অনুবাদকের কথা
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর পরিবার-পরিজন, ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের পথের পথিকদের উপর। অতঃপর আরয এই যে, আক্বীদা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, একজন
মুসলিমের জীবনে যার প্রয়োজন সদা-সর্বদা। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের
মাতৃভাষা বাংলায় সহীহ আক্বীদা বিষয়ক বই-পুস্তক নিতান্তই অপ্রতুল। তাছাড়া
বাংলা ভাষাভাষী অনেক মুসলিমের এ সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাবও যথেষ্ট। সেজন্য
আমরা تَسْهِيْلُ تَعَلُّمِ التَّوْحِيْدِ বা
‘সহজ তাওহীদ শিক্ষা’ বইটি অনুবাদের কাজে হাত দেই। বইটির নামের মাঝেই তার
পরিচয় লুকায়িত আছে। বইটিতে একদিকে যেমন তাওহীদের মৌলিক বিষয়গুলি তুলে
ধরা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি বিষয়গুলিকে প্রশ্নোত্তর আকারে খুব সহজ ও সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, বইটির প্রত্যেকটি বক্তব্যের পেছনে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে এক বা একাধিক দলীল পেশ করা হয়েছে।
বইটির অনুবাদের
কাজে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য আমি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
আব্দুল্লাহিল কাফী এবং আব্দুল গণির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
বইটি অনুবাদ এবং প্রকাশের পেছনে যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ রয়েছে, আল্লাহ তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আশা করি, সম্মানিত পাঠকগণ বইটি পড়ে উপকৃত হবেন। আমরা বইটির ভুলভ্রান্তি সংশোধন এবং এটির মানোন্নয়নের জন্য বিজ্ঞ পাঠকগণের প্রয়োজনীয় পরামর্শ, নির্দেশনা ও সহযোগিতা কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবূল করুন। আমীন!
বিনীত
আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার
abdulalim.kawsar@yahoo.com
ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
যাবতীয় প্রশংসা মহান রব্বুল
আলামীনের জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবীগণের সরদার আমাদের শেষ নবী
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল
সাহাবীর উপর।
এই ছোট্ট পুস্তিকাটি একজন মুসলিমের
জানা অতীব যরূরী বিষয় ‘তাওহীদ’-এর উপর প্রণীত হয়েছে। তাওহীদের বিষয়গুলি
বিখ্যাত চার ইমাম এবং তাঁদের অনুসারীগণের আক্বীদা বিষয়ক বই-পুস্তক থেকে
সংগৃহীত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আক্বীদার ক্ষেত্রে চার ইমামের বক্তব্য একই,
তাঁদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। অতএব, আপনি যদি চার মাযহাবের কোনো একটির
অনুসারী হয়ে থাকেন, তাহলে মনে রাখবেন, এই পুস্তিকার আক্বীদাই হচ্ছে আপনার
ইমামের আক্বীদা। আপনি নানাবিধ বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে যেমন তাঁকে অনুসরণ
করেন, আক্বীদার ক্ষেত্রেও তেমনি তাঁর অনুসরণ করবেন। পুস্তিকাটিকে
প্রশ্নোত্তর আকারে সাজানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করি,
তিনি সবাইকে হক্ব গ্রহণের তাওফীক্ব দান করুন। আমাদেরকে তিনি প্রত্যেকটা
আমল আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতিতে পালন করার তাওফীক্ব দিন।
মহান আল্লাহ আমাদের শেষ নবী
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল
সাহাবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: আপনার রব কে?
উত্তরঃ আমার রব হচ্ছেন আল্লাহ।
প্রশ্ন ২: রব অর্থ কি?
উত্তরঃ রব দ্বারা উদ্দেশ্য, মালিক, সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা, নিয়ন্ত্রণকারী, আকৃতিদানকারী ও প্রতিপালনকারী। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয় না এবং তাঁর অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু সামান্যতম নড়াচড়াও না।
প্রশ্ন ৩: আল্লাহ অর্থ কি?
উত্তরঃ যাবতীয় ইবাদত এবং উপাসনা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র সত্ত্বা-ই হচ্ছেন আল্লাহ।
প্রশ্ন ৪: আল্লাহ কোথায়?
উত্তরঃ আমার প্রভু আল্লাহ উর্ধ্বে, আরশের উপরে আছেন। মহান আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেন,
﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥ ﴾ [طه: ٥]
“পরম দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন” (ত্বা-হা ৫)। সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ্র সত্ত্বার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমনভাবে তিনি আরশের উপর উঠেছেন; তাঁর আরশের উপর উঠার বিষয়টিকে কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এটির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে এর কোনোরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না।
অতএব, আপনি কোনো অবস্থাতেই বলতে পারেন না যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। কেননা সর্বোচ্চে অবস্থান মহান আল্লাহ্র একটি প্রশংসনীয় বিশেষণ। আর সে কারণেই তো আমরা সেজদাতে বলে থাকি, ‘আমার প্রভু সর্বোচ্চ’। ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, মহান আল্লাহ যমীনে অবতরণ করেন না। যে ব্যক্তি এই আক্বীদা পোষণ করে যে, আল্লাহ তাঁর কোনো সৃষ্টির মধ্যে প্রবিষ্ট হন, সে ব্যক্তির কুফরীতে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারেও তাঁরা একমত পোষণ করেছেন। বরং মহান আল্লাহ দুনিয়ার নিকটতম শেষ আসমানে এমনভাবে অবতরণ করেন, যেমন অবতরণ করা তাঁর মহত্ত্বের সাথে মানানসই। রাতের শেষাংশে আল্লাহ্র শেষ আসমানে অবতরণ এবং অবস্থানের ধরণ সম্পর্কে কেউ কিছুই জানে না। এই সময় তিনি বলেন,
«هَلْ مِنْ دَاعٍ فَأَسْتَجِيبَ لَهُ»
“কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তার প্রার্থনা মঞ্জুর করব” (বুখারী ও মুসলিম)।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটির অর্থ কি?
﴿وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ٤ ﴾ [الحديد: ٤]
“তিনি তোমাদের সাথে আছেন, তোমরা যেখানেই থাক” (হাদীদ ৪)। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। জবাবে বলব, এখানে সবার সঙ্গে থাকার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্র ইলম এবং শক্তি। কারণ তাঁর পবিত্র সত্ত্বা সর্বোচ্চ আরশে আছে; কিন্তু তাঁর জ্ঞান এবং শক্তি সবার সাথে আছে। কোনো কিছুই তাঁর শক্তি এবং জানার বাইরে নেই।
প্রশ্ন ৫: আপনি কিভাবে আপনার প্রভুকে চিনেন?
উত্তরঃ আল্লাহ্র নানা নিদর্শন এবং তাঁর সৃষ্টিসমূহ দেখে আমি তাঁকে চিনি। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ ﴾ [فصلت: ٣٧]
“তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র” (ফুছছিলাত ৩৭)।
তাঁর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে সাত আসমান, সাত যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু অন্যতম। এরশাদ হচ্ছে,
﴿ إِنَّ
رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ
أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ
يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ
بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ
ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [الاعراف: ٥٤]
“নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর আরোহন করেছেন। তিনি রাতের ভেতর দিনকে প্রবেশ করান এমনভাবে যে, দিন দৌড়ে রাতের পেছনে আসে। তিনি সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি তাঁর আদেশের অনুগামী। জেনে রেখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ বরকতময়” (আ‘রাফ ৫৪)।
প্রশ্ন ৬: আল্লাহ আপনাকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
উত্তরঃ সর্ব
প্রকার শির্ক বর্জন করে যাবতীয় ইবাদত কেবলমাত্র তাঁর উদ্দেশ্যে সম্পাদন
এবং তাঁর আদিষ্ট বিষয়সমূহের বাস্তবায়ন ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে পরিত্যাগের
মাধ্যমে তাঁর আনুগত্যের জন্যই তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [الذاريات: ٥٦] “শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি” (যারিয়াত ৫৬)।
অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে,
﴿۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ﴾ [النساء: ٣٦]
“আর তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না” (নিসা ৩৬)।
প্রশ্ন ৭: আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কোন্টি?
উত্তরঃ যে গুনাহ দিয়ে আল্লাহ্র নাফরমানি করা হয়, তার সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে, শির্ক। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَقَدۡ
كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ
مَرۡيَمَۖ وَقَالَ ٱلۡمَسِيحُ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ
رَبِّي وَرَبَّكُمۡۖ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ
ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ
مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائدة: ٧٢]
“যারা বলে যে, মারিয়াম-তনয় মাসীহ-ই আল্লাহ, তারা কাফের। অথচ মাসীহ বলেন, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্র ইবাদত কর। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন; তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই” (মায়েদাহ ৭২)।
আর শির্ক হচ্ছে, আল্লাহ্র সমকক্ষ সাব্যস্ত করা, চাই তা হোক কোনো বাদশাহ, কিংবা নবী-রাসূল বা কোনো অলী। আল্লাহ
ব্যতীত অথবা আল্লাহ্র সাথে তাকে ডাকা, বা তাকে ভয় করা বা তার উপর ভরসা
করা বা তার কাছে কোনো কিছু চাওয়া অথবা অন্য কোনো ইবাদত তার জন্য সম্পাদন
করা।
প্রশ্ন ৮: ইবাদত অর্থ কি?
উত্তরঃ আল্লাহ ভালবাসেন এবং সন্তুষ্ট হন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এমন যাবতীয় কথা ও কাজকে ইবাদত বলে। যেমনঃ দো‘আ করা। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]
“আর (এই অহিও করা হয়েছে যে,) মসজিদসমূহ আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহ্র সাথে কাউকে ডেকো না” (জিন ১৮)।
আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকলে যে কাফের হয়, তার প্রমাণ হচ্ছে,
﴿ وَمَن
يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ
فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ
ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧ ﴾ [المؤمنون: ١١٧]
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যে ডাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তার হিসাব তো তার পালনকর্তার কাছেই। নিশ্চয়ই কাফেররা সফলকাম হবে না” (মুমিনূন ১১৭)।
প্রশ্ন ৯: দো‘আ কি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তরঃ দো‘আ শুধু ইবাদতের অন্তর্ভুক্তই নয়, বরং তা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতসমূহের অন্যতম। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَقَالَ
رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ
عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠]
“আর তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদতের ক্ষেত্রে অহংকার করে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে” (গাফির ৬০)।
তাছাড়া হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ»
“দো‘আই হচ্ছে ইবাদত” (তিরমিযী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন)।
প্রশ্ন ১০: আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর সর্বপ্রথম কোন্ বিষয়টি ফরয করেছেন?
উত্তরঃ আল্লাহ কর্তৃক তাঁর বান্দার প্রতি ফরযকৃত সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে, আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনা এবং তাগূতকে অস্বীকার করা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ
بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ
وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ فَمِنۡهُم مَّنۡ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنۡهُم
مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَيۡهِ ٱلضَّلَٰلَةُۚ فَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ
فَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٣٦ ﴾ [النحل: ٣٦]
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং ত্বাগূত থেকে বেঁচে থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়াত করেছেন। পক্ষান্তরে কিছু সংখ্যকের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে” (নাহ্ল ৩৬)।
আর ত্বাগুত হচ্ছে,
বান্দা যাকে নিয়ে তার সীমা অতিক্রম করেছে। চাই তা উপাসনার মাধ্যমে হোক,
বা অনুসৃত হওয়ার দিক থেকে হোক, অথবা আনুগত্যের ক্ষেত্রেই হোক[1]।
অথবা বলা যায়, আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয়, সে-ই হচ্ছে ত্বাগূত- যদি সে ঐ ইবাদতে রাযী-খুশী থাকে।
প্রশ্ন ১১: আপনার দ্বীন কোন্টি?
উত্তরঃ আমার দ্বীন হচ্ছে, ইসলাম।
আর ‘ইসলাম’-এর অর্থ হচ্ছে, তাওহীদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নিকট নত হওয়া এবং শির্ক ও শির্কপন্থীদের থেকে নিজেকে মুক্ত করা। যেমন আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ
ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ وَمَا ٱخۡتَلَفَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ
ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡعِلۡمُ بَغۡيَۢا
بَيۡنَهُمۡۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بَِٔايَٰتِ ٱللَّهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ سَرِيعُ
ٱلۡحِسَابِ ١٩ ﴾ [ال عمران: ١٩]
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। আর যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছে, তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ তারা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের সাথে কুফরী করে, (তাদের জানা উচিত যে,) নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত” (আলে ইমরান ১৯)।
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে,
﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান ৮৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الإِسْلاَمُ
أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ
اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِىَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ
وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً»
“ইসলাম হচ্ছে একথা সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা এবং সামর্থ্য থাকলে কা‘বায় হজ্জ করা” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ১২: ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল’- একথার সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ কি?
উত্তরঃ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই’-এর অর্থ হচ্ছে, لاَ مَعْبُوْدَ بِحَقٍّ إِلاَّ الله অর্থাৎ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ নেই’। এরশাদ হচ্ছে,
﴿ وَجَعَلَهَا كَلِمَةَۢ بَاقِيَةٗ فِي عَقِبِهِۦ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢٨ ﴾ [الزخرف: ٢٨]
“এ কথাটিকে তিনি (ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম) অক্ষয় বাণী রূপে তাঁর পরবর্তীদের মধ্যে রেখে গেছেন, যাতে তারা আল্লাহ্র দিকেই ফিরে যেতে পারে” (যুখরুখ ২৮)।
আর ‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্র রাসূল’-এর অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল। তিনি আল্লাহ্র এমন একজন বান্দা, যার ইবাদত করা যাবে না এবং এমন একজন নবী, যাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাবে না; বরং তাঁর নির্দেশিত বিষয়ে তাঁকে অনুসরণ করতে হবে, তাঁর থেকে বর্ণিত বিষয়সমূহকে সত্য প্রতিপন্ন করতে হবে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকতে হবে। অনুরূপভাবে তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতিতে আল্লাহ্র ইবাদত করতে হবে। সেজন্য তিনি সবধরনের বিদ‘আতকে নিষিদ্ধ করেছেন। ফলে ইসলামে ‘উত্তম বিদ‘আত’ বলতে কিছু নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«إِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ»
“তোমরা শরী‘আতে নবাবিষ্কার থেকে বেঁচে থাকো। কেননা নবাবিষ্কৃত প্রত্যেকটা বস্তুই হচ্ছে বিদ‘আত এবং প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা” (মুসনাদে আহমাদ)।
তিনি আরো বলেন,
«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি আমাদের নির্দেশের বাইরে কোনো আমল করলো, তার সেই আমল প্রত্যাখ্যাত” (মুসলিম)।
আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি আমাদের এই শরী‘আতে নতুন কিছু সৃষ্টি করল- যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত” (বুখারী ও মুসলিম)।
প্রশ্ন ১৩: ছালাত, যাকাত, ছিয়াম এবং হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল কি?
