ইবনু 'উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-র প্রত্যেক
স্বাধীন-পরাধীন (দাস) এবং পুরুষ ও নারীর উপর সদাকাতুল ফিত্র হিসাবে এক সা 'যব অথবা এক সা' খেজুর নির্ধারণ করেছেন। [1]
আবদুল্লাহ) ইবনু 'উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বেই সদাকাতুল ফিত্র আদায় করার নির্দেশ দেন ।
[ঈদুল ফিতরের সলাতের জন্য বের হবার পূর্বেই ফিতরা বণ্টন শেষ করতে হবে । ইবনু আববাস হতে বর্ণিত। যাকাতুল ফিতর যে সলাতের পূর্বে আদায় করবে সেটা মাকবূল বা গ্রহণযোগ্য । আর যে সলাতের পরে আদায় করবে সেটি সাধারণ সদাকাহর মত ]। [2]
(সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্য থেকে এক সা 'পরিমাণ ফিতরা দিতে হবে। এটাই বিভিন্ন সহীহ হাদীসের দাবী এবং নাবী (সাঃ) ও 4 খলীফাহর যুগের বাস্তব আমল। মু'আবিয়া (রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে যখন আসলেন এবং সেখানে গম আমদানী হল তখন তিনি বললেন, আমার মতে গমের এক মুদ (অন্য বস্তুর) দু 'মুদের সমান। তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে। فعدل الناس إلى نصف صاع من بر অর্থাৎ লোকেরা গমের অর্ধ সা ' এর সাথে অন্য বস্তুর এক সা 'এর সমান হিসাব করলেন। তএব বুঝা গেল এক সা 'খেজুর, কিসমিস, পনির, যব এবং অন্য খাদ্য দ্রব্যের যে মূল্য ছিল সে পরিমাণ মূল্য ছিল অর্ধ সা ' গমের। সে কারণে মু'আবিয়া (রাঃ) অর্ধ সা 'ফিতরাহ আদায়ের ফাতাওয়া দিলেন। কিন্তু সহাবীদের অধিকাংশই তাঁর প্রতিবাদ করেছেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) প্রতিবাদ করে বললেনঃ فأما أنا فلا أزال أخرجه كما كنت أخرجه أبدا ما عشت رواه مسلم আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সর্বদা ঐভাবেই ফিতরা আদায় করব যেভাবে আগে আদায় ক তাম (মুসলিম 1 ম খন্ড 318 পৃষ্ঠা) ইমাম হাকিম ও ইবনু খুজাইমাহ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে , عن عياض بن عبد الله بن سعد بن أبي سريح قال । قال أبو سعيد و ذكر عنده صدقة الفطر فقال : لا أخرج إلا ما كنت أخرجه على عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم صاعا من تمر أو صاعا من حنطة أو صاعا من شعير أو صاعا من إقط فقال له رجل من القوم : أو مدين من قمح فقال: لا تلك قيمة معاوية لا أقبلها و لا أعمل بها 'আইয়ায বিন' আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, তার নিকট রামাযানের সদাকাহ স ম্পর্কে বর্ণনা করা হলে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানায় যে পরিমাণ সদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম তা ব্যতীত অন্যভাবে বের করব না । এক সা 'খেজুর, এক সা' গম, এক সা 'যব ও এক সা' পনির। কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করল, গমের দু 'মুদ দ্বারা কি আদায় হবে না? তিনি বললেন, না। এটা মু'আবিয়া (রাঃ) -এর মনগড়া নির্ধারিত। আমি সেটা গ্রহণও করব না বাস্তবায়নও করব না। (ফাতহুল বারী 3 য় খন্ড 437 পৃষ্ঠা) ইমাম নাববী (রহঃ) বলেন, যারা মু'আবিয়ার কথা মত গমের দু 'মুদ আদায় করাকে গ্রহণ করেছে তাতে ত্রুটি রয়েছে। কেননা এ ব্যাপারে সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবাগণ বিরোধিতা করেছেন যাঁরা দীর্ঘ সময় নাবী (সাঃ) এর সাথে ছিলেন এবং তাঁরা নাবী (সাঃ) এর অবস্থা সম্পর্কে অধিক অবগত ছিলেন। মু'আবিয়া (রাঃ) নিজের রায় দ্বারা মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি নাবী (সাঃ) হতে শুনে বলেননি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) -এর হাদীসে ইত্তিবাহ ও সুন্নাত গ্রহণের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । (ফাতহুল বারী 3 য় খন্ড 438 পৃষ্ঠা, মুসলিম শরহে নাববী 1 ম খন্ড 317-318 পৃষ্ঠা, শরহুল মুহাযযাব ইমাম নাববী) ইমাম শাফিয়ী, আহমাদ, ইসহাক এক সা 