করবেন।
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ ۞مِنۡهَا خَلَقۡنَٰكُمۡ وَفِيهَا نُعِيدُكُمۡ وَمِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً أُخۡرَىٰ ٥٥ ﴾ [طه: ٥٥]
‘‘মাটি
হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মাটিতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
অতঃপর মাটি থেকে পুনরায় বের করে আনা হবে’’। (সূরা ত্বাহা: ৫৫)
অর্থাৎ ক্বিয়ামত দিবসে পুণরুত্থান হবে।
অর্থাৎ ক্বিয়ামত দিবসে পুণরুত্থান হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু অতাঅলা আরো বলেন:
﴿ وَٱللَّهُ أَنۢبَتَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ نَبَاتٗا ١٧ ثُمَّ يُعِيدُكُمۡ فِيهَا وَيُخۡرِجُكُمۡ إِخۡرَاجٗا ١٨ ﴾ [نوح: ١٧، ١٨]
‘‘(১৭)
আল্লাহ তোমাদেরকে মাটি হতে উৎপাদন করেছেন, (১৮) অতঃপর মাটিতেই
প্রত্যাবর্তন করানো হবে এবং পূণরায় যথাযথভাবে বের করে আনা হবে’’। (সূরা
নূহ)
{প্রশ্ন: ১৫০} কবরের মধ্যে মানুষ কিসের সম্মুখীন হয়?
উত্তর:
কবরের মধ্যে মানুষ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়; দুইজন ফিরিশতা এসে প্রশ্ন করেন
যে, তোমার রবব কে? তোমার দীন কি? আর সে ব্যক্তিটি কে যাকে তোমাদেরকে মাঝে
পাঠানো হয়েছিল?
এ সব প্রশ্নের উত্তরে মুমিন ব্যক্তি বলবে: (ربي الله) আল্লাহ আমার রব্ব, (ديني الإسلام) ইসলাম আমার দীন এবং নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রসংগে বলবে; (هو عبد الله ورسوله) এ ব্যক্তি হচ্ছেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর অবিশ্বাসী কাফের বলবে: (هاه، هاه، لا أدري) ‘‘হায়, হায় আমিতো কিছুই জানিনা’’।
মুনাফিক (মুখে বিশ্বাসী অন্তরে অবিশ্বাসী) বলবে: (لا أدري، سمعت الناس يقولون شيئاً فقلته) ‘‘জানিনা তবে লোকজনকে কী যেন বলতে শুনেছি এবং আমি তা বলেছিলাম’’।
{প্রশ্ন: ১৫১} কবরে কি মৃত ব্যক্তি জান্নাতের প্রশান্তি কিংবা জাহান্নামের শাস্তি পেয়ে থাকে? তার দলীল কী?
উত্তর:
কবরে মুমিন দৈহিক ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ করবে। আর কাফের ব্যক্তি দৈহিক
এবং আত্মিক শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। তবে গুনাহগার মুসলিমকেও শাস্তি ভোগ করা
লাগতে পারে, যেমন; নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّهُمَا
لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا
فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ البَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي
بِالنَّمِيمَةِ»
‘‘তারা
দুজনে কষ্ট ভোগ করছে, তবে তাদের শাস্তি বড় ধরনের ত্রুটির জন্য নয় (অর্থাৎ এ
ক্রটি দূর করা কঠিন কাজ নয়), তাদের একজন প্রশ্রাবের পরে ইস্তিঞ্জা
(পরিচ্ছন্নতা অর্জন) করতো না, আর অন্যজন মানুষের মধ্যে চোগলখূরী (কুৎসা
রটনা) করে বেড়াত। (আল-বুখারী)
মহান আল্লাহ সূরা ইব্রাহীমের ২৭ নং আয়াতে আরও বলেন,
﴿ يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ ﴾ [ابراهيم: ٢٧]
‘‘যারা শাশ্বত বাণী (কালেমাতুল হক্ব পূর্ণাংগ রূপে) বিশ্বাস করেছে তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন ইহা জীবন ও পরজীবনে’’।
মহান আল্লাহ সূরা আল-মুমিনে আরো বলেন:
﴿
فَوَقَىٰهُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِ مَا مَكَرُواْۖ وَحَاقَ بَِٔالِ
فِرۡعَوۡنَ سُوٓءُ ٱلۡعَذَابِ ٤٥ ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا
وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ
أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦ ﴾ [غافر: ٤٥، ٤٦]
‘‘(৪৫)
অতঃপর আল্লাহ তাঁকে (মতান্তরে মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা ফিরআউন
সম্প্রদায়ের ঈমানদার ব্যক্তিটি) তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা
করলেন এবং ফির‘আউন সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তিতে গ্রাস করলো। (৪৬) সকাল
সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সংস্পর্শে উপস্থিত করা হয়। আর যেদিন ক্বিয়ামত
সংঘটিতে হবে সেদিন আদেশ দেওয়া হবে যে, ফিরআউন সম্প্রদায়কে কঠিন আযাবে
নিক্ষেপ/নিমজ্জিত করো’’। (আল-কুরআন)
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ
العَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ،
وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ
فَيُقْعِدَانِهِ، فَيَقُولاَنِ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ
لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَّا المُؤْمِنُ،
فَيَقُولُ: أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، فَيُقَالُ لَهُ:
انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ
مَقْعَدًا مِنَ الجَنَّةِ»
‘‘যখন
বান্দাকে তার কবরে দাফন করে সকলে প্রস্থান করতে আরম্ভ করে তখন সমাধিস্থ
ব্যক্তি তাদের জুতা-স্যান্ডেলের শব্দ শুনতে পায়। এ সময় দু’জন ফেরেশতা এসে
কবরস্থ ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসায় এবং তাকে বলে যে; তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে কী জানো? তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। অতঃপর তাকে বলা
হবে; তুমি জাহান্নামের মধ্যে ঐ জায়গাটিতে তাকিয়ে দেখো যেটা তোমার ছিল,
আল্লাহ সেটার পরিবর্তে তোমাকে জান্নাতে জায়গা করে দিয়েছেন’’ (মুত্তাফিকুন
আলাইহি)
{প্রশ্ন: ১৫২} ক্বিয়ামত দিবসে পুনরুত্থানের পর কী করা হবে?
উত্তর: পুনরুত্থানের পর হিসাব-নিকাশ করে কাজের যথোপযুক্ত পুরস্কার প্রদান করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ لِيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَسَٰٓـُٔواْ بِمَا عَمِلُواْ وَيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ بِٱلۡحُسۡنَى﴾ [النجم: ٣١]
‘‘যারা মন্দ কাজ করে তাদেরকে তিনি মন্দ ফল দিবেন এবং যারা ভালো কাজ করে তাদেরকে দিবেন উত্তম পুরস্কার’’। (সূরা আন-নাজম: ৩১)
সুতরাং
প্রত্যেকেই যথাযথ (ভাল বা মন্দ) প্রতিদিন পাবে। মুমিনগণ জান্নাতে প্রবেশ
করবে আর কাফেরগণ প্রবেশ করবে জাহান্নামে। (কবর আযাবের প্রমাণ; বায়হাকী)
{প্রশ্ন: ১৫৩} পুনরুত্থানকে যে মিথ্যা বলবে বা অস্বীকার করবে তার হুকুম কী? প্রমাণ দিন?
উত্তর: সে কাফের এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي
لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى
ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧ ﴾ [التغابن: ٧]
‘‘কাফিররা
ধারণা করে যে, তারা কখনো পুনরুত্থিত হবে না। বলুন: হ্যাঁ নিশ্চয়ই আমার
প্রতিপালকের শপথ; তোমাদেরকে অবশ্যই পুনরুত্থিত করা হবে। অতঃপর অবশ্যই
তোমাদের কৃতকর্ম সমন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। আর এ সবই আল্লাহর পক্ষে
সহজ’’। (সূরা আত-তাগাবুনের ৭নং আয়াত)
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿
وَقَالُوٓاْ إِنۡ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا وَمَا نَحۡنُ
بِمَبۡعُوثِينَ ٢٩ وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ وُقِفُواْ عَلَىٰ رَبِّهِمۡۚ قَالَ
أَلَيۡسَ هَٰذَا بِٱلۡحَقِّۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَرَبِّنَاۚ قَالَ فَذُوقُواْ
ٱلۡعَذَابَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡفُرُونَ ٣٠ ﴾ [الانعام: ٢٩، ٣٠]
‘‘(২৯)
তারা বলে, আমাদের এ দুনিয়ার জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমাদের পুনরুত্থানও
হবে না। (৩০) তুমি যদি তাদেরকে দেখতে যখন তাদেরকে প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড়
করানো হবে এবং তিনি বলবেন, তা কি প্রকৃত সত্য নয়? তারা বলবে ‘‘আমাদের রবের
শপথ, নিশ্চয়ই সত্য। তিনি বলবেন: অতএব তোমরা যেসব কুফরী করেছো সে জন্য এখন
আযাব আস্বাদন কর’’। (সূরা আল-আন‘আমের ২৯-৩০)
সর্বোচ্চ মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ بَلۡ كَذَّبُواْ بِٱلسَّاعَةِۖ وَأَعۡتَدۡنَا لِمَن كَذَّبَ بِٱلسَّاعَةِ سَعِيرًا ١١ ﴾ [الفرقان: ١١]
‘‘অথচ
তারা ক্বিয়ামতকে মিথ্যা বলছে আর যারা ক্বিয়ামতকে মিথ্যা বলবে তাদের জন্য
আমরা প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নি’’। (সূরা আল-ফুরকান: ১১)
{প্রশ্ন: ১৫৪} আখেরাত বা শেষ দিবস কী? সেটার প্রতি ঈমানের হুকুম কী? দলীল দিন?