উত্তরঃ ছালাত এবং যাকাত ফরয হওয়ার দলীল হচ্ছে,
﴿ وَمَآ
أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ
حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ
دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥]
“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে, ছালাত কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে। এটিই সঠিক দ্বীন”। (বাইয়্যেনাহ ৫)। উক্ত আয়াতে সর্বপ্রথম তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং শির্ক থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেকারণে আল্লাহ্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ হচ্ছে, তাওহীদ আর সবচেয়ে বড় নিষেধ হচ্ছে, শির্ক। অতঃপর আল্লাহ ছালাত প্রতিষ্ঠা এবং যাকাত প্রদানের আদেশ করেছেন।
আর ছিয়াম ফরয হওয়ার দলীল হচ্ছে, আল্লাহর বাণী,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى
ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ أَيَّامٗا
مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ
مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ
مِسۡكِينٖۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥۚ وَأَن
تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٤ شَهۡرُ رَمَضَانَ
ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ
ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ
وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ
يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ
وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا
هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٣، ١٨٥]
“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেয়া হয়েছিল , যাতে
তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার। এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর তোমাদের
মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে
নিতে হবে । আর
যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া- একজন
মিসকীনকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার
জন্য কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি
তোমরা জানতে। রমাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা
হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও
সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ
মাসে সিয়াম পালন করে । তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে । আল্লাহ্
তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা
পূর্ণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহর
মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৩-১৮৫]
আর হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল হচ্ছে,
﴿فِيهِ
ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ مَّقَامُ إِبۡرَٰهِيمَۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ
ءَامِنٗاۗ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ
إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ
ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
“আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে এ ঘরের হজ্জ করা মানুষের উপর ফরয, যার এ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা মানে না, (তার ক্ষেত্রে বক্তব্য হলো) আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন” (আলে ইমরান ৯৭)।
প্রশ্ন ১৪: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম কি গৃহীত হবে?
উত্তরঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম গৃহীত হবে না। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী,
﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান ৮৫)।
প্রশ্ন ১৫: ‘আন্তঃধর্মীয় ঐক্য (وحدة الأديان)’ মতবাদ জায়েয কি?
উত্তরঃ উক্ত মতবাদ জায়েয নয়। কেননা দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائدة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নে'মতসমূহ সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম” (মায়েদাহ ৩)। অতএব, ইসলামের সাথে অন্য কোনো দ্বীনকে যুক্ত করার কোনোই প্রয়োজন নেই। তাছাড়া মহান আল্লাহ দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন কস্মিনকালেও গ্রহণ করবেন না। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী,
﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান ৮৫)। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَالَّذِى
نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِى أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ
يَهُودِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِى
أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ»
“মুহাম্মাদের জীবন যে সত্ত্বার হাতে, তার কসম করে বলছি, এই উম্মতের যে কেউ ইয়াহূদী হোক বা নাছারা হোক আমার কথা শোনে অথচ আমার রিসালাতের প্রতি ঈমান না আনা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে হবে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ১৬: ঈমানের রুকন কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ ঈমানের রুকন ৬টি। সেগুলি হচ্ছে, আল্লাহ্র প্রতি ঈমান, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি ঈমান, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান, আখেরাতের প্রতি ঈমান এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান। কুরআনুল কারীম এবং সহীহ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী উক্ত রুকনসমূহের প্রত্যেকটির প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত কারো ঈমান পূর্ণ হবে না। যে ব্যক্তি এগুলির কোনো একটিকে অস্বীকার করবে, সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ءَامَنَ
ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ
ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا
نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا
وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ ﴾ [البقرة: ٢٨٥]
“রাসূলের নিকট তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে অহি অবতীর্ণ হয়েছে, তাকে তিনি এবং মুমিনগণ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছেন। তাঁরা সবাই ঈমান এনেছেন আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। (তাঁরা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। তাঁরা বলে, আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আপনারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে” (বাক্বারাহ ২৮৫)।
তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
«أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»
“ঈমান হচ্ছে, আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ১৭: ঈমানের এই ৬টি মূলনীতির দাবী কি?
উত্তরঃ আল্লাহ্র প্রতি ঈমানের দাবী হচ্ছে, তিনি আরশের উপর আছেন তার স্বীকৃতি দিতে হবে। তাঁর রুবূবিইয়াত, উলূহিইয়াত এবং সুন্দরতম নামসমূহ ও গুণাবলীরও স্বীকৃতি দিতে হবে। ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, তাঁদের বিদ্যমানতা এবং নানাবিধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশ্বাস পোষণ করা। কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, এই বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের উপর আসমানী কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। যেমনঃ তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর, ছুহুফে ইবরাহীম এবং কুরআন। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে যে, কুরআন ব্যতীত অন্যান্য মৌলিক আসমানী কিতাবসমূহে পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে। রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এই বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ মানব জাতির হেদায়াতের জন্য অনেক রাসূল প্রেরণ করেছেন, আল-কুরআনুল কারীমে তাঁদের অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম রাসূল হলেন, নূহ আলাইহিস সালাম এবং সর্বশেষ ও সর্বোত্তম হচ্ছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আখেরাতের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আখেরাতের হিসাব-নিক্বাশ, প্রতিদান, জান্নাত-জাহান্নাম এবং এই দিন সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আর তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এই বিশ্বাস করতে হবে যে, সবকিছুকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, সেগুলি সৃষ্টি হওয়ার আগেই তিনি সে সম্পর্কে জ্ঞান রাখতেন, তিনি তা লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন এবং সবকিছু তাঁর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩ ﴾ [القمر: ٤٩]
“নিশ্চয় প্রত্যেকটি জিনিসকে আমরা পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি” (আল-ক্বামার ৪৯)। অন্যত্র এসেছে,
﴿ ۞وَعِندَهُۥ
مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي
ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا
وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا
فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩ ﴾ [الانعام: ٥٩]
“তাঁর কাছেই গায়েবী জগতের চাবি রয়েছে; এগুলি তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা কিছু আছে, তিনিই জানেন। তাঁর জানার বাইরে (গাছের) কোন পাতাও ঝরে না। তাক্বদীরের লিখন ব্যতীত কোন শস্যকণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুষ্ক দ্রব্যও পতিত হয় না” (আন‘আম ৫৯)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
﴿ أَلَمۡ
تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّ
ذَٰلِكَ فِي كِتَٰبٍۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧٠ ﴾ [الحج: ٧٠]
“তুমি কি জানো না যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। এসবই কিতাবে লিখিত আছে। নিশ্চয়ই তা আল্লাহ্র কাছে সহজ” (হজ্জ ৭০)। তিনি আরো এরশাদ করেন,
﴿وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩ ﴾ [التكوير: ٢٩]
“তোমরা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছুই ইচ্ছা করতে পার না” (তাকভীর ২৯)। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«احْفَظِ
اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ
فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، وَاعْلَمْ
أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ
يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ، وَلَوْ
اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ
بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتْ
الصُّحُفُ»
“আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধের হেফাযত কর, তাহলে তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন। আল্লাহ্র অধিকার রক্ষা কর, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। যখন কোনো কিছু চাইবে, তখন আল্লাহ্র কাছেই চাও। অনুরূপভাবে যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহ্র কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে রেখো, যদি পৃথিবীর সবাই একত্রিত হয়ে তোমার উপকার করতে চায়, তাহলে আল্লাহ যতটুকু লিখে রেখেছেন, তার চেয়ে সামান্যতম বেশী উপকার করতে পারবে না। পক্ষান্তরে যদি তারা সবাই একত্রিত হয়ে তোমার ক্ষতি সাধন করতে চায়, তাহলে আল্লাহ যতটুকু লিখে রেখেছেন, তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করতে পারবে না। তাক্বদীরের লিখন শেষ হয়ে গেছে” (তিরমিযী, তিনি হাদীসটিকে ‘হাসান-সহীহ’ বলেছেন)। তিরমিযী ছাড়া অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তুমি আল্লাহ্র অধিকার রক্ষা কর, তাহলে তাঁকে তুমি তোমার সামনে পাবে। তোমার সুখ-স্বাচ্ছন্দের সময় আল্লাহকে চিনো, তাহলে কষ্ট-কাঠিন্যের সময় তিনি তোমাকে চিনবেন। জেনে রেখো, তাক্বদীরে যদি লেখা থাকে, তোমার কিছু ভুল হবে, তাহলে তা কখনই সঠিক হতে পারে না। পক্ষান্তরে তাক্বদীরে যদি লেখা থাকে, তোমার সঠিক কিছু হবে, তাহলে তা কখনই ভুল হতে পারে না। জেনে রেখো, ধৈর্য্যের সাথেই রয়েছে প্রকৃত বিজয়, দুঃখ-কষ্টের সাথেই রয়েছে আনন্দ এবং জটিলতার সাথেই রয়েছে সহজতা”।
প্রশ্ন ১৮: কবরে সুখ-শান্তির বিষয়টি কি কুরআন-সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তরঃ হ্যাঁ, মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ٱلنَّارُ
يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ
أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦ ﴾ [غافر: ٤٦]
“সকালে ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর কিয়ামতের দিন আদেশ করা হবে, ফেরাউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর” (গাফির ৪৬)। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ﴾ [ابراهيم: ٢٧]
“মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে পার্থিব জীবনে এবং আখেরাতে মজবুত বাক্য দ্বারা অবিচল রাখেন” (ইবরাহীম ২৭)।
হাদীসে ক্বুদসীতে এরশাদ হয়েছে, “আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেন যে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। অতএব, তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জান্নাত পর্যন্ত একটি দরজা খুলে দাও, যেদিক দিয়ে তার কাছে জান্নাতের সুবাতাস ও সুঘ্রাণ আসবে। আর যত দূর তার চোখ যায়, তত দূর পর্যন্ত তার কবরকে সম্প্রসারিত করা হবে। পক্ষান্তরে মৃত ব্যক্তি কাফের হলে সে ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নোত্তরে ব্যর্থ হবে। ফলে একজন ঘোষণাকারী এমর্মে ঘোষণা দিবেন যে, সে মিথ্যা বলেছে। অতএব, তার জন্য জাহান্নামেরর বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নাম পর্যন্ত একটি দরজা খুলে দাও, যেদিক দিয়ে তার কাছে জাহান্নামের তাপ ও বিষ আসবে। আর তার কবরকে তার জন্য এমন সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাজরের হাড়-হাড্ডি একটা আরেকটার মধ্যে ঢুকে যাবে” (তিরমিযী, ‘সহীহ’)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “অতঃপর কাফেরের জন্য লোহার হাতুড়ি দিয়ে একজন অন্ধ এবং বধির ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে; ঐ হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়কেও মারা হয়, তবুও পাহাড় মাটি হয়ে যাবে। ফেরেশতা ঐ হাতুড়ি দিয়ে তাকে এমন আঘাত করবেন, মানুষ ও জিন ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পাবে। অতঃপর সে মাটির সাথে মিশে যাবে, তারপর তার মধ্যে আবার রূহ প্রদান করা হবে” (আবূ দাঊদ)।[2]
প্রশ্ন ১৯: কুরআন কি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত নাকি আল্লাহ্র সৃষ্ট?
উত্তরঃ কুরআন সৃষ্ট নয়; বরং তা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী,
﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ تَنزِيلٗا ٢٣ ﴾ [الانسان: ٢٣]
“নিশ্চয়ই আমরা আপনার প্রতি কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে অবতীর্ণ করেছি” (ইনসান ২৩)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]
“নিশ্চয়ই আমরা কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমরা নিজেরাই এর সংরক্ষক” (হিজর ৯)।
প্রশ্ন ২০: আমল ছাড়া ঈমান কি কোনো কাজে আসবে?
উত্তরঃ একজন মুমিনের ভেতর অবশ্যই ঈমান এবং আমল উভয়ের সমন্বয় থাকতে হবে। প্রমাণ আল্লাহর বাণী,
﴿ وَمَن يَأۡتِهِۦ مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ ٧٥ ﴾ [طه: ٧٥]
“আর যারা ঈমানদার হয়ে এবং সৎকর্ম করে তাঁর কাছে হাযির হবে, তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা” (ত্ব-হা ৭৫)। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশের জন্য ঈমান এবং আমল উভয়ের শর্তারোপ করেছেন।
প্রশ্ন ২১: 'ইহ্সান' কাকে বলে?
উত্তরঃ 'ইহ্সান'-এর সংজ্ঞায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»
“ইহ্সান অর্থ: এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করা, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে দেখতে সক্ষম না হও, তাহলে মনে করবে, তিনি তোমাকে দেখছেন” (বুখারী)।
প্রশ্ন ২২: একজন মুমিনের আমল কখন বন্ধ হয়ে যায়?
উত্তরঃ কেবলমাত্র মৃত্যুর মাধ্যমে একজন মুমিনের আমল বন্ধ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]
“মৃত্যু অবধি আপনি আপনার পালনকর্তার ইবাদত করুন।” হাদীসে এসেছে,
«إِذَا
مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ
إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ
صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ»
“মানুষ যখন মারা যায়, তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়ঃ ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ, তার রেখে যাওয়া এমন ইলম, যদ্বারা উপকার সাধিত হয় এবং এমন সৎ সন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে” (মুসলিম)। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় কখনই আমল পরিত্যাগ করেন নি।
প্রশ্ন ২৩: মানুষ কি বাধ্যগত জীব নাকি স্বাধীন?
উত্তরঃ এধরনের শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কেননা এ দু’টিই ভুল। কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী প্রমাণিত হয়, মানুষের ইচ্ছাশক্তি রয়েছে এবং সে তার ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই আমল করে থাকে। তবে এসবকিছুই আল্লাহ্র ইলম এবং ইচ্ছার অধীন। এরশাদ হচ্ছে,
﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩ ﴾ [التكوير: ٢٨، ٢٩]
“(এই উপদেশ) তার জন্য, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায়। তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না” (তাকভীর ২৮-২৯)।
প্রশ্ন ২৪: তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ তাওহীদ বা আল্লাহ্র একত্ববাদ তিন প্রকারঃ
১. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র একত্ববাদঃ এর অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এমর্মে অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই এককভাবে ইবাদত পাওয়ার যোগ্য, এতে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]
“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সহিত এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)।
২. রুবুবিয়াত তথা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র একত্ববাদঃ অর্থাৎ আমাদেরকে এই অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা এবং পরিচালক; এক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো সহযোগীও। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿هَلۡ مِنۡ خَٰلِقٍ غَيۡرُ ٱللَّهِ يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ﴾ [فاطر: ٣]
“আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক্ব দান করে? তিনি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কিভাবে (তাঁর তাওহীদ থেকে) ফিরে যাচ্ছ?” (ফাতির ৩)। তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨ ﴾ [الذاريات: ٥٨]
“নিশ্চয় মহান আল্লাহই একমাত্র রিযিক্বদাতা, মহাশক্তিমান এবং পরাক্রান্ত” (যারিয়াত ৫৮)। তিনি আরো বলেন,
﴿ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ﴾ [السجدة: ٥]
“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সবকিছু পরিচালনা করেন” (সাজদাহ ৫)।
৩. আল্লাহ্র সুন্দরতম নামসমূহ এবং গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদঃ অর্থাৎ এই বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্র সুন্দরতম নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ গুণাবলী রয়েছে, যেগুলি কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]
“আর আল্লাহ্র রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। অতএব, সেগুলির মাধ্যমেই তাঁকে ডাকো” (আ'রাফ ১৮০)। এই নামসমূহ এবং গুণাবলীতে কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এগুলির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে সেগুলির কোনোরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্র মত আর কেউ নেই। আল্লাহ বলেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورا: ١١]
“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা” (শূরা ১১)।
প্রশ্ন ২৫: নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী বস্তুসমূহকে পরিচালনা করেন?
