সৎ চরিত্রের গুনাবলি, উওম চরিত্রের মর্যাদা, আদর্শবান পুরুষের বৈশিষ্ট।


সচ্চরিত্রতার মাহাত্ম্যঃ


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [القلم: ٤]

অর্থাৎ “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা ক্বালাম ৪ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ ﴾ [ال عمران: ١٣٤]

অর্থাৎ “সেই দ্বীনদারদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أحْسَنَ النَّاسِ خُلُقاً . متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মানুষের চাইতে বেশি সুন্দর চরিত্রের ছিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَنِ النَّوَاسِ بنِ سَمعَانَ رضي الله عنه، قَالَ: سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَن البِرِّ وَالإثمِ، فَقَالَ: « البِرُّ: حُسنُ الخُلُقِ، والإثمُ: مَا حَاكَ فِي صَدرِكَ، وكَرِهْتَ أن يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ ». رواه مسلم
নাওয়াস ইবনে সাম‘আন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, ‘‘পুণ্য হল সচ্চরিত্রতার নাম। আর পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’ (মুসলিম)  [2]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: لَمْ يَكُن رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَاحِشاً وَلاَ مُتَفَحِّشاً، وَكَانَ يَقُولُ: « إنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أحْسَنَكُمْ أخْلاَقاً ». متفقٌ عَلَيْهِ
আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রকৃতিগতভাবে কথা ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। আর তিনি বলতেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [3]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَن أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: مَا مِنْ شَيْءٍ أثْقَلُ فِي مِيزَانِ العَبدِ المُؤْمِنِ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ حُسْنِ الخُلُقِ، وَإنَّ الله يُبْغِضُ الفَاحِشَ البَذِيَّ. رواه الترمذي، وقال:حديث حسن صحيح
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন (নেকী) ওজন করার দাঁড়ি-পাল্লায় সচ্চরিত্রতার চেয়ে কোনো বস্তুই অধিক ভারী হবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল ও চোয়াড়কে অপছন্দ করেন।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে) [4]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَنْ أكثرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ ؟ قَالَ:«تَقْوَى اللهِ وَحُسنُ الخُلُقِ »، وَسُئِلَ عَنْ أكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ، فَقَالَ: « الفَمُ وَالفَرْجُ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح »
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জান্নাতে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র।’’ আর তাঁকে (এটাও) জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘মুখ ও যৌনাঙ্গ (অর্থাৎ উভয় দ্বারা সংঘটিত পাপ)।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে) [5]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «أكْمَلُ المُؤمِنِينَ إِيمَاناً أحسَنُهُمْ خُلُقاً، وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দরতম। আর তোমাদের উত্তম ব্যক্তি তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে) [6]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «إنَّ المُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِه دَرَجَةَ الصَّائِمِ القَائِمِ». رواه أَبُو داود
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই মু’মিন তার সদাচারিতার কারণে দিনে (নফল) রোযাদার এবং রাতে (নফল) ইবাদতকারীর মর্যাদা পেয়ে থাকে।’’ (আবু দাউদ)  [7]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَن أَبِي أُمَامَةَ البَاهِليِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « أنَا زَعِيمٌ بِبَيتٍ في رَبَضِ الجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ المِرَاءَ وَإنْ كَانَ مُحِقّاً، وَبِبَيْتٍ في وَسَطِ الجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الكَذِبَ وَإنْ كَانَ مَازِحاً، وَبِبَيْتٍ في أعلَى الجَنَّةِ لِمَنْ حَسُنَ خُلُقُهُ » . حديث صحيح، رواه أَبُو داود بإسناد صحيح .
আবূ উমামাহ বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার জন্য জামিন হচ্ছি, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও কলহ-বিবাদ বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র সুন্দর।’’ (আবূ দাউদ) [8]

بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنَّ مِنْ أحَبِّكُمْ إليَّ، وَأقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِساً يَوْمَ القِيَامَةِ، أحَاسِنَكُم أخْلاَقاً، وَإنَّ أبْغَضَكُمْ إلَيَّ وَأبْعَدَكُمْ مِنِّي يَوْمَ القِيَامَةِ، الثَّرْثَارُونَ وَالمُتَشَدِّقُونَ وَالمُتَفَيْهقُونَ » قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَدْ عَلِمْنَا الثَّرْثَارُونَ وَالمُتَشَدِّقُونَ ، فمَا المُتَفَيْهقُونَ ؟ قَالَ: المُتَكَبِّرُونَ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن وروى الترمذي عن عبد الله بن المبارك رحمه الله في تفسير حسن الخلق قال‏:‏ هو طلاقة الوجه، وبذل المعروف، وكف الأذى‏.‏
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং কিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের মধ্যে আমার নিকট ঘৃণ্যতম এবং কিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকট থেকে দূরতম হবে তারা; যারা ‘সারসার’ (অনর্থক অত্যধিক আবোল-তাবোল বলে যারা) ও ‘মুতাশাদ্দিক’ (বা আলস্যভরে টেনে টেনে কথা বলে যারা) এবং যারা ‘মুতাফাইহিক’ লোক; সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘সারসার’ (অনর্থক কথাবার্তা যারা বলে) এবং মুতাশাদ্দিক (আলস্যভরে বা কায়দা করে টেনে-টেনে কথা বলে) তাদেরকে তো চিনলাম; কিন্তু ‘মুতাফাইহিক’ কারা? রাসূল বললেন, অহংকারীরা।’’ (তিরমিযী, হাসান) [9]

ইমাম তিরমিযী আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক (রাহিমাহুল্লাহ) হতে সচ্চরিত্রতার ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘তা হল, সর্বদা হাসিমুখ থাকা, মানুষের উপকার করা এবং কাউকে কষ্ট না দেওয়া।’

[1] সহীহুল বুখারী ৬২০৩, ৬১২৯, মুসলিম ২১৫০, তিরমিযী ৩৩৩, ১৯৬৯, আবূ দাউদ ৬৫৮, ৪৯৬৯, ইবনু মাজাহ ৩৭২০, ৩৭৪০, আহমাদ ১১৭২, ১১৭৮৯, ১২২১৫, ১২৩৪২, ১২৪৩৩ হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] মুসলিম ২৫৫৩, তিরমিযী ২৩৮৯, আহমাদ ১৭১৭৯, দারেমী ২৭৮৯ হাদিসের মানঃ সহিহ
[3] সহীহুল বুখারী ৩৭৫৮, ৩৫৫৯, ৩৭৬০, ৩৮০৬, ৩৮০৮, ৪৯৯৯, ৬০২৯, ৬০৩৫, মুসলিম ২৩২১, ২৪৬৪, তিরমিযী ১৯৭৫, ৩৮১০, আহমাদ ৫৪৬৮, ৬৬৯৬, ২৭৬৭০, ৬৭৭৪, ৬৭৯৮, ৬৯৯৫ হাদিসের মানঃ সহিহ
[4] তিরমিযী ২০০২, আবূ দাউদ ৪৭৯৯, আহমাদ ২৬৯৭১, ২৬৯৮৪, ২৭০০৫ হাদিসের মানঃ হাসান
[5] তিরমিযী ২০০৪, ইবনু মাজাহ ৪২৪৬, আহমাদ ৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩ হাদিসের মানঃ হাসান
[6] তিরমিযী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬, ১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২ হাদিসের মানঃ হাসান
[7] আবূ দাউদ ৪৭৯৮, আহমাদ ২৩৮৩৪, ২৪০৭৪ হাদিসের মানঃ সহিহ
[8] আবূ দাউদ ৪৮০০ হাদিসের মানঃ সহিহ
[9] তিরমিযী ২০১৮ হাদিসের মানঃ হাসান
সৎ চরিত্রের মর্যাদা,

সূরা আল হাশর:7 - রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মুহাম্মদ:33 - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।

Post a Comment

0 Comments