উত্তর: এ দিন দুনিয়ার সমাপ্তি হবে, এরপর আর দিন অবশিষ্ট থাকবে না। আর এটাই হচ্ছে পুনরুত্থান দিবস।
আখেরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব; কেননা তা ঈমানের ছয়টি রুকনের একটি।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱقۡتَرَبَتِ ٱلسَّاعَةُ وَٱنشَقَّ ٱلۡقَمَرُ ١ ﴾ [القمر: ١]
‘‘ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে’’। (সূরা আল-ক্বামার: ১)
আর যারা আখেরাতকে অস্বীকার করবে তারা কাফের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي
لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى
ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧ ﴾ [التغابن: ٧]
‘‘কাফির
সম্প্রদায় ধারণা করে যে, তারা কখনো পুনরুত্থিত হবে না। বলুন: হ্যাঁ
নিশ্চয়ই, আমার রবের শপথ; তোমাদেরকে অবশ্যই পুনরুত্থিত করা হবে। অতঃপর
তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কেও অবশ্যই অবহিত করা হবে, আর এ সবই আল্লাহর পক্ষে
সহজ’’। (সূরা আত-তাগাবুন: ৭)
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ قَدۡ خَسِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِلِقَآءِ ٱللَّهِ وَمَا كَانُواْ مُهۡتَدِينَ ﴾ [يونس: ٤٥]
‘‘আল্লাহর সাক্ষাৎকে যারা মিথ্যা বলে তারা নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় নি’’। (সূরা ইউনুস: ৪৫)
তবে পুনরুত্থান কবে কখন হবে একমাত্র আল্লাহই জানেন, তিনি আর কাউকেই তা জানান নি। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
يَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا
عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ
ثَقُلَتۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِيكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةٗۗ
يَسَۡٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنۡهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ
ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٧ ﴾ [الاعراف:
١٨٧]
‘‘তারা
আপনাকে জিজ্ঞেস করে ক্বিয়ামত কখন সংঘটিত হবে। বলুন: এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু
আমার প্রতিপালকই জানেন। তিনি যথাসময়ে তা প্রকাশ করবেন। আর তখন আকাশমণ্ডলি ও
পৃথিবীতে কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, ‘‘আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের উপর আসবে।
আপনাকে এবিষয়ে সম্পূর্ণ অবহিত ধারণা করেই তারা আপনাকে প্রশ্ন করে। বলে
দিন: এ বিষয়ের জ্ঞান আমার রবেরই আছে, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’’।
(সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮৭)
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ»
‘‘আমার নবুওয়ত এবং শেষদিবস এইরূপ’’ (তিনি মধ্যমা এবং তর্জনী আংগুলদ্বয় উচু করে দেখান) (মুত্তাফিকুন আলাইহি)।
{প্রশ্ন: ১৫৫} কতবার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে তার বিবরণ দিন?
উত্তর: পর্যায়ক্রমে তিনবার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে।
প্রথম পর্যায়: পৃথিবীতে ভীতিকর বিপর্যয় দেখা দিবে, এাস সৃষ্টি হবে এবং দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে যাবে। মহান পবিত্র আল্লাহ বলেন:
﴿
وَيَوۡمَ يُنفَخُ فِي ٱلصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي
ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۚ وَكُلٌّ أَتَوۡهُ دَٰخِرِينَ ٨٧ ﴾
[النمل: ٨٧]
‘‘যেদিন
শিংগায় ফুঁক (প্রথম) দেওয়া হবে, সেদিন আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন, তারা ব্যতীত
আকাশমণ্ডলীর ও পৃথিবীর সকলেই ভীত, বিহ্বল হয়ে পড়বে। অতঃপর সকলেই তাঁর নিকট
আসবে বিনীত অবস্থায়’’। (সূরা আন-নামল: ৮৭)
দ্বিতীয় পর্যায়: প্রচণ্ড গর্জন হবে এবং দুনিয়ার সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে[54]। মহান আল্লাহর বাণী:
﴿ وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ﴾ [الزمر: ٦٨]
‘‘শিংগায়
ফুঁক দেওয়া হবে অতঃপর যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও
পৃথিবীর সকলে মূর্ছা যাবে (মৃত্যু হবে)’’। (সূরা আয-যুমার: ৬৮)
তৃতীয় পর্যায়: পুনরুত্থান ও জাগিয়ে তুলে সংগঠিত করার ফুঁক। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ﴾ [الزمر: ٦٨]
‘‘অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, আর তৎক্ষনাৎ তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকিয়ে দেখবে’’। (সূরা আয-যুমার: ৬৮)
{প্রশ্ন: ১৫৬} মানুষ কবর থেকে কী অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে?
উত্তর:
পুনরুত্থিত হবে; ‘‘খালি পায়ে উলংগাবস্থায় এবং খাৎনা পূর্বাবস্থায়। সকলেই
উদ্ভিদ লতা-পাতার মত বেড়ে উঠবে, অতঃপর দলে দলে হাশরের ময়দানের দিকে এগিয়ে
যাবে। এখানে সৃষ্টির সব কিছুই আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ يَوۡمَئِذٖ تُعۡرَضُونَ لَا تَخۡفَىٰ مِنكُمۡ خَافِيَةٞ ١٨ ﴾ [الحاقة: ١٨]
‘‘সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে এবং তোমাদের কোনো কিছুই গোপন থাকবে না’’। (সূরা আল-হাক্কাহ: ১৮)
সবার হিসাব-নিকাশ করা হবে এবং সকলেই তাদের কৃতকর্ম জানতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ يَوۡمَ يَبۡعَثُهُمُ ٱللَّهُ جَمِيعٗا فَيُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوٓاْۚ أَحۡصَىٰهُ ٱللَّهُ وَنَسُوهُۚ ﴾ [المجادلة: ٦]
‘‘সেদিন
আল্লাহ তাদের সকলকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন এবং তাদের তাদের আমল সম্পর্কে
তিনি জানিয়ে দিবেন, আল্লাহ তা হিসেব করে রেখেছেন অথচ তারা তা বিস্মৃত
হয়েছে’’। (সূরা আল-মুজাদালা: ৬)
দাঁড়িপাল্লা দ্বারা বান্দাদের কৃতকর্ম ওজন করা হবে এবং কাজ-কর্মের যাথাযথ মূল্যায়ন ও উপস্থাপন করা হবে। আল্লাহ বলেন:
﴿
وَنَضَعُ ٱلۡمَوَٰزِينَ ٱلۡقِسۡطَ لِيَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ فَلَا تُظۡلَمُ
نَفۡسٞ شَيۡٔٗاۖ وَإِن كَانَ مِثۡقَالَ حَبَّةٖ مِّنۡ خَرۡدَلٍ أَتَيۡنَا
بِهَاۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَٰسِبِينَ ٤٧ ﴾ [الانبياء: ٤٧]
‘‘ক্বিয়ামত
দিবসে আমরা স্থাপন করব ন্যায় বিচারের পাল্লা। সুতরাং কারো প্রতি কোনোই
অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি সরিষা দানা পরমাণ ওজনেরও হয় তবুও উহা আমরা
উপস্থিত করব। হিসাব গ্রহণে আমরাই যথেষ্ট’’। (সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৭)
প্রত্যেকেই নিজের আমলনামা স্বহস্তে গ্রহণ করবে এবং তা পাঠ করবে। সুমহান আল্লাহ বলেন:
﴿ فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ فَيَقُولُ هَآؤُمُ ٱقۡرَءُواْ كِتَٰبِيَهۡ ١٩ ﴾ [الحاقة: ١٩]
‘‘আর যাকে তার আমলনামা তারই ডান হাতে দেওয়া হবে, অতঃপর তাকে বলা হবে; নাও তোমরাও লিপিবদ্ধ আমলনামা পড়ে দেখ’’। (সূরা আল হা-ক্কাহ: ১৯)
হাশরের
ময়দানে হিসাব-নিকাশ শেষ হবার পরে সকলকে জাহান্নামের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম
করতে হবে। যে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে সে নিরাপত্তা লাভ করলো। সহীহ বুখারী ও
সহীহ মুসলিমে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে:
«وَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ، فَأَكُونُ أَنَا وَأُمَّتِي أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُهَا»
‘‘আর জাহান্নামের উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা স্থাপন করা হবে। আমি এবং আমার উম্মতই প্রথম তা অতিক্রম করবো’’।
জাহান্নামের
উপর দিয়ে মুমিনগণ পথ অতিক্রমকালে তাদের পরস্পরের দেনা-পাওনা পরিশোধ করবে
যা দুনিয়ায় পরস্পরে আদায় করে নি। আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু
বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَخْلُصُ
المُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ، فَيُحْبَسُونَ عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ
الجَنَّةِ وَالنَّارِ، فَيُقَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ مَظَالِمُ
كَانَتْ بَيْنَهُمْ فِي الدُّنْيَا، حَتَّى إِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا
أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الجَنَّةِ»
‘‘মুমিনগণ
জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে কানতারা বা সাঁকো পথ
অতিক্রমকালে তাদের পরস্পরিক দেনা পাওনা পরিশোধের কাজ সমাপ্ত করা হবে, যে
দেনা-পাওনা দুনিয়াতে অমিমাংসিত রয়ে গেছে। পারস্পরিক দেনা-পাওনা পরিশোধিত
হবার পরই জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি লাভ করবে’’[55]। (আল-বুখারী)
{প্রশ্ন: ১৫৭} জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ দিন?