উত্তরঃ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সকল বস্তু একমাত্র আল্লাহই পরিচালনা করেন; এসব পরিচালনার ক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো সহযোগী। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ﴾ [سبا: ٢٢]
“এতে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহ্র সহযোগীও নয়” (সাবা ২২)।
প্রশ্ন ২৬: কোনো ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করে, সমস্ত পৃথিবী চার কুতুব বা চারটি মূল শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে আমরা তার ব্যাপারে কি বলতে পারি?
উত্তরঃ কোনো ব্যক্তি যদি এই ধরনের বিশ্বাস পোষণ করে, তাহলে সকল আলেমের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সে কাফের। কেননা সে এই ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণের মাধ্যমে মূলতঃ আল্লাহ্র নিম্নোক্ত বাণীকে অস্বীকার করেঃ
﴿وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ٢٢ ﴾ [سبا: ٢٢]
“এতে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহ্র সহযোগীও নয়” (সাবা ২২)। উপরন্তু সে বিশ্ব-জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ্র উপর অপারগতার অপবাদ দেয়।
প্রশ্ন ২৭: আপনার নবী কে?
উত্তরঃ আমার নবী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মানাফ। তাঁকে আল্লাহ ইসমাঈল-এর উত্তরসূরী কুরাইশ বংশ থেকে মনোনীত করে মানব এবং জিন জাতির নিকট নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। আর তার উপর অবতীর্ণ করেন অহি। ফলে তিনি মানুষকে একমাত্র আল্লাহ্র ইবাদত করার উদাত্ত আহ্বান জানান। পক্ষান্তরে আল্লাহ ছাড়া তারা যেসব প্রতিমা, পাথর, গাছ-গাছালি, নবী-রাসূল, নেককার ব্যক্তি, ফেরেশতা ইত্যাদির ইবাদত করত, তা ছেড়ে দিতে আহ্বান জানান। এক কথায় তিনি শির্ক বর্জন করে খালেছ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। সাথে সাথে তিনি একথাও ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কল্যাণ সাধন বা অকল্যাণ দূরীকরণে সক্ষম নন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَمَّن
يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ وَيَجۡعَلُكُمۡ
خُلَفَآءَ ٱلۡأَرۡضِۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ
٦٢ ﴾ [النمل: ٦٢]
“কে নিরূপায়ের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে ডাকে এবং কে কষ্ট দূরীভূত করেন? আর কে তোমাদেরকে পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? সুতরাং আল্লাহ্র সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর” (নামল ৬২)। অনুরূপভাবে তিনি মানুষকে একথাও অবগত করেছেন যে, কল্যাণ সাধন এবং অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্র নিকটেই। এক্ষেত্রে নবী-রাসূল, ফেরেশতামণ্ডলী, অলী-আউলিয়া কারো কোনো ক্ষমতা নেই। এরশাদ হচ্ছে,
﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ ﴾ [الانعام: ٥٠]
“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা”(আন‘আম ৫০)।
প্রশ্ন ২৮: অলী-আওলিয়ারা কি গায়েবের খবর জানেন? তারা কি মৃতকে জীবিত করতে পারেন?
উত্তরঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া গায়েবের খবর আর কেউই জানে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ﴾ [الاعراف: ١٨٨]
“আর আমি যদি গায়বের কথা জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতে পারতাম এবং কোনো অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করতে পারত না” (আ'রাফ ১৮৮)। অনুরূপভাবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া মৃতকে আর কেউই জীবিত করতে পারে না। আল্লাহ বলেন,
﴿قُلِ
ٱللَّهُ يُحۡيِيكُمۡ ثُمَّ يُمِيتُكُمۡ ثُمَّ يَجۡمَعُكُمۡ إِلَىٰ يَوۡمِ
ٱلۡقِيَٰمَةِ لَا رَيۡبَ فِيهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا
يَعۡلَمُونَ ٢٦ ﴾ [الجاثية: ٢٦]
“আপনি বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন, অতঃপর মৃত্যু দেন। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যে দিনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বুঝে না” (জাছিয়াহ ২৬)।
চার ইমামের সকলেই এ মর্মে একমত পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি দাবি করবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর রাখেন অথবা মৃতকে জীবিত করেন, সে মুরতাদ অর্থাৎ ইসলামের গণ্ডির বাইরে। কেননা সে এর মাধ্যমে আল্লাহ্র উপর মিথ্যারোপ করে। কারণ আল্লাহ তাঁর রাসূলকে মানুষ এবং জিন জাতিকে নিম্নোক্ত বাণী পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেনঃ
﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ ﴾ [الانعام: ٥٠]
“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা” (আন‘আম ৫০)। ইমাম বুখারী তাঁর স্বীয় সহীহ গ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অদৃশ্যের চাবি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না:
﴿ إِنَّ
ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا
فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا
تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ
٣٤ ﴾ [لقمان: ٣٤]
“নিশ্চয় আল্লাহ্র কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তা তিনি জানেন। কেউ জানে না যে, সে আগামীকাল কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না যে, সে কোন্ দেশে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত” (লুক্বমান ৩৪)'।
তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্যের খবর ঠিক ততটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জানান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এই দাবি করেন নি যে, তিনি তাঁর কোনো সাহাবীকে অথবা তাঁর প্রয়াত কোনো সন্তানকে জীবিত করেছেন। আর যদি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও অলীর দ্বারা এটি সম্ভব না হয়, তাহলে যারা তাঁর থেকে নিম্ন পর্যায়ের, তাদের দ্বারা এগুলি কিভাবে সম্ভব হতে পারে?!
প্রশ্ন ২৯: ঈসা আলাইহিস সালাম মৃতদেরকে জীবিত করতে পারতেন এবং মানুষ তাদের বাড়িতে যা কিছু সঞ্চয় করত, তা জানতেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে অন্যান্য আউলিয়াদের দ্বারা কি এমনটি সম্ভব?
উত্তরঃ এটি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্য একটি স্বতন্ত্র্য অলৌকিক ঘটনা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন, যেটি অন্য কারো জন্য করেন নি। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈসা আলাইহিস সালাম-এর চেয়ে মর্যাদাবান হওয়া সত্ত্বেও উক্ত দাবি করেন নি। তাহলে কিভাবে কেউ দাবি করতে পারে যে, আল্লাহ্র প্রিয় বান্দারা মৃতদেরকে জীবিত করতে সক্ষম?!
প্রশ্ন ৩০: আল্লাহ্র অলী হওয়ার বিষয়টি কি শুধু কতিপয় মুমিনের সাথে নির্দিষ্ট নাকি সকল মুমিনের ক্ষেত্রেই তা সম্ভব?
উত্তরঃ প্রত্যেক প্রকৃত মুমিন-মুত্তাক্বী ব্যক্তিই আল্লাহ্র অলী। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ ﴾ [يونس: ٦٢، ٦٣]
“মনে রেখো, যারা আল্লাহ্র অলী, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। তারা হচ্ছে, যারা ঈমান এনেছে এবং তাক্বওয়া অর্জন করেছে” (ইউনুস ৬২-৬৩)। আর তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। অতএব, আল্লাহ্র অলী হওয়ার বিষয়টি সকল মুমিন নর-নারীর জন্য উন্মুক্ত; বিশেষ কারো জন্য তা নির্দিষ্ট নয়।
প্রশ্ন ৩১: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾ ‘মনে রেখো, যারা আল্লাহ্র অলী, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না’ (ইউনুস ৬২)। উক্ত আয়াত কি অলী-আউলিয়াদের নিকট প্রার্থনা করার বৈধতা নির্দেশ করে?
উত্তরঃ আয়াতটি অলী-আউলিয়াদের নিকট প্রার্থনা করা অথবা সাহায্য চাওয়ার বৈধতা নির্দেশ করে না; বরং আউলিয়াদের মর্যাদা নির্দেশ করে। কেননা দুনিয়াতে তাঁদের কোনো ভয় নেই এবং আখেরাতেও তাঁরা চিন্তিত হবেন না। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে প্রার্থনা করা শির্ক।
প্রশ্ন ৩২: মুমিনগণ জান্নাতে তাঁদের প্রতিপালককে দেখতে পাবেন কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, মুমিনগণ জান্নাতে তাঁদের প্রতিপালককে দেখতে পাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
“সেদিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে” (কিয়ামাহ ২২-২৩)। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّكُمْ تَرَوْنَ رَبَّكُمْ»
“নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে (জান্নাতে) দেখবে” (বুখারী ও মুসলিম)।
প্রশ্ন ৩৩: নবী-রাসূল বাদে আল্লাহ্র অন্যান্য অলী-আউলিয়া কি ছগীরা এবং কাবীরা গোনাহে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত?
উত্তরঃ নবী-রাসূলগণ ছাড়া কোনো অলী-আউলিয়া ছগীরা এবং কাবীরা গোনাহে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত নন।
প্রশ্ন ৩৪: খিযির কি এখনো জীবিত?
উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে প্রেরিত হওয়ার আগেই খিযির মারা গেছেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
﴿ وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٖ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَٰلِدُونَ ٣٤ ﴾ [الانبياء: ٣٤]
“আপনার পূর্বে কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?” (আম্বিয়া ৩৪)।
আর যদি তিনি জীবিত থাকতেন, তাহলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতেন এবং তাঁর সাথে জিহাদে শরীক হতেন। কেননা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষ এবং জিন জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [الاعراف: ١٥٨]
“বলুন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের সবার নিকটে আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল” (আ'রাফ ১৫৮)।
ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষাংশে একবার আমাদেরকে নিয়ে এশার ছালাত আদায় করলেন। তিনি সালাম ফিরে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ
«أَرَأَيْتُمْ
لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ فَإِنَّ عَلَى رَأْسِ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا لاَ
يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ»
“তোমরা আজকের রাত সম্পর্কে কিছু জানো কি? (মনে রেখো) বর্তমানে যারা ভূ-পৃষ্ঠে রয়েছে, তাদের কেউ এই রাত থেকে নিয়ে একশত বৎসরের মাথায় বেঁচে থাকবে না” (বুখারী ও মুসলিম)। উক্ত হাদীসও প্রমাণ করে যে, খিযির মৃত্যুবরণ করেছেন। অতএব, তিনি কারো ডাকে সাড়া দেন না এবং কাউকে পথ প্রদর্শনও করেন না।
প্রশ্ন ৩৫: শির্ক কত প্রকার?
উত্তরঃ শির্ক দুই প্রকার। যথাঃ
১. বড় শির্কঃ যেমন: মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বাস্তবায়নে অক্ষম- এমন কোনো বিষয়ে অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপর ভরসা করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করা ইত্যাদি। শির্কের গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন না। আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ﴾ [النساء: ٤٨]
“নিশ্চয়ই আল্লাহ শির্কের গোনাহ ক্ষমা করেন না” (নিসা ১১৬)। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ لَقِىَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে” (মুসলিম)।
২. ছোট শির্কঃ যেমন: লোক দেখানো ইবাদত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ
أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ " قَالُوا: وَمَا
الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: " الرِّيَاءُ»
“যে বিষয়ে আমি তোমাদের উপরে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হল ছোট শির্ক”। ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! ছোট শির্ক কি? তিনি বললেন, “ছোট শির্ক হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদত” (মুসলিম)। অনুরূপভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করাও ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করে, সে কুফরী করে অথবা শির্ক করে” (তিরমিযী)।
প্রশ্ন ৩৬: মৃত ব্যক্তিরা কি শ্রবণ করে এবং আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তিরা শ্রবণ করে না এবং আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়াও দেয় না। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَآ أَنتَ بِمُسۡمِعٖ مَّن فِي ٱلۡقُبُورِ ٢٢ ﴾ [فاطر: ٢٢]
“আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন” (ফাতির ২২)। তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّكَ لَا تُسۡمِعُ ٱلۡمَوۡتَىٰ﴾ [النمل: ٨٠]
“আপনি মৃতদেরকে আহ্বান শোনাতে পারবেন না” (নামল ৮০)। তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ
تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ إِن تَدۡعُوهُمۡ
لَا يَسۡمَعُواْ دُعَآءَكُمۡ وَلَوۡ سَمِعُواْ مَا ٱسۡتَجَابُواْ لَكُمۡۖ
وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ
خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣، ١٤]
“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর বীচির আবরণেরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্র ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারবে না” (ফাতির ১৩-১৪)।
প্রশ্ন ৩৭: মূর্খ ব্যক্তিরা যেসব কবরবাসীকে সম্মান করে, তাদের কবরে মাঝে মাঝে কিসের শব্দ শোনা যায়?
উত্তরঃ মূর্খ ব্যক্তিদের নিকটে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শয়তানরূপী জিনেরা এমন শব্দ করে থাকে। কেননা সরাসরি কুরআনের বাণী দ্বারা প্রমাণিত যে, কবরবাসীরা কোনো আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিতে পারে না। পূর্ববর্তী প্রশ্নের উত্তরের দলীলগুলি দ্রষ্টব্য।
প্রশ্ন ৩৮: আল্লাহ্র অলী-আউলিয়া এবং অন্যান্য মৃতব্যক্তি কি কোনো সাহায্য প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেন?
উত্তরঃ আল্লাহ্র অলী-আউলিয়া এবং অন্যান্য মৃতব্যক্তি কোনো সাহায্য প্রার্থনাকারী বা আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেন না। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ
تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ إِن تَدۡعُوهُمۡ
لَا يَسۡمَعُواْ دُعَآءَكُمۡ وَلَوۡ سَمِعُواْ مَا ٱسۡتَجَابُواْ لَكُمۡۖ
وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ
خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣، ١٤]
“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর বীচির আবরণেরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্র ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারবে না” (ফাতির ১৩-১৪)। উক্ত আয়াতে তাদের নিকট প্রার্থনা করাকে শির্ক আখ্যায়িত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩৯: আল্লাহ বলেন, ﴿وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ﴾ ‘আর যারা আল্লাহ্র রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা তাদের পালনকর্তার নিকট জীবিত এবং রিযিক্বপ্রাপ্ত’ (আলে ইমরান ১৬৯)। উক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘আহ্ইয়া’ (أَحْيَاءٌ) শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ উক্ত আয়াতে ‘আহ্ইয়া’ বলতে শহীদগণের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের কথা বুঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদগণের রূহসমূহ জান্নাতে পরম সুখ-শান্তি ভোগ করে থাকে। আর সেজন্যই তো বলা হয়েছে,
﴿عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾ [ال عمران: ١٦٩]
“তারা তাদের পালনকর্তার নিকট রিযিক্বপ্রাপ্ত” (আলে ইমরান ১৬৯)। তবে মনে রাখতে হবে, তাদের মৃত্যু পরবর্তী বারযাখী জীবন বা কবরের জীবন দুনিয়ার জীবনের মত নয়; উভয় জীবনের মধ্যে কোনো প্রকার তুলনা চলবে না। তাছাড়া বারযাখী জীবনে তারা কারো ডাক শোনে এবং জবাব দেয় মর্মে কোনো প্রমাণই নেই।
প্রশ্ন ৪০: নাম রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে আরবী ‘আবদ’ (দাস) শব্দের সম্বন্ধ যেমনঃ আব্দুন্নবী, আব্দুল হুসাইন ইত্যাদি বৈধ হবে কি?
