সদকায়ে জারিয়া | যেসব আমলের সওয়াব মৃত্যুর পরও পাওয়া যায় | IBTV |
সদকা শব্দের অর্থ দান। আর জারিয়া মানে প্রবহমান, চলমান।
পরিভাষায়
সদকায়ে জারিয়া বলা হয় জীবিত অবস্থায় এমন কোনো নেক আমল করা যার সওয়াব
মৃত্যুর পরও পাওয়া যায়। যেমন কেউ দ্বীন শিক্ষার জন্য কোনো মাদরাসা
প্রতিষ্ঠা করল অথবা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করল অথবা জনগণের কল্যাণে কোনো
হাসপাতাল, রাস্তা তৈরি করে দিল ইত্যাদি।
নিয়ত সঠিক-শুদ্ধ থাকলে মৃত্যুর পরও বেশ কিছু আমলের সাওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসের আলোকে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দেওয়া হলো।
ইলম শিক্ষা দেয়া
রাসুল
(সা.) বলেন, ‘যে মানুষকে ইলম শিক্ষা দিলো, এ ইলম অনুযায়ী আমলকারীর
সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায়ও যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের কারো সওয়াবে কোনো
কমতি হবে না।’
(ইবনু মাজাহ, হাদিস নং : ২৪০)
সৎ সন্তান রেখে যাওয়া
রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে :
১. যে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দিল তার সাওয়াব,
২. ভাল কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরণ করল তার সাওয়াব,
৩. যে ব্যক্তি এমন সাদাকাহ করলো, যা প্রবাহমান থাকে তার সাওয়াব,
৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া- যে তার জন্য দোয়া করে।’
(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ২২২৪৭)
মাসজিদ তৈরি করা
মাসজিদে
নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম, দ্বীনি বিষয়ক শিক্ষা দান ও
কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে
ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরি করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি
করবেন।’
(মুসলিম, হাদিস নং : ১২১৮)
কোরআন বিতরণ করা
কোনো
ব্যক্তি যদি মসজিদ, মাদরাসা বা কোনো প্রতিষ্ঠানে পবিত্র কোরআন বিতরণ করে
তাহলে সেগুলোর সাওয়াবের অংশ সেও পাবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ
করার পর কবরে ৭টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে : ১. যে ইলম শিক্ষা দিল, ২. যে
পানি প্রবাহিত করল, ৩. কুপ খনন করল, ৪. খেজুর গাছ লাগালো (গাছ রোপন), ৫.
মাসজিদ তৈরি করল, ৬. কারো দায়িত্বে কিতাব দিয়ে গেল ও ৭. এমন নেক সন্তান
রেখে গেল- যে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।’
(মুসনাদুল বাজ্জার :৭২৮৯)
গাছ রোপন করা
হাদিসে
আছে, ‘কোন মুসলিম যদি কোন বৃক্ষরোপন করে, আর তা থেকে কোন ফল কেউ খায় তবে
সেটি তার জন্য সাদাকাহ, যদি কেউ চুরি করে খায় তাও তার জন্য সদাকাহ, কোন
পাখিও খায় তাও তার জন্য সেটি সদাকাহ। এমনকি যদি কেউ তা কেটে ফেলে তাও সেটি
তার জন্য সাদকাহ।’
( মুসলিম, হাদিস নং : ৪০৫০)
অভাবগ্রস্থদের ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেওয়া
রাসুল
(সা.) বলেন, ‘মুমিন মৃত্যুবরণ করার পর তার সাথে যে আমলের সাওয়াব সম্পৃক্ত
থাকবে, তা হলো ইলম শিক্ষা দেয়া ও কিতাব রচনা করা, নেক সন্তান রেখে যাওয়া,
মসজিদ তৈরি করা, অভাবগ্রস্থদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া, পানি প্রবাহিত হওয়ার
ব্যবস্থা করা এবং তার সম্পদ থেকে সাদাকাহ করা।’
(ইবনু খুযাইমাহ : ২৪৯)
খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা
হাদিসে
রাসুল (সা.) বলেন, এক লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তার পানির খুব পিপাসা পেল,
পথিমধ্যে সে একটি কূপ পেল এবং সেখান থেকে পানি পান করল। অতঃপর দেখতে পেল
একটি কুকুর পানির পিপাসায় ময়লা খাচ্ছে, তখন সে সেখানে মোজা দিয়ে পানি ভরে
কুকুরকে পানি পান করাল এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। এজন্য আল্লাহ তাআলা
তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল!