উত্তর:
মহান আল্লাহ জান্নাত এবং জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছেন বান্দাদেরকে
কর্মফল ভোগ করাবার জন্যে। সুতরাং জান্নাত হচ্ছে শান্তির ঘর এবং মর্যাদাময়
আবাসস্থল। আর এখানে আল্লাহর প্রিয় মোমেন বান্দাগণ (আউলিয়াগণ) শান্তি-সুখে
বাস করবে। জান্নাতের প্রশান্তি এমনতর যা কোনো চর্মচোখ দেখে নি, কোনো কান
শ্রবণ করে নি এবং কোনো মানুষের হৃদয় অনুভব করে নি। জান্নাতের সর্বোচ্চ
আনন্দময় প্রশান্তি হচ্ছে জান্নাতবাসীরা তাদের মহান প্রতিপালক আল্লাহর দর্শন
লাভ করবে।
সর্বোচ্চ বরকতময় আল্লাহ বলেন:
﴿
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أُوْلَٰٓئِكَ هُمۡ
خَيۡرُ ٱلۡبَرِيَّةِ ٧ جَزَآؤُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ
تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۖ رَّضِيَ
ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ رَبَّهُۥ ٨ ﴾
[البينة: ٧، ٨]
‘‘(৭)যারা
ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারাই সৃষ্টির মধ্যে উত্তম। (৮)তাদের
প্রতিপালকের কাছে রয়েছে তাদের জন্য পুরস্কার স্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে
নদী প্রবাহমান। সেখানেই তাদের স্থায়ী নিবাস। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন
এবং তারাও সন্তুষ্ট তাঁর প্রতি; আর তা তারই জন্যে, যে তার রবকে ভয় করে’’।
(সূরা আল-বায়্যিনাহ)
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [السجدة: ١٧]
‘‘আর কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন-প্রীতিকর কি লুকায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ’’। (সূরা আস-সাজদাহ’ আয়াত নং ১৭)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
‘‘(২২) সে দিন কোনো কোনো মুখমণ্ডল উজ্জল হবে, (২৩) তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’’। (সূরা আল -ক্বিয়ামাহ)
আর জাহান্নাম হচ্ছে আযাব, অপমান ও লাঞ্ছনার গৃহ। আল্লাহ তাঁর শত্রু কাফের সম্প্রদায়ের জন্য তা প্রস্তুত রেখেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِيٓ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ١٣١ ﴾ [ال عمران: ١٣١]
‘‘তোমরা সে অগ্নিকে ভয় কর যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে’’। (আলে ইমরান: ১৩১)
জাহান্নামের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের আযাব হবে; মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
﴿إِنَّآ
أَعۡتَدۡنَا لِلظَّٰلِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمۡ سُرَادِقُهَاۚ وَإِن
يَسۡتَغِيثُواْ يُغَاثُواْ بِمَآءٖ كَٱلۡمُهۡلِ يَشۡوِي ٱلۡوُجُوهَۚ
بِئۡسَ ٱلشَّرَابُ وَسَآءَتۡ مُرۡتَفَقًا ٢٩ ﴾ [الكهف: ٢٩]
‘‘আমরা
সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার দেয়াল তাদেরকে পরিবেষ্টন
করে রাখবে। তারা (পিপাসা নিবারনের জন্য) পানির জন্য আর্ত চিৎকার করবে,
কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে গলিত পদার্থের ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল
দগ্ধ করবে। তা কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং তা কত নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!’’ (সূরা
আল-কাহাফ: ২৯)
সর্বশেষ
কথা হচ্ছে যে, জান্নাত এবং জাহান্নাম প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে জান্নাত দান করেন এবং জাহান্নাম হতে
রক্ষা করেন।
{প্রশ্ন: ১৫৮} ঈসা ইবনে মরিয়াম কে?
উত্তর:
তিনি আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রসূল। আল্লাহ তাকে পিতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন
অতঃপর তাকে বলেছেন হও আর সে হয়ে গেছে। তিনি শেষ যামানায় দুনিয়ায় আসবেন এবং
মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীয়ত অনুযায়ী শাসনকার্য
পরিচালনা করবেন। কেননা আল্লাহ তাকে রুহ এবং স্বশরীরে তাঁর কাছে উঠিয়ে নিয়ে
গেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَۖ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٖ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٥٩ ﴾ [ال عمران: ٥٩]
‘‘নিঃসন্দেহে
আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমের মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করে
ছিলেন অতঃপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন’’। (সূরা আলে
ইমরান: ৫৯)
তিনি
সুদৃঢ় সাহসী রাসূলগণের একজন, তিনি মানুষকে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সুসংবাদ জানিয়েছিলেন। তার মা সত্যবাদী ও পবিত্রা
ত্রুটিমুক্ত অত্যন্ত ভালো, পাক পবিত্র এবং নিষ্কলুষ ছিলেন।
{প্রশ্ন: ১৫৯} নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মানুষ্ঠান এবং ইসরা, মিরাজ ও অন্যান্য উৎসব পালনের হুকুম কি?
উত্তর:
এগুলো বিদ‘আত ও নাজায়েয এবং হারাম। কেননা মুমিনদের জন্য এমন কোনো কিছুই
পালন করা বৈধ নয় যা আল্লাহর শরীয়তে মওজুদ নেই। আর এসব অনুষ্ঠান পালন করার
কোনো বিধান আল্লাহ দেন নি। আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আল্লাহ ও
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শরীয়তি বিধান দিয়েছেন শুধুমাত্র তা-ই
পালন করার জন্য। মহান আল্লাহ বলেছেন:
﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ﴾ [الحشر: ٧]
‘‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন কর’’। (সূরা আল-হাশর: ৭)
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ»
‘‘যে ব্যক্তি এমন কিছু নব উদ্ভাবন করবোর অস্তিত্ব আমাদের শরীয়তে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’। (বুখারী ও মুসলিম)
অতএব নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মানুষ্ঠান আল্লাহর অনুমোদিত দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং তা বিদ‘আত।
{প্রশ্ন: ১৬০} আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াতের কিছু গুণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন
উত্তর:
তারা রাসূলের আনুগত্য করে, তাঁর হেদায়াতের পথে চলে এবং তারা নিজেদের মধ্যে
আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম বিধান বাস্তবায়ন করে থাকে। তারাই উত্তম
চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের দিকে মানুষকে আহ্বান করে। তারা অপর মুসলিম ভাইদের জন্য
তাই পছন্দ করে যা নিজেদের জন্য পছন্দ করে। আর তারা আল্লাহ ও রাসূলের
দুষমনদেরকে পছন্দ করে না এবং মুমিনগণ ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু মনে করে না।
তারা সৎকাজের আদেশ দান করে এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে, তারা জেনে-বুঝে
সুস্পষ্ট বিধানের দিকে সকলকে আহ্বান করে। তারা দৃঢ়তা অবলম্বন করে এবং
আল্লাহর পথে যত কষ্ট ও বাধা আসে সবই ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করে।
তাদের
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: হক উপদেশ, ধৈর্যের পরামর্শ, সালাত কায়েম, যাকাত
আদায়, রমাযান মাসে সাওম পালন ও হজ্জ আদায় করা। তারা আল্লাহ ও পরকালের
প্রতি বিশ্বাস রাখে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং তারা কারো কোনো অপমান
ও নিন্দাকে ভয় পায় না। তারা আল্লাহওয়ালা সৎ নেতৃত্বের আনুগত্য করে, আল্লাহ
ও রাসূলের জন্য নছিহত করে এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ লোকদেরকেও নসীহত
দান করে। আর তারা কোনো প্রকার খেয়ানত করে না, গাদ্দারী করে না, অন্যায়,
অপরাধ করে না। তারা দীনে হকের ব্যাপারে একনিষ্ঠ, দীনদার এবং তারা আল্লাহর
রজ্জুকে যথাযথভবে আঁকড়ে থাকে।
{প্রশ্ন: ১৬১} দীন ইসলামে ফিকহের বিধান কী? সবচেয়ে বড় ফিকহ কী?
উত্তর:
ফিকাহর বিধান হচ্ছে; দীন ইসলামকে দলীল প্রমাণ সহ জানা ও বুঝা। আরো যা
জানা যাবে তা হচ্ছে যে, দীনের সাথে সম্পর্কহীন বিষয়বস্তু, দীনকে যে সব
বিষয় ত্রুটিপূর্ণ করে এবং দীনকে দুর্বল করে দেয় তাও স্পষ্ট হবে। দীনকে
এভাবে জানা সকল মুসলিম বান্দার ওয়াজিব এবং অপরিহার্য; কেননা তা ব্যতীত
আল্লাহর বান্দারা সুষ্ঠু সুন্দর ও নির্ভুলভাবে দৃঢ় চিত্তে ইবাদাত করতে
সক্ষম হবে না। আর তারই দ্বারা কেবল বিপদ-আপদ ও ফিতনার মোকাবেলায় ধৈর্য ধারণ
করে দীনের উপর সুদৃঢ়ভাবে টিকে থাকতে সক্ষম হয়। যারা জেনে-বুঝে ইসলামকে
কবুল করেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
﴿
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ فَإِذَآ أُوذِيَ فِي
ٱللَّهِ جَعَلَ فِتۡنَةَ ٱلنَّاسِ كَعَذَابِ ٱللَّهِۖ ﴾ [العنكبوت: ١٠]
‘‘কতক
লোক বলে, আমরা আল্লাহর উপর ঈমান স্থাপন করেছি; কিন্তু আল্লাহর পথে যখন
তারা নির্যাতিত হয়, তখন তারা মানুষের নির্যাতনকে আল্লাহর আযাবের মত মনে
করে’’। (সূরা আল-আনকাবূত: ১০)
সুতরাং
দীনকে এমনভাবে বুঝে নিতে হবে যেন, আল্লাহ ও রাসুলের হুকুম-বিধান পালনের
সময় বিপদ-আপদ এমনকি সব রকম ফিতনা-ফাসাদের সময় ঈমানের বিপর্যয় না ঘটে। বরং
সর্বাবস্থায় আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তাঁর বিধানের
পরিপন্থী কার্যকলাপ থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখতে হবে।[56]
আল-ফিকহুল আকবার বা সর্বোচ্চ ফিকহ হচ্ছে: শরীয়তের দাবী অনুযায়ী বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসকে জানা।
{প্রশ্ন: ১৬২} কোনো মুসলিম ব্যক্তি তার দীন এবং অন্যান্য সংশয় নিরশনের জন্য প্রশ্ন করার হুকুম কী?
উত্তর: এ জাতীয় প্রশ্ন করা ফরয বা অবশ্য কর্তব্য। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন:
﴿ فَسَۡٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٤٣ بِٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلزُّبُرِۗ ﴾ [النحل: ٤٣، ٤٤]
‘‘৪৩) অতএব তোমরা যদি না জান; তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করবে, (৪৪) স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ সহ’’। (সূরা আন-নাহল)
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿
وَإِذۡ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ
لَتُبَيِّنُنَّهُۥ لِلنَّاسِ وَلَا تَكۡتُمُونَهُۥ ﴾ [ال عمران: ١٨٧]
‘‘আর
স্মরণ করুন, আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে;
তারা তা (কিতাবকে) মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না’’। (সূরা
আলে-ইমরান: ১৮৭)
সালফে
সালেহীনের মধ্যে কেউ কেউ বলেন যে, ‘‘তুমি তোমার দীন সম্পর্কে জানার জন্য
এমনভাবে প্রশ্ন করবে যেন লোকে বলে তুমি দীনের জন্য পাগল হয়ে গেছ’! সাহাবায়ে
কিরামগণ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দীন সম্পর্কে তাদের অজানা
বিষয়ে প্রশ্ন করে জেনে নিতেন।
{প্রশ্ন: ১৬৩} মুসলিম কেন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়?