'ফিতরায় হাদীস প্রমাণ পেশ করেন। কেননা নাবী (সাঃ) সদাকাতুল ফিতর খাদ্যদ্রব্যের এক সা 'আদায় করা ফরয করেছেন। আর গম হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যেরই একটি। অতএব এক সা 'ব্যতীত ফিতরা আদায় বৈধ হবে না। আর আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ), আবুল আলিয়া, আবুশ শা'সআ, হাসান বাসরী, জাবির বিন যায়িদ, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও ইসহাক (রহ।) প্রমুখ এ দলীল গ্রহণ করেছেন। নাইলুল আওতারে এভাবেই রয়েছে। তাতে আরো রয়েছে গম ও অন্য খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে না । আর যারা অর্ধ সা 'গমের কথা যে হাদীসগুলির দ্বারা বলে তা সম্পূর্ণ যঈফ । (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী 3 য় খন্ড ২80-২81 পৃষ্ঠা) এ বিষয়ে সকল হাদীস পর্যালোচনা করে দেখা যায় মু'আবিয়া (রাঃ) যখন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, হাজ্জ মৌসুমে হাজ্জ করে যখন লোকদের সাথে কথা বললেন তখন জানতে পারলেন শাম বা সিরিয়ার এক মুদ গমের যে দাম হিজাযের দু 'মুদ খেজুর, কিসমিস ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের একই দাম অথবা যখন হিজাযে গম আমদানী হল তখন দেখা গেল এক সা ' খেজুর বা কিসমিসের মূল্য অর্ধ সা 'গমের মূল্ যের সমান। তাই মু'আবিয়া (রাঃ) দামের দিক দিয়ে সমান করে দুই মুদ বা অর্ধ সা 'গম আদায়ের কথা বলেন এবং সাহাবাদের প্রতিবাদের মুখে পড়েন । বর্তমানে যদি কেউ মু'আবিয়া (রাঃ) -এর কথা মানতে চায় তাহলে তার কথাকে বর্তমান সময়ের দ্রব্যমূল্যের সাথে তুলনা করে মানতে হবে । মাক্কাহ মাদীনার পরিমাপ হিসাবে এক সা'-এর ওজন হয় বর্তমানে দুই কেজি একশত বাহাত্তর গ্রাম । যদি নিম্ন মানের খেজুরের দাম ধরা হয় তাহলে 30 টাকা দরে দুই কেজি একশত বাহাত্তর গ্রাম খেজুরের মূল্য আসে 65 টাকা। যেহেতু মু'আবিয়া (রাঃ) -এর সময় খেজুরের তুলনায় গমের দাম বেশী ছিল তাই অর্ধ সা 'আদায় করার কথা তিনি বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে গমের দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হলে 65 টাকার গম দিতে হবে। বর্তমানে প্রতি কেজি গমের মূল্য 10 টাকা ধরলে মাথাপিছু সাড়ে ছয় কেজি গম দিতে ফিতরা আদায় করতে হবে । নচেৎ নাবী (সাঃ) যে এক সা'র (২.17২ কেজির) কথা বলেছেন সেই পরিমাণ আপন আপন খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আদায় করতে হবে । রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানায় দীনার, দিরহাম ইত্যাদি মুদ্রা চালু ছিল। কিন্তু দীনার দিরহামের দ্বারা অর্থাৎ আমাদের যামানায় প্রচলিত টাকা পয়সার দ্বারা যাকাতুল ফিতর আদায় করার প্রমাণ কোন হাদীসেই পাওয়া যায় না । তাঁরা তাঁদের খাদ্যবস্তু দিয়েই ফিতরা আদায় করতেন। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর এ ব্যবস্থাপনায় বহুবিধ কল্যাণ নিহিত আছে। ফিতরাহ দানকারী যখন ফিতরার খাদ্যবস্তু কিনে তখন বিক্রেতা উপকৃত হয় । ফিতরাহ গ্রহণকারী খাদ্যবস্তু বিক্রি করে দিলে ফিতরাহ গ্রহণ করে না এমন সব গরীব ক্রেতা উপকৃত হয় । )
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযাদারের অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণের কাফ্ফারাস্বরূপ এবং গরীব -মিসকীনদের আহারের সংস্থান করার জন্য সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পূর্বে তা পরিশোধ করে (আল্লাহর নিকট) - তা গ্রহণীয় দান। আর যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর তা পরিশোধ করে , তাও দানসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি দান। [3]
