মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ৪০ টি হাদিস | IBTV


মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ৪০ টি হাদিস | IBTV
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ৪০ টি হাদিস | IBTV      

হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইলমের কোন স্তর পর্যন্ত পৌঁছলে কেউ ফকীহ বা আলীম হতে পারে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তাদের দ্বীনের বিষয়ে চল্লিশটি হাদিস হিফজ্ (মুখস্থ) করবে (এবং অপরকে তা পৌঁছাবে) রোজ কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে ফকীহ বা আলীমরূপে উঠাবেন। এছাড়া কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও স্বাক্ষী হব।


-[সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম]
(বিদেশ বাংলা এর পাঠকদের জন্য নিম্নে ৪০টি হাদিস প্রদান করা হলো। সহিহ্ আল বুখারী, মুসলিম, মিশকাত শরীফ, শমায়েলে তিরমিযি, আবু দাউদ, দুররে মনসুর ও তাফসীরে ইবনে কাছীর থেকে হাদিসগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে)
হাদিস নং: ১
ইমাম তিরমিজি (রহ.) এক হাদিসে মহান আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মহান আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে, অর্থাৎ এক কম ১০০টি। যেই ব্যক্তি সেইগুলো অনুধাবন করবে ও সংরক্ষণ (মুখস্থ) করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বেজোড় এবং বেজোড়কে ভালবাসেন।
-[সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম]
হাদিস নং: ২
আমিরুল মু’মিনিন উমার ইবনে খাত্তাব (রা:) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি- “সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করেছে, তাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর যার হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা মহিলাকে বিবাহ করার জন্য তার হিজরত সেজন্য বিবেচিত হবে-যে জন্য সে হিজরত করেছে।
-[সহিহ্ আল বুখারী:১, সহিহ্ মুসলিম:১৯০৭]
হাদিস নং: ৩
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম)-বলেছেন, চারটি বদাভ্যাস যার মধ্যে রয়েছে সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে তার একটি আছে, সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
(১) যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে খেয়ানত করে,
(২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে;
(৩) যখন অঙ্গীকার করে, ভঙ্গ করে এবং
(৪) যখন কারো সাথে কলহ্ করে, তখন অশালীন কথা বলে।
-[সহিহ্ আল বুখারী, মুসলিম]
হাদিস নং: ৪
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) বলেছেন: “ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তার উচিত হয় উত্তম কথা বলা অথবা চুপ থাকা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তার উচিত আপন প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়া। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তার উচিত আপন অতিথির সম্মান করা।”
-[বুখারী:৬০১৭, মুসলিম:৪৭]
হাদিস নং: ৫
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো নিকট শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়।
-[সহিহ্ বুখারী]
হাদিস নং: ৬
আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-বলেছেন, ‘জুমু’আর দিনে মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতা এসে দাঁড়িয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি প্রথম মসজিদে প্রবেশ করে, তার নাম লিখে নেয়। অত:পর ক্রমান্বয়ে পরবর্তীদের নামও লিখে নেয়। ইমাম যখন বসে পড়েন তখন তারা এসব লেখা পুস্তিকা বন্ধ করে দেন এবং তারা মসজিদে এসে যিকর্ শুনতে থাকেন।’
-[সহিহ্ আল বুখারী]
হাদিস নং: ৭
আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন, রাসূলালুলাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-বলেছেন, আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তিনি জিব্ রাঈল (‘আ:)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ওমুক বান্দাহকে ভালবাসেন, কাজেই তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিব্ রাঈল (‘আ:)-ও তাকে ভালবাসেন এবং জিব্ রাঈল (‘আ:) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাস। তখন আকাশের অধিবাসীরা তাকে ভালবাসতে থাকে। অত:পর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করা হয়।