উত্তর: মুসলিমদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন কারণে এবং তার পিছনে অনেক হেকমত আছে। যেমন; আল্লাহ বলেন:
﴿ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ ﴾ [الملك: ٢]
‘‘তোমাদেরকে পরীক্ষা করে দেখা হয় যে, কে তোমাদের মাঝে কাজ-কর্মে উত্তম’’। (সূরাতুল মুলক:২)
হিকমাতের মধ্যে আরো আছে: মানুষের মধ্যে কে কতটুকু ধৈর্য ও সংযত থাকতে পারে তার পরীক্ষা। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞۚ وَٱللَّهُ عِندَهُۥٓ أَجۡرٌ عَظِيمٞ ١٥ ﴾ [التغابن: ١٥]
‘‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহা পুরস্কার’’। (সূরা আত-তাগাবুন: ১৫)
অতএব ঈমান ও আমলের মানদণ্ডে দীনের অনুসারীদের শেষ পরিণতি বিপদজনক হয়ে যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ
وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا
وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ
إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ
فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا
يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٢٤ ﴾ [التوبة: ٢٤]
‘‘বলুন;
তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের
পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যাবসা যা বন্ধ
হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান -যাকে তোমারা পছন্দ কর- আল্লাহ,
তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর
আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত! আর আল্লাহ কোনো ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন
না। (সূরা আত-তাওবাহ: ২৪)
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿وَجَعَلۡنَا بَعۡضَكُمۡ لِبَعۡضٖ فِتۡنَةً أَتَصۡبِرُونَۗ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيرٗا ٢٠۞﴾ [الفرقان: ٢٠]
‘‘আর
আমরা তোমাদের কিছু সংখ্যককে অন্যদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। তোমরা
ধৈর্য ধারণ করবে কি? আপনার প্রতিপালনক সব কিছু দেখেন’’। (সূরা আল-ফুরকান:
২০)
সুতরাং
মুসলিমদের উপর কর্তব্য হচ্ছে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে ফেতনা প্রতিরোধ করা
এবং আল্লাহর রজ্জুকে (কুরআন-হাদীস) সংগবদ্ধ হয়ে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা। আর
যারা কুরআন-হাদীসের জ্ঞান রাখে তাদের থেকেই শরীয়তের হুকুম-আহকাম জেনে
নেওয়া[57]।
{প্রশ্ন:
১৬৪} মুসলিম জাহানে দলের সংখ্যা অনেক, আর প্রত্যেকটি দলই নিজেদেরকে
সার্বিক ধর্মবিশ্বাসের অধিকারী মনে করে; অতএব সত্য সঠিক কোনটি তা বুঝার
উপায় কি?
উত্তর:
সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে যে, সঠিক সোজা পথের অনুসারী (আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল
জামা‘আত) তারাই যারা আল্লাহর রাসুলকে অনুসরণ করে অর্থাৎ তারা কুরআন এবং
সুন্নাহ মেনে চলে। আর তারা আহ্বান করে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাতের
দিকে। তারা কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী যথাযথ যুগোপযোগী জীবন-যাপন করে
সাহাবীগণের আদর্শ গ্রহণ করত তাদের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন এবং তাদের
হিদায়াতের পথে যারা চলে তারাই সত্য সঠিক দল বা জামায়াত। এসব বৈশিষ্ট্য
ব্যতীত কোনো দল সঠিক বলে বিবেচিত নয় বরং বাতিল ও পথভ্রষ্ট।
{প্রশ্ন: ১৬৫} সঠিক আক্বীদা বা ধর্ম বিশ্বাস কি মানুষের মধ্যে জিঘাংসা, নিষ্ঠুরতা এবং সন্ত্রাসাবাদ সৃষ্টি করে?
উত্তর:
সঠিক ধর্ম বিশ্বাসে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-বিধান ও শর্ত সাপেক্ষে জিহাদ ব্যতীত
অন্য কিছু করা নাজায়েয বা নিষিদ্ধ। যে সব মুসলিম শাসক ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী
শাসন কার্য পরিচালনা করছে না, তাদেরকে উৎখাত করার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত
ঝাপিয়ে পড়া বৈধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার চেয়ে বড় পাপাচার বর্তমান থাকবে
এবং উচ্ছেদ করা না হবে।
আর
যারা ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করবে তাদের সাথে বিদ্রোহ
করা বড় ধরনের অপরাধ ও জুলুম। ইসলামী বিধান মোতাবেক শাসকদের বিরোধীতাকারীদের
বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা এবং তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব।
তবে
যে সব মুসলিম শাসক ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না তাদেরকে
নছিহত করা, আল্লাহকে ভয় করতে বলা, যেন তারা আল্লাহর দীনের দিকে
প্রত্যাবর্তন করে এবং তাঁরই নাযিল করা স্বচ্ছ পূর্ণাঙ্গ শরীয়ত অনুযায়ী দেশ
পরিচালনা করে।
মুসলিমগণ
যখন সংগবদ্ধ হয়ে শক্তি অর্জন করবে এবং ফিতনা ও বিভ্রান্তি থেকে নিরাপদ হবে
তখনই ওয়াজিব হবে ঐ মুসলিম শাসককে উৎখাত করা, যে ইসলামী শরীয়াত অনুযায়ী
রাষ্ট্র পরিচালনা করে না। অতঃপর তার পরিবর্তে যে ব্যক্তি আল্লাহর শরীয়ত
মোতাবেক রাষ্ট্র চালাবে, তাকেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে হিদায়াত করুন এবং মুসলিমদের মধ্যে যে সর্বোত্তম তাকে
নেতৃত্ব গ্রহণ করার তৌফিক দিন।
{প্রশ্ন: ১৬৬} ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ছেড়ে দেওয়া কি কুফরী?
উত্তর: হ্যাঁ; কুফরী। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِۗ ﴾ [التوبة: ١١]
‘‘আর তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই’’। (সূরা আত-তাওবাহ: ১১)
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ ﴾ [التوبة: ٥]
‘‘কিন্তু যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও’’। (সূরা আত-তাওবাহ: ৫)
অনুরূপ সূরা আল-মুদ্দাসসিরের ৪২ ও ৪৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ مَا سَلَكَكُمۡ فِي سَقَرَ ٤٢ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ ٤٣ ﴾ [المدثر: ٤٢، ٤٣]
‘‘(৪২)
তোমাদেরকে কি জন্য সাক্কার নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে? (৪৩) তারা
বলবে: আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’’।
{প্রশ্ন: ১৬৭} একজন মুসলিম মহিলার পর্দা করা, তার পূর্ণাংগ ধর্ম-বিশ্বাসের প্রমাণ নয় কি?
উত্তর:
হ্যাঁ, পর্দা পালন করলে তার সম্মান, মর্যাদা ও পবিত্রতা সুরক্ষিত এবং
নিরাপদ হবে। আর এটা তার পূর্ণাঙ্গ ধর্ম বিশ্বাস ও ইসলামের অনুসারী মুসলিমের
পরিচায়ক।
পারিভাষিক
অর্থে একজন মহিলার পর্দা হচ্ছে: সর্বশরীর এবং সৌন্দর্যকে আবৃত করে রাখা;
যেন-পর-পুরুষ নারীদেহ কিংবা তার শরীরের কোনো সৌন্দর্য দেখতে সক্ষম না হয়।
এমনকি নারী সমাজ যেসব কৃত্রিম সাজ-গোজ করে দৈহিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলেন তাও
ঢেকে রাখা একান্ত কর্তব্য। নারীরা রুচিসম্মত ঢিলা-ঢালা পোষাক পরিধান করে
এবং গৃহাভ্যন্তরে থাকলেই কেবল পর-পুরুষ হতে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম
হবে। [58]
{প্রশ্ন:১৬৮} তাওহীদ জেনে-বুঝেও যে ব্যক্তি সে অনুযায়ী কাজ করে না, সে কি কাফের হবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, সে কাফের হবে যখন তার কাছে তাওহীদের দাওয়াত পৌছে যাবে এবং তাওহীদের
বিপরীত কাজ করবে। আবার কখনো বা সে হবে ফাসেক কিংবা গুনাহগার। আর এটা শায়খ
মুহাম্মাদ ইবন ইব্রাহীম আল-শায়খ রহেমাহুল্লাহর অভিমত। [59]
{প্রশ্ন:
১৬৯} প্রতিক্ষিত মাহদী সত্যিই আবেন কি? দীনের গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞাতব্য বিষয়
হচ্ছে “প্রতিক্ষিত মাহদী”র কথা বলেছেন নবী মুহাম্মাদ সল্লা্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সুতরাং ঐ বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে অন্যদেরকে প্রশ্ন করার কোনো
সুযোগ আছে কি?
উত্তর:
হ্যাঁ, সত্যিই তিনি আগমন করবেন। আর একথা বলেছেন একদল সত্য উৎঘাটন ও
প্রতিষ্ঠাকারী; যথা, আহমাদ ইবনে হাম্মাল, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এবং
শায়খ ইবনে বায। তাদের দলীল হচ্ছে: মুসনাদে ইমাম আহমাদে উল্লিখিত ইবনে মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস; নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন:
«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَلِيَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي، يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي»
‘‘ততক্ষন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত আমার ঘর থেকে একজন লোকের আগমন না হবে, আমার নামেই তার নাম হবে’’। (মুসনাদে আহমাদ: ৬/৪২, নং ৩৫৭১)
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে:
«لَا
تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَمْتَلِئَ الْأَرْضُ ظُلْمًا وَعُدْوَانًا "
قَالَ: " ثُمَّ يَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ عِتْرَتِي - أَوْ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي
- مَنْ يَمْلَؤُهَا قِسْطًا وَعَدْلًا، كَمَا مُلِئَتْ ظُلْمًا
وَعُدْوَانًا»
‘‘ততক্ষন
পর্যন্ত কিয়ামত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মাটির পৃথিবী জুলুম-অত্যাচার ও
দুশমনীতে ভরে না যাবে। অতঃপর আমার বংশ থেকে একজন লোক আত্মপ্রকাশ করবে অথবা
আমার ঘর থেকেই তার আগমন হবে এবং তার সুবিচার সুশাসনে পৃথিবী পরিপূর্ণ হয়ে
যাবে, যেভাবে ইতোপূর্বে জুলুম অপরাধ ও পাপাচারে ভরে গিয়েছিল[60]। (মুসনাদে আহমাদ ১৭/৪১৬, নং ১১৩১৩)।
{প্রশ্ন: ১৭০} ইসলামের আলোকে ভালো-বাসার মর্মার্থ কি? ভালোবাসার সাথে তাওহীদের সম্পর্কে কি?
