রমজানে যে ৪ টি বিশেষ আমল রাসুল (সা.) করতে বলেছেন।

রমজানে যে ৪ টি বিশেষ আমল রাসুল (সা.) করতে বলেছেন।
রমজানে যে ৪ টি বিশেষ আমল রাসুল (সা.) করতে বলেছেন।

রমজানে রাসুল (সা.) যে ৪টি- কুরআন নাজিলের নেয়ামতে ভরপুর রমজান মাস। এ মাসের বিশেষ চারটি আমল রয়েছে। এ আমলগুলোর সঙ্গে কিছু জিকির ও দোয়া রয়েছে, যা পালনে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টিসহ জান্নাত লাভ করবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী মুমিন মুসলমান বিশেষ চারটি আমল পালন ও জিকির-দোয়া করার মাধ্যমে মাসটি ইবাদতের বসন্তকালে পরিণত করবে। আমল চারটির মধ্যে দুটি মহান আল্লাহর জন্য আর দুটি বান্দার জন্য।

হাদিসে এসেছে-
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্য এ মর্মে বক্তব্য দেন যে- ‘হে লোক সকল! অবশ্যই তোমাদের সামনে মহান মাস, বরকতময় মাস উপস্থিত। এ মাসে তোমরা ৪টি আমল বেশি বেশি আদায় করবে। এর মধ্যে দুইটি কাজ আল্লাহর জন্য আর দুইটি কাজ তোমাদের নিজেদের জন্য।’


কালেমা পাঠের কা’রণ–
এ কালেমা মানুষকে এক আল্লাহর স্বীকৃতি তথা তাওহিদের দিকে ধাবিত করে। মানুষ সবচেয়ে বড় অপরাধ শিরক থেকে মুক্ত থাকে। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ যুগে যুগে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। আর আমাদের জন্য দিয়েঠেন মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। তাই কুরআন নাজিলের মাসে মহান আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিতেই একনিষ্ঠতার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি কালেমার তাসবিহ পাঠ করা।


ইসতেগফার করার কার’ণ–
আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইসতেগফার কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ ইসতেগফারের কারণে আল্লাহ তাআলা অনেক ক’ঠিন অবস্থা থেকে মানুষকে হেফাজত করবেন।
– দেশে যদি খড়া বা বিপ’র্যয় তৈরি হয় তবে- আকাশ থেকে মেঘ বর্ষণ করবেন। দেশ মরুভূমি হবে না। বরং সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে।
– নিজেদের আয় রোজগার বেড়ে যাবে। কখনো অভাব আসবে না।
– সন্তান-সন্তুতি না থাকলে আল্লাহ সন্তান-সন্তুতি দান করবেন।
– পরিবেশেকে সবুজময় করে দেবেন।
– পরিবেশকে সুন্দর করতে নদি-নালা প্রবাহিত করাবেন।
– নিজেদের দুই আমল
– আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা।
– জাহান্নামের আ’গু’ন থেকে মুক্তি চাওয়া।
 
জান্নাত চাওয়ার কারণ–
জান্নাত তো মুমিনের আসল ঠিকানা। যে ঠিকানায় বসবাসে মুমিন কখনো বৃদ্ধ হবে না। ব্যবহারের কোনো জিনিসপত্র পুরনো হবে না। যেখানে বিরাজমান থাকবে মধুমিশ্রিত নদী। মদের ফোয়ারা। যে ম’দ পা’নে দুনিয়ার মতো মা’তাল হবে মানুষ। সেখানে শেষ হবে না মানুষে যৌ’বন।


– আল্লাহর জন্য দুই আমল
– কালেমার সর্বোত্তম তাসবিহ- لَا اِلَهَ اِلَّا الله পাঠ করা।
– আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।


হাদিসে পাকে এ জান্নাত লাভের প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় না আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রাগা’ন্বিত হন।’ তাই জান্নাত লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আকুতি জানাতে হবে।


জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া–
আল্লাহর কোনো বান্দা জাহা’ন্নামের আ’গু’নে জ্ব’লবে, এটা মহান আল্লাহ নিজেও পছন্দ করেন না। পরকালের চিরস্থায়ী জীবন যেন আল্লাহর ভ’য়াব’হ আজাবে পরিণত না হয় সে জন্যেই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে। আর ক্ষমা প্রার্থনাকারী মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটিতে ঘোষিত ৪টি আমলের যথাযথ বাস্তবায়নে এ দোয়াগুলো পড়া জরুরি। যা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-

– বেশি বেশি কালেমার এ তাসবিহ পড়া
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

– বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা। সাইয়্যেদুল ইসতেগফারসহ কয়েকটি তুলে ধরা হলো-

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।
অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি এক ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমরা ফিরে যাবো।’

উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব্ আলাইয়্যা ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুর রাহিম।’
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি অতিশয় তাওবাকবুলকারী, দয়াবান।’

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকা’রাবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। আমার ওপর তোমার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতিত কোনো ক্ষমাকারী নেই।’

– জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আদখিলনাল জান্নাতা ওয়া আঝিরনা মিনান নার।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহা’ন্নামের আ’গু’ন থেকে আশ্রয় চাই।’


বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ঘোষণা করেন- ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা ৩ বার জান্নাতের আশা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবে, জান্নাত-জাহান্নামও আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তির দোয়া কবুলে সুপারিশ করবে।


হে আল্লাহ! পুরো রমজান মাসজুড়ে উল্লেখিত বিশেষ চারটি আমল ও দোয়াগুলো যথাযথ পালনে আপনার তাওফিকের বিকল্প নেই। যে আমলগুলো করতে শাবান মাসের শেষ দিন বিশ্বনবি সাহাবায়ে কেরামকে নসিহত পেশ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পুরো রমজান মাসজুড়ে রোজা পালন, ফরজ ও নফল নামাজ, জিকির-আজকারের পাশাপাশি বিশেষ ৪ আমল ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দোয়াগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ক্রেডিটঃ ঢাকা লাইভ

◈ ━━━━━━ ⸙ ━━━━━━ ◈

 প্রতিদিন কমপক্ষে নিম্নের আমলগুলো করুন।

১/ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।
২/ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করুন। না পারলে কয়েকটি সূরা হলেও পড়ুন।
৩/ যত বেশি সম্ভব  أَسْتَغْفِرُالله ( আস্তাগফিরুল্লা-হ) (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পড়ুন।
৪/ লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ - জিকিরটি বেশি বেশি করুন।
৫/ বেশি বেশি দুরুদ শরীফ (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পাঠ করুন।
৬/ প্রতিদিন কিছু না কিছু দান-সদকাহ করার চেষ্টা করুন। সদকায়ে জারিয়া চালু করুন।

 

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]


ইসলামিক বাংলা টিভি (Islamic Bangla Tv) - এর সঙ্গেই থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আল্লাহ্‌ সুবনাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন, ছুম্মা আমিন।
#ibtv
#ibtv99

Post a Comment

0 Comments