-[সহিহ্ আল বুখারী]
হাদিস নং: ৮
আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত সালাত রত অবস্থায় থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ এ বলে দু’আ করতে থাকে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন এবং হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটি সালাত ছেড়ে না দাঁড়ায় কিংবা তার উযু ভঙ্গ না হয়।’
-[সহিহ্ আল বুখারী]
হাদিস নং: ৯
আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-বলেছেন: যেদিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতিত অন্য কোন ছায়া থাকবেনা, সেদিন আল্লাহ তা’আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
(১) নায়পরায়ণ শাসক।
(২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর গড়ে উঠেছে।
(৩) যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সাথে।
(৪) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দু’ব্যক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয় একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের উপর।
(৫) এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহব্বান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
(৬) যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সদকা করে যে, তার ডানহাত যা দান করেছে বামহাত তা জানতে পারে না।
(৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ হতে অশ্রু বের হয়।
-[সহিহ বুখারী]
হাদিস নং: ১০
আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন, রাসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, আমি আমার নেক্কার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।
-[সহিহ বুখারী ও মুসলিম]
হাদিস নং: ১১
হযরত আনাস (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও অন্য সবার চেয়ে প্রিয়তম না হই।
-[সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম]
হাদিস নং: ১২
হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বিষয় থাকবে, তদ্বারা সে ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ লাভ করতে পারবে। (১) তার কাছে আল্লাহ ও রাসূল অন্য সব কিছু থেকে প্রিয়তম হবে। (২) যে অন্য কাউকে ভালবাসবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ।(৩) যে কুফরী থেকে মুক্তি লাভের পর কুফ্ রীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করে।
-[বুখারী ও মুসলিম]
হাদিস নং: ১৩
হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বল্লেন, হে বৎস! তুমি যদি সারাদিন এইভাবে কাটিয়ে দিতে পার যে, তোমার মনে কারো প্রতি কোনরূপ হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তবে তাই করো। তারপর তিনি বল্লেন, বৎস! এটা আমার সুন্নতের শামিল এবং যে আমার সুন্নতকে ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে সে বেহেশতে আমার সাথেই থাকবে।
-[তিরমিযী]
হাদিস নং: ১৪
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারেনা।
-[সহিহ্ আল বুখারী, সহিহ্ মুসলিম, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, দারেমী, জামেউস সগীর]
হাদিস নং: ১৫
আনাস ইবনে মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ১০ বছর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর খেদমত করেছি; কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তিনি কখনো আমার কোন কাজে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। আমি করেছি এমন কোন কাজের ব্যপারে তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করেছি? আর না করার ব্যাপারেও তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করোনি? চরিত্র মাধুর্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। কোন রেশমী কাপড় বা কোন বিশুদ্ধ রেশম বা অন্য কোন এমন নরম জিনিস স্পর্শ করিনি, যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাতের তালুর চেয়ে নরম। আমি এমন কোন মিশক বা আতরের সুবাস পাইনি, যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘামের ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধিময়।
-[শামায়েলে তিরমিযি, হা/২৬৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৪; দারেমী, হা/৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০৫৭;]