উত্তরঃ নাম রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে আরবী ‘আবদ’ (দাস) শব্দের সম্বন্ধ হারাম হওয়ার বিষয়ে ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের নাম পরিবর্তন করা ওয়াজিব। কেননা ঐ নামগুলির অর্থ হচ্ছে, নবীর বান্দা, হুসাইনের বান্দা। আর মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো বান্দা হতে পারে না।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে, আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান- যার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্র বান্দা ও রহমানের বান্দা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَحَبُّ الأَسْمَاءِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ»
“আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান” (মুসলিম)। তবে মৃত ব্যক্তিদের নাম পরিবর্তন করতে হবে না।
প্রশ্ন ৪১: হিংসা ও বদনযর প্রতিরোধের জন্য রিং, সূতা ইত্যাদি হাতে, গলায় বা যানবাহনে ঝুলিয়ে রাখার হুকুম কি?
উত্তরঃ হিংসা ও বদ নযর প্রতিরোধের জন্য রিং, সূতা ইত্যাদি হাতে, গলায় বা যানবাহনে ঝুলিয়ে রাখা শির্ক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ»
“যে ব্যক্তি মাদুলি বা তাবিজ ঝুলাল, সে শির্ক করল” (মুসনাদে আহমাদ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لاَ يُبْقَيَنَّ فِى رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلاَدَةٌ مِنْ وَتَرٍ وَلاَ قِلاَدَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ»
“কোনো উটের গলায় যদি মালা বা বালা জাতীয় কিছু থাকে, তাহলে তা কেটে ফেলতে হবে” (বুখারী)। তিনি আরো বলেন,
«مَنْ
عَقَدَ لِحْيَتَهُ، أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا، أَوْ اسْتَنْجَى بِرَجِيعِ
دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ، فَإِنَّ مُحَمَّدًا بَرِيءٌ مِنْهُ»
“যে ব্যক্তি তার দাড়িতে গিঁঠ দিল (পেঁচিয়ে রাখল) অথবা সূতার মালা পরিধান করল অথবা পশুর মল বা হাড্ডি দিয়ে ইস্তেনজা করল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জিম্মাদারী থেকে মুক্ত” (আহমাদ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ»
“ঝাড়-ফুঁক এবং মাদুলি ও তেওয়ালা ব্যবহার করা শির্ক” (আবু দাউদ)। অন্য হাদীসে তিনি আরো বলেন,
«مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَلاَ أَتَمَّ اللَّهُ لَهُ»
“যে ব্যক্তি মাদুলি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তা'আলা তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন না” (ইবনে হিব্বান)।
হাদীসে ‘তেওয়ালা’ (التِّوَلَة) বলতে এমন বস্তুকে বুঝানো হয়েছে, যা স্বামীকে স্ত্রীর নিকটে অধিকতর প্রিয় করে বলে ধারণা করা হয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।
আর ‘তামীমাহ’ (تَمِيمَة) বা ‘তামায়েম’ (تمَائِم) বলতে এমন জিনিসকে বুঝানো হয়েছে, যা সাধারণতঃ বাচ্চাদের গলায় হিংসা, বদনযর ইত্যাদি প্রতিরোধের জন্য ঝুলানো হয়। এটি নিছক শির্ক। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে না।
প্রশ্ন ৪২: মাটি, পাথর বা গাছ-গাছালির মাধ্যমে বরকত কামনা করা জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ এটি শির্কের অন্তর্ভুক্ত। আবু ওয়াক্বিদ লাইছী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হুনাইন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি। মুশরিকদের একটি কুলগাছ ছিল, যার চারপাশে তারা অবস্থান গ্রহণ করত এবং তাতে তারা তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে ‘যাতু আনওয়াত্ব’ বলা হত। সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আমরা ঐ কুলগাছের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! মুশরিকদের যেমন ‘যাতু আনওয়াত্ব’ আছে, আমাদের জন্যও অনুরূপ ‘যাতু আনওয়াত্ব’ নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহু আকবার, তোমাদের এই দাবীটি পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতি বৈ আর কিছুই নয়। যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথাই বলেছ, যেমন কথা বনী ইসরাইল মূসাকে বলেছিল। তারা বলেছিলো, হে মূসা, মুশরিকদের যেমন ইলাহ আছে, আমাদের জন্যও তেমন ইলাহ বানিয়ে দাও। মূসা বললেন, তোমরা মূর্খের মতো কথাবার্তা বলছো (আ‘রাফ ১৩৮)। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতিই অবলম্বন করছ” (আহমাদ ও তিরমিযী)।
প্রশ্ন ৪৩: কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ ব্যতীত তার নামে যবেহ করার হুকুম কি?
উত্তরঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নামে যবেহ করা শির্ক। মহান আল্লাহ,
﴿ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]
“অতএব, আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করুন এবং ক্বুরবানী করুন” (কাওছার ২)। অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে,
﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ ﴾ [الانعام: ١٦٢]
“আপনি বলুন, আমার ছালাত, আমার ক্বুরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্য” (আন‘আম ১৬২-১৬৩)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ»
“আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি যবেহ করে, তার উপর আল্লাহ্র অভিশাপ” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ৪৪: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে মানত করার হুকুম কি?
উত্তরঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে মানত করা বড় শির্ক। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র আনুগত্যের মানত করে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাঁর অবাধ্য হওয়ার মানত করে, সে যেন তার অবাধ্য না হয়' (বুখারী)। এর অর্থ হলো, মানত একমাত্র আল্লাহ্র জন্যই করতে হবে, অন্য কারো জন্য করলে তা শির্ক হবে।
প্রশ্ন ৪৫: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় চাওয়ার হুকুম কি?
উত্তরঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় চাওয়া শির্ক। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَأَنَّهُۥ كَانَ رِجَالٞ مِّنَ ٱلۡإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٖ مِّنَ ٱلۡجِنِّ فَزَادُوهُمۡ رَهَقٗا ٦ ﴾ [الجن: ٦]
“কিছু মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত। ফলে জিনেরা মানুষদের ভয়-ভীতি বাড়িয়ে দিত” (জিন ৬)। কেননা আশ্রয় প্রার্থনা করা ইবাদত। আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহ্র উদ্দেশ্যেই হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠﴾ [الاعراف: ٢٠٠]
“যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তাহলে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ” (ফুছছিলাত ৩৬)।
তবে জীবিত এবং উপস্থিত ব্যক্তির কাছে সে যে বিষয়ে ক্ষমতা রাখে, সে বিষয়ে আশ্রয় চাওয়া যাবে।
প্রশ্ন ৪৬: (কোনো স্থানে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ইত্যাদির ভয় থাকলে) সেখানে অবস্থান গ্রহণের দো‘আ কি?
উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো স্থানে অবস্থান গ্রহণ করবে, সে বলবে,
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»
“আমি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ স্থান ত্যাগ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছু্ই তার ক্ষতি করতে পারবে না” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ৪৭: কল্যাণ সাধন, অনিষ্ট দূরীকরণ সহ যেসব বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সহযোগিতা করতে সক্ষম নয়, সেসব বিষয়ে অন্য কারো কাছে সহযোগিতা চাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ এটি শির্কের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَمَّن
يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ وَيَجۡعَلُكُمۡ
خُلَفَآءَ ٱلۡأَرۡضِۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ
٦٢ ﴾ [النمل: ٦٢]
“কে নিরূপায়ের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন?” (নামল ৬২)।। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া তার ডাকে কেউ সাড়া দিবে না এবং কষ্টও দূর করবে না। আর এটি শির্ক এ কারণে যে, আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাওয়া ইবাদত। আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহ্র জন্যই হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ﴾ [الانفال: ٩]
“তোমরা যখন তোমাদের প্রতিপালকের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিলেন” (আনফাল ৯)। আবু হুরায়রাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ
أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ
بَعِيرٌ لَهُ رُغَاءٌ يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِى. فَأَقُولُ
لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ. لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ
يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ فَرَسٌ لَهُ حَمْحَمَةٌ
فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِى. فَأَقُولُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ
شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ»
“আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন যেন এ অবস্থায় না পাই যে, সে তার কাঁধে উট বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা চিৎকার দিচ্ছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমিতো (দুনিয়ায়) তোমাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন যেন এ অবস্থায় না পাই যে, সে তার কাঁধে ঘোড়া বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা চিৎকার করছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমিতো (দুনিয়ায়) তোমাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না” (বুখারী ও মুসলিম)।
তবে জীবিত এবং উপস্থিত ব্যক্তি যে বিষয়ে সহযোগিতা করতে সক্ষম, সে বিষয়ে তার সহযোগিতা চাওয়া যাবে। যেমনভাবে মূসা আলাইহিস সালামের স্বগোত্রীয় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য চেয়েছিলেন। এরশাদ হচ্ছে,
﴿ فَٱسۡتَغَٰثَهُ ٱلَّذِي مِن شِيعَتِهِۦ عَلَى ٱلَّذِي مِنۡ عَدُوِّهِۦ﴾ [القصص: ١٥]
“অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের, সে তার শত্রু পক্ষের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল” (ক্বাছাছ ১৫)। আগেই বলা হয়েছে, মৃত ও অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া শির্ক। চার ইমাম এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
প্রশ্ন ৪৮: মুনাফেক্বী কত প্রকার?
উত্তরঃ মুনাফেক্বী দুই প্রকারঃ
১. বড় মুনাফেক্বীঃ বড় মুনাফেক্বী হচ্ছে, বাইরে ঈমান প্রকাশ করা এবং ভিতরে কুফরী লুকিয়ে রাখা।
২. ছোট মুনাফেক্বীঃ ছোট মুনাফেক্বী হচ্ছে, ভিতরে কুফরী গোপন না রেখে অর্থাৎ মুসলিম হওয়ার পরও মুনাফেক্বদের চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য রাখা। যেমনঃ মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, আমানতের খেয়ানত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا وَعْدَ أَخْلَفَ»
“মুনাফেক্বের নিদর্শন তিনটিঃ যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে; যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন সে তার খেয়ানত করে এবং যখন ওয়াদা করে, তখন সে তা ভঙ্গ করে” (বুখারী)।
প্রশ্ন ৪৯: কুফরী কত প্রকার?
উত্তরঃ কুফরী দুই প্রকারঃ
১. বড় কুফরীঃ যা মানুষকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়। যেমনঃ আল্লাহ, তাঁর
রাসূল এবং তাঁর মনোনীত ধর্ম ইসলামকে গালি দেওয়া অথবা ইসলামের রুকনসমূহ সহ
আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত দ্বীনের অন্যান্য যরূরী বিষয়ের কোনো কিছুকে অস্বীকার করা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]
“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্র সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করতে? ওযর পেশ করো না, নিশ্চয় তোমরা ঈমান আনার পর (ঠাট্ট-বিদ্রূপের কারণে) কাফের হয়ে গেছ” (তাওবাহ ৬৫-৬৬)।
২. ছোট কুফরীঃ যেমনঃ আল্লাহ্র নে‘মত অস্বীকার করা অথবা কোনো মুসলিম ব্যক্তির সাথে অন্যায়ভাবে কলহ-বিবাদ ও মারামারি করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»
“মুসলিম ব্যক্তিকে গালি দেওয়া ফাসেক্বী এবং তার সাথে কলহ-বিবাদ ও মারামারি করা কুফরী” (বুখারী)।
প্রশ্ন ৫০: শাফা‘আত কত প্রকার?
উত্তরঃ শাফা‘আত দুই প্রকারঃ
১. কিয়ামত দিবসের শাফা‘আতঃ যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ ﴾ [الزمر: ٤٤]
“বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন” (যুমার ৪৪)। এই প্রকার শাফা‘আতের দু‘টি শর্ত রয়েছেঃ
ক. আল্লাহ্র পক্ষ থেকে শাফা‘আতকারীর জন্য শাফা‘আত করার অনুমতি থাকতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
“কে আছ এমন, যে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে?” (বাক্বারাহ ২৫৫)।
খ. যার জন্য শাফা‘আত করা হবে, তার উপর আল্লাহ্র সন্তুষ্টি থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ﴾ [الانبياء: ٢٨]
“তারা শুধুমাত্র তাদের জন্য সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট” (আম্বিয়া ২৮)। সুতরাং কিয়ামত দিবসে কেউ যদি তার নিজের জন্য শাফা‘আত কামনা করে, তাহলে সে যেন একমাত্র আল্লাহ্র কাছে তা প্রার্থনা করে; অন্য কারো কাছে নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ»
“তুমি যখন চাইবে, তখন আল্লাহ্র কাছেই চাও” (তিরমিযী)। সেজন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে প্রার্থনা করা যাবে: হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর, যাদের জন্য কিয়ামত দিবসে শাফা‘আত করা হবে অথবা হে আল্লাহ! কিয়ামত দিবসে আপনি আমার ভাগ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফা‘আত নছীব করুন। তবে নিম্নোক্তভাবে প্রার্থনা করা হারাম: হে রাসূল! আপনি আমার জন্য কিয়ামতের দিন শাফা‘আত করুন।
২. দুনিয়ার জীবনে মানুষের পরস্পরের মধ্যে শাফা‘আতঃ এই প্রকার শাফা‘আত ভাল কাজের জন্য হলে মোস্তাহাব আর মন্দ কাজের জন্য হলে হারাম। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿مَّن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةً حَسَنَةٗ يَكُن لَّهُۥ نَصِيبٞ مِّنۡهَاۖ وَمَن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةٗ سَيِّئَةٗ يَكُن لَّهُۥ كِفۡلٞ مِّنۡهَاۗ﴾ [النساء: ٨٥]
“যে ব্যক্তি সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে” (নিসা ৮৫)।
প্রশ্ন ৫১: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু কিয়ামতের দিন শাফা‘আত করবেন, সেহেতু তাঁর কাছে কি শাফা‘আত চাওয়া যাবে?
উত্তরঃ সমস্ত শাফা‘আত আল্লাহ্র একক মালিকানায়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ ﴾ [الزمر: ٤٤]
“বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন” (যুমার ৪৪)। অতএব, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ “যখন চাইবে, তখন আল্লাহ্র কাছেই চাইবে” পালন করতে হলে আল্লাহ্র কাছেই শাফা'আত চাইতে হবে। সেজন্য আমাদের এভাবে প্রার্থনা করা উচিত যে, হে আল্লাহ! কিয়ামত দিবসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের জন্য শাফা‘আত করবেন, আমাকে আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন।
প্রশ্ন ৫২: অসীলা কত প্রকার?