উত্তর:
ভালোবাসা হচ্ছে সেই অনুভুতি যা দেখা যায় না এবং তা ছোয়াও যায় না। আর এটা
মহান আল্লাহর দেওয়া এক বিশেষ নেয়ামত, তাঁরই ইচ্ছায় বৃদ্ধি ঘাটতি হয়।
সর্বোচ্চ ভালোবাসা আল্লাহরই প্রাপ্য অতঃপর তাঁর রাসূলের। আর এটাই হচ্ছে
আকীদাহ-বিশ্বাসের মৌলিক উপাদান ও মেরুদণ্ড। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ ﴾ [ال عمران: ٣١]
‘‘বলুন;
যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ
তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন’’। (সূরা
আলে-ইমরান: ৩১)
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»
‘‘তোমাদের
কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের
পিতা, সন্তান এবং অন্যান্য সকল মানুষের চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় না হব’।
(বুখারী: ১৫; মুসলিম: ৪৪)
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
«لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ»
‘‘তোমাদের কেহই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিজের জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয় না হব’। (বুখারী)
অতএব
উপরোক্ত উপায়ে মুমিন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ সৌন্দর্য অনুধাবন করতে সক্ষম
হবে। তবে দাম্পত্য জীবনের প্রেম-ভালোবাসা এবং আত্মীয় স্বজনদের ভালোবাসা
দোষনীয় হবে না। কিন্তু শর্ত হলো যে, কোনো অবস্তায়ই যেন মহান আল্লাহর প্রতি
ভালোবাসা বাধাগ্রস্ত না হয়[61]।
বস্তুত
প্রত্যেকের মাঝে নির্ধারিত সাধারণ ভালোবাসা (মহব্বত) এবং আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভালোবাসা এক নয়, কেননা একজন মুসলিমের সাধারণ
ভালোবাসা কখনো কখনো অমুসলিমের জন্যেও হতে পারে।
{প্রশ্ন: ১৭১} আহলুল ক্বিবলা বা কিবলাপন্থী করা?
উত্তর:
তারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করে, ক্বিবলামুখী হয়, যথানিয়মে সময়মত আমাদের
মতই সালাত সম্পন্ন করে, কুরআনকে পূর্ণাঙ্গরূপে বিশ্বাস করে এবং তারা কোনো
প্রকার অতিরঞ্জিত করে না। মহান আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা তা হালাল করে
না কিংবা মহান আল্লাহ তাঁর কিতাব এবং রসূলের সুন্নাতে যা হালাল করেছেন তারা
তা হারাম করে না। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ
شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا،
وَصَلَّى صَلاَتَنَا، وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا، فَهُوَ المُسْلِمُ، لَهُ مَا
لِلْمُسْلِمِ، وَعَلَيْهِ مَا عَلَى المُسْلِمِ»
‘‘যে
সাক্ষ্য দিবে যে আল্লাহ ব্যতীত হক্ব কোনো মা‘বুদ নেই, আর আমাদের কেবলার
দিকে ফিরে সালাত আদায় করে, আমাদের মতই সালাত আদায় করে; সে মুসলিম হিসেবে
গণ্য হবে। অতঃপর আমরা যা পাব সেও তা পাবে এবং আমাদের উপর যা প্রয়োগ হবে তার
উপরও সমভাবে তা প্রয়োগ হবে’’। (বুখারী, হাদীস নং ৩৯৩)[62]
{প্রশ্ন: ১৭২} গুনাহকারী কি কোন গুনাহের কারণে বেঈমান হয়ে যাবে?
উত্তর:
যে শির্ক করবে সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে। অর্থাৎ বেঈমান হয়ে যাবে।
তবে অন্যান্য বড় বা ছোট গুনাহ হলে ঈমানের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে না বরং
সে মুমিন থাকবে বটে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ মুমিন নয়। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ»
‘‘যেনাকারী যখন যেনা করে তখন সে মুমিন থাকে না’’। (সহীহ আল-বুখারী, ২৪৭৫)
অর্থাৎ তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ থাকে না।
অর্থাৎ তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ থাকে না।
শির্ক
ব্যতীত অন্যান্য ছোট বড় গুনাহকারী কাফের নয় এবং জাহান্নাম তার স্থায়ী
নিবাস হবে না। যেমন; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي»
‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে যারা কবীরা গুনাহ করবে, তারাও আমার শাফা‘আতের (সুপারিশ) অন্তর্ভুক্ত’’। (আবুদাউদ, ৪৭৩৯)
বুখারী বর্ণিত অন্য এক হাদীসে আছে:
«يَخْرُجُ
قَوْمٌ مِنَ النَّارِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَيَدْخُلُونَ الجَنَّةَ، يُسَمَّوْنَ الجَهَنَّمِيِّينَ»
‘‘আল্লাহ
তা‘আলা জাহান্নাম থেকে জাহান্নামী একদল গুনাহগার লোককে মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশে বের করে আনবেন অতঃপর তাদেরকে
জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। লোকেরা তাদেরকে জাহান্নামী বলে সম্বোধন করবে।’’
(বুখারী, ৬৫৬৬)
তবে
গুনাহগারের শাস্তি আল্লাহ ইচ্ছাধীন, তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে জান্নাতে
প্রবেশের সুযোগ দিবেন কিংবা শাস্তি ভোগ করাবেন। মহামহিয়ান আল্লাহ বলেন:
﴿
لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا
فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ
لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ
قَدِيرٌ ٢٨٤ ﴾ [البقرة: ٢٨٤]
‘‘আসমান
ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমাদের মনের মধ্যে যা আছে তা যদি
প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নিবেন। অতঃপর
যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান’’। (সূরা আল
-বাকারাহ: ২৮৪)
{প্রশ্ন: ১৭৩} সাহাবী কে? সাহাবীদের ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য কী?
উত্তর:
যিনি ঈমানের সাথে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সরাসরি সাহচর্য
লাভ করেছেন এবং ঈমানের উপর টিকে থেকেই মারা গেছেন তিনিই সাহাবী।
সাহাবীদের
ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে যে, তাদেরকে শ্রদ্ধা সম্মান করা, তাদের
প্রতি সুধারণা পোষণ করা এবং ভালোবাসা। তাদেরকে সত্যনিষ্ঠ ন্যায়পরায়ন মনে
করা, তাদের কারো প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ না করা, অবজ্ঞা না করা এবং তাদের
প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।
সাহাবীগণ
তাঁদের জান এবং সম্পদ সত্য দীনের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর
জন্য সত্যনিষ্ঠ জিহাদ (লড়াই) করেছেন এবং ঈমানদারীতে তাঁরা অগ্রগামী। তাঁরা
সর্ব শতাব্দীর উত্তম আদর্শবাদী, তাঁরা সকলেই মানুষ ছিলেন, তাঁরা ভুলত্রুটি
মুক্ত নন। তবে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ কিংবা মত পার্থক্য নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ
করা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা আমাদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ। নবী সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ، ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلاَ نَصِيفَهُ»
‘‘তোমরা
কেহ আমার সাহাবীদেরকে গাল-মন্দ করবে না। আমার জীবন যার হাতে রয়েছে তাঁর
শপথ (করে বলছি যে): তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণও দান করে,
তবুও তাদের কারো এক মুদ পরিমাণ সদকার মতও হবে না কিংবা অর্ধমুদও হবে
না’’।[63]
{প্রশ্ন: ১৭৪} শির্ক ও অন্যান্য গুনাহ থেকে তাওবা করার উপায় কী?
উত্তর:
(১) খালেছভাবে মুখে কালেমায় শাহাদাত উচ্চারণ করে দীন ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা প্রদান করা,
(২) গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা।
(৩) ইসলাম পূর্ব কুফরীর জন্য অনুশোচনা করা,
(৪) আর কখনো দীন থেকে ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা,
(৫) পুনরায় কুফরী কাজে প্রত্যাবর্তনকে অপছন্দ করা এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ভয় করা।
মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন:
﴿ قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ﴾ [الانفال: ٣٨]
‘‘বলুন;
তাদেরকে যারা কুফরী করেছে। যদি তারা (কুফরী থেকে) বিরত হয়, তাহলে অতীতে যা
হয়েছে তা ক্ষমা করে দেওয়া হবে’’। (সূরা আল-আনফাল: ৩৮)
মুমিনগণ সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে তওবা করে থাকে। মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا﴾ [التحريم: ٨]
‘‘হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর; বিশুদ্ধ তওবা’’।[64]
মুমিন
বান্দাগণ গুনাহ কত ছোট বা ক্ষুদ্র হলো সে দিকে দৃষ্টি দেয় না বরং যার
গুনাহ (নাফরমানী) করা হয়েছে তাঁর মহত্বের দিকে লক্ষ্য দিয়ে থাকে। মহান
আল্লাহ বলেন:
﴿ ۞نَبِّئۡ عِبَادِيٓ أَنِّيٓ أَنَا ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٤٩ وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ ٱلۡعَذَابُ ٱلۡأَلِيمُ ٥٠ ﴾ [الحجر: ٤٩، ٥٠]
‘‘(৪৯)
জানিয়ে দিন আমার বান্দাদেরকে আমি সর্বময় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (৫০) আর
আমার আযাব সে তো সর্বাধিক কষ্টকর মর্মান্তিক শাস্তি’’। (সূরা আল-হিজর)
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ، فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ»
‘‘তোমরা
ছোট-খাটো গুনাহর ব্যাপারে সাবধান থাকবে, কেননা কারো ক্ষুদ্র গুনাহসমূহ জমা
হয়ে তাকে হালাক (ধ্বংস) করে দিতে পারে’’। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৩৬৭, নং
৩৮১৭)[65]
{প্রশ্ন: ১৭৫} একবিংশ শতাব্দীই শেষ শতাব্দী এ বিশ্বাস পোষণ করার হুকুম কী? সহস্রাব্দ অথবা এ ধরনের অন্যান্য বর্ষবরণ উৎসবের হুকুম কী?