প্রাণীকে পানি পান করালেও কি সাওয়াব আছে? রাসুল (সা.) বললেন, প্রত্যেক সজীব
অন্তরকে পানি পান করানোর জন্য সাওয়াব রয়েছে।’
(বুখারি, হাদিস নং : ৬০০৯)
সীমান্ত রক্ষা করা
রাসুল
(সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা অবস্থায় মারা
যায়, তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য সওয়াব জারি থাকবে,
তার রিজিকও জারি থাকবে, কবরের পরীক্ষা থেকে সে নিরাপদ থাকবে এবং আল্লাহ
তাআলা কেয়ামতে তাকে ভয় থেকে মুক্ত অবস্থায় ওঠাবেন।’
(ইবনু মাজাহ, হাদিস নং : ২২৩৪)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের কর্মের ধারা শেষ করে দেয়া হয়। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয় তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে।’
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের কর্মের ধারা শেষ করে দেয়া হয়। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয় তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে।’
(ইবনু হিব্বান, হাদিস নং : ৪৬২৪)
প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা করা
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে পানির ঝর্ণা তৈরী করল, তার জন্য জান্নাত রয়েছে।’
(বুখারি, হাদিস নং : ২৭৭৮)
আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া
পবিত্র
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে
আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো আমি একজন মুসলমান ‘
(সুরা হামিম সিজদাহ, আয়াত : ৩৩)
রাসুল (সা.) তার সাহাবাদের বলেন, ‘মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না।’
রাসুল (সা.) তার সাহাবাদের বলেন, ‘মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না।’
(মুসলিম, হাদিস নং : ৬৯৮০)
বইপত্র/কিতাব রচনা করা
এমন
বইপত্র কিংবা কিতাব রচনা করা, যার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ ও উপকার হয়।
মানুষ সঠিক পথের দিশা পায়। হাদিসে এসেছে, ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ
সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে।’
(তিরমিজি, হাদিস নং : ২৬৭০)
সদকায়ে জারিয়া
‘সদকা’
শব্দের অর্থ দান করা। আর ‘জারিয়া’ অর্থ অব্যাহত। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি
অর্জনের লক্ষে শরিয়তসম্মত এমন কল্যাণকর কাজে দান করা। যেমন- মাদরাসা তৈরি,
এতিমখানা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, পাঠাগারের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট নির্মাণ করা
ইত্যাদি অন্যতম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল
বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না,
১. সদকায়ে জারিয়া,
২. এমন ইলম-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়,
৩. এমন নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।
(মুসলিম, হাদিস নং : ৪৩১০)
যেদিন মানুষের আর কোনো অবলম্বন থাকবে না সেদিন সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব যে মানুষের জন্য কতটা জরুরি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এজন্য সবার উচিত বেশি বেশি সদকায়ে জারিয়ার আমলগুলো করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবসময় উত্তম আলম ও মানবতার জন্যে কাজ করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের আমলগুলো কবুল করে নিন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত্যুকালীন সময়ের কষ্ট থেকে হেফাজত করুন। পরকালের নাজাত দান করুন। আমিন। সুম্মা আমিন।
যেদিন মানুষের আর কোনো অবলম্বন থাকবে না সেদিন সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব যে মানুষের জন্য কতটা জরুরি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এজন্য সবার উচিত বেশি বেশি সদকায়ে জারিয়ার আমলগুলো করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবসময় উত্তম আলম ও মানবতার জন্যে কাজ করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের আমলগুলো কবুল করে নিন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত্যুকালীন সময়ের কষ্ট থেকে হেফাজত করুন। পরকালের নাজাত দান করুন। আমিন। সুম্মা আমিন।
◈ ━━━━━━ ⸙ ━━━━━━ ◈
প্রতিদিন কমপক্ষে নিম্নের আমলগুলো করুন।
>>নিম্নের লিংক ক্লিক করে ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন<<
১/ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।
২/ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করুন। না পারলে কয়েকটি সূরা হলেও পড়ুন।
৩/ যত বেশি সম্ভব أَسْتَغْفِرُالله ( আস্তাগফিরুল্লা-হ) পড়ুন। দিনে কমপক্ষে ১০০ বার পড়ুন।
৪/ লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ - জিকিরটি বেশি বেশি করুন।
৫/ বেশি বেশি দুরুদ শরীফ (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পাঠ করুন।
৬/ প্রতিদিন কিছু না কিছু দান-সদকাহ করার চেষ্টা করুন। সদকায়ে জারিয়া চালু করুন।
শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইনশাল্লাহ! দ্বীনি কথা প্রচার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামিক বাংলা টিভি (Islamic Bangla Tv) - এর সঙ্গেই থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আল্লাহ্ সুবনাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন, ছুম্মা আমিন।
#ibtv
#ibtv99
#ibtv99
0 Comments