উত্তরঃ অসীলা বা মাধ্যম ধরা দুই প্রকারঃ
১. বৈধ অসীলাঃ সৎ আমলকে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার নাম বৈধ অসীলা। আর যে কোনো আমল সৎ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য তা সম্পাদন করা এবং তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতি তথা সুন্নাতের অনুসরণ থাকা। যেমন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ অথবা আল্লাহ্র জন্য একনিষ্ঠ যে কোনো আমলকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ। এই অসীলা সম্পর্কেই মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ﴾ [المائدة: ٣٥]
“আর তোমরা তাঁর অসীলা অন্বেষন কর” (মায়েদাহ ৩৫)। সুতরাং কেউ এভাবে প্রার্থনা করতে পারে, “হে আল্লাহ! আপনার প্রতি আমার একনিষ্ঠতা এবং আমা কর্তৃক আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যের মাধ্যমে আপনি আমাকে সুস্থতা ও রিযিক্ব দান করুন। যেমনটি
পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেওয়া তিন ব্যক্তিকে একখণ্ড পাথর এসে গুহায়
আটকিয়ে দিলে তারা তাদের সৎ আমলকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে গুহার মুখ থেকে
পাথর সরিয়ে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করেছিলেন এবং
আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবূল করেছিলেন” (বুখারী)।
অনুরূপভাবে কোনো সৎ ব্যক্তির দো‘আকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ। যেমনিভাবে সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর দো‘আর শরণাপন্ন হয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাঁদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন (বুখারী)।
২. অবৈধ অসীলাঃ আল্লাহ বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়- এমন অসীলাকে অবৈধ অসীলা বলে। যেমনঃ মৃত ব্যক্তিকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তার কাছে সাহায্য ও শাফা‘আত চাওয়া। আর এই অসীলা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ইমামগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন- যদিও গৃহীত সেই অসীলা নবী কিংবা অলী হন।
প্রশ্ন ৫৩: ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত দু'টিঃ
১. ইবাদত একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]
“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)।
২. ইবাদত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতিতে হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ﴾ [ال عمران: ٣١]
“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন” (আলে ইমরান ৩১)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি আমাদের নির্দেশের বাইরে কোনো আমল করলো, তার সেই আমল প্রত্যাখ্যাত” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ৫৪: কোনো আমল ছাড়াই নিয়্যত বিশুদ্ধ হওয়া কি যথেষ্ট?
উত্তরঃ যে কোনো আমল কবূল হওয়ার জন্য নিয়্যত বিশুদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতিতে হওয়া যরূরী। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾ [الكهف: ١١٠]
“অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে” (কাহ্ফ ১১০)। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ আমল কবূল হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ নিয়্যত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতির শর্তারোপ করেছেন। মনে রাখতে হবে, খাঁটি নিয়্যত উপকারে আসলেও ঈমানের অন্যতম শর্ত হচ্ছে, আমল।
প্রশ্ন ৫৫: পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত কত প্রকার?
উত্তরঃ দুই প্রকারঃ
১. বৈধ যিয়ারতঃ আখেরাত ও মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করাই হচ্ছে, বৈধ যিয়ারত। এই যিয়ারতের মাধ্যমে যিয়ারতকারী ছওয়াবের অধিকারী হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنِ زِيَارَةِ الْقُبُورِ أَلاَ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا َتُذَكِّرُ الآخِرَةَ»
“আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়” (মুসলিম)।
২. নিষিদ্ধ যিয়ারতঃ যে যিয়ারতের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, সুপারিশ চাওয়া হয়, তা-ই নিষিদ্ধ যিয়ারত। এই যিয়ারতের মাধ্যমে যিয়ারতকারী গোনাহগার হয়; বরং এরূপ আমল বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ
تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ إِن تَدۡعُوهُمۡ
لَا يَسۡمَعُواْ دُعَآءَكُمۡ وَلَوۡ سَمِعُواْ مَا ٱسۡتَجَابُواْ لَكُمۡۖ
وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ
خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣، ١٤]
“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর বীচির আবরণেরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্র ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারবে না” (ফাতির ১৩-১৪)।
প্রশ্ন ৫৬: কবর যিয়ারতের সময় কোন্ দো‘আ পড়তে হয়?
উত্তরঃ কবর যিয়ারতের সময় নিম্নলিখিত দো‘আ পড়তে হয়, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে শিক্ষা দিতেনঃ
«السَّلاَمُ
عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ
وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلاَحِقُونَ أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ
الْعَافِيَةَ»
“হে মুমিন-মুসলিম কবরবাসীগণ! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয়ই আমরা (আপনাদের) সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের এবং আপনাদের জন্য মুক্তি-নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ৫৭: নেককার লোকের কবরের নিকট গিয়ে আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করার হুকুম কি?
উত্তরঃ নেককার লোকের কবরের নিকট গিয়ে আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করা বিদ‘আত। যা মানুষকে শির্কের দিকে ধাবিত করে। আলী ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের নিকট আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করতে দেখে তাকে নিষেধ করেন এবং বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে ঈদে পরিণত কর না” (যিয়া মাক্বদেসী, আল-মুখতারাহ, হা/৪২৮)।
প্রশ্ন ৫৮: আল্লাহ্র কাছে কোনো কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করার হুকুম কি?
উত্তরঃ এটি বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কেননা মহান আল্লাহ তাদেরকে তিরষ্কার করে বলেন,
﴿وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ﴾ [يونس: ١٨]
“তারা বলে, এরা তো আল্লাহ্র কাছে আমাদের সুপারিশকারী” (ইউনুস ১৮)। তিনি তাদের সম্পর্কে আরো বলেন,
﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [الزمر: ٣]
“তারা বলে, আমরা তাদের এবাদত এজন্যই করি যে, তারা যেন আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেয়” (যুমার ৩)।
প্রশ্ন ৫৯: কা‘বা ছাড়া অন্য কিছুকে ত্বওয়াফ করা কি বৈধ?
উত্তরঃ কা‘বা ছাড়া অন্য কিছুকে ত্বওয়াফ করা বৈধ নয়। কেননা মহান আল্লাহ কা‘বাকেই ত্বওয়াফ করার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, অন্য কিছুকে ত্বওয়াফের অনুমতি তিনি দেন নি। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ ٢٩ ﴾ [الحج: ٢٩]
“তারা যেন এই সুসংরক্ষিত গৃহের ত্বওয়াফ করে” (হজ্জ ২৯)। এ ত্বওয়াফ দ্বারা যদি জীবিত কিংবা মৃত কোনো ব্যক্তির নৈকট্য লাভ উদ্দেশ্য হয়, তবে তা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এবং ত্বওয়াফকারী দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। কেননা ত্বওয়াফ হচ্ছে ইবাদত। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদত করা শির্ক।
প্রশ্ন ৬০: হাদীসে বর্ণিত তিন মসজিদ ছাড়া ইবাদতের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো স্থানে সফর করার বিধান কি?
উত্তরঃ তিন মসজিদ ছাড়া ইবাদতের উদ্দেশ্যে অন্য স্থানে সফর করা বৈধ নয়। উক্ত তিনটি মসজিদ হচ্ছে, মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকছা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِى هَذَا وَمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الأَقْصَى»
“তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববী), মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আক্বছা” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ৬১: নিম্নবর্ণিত হাদীসগুলি কি সহীহ নাকি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সেগুলি মিথ্যারোপ? “তোমরা যখন সংকীর্ণ অবস্থায় পতিত হও, তখন কবর যিয়ারত কর”, “যে ব্যক্তি হজ্জ করল অথচ আমার কবর যিয়ারত করল না, সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করল”, “যে ব্যক্তি একই বছরে আমাকে এবং আমার পিতা ইবরাহীমকে যিয়ারত করে, আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হয়ে যাবো”, “যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাত করল”, “আল্লাহ্র কোনো অলী যদি কোনো কিছুকে বলে, ‘হও’, তাহলে তা হয়ে যায়”, “কোনো ব্যক্তি যদি কিছুতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে তা তার উপকারে আসে।”
উত্তরঃ উপরোক্ত সবগুলি হাদীসই জাল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচারিতা। এগুলি বিদ‘আতী ও কবর পূজারীদের সৃষ্টি। মনে রাখতে হবে, যিনি কোনো কিছু হয়ে যেতে বললে হয়ে যায়, তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ; কোনো নবী-রাসূল বা অলী-আউলিয়া কখনই এটি করতে সক্ষম নন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّمَآ أَمۡرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيًۡٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٨٢ ﴾ [يس: ٨٢]
“তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’, তখনই তা হয়ে যায়” (ইয়াসীন ৮২)।
প্রশ্ন ৬২: নেককার লোকদের পুরাতন চিহ্ন ও নিদর্শনাবলী অনুসন্ধান করা এবং সেগুলির মাধ্যমে বরকত কামনা করা কি ইবাদত নাকি বিদ‘আত?
উত্তরঃ এমন কর্মকাণ্ড বিদ‘আত। কেননা সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) আবু বকর, ওমর, উছমান ও আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর নিদর্শনাবলী অনুসন্ধান ও সেগুলি দ্বারা বরকত কামনা করেন নি; অথচ নবীগণের পরে তাঁরা ছিলেন এই উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। কেননা সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) জানতেন যে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। যে গাছের নীচে ‘বাই‘আতুর রেদওয়ান’ সংঘটিত হয়েছিল, সে গাছটি দ্বারা বরকত কামনার আশঙ্কায় ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তা কেটে ফেলেছিলেন। আর যেহেতু সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কল্যাণের দিকে আমাদের থেকে অনেক বেশী অগ্রগামী ছিলেন, সেহেতু এগুলি দ্বারা বরকত গ্রহণ ইবাদত হলে তাঁরা আমাদের আগেই তা করতেন।
প্রশ্ন ৬৩: কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা যাবে কি?
উত্তরঃ কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যাবে না। তবে নেককার-মুত্তাক্বী ব্যক্তির জন্য ছওয়াবের আশা করা যায় এবং অসৎ ব্যক্তির ক্ষেত্রে শাস্তির আশঙ্কা করা যায়।
প্রশ্ন ৬৪: পাপাচার করার কারণে কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে ‘কাফের’ বলা যাবে কি?
উত্তরঃ অন্যায় বা অপরাধ করার কারণে কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে কাফের বলা যাবে না; বরং সে তাওহীদপন্থীদের মধ্যে পাপী মুমিন হিসাবে গণ্য হবে। তবে বড় কুফরী বা বড় শির্ক অথবা বড় মুনাফেক্বীর মধ্যে লিপ্ত হলে তা ভিন্ন কথা। অর্থাৎ সে তখন ঈমানী গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে।
প্রশ্ন ৬৫: বান্দার কাজ-কর্ম কি আল্লাহ্র সৃষ্টি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বান্দার কাজ-কর্ম একদিকে যেমন আল্লাহ্র সৃষ্টি, অন্যদিকে তেমনি তা বান্দার অর্জন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ ﴾ [الزمر: ٦٢]
“আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা” (যুমার ৬২)। অতএব, মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ ভাল-মন্দ দু’টিই সৃষ্টি করেছেন। আর বান্দার কাজ-কর্ম যে তার নিজস্ব উপার্জন, তার দলীল হচ্ছে,
﴿لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ﴾ [البقرة: ٢٨٦]
“সে তাই পায়, যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায়, যা সে করে” (বাক্বারাহ ২৮৬)।
প্রশ্ন ৬৬: মসজিদের ভেতরে মৃত দাফন করা অথবা কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ না, জায়েয নয়; বরং উভয়ই হারাম। যদি কেউ আল্লাহ ব্যতীত কোনো কবরের ইবাদত করে বা কবরবাসীর নিকট দো‘আ করে অথবা তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে, তাহলে তা ‘বড় শির্ক’-এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি কবরের উপর বা কবরকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করে বা মসজিদের ভেতরে মৃতকে দাফন করে, কিন্তু কবরবাসীর উদ্দেশ্যে কোনো প্রকার ইবাদত না করে, তথাপিও তা গর্হিত কাজ হিসাবে এবং শির্কে পতিত হওয়ার বড় একটি মাধ্যম হিসাবে গণ্য হবে। মনে রাখতে হবে, কবরের উপরে নির্মিত মসজিদে ছালাত জায়েয হবে না; বরং এ জাতীয় নির্মাণ হারাম। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় বলেন,
«لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ يُحَذِّرُ مَا صَنَعُوا»
“আল্লাহ ইয়াহূদ এবং নাছারাদের উপর অভিশাপ করুন, কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করেছে।” আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ইয়াহূদী-খৃষ্টানদের এহেন কর্মকাণ্ড থেকে সতর্ক করার জন্য তিনি একথা বলেছেন (বুখারী ও মুসলিম)।
জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে বলেন,
«أَلاَ
وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ
أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا
الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّى أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ»
“সাবধান! তোমাদের
পূর্ববর্তীরা তাদের নবী এবং নেককার মুমিনগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ
করতো! খবরদার! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করো না। কেননা আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করছি” (মুসলিম)।
অতএব, মসজিদের উপর বা মসজিদকে কেন্দ্র করে নির্মিত কবর ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। আর মসজিদের ভেতরে মৃতকে দাফন করা হলে মসজিদ ভাঙতে হবে না; বরং কবর খনন করে মৃতকে সেখান থেকে সরিয়ে সাধারণ কবরস্থানে দাফন করতে হবে।
প্রশ্ন ৬৭: কবরের উপর ঘর নির্মাণ করার বিধান কি?
উত্তরঃ কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত। এর
মাধ্যমে দাফনকৃত ব্যক্তির সম্মানের ক্ষেত্রে চরম বাড়াবাড়ি করা হয় এবং
এমন কর্মকাণ্ড শির্কের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসাবে গণ্য হয়। অতএব, নিকৃষ্ট বিদ‘আত
প্রতিরোধ কল্পে এবং শির্কের অন্যতম এই মাধ্যমকে প্রতিহত করতে সম্ভব হলে
কবরের উপরে নির্মিত ভবন ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। তবে এক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি এবং সহযোগিতা থাকতে হবে। আবুল হাইয়াজ আসাদী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আমাকে বলেন,
«أَلاَّ
أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه
وسلم- أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا
مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে কাজে পাঠিয়েছিলেন, আমিও কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাব না? আর তা হচ্ছে এই যে, কোনো ছবি-মূর্তি পেলে তা ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে এবং কোনো উঁচু কবর পেলে তা ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ৬৮: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কি মসজিদের ভেতরে দাফন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মূলতঃ আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর কামরায় দাফন করা হয়েছিল। দাফনের পর ৮০ বছরেরও বেশী সময় পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর মসজিদের বাইরেই ছিল। এরপর একজন উমাইয়া খলীফা মসজিদে নববী সম্প্রসারণ করলে আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর কামরা মসজিদের ভেতরে পড়ে যায়। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন আলেমগণ কর্তৃক উক্ত কামরা মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করানোর বিরোধিতা খলীফা গ্রাহ্য করেন নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ থেকে সতর্ক করে বলেন, “সাবধান!
তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী এবং নেককার মুমিনগণের কবরসমূহকে মসজিদ
হিসাবে গ্রহণ করতো! খবরদার! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করো না। কেননা আমি তোমাদেরকে এ কাজ থেকে নিষেধ করছি” (মুসলিম)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণকারী এবং বাতি প্রজ্জ্বলনকারীদেরকে অভিসম্পাত করেছেন (সুনানে আরবা‘আহ)।
প্রশ্ন ৬৯: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর কবরে জীবিত আছেন? মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে কি তিনি উপস্থিত হন?
উত্তরঃ চার ইমাম এমর্মে একমত পোষণ করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র দেহ থেকে রূহ বের না হওয়া পর্যন্ত ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁকে দাফন করেন নি। তাঁরা তাঁকে জীবিত অবস্থায় দাফন করেছেন- একথা কি কল্পনা করা যায়!
চার ইমাম এবং একজন সাহাবী থেকেও বর্ণিত হয় নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যু এবং দাফনের পর কখনও জনসম্মুখে উপস্থিত হয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি দাবী করবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জাগ্রত অবস্থায় তাদের সামনে উপস্থিত হন, সে মিথ্যুক এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মিথ্যা আরোপকারী।
প্রশ্ন ৭০: বিদ‘আত কাকে বলে ও কত প্রকার? প্রত্যেক প্রকারের হুকুম কি? ইসলামে 'উত্তম বিদ‘আত' বলে কিছু আছে কি?
উত্তরঃ বিনা দলীলে বান্দা কর্তৃক তার প্রভুর ইবাদত করার নাম বিদ‘আত। বিদ‘আত দুই প্রকারঃ
১. কাফেরে পরিণতকারী বিদ‘আতঃ যেমনঃ কোনো কবরবাসীর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার কবরে ত্বওয়াফ করা।
২. কুফরীতে নয়; বরং পাপে নিমজ্জিতকারী বিদ‘আতঃ যেমনঃ কোনো নবী বা সৎ মানুষের জন্মবার্ষিকী পালন করা।
ইসলামে 'উত্তম বিদ‘আত' বলতে কিছু নেই। কেননা প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা শরী‘আতে নবাবিষ্কার থেকে বেঁচে থাকো। কেননা নবাবিষ্কৃত প্রত্যেকটা বস্তুই হচ্ছে বিদ‘আত এবং প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হচ্ছে পথভ্রষ্ট”; অন্য বর্ণনায় এসেছে, “প্রত্যেকটি পথভ্রষ্টতাই জাহান্নামে যাবে” (মুসনাদে আহমাদ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো বিদ‘আতকে এই হুকুম থেকে বের করে দেন নি। সুতরাং প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হারাম এবং বিদ‘আতী গোনাহগার। আর তার ঐ আমল প্রত্যাখ্যাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের নির্দেশের বাইরে কোনো আমল করলো, তার সেই আমল প্রত্যাখ্যাত” (মুসলিম)। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে নতুন কিছু সৃষ্টি করল, তার সৃষ্ট সেই আমল প্রত্যাখ্যাত” (বুখারী ও মুসলিম)।
প্রশ্ন ৭১: যদি কেউ প্রশ্ন করে, তাহলে নীচের হাদীসটির অর্থ কি? ‘যে ব্যক্তি উত্তম সুন্নাত চালু করলো, সে উক্ত সুন্নাতের এবং উক্ত সুন্নাত বাস্তবায়নকারীর নেকী পাবে’।
উত্তরঃ উক্ত হাদীসে উত্তম সুন্নাত বলতে এমন আমল বুঝানো হয়েছে, ইসলামে যার ভিত্তি রয়েছে। কেননা হাদীসটি দান-ছাদাক্বার ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর দান-সাদাক্বার বিষয়টি কুরআন-হাদীসে এসেছে। তাছাড়া যে মহান ব্যক্তি উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, স্বয়ং তিনিই ‘সর্বপ্রকার বিদ‘আত পথভ্রষ্ট’ মর্মের হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সুন্নাতের ভিত্তি কুরআনুল কারীম ও হাদীসে রয়েছে, কিন্তু বিদ‘আতের কোনো ভিত্তি তাতে নেই।
প্রশ্ন ৭২: ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তারাবীহ্র ছালাত সম্পর্কে বলেছেন, «نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ» ‘এটি উত্তম বিদ‘আত’। আর উসমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর খেলাফতকালে জুম‘আর দ্বিতীয় আযান চালু হয়। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে উক্ত বিষয় দু’টির ব্যাখ্যা কি?
উত্তরঃ ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) উক্ত উক্তি দ্বারা বিদ‘আতের আভিধানিক অর্থ বুঝিয়েছেন; পারিভাষিক অর্থ নয়। কেননা তিনি এমন একটি ইবাদত সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন, যা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবায়ন করে গেছেন। সুতরাং ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলের সাথে মিলে গেছে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলের সাথে যা মিলে যায়, তা বিদ‘আত হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর দ্বিতীয় আযান চালুর বিষয়ে বলব, যে কয়জন খলীফার সুন্নাত অনুসরণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন, উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁদের মধ্যে একজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ»
“তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত আঁকড়ে ধর”। সেজন্য খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত ব্যতীত অন্য কারো সুন্নাত আমরা গ্রহণ করব না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট করে তাঁর নিজের সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের কথাই বলেছেন; অন্য কারো কথা তিনি উল্লেখ করেননি। তাছাড়া ছাহাবায়ে কেরামও বিদ‘আত থেকে হুশিয়ার করেছেন। ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) একদল লোককে দলবদ্ধভাবে আল্লাহ্র যিক্র করতে দেখে বলেন, তোমরা কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণের চেয়ে বেশী জ্ঞান রাখো নাকি তোমরা অন্যায়ভাবে বিদ‘আত চালু করেছো? জবাবে তারা যখন বললেন, আমরা কল্যাণ বৈ কিছুই উদ্দেশ্য করি নি, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, ‘ভাল কিছু উদ্দেশ্য করলেও সবাই ভাল জিনিস অর্জন করতে পারে না’ (দারেমী)। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা, যদিও মানুষ তা ভাল চোখে দেখে’।
প্রশ্ন ৭৩: মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপন করা সুন্নাত নাকি বিদ‘আত?
উত্তরঃ মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান পালন করার কোনো দলীল কুরআন ও সহীহ হাদীসে নেই। কোনো সাহাবী থেকেও এমর্মে কিছুই বর্ণিত হয় নি। এমনকি চার ইমামের কেউও এর পক্ষে কথা বলেন নি। বরং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর কয়েক যুগ পরে খ্রিষ্টানদের অনুসরণে ফাতেমীরা সর্বপ্রথম এ বিদ‘আত চালু করে। কারণ খ্রিষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম বার্ষিকী পালন করে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদ‘আত থেকে হুশিয়ার করে বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে নতুন কিছু সৃষ্টি করল, তার সৃষ্ট সেই আমল প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী)।
প্রশ্ন ৭৪: জাদু শেখা এবং তদনুযায়ী আমল করার বিধান কি?
উত্তরঃ জাদু শেখা এবং তদনুযায়ী আমল করা কুফরী। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱتَّبَعُواْ
مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلۡكِ سُلَيۡمَٰنَۖ وَمَا كَفَرَ
سُلَيۡمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ
ٱلسِّحۡرَ﴾ [البقرة: ١٠٢]
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফরী করেন নি; বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত” (বাক্বারাহ ১০২)।
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡجِبۡتِ وَٱلطَّٰغُوتِ﴾ [النساء: ٥١]
“তারা জাদু এবং তাগূতকে বিশ্বাস করে” (নিসা ৫১)। উক্ত আয়াতে الْجِبْتِ (জিব্ত) শব্দের অর্থ হচ্ছে, জাদু। এখানে আল্লাহ জাদুকে তাগূতের সাথে তুলনা করেছেন। সেজন্য তাগূতের প্রতি ঈমান আনা যেমন কুফরী, জাদুকে বিশ্বাস করাও তেমনি কুফরী। মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,
﴿ وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِي ٱلۡعُقَدِ ٤ ﴾ [الفلق: ٤]
“(আশ্রয় প্রার্থনা করছি) গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে” (ফালাক্ব ৪)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ»
“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকো...'। সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তুর মধ্যে তিনি জাদুর কথাও উল্লেখ করেছেন। জুনদুব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, “জাদুকারীর শাস্তি হচ্ছে, তাকে তরবারী দিয়ে আঘাত করতে হবে”। অর্থাৎ মুসলিম সরকার তাকে হত্যা করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عَقَدَ عُقْدَةً ثُمَّ نَفَثَ فِيهَا فَقَدْ سَحَرَ وَمَنْ سَحَرَ فَقَدْ أَشْرَكَ»
“যে গিঁঠ দিল এবং গিরায় ফুঁক দিল, সে জাদু করল। আর যে জাদু করল, সে শির্ক করল” (মুসলিম)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ»
“সেই ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে মন্দের লক্ষণ গ্রহণ করে, বা লক্ষণ বের করায়, অনুরূপভাবে যে ভবিষ্যদ্বাণী করে বা করায় অথবা যে জাদু করে বা করায়” (বাযযার)। ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁর গভর্ণরগণকে নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন যে,
«اقْتُلُوا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ»
“তোমরা প্রত্যেকটি জাদুকর এবং জাদুকরীকে হত্যা কর” (বুখারী)।
প্রশ্ন ৭৫: জাদুকরের কাছে কি কোনো উপকার বা কল্যাণ আছে?
উত্তরঃ জাদুকরের কাছে না আছে কোনো কল্যাণ, আর না আছে কোনো উপকার। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ ﴾ [طه: ٦٩]
“জাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না” (ত্ব-হা ৬৯)।
প্রশ্ন ৭৬: নিজেদের দেহে আঘাত করা, শক্ত কোনো বস্তু খাওয়া ইত্যাদি যেসব কর্মকাণ্ড ভেলকিবাজরা করে থাকে, সেগুলি কি জাদু ও ভেলকিবাজি নাকি বাস্তব ও কারামত?
উত্তরঃ ভেলকিবাজরা এ জাতীয় যেসব কাজ করে থাকে, তা জাদু এবং এর মাধ্যমে মানুষের চোখে জাদু করা হয়। ফলে তারা বাস্তব জিনিসটা আর দেখতে পায় না। যেমনটি মূসা আলাইহিস সালাম-এর সময়ে ঘটেছিল; তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন যে, জাদুকরদের রশিগুলি চলছে, অথচ সত্যিকার অর্থে সেগুলি চলছিল না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ ﴾ [طه: ٦٦]
“তাদের জাদুর প্রভাবে তাঁর মনে হচ্ছিল, যেন সেগুলি (জাদুকরদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো) ছুটাছুটি করছে” (ত্ব-হা ৬৬)। যদি ভেলকিবাজদের নিকটে আয়াতুল কুরসী এবং সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়া হয়, তাহলে আল্লাহ্র ইচ্ছায় জাদু এবং ভেলকিবাজি নষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, কারামত বা অলৌকিক ঘটনা নেককার, তাওহীদপন্থী এবং শির্ক-বিদ‘আত মুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা ঘটা সম্ভব নয়। কোনো মুমিনের কল্যাণার্থে বা তার থেকে অকল্যাণ দূর করার জন্য কারামত ঘটে থাকে। কারামত অর্থ এই নয় যে, সে অন্যান্য মুমিনের চেয়ে উত্তম।
প্রশ্ন ৭৭: চিকিৎসার জন্য জাদুকরের কাছে যাওয়া জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ কোনো অবস্থাতেই জাদুকর বা জাদুকরীর কাছে যাওয়া জায়েয নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু দিয়ে জাদু নষ্ট করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
«هِيَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ»
“এটি হচ্ছে শয়তানের কাজ” (আবূ দাঊদ)।
প্রশ্ন ৭৮: জ্যোতিষী, গণক, ভবিষ্যদ্বক্তা ইত্যাদির কাছে যাওয়া কি বৈধ?
উত্তরঃ তাদের কাছে যাওয়া এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হারাম। এদের থেকে মানুষকে সাবধান করা ওয়াজিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَتَى عَرَّافًا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»
“যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর কাছে আসল এবং তার কথা বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদের উপর অবতীর্ণ বিষয়ের সাথে কুফরী করল” (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)। অন্য হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً»
“যে ব্যক্তি গণকের কাছে আসে এবং তার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার ছালাত কবূল হয় না” (মুসলিম)।
প্রশ্ন ৭৯: জাদুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে বা পরে তা থেকে বাঁচার উপায় কি?
উত্তরঃ সকাল এবং সান্ধ্যকালীন যিকর-আযকারের প্রতি যত্নশীল হওয়া। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তে হবে,
«بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ»
“আল্লাহ্র নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ”। আরো পড়তে হবে,
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»
“আমি আল্লাহ্র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
সন্তান-সন্ততির জন্য এই দো‘আ পড়তে হবে,
«أُعِيذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ»
“আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ্র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা প্রত্যেকটি শয়তান, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ এবং কুনযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
এছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় সূরা এখলাছ, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস তিনবার করে পড়তে হবে। আর রাতে আয়াতুল কুরসী এবং সূরা বাক্বারাহ্র শেষ আয়াত দু’টি পড়তে হবে।
আর জাদুতে আক্রান্ত হলে সাথে সাথে এ মর্মে কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত আয়াত এবং দো‘আসমূহ পড়তে হবে।
প্রশ্ন ৮০: تَعَلَّمُوْا السِّحْرَ وَلاَ تَعْمَلُوْا بِهِ “তোমরা জাদু শিখ, কিন্তু জাদুর প্রতি আমল করো না” উক্ত হাদীসটি কি সহীহ?
উত্তরঃ উক্ত হাদীসটি সহীহ নয়; বরং তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মিথ্যারোপ। তিনি জাদু থেকে সতর্ক করে কিভাবে আবার তা শেখার আহ্বান করতে পারেন?!
প্রশ্ন ৮১: কল্যাণ সাধন বা অকল্যাণ দূরীকরণে তারকারাজির কোনো প্রভাব আছে- এমন বিশ্বাস করা কি জায়েয?
উত্তরঃ এমন বিশ্বাস করা জায়েয নয়। কেননা কল্যাণ সাধনে বা অকল্যাণ দূরীকরণে সেগুলির বিন্দুমাত্র কোনো প্রভাব নেই। বরং এমন বিশ্বাস করা শির্ক। হাদীসে ক্বুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন,
«مَنْ
قَالَ مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِى
وَكَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ وَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا
وَكَذَا. فَذَلِكَ كَافِرٌ بِى مُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ»
“যে ব্যক্তি বলে, আমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ এবং রহমতের কারণে বৃষ্টি প্রাপ্ত হয়েছি, সে ব্যক্তি আমার প্রতি ঈমান আনল এবং তারকারাজির প্রভাব অস্বীকার করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বলল, আমরা অমুক অমুক তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রাপ্ত হয়েছি, সে আমাকে অস্বীকার করল এবং তারকার প্রতি ঈমান আনল” (বুখারী ও মুসলিম)। উল্লেখ্য যে, জাহেলী যুগে মানুষেরা বিশ্বাস করত যে, বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে তারকারাজির প্রভাব রয়েছে।
প্রশ্ন ৮২: ভবিষ্যতে মানুষের যা ঘটবে, সেক্ষেত্রে কি রাশির কোনো প্রভাব থাকে?