উত্তর:
পৃথিবীর শেষ বলতে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়া বুঝায়, সুতরাং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার
বিষয়টি সম্পূর্ণ গায়েবী ব্যাপারে। এর খবর একমাত্র আল্লাহই জানেন, তবে তা
নিকটবর্তী। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿
يَسَۡٔلُكَ ٱلنَّاسُ عَنِ ٱلسَّاعَةِۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ
ٱللَّهِۚ وَمَا يُدۡرِيكَ لَعَلَّ ٱلسَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا ٦٣ ﴾
[الاحزاب: ٦٣]
‘‘লোকেরা
আপনাকে ক্বিয়ামত (দিবস) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলুন: সেটার খবর কেবল
আল্লাহই জানেন। তা আপনি কী করে জানবেন? সম্ভবত ক্বিয়ামত শীঘ্রই সংঘটিত হয়ে
যাবে’’। (সূরা আল-আহযাব:৬৩)
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿
يَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا
عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ
ثَقُلَتۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِيكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةٗۗ
﴾ [الاعراف: ١٨٧]
‘‘তারা
আপনাকে প্রশ্ন করে ক্বিয়ামত কখন ঘটবে? বলুন: ‘এ বিষয়ের প্রকৃত জ্ঞান শুধু
আমার প্রতিপালকেরই আছে। একমাত্র তিনিই যথাসময়ে উহা প্রকাশ করবেন। তখন আকাশ ও
ভুমণ্ডলে এক ভয়াবহ অবস্থার উদ্ভব ঘটবে। আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের সম্মুখে
আসবে’’। (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮৭)
অতএব,
দুনিয়ার আয়ুকালকে ঘন্টা বা দুই হাজার বছর নির্ধারিত করে দেওয়া জায়েয হবে
না। কেননা দুনিয়ার আয়ূকাল গায়েবী বিষয় আর তা মহান আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে
না।
দুই
সহস্র বছর কিংবা নতুন কোনো শতাব্দীকে কেন্দ্র করে উৎসব উদযাপন করা
সম্পুর্ণ অবৈধ কাজ। ইয়াহূদী ও খৃষ্টান সম্প্রদায় সহস্রাব্দের শেষে অথবা
সূচনার সাথে মনগড়া ঘটনা দুর্ঘটনার সম্পর্কে জুড়ে দেয়, আর দৃঢ়তার সাথেই
তাদের পূর্বাভাষ বাস্তবেও সংঘটিত হওয়ার কথা প্রচার করে বেড়ায়।
সুতরাং
মুসলিমদের অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে যে; ঐ ধরনের তথাকথিত মনগড়া বিভ্রান্তিকর
প্রপাগাণ্ডায় কর্ণপাত না করা বরং সকলকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
সাথে সথে ইয়াহূদী, খৃষ্টানদের সর্ব প্রকার বিভ্রান্তির ব্যাপারে সতর্কতাও
অবলম্বন করতে হবে। কেননা তারা মানুষকে ঈমানের পরিপন্থী কুফরী কাজে উদ্ভুদ্ধ
করে এবং রহিত ধর্মসমূহকে ইসলামের সাথে একত্রিকরণের ছদ্মাবরণে দীনে হক
পরিত্যাগ করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। আর তাই মুসলিমদেরকে ঐ সব বেদীন
সম্প্রদায়ের রূপধারণ, তাদের ঈদ উপাসনায় যোগদান করতে কিংবা তদনুরূপ ঈদ-উৎসব
পালন করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
অতএব
তাদের ঈদ-উপাসনায় কোনো প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা, এমনকি ওগুলোকে আনন্দ
উৎসবের পর্ব হিসাবে স্বীকার করা এবং ঐ উপলক্ষে তাদেরকে অভিনন্দিত করা
আমাদের জন্য নাজায়েয বা অবৈধ। বরং আমাদের দীন ইসলাম নিয়েই আমাদের গর্ব করা
উচিৎ। আর এ দীনের সুউচ্চ মর্যাদা ও সঠিক ধারণা সবার কাছে তুলে ধরা এবং
এদিকে দাওয়াত দেওয়া আমাদেরই একান্ত কর্তব্য। [66]
{প্রশ্ন: ১৭৬} দীনসমূহকে একত্রীকরনের আহ্বান জানানোর হুকুম কী?
উত্তর:
এধরনের কথা বলাই হারাম। তবুও যে বলবে সে কাফের এবং মুসলিম থেকে খারিজ হয়ে
যাবে। কেননা ইসলাম পূর্ব দীনসমূহ রহিত হয়ে গেছে এবং দীন ইসলামই হচ্ছে
আল্লাহর মনোনিত চূড়ান্ত জীবন বিধান। আর অন্যান্য দীন (ধর্ম)সমূহ পথভ্রষ্ট
কুফরী বিধান গণ্য হবে না। মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ﴾ [ال عمران: ١٩]
‘‘আল্লাহর নিকট একমাত্র (গ্রহণযোগ্য) দীন হলো ইসলাম’’।[67]
মহান আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানের ৮৫ নং আয়াতে আরো বলেন:
﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]
‘‘কেহ
ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে, তা কখনো কবুল করা হবে না
এবং সে ব্যক্তি আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’’।
সুতরাং
চূড়ান্তভাবে বলা যায় যে; দীন ইসলাম ব্যতীত আর কোনো সত্য দীন নেই। অতঃপর
দীন ইসলামকে অন্য কোন বিধানের কাছাকাছি মনে করা কিংবা সমন্বয় সাধন করার
প্রচেষ্টা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বরং তা প্রত্যাখ্যত হবে। আর যারা দীন
ইসলামের অনুসারী এসব বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা ধারণা থাকা অত্যন্ত জরূরী।
সমস্ত
মুসলিম জাতি একমত যে; দুনিয়ার বুকে দীন ইসলাম ব্যতীত আর কোনো সত্য দীনের
অস্তিত্ব নেই। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল হওয়ার পর পূর্ববর্তী কিতাব ও
ধর্মমতসমূহ রহিত করে দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ। অতএব পূর্ববর্তী আসমানী
কিতাবসমূহের স্থলাভিষিক্ত চূড়ান্ত ও সর্বশেষ আসমানী কিতাবের নাম হচ্ছে
আল-কুরআন। আর তাই আল্লাহর নাযিলকৃত সন্দেহমুক্ত নির্ভুল আল কুরআন ছাড়া
গ্রহণযোগ্য অনুসরণীয় জীবন বিধান দ্বিতীয়টি আর নেই। পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে
পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। সুতরাং আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস
করতে হবে যে, যারা দীন ইসলামে প্রবেশ করবে না তারাই কাফের এবং আমাদের
শত্রু বলে গণ্য হবে। তাই সকলকে স্বরণ রাখতে হবে যে, কোনো অবস্থাতেই দীন
ইসলামকে অন্য কোনো দীনের সাথে সমন্বয়ের চেষ্টা করা, ঐক্যের ডাক দেওয়া, এর
জন্য সভা-সমাবেশ করা, এর জন্য কোনো প্রচেষ্টায় সাড়া দেওয়া নাজায়েয[68]
{প্রশ্ন: ১৭৭} শয়তান মুমিনদের অন্তরে যে অসঅসা (কুমন্ত্রণা) দেয় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?
উত্তর:
শান্ত চিত্তে ধৈর্য অবলম্বন করে শয়তানের অসঅসা থেকে আল্লাহর আশ্রয়
প্রার্থনা করতে হবে। সহীহাইনে (বুখারী ও মুসলিম) বর্ণিত আছে; নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"
يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولُ: مَنْ خَلَقَ كَذَا، مَنْ
خَلَقَ كَذَا، حَتَّى يَقُولَ: مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ
فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ "
‘‘শয়তান
তোমাদের কাছে এসে বলবে; ‘এটা কে সৃষ্টি করেছে? ওটা কে সৃষ্টি করেছে? আর
অবশেষে বলবে তোমাদের প্রতিপালকের স্রষ্টা কে? শয়তান যখন এ অবস্থায় পৌঁছবে
তখন তোমরা আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে থেমে যাবে’’। (বুখারী, ৩২৭৬; মুসলিম, ১৩৪)
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে;
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلُوهُ: إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا
يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ، قَالَ: «وَقَدْ
وَجَدْتُمُوهُ؟» قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: «ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ»
‘‘আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবী নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করেন যে, আমাদের মনের মধ্যে বড় ধরনের এমন কিছুর উদ্ভব
ঘটে যা বলার সাহস আমরা পাই না। অতঃপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন যে, তোমাদের মধ্যে হয়ত ওগুলোর উদ্ভব হয়েছে? তারা বললেন, হ্যাঁ। নবী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন; ওরকম হওয়াটাই (ব্যক্ত না করাটাই[69])
সুস্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ’’। (মুসলিম, ১৩২)
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন: তিনি বলেন:
جَاءَ
رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا
رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَحَدَنَا يَجِدُ فِي نَفْسِهِ، يُعَرِّضُ
بِالشَّيْءِ، لَأَنْ يَكُونَ حُمَمَةً أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ
يَتَكَلَّمَ بِهِ، فَقَالَ: «[ص:330] اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ،
اللَّهُ أَكْبَرُ، الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ كَيْدَهُ إِلَى
الْوَسْوَسَةِ»
‘এক
লোক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল, আমাদের মনের মধ্যে কিছু বিষয়ে কথোপকথন হয় ফলে আমাদের মধ্যে
অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে অস্বস্তিকর এ অবস্থার কথা ব্যক্ত করার
চেয়েও পুড়ে অঙ্গার হওয়া তার কাছে বেশি পছন্দ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহর প্রশংসা যে,
তিনি শয়তানের ষড়যন্ত্রকে অসঅসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ,
হাদীস নং ৫১১২; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৪০ হাদীস: ৩১৬১)
শাইখুল
ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: অসঅসাকে জোরালোভাবে অপছন্দ করে এড়িয়ে থাকতে
চাওয়া সত্বেও অসঅসায় আক্রান্ত হওয়া, অতঃপর অন্তর থেকে তা প্রতিরোধ করা
সুস্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ। যেমন: একজন মুজাহিদের কাছে শত্রু আসলে তাকে সে
প্রতিরোধ করে, আর এটাই জিহাদের ‘‘মহত্ব’’। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য
হচ্ছে এধরনের অসঅসা প্রতিরোধ করা এবং মানসিক যন্ত্রনা-মুক্ত থাকা। আরও
জ্ঞাতব্য যে, অসঅসায় তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ»
‘‘অবশ্যই
আল্লাহ আমার উম্মতের মধ্যে তাদেরকে পাকড়াও করবেন না যাদের অন্তরে অসঅসার
উদ্ভব হয় যতক্ষণ সে তা অনুযায়ী কোনো কাজ না করবে কিংবা অসঅসার কথা কারো
কাছে বলে বেড়াবে’’। (মুত্তাফিকুন আলাইহ, বুখারী, ৫২৬৯; মুসলিম, ১২৭)
{প্রশ্ন:
১৭৮} ইসলামে স্যাকুলারিজম বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করার বিধান
কী? এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে বিশ্বায়ণ (পশ্চাত্য সভ্যতার প্রসার) এর
সম্পর্ক কী?