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা 'খাদ্য (গম) বা এক সা' খেজুর বা এক সা 'যব বা এক সা' পনির অথবা এক সা 'কিসমিস দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুয়াবিয়া (রাঃ) মাদ্বীনাহ্য় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকেদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন , আমি শাম দেশের উত্তম গমের দু 'মুদ্দ পরিমাণকে এখানকার এক সা'র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিলো। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ঐ হিসাবেই সদকাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাবো , যে হিসাবে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে তা পরিশোধ করতাম । [4]
[1] সহীহুল বুখারী 1503, 1504, 1507, 1511, 151২, মুসলিম 984, তিরমিযী 675, 676, নাসায়ী ২500, ২501, ২50২, ২503, ২504, ২505, ২516, আবূ দাউদ 1611, 1613, 1614, আহমাদ 447২, 515২, 5২81, 5317, 5747, 5906, 6179, মুয়াত্তা মালেক 6২7, দারেমী 1661, 166২, সহীহ আবী দাউদ 14২8-143২, ইরওয়াহ 83২, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] সহীহ বুখারী (তাওহীদ), 15 03, 1509 (আধুনিক প্রকাশনীঃ 141২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ 1418)
(আবূ দাউদ হাঃ 1609, ইবনু মাজাহ হাঃ 18২7, দারাকুতনী, হাকিম, বাইহাকী, বুলূগুল মারাম- সদাকাতুল ফিতর অধ্যায়) হাদিসের মানঃ সহিহ
[3] সুনানে ইবনে মাজাহ, 18২7
আবূ দাউদ 1609, বায়হাকী 4/197, ইরওয়াহ 843, সহীহ আবী দাউদ 14২7.তাহকীক আলবানীঃ হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান
[4] সহীহুল বুখারী 1505, 1506, 1508, 1510, মুসলিম 985, তিরমিযী 673, নাসায়ী ২511, ২51২, ২513, ২514, ২517, ২518, আবূ দাউদ 1616 1618, আহমাদ 10798, 11301, 115২২, দারেমী 1663 , 1664, সহীহ আবী দাউদ 1433, ইরওয়াহ 3/337, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ্। হাদিসের মানঃ সহিহ
সূরা আল হাশর: 7 - রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মুহাম্মদ: 33 - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।
আবদুল্লাহ) ইবনু 'উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বেই সদাকাতুল ফিত্র আদায় করার নির্দেশ দেন ।
[ঈদুল ফিতরের সলাতের জন্য বের হবার পূর্বেই ফিতরা বণ্টন শেষ করতে হবে । ইবনু আববাস হতে বর্ণিত। যাকাতুল ফিতর যে সলাতের পূর্বে আদায় করবে সেটা মাকবূল বা গ্রহণযোগ্য । আর যে সলাতের পরে আদায় করবে সেটি সাধারণ সদাকাহর মত ]। [2]
(সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্য থেকে এক সা 'পরিমাণ ফিতরা দিতে হবে। এটাই বিভিন্ন সহীহ হাদীসের দাবী এবং নাবী (সাঃ) ও 4 খলীফাহর যুগের বাস্তব আমল। মু'আবিয়া (রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে যখন আসলেন এবং সেখানে গম আমদানী হল তখন তিনি বললেন, আমার মতে গমের এক মুদ (অন্য বস্তুর) দু 'মুদের সমান। তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে। فعدل الناس إلى نصف صاع من بر অর্থাৎ লোকেরা গমের অর্ধ সা ' এর সাথে অন্য বস্তুর এক সা 'এর সমান হিসাব করলেন। তএব বুঝা গেল এক সা 'খেজুর, কিসমিস, পনির, যব এবং অন্য খাদ্য দ্রব্যের যে মূল্য ছিল সে পরিমাণ মূল্য ছিল অর্ধ সা ' গমের। সে কারণে মু'আবিয়া (রাঃ) অর্ধ সা 'ফিতরাহ আদায়ের ফাতাওয়া দিলেন। কিন্তু সহাবীদের অধিকাংশই তাঁর প্রতিবাদ করেছেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) প্রতিবাদ করে বললেনঃ فأما أنا فلا أزال أخرجه كما كنت أخرجه أبدا ما عشت رواه مسلم আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সর্বদা ঐভাবেই ফিতরা আদায় করব যেভাবে আগে আদায় ক তাম (মুসলিম 1 ম খন্ড 318 পৃষ্ঠা) ইমাম হাকিম ও ইবনু খুজাইমাহ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে , عن عياض بن عبد الله بن سعد بن أبي سريح قال । قال أبو سعيد و ذكر عنده صدقة الفطر فقال : لا أخرج