দাজ্জালের ভয়াবহতা, দাজ্জাল থেকে বাচার সতর্কবানী।


ইমরান ইবনে হুস্বাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আদমের জন্মলগ্ন থেকে নিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের [ফিতনা-ফ্যাসাদ] অপেক্ষা অন্য কোন বিষয় [বড় বিপজ্জনক] হবে না।’’ (মুসলিম)[1] 
[1] মুসলিম ২৯৪৬, ১৫৮২০, ১৫৮৩১, ১৫৩৩ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এমন কোন নবী নেই, যিনি নিজ উম্মতকে মহা-মিথ্যাবাদী কানা [দাজ্জাল] সম্পর্কে সতর্ক করেননি। কিন্তু [মনে রাখবে,] সে [এক চোখের] কানা হবে। আর নিশ্চয় তোমাদের মহামহিমান্বিত প্রতিপালক কানা নন। তার কপালে ‘কাফ-ফা-রা’ [কাফের] শব্দ লেখা থাকবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ৭১৩১, ৭৪০৮, মুসলিম ২৯৩০, তিরমিযী ২২৪০, আবূ দাউদ ৪৩১৬, আহমাদ ১১৫৯৩, ১১৭৩৫, ১২৩৫৯, ১২৬৬৮, ১২৭৩৭, ১২৭৯৪, ১২৯৭২, ১২৯৮১, ১৩০২৬, ১৩১৮৭, ১৩২০৯, ১৩৫১৩, ১৩৬৮০ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘শোন! তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে আমি কি এমন কথা বলব না, যা কোন নবীই তাঁর জাতিকে বলেননি? তা হল এই যে, সে হবে কানা। আর সে নিজের সাথে নিয়ে আসবে জান্নাত ও জাহান্নামের মত কিছু। যাকে সে জান্নাত বলবে, বাস্তবে সেটাই জাহান্নাম হবে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [1]
[1] সহীহুল বুখারী ৩৩৩৮, মুসলিম ২৯৩৬ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
রিবঈ ইবনে হিরাশ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ মাসঊদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সঙ্গে আমি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট গেলাম। আবূ মাসঊদ তাঁকে বললেন, ‘দাজ্জাল সম্পর্কে যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছেন, তা আমাকে বর্ণনা করুন।’ তিনি বলতে লাগলেন, ‘দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তার সঙ্গে থাকবে পানি ও আগুন। যাকে লোক পানি মনে করবে, বাস্তবে তা দগ্ধ-কারী আগুন এবং লোকে যাকে আগুন বলে মনে করবে, তা বাস্তবে সুমিষ্ট শীতল পানি হবে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাকে [দেখতে] পাবে, সে যেন তাতে পতিত হয় যাকে আগুন মনে করে। কেননা, তা বাস্তবে মিষ্ট উত্তম পানি।’ আবূ মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ হাদিসটি আমিও [স্বয়ং] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। (বুখারী-মুসলিম) [1][1] সহীহুল বুখারী ৩৪৫০-৩৪৫২, ২০৭৭, ২৩৯১, ৩৪৭৯, ৬৪৮০, ৭১৩০, মুসলিম ২৫৬০, ২৯৩৪, ২৯৩৫, নাসায়ী ২০৮০, ইবনু মাজাহ ২৪২০, আহমাদ ২২৭৪২, ২২৮৪৩, ২২৮৭৫, ২২৯৫৩, দারেমী ২৫৪৬ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আসফাহান [ইরানের একটি প্রসিদ্ধ শহরে]র সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে; তাদের কাঁধে থাকবে ত্বাইলেসী রুমাল।’’ (মুসলিম) [1][1] মুসলিম ২৯৪৪, আহমাদ ১২৯৩১ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাজ্জাল সংক্রান্ত আলোচনা করে বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ কানা নন। সাবধান! মসীহ দাজ্জালের ডান চোখ কানা এবং তার চোখটি যেন [গুচ্ছ থেকে] ভেসে ওঠা আঙ্গুর।’’ (বুখারী-মুসলিম) [1] 
* [অর্থাৎ অন্য চোখটির তুলনায় এ চোখটি বাইরে বেরিয়ে থাকবে।]