হাদিস নং: ১৬
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা’য়ালা ফরমাইতেছেন, আমি বান্দার সহিত ঐরূপ ব্যবহার করিয়া থাকি যেইরূপ বান্দা আমার সম্বন্ধে ধারণা করিয়া থাকে। যখন সে আমাকে স্মরণ করে আমি তখন তাহার সঙ্গে থাকি। আর যখন সে আমাকে অন্তরে অন্তরে ডাকিতে থাকে আমিও তাহাকে অন্তরে অন্তরে স্মরণ করিয়া থাকি আবার যদি সে কোন মজলিশে আমার জিকির করে তবে আমি তাহাদের মজলিশ হইতে উত্তম (ফেরেশতাগের) মজলিশে তাহার আলোচনা করিয়া থাকি। বান্দা যদি আমার দিকে অর্ধহাত অগ্রসর হয় তখন আমি তাহার দিকে একহাত অগ্রসর হই। আর যখন আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয় আমি তখন তাহার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। আর সে আমার দিকে হাঁটিয়া হাঁটিয়া আসিতে থাকিলে আমি তাহার দিকে দৌড়াইয়া আসিতে থাকি।
-[ সহিহ্ আল বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, নেছায়ী, এবনে মাজাহ্]
হাদিস নং: ১৭
হযরত আবু দারদা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার সাহাবীগণে বলিলেন, আমি কি তোমাদিগকে এমন একটি আমলের কথা বলিবনা? যাহা যাবতীয় আমল হইতে উত্তম এবং তোমাদের মালিকের নিকট সবচেয়ে বেশী পবিত্র এবং তোমাদিগকে সবচেয়ে বেশী মর্যাদাদানকারী এবং স্বর্ণ, রৌপ্য আল্লাহর রাহে খরচ করিবার চেয়েও উত্তম। আর শত্রুর সহিত জিহাদ করিবার সময় পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করিবার চেয়েও উত্তম। সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ অবশ্যই বলুন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বলিলেন, তাহা হইল আল্লাহর জিকির।
হাদিস নং: ১৮
হযরত আবু হুরায়রাহ্ ও হযরত আবু ছায়ীদ (রা:) দুইজনই স্বাক্ষ্য দিতেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমাইয়াছেন, যেই জামাত আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত হয়, ফেরেশতাগণ চতুর্দিক দিয়ে তাহাদিগকে বেষ্টন করিয়া ফেলে এবং আল্লাহর রহমত তাহাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া লয় এবং তাহাদের উপর ছাকিনা ( শান্তি ও বিশেষ রহমত) অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তা’য়ালা আপন মজলিশে গর্বসহকারে তাহাদের আলোচনা করিয়া থাকেন।
-[ আহমদ – মুসলিম]
হাদিস নং: ১৯
হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রা:) বর্নিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলিয়াছেন: যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় একশ’বার পড়বে ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী’ (অর্থাৎ – আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে)- কিয়ামতের দিন তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বাক্য নিয়ে কেউ উপস্থিত হতে পারবেনা, সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর সমপরিমাণ বা এর চেয়ে বেশী পড়বে।
-[বুখারী ও মুসলিম]
হাদিস নং: ২০
হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রা:) বর্নিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলিয়াছেন: সুবহা-নাল্লা-হ [আল্লাহ পবিত্র], ওয়াল হাম্ দুলিল্লা-হ [আল্লাহর জন্য প্রশংসা], ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ [আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই], ওয়াল্লা-হু আকবর [আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান] বলা, আমার কাছে সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষাও বেশী প্রিয়।
-বুখারী ও মুসলিম]
হাদিস নং: ২১
হযরত ওসমান (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমাইয়াছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ, যিনি কোরআন শরীফ স্বয়ং শিখিয়াছেন এবং অপরকে শিক্ষা দিয়াছেন।
-[বোখারী]
হাদিস নং: ২২
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলিয়াছেন, এলমে কোরআনে পারদর্শী ব্যক্তি ঐসব ফেরেশতাদের শ্রেণীভুক্ত, যাহারা মহা পুণ্যবান ও (আল্লাহর হুকুমে) লেখার কাজে লিপ্ত। আর যে ব্যক্তি কষ্টসাধ্য করিয়া ঠেকিয়া ঠেকিয়া কোরআন পড়ে সে দ্বিগুন সওয়াব প্রাপ্ত হইবে।
-[বোখারী]
হাদিস নং: ২৩
হযরত আবু হোরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন শরীফের একটি আয়াত মনোযোগ সহকারে শুনিবে তাহার জন্য দ্বিগুন সওয়াব লেখা হইবে। আর যে ব্যক্তি স্বয়ং তেলাওয়াত করিবে কেয়ামতের দিন তাহার জন্য নূর হইবে।