إلا ما كنت أخرجه على عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم صاعا من تمر أو صاعا من حنطة أو صاعا من شعير أو صاعا من إقط فقال له رجل من القوم : أو مدين من قمح فقال: لا تلك قيمة معاوية لا أقبلها و لا أعمل بها 'আইয়ায বিন' আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, তার নিকট রামাযানের সদাকাহ স ম্পর্কে বর্ণনা করা হলে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানায় যে পরিমাণ সদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম তা ব্যতীত অন্যভাবে বের করব না । এক সা 'খেজুর, এক সা' গম, এক সা 'যব ও এক সা' পনির। কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করল, গমের দু 'মুদ দ্বারা কি আদায় হবে না? তিনি বললেন, না। এটা মু'আবিয়া (রাঃ) -এর মনগড়া নির্ধারিত। আমি সেটা গ্রহণও করব না বাস্তবায়নও করব না। (ফাতহুল বারী 3 য় খন্ড 437 পৃষ্ঠা) ইমাম নাববী (রহঃ) বলেন, যারা মু'আবিয়ার কথা মত গমের দু 'মুদ আদায় করাকে গ্রহণ করেছে তাতে ত্রুটি রয়েছে। কেননা এ ব্যাপারে সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবাগণ বিরোধিতা করেছেন যাঁরা দীর্ঘ সময় নাবী (সাঃ) এর সাথে ছিলেন এবং তাঁরা নাবী (সাঃ) এর অবস্থা সম্পর্কে অধিক অবগত ছিলেন। মু'আবিয়া (রাঃ) নিজের রায় দ্বারা মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি নাবী (সাঃ) হতে শুনে বলেননি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) -এর হাদীসে ইত্তিবাহ ও সুন্নাত গ্রহণের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । (ফাতহুল বারী 3 য় খন্ড 438 পৃষ্ঠা, মুসলিম শরহে নাববী 1 ম খন্ড 317-318 পৃষ্ঠা, শরহুল মুহাযযাব ইমাম নাববী) ইমাম শাফিয়ী, আহমাদ, ইসহাক এক সা 'ফিতরায় হাদীস প্রমাণ পেশ করেন। কেননা নাবী (সাঃ) সদাকাতুল ফিতর খাদ্যদ্রব্যের এক সা 'আদায় করা ফরয করেছেন। আর গম হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যেরই একটি। অতএব এক সা 'ব্যতীত ফিতরা আদায় বৈধ হবে না। আর আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ), আবুল আলিয়া, আবুশ শা'সআ, হাসান বাসরী, জাবির বিন যায়িদ, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও ইসহাক (রহ।) প্রমুখ এ দলীল গ্রহণ করেছেন। নাইলুল আওতারে এভাবেই রয়েছে। তাতে আরো রয়েছে গম ও অন্য খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে না । আর যারা অর্ধ সা 'গমের কথা যে হাদীসগুলির দ্বারা বলে তা সম্পূর্ণ যঈফ । (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী 3 য় খন্ড ২80-২81 পৃষ্ঠা) এ বিষয়ে সকল হাদীস পর্যালোচনা করে দেখা যায় মু'আবিয়া (রাঃ) যখন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, হাজ্জ মৌসুমে হাজ্জ করে যখন লোকদের সাথে কথা বললেন তখন জানতে পারলেন শাম বা সিরিয়ার এক মুদ গমের যে দাম হিজাযের দু 'মুদ খেজুর, কিসমিস ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের একই দাম অথবা যখন হিজাযে গম আমদানী হল তখন দেখা গেল এক সা ' খেজুর বা কিসমিসের মূল্য অর্ধ সা 'গমের মূল্ যের সমান। তাই মু'আবিয়া (রাঃ) দামের দিক দিয়ে সমান করে দুই মুদ বা অর্ধ সা 'গম আদায়ের কথা বলেন এবং সাহাবাদের প্রতিবাদের মুখে পড়েন । বর্তমানে যদি কেউ মু'আবিয়া (রাঃ) -এর কথা মানতে চায় তাহলে তার কথাকে বর্তমান সময়ের দ্রব্যমূল্যের সাথে তুলনা করে মানতে হবে । মাক্কাহ মাদীনার পরিমাপ হিসাবে এক সা'-এর ওজন হয় বর্তমানে দুই কেজি একশত বাহাত্তর গ্রাম । যদি নিম্ন মানের খেজুরের দাম ধরা হয় তাহলে 30 টাকা দরে দুই কেজি একশত বাহাত্তর গ্রাম খেজুরের মূল্য আসে 65 টাকা। যেহেতু মু'আবিয়া (রাঃ) -এর সময় খেজুরের তুলনায় গমের দাম বেশী ছিল তাই অর্ধ সা 'আদায় করার কথা তিনি বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে গমের দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হলে 65 টাকার গম দিতে হবে। বর্তমানে প্রতি কেজি গমের মূল্য 10 টাকা ধরলে মাথাপিছু সাড়ে ছয় কেজি গম দিতে ফিতরা আদায় করতে হবে । নচেৎ নাবী (সাঃ) যে এক সা'র (২.17২ কেজির) কথা বলেছেন সেই পরিমাণ আপন আপন খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আদায় করতে হবে । রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানায় দীনার, দিরহাম ইত্যাদি মুদ্রা চালু ছিল। কিন্তু দীনার দিরহামের দ্বারা অর্থাৎ আমাদের যামানায় প্রচলিত টাকা পয়সার দ্বারা যাকাতুল ফিতর আদায় করার প্রমাণ কোন হাদীসেই পাওয়া যায় না । তাঁরা তাঁদের খাদ্যবস্তু দিয়েই ফিতরা আদায় করতেন। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর এ ব্যবস্থাপনায় বহুবিধ কল্যাণ নিহিত আছে। ফিতরাহ দানকারী যখন ফিতরার খাদ্যবস্তু কিনে তখন বিক্রেতা উপকৃত হয় । ফিতরাহ গ্রহণকারী খাদ্যবস্তু বিক্রি করে দিলে ফিতরাহ গ্রহণ করে না এমন সব গরীব ক্রেতা উপকৃত হয় । )
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযাদারের অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণের কাফ্ফারাস্বরূপ এবং গরীব -মিসকীনদের আহারের সংস্থান করার জন্য সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পূর্বে তা পরিশোধ করে (আল্লাহর নিকট) - তা গ্রহণীয় দান। আর যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর তা পরিশোধ করে , তাও দানসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি দান। [3]
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা 'খাদ্য (গম) বা এক সা' খেজুর বা এক সা 'যব বা এক সা' পনির অথবা এক সা 'কিসমিস দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুয়াবিয়া (রাঃ) মাদ্বীনাহ্য় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকেদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন , আমি শাম দেশের উত্তম গমের দু 'মুদ্দ পরিমাণকে এখানকার এক সা'র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিলো। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ঐ হিসাবেই সদকাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাবো , যে হিসাবে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে তা পরিশোধ করতাম । [4]
[1] সহীহুল বুখারী 1503, 1504, 1507, 1511, 151২, মুসলিম 984, তিরমিযী 675, 676, নাসায়ী ২500, ২501, ২50২, ২503, ২504, ২505, ২516, আবূ দাউদ 1611, 1613, 1614, আহমাদ 447২, 515২, 5২81, 5317, 5747, 5906, 6179, মুয়াত্তা মালেক 6২7, দারেমী 1661, 166২, সহীহ আবী দাউদ 14২8-143২, ইরওয়াহ 83২, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] সহীহ বুখারী (তাওহীদ), 15 03, 1509 (আধুনিক প্রকাশনীঃ 141২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ 1418)
(আবূ দাউদ হাঃ 1609, ইবনু মাজাহ হাঃ 18২7, দারাকুতনী, হাকিম, বাইহাকী, বুলূগুল মারাম- সদাকাতুল ফিতর অধ্যায়) হাদিসের মানঃ সহিহ
[3] সুনানে ইবনে মাজাহ, 18২7
আবূ দাউদ 1609, বায়হাকী 4/197, ইরওয়াহ 843, সহীহ আবী দাউদ 14২7.তাহকীক আলবানীঃ হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান
[4] সহীহুল বুখারী 1505, 1506, 1508, 1510, মুসলিম 985, তিরমিযী 673, নাসায়ী ২511, ২51২, ২513, ২514, ২517, ২518, আবূ দাউদ 1616 1618, আহমাদ 10798, 11301, 115২২, দারেমী 1663 , 1664, সহীহ আবী দাউদ 1433, ইরওয়াহ 3/337, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ্। হাদিসের মানঃ সহিহ
ফিতরা আদায়ের পদ্ধতি |
সূরা আল হাশর: 7 - রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মুহাম্মদ: 33 - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।
0 Comments