উত্তর:
ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে দীন বর্জনকারী বিধান। আর এ বিধান মানুষকে দুনিয়ার
ভোগ বিলাসে সর্বাত্মক ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামের সাথে এ ধর্মহীন
মতবাদের বৈপরিত্বের কারণ দুটি:
(এক)
এ মতবাদ আল্লাহর নাযিল করা বিধান নয়। সুতরাং এ মতবাদ দ্বারা শাসনকার্য
পরিচালনা করা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বিরোধী। (দুই) এ বিধান আল্লাহর
ইবাদাতে শির্কের অন্তর্ভুক্ত[70]।
আর
বিশ্বায়ণ যাকে আরবীতে আউলামা বলা হয়, (যার উদ্দেশ্য সকল সভ্যতাকে
পাশ্চাত্য সভ্যতার অধীন করে দেওয়া) এর মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো,
সারা দুনিয়াকে আমেরিকাপন্থী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। অতঃপর পাশ্চাত্য
সভ্যতাকে বরণ করে পর্যয়ক্রমে পোত্তলিক খ্রীষ্টীয় দর্শনের বেড়াজালে আবদ্ধ
হওয়া।
ধর্মনিরপেক্ষতা
ও পাশ্চাত্য সভ্যতার লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে: দীন ইসলামের বিরুদ্ধে
সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিচালনার মাধমে সত্য দীনের বিলোপ সাধন করা। আর তাদের মূল
মদদদাতা হচ্ছে পশ্চিমা কুফরী শক্তি। অতএব তাদের ব্যাপারে আমাদের সাবধানতা
অবলম্বন করা ফরয। তাদেরকে বর্জন করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে, বিনাশ সাধন
করতে হবে এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া একান্ত কর্তব্য।
আর
যদি বিশ্বায়ণ বা ‘আউলামা’ এর ব্যাখ্যা হয় উন্নত প্রযুক্তি বা প্রগতি;
তাহলে এ প্রযুক্তি ইসলাম বিরোধী নয় এবং মুসলিম জাতির জন্য তা সাদরে গ্রহণ
করা কর্তব্য বলে গণ্য হবে। দীন ইসলাম বিশ্বব্যাপী এবং সর্বকালের ও
সর্বস্থানের উপযোগী পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
{প্রশ্ন: ১৭৯} আহলুস সুন্নাহ অল জামায়াতের আকীদাহ ও বিশ্বাসের মূলনীতি ও ইহার বিষয়গুলি কী কী?
উত্তর: তাদের অনুসৃত মূলনীতিসমূহ সুস্পষ্ট বিশ্বাস, আমল এবং আখলাক (চরিত্র) দ্বারা প্রমাণিত। যার বিষয়গুলো নিম্নরূপ:
প্রথম
মূলনীতি: আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান তাঁর নাযিলকৃত
কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত দিবস এবং তক্বদীরের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান।
দ্বিতীয় মূলনীতি: মুখের স্বীকৃতি, অন্তরের বিশ্বাস এবং তদনুযায়ী কাজের নামেই হচ্ছে ঈমান। নেক কাজে ঈমান বাড়ে এবং পাপকাজে কমে।
তৃতীয়
মূলনীতি: তাঁরা কোনো মুসলিমকে কাফের বলে না যতক্ষণ কোনো ব্যক্তির ইসলাম
বরবাদ না হয় কিংবা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল না বলে।
চতুর্থ
মূলনীতি: তারা মুসলিম শাসকদের আনুগত্য ওয়াজিব মনে করে। তবে তা আল্লাহর
নাফরমানীমূলক কাজের আদেশ প্রদান না করা পর্যন্ত। যখন আল্লাহর নাফরমানী করার
আদেশ প্রদান করবে তখন তার আনুগত্য করা নাজায়েয। যেমন: নবী সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ "
“মহান আল্লাহর অবাধ্যজনক কাজের ব্যাপারে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা নিষিদ্ধ’’। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৪৩২, নং ৩৮৮৯)
পঞ্চম
মূলনীতি: কোনো প্রকার কুফরী কাজে জড়িত না হওয়া পর্যন্ত এবং অন্যান্য
সাধারণ ভুল-ত্রুটির কারণে মুসলিম শাসক নেতৃবৃন্দের উপর আক্রমণ করা বা তাদের
বিরোধিতায় নিপতিত হওয়া হারাম। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا، عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ»
‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা স্পষ্ট কুফরী না দেখবে, যাতে তোমাদের কাছে স্পষ্ট দলীল রয়েছে’’। (বুখারী, ৭০৫৬)
ষষ্ঠ
মূলনীতি: আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ যারা সবধরনের ত্যাগ তিতিক্ষা, জিহাদ,
সংগ্রাম করেছেন, প্রথম পর্যায়ে ঈমান এনেছেন, দীন কবুল করেছেন তাদের সম্মান ও
মর্যাদার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত সুন্দর ধারণা পোষণ করে এব
যথাযত মূল্যায়ণে ত্রুটি করে না।
সপ্তম
মূলনীতি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয় পরিজনকে
ভালোবাসা, তাদেরকে আপনজন মনে করা কর্তব্য। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁদের ব্যাপারে অসিয়ত করেছেন, তিনি বলেন:
«أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتي»
‘‘আমি তোমাদেরকে আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি’’। (মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮)
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার পরিজনদের মধ্যে আছেন: তাঁর
স্ত্রীগণ, যারা মুমিনদের মাতা। তবে জ্ঞাতব্য যে, তাঁর পরিবারের মধ্যে
তাঁরাই অন্তর্ভুক্ত; যারা সত্যদীন গ্রহণকারী, নেক্কার, ঈমানদার আত্মীয়
স্বজন। পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনে নি তারা কেউই সম্মান,মর্যাদার অধিকারী নয়।
কেননা তারা কুফরী অবলম্বন করে মহান আল্লাহর নাফরমানদের অন্তর্ভুক্ত।
অষ্টম
মূলনীতি: আল্লাহর ওলী তথা বন্ধুদের কারামাত সত্য। আর কারামত হচ্ছে: আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় বান্দাদের মর্যাদার নিদর্শনস্বরূপ কারো কারো
মাধ্যমে আলৌকিক ঘটনা দেখিয়ে থাকেন যা স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম এবং
এগুলোকেই আরবী পরিভাষায় কারামত বলে। কুরআন সুন্নাহ দ্বারা কারামতের সত্যতা
প্রমাণিত। তবে আউলিয়াদের কারামত এবং ভণ্ডদের ভেল্কিবাজির মধ্যে পার্থক্য
আছে। কেননা ভেল্কিবাজি হচ্ছে জাদুকর সাধু-সন্ন্যাসী এবং শয়তানের কাজ, যা
দ্বারা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
নবম
মূলনীতি: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আত আল্লাহর কিতাব, তাঁর রাসূলের
সুন্নাতের অনুগত এবং কুরআন-সুন্নাহই তাদের দলীল। আর তারা সাহাবীগণের (তাদের
উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন) অনুসৃত নীতিসমূহ মেনে চলেন।
আহলুস
সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আত উত্তম চরিত্র এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাঁরা
সৎকাজের আদেশ দান করে এবং অন্যায় কাজে বাধা দান করে। তাঁরা দীন ইসলামের
মৌলিক বিধি-বিধান সংরক্ষণ করে এবং পরস্পরকে নছিহত করে। ভালো কাজ ও
পরহেযগারীতে তারা একে অন্যের সহযোগী, তাঁরা পিতা-মাতার সাথে সদাচারণ করে
এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হবে তাদের মূলনীতি
ও আদর্শ গ্রহণ করে তাঁদের দলভুক্ত হওয়া।[71]
সর্বোচ্চ
মর্যাদাবান মহামহিয়ান আল্লাহ আমাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের
অন্তর্ভুক্ত করে দিন এবং তিনি যেন আমাদেরকে দীন ইসলাম ও সুন্নাতের উপর
মৃত্যু দান করেন। আল্লাহ যেন তাঁর প্রিয় আউলিয়াদের সাথে মর্যাদাপূর্ণ
শান্তিময় ঘরে আমাদেরকে মাতা-পিতা, সংগী সাথী, স্ত্রী এবং সন্তানদের সহ
একত্রিত করে দেন। তিনি যেন সন্তানদের মাধ্যমে আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেন।
আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দেন।
আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।
শেষ কথা
সমস্ত
প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য। অতঃপর এ বইটিতে যা উল্লেখ
করা হয়েছে তাওহীদের বৃহৎ বাগান থেকে অল্পকিছু মাসায়ালা মাসায়েল পেশ করা
হলো, তাওহীদের প্রাথমিক ধারণা অর্জন করার জন্য। এ বইটি যাদের নজরে পড়বে