-[আহমদ-]
হাদিস নং:২৪
হযরত ইবনে ওমর (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমাইয়াছেন, একমাত্র দুই ব্যক্তির উপর ঈর্ষা করা যাইতে পারে। এক ব্যক্তি যাহাকে আল্লাহ পাক কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষমতা দান করিয়াছেন এবং সে দিন-রাত তেলাওয়াতে লিপ্ত থাকে। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যাহাকে আল্লাহ পাক প্রচুর ধন-ধৌলত দান করিয়াছেন এবং সে দিন-রাত উহা হইতে (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ করিয়া থাকেন।
-[বুখারী]
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যাহার অন্তরে কোরআনের কোন শিক্ষা নাই উহা বিরান ঘর সমতুল্য।
-[তিরমিজি]
বিরান ঘরের সহিত তুলনার অর্থ এই যে, জনমানবহীন শূন্য ঘরে যতসব ভূত পেত্নী আশ্রয় লয়। তদরূপ কোরআন বিহীন অন্তরকেও শয়তান দখল করিয়া লয়।
হযরত আবু হোরায়রাহ (রা:) বলেন, যেই ঘরে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় সেই ঘরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বরকত দেখা দেয় ও তথায় ফেরেশতা অবতরণ করেন এবং সেই ঘর হইতে শয়তান দূরে সরিয়া যায়। পক্ষান্তরে যেই ঘরে তেলাওয়াত হয়না সেই ঘর হইতে ফেরেশতা চলিয়া যায় এবং উহাতে শয়তান ঢুকিয়া পড়ে। অন্য হাদিসে আছে, শূন্য ঘর উহাকে বলে যেখানে কোরআন তেলাওয়াত হয়না।
হাদিস নং: ২৫
হযরত ওমর (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করিয়াছেন, আল্লাহ তা’য়ালা এ কোরআনে পাকের দরুন অনেক লোককে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। আবার অনেককে বেইজ্জত ও অপদস্ত করেন। অর্থাৎ যাহারা কোরআনে বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং আমল করেন, আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখিরাতে তাহাদিগকে সম্মান দান করেন। আর যাহারা উহার উপর আমল করেনা তাহাদিগকে অপদস্ত ও লাঞ্চিত করিয়া থাকেন।
-[মুসলিম]
হাদিস নং: ২৬
হযরত ওসমান (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যখনই কোন মুসলমানের নিকট ফরজ নামাযের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়, আর সে উত্তমরূপে অজু সম্পন্ন করে। উত্তমরূপে তার বিনয় ও তার রুকু (ও সিজদা) সমপন্ন করে তার সেই নামায তার পূর্বেকার সকল গুনাহর জন্য প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যায়, যতক্ষন পর্যন্ত না সে কবীরা গুনাহ করে। আর এটা সর্বাদাই হতে থাকে।
[মুসলিম]
হাদিস নং:২৭
হযরত আবু মূসা আশআরী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, নামাযের সওয়াবের ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিই সকলের তুলনায় বেশী সওয়াবের অধিকারী, যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী দূর থেকে হেঁটে আসে এবং যে ব্যক্তি নামাযের জন্য অপেক্ষা করে ইমামের সাথে তা আদায় করার জন্য। যেই ব্যক্তি একাকী নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে সেই ব্যক্তির সওয়াব হতে ঐ ব্যক্তি বেশীগুন সওয়াবের অধিকারী।
-[বুখারী, মুসলিম]
হাদিস নং: ২৮
হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে একদল ফিরিশতা এসে থাকে রাত্রে। আর একদল দিনে এবং উভয় দল মিলিত হয় ফজরের নামাযে এবং আছরের নামাযে। অত:পর যারা তোমাদের নিকট রাত্রি কাটিয়েছিলেন তারা আল্লাহর নিকট উর্ধ্বে চলে যান। তখন প্রতিপালক তাদেরকে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। অথছ তিনি তাদের চেয়ে এ ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত আছেন। তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় রেখে এলে? তাঁরা বলেন, আমরা তাদেরকে নামাযরত অবস্থায় রেখে এসেছি এবং আমরা যখন তাদের নিকট পৌঁছেছি তখনও তারা নামাযরত অবস্থায় ছিল।
-[সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম]
হাদিস নং: ২৯
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ পাক ফরমাইয়াছেন, আপনার উম্মতের উপর আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করিয়াছি এবং আমি এই প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, যে ব্যক্তি এই নামায সমূকে গুরুত্ব সহকারে সময়মত আদায় করিবে তাহাকে আপন জিম্মাদারীতে বেহেশতে প্রবেশ করাইব। আর যে ব্যক্তি নামাযের প্রতি যত্নবান হইলনা তাহার ব্যাপারে আমার কোন জিম্মাদারী নাই।
-[দুররে মনসুর]

