ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত | কোরআন হাদিসের আলোকে ইতিকাফ।

ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত | কোরআন হাদিসের আলোকে ইতিকাফ।
ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত | কোরআন হাদিসের আলোকে ইতিকাফ।
 আরো পড়ুন:

বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ পিডিএফ ডাউনলোড 

ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদাত। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই বাহ্যত আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত (৯ দিন বা ১০ দিন) ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদে মহল্লার কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। আর কেউই আদায় না করলে সবাই দায়ী থাকবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।

১০ দিনের কম যেকোনো পরিমাণ সময় ইতিকাফ করলে তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে। নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল; তাই সম্পূর্ণ সুন্নত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যত দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদরপ্রাপ্তি; রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদরপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। পুরুষদের মসজিদে ইতিকাফ করতে হয়; নারীরা নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষেইতিকাফ করবেন। নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল; তাই সম্পূর্ণ সুন্নত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যত দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। নফল ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময়ই করা যায়। ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত; কিন্তু স্বল্প সময় (এক দিনের কম সময়) ইতিকাফ করলে তার জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। নফল ইতিকাফ মান্নত করলে বা আরম্ভ করে ছেড়ে দিলে, তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এর জন্য রোজা শর্ত এবং এটি এক দিনের (২৪ ঘণ্টা) কমে হবে না।

 আরো পড়ুন:

বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া বইটি ডাউনলোড করে নিন। 

আজকাল কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদিম বা মসজিদ কমিটির লোকজন, এমনকি স্থানীয় মুসল্লিদের কেউই ইতিকাফ করছেন না। বরং বাইরে থেকে ভাড়াটে কাউকে এনে কিছু টাকাপয়সা দিয়ে ইতিকাফ করান। এতে ইতিকাফের লক্ষ্য অর্জন হয় না। হ্যাঁ, যে কেউ যেকোনো মসজিদে ইতিকাফ করতে পারেন এবং যে কাউকে যে কেউ হাদিয়া বা উপঢৌকন দিতে পারেন। একজন পরহেজগার লোককে সম্মানিত করা বা সহযোগিতা করাতে দোষ নেই; কিন্তু এটি যেন ইবাদতের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত না করে। (মাজমুআ ফাতাওয়া)।

নারীরা নিজ ঘরে বা নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ওই ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন। ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষÿ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যে কেউ অবস্থান করেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন, তবে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ; এর দ্বারা ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিকাফের সময় ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। (মাজমুআ ফাতাওয়া ও ফাতাওয়া হিন্দিয়া)। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে (নির্দিষ্ট স্থানে)। (সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ২৩/৭, আয়াত: ১৮৭, মঞ্জিল: ১, পারা: ২ সাইয়াকুল, পৃষ্ঠা: ২৯/৭)।

ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী ফরজ ইবাদতের বাইরে কোনো নফল ইবাদত না করলেও ইতিকাফের সওয়াব পাবেন। তবে অতিরিক্ত নফল ইবাদত করলে আরও বেশি ফজিলতের অধিকারী হবেন। যেমন: কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া, কাজা নামাজ আদায় করা, দোয়া–দরুদ পাঠ করা, জিকির আসকার করা, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করা।

এ ছাড়া দিনি কথাবার্তা ও ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা করাও সওয়াবের কাজ। যেমন: কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, তাফসির ইত্যাদি পাঠ করা ও তালিম করা। ইতিকাফ অবস্থায় এমন সব কথা বলা ও কাজ করা বৈধ, যাতে কোনো গুনাহ নেই। প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথাবার্তা বলতেও নিষেধ নেই; তবে অহেতুক অযথা বেহুদা কথাবার্তা দ্বারা ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। ইতিকাফকারী মসজিদের মধ্যে ইতিকাফরত অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন এবং মাথায়, দাঁড়িতে ও চুলে তেল লাগাতে পারবেন। মাথার চুলে ও দাড়িতে চিরুনি করতে পারবেন। (আল বাদায়ে ওয়াস সানায়ে)। যাঁরা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত, তাঁরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদের ভেতরে তালিম দিতে পারবেন। (খোলাসা)।

লিখেছেনঃ মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্‌ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।

আরো পড়ুনঃ 
যাকাত প্রদানের খাত ও যাকাত হিসাব করার পদ্ধতি | যাকাত ক্যালকুলেটর
কুরআন ও হাদীসের আলোকে যাকাতের বিধি-বিধান | যাকাতের বিস্তারিত আলোচনা।
যাকাত ও ফিতরার টাকা কাদেরকে দেওয়া যাবে না
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে এবং কাকে দেওয়া যাবে না | যাকাতের বিধান।
যাকাত বিষয়ক কিছু খুঁটিনাটি প্রশ্ন ও তার উত্তর | যাকাত নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর।
ঋণ ও যাকাত নিয়ে প্রশ্নোত্তর | যাকাতের বিধান।
যাকাত সম্পর্কীত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্নোত্তর।
রোযা অবস্থায় কোমোথেরাপী ও ইঞ্জেকশন গ্রহনের বিধান |


◈ ━━━━━━ ⸙ ━━━━━━ ◈

 প্রতিদিন কমপক্ষে নিম্নের আমলগুলো করুন।

১/ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।

২/ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করুন। না পারলে কয়েকটি সূরা হলেও পড়ুন।

৩/ যত বেশি সম্ভব  أَسْتَغْفِرُالله ( আস্তাগফিরুল্লা-হ) (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পড়ুন।

৪/ লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ - জিকিরটি বেশি বেশি করুন।

৫/ বেশি বেশি দুরুদ শরীফ (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পাঠ করুন।

৬/ প্রতিদিন কিছু না কিছু দান-সদকাহ করার চেষ্টা করুন। সদকায়ে জারিয়া চালু করুন।

 

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]


ইসলামিক বাংলা টিভি (Islamic Bangla Tv) - এর সঙ্গেই থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আল্লাহ্‌ সুবনাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন, ছুম্মা আমিন।
#ibtv
#ibtv99

Post a Comment

0 Comments