অতঃপর কোনো ভুল দৃষ্টিগোচর হলে কিংবা কোনো কিছু সংযোজন বা সংশোধনের প্রয়োজন
মনে করলে, তা লিখে প্রকাশনা অফিসের মাধ্যমে অথবা আমার নিজ ঠিকানায় সযত্নে
পাঠিয়ে দিবেন। যিনি এটা করবেন আল্লাহ তাকে সওয়াব তথা পুরস্কার দিবেন। আড়াল
থেকে আমার জন্য দো‘আ করবেন এবং আপনারাও আমার দো‘আ নিবেন। আপনাদেরকে
ধন্যবাদ।
আল্লাহর
কছে আমরা সার্বিক কল্যাণময় জ্ঞানের ফরিয়াদ জানাচ্ছি, তিনি যেন আমাদেরকে
ভাল কাজ ও দীনের দাওয়াতে সাড়াদানে উদ্বুদ্ধ করে দেন। তাঁর দীনের বিজয় এবং
তাওহীদের বাণী যেন শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। আল্লাহ ক্ষমাকারী তিনি আমাদের ক্ষমা
করবেন, আমরা তাঁর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নামের আগুন থেকে
পরিত্রান চাচ্ছি।
মহান
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর খালেছ বান্দা বানিয়ে দিন। তিনি যেন আমাদের ঈমান,
আক্বীদা, দীন উম্মতের হেফাযত করার তৌফিক দেন। হে আল্লাহ ! আমাদেরকে
মহাবিপর্যয়ের দিন আপনার আযাব হতে নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে দিন। আমাদেরকে,
আমাদের মাতা-পিতাকে, সন্তানদেরকে, স্ত্রীদেরকে এবং সকল মুমিনদেরকে চুড়ান্ত
হিসাবের দিনে মুক্তি দিন। যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ বইটি প্রকাশিত হলো
এবং যারা অর্থ ব্যয় করেছেন কিংবা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের
সকলকে আল্লাহ সর্বোচ্চ সওয়াব দিন।
আল্লাহর
সালাত, বরকত ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার এবং সকল সাহাবীর উপর। এখানেই যথাসম্ভব চেষ্টার
সমাপ্ত হলো। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য।
লিখেছেন
আল্লাহর ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থী
আবু আব্দুল্লাহ ইবরাহীম ইবন সলেহ ইবন আব্দুল্লাহ আল-খুদায়রী
বিচারপতি উচ্চতর আদালত, রিয়াদ।
১৫/০১/১৪২১ হিজরী, রিয়াদ, সৌদী আরব।
[সম্পাদনার তাং ২/১/২০১৫ (১৪৩৬ হিজরী)]
_______________________________________________________________________________________
[1] সূরা আল জাসিয়া : ১৮।
[2] সূরা আল-মায়িদা: ৩।
[3] নিচে দাগ দেওয়া এ ধরনের বাক্য দ্বারা স্থায়ীভাবে থাকার কথা বুঝানো হয়ে থাকে। অনুবাদক।
[4] সালাসাতুল উসূল; শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহাব। শায়খ ইবন বাযের ব্যাখ্যাসহ পৃষ্টা: ২১-২২, প্রথম ছাপা- ১৪১৬ হিজরী।
[5] সূরা আল মুমিনুন : ১১৫।
[6] তিনটি মূলনীতি: শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহাব।
[7] তিনটি মূলনীতি: শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহাব।
[8] আল-জামে‘উল ফরিদ পৃষ্ঠা: ১০
[9] আল জামে‘উল-ফরিদ; পৃষ্ঠা:১০
[10] হাশিয়াতু সালাসাতু উসুল থেকে সংগৃহীত।
[11] মুখতাছার আল বুখারী লিয-যাবীদি, পৃষ্ঠা: ২১, নং ৪৭
[12] হাশিয়াতু ইবনে কাসেম; পৃষ্টা: ৪৬।
[13] হাশিয়াতু ইবনে কাসেম, পৃষ্ঠা: ৪৭।
[14] হাশিয়াতু ইবনে কাসেম, পৃষ্ঠা: ৬৫। বুখারীর হাদীস থেকে।
[15] অর্থাৎ তিনি তোমাদের সাথে আছেন তার জ্ঞান, ক্ষমতা ও ক্ষেত্র বিশেষে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে। [সম্পাদক]
[16] হাশিয়াতু ইবনে কাসেম পৃষ্ঠা : ৮২।
[17] .হাশিয়াতু ইবনে কাসেম পৃষ্ঠা : ৮৩।
[18] .হাশিয়াতু ইবনে কাসেম পৃষ্ঠা: ৮৩।
[19] হাশিয়াতু সালাসাতু উসূল ইবনে কাসেম পৃ: ১৩
[20] (মা লাবুদ্দা মিন মারেফাতিহি আনিল ইসলাম আক্বিদাহ, ঈবাদাহও আখলাক লিশ-শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আলি আল আরফাজ: পৃ: ২৭)
[21] আল-জামে আল-ফরিদ, পৃষ্ঠা: ২২।
[22] আল-জামে আল-ফরিদ, পৃষ্ঠা:২৭।
[23] হামিয়াতু তাওহীদ পৃ: ৯০, ৯১ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব।
[24] জামে আল-ফরিদ পৃ:৫২।
[25] আল জামে-আল ফরিদ পৃ:৫৩।
[26] আল-জামে আল-ফরিদ, পৃষ্ঠা:৬২ । ইবনে কাসেমের হাশিয়াতু কিতাব আত-তাওহীদ, পৃষ্ঠা: ১১৩।
[27] আল-জামে আল ফরিদ পৃ: ৬৫। হাশিয়াতু ইবনে কাসেম আত তাওহীদ পৃ: ১১৫।
[28] আল-জামে আল-ফরিদ পৃষ্ঠা; ৭৬, ৭৭।
[29] আল-জামে আল ফরিদ পৃষ্ঠা: ১০৭।
[30] আল-জামে আল-ফরিদ ৭৯।
[31] আল-জামে-আল-ফরিদ পৃষ্ঠা: ১০১, ১০২।
[32] আল-জামে আল ফরিদ পৃষ্ঠা: ১০২।
[33] আল জামে আল-ফরিদ ১১০।
[34] আল-জামে আল ফরিদ ১১৪-১১৬।
[35] রিসালাতু ফি দুখলিল জ্বিন্নি বিল ইনসি, ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া ১/১৮৩ এবং ফতোয়ার স্থায়ী পরিষদের ফতোয়া নং ১০৮০২)।
[36] আল-জামে আল ফরিদ: ১২২।
[37] আল জামে আল ফরিদ: ১২৩।
[38] আল-জামে আল-ফরিদ: ১৩৮।
[39] আল-জামে-ফরিদ পৃ: ১৪০।
[40]
রিসালাতুল আহকালিম মাসজিদ ফিশ-শারিয়াহ, লেখক: আল-খুদাইরি পৃ: ৩৪৭, তাফসির
ইবনে কাসীর ৪/৬১-৬৩, হাশিয়াতুল হামাল আলাল জালালাইন ২/২৭১)।
[41] আল-জামে আল ফরিদ পৃষ্ঠা: ১৪৪।
[42] আল-জামে আল ফরিদ: ১৪৫।
[43] আল-জামে আল ফরিদ: ১৫১।
[44] আল-জামে ফরিদ পৃ: ১৫২।
[45] আল-জামে আল ফরিদ, পৃষ্টা: ১৬৪।
[46] আল-জামে আল ফরিদ, পৃষ্ঠা: ১৭০।
[47] আল-জামে আল ফরিদ পৃ: ১৯৭।
[48] আল-জামে আল ফরিদ পৃষ্ঠা: ১৭২।
[49] হাশিয়াতু ইবনে কাসেম পৃ:৩০৪।
[50] আল জামে আল ফরিদ পৃ: ১৮১।
[51] আল-জামে আর ফরীদ, পৃষ্ঠা: ১৮২।
[52] আল-জামে আল ফরিদ, পৃষ্ঠা:১৮৬।
[53] হাশিয়াতু ইবনে কাসেম-৩৬৪।
[54] বিশুদ্ধমতে উপরের দু’টি পর্যায় একই ফুঁকের ভিন্ন ভিন্ন অংশ। [সম্পাদক]
[55] এটা মূলত পুলসিরাত পার হওয়ার পর কানতারা বা সাঁকোপথের বাধা। এটি শুধু মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। [সম্পাদক]
[56] (আল-ফিকহ ফিদদীন ঈসমাতুন মিনাল ফিতান, ড: সলেহ আল-ফাউযান, পৃষ্টা নং-১২, প্রথম প্রকাশ ১৪১৮ হিজরী)।
[57] ‘আল ফিকহ ফিদ দীন ঈসমাতুন মিনাল ফিতান’/ ড. সালেহ আল-ফাউযান, প্রথম প্রকাশ: ১৪১৮ হিজরী)
[58] .হিরাসাতুল ফাদিলা: ড. আবু বকর আবু যায়েদ, ১ম প্রকাশ, পৃষ্ঠা: ৩১।
[59] . ‘মুফীদ আল-মুসতাফীদ ফি কুফরী তারেক আত-তাওহীদ ’পৃষ্টা: ১৫, প্রকাশ কাল: ১৪১১ হিজরী।
[60] আল- ইজতিমা বিল আসার আলা মান আনকারাল মাহদী আল-মুনতাযার’: লেখক: হামূদ ইবন আব্দুল্লাহ আল তুয়াইজরী, পৃষ্ঠা: ১১, প্রথম প্রকাশ।
[61] ‘আল-হুববু ফিল ইসলাম’/ আব্দুল হালীম কানবাস, প্রকাশনায়: এহইয়াউত তুরাস, ক্বাতার।
[62] মুখতাসার আল-আসইলাহ অল আজউইবাহ আল-উসুলিয়া’ আশ-শায়খ আব্দুল আযীয আল-সালমান, দ্বাদশ প্রকাশনা, পৃষ্টা-১২৯।
[63] . মুত্তাফিকুন আলাইহি। বুখারী, ৩৬৭৩; মুসলিম, ২৫৪০।
[64] সুরা আত-তাহরীম : ৮।
[65] উরিদু আন আতুবা অলাকিন’ মুহাম্মাদ আল- মুনাজ্জি পৃষ্ঠা; ৮. ৯। প্রথম প্রকাশ
[66] .বায়ানআল লাজনাহ আদ-দায়েমাহ ফিস সউদিয়া ফি ইতিফালাত: ২০০০ ইসায়ী।
[67] . সুরা আলে-ইমরান, আয়াত নং ১৯।
[68] . সউদী আরবের স্থায়ী পরিষদের ফতুয়া নং ১৯৪০২, ২৫/১/১৪১৮ হিজরী।
[69]
অর্থাৎ ব্যক্ত না করে তা চেপে যাওয়া এবং ঈমান ঠিক রাখতে পারাটাই সুস্পষ্ট
ঈমানের পরিচায়ক। মনে এ ধরনের সন্দেহের সুযোগ দেওয়াকে ঈমান বলা হয় নি।
[সম্পাদক]
[70] আল-আলামানিয়া /ড.সফর ইবন আব্দু‘র রহমান আল হাওয়ালী, পৃষ্টা: ১৯, প্রথম প্রকাশ।
[71] উসুল আক্বীদাতু আহলুস সুন্নাহ অল জামাআত, ১৩ পৃষ্ঠা এবং তৎপরবর্তী থেকে সংগৃহীত।
_______________________________________________________________________________________
ড. ইবরাহীম ইবন সালেহ আল-খুদ্বায়রী
মাননীয় বিচারপতি, উচ্চতর আদালত, রিয়াদ
অনুবাদ: সরদার জিয়াউল হক ইবন সরদার আবদুস সালাম
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উৎস: কমিউনিটি কেন্দ্রিক দাওয়াহ ও শিক্ষা প্রচারমূলক সহযোগী অফিস, শেফা, সৌদী আরব
0 Comments