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এহ্ তেমামের সহিত ও গুরুত্ব সহকারে নামায আদায় করিবে আল্লাহ তা’য়ালা তাহাকে পাঁচ প্রকারে সম্মানিত করিবেন।
(১) রুজী রোজগার ও জীবনের সংকীর্ণতা হইতে তাহাকে মুক্ত করিবেন।
(২) তাহার উপর হইতে কবরের আজাব হটাইয়া দিবেন।
(৩) ক্বেয়ামতের দিন তাহার আমলনামা তাহার ডান হাতে দান করিবেন।
(৪) সে ব্যক্তি পুলছেরাতের উপর দিয়ে বিদ্যুতের মত পার হইয়া যাইবে।
(৫) বিনা হিসাবে সে বেহেশতে প্রবেশ করিবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাযে শৈথিল্য প্রদর্শন করে, আল্লাহ তা’য়ালা তাহাকে পনের প্রকার শাস্তি প্রদান করিবেন।
হাদিস নং: ৩০
হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকে নামায পড়লেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন মসজিদের এক পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। লোকটি নামায পড়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে সালাম করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালামের জবাব দিয়ে বল্লেন, যাও গিয়ে আবার নামায পড়। তোমার নামায় হয়নি। লোকটি পুন:রায় নামায পড়ে তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালামের জবাব দিয়ে বল্লেন, যাও আবার নামায পড়। তোমার নামায হয়নি। এভাবে তৃতীয়বার কিংবা চতুর্থবারের পর লোকটি বল্ল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি আমাকে নামাযের রীতি শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বল্লেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়ানোর ইচ্ছা করবে, প্রথমে উত্তমরূপে অজু করে কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে এবং তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর কুরআনে পাকের যা তোমার পক্ষে সহজ হয় তা পাঠ করবে। তারপর রুকু করবে এবং রুকুতে স্থির থাকবে। তারপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর সিজদাহ করবে এবং সিজদায় স্থির থাকবে। এরপর মাথা উঠাবে এবং স্থির হয়ে বসবে। তারপর (দ্বিতীয়) সিজদাহ করবে এবং সিজদায় স্থির থাকবে।এরপর মাথা উঠাবে এবং স্থির হয়ে বসবে। বর্নানান্তরে রয়েছে, অতপ:র মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অত:পর তোমার সমস্ত নামাযেই এরূপ করবে।
-[সহিহ্ বুখারী, মুসলিম]
হাদিস নং: ৩১
ইবনে উমার (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাঁধ ধরে বল্লেন: দুনিয়াতে অপরিচিত অথবা ভ্রমণকারীর মুসাফিরের মত হয়ে যাও।
ইবনে উমার (রা:) বলতেন, সন্ধ্যা বেলা উপনীত হলে সকালের অপেক্ষা করোনা। আর সকাল উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করোনা। অসুস্থতার জন্য সুস্থতাকে কাজে লাগাও আর মৃত্যুর জন্য জীবিত অবস্থা থেকে (পাথেয়) সংগ্রহ করে নাও।
-[বুখারী]
হাদিস নং: ৩২
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার আমল ও তার পূণ্য বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু তিনটি আমল (ও পূণ্য) বন্ধ হয়না। যথা: (১) সাদাকায়ে জারিয়া, (২) ইলম-যদ্বারা (মানুষের) উপকার হয়ে থাকে এবং (৩) নেক্কার সন্তান- যে তার জন্য দু’য়া করে।
-[মুসলিম]
হাদিস নং: ৩৩
হযরত ওসমান (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে ফারেগ হওয়ার পর সেখানে দাঁড়িয়ে উপস্থিত লোকদেরকে বলতেন, তোমাদের ভ্রাতার জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত কামনা কর এবং দু’য়া কর যেন আল্লাহ এখন তাকে (ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাবে) ঈমানের উপর অটল রাখেন, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে।
-[আবু দাউদ]
হাদিস নং:৩৪
