ইব্রাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) সাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে তার ঘরে ছিলাম। তখন তিনি বললেন,
ইচ্ছা করলে আমার কাছে প্রশ্ন কর। আমি বললাম, হে আবূ আব্বাস! আল্লাহ আমাকে
আপনার উপর উৎসর্গ করুন। কুফায় নওফ নামে একজন বক্তা আছে। সে বলছে যে, (খিযির
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে যে মূসা র সাক্ষাত হয়েছিল তিনি বনী ইসরাইলের
প্রতি প্রেরিত মূসা নন। তবে, আমর ইবনু দিনার আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস
(রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। কিন্তু ইয়ালা (একজন
বর্ণনাকারী)আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) একথা শুনে বললেন, উবায় ইবনু
কা’আব আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাসুল মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন লোকদের
সামনে ওয়াজ করছিলেন। অবশেষে যখন তাদের চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল
এবং তাদের অন্তর বিগলিত হল, তখন তিনি (ওয়াজ সমাপ্ত করে) ফিরলেন। এক
ব্যাক্তি তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! এ পৃথিবীতে আপনার
চাইতে অধিক জ্ঞানী আর কেউ আছে? তিনি বললেন, না। এতে আল্লাহ তার উপর
অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা তিনি এ কথাটি আল্লাহর উপর হাওয়ালা ১ করেন নি। তখন
তাকে বলা হল, নিশ্চই আছে। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে রব! তিনি
কোথায়? আল্লাহ বললেন, তিনি দুসমুদ্রের সঙ্গমস্থলে। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, হে রব! আপনি আমাকে এমন চিহ্ন বলুন, যার সাহায্যে আমি তার পরিচয় লাভ
করতে পারি। বর্ণনাকারী ইবনু জুরাইহ বলেন, আমর আমাকে এভাবে বলেছেন যে, তাকে
(সেখানে পাবে), যেখানে মাছটি তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর ইয়ালা
আমাকে এভাবে বলেছেন, একটি মৃত মাছ নাও। যেখানে মাছটির মধ্যে প্রান দেওয়া
হবে (সেখানেই তাকে পাবে)। তারপর মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি মাছ নিলেন
এবং তা থলের মধ্যে রাখলেন। তিনি তার খাদেম কে বললেন, আমি তমাকে শুধু অ্যা
দায়িত্ব দিচ্ছি যে, মাছটি যে স্থানে তোমার থেকে চলে যাবে সে স্থানটির কথা
আমাকে বলবে। খাদেম বলল, এ তো বড় দায়িত্ব নয়। এরই বিবরন রয়েছে আল্লাহ
তা’আলার এ বাণীতেঃ “আর যখন মূসা বললেন, তার খাদেমকে অর্থাৎ ইউশা ইবনু
নুনকে”। সাইদ (বর্ণনাকারী)এর বর্ণনায় নামের উল্লেখ নেই। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তিনি একটি বড় পাথরের ছায়ায় ভিজা
মাটির কাছে অবস্থান করছিলেন তখন মাছটি লাফিয়ে উঠল। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তখন নিদ্রায় ছিলেন। তার খাদেম (মনে মনে) বললেন, তাকে এখন জাগাব না। অবশেষে
যখন তিনি জাগালেন, তখন তাকে মাছের খবর বলতে ভুলে গেল। আর মাছটি লাফিয়ে
সমুদ্রে ঢুকে পড়ল। আল্লাহ তা’আলা মাছটির চলার পথে পানি বন্ধ করে দিলেন।
পরিনামে যেন পাথরের মধ্যে চিহ্ন পড়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমর আমাকে বলেছেন
যে, যেন পাথরের মধ্যে চিহ্ন এরুপ হয়ে রইল, বলে তিনি তার দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও
তার পাশের আঙ্গুলগুলো একসাথে মিলিয়ে বৃত্তাকার বানিয়ে দেখালেন। (মূসা
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন) ‘আমরা ত আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। ইউশা
বললেন, আল্লাহ আপনার থেকে ক্লান্তি দূর করে দিয়েছেন। সাইদের বর্ণনায় এ
কথার উল্লেখ নেই। খাদেম তাকে মাছের পালিয়েযাবার সংবাদ দিলেন। তারপর তারা
উভয়ে ফিরে এলেন এবং খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পেলেন। বর্ণনাকারী ইবনু
যুরাইজ বলেন, উসমান ইবনু আবূ সুলাইমান আমাকে বলেছেন যে, মূসা আলাইহি ওয়া
সাল্লাম খিজিরআলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পেলেন সমুদ্রের বুকে সবুজ বিছানার উপর।
সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, তিনি চাঁদর মুড়ি দিয়েছিলেন। চাঁদরের এক পাশ
ছিল তার দুপায়ের নিচে এবং অন্য পাশ ছিল তার মাথার উপর। মূসা আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। তিনি তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, আমার এ
অঞ্চলেও কি সালাম আছে? তুমি কে? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিজিরআলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, বনী ইসরাইলের মূসা? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার
ব্যপার কি? মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি এসেছি, “সত্য পথের যে জ্ঞান
আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন” তিনি বললেন, তোমার কাছে
যে তাওরাত রয়েছে তা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? তোমার কাছে তো ওহী আসে। হে