[1] সহীহুল বুখারী ১৩৫৫, ২৬৩৮, ৩০৫৫-৫০৫৭, ৩৩৩৭, ৩৪৪০, ৩৪৪১,  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সে দাজ্জাল নব-যুবক হবে, তার মাথার কেশরাশি হবে খুব বেশি কোঁচকানো। তার একটি চোখ [আঙ্গুরের ন্যায়] ফোলা থাকবে। যেন সে আব্দুল উয্যা ইবনে ক্বাত্বানের মত দেখতে হবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন তার সামনে সূরা কাহ্ফের শুরুর [দশ পর্যন্ত] আয়াতগুলি পড়ে। সে শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে আবির্ভূত হবে। আর তার ডাইনে-বামে [এদিকে ওদিকে] ফিতনা ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দারা। [ঐ সময়] তোমরা অবিচল থাকবে।’’
(মুসলিম-২৯৩৭,তিরমিজি-২২৪০,৪০০১)
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দাজ্জালের আবির্ভাব হলে মুমীনদের মধ্য থেকে একজন মুমিন তার দিকে অগ্রসর হবে। তখন [পথিমধ্যে] দাজ্জালের সশস্ত্র প্রহরীদের সাথে তার দেখা হবে। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘কোন্ দিকে যাবার ইচ্ছা করছ?’ সে উত্তরে বলবে, ‘যে ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, তার কাছে যেতে চাচ্ছি।’ তারা তাকে বলবে, ‘তুমি কি আমাদের প্রভুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর না?’ সে উত্তর দেবে, ‘আমাদের প্রভু [আল্লাহ তো] গুপ্ত নন যে, [অন্য কাউকে প্রভু বানিয়ে মানতে লাগব]।’ [এরূপ শুনে] তারা বলবে, ‘একে হত্যা করে দাও।’ তখন তারা নিজেদের মধ্যে একে অপরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রভু কি তোমাদেরকে নিষেধ করেননি যে, তোমরা তার বিনা অনুমতিতে কাউকে হত্যা করবে না?’ ফলে তারা ঐ মুমীনকে ধরে দাজ্জালের কাছে নিয়ে যাবে। যখন মুমিন দাজ্জালকে দেখতে পাবে, তখন সে [স্বতঃস্ফূর্তভাবে] বলে উঠবে, ‘হে লোক সকল! এই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা করতেন।’ তখন দাজ্জাল তার জন্য আদেশ দেবে যে, ‘ওকে উপুড় করে শোয়ানো হোক।’ তারপর বলবে, ‘ওকে ধরে ওর মুখে-মাথায় প্রচন্ডভাবে আঘাত কর।’ সুতরাং তাকে মেরে মেরে তার পেট ও পিঠ চওড়া করে দেওয়া হবে। তখন সে [দাজ্জাল] প্রশ্ন করবে, ‘তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস রাখ?’ সে উত্তর দেবে, ‘তুই তো মহা মিথ্যাবাদী মসীহ।’ সুতরাং তার সম্পর্কে আবার আদেশ দেওয়া হবে, ফলে তার মাথার সিঁথির উপর করাত রেখে তাকে দ্বিখন্ড করে দেওয়া হবে; এমনকি তার পা-দুটোকে আলাদা করে দেওয়া হবে। তারপর দাজ্জাল তার দেহ খন্ডদ্বয়ের মাঝখানে হাঁটতে থাকবে এবং বলবে, ‘উঠ।’ সুতরাং সে [মুমীন] উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে! দাজ্জাল আবার তাকে প্রশ্ন করবে, ‘তুমি কি আমার প্রতি ঈমান আনছ?’ সে জবাব দেবে, ‘তোর সম্পর্কে তো আমার ধারণা আরও দৃঢ় হয়ে গেল।’ তারপর মুমিন বলবে, ‘হে লোক সকল! আমার পরে ও অন্য কারো সাথে এরূপ [নির্মম] আচরণ করতে পারবে না।’ সুতরাং দাজ্জাল তাকে যবেহ করার মানসে ধরবে। কিন্তু আল্লাহ তার ঘাড় থেকে কণ্ঠাস্থি পর্যন্ত তামায় পরিণত করে দেবেন। ফলে দাজ্জাল তাকে যবেহ করার কোন উপায় খুঁজে পাবে না। তারপর তার হাত-পা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তখন লোকে ধারণা করবে যে, সে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করল। কিন্তু [বাস্তবে] তাকে জান্নাতে নিক্ষেপ করা হবে।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘বিশ্বচরাচরের পালনকর্তার নিকট ঐ ব্যক্তিই সবার চেয়ে বড় শহীদ।’’ [মুসলিম, ইমাম বুখারী অনুরূপ অর্থে এর কিছু অংশ বর্ণনা করেছেন।][1
[1] সহীহুল বুখারী ১৮৮২, ৭১২৩, মুসলিম ২৯৩৮, আহমাদ ১০৯২৫, ১১৩৪৩ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

Post a Comment

0 Comments