উত্তরঃ রাশির কোনো প্রভাব থাকে- এই বিশ্বাস পোষণ করা জায়েয নয়। কেননা অদৃশ্যের বিষয় সম্পূর্ণ আল্লাহ্র সাথে নির্দিষ্ট। এরশাদ হচ্ছে,
﴿ قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ﴾ [النمل: ٦٥]
“বলুন, আল্লাহ ব্যতীত আসমানসমূহ ও যমীনে কেউ গায়েবের খবর জানে না” (নামল ৬৫)। তাছাড়া কল্যাণকারী এবং অকল্যাণ প্রতিহতকারী একমাত্র আল্লাহই। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, রাশিচক্রের কোনো প্রভাব আছে, সে কুফরী করবে।
প্রশ্ন ৮৩: আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালনা করা কি আমাদের উপর ওয়াজিব?
উত্তরঃ সকল মুসলিমের আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালনা করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠ ﴾ [المائدة: ٥٠]
“তারা কি জাহেলী যুগের ফায়ছালা কামনা করে? বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফায়ছালাকারী আর কে?!” (মায়েদাহ ৫০)।
প্রশ্ন ৮৪: যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে বা আল্লাহ্র কোনো আয়াতের সাথে বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অথবা ইসলামের সাথে ঠাট্টা করে, তার হুকুম কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি এগুলির কোনো একটির সাথে ঠাট্টা করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। এরশাদ হচ্ছে,
﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]
“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্র সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করতে? ওযর পেশ করো না, নিশ্চয় তোমরা ঈমান আনয়নের পর কাফের হয়ে গেছ” (তাওবাহ ৬৫-৬৬)।
প্রশ্ন ৮৫: ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’-এর শর্তসমূহ কি কি?
উত্তরঃ ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’-এর শর্ত ৭টি, যথাঃ
১. এই কালিমাটির না-সূচক এবং হ্যাঁ-সূচক দু’টি অর্থই এমনভাবে জানতে হবে যে, মুখে যা উচ্চারিত হবে, অন্তরও তা উপলব্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [محمد: ١٩]
“জেনে রাখো, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই” (মুহাম্মাদ ১৯)। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَلَا يَمۡلِكُ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِهِ ٱلشَّفَٰعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٨٦ ﴾ [الزخرف: ٨٦]
“তিনি ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে, তারা সুপারিশের অধিকারী হবে না। তবে যারা জেনেবুঝে হক্ব স্বীকার করত, (তারা সুপারিশের অধিকারী হবেন)” (যুখরুখ ৮৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ জানা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করল” (মুসলিম)। আর এই কালিমাটির অর্থ হচ্ছে, لاَ مَعْبُوْدَ بِحَقٍّ إِلاَّ الله আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ নেই।
আর ইবাদতের সংজ্ঞা হচ্ছে, আল্লাহ ভালবাসেন এবং সন্তুষ্ট হন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এমন যাবতীয় কথা ও কাজকে ইবাদত বলে।
২. এই কালিমাটির প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে, কোনো প্রকার সন্দেহ-সংশয় থাকা চলবে না। আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّمَا
ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ
يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ
ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥ ﴾ [الحجرات: ١٥]
“মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে নি এবং জান ও মাল দিয়ে আল্লাহ্র পথে জিহাদ করেছে। তারাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ” (হুজুরাত 1৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«أَشْهَدُ
أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّى رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى
اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোনো হক্ব মা’বূদ নেই এবং আমি মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল এবং এই
কালিমা দু’টিতে কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ না করা অবস্থায় আল্লাহ্র সাথে
সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (মুসলিম)।
৩. ইখলাছ থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ﴾ [الزمر: ٣]
“আল্লাহ্র জন্যই শির্কমুক্ত ইবাদত” (যুমার ৩)। তিনি আরো বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]
“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ»
“কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার শাফা‘আত লাভে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে, পরিপূর্ণ ইখলাছের সাথে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ বলেছে” (বুখারী)।
৪. এই কালিমা ও তার উদ্দেশ্যকে ভালবাসতে হবে এবং তাতে খুশী থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنَ
ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ
كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ﴾ [البقرة: ١٦٥]
“আর কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা অন্যান্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষ সাব্যস্ত করে। তাদেরকে তেমনি ভালবাসে, যেমন আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ্র প্রতি তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী” (বাক্বারাহ ১৬৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«ثَلاَثٌ
مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ مَنْ كَانَ اللَّهُ
وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ
لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ
بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى
النَّارِ»
“তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে, সে এগুলোর দ্বারা ঈমানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করবে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ঐ ব্যক্তির নিকটে অন্য সবার চেয়ে প্রিয়তর হবেন। সে কাউকে ভালবাসলে শুধু আল্লাহ্র উদ্দেশ্যেই ভালবাসবে। আর আল্লাহ তাকে কুফরী থেকে রক্ষা করার পর তাতে পুনরায় ফিরে যাওয়াকে তেমন ঘৃণা করবে, যেমন সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ঘৃণা করে” (মুসলিম)।
৫. এই কালিমাকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে, কোনো প্রকার মিথ্যা বা নিফাক্বী থাকা চলবে না। আল্লাহ বলেন,
﴿فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٣ ﴾ [العنكبوت: ٣]
“অতঃপর আল্লাহ্
জেনে নিবেন, (প্রকাশ করে দিবেন) তাদের মধ্যে কারা (তাদের ঈমানের দাবীতে)
সত্যবাদী, আর অবশ্যই জেনে নিবেন (প্রকাশ করে দিবেন) কারা (তাদের ঈমানের
দাবীতে) মিথ্যাবাদী” (আনকাবূত ৩)।
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَٱلَّذِي جَآءَ بِٱلصِّدۡقِ وَصَدَّقَ بِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٣ ﴾ [الزمر: ٣٣]
‘যারা সত্য নিয়ে আগমন করেছে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাইতো আল্লাহভীরু” (যুমার ৩৩)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ
مَاتَ وَهُوَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا
رَسُولُ اللهِ صَادِقًا مِنْ قَلْبِهِ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি মনে-প্রাণে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ-এর সাক্ষ্যের উপর অটল থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (আহমাদ)।
৬. এই কালিমার দাবিসমূহের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে, শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য আমল করে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُۥ مِن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَكُمُ ٱلۡعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ٥٤ ﴾ [الزمر: ٥٤]
“তোমরা তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর। (কারণ) এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না” (যুমার ৫৪)।
তিনি আরো বলেন,
﴿۞وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ﴾ [لقمان: ٢٢]
“যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজেকে আল্লাহ অভিমুখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে” (লুক্বমান ২২)।
৭. এই কালিমাকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে হবে; যাতে তা প্রত্যাখ্যান না করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ ﴾ [الصافات: ٣٥]
“তাদের যখন বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, তখন তারা অহংকার প্রদর্শন করত” (ছফফাত ৩৫)।
প্রশ্ন ৮৬: ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ কয়টি এবং কি কি?
উত্তরঃ ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয় ১০টি, সেগুলি হচ্ছেঃ
১. আল্লাহ্র ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্যকে শরীক করা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّهُۥ
مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ
وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائدة: ٧٢]
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। আর তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। বস্তুতঃ অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই” (মায়েদাহ ৭২)।
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [النساء: ١١٦]
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ শির্কের গোনাহ ক্ষমা করেন না। তিনি শির্ক ব্যতীত অন্য যে কোনো গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন” (নিসা ১১৬)।
শির্কের উদাহরণ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা, তার কাছে সাহায্য চাওয়া, তার জন্য নযর মানা, তার উদ্দেশ্যে কুরবানী করা ইত্যাদি।
২. যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আল্লাহ্র মাঝে অসীলা গ্রহণ করতঃ তাদের সুপারিশ চায় এবং তাদের উপর ভরসা করে, সর্বসম্মতিক্রমে সে কাফের। আল্লাহ বলেন,
﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠ ﴾ [الجن: ٢٠]
“বলুন, আমি তো কেবল আমার পালনকর্তাকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না”। (জিন ২০)।
৩. যে ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফের ভাবে না বা তাদের কুফরীতে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতবাদকে সঠিক মনে করে, সে কাফের হয়ে যায়। কেননা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী।
৪. যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিধান ব্যতীত অন্য কারো বিধান অধিক পরিপূর্ণ অথবা তাঁর ফায়ছালা ব্যতীত অন্য কারো ফায়ছালা অধিক উত্তম, সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। যেমন, আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফায়ছালার উপর তাগূতের ফায়ছালাকে প্রাধান্য দেওয়া।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তার কোনো কিছুকে যে ব্যক্তি ঘৃণা করবে, সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে- যদিও সে ঐ বিষয়ের উপর আমল করে। এরশাদ হচ্ছে,
﴿ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَٰلَهُمۡ ٩ ﴾ [محمد: ٩]
“এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা অপছন্দ করেছে। অতএব, আল্লাহ তাদের আমল নষ্ট করে দিয়েছেন” (মুহাম্মাদ ৯)।
৬. যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে অথবা আখেরাতের সুখ বা শাস্তির কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]
“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্র সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করতে? ওযর পেশ করো না, নিশ্চয় তোমরা ঈমান আনায়নের পর কাফের হয়ে গেছ” (তাওবাহ ৬৫-৬৬)।
৭. জাদু করা। যে ব্যক্তি জাদু করবে বা এর প্রতি খুশী থাকবে, সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱتَّبَعُواْ
مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلۡكِ سُلَيۡمَٰنَۖ وَمَا كَفَرَ
سُلَيۡمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ
ٱلسِّحۡرَ﴾ [البقرة: ١٠٢]
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলাইমান কুফরী করেন নি; বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত” (বাক্বারাহ ১০২)।
৮. মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١ ﴾ [المائدة: ٥١]
“তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না” (মায়েদাহ ৫১)।
৯. যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, কারও পক্ষে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর শরী‘আত থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, যেমনিভাবে খিযির
আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালাম-এর শরী‘আতের বাইরে ছিলেন, সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান ৮৫)।
১০. আল্লাহ্র দ্বীনকে উপেক্ষা করে চলা, দ্বীন না শেখা এবং তদনুযায়ী আমলও না করা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بَِٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعۡرَضَ عَنۡهَآۚ إِنَّا مِنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ٢٢ ﴾ [السجدة: ٢٢]
“ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রভুর আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দান করা হয়, অথচ সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব” (সাজদাহ ২২)।
প্রশ্ন ৮৭: সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ রাসূল কে? নবীগণের পরে সর্বোত্তম মানুষ কে?
উত্তরঃ সর্বপ্রথম রাসূল হলেন, নূহ আলাইহিস সালাম এবং সর্বশেষ রাসূল হলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবীগণের পরে সর্বোত্তম মানুষ হলেন, ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)। তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন, আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর অন্যান্য সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)।
ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) সবাই চার খলীফার খেলাফতে সন্তুষ্ট ছিলেন। ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসতেন। সে কারণে আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তিন খলীফার নামানুসারে তাঁর তিন সন্তানের নাম আবূ বকর, ওমর এবং উছমান রাখেন। যে ব্যক্তি বলে যে, ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের মুমিনগণকে ভালবাসতেন না, সে মিথ্যা বলে।
প্রশ্ন ৮৮: ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর প্রতি আমাদের কর্তব্য কি? তাঁদের কাউকে গালি দেওয়ার হুকুম কি?
উত্তরঃ সকল সাহাবীকে ভালবাসতে হবে, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন; তাঁদের কাউকেই তিনি তাঁর সন্তুষ্টি থেকে বাদ দেন নি। এরশাদ হচ্ছে,
﴿رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ﴾ [المجادلة: ٢٢]
“আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন” (মুজাদালাহ ২২)।
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণকে ভালবাসতে হবে এবং সম্মান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাঁদের কাউকে গালি দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম এবং কাবীরা গোনাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ মুমিনদের মাতা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ﴾ [الاحزاب: ٦]
“তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা” (আহযাব ৬)। আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল স্ত্রী মুমিনদের মাতা; তাঁদের কাউকে এই হুকুম থেকে বাদ দেওয়া হয় নি। ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কে গালি দেওয়া প্রসঙ্গে আবূ সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ»
“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিওনা। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করে, তথাপিও সে তাঁদের কোনো একজনের পূর্ণ এক মুদ্দ([3]) বা অর্ধ মুদ্দ দান সমপরিমাণ পর্যন্তও পৌঁছতে পারবে না” (বুখারী ও মুসলিম)।
প্রশ্ন ৮৯: যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো স্ত্রীকে গালি দেয়, তার শাস্তি কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো স্ত্রীকে গালি দিবে, সে আল্লাহ্র রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে তাঁর ক্রোধে নিপতিত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»
“যে ব্যক্তি আমার সাহাবীদেরকে গালি দিবে, তার উপর আল্লাহ্র, ফেরেশতামণ্ডলীর এবং সকল মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হবে” (ত্ববারানী)। সুতরাং যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো স্ত্রীকে গালি দিবে, তার এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করা উচিৎ।
প্রশ্ন ৯০: আল্লাহ বলেন, ﴿وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا﴾ “আর তারা যখন নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল, তখন যদি তারা আপনার কাছে আসত, অতঃপর আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তওবাহ কবূলকারী এবং মেহেরবানরূপে পেত” (নিসা ৬৪)। উক্ত আয়াত কি প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর কাছ থেকে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করা যাবে?
উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাওয়ার আবেদনের বিষয়টি তাঁর জীবিত অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট; তাঁর মৃত্যুর পরে এটি প্রযোজ্য নয়। একটি সহীহ হাদীসেও প্রমাণিত হয় নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁর কাছ থেকে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দো‘আ এবং ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যদি বেঁচে থাকি, তাহলে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার জন্য দো‘আ করব (বুখারী, নং ৫৬৬৬)। এই হাদীসটি উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের বিষয়টি তাঁর জীবদ্দশার সাথে নির্দিষ্ট; মৃত্যুর পরে নয়।
পরিশেষে বলব, চার ইমাম এবং তাঁদের অনুসারীদের বক্তব্যের আলোকে তাঁদের আক্বীদা সংক্ষিপ্তাকারে সংকলন করা হলো। তাঁদের এই আক্বীদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিক-নির্দেশনার সাথে হুবহু মিলে যায়। সুতরাং হে মুসলিম ভাই ও বোন! আপনি সত্যকে আঁকড়ে ধরুন, এ পথে মানুষকে আহ্বান করুন এবং যাবতীয় শির্ক ও তার উপকরণ থেকে তাদেরকে সতর্ক করুন। সাবধান থাকবেন, যেন নিম্নোক্ত হাদীসটির আওতায় আপনি না পড়ে যান, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَلاَ
تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى
بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى الأَوْثَانَ»
“ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন আমার উম্মতের কিছু লোক মুশরিকদের সাথে যোগ না দিবে এবং যতদিন আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তি পূজা না করবে” (হাদীসটির সনদ সহীহ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছেন, যেন তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর কবরকে দো‘আ করা, সাহায্য প্রার্থনা করা এবং সুপারিশ চাওয়ার স্থান হিসাবে গ্রহণ না করা হয়; যেমনিভাবে কিছু কিছু মূর্খ লোক তাদের নবী-রাসূলের কবরের নিকট করে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«اللَّهُمَّ
لَا تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى
قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»
“হে আল্লাহ! আপনি আমার কবরকে এমন পূজনীয় বস্তুতে পরিণত করবেন না, যার ইবাদত করা হয়। ঐ সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ্র ক্রোধ প্রচণ্ড হয়েছে, যারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করেছে” (মুওয়াত্বা)। চার ইমাম যে হক্বের অনুসরণ করেছেন, তার পরিপন্থী যঈফ এবং মিথ্যা হাদীসসমূহ থেকে হুশিয়ার থাকবেন।
মহান আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল সাহাবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আমীন!