মূসা! আমার কাছে যে জ্ঞান আছে তা তোমার জানা সমীচীন নয়। আর তোমার কাছে যে
জ্ঞান আছে তা আমার জানা উচিত নয়। এ সময় একটি পাখি এসে তার ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র
থেকে পানি নিল। (এ দৃশ্য দেখে) খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর
কসম , আল্লাহর জ্ঞানের কাছে আমার ও তোমার জ্ঞান এতটুকু। যতটুকু এ পাখীটি
সমুদ্র হতে তার ঠোঁটে করে নিয়েছে। অবশেষে তারা উভয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন।
তারা ছোট খেয়া নৌকা পেলেন, যা এ পারের লোকদের ও পারে এবং ও পারের লোকদের এ
পারে বহন করত। নৌকার লোকেরা খিযির কে চিনতে পারল। তারা বলল, আল্লাহর নেক
বান্দা। ইয়ালা বলেন, আমরা সাইদকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা কি খিযির সম্পর্কে এ
মন্তব্য করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তারা বলল) আমরা তাকে পারিশ্রমিক নিয়ে
বহন করবনা। এরপর খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের নৌকা (এর একস্থান) বিদীর্ণ
করে দিলেন এবং একটি গোঁজ দিয়ে তা বন্ধ করে দিলেন। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, আপনি কি আরোহীদের নিমজ্জিত করার জন্য নৌকাটি বিদীর্ণ করলেন? আপনি
তো গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ নিষিদ্ধ কাজ। তিনি
(খিযির)বললেন, আমি কি বলিনি যে তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারন করতে
পারবেনা?’ প্রথমটি ছিল মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে ভুল। ,
দ্বিতীয়টি শর্তস্বরূপ এবং তৃতীয় ইচ্ছাকৃত বলে গণ্য। মূসা আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যপারে
অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। (এরপর) তারা এক বালকের সাক্ষাত পেলেন,
খিযির তাকে হত্যা করে ফেললেন। ইয়ালা বলেন, সাইদ বলেছেন, খিযির আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বালকদের খেলাধুলা করতে দেখতে পেলেন। তিনি একটি চটপটে কাফের বালককে
ধরলেন এবং তাকে পাশে শুইয়ে যবেহ করে ফেললেন। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বল্লেন, ’আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন অপরাধ ছাড়াই?’ সে তো কন
গুনাহের কাজ করেনি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এখানে -- পড়তেন। --- ভাল মুসলমান।
যেমন তুনি পড় ---। তারপর তারা দুজন চলতে লাগল এবং একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর
পেল। খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটাকে সোজা করে দিলেন। সাইদ তার হাত দ্বারা
ইশারা করে বললেন এরুপ , এবং তিনি তার হাত উঠিয়ে সোজা করলেন। ইয়ালা বলেন,
আমার মনে হয় সাইদ বলেছিলেন, খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাচীরের উপর দুহাতে
স্পর্শ করলেন এবং প্রাচীর দাঁড়িয়ে গেল। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
আপনি ইচ্ছা করলে এ জন্য পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারতেন। সাইদ বলেন, ---
দ্বারা এখানে খাদ্য দ্রব্য বোঝান হয়েছে। - এর অর্থ তাদের সামনে। ইবনু
আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতে -- (তাদের সামনে ছিল এক রাজা) পড়েন। সাইদ ব্যতীত অন্য
বর্ণনাকারীরা সে রাজার নাম বলেছেন “হুদাদ ইবনু বুদাদ” আর হত্যা কৃত
বালকটির [১] নাম ছিল জাইসুর। সে রাজা প্রত্যেকটি ভাল নৌকা বল প্রয়োগে
ছিনিয়ে নিত। খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নৌকা বিদীর্ণ করার উদ্দেশ্য ছিল ,
(সে অত্যাচারী রাজা) ত্রুটি যুক্ত নৌকা দেখলে তা ছিনিয়ে নিবেনা। তারপর যখন
অতিক্রম করে গেল, তখন তাদের নৌকা মেরামত করে নিল এবং তা ব্যবহার যোগ্য করে
তুলল। কেউ বলে নৌকার ছিদ্রটা মেরামত করেছিল সীসা গলিয়ে। আবার কেউ বলে,
আলকাতরা মিলিয়ে নৌকা মেরামত করেছিল। “তার পিতা মাতা ছিল মুমিন”। আর সে
বালকটি ছিল কাফের। আমি আশংকা করলাম যে সে বিদ্রোহচরন ও কুফরির দ্বারা তাদের
বিব্রত করবে। অর্থাৎ তার স্নেহ ভালবাসায় তাদের তার ধর্মের অনুসারী করে
ফেলবে। এরপর আমি চাইলাম যে তাদের প্রতিপালক যেন তাদের ওর পরিবর্তে এক
সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভালবাসায় ঘনিষ্টতর।
খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বালকটিকে হত্যা করেছিলেন, সে বালকটির চেয়ে
পরবর্তী বালকটির প্রতি তার পিতামাতা অধিক স্নেহশীল ও দয়াশীল হবেন। ইবনু
জুরাইয বলেন) সাইদ ব্যতীত অন্য সকল বর্ণনাকারী বলেছেন যে, এর অর্থ হল, সে
বালকটির পরিবর্তে আল্লাহ তাদের একটি কন্যা সন্তান দান করেন। দাউদ ইবনু আবূ
আনিস বলেন, এখানে কন্যা সন্তান বোঝানো হয়েছে। ১/ খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যে বালকটি কে হত্যা করেছিল। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহিহ বুখারি ইফঃ ৪৩৬৭, ৪৩৬৮, মুসলিম ৪৫৩৭, ৫৯৪৮ বুখারি তাওহীদ ৪৭২৬,
0 Comments