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: বান্দাকে কবরে রাখার পর তার সঙ্গী-সাথীগণ যখন তথা হতে ফিরে যেতে থাকে, তখন সে তাদের পায়ের চলার শব্দ শুনতে পায়। এমন সময় তাঁর নিকট দুইজন ফেরেশতা আগমন করে এবং তাকে উঠিয়ে বসান। অত:পর মুহাম্মাদ (স:)-এর প্রতি ইশারা করে তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি দুনিয়ায় এই ব্যক্তি সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করতে? তখন মু’মিন ব্যক্তি বলে, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয় এই দেখ, তুমি দোযখী হলে তোমার জন্য সেই দোজখের স্থান দেখে নাও। আল্লাহ পাক তোমার সেই স্থানকে বেহেশতের স্থানের সাথে বদলে দিয়েছেন। তখন সে (বেহেশত ও দোযখের) উভয় স্থানই দেখতে পায়। কিন্তু মুনাফিক ও কাফির তাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে বলা হবে তুমি এই ব্যক্তি সম্পর্কে কি ধারণা রাখতে? তখন সে বলে তা আমি জানিনা। মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হয় (বুঝা গেল) তুমি তোমার বিবেক দ্বারাও বোঝার চেস্টা করনি এবং কিতাবাদি পড়েও জানার ইচ্ছা করনি। অত:পর তাকে লৌহ মুন্ডর দ্বারা কঠিনভাবে শাস্তি দেয়া হতে থাকে। এতে সে এমন এক চিৎকার দেয়, যা শুধু জ্বিন ও মানব ছাড়া নিকটবর্তী সকলেই শুনতে পায়।
-[ বুখারী, মুসলিম, শব্দ গুলো বুখারীর]
হাদিস নং: ৩৫
আমিরুল মু’মিনিন হযরত উসমান (রা:) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি কোন ক্ববরের নিকট দাঁড়ালে ক্রন্দন শুরু করতেন। তাতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। একদা তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, হযরত! আপনি বেহেশত ও দোযখের প্রসঙ্গ উঠলে তখন তো এরূপ ক্রন্দন করেন না, অথচ কবরের কাছে এলে কাঁদেন (এরূপ কাঁদার কারণ কি)? তিনি প্রত্যুত্তরে বল্লেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আখিরাতের মন্জীলসমূহের মধ্যে ক্ববর হলো প্রথম মন্জীল। কেউ যদি এই মন্জীলে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরের মন্জীলসমূহ অতিক্রম করা তার জন্য সহজসাধ্য হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মন্জীলে মুক্তি লাভ করতে পারলনা, তার জন্য পরবর্তী মন্জীলসমূহ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। অত:পর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটাও বলেছেন, ক্ববর থেকে বেশী কঠিন কোন ভয়ঙ্কর জায়গা আমি কক্ষনো দেখিনি।
[সহীহ্ তিরমিযী]
হাদিস নং: ৩৬
হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শিকলবন্দী করে দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন: যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদ করে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করা হবে।
[সহিহ্ বুখারী]
হাদিস নং: ৩৭
হযরত মু’আয (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে অসিয়ত করেছেন:
(১) তোমাকে যদি হত্যাও করা হয় বা জ্বলিয়ে দেয়া হয় তবুও আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করোনা,
(২) পিতা-মাতার অবাধ্য হয়োনা যদিও তাঁরা তোমাকে পরিবার-পরিজন ও ধনমাল থেকে সরে যেতে আদেশ দেন,
(৩) স্বেচ্ছায় ফরয নামায তরক করোনা, কেননা যে ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায তরক করে তার ব্যাপারে আল্লাহর কোন দয়িত্ব থাকেনা,
(৪) মদ পান করোনা, কারণ তা সর্বপ্রকার অশ্লীলতার উৎস,
(৫) পাপাচার বর্জন কর, কেননা পাপের কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নেমে আসে,
(৬) ময়দানে জেহাদ থেকে পলায়ন করোনা যদিও সবাই নিহত হয়ে যায়,
(৭) মহামারী লাগলে (পূর্ব থেকে) যদি তুমি সেখানে থাক তা হলে সেখানে অবস্থান কর,
(৮) তোমা সামর্থ্য পরিমাণ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যায় কর,
(৯) তাদের সদাচার শিক্ষা দান কর এবং শাসন করা থেকে হাত গুটিয়ে রেখনা এবং
(১০) তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাও।
-[আহমদ]
হাদিস নং: ৩৮
হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ পরিমাণে (অর্থাৎ অত্যাধিক পরিমাণে) সওয়াব পেতে ইচ্ছা করে, সে যখন আমার উপর এবং আমার পরিবারের উপর দরুদ পাঠ করে, তখন যেন এটা পাঠ করে, “আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মীয়ি ওয়া আযওয়াজিহি উম্মাহতিল মু’মীনা ওয়াল যুররিইয়্যাতিহি ওয়া আহলে বাইতিহি কামা ছাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”। অর্থাৎ হে আল্লাহ! উম্মী নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তাঁর স্ত্রীগণ যারা মু’মিনদের জননী। তাঁর বংশধর ও পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করুন। যেভাবে আপনি ইব্রাহিম (আ:) এর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন।
-[আবু দাউদ]
হাদিস নং: ৩৯
সায়িদ ইবনে ইয়াজিদ (রা:) বলেন, একদা আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট গেলেন। এরপর তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগ্নে অসুস্থ। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। তারপর তিনি ওজু করলেন। আমি তাঁর ওজুর অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তাঁর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সহসা তাঁর দু’কাঁধের মধ্যস্থ মোহরে নবুওয়াতের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে, যা দেখতে পাখির (কবুতরের) ডিমের মতো।
-[সহিহ্ বুখারী, সহিহ্ মুসলিম, মুজামুল কাবীর, শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত, শামায়েলে তিরমিযি]
{মোহরে নবুওয়াত হলো রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি গোশতের টুকরা। এটি ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াতের নিদর্শন; আর এ নিদর্শনের কথা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহেও বর্ণিত ছিল।}
হাদিস নং: ৪০
আনাস ইবনে মালিক (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি শেষবারের মতো দর্শন করলাম, যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত সোমবার ফযরের নামাযের সময়; তখন তিনি পর্দা তুলে উম্মতের সালাতের অবস্থা দেখছিলেন। আমি তাঁর চেহারায় যেন আল-কুরআনের পৃষ্ঠা জ্বলজ্বল করতে দেখছিলাম। লোকেরা আবু বকর (রা:) এর পিছনে সালাত আদায় করছিল। (লোকেরা সরে দাঁড়াতে চাইল) কিন্তু তিনি ইঙ্গিতে সকলকে স্থির থাকার নির্দেশ দিলেন এবং আবু বকর (রা:) ইমামতি করলেন। সেদিন শেষ বেলায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। [১]
-[সহিহ্ বুখারী, সহিহ্ মুসলিম, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, সহিহ্ ইবনে হিব্বান, বায়হকী, শারহুস সুন্নাহ, মুসনাদে হুমাইদী, শামায়েলে তিরমিযি ]




◈ ━━━━━━ ⸙ ━━━━━━ ◈
 

 প্রতিদিন কমপক্ষে নিম্নের আমলগুলো করুন।

>>নিম্নের লিংক ক্লিক করে ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন<<

১/ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।

২/ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করুন। না পারলে কয়েকটি সূরা হলেও পড়ুন। 

৩/ যত বেশি সম্ভব  أَسْتَغْفِرُالله ( আস্তাগফিরুল্লা-হ) পড়ুন। দিনে কমপক্ষে ১০০ বার পড়ুন।

৪/ লা ইলাহা ইল্লালল্লাহ - জিকিরটি বেশি বেশি করুন।

৫/ বেশি বেশি দুরুদ শরীফ (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার) পাঠ করুন।

৬/ প্রতিদিন কিছু না কিছু দান-সদকাহ করার চেষ্টা করুন। সদকায়ে জারিয়া চালু করুন।

 

শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইনশাল্লাহ! দ্বীনি কথা প্রচার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।

ইসলামিক বাংলা টিভি (Islamic Bangla Tv) - এর সঙ্গেই থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আল্লাহ্‌ সুবনাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন, ছুম্মা আমিন।
#ibtv
#ibtv99

Post a Comment

0 Comments