সূচীপত্র
| |
প্রশ্নাবলী
|
পৃষ্ঠা
|
অনুবাদকের কথা
| |
ভূমিকা
| |
প্রশ্ন ১: আপনার রব কে?
| |
প্রশ্ন ২: রব অর্থ কি?
| |
প্রশ্ন ৩: আল্লাহ মানে কি?
| |
প্রশ্ন ৪: আল্লাহ কোথায়?
| |
প্রশ্ন ৫: আপনি কিভাবে আপনার প্রভুকে চিনেন?
| |
প্রশ্ন ৬: আল্লাহ আপনাকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
| |
প্রশ্ন ৭: আল্লাহ্র সাথে কৃত সবচেয়ে বড় পাপ কোন্টি?
| |
প্রশ্ন ৮: ইবাদত অর্থ কি?
| |
প্রশ্ন ৯: দো‘আ কি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত?
| |
প্রশ্ন ১০: আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর সর্বপ্রথম কোন্ বিষয়টি ফরয করেছেন?
| |
প্রশ্ন ১১: আপনার দ্বীন কোন্টি?
| |
প্রশ্ন ১২: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল’- একথার সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ কি?
| |
প্রশ্ন ১৩: ছালাত, যাকাত, ছিয়াম এবং হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল কি?
| |
প্রশ্ন ১৪: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম কি গৃহীত হবে?
| |
প্রশ্ন ১৫: 'আন্তঃধর্মীয় ঐক্য (وحدة الأديان)' মতবাদ জায়েয কি?
| |
প্রশ্ন ১৬: ঈমানের রুকন কয়টি ও কি কি?
| |
প্রশ্ন ১৭: ঈমানের এই ৬টি মূলনীতির দাবী কি?
| |
প্রশ্ন ১৮: কবরে সুখ-শান্তির বিষয়টি কি কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
| |
প্রশ্ন ১৯: কুরআন কি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত নাকি আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট?
| |
প্রশ্ন ২০: আমল ছাড়া ঈমান কি কোনো কাজে আসবে?
| |
প্রশ্ন ২১: 'ইহ্সান' কাকে বলে?
| |
প্রশ্ন ২২: একজন মুমিনের আমল কখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়?
| |
প্রশ্ন ২৩: মানুষ কি বাধ্যগত জীব নাকি স্বাধীন?
| |
প্রশ্ন ২৪: তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?
| |
প্রশ্ন ২৫: নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়েরমধ্যবর্তী বস্তুসমূহ কে পরিচালনা করেন?
| |
প্রশ্ন ২৬: কোনো ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করে, সমস্ত পৃথিবী চারটি মেরু বা চারটি মূল শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে আমরা তার ব্যাপারে কি বলতে পারি?
| |
প্রশ্ন ২৭: আপনার নবী কে?
| |
প্রশ্ন ২৮: অলী-আওলিয়ারা কি গায়েবের খবর জানেন? তারা কি মৃতকে জীবিত করতে পারেন?
| |
প্রশ্ন ২৯: ঈসা আলাইহিস সালাম মৃতদেরকে জীবিত করতে পারতেন এবং মানুষেরা তাদের বাড়িতে যা কিছু সঞ্চয় করত, তা জানতেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে অন্যান্য আউলিয়াদের দ্বারা কি এমনটি সম্ভব?
| |
প্রশ্ন ৩০: আল্লাহ্র অলী হওয়ার বিষয়টি কি শুধু কতিপয় মুমিনের সাথে নির্দিষ্ট নাকি সকল মুমিনের ক্ষেত্রেই তা সম্ভব?
| |
প্রশ্ন ৩১: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾ “মনে রেখো, যারা আল্লাহ্র অলী, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না” (ইউনুস ৬২)। উক্ত আয়াত কি অলী-আউলিয়াদের নিকট প্রার্থনা করার বৈধতা নির্দেশ করে?
| |
প্রশ্ন ৩২: মুমিনগণ জান্নাতে তাঁদের প্রতিপালককে দেখতে পাবেন কি?
| |
প্রশ্ন ৩৩: নবী-রাসূল বাদে আল্লাহ্র অন্যান্য অলী-আউলিয়া কি ছগীরা এবং কাবীরা গোনাহে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত?
| |
প্রশ্ন ৩৫: শির্ক কত প্রকার?
| |
প্রশ্ন ৩৬: মৃত ব্যক্তিরা কি শ্রবণ করে এবং আহ্বান কারীর আহ্বানে সাড়া দেয়?
| |
প্রশ্ন ৩৭: মূর্খ ব্যক্তিরা যেসব কবরবাসীকে সম্মান করে, তাদের কবরে মাঝে মাঝে কিসের শব্দ শোনা যায়?
| |
প্রশ্ন ৩৮: আল্লাহ্র অলী-আউলিয়া এবং অন্যান্য মৃতব্যক্তি কি কোনো সাহায্য প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেন?
| |
প্রশ্ন ৩৯: আল্লাহ বলেন, ﴿وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ﴾ “আর যারা আল্লাহ্র রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা তাদের পালনকর্তার নিকট জীবিত এবং রিযিক্বপ্রাপ্ত” (আলে ইমরান ১৬৯)। উক্ত আয়াতে বর্ণিত 'আহ্ইয়া' (أَحْيَاءٌ) শব্দের অর্থ কি?
| |
প্রশ্ন ৪০: নাম রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে আরবী 'আবদ' শব্দের সম্বন্ধ যেমনঃ আব্দুন্নবী, আব্দুল হুসাইন ইত্যাদি বৈধ কি?
| |
প্রশ্ন ৪১: হিংসা ও বদ নযর প্রতিরোধের জন্য বালা, সূতা ইত্যাদি হাতে, গলায় বা যানবাহনে ঝুলিয়ে রাখার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৪২: মাটি, পাথর বা গাছ-গাছালির মাধ্যমে বরকত কামনা করা জায়েয আছে কি?
| |
প্রশ্ন ৪৩: কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ ব্যতীত তার নামে যবেহ করার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৪৪: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য মানত করার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৪৫: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় চাওয়ার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৪৬: (কোনো স্থানে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ইত্যাদির ভয় থাকলে) সেখানে অবস্থান গ্রহণের দো‘আ কি?
| |
প্রশ্ন ৪৭: কল্যাণ সাধন, অনিষ্ট দূরীকরণ সহ যেসব বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সহযোগিতা করতে সক্ষম নয়, সেসব বিষয়ে অন্য কারো কাছে সহযোগিতা চাওয়া যাবে কি?
| |
প্রশ্ন ৪৮: মুনাফেক্বী কত প্রকার?
| |
প্রশ্ন ৪৯: কুফরী কত প্রকার?
| |
প্রশ্ন ৫০: শাফা'আত কত প্রকার?
| |
প্রশ্ন ৫১: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু কিয়ামতের দিন শাফা'আত করবেন, সেহেতু তাঁর কাছে কি শাফা'আত চাওয়া যাবে?
| |
প্রশ্ন ৫২: অসীলা কত প্রকার?
| |
প্রশ্ন ৫৩: ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত কয়টি ও কি কি?
| |
প্রশ্ন ৫৪: কোনো আমল ছাড়াই নিয়্যত বিশুদ্ধ হওয়া কি যথেষ্ট?
| |
প্রশ্ন ৫৫: পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত কত প্রকার?
| |
প্রশ্ন ৫৬: কবর যিয়ারতের সময় কোন্ দো‘আ পড়তে হয়?
| |
প্রশ্ন ৫৭: নেককার লোকের কবরের নিকট আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৫৮: আল্লাহ্র কাছে কোনো কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৫৯: কা'বা ছাড়া অন্য কিছুকে ত্বওয়াফ করা কি বৈধ?
| |
প্রশ্ন ৬০: হাদীসে বর্ণিত তিন মসজিদ ছাড়া ইবাদতের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো স্থানে সফর করার বিধান কি?
| |
প্রশ্ন ৬১: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারত সংক্রান্ত হাদীসগুলি কি সহীহ?
| |
প্রশ্ন ৬২: নেককার লোকদের পুরাতত্ত্ব ও নিদর্শনাবলী অনুসন্ধান করা এবং সেগুলির মাধ্যমে বরকত কামনা করা কি ইবাদত নাকি বিদ‘আত?
| |
প্রশ্ন ৬৩: কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা যাবে কি?
| |
প্রশ্ন ৬৪: অন্যায়-অপকর্ম করার কারণে কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে ‘কাফের’ বলা যাবে কি?
| |
প্রশ্ন ৬৫: বান্দার কাজ-কর্ম কি আল্লাহ্র সৃষ্টি?
| |
প্রশ্ন ৬৬: মসজিদের ভেতরে মৃত দাফন করা অথবা কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ করা কি জায়েয?
| |
প্রশ্ন ৬৭: কবরের উপর ভবন নির্মাণ করার বিধান কি?
| |
প্রশ্ন ৬৮: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শুরুতেই কি মসজিদের ভেতরে দাফন করা হয়েছিল?
| |
প্রশ্ন ৬৯: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর কবরে জীবিত আছেন? মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে কি তিনি উপস্থিত হন?
| |
প্রশ্ন ৭০: বিদ‘আত কাকে বলে ও কত প্রকার? প্রত্যেক প্রকারের হুকুম কি? ইসলামে ‘উত্তম বিদ‘আত’ বলে কিছু আছে কি?
| |
প্রশ্ন ৭১: যদি কেউ প্রশ্ন করে, তাহলে নীচের হাদীসটির অর্থ কি? 'যে ব্যক্তি উত্তম সুন্নাত চালু করলো, সে উক্ত সুন্নাতের এবং উক্ত সুন্নাত বাস্তবায়নকারীর নেকী পাবে'।
| |
প্রশ্ন ৭২: ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তারাবীহ্র ছালাত সম্পর্কে বলেছেন, «نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ» ‘এটি উত্তম বিদ‘আত’। আর উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর খেলাফতকালে জুম'আর দ্বিতীয় আযান চালু হয়। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে উক্ত বিষয় দু'টির ব্যাখ্যা কি?
| |
প্রশ্ন ৭৩: মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপন করা সুন্নাত নাকি বিদ‘আত?
| |
প্রশ্ন ৭৪: জাদু শেখা এবং তদ্নুযায়ী আমল করার বিধান কি?
| |
প্রশ্ন ৭৫: জাদুকরের কাছে কি কোনো উপকার বা কল্যাণ আছে?
| |
প্রশ্ন ৭৬: নিজেদের দেহে আঘাত করা, শক্ত কোনো বস্তু খাওয়া ইত্যাদি যেসব কর্মকাণ্ড ভেলকিবাজরা দেখিয়ে থাকে, সেগুলি কি জাদু ও ভেলকিবাজি নাকি বাস্তব ও কারামত?
| |
প্রশ্ন ৭৭: চিকিৎসার জন্য জাদুকরের কাছে যাওয়া জায়েয আছে কি?
| |
প্রশ্ন ৭৮: জ্যোতিষী, গণক, ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে যাওয়া কি বৈধ?
| |
প্রশ্ন ৭৯: জাদু লাগার আগে বা পরে এর প্রতিষেধক কি?
| |
প্রশ্ন ৮০: “তোমরা জাদু শিখ, কিন্তু জাদুর প্রতি আমল করো না”- উক্ত হাদীসটি কি সহীহ?
| |
প্রশ্ন ৮১: কল্যাণ সাধনে বা অকল্যাণ দূরীকরণে তারকারাজির কোনো প্রভাব আছে- একথা বিশ্বাস করা কি জায়েয?
| |
প্রশ্ন ৮২: ভবিষ্যতে মানুষের যা ঘটবে, সেক্ষেত্রে কি রাশির কোনো প্রভাব থাকে?
| |
প্রশ্ন ৮৩: আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালনা করা কি আমাদের উপর ওয়াজিব?
| |
প্রশ্ন ৮৪: যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে বা আল্লাহ্র কোনো আয়াতের সাথে বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অথবা ইসলামের সাথে ঠাট্টা করে, তার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৮৫: ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’-এর শর্তসমূহ কি কি?
| |
প্রশ্ন ৮৬: ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ কয়টি এবং কি কি?
| |
প্রশ্ন ৮৭: সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ রাসূল কে? নবীগণের পরে সর্বোত্তম মানুষ কে?
| |
প্রশ্ন ৮৮: ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর প্রতি আমাদের কর্তব্য কি? তাঁদের কাউকে গালি দেওয়ার হুকুম কি?
| |
প্রশ্ন ৮৯: যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো স্ত্রীকে গালি দেয়, তার শাস্তি কি?
| |
প্রশ্ন ৯০: সূরা নিসার ৬৪ নং আয়াত কি প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর কাছ থেকে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করা যাবে?
| |
সূচীপত্র
|
[1] অর্থাৎ
কোনো কিছুকে তার সীমা অতিক্রম করে স্রষ্টার স্থানে পৌঁছে দেওয়া। সেটা
কয়েকভাবে হতে পারে, সে বস্তুর ইবাদতের মাধ্যমে, অথবা সেটার অনুসরণের
ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুসরণের কাছে নিয়ে যাওয়া, অথবা সেটার আনুগত্য করার
ক্ষেত্রে এমনভাবে আনুগত্য করা যে, সেটা আল্লাহর আনুগত্যের পর্যায়ে চলে
যায়।
তবে সে বস্তুটি তাগুত হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে সে ঐ ইবাদতে, কিংবা আনুগত্যে অথবা অনুসরণে রাযী-খুশী থাকা।
[2] অন্য
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোগলখোর ও
পেশাব থেকে যে বেঁচে থাকত না তার সম্পর্কে বলেন, তারা দু’জন আযাব প্রাপ্ত
হচ্ছে, (অর্থাৎ কবরে) তবে তারা বড় কোনো কিছুতে আযাব পাচ্ছে না। তাদের একজন
পেশাব থেকে বেঁচে থাকতো না, অপরজন চোগলখুরী করত। [বুখারী]
([3]) ‘মুদ্দ’ হল এক ‘সা‘-এর চার ভাগের এক ভাগ । অর্থাৎ চার মুদ্দে হয় এক ‘ছা’। গ্রামের হিসাবে প্রায় ৬২৫ গ্রাম। -অনুবাদক
তবে সম্ভবত, বেশি বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, এক মুদ বর্তমান ওজনে ৫১০ গ্রাম পরিমান। -সম্পাদক।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: একদল বিজ্ঞ আলেম
অনুবাদক